ইমতিয়াজ মাহমুদ

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
একজন নারী বক্তব্য দিতে উঠেছেন, লিকলিকে কাঠির মতো শক্ত হাত-পা, উজ্জ্বল লাল রঙের সস্তার সুতি শাড়ি পরনে। তাঁর ভাষা শুদ্ধ নয়, বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক লাইন স্পষ্ট বোঝা যায় না, বাক্য গঠন ও শব্দের ব্যবহার অতি এলোমেলো। কিন্তু তাঁর কণ্ঠদৃঢ় এবং উচ্চারিত বক্তব্য স্পষ্ট।
আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাত অকম্প। তিনি চা-শ্রমিকদের কষ্টের জীবনের কথা উচ্চারণ করেন, মালিক ও সরকারপক্ষের প্রতারণার বিষয় বর্ণনা করেন। এমনকি তাঁদের যে বিদ্যমান ইউনিয়ন রয়েছে, সেই ইউনিয়নের দালালির কথাও জানাতে দ্বিধা করেননি। দ্বিধাহীন কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, চা-শ্রমিকদের চলমান সংগ্রামের অগ্রভাগেই তিনি আছেন, থাকবেন। ওরা যদি তাঁকে হত্যা করতে চায়, মৃত্যুতে তিনি শঙ্কিত নন—লড়াই অব্যাহত থাকবে।
না, সংগ্রামটা কেবল একটা বড় সমাবেশে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে নয়। চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। সারা দিনের পরিক্রমার পর সূর্য অস্ত যায়। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম শেষ হয় না। আমরা, বাম নারীবাদীরা খবরের কাগজে, বইতে, অন্তর্জালে লিখতে থাকি, খেটে খাওয়া নারীকে সংগ্রাম করতে হয় সব সময় দুটি ফ্রন্টে, এক ফ্রন্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে। যেখানে নারী ও পুরুষ সবাইকে লড়তে হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর দ্বিতীয় ফ্রন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তথা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেখানে তাঁর পুরুষ কমরেডটিরও অবস্থান হতে পারে শত্রুর ক্যাম্পে। আমরা কেবল লিখি মাত্র। অথবা কখনো কখনো মুখে বলি বক্তব্য দিতে গিয়ে। এই সংগ্রামী জীবনটা প্রতিদিন যাপন করেন আমাদের চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা। একদিকে তাঁকে লড়তে হয় প্রতিদিন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য, অন্যদিকে নারী হিসেবে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে।
কোন অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করেন চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা? মনে রাখবেন, চা-বাগানের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক নারী। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানে চা-শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ নারী। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা করেছে ২০১৮ সালে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নারী শ্রমিকদের ১৫ শতাংশই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত।
এ রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ইত্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান এবং সাধারণভাবে প্রজননস্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা। চা-বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকেরা এসব কারণের সব কটিতেই ভোগেন প্রতিদিন। সেই সঙ্গে ভোগেন অপুষ্টিতে। চা-বাগানে নারী শিশুদের জন্মের পর থেকে মোকাবিলা করতে হয় পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্যের। এমনিতেই অভাব। তার ওপর পরিবারের নারী শিশুরাই থাকে সবচেয়ে অবহেলিত। পুরুষদের খাওয়ার পর যেটুকু থাকে, সেটুকু জোটে নারীদের। পড়ালেখার সুযোগ খুবই সীমিত। একটু বড় হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর বিয়ের পর শুরু হয় সন্তান ধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পালা। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও অধিকাংশ নারী স্বাস্থ্যসম্মত প্রসবের সুযোগ পান না। বেশির ভাগ প্রসূতিই হাসপাতালের সেবা পান না। আর আছে মাসিকের সময় পুরোনো ন্যাকড়ার অস্বাস্থ্যকর ব্যবহার। জরায়ুমুখ ক্যানসারের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কত প্রকার ব্যাধিতে যে ভুগতে হয় চা-বাগানের নারীদের, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই! মানে পাওয়া যায় না। পরিবারের রোজগেরে সদস্য হলেও নিজের ঘরে নারী শ্রমিকেরা চিরায়ত পুরুষতান্ত্রিক নিয়মে বেঁধে দেওয়া যে নারীর ভূমিকা রয়েছে, সেগুলোও পালন করতে বাধ্য নিয়ম মেনে।
অন্যান্য শিল্পে নারী শ্রমিকের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা নিশ্চিত করা আছে শ্রম আইনে। চা-শ্রমিক নারীদের ক্ষেত্রে সেসব সুযোগও মেলে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি অকল্পনীয় বিষয়। দুপুরের খাবারের বিরতিতে নারী শ্রমিকদের খেতে হয় বাগানের মধ্যে বসেই। সেই খাবারটাই-বা কী? হয়তো দুখানা শুকনো রুটি বা অল্প একটু ভাত—মরিচ আর চা-পাতার ভর্তা দিয়ে খাওয়া! অতি নিম্নমানের এক রকম চা তৈরি করে নিয়ে যান শ্রমিকেরা। কেউ কেউ সেই চায়ে ভিজিয়ে ওই শুকনো রুটিটুকু খেয়েই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন। বসে খাওয়ার জায়গা নেই। নেই কোনো টয়লেট বা সেরকম ব্যবস্থা। এই অবস্থাই চলে আসছে প্রায় শত বছর ধরে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাতা তুলতে হয় প্রতিদিন। বিনিময়ে মজুরির তথ্য তো সবাই জেনেছেন ইতিমধ্যে। শ্রমিকদের তোলা পাতা দিয়ে যে উৎকৃষ্ট চা উৎপাদন হয়, তা পানের সুযোগ শ্রমিকদের হয় না। এইটাই চলে আসছে সেই উনিশ শতক থেকে।
ব্রিটিশ আমলে চা-শ্রমিকদের ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিথ্যা প্রলোভন ও লাভজনক চুক্তির আশ্বাস দিয়ে আনা হয়েছিল আসামে এবং আমাদের সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়। পাহাড়ে জঙ্গল সাফ করে চায়ের আবাদ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে, অনাহারে, অপুষ্টিতে ও সাহেবদের অত্যাচারে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নারী-পুরুষ চা-শ্রমিকদের জীবন ছিল তখন আমেরিকার প্ল্যান্টেশনে কাজ করা ক্রীতদাসদের মতোই। এই দাসসুলভ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য চা-শ্রমিক নারী-পুরুষ বিভিন্ন সময় বিদ্রোহ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯২১ সালের মুল্লুক চলো আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার। ব্রিটিশ সরকার ও চা-বাগানের মালিকেরা মিলে মুল্লুক চলো আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহারে হত্যা করে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
আজকের চা-বাগানে নারী শ্রমিক এবং সাধারণভাবে সব শ্রমিকের অবস্থার যে খুব উন্নতি হয়েছে সে কথা বলা যাবে না। আশার কথা, সংগ্রামের সূচনা হয়েছে ইতিমধ্যে। চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছেন, প্রস্তুত হচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য। এ লড়াই শ্রমিকের অধিকার এবং পিতৃতন্ত্র, এ দুইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের এই লড়াই হয়তো সফল হবে না, যদি আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু নারী এবং সচেতন মানুষ তাঁদের লড়াইয়ে শরিক না হয়।

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
একজন নারী বক্তব্য দিতে উঠেছেন, লিকলিকে কাঠির মতো শক্ত হাত-পা, উজ্জ্বল লাল রঙের সস্তার সুতি শাড়ি পরনে। তাঁর ভাষা শুদ্ধ নয়, বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক লাইন স্পষ্ট বোঝা যায় না, বাক্য গঠন ও শব্দের ব্যবহার অতি এলোমেলো। কিন্তু তাঁর কণ্ঠদৃঢ় এবং উচ্চারিত বক্তব্য স্পষ্ট।
আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাত অকম্প। তিনি চা-শ্রমিকদের কষ্টের জীবনের কথা উচ্চারণ করেন, মালিক ও সরকারপক্ষের প্রতারণার বিষয় বর্ণনা করেন। এমনকি তাঁদের যে বিদ্যমান ইউনিয়ন রয়েছে, সেই ইউনিয়নের দালালির কথাও জানাতে দ্বিধা করেননি। দ্বিধাহীন কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, চা-শ্রমিকদের চলমান সংগ্রামের অগ্রভাগেই তিনি আছেন, থাকবেন। ওরা যদি তাঁকে হত্যা করতে চায়, মৃত্যুতে তিনি শঙ্কিত নন—লড়াই অব্যাহত থাকবে।
না, সংগ্রামটা কেবল একটা বড় সমাবেশে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে নয়। চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। সারা দিনের পরিক্রমার পর সূর্য অস্ত যায়। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম শেষ হয় না। আমরা, বাম নারীবাদীরা খবরের কাগজে, বইতে, অন্তর্জালে লিখতে থাকি, খেটে খাওয়া নারীকে সংগ্রাম করতে হয় সব সময় দুটি ফ্রন্টে, এক ফ্রন্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে। যেখানে নারী ও পুরুষ সবাইকে লড়তে হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর দ্বিতীয় ফ্রন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তথা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেখানে তাঁর পুরুষ কমরেডটিরও অবস্থান হতে পারে শত্রুর ক্যাম্পে। আমরা কেবল লিখি মাত্র। অথবা কখনো কখনো মুখে বলি বক্তব্য দিতে গিয়ে। এই সংগ্রামী জীবনটা প্রতিদিন যাপন করেন আমাদের চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা। একদিকে তাঁকে লড়তে হয় প্রতিদিন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য, অন্যদিকে নারী হিসেবে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে।
কোন অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করেন চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা? মনে রাখবেন, চা-বাগানের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক নারী। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানে চা-শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ নারী। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা করেছে ২০১৮ সালে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নারী শ্রমিকদের ১৫ শতাংশই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত।
এ রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ইত্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান এবং সাধারণভাবে প্রজননস্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা। চা-বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকেরা এসব কারণের সব কটিতেই ভোগেন প্রতিদিন। সেই সঙ্গে ভোগেন অপুষ্টিতে। চা-বাগানে নারী শিশুদের জন্মের পর থেকে মোকাবিলা করতে হয় পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্যের। এমনিতেই অভাব। তার ওপর পরিবারের নারী শিশুরাই থাকে সবচেয়ে অবহেলিত। পুরুষদের খাওয়ার পর যেটুকু থাকে, সেটুকু জোটে নারীদের। পড়ালেখার সুযোগ খুবই সীমিত। একটু বড় হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর বিয়ের পর শুরু হয় সন্তান ধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পালা। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও অধিকাংশ নারী স্বাস্থ্যসম্মত প্রসবের সুযোগ পান না। বেশির ভাগ প্রসূতিই হাসপাতালের সেবা পান না। আর আছে মাসিকের সময় পুরোনো ন্যাকড়ার অস্বাস্থ্যকর ব্যবহার। জরায়ুমুখ ক্যানসারের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কত প্রকার ব্যাধিতে যে ভুগতে হয় চা-বাগানের নারীদের, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই! মানে পাওয়া যায় না। পরিবারের রোজগেরে সদস্য হলেও নিজের ঘরে নারী শ্রমিকেরা চিরায়ত পুরুষতান্ত্রিক নিয়মে বেঁধে দেওয়া যে নারীর ভূমিকা রয়েছে, সেগুলোও পালন করতে বাধ্য নিয়ম মেনে।
অন্যান্য শিল্পে নারী শ্রমিকের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা নিশ্চিত করা আছে শ্রম আইনে। চা-শ্রমিক নারীদের ক্ষেত্রে সেসব সুযোগও মেলে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি অকল্পনীয় বিষয়। দুপুরের খাবারের বিরতিতে নারী শ্রমিকদের খেতে হয় বাগানের মধ্যে বসেই। সেই খাবারটাই-বা কী? হয়তো দুখানা শুকনো রুটি বা অল্প একটু ভাত—মরিচ আর চা-পাতার ভর্তা দিয়ে খাওয়া! অতি নিম্নমানের এক রকম চা তৈরি করে নিয়ে যান শ্রমিকেরা। কেউ কেউ সেই চায়ে ভিজিয়ে ওই শুকনো রুটিটুকু খেয়েই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন। বসে খাওয়ার জায়গা নেই। নেই কোনো টয়লেট বা সেরকম ব্যবস্থা। এই অবস্থাই চলে আসছে প্রায় শত বছর ধরে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাতা তুলতে হয় প্রতিদিন। বিনিময়ে মজুরির তথ্য তো সবাই জেনেছেন ইতিমধ্যে। শ্রমিকদের তোলা পাতা দিয়ে যে উৎকৃষ্ট চা উৎপাদন হয়, তা পানের সুযোগ শ্রমিকদের হয় না। এইটাই চলে আসছে সেই উনিশ শতক থেকে।
ব্রিটিশ আমলে চা-শ্রমিকদের ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিথ্যা প্রলোভন ও লাভজনক চুক্তির আশ্বাস দিয়ে আনা হয়েছিল আসামে এবং আমাদের সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়। পাহাড়ে জঙ্গল সাফ করে চায়ের আবাদ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে, অনাহারে, অপুষ্টিতে ও সাহেবদের অত্যাচারে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নারী-পুরুষ চা-শ্রমিকদের জীবন ছিল তখন আমেরিকার প্ল্যান্টেশনে কাজ করা ক্রীতদাসদের মতোই। এই দাসসুলভ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য চা-শ্রমিক নারী-পুরুষ বিভিন্ন সময় বিদ্রোহ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯২১ সালের মুল্লুক চলো আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার। ব্রিটিশ সরকার ও চা-বাগানের মালিকেরা মিলে মুল্লুক চলো আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহারে হত্যা করে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
আজকের চা-বাগানে নারী শ্রমিক এবং সাধারণভাবে সব শ্রমিকের অবস্থার যে খুব উন্নতি হয়েছে সে কথা বলা যাবে না। আশার কথা, সংগ্রামের সূচনা হয়েছে ইতিমধ্যে। চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছেন, প্রস্তুত হচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য। এ লড়াই শ্রমিকের অধিকার এবং পিতৃতন্ত্র, এ দুইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের এই লড়াই হয়তো সফল হবে না, যদি আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু নারী এবং সচেতন মানুষ তাঁদের লড়াইয়ে শরিক না হয়।
ইমতিয়াজ মাহমুদ

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
একজন নারী বক্তব্য দিতে উঠেছেন, লিকলিকে কাঠির মতো শক্ত হাত-পা, উজ্জ্বল লাল রঙের সস্তার সুতি শাড়ি পরনে। তাঁর ভাষা শুদ্ধ নয়, বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক লাইন স্পষ্ট বোঝা যায় না, বাক্য গঠন ও শব্দের ব্যবহার অতি এলোমেলো। কিন্তু তাঁর কণ্ঠদৃঢ় এবং উচ্চারিত বক্তব্য স্পষ্ট।
আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাত অকম্প। তিনি চা-শ্রমিকদের কষ্টের জীবনের কথা উচ্চারণ করেন, মালিক ও সরকারপক্ষের প্রতারণার বিষয় বর্ণনা করেন। এমনকি তাঁদের যে বিদ্যমান ইউনিয়ন রয়েছে, সেই ইউনিয়নের দালালির কথাও জানাতে দ্বিধা করেননি। দ্বিধাহীন কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, চা-শ্রমিকদের চলমান সংগ্রামের অগ্রভাগেই তিনি আছেন, থাকবেন। ওরা যদি তাঁকে হত্যা করতে চায়, মৃত্যুতে তিনি শঙ্কিত নন—লড়াই অব্যাহত থাকবে।
না, সংগ্রামটা কেবল একটা বড় সমাবেশে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে নয়। চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। সারা দিনের পরিক্রমার পর সূর্য অস্ত যায়। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম শেষ হয় না। আমরা, বাম নারীবাদীরা খবরের কাগজে, বইতে, অন্তর্জালে লিখতে থাকি, খেটে খাওয়া নারীকে সংগ্রাম করতে হয় সব সময় দুটি ফ্রন্টে, এক ফ্রন্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে। যেখানে নারী ও পুরুষ সবাইকে লড়তে হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর দ্বিতীয় ফ্রন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তথা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেখানে তাঁর পুরুষ কমরেডটিরও অবস্থান হতে পারে শত্রুর ক্যাম্পে। আমরা কেবল লিখি মাত্র। অথবা কখনো কখনো মুখে বলি বক্তব্য দিতে গিয়ে। এই সংগ্রামী জীবনটা প্রতিদিন যাপন করেন আমাদের চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা। একদিকে তাঁকে লড়তে হয় প্রতিদিন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য, অন্যদিকে নারী হিসেবে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে।
কোন অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করেন চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা? মনে রাখবেন, চা-বাগানের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক নারী। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানে চা-শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ নারী। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা করেছে ২০১৮ সালে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নারী শ্রমিকদের ১৫ শতাংশই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত।
এ রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ইত্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান এবং সাধারণভাবে প্রজননস্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা। চা-বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকেরা এসব কারণের সব কটিতেই ভোগেন প্রতিদিন। সেই সঙ্গে ভোগেন অপুষ্টিতে। চা-বাগানে নারী শিশুদের জন্মের পর থেকে মোকাবিলা করতে হয় পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্যের। এমনিতেই অভাব। তার ওপর পরিবারের নারী শিশুরাই থাকে সবচেয়ে অবহেলিত। পুরুষদের খাওয়ার পর যেটুকু থাকে, সেটুকু জোটে নারীদের। পড়ালেখার সুযোগ খুবই সীমিত। একটু বড় হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর বিয়ের পর শুরু হয় সন্তান ধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পালা। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও অধিকাংশ নারী স্বাস্থ্যসম্মত প্রসবের সুযোগ পান না। বেশির ভাগ প্রসূতিই হাসপাতালের সেবা পান না। আর আছে মাসিকের সময় পুরোনো ন্যাকড়ার অস্বাস্থ্যকর ব্যবহার। জরায়ুমুখ ক্যানসারের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কত প্রকার ব্যাধিতে যে ভুগতে হয় চা-বাগানের নারীদের, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই! মানে পাওয়া যায় না। পরিবারের রোজগেরে সদস্য হলেও নিজের ঘরে নারী শ্রমিকেরা চিরায়ত পুরুষতান্ত্রিক নিয়মে বেঁধে দেওয়া যে নারীর ভূমিকা রয়েছে, সেগুলোও পালন করতে বাধ্য নিয়ম মেনে।
অন্যান্য শিল্পে নারী শ্রমিকের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা নিশ্চিত করা আছে শ্রম আইনে। চা-শ্রমিক নারীদের ক্ষেত্রে সেসব সুযোগও মেলে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি অকল্পনীয় বিষয়। দুপুরের খাবারের বিরতিতে নারী শ্রমিকদের খেতে হয় বাগানের মধ্যে বসেই। সেই খাবারটাই-বা কী? হয়তো দুখানা শুকনো রুটি বা অল্প একটু ভাত—মরিচ আর চা-পাতার ভর্তা দিয়ে খাওয়া! অতি নিম্নমানের এক রকম চা তৈরি করে নিয়ে যান শ্রমিকেরা। কেউ কেউ সেই চায়ে ভিজিয়ে ওই শুকনো রুটিটুকু খেয়েই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন। বসে খাওয়ার জায়গা নেই। নেই কোনো টয়লেট বা সেরকম ব্যবস্থা। এই অবস্থাই চলে আসছে প্রায় শত বছর ধরে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাতা তুলতে হয় প্রতিদিন। বিনিময়ে মজুরির তথ্য তো সবাই জেনেছেন ইতিমধ্যে। শ্রমিকদের তোলা পাতা দিয়ে যে উৎকৃষ্ট চা উৎপাদন হয়, তা পানের সুযোগ শ্রমিকদের হয় না। এইটাই চলে আসছে সেই উনিশ শতক থেকে।
ব্রিটিশ আমলে চা-শ্রমিকদের ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিথ্যা প্রলোভন ও লাভজনক চুক্তির আশ্বাস দিয়ে আনা হয়েছিল আসামে এবং আমাদের সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়। পাহাড়ে জঙ্গল সাফ করে চায়ের আবাদ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে, অনাহারে, অপুষ্টিতে ও সাহেবদের অত্যাচারে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নারী-পুরুষ চা-শ্রমিকদের জীবন ছিল তখন আমেরিকার প্ল্যান্টেশনে কাজ করা ক্রীতদাসদের মতোই। এই দাসসুলভ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য চা-শ্রমিক নারী-পুরুষ বিভিন্ন সময় বিদ্রোহ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯২১ সালের মুল্লুক চলো আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার। ব্রিটিশ সরকার ও চা-বাগানের মালিকেরা মিলে মুল্লুক চলো আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহারে হত্যা করে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
আজকের চা-বাগানে নারী শ্রমিক এবং সাধারণভাবে সব শ্রমিকের অবস্থার যে খুব উন্নতি হয়েছে সে কথা বলা যাবে না। আশার কথা, সংগ্রামের সূচনা হয়েছে ইতিমধ্যে। চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছেন, প্রস্তুত হচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য। এ লড়াই শ্রমিকের অধিকার এবং পিতৃতন্ত্র, এ দুইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের এই লড়াই হয়তো সফল হবে না, যদি আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু নারী এবং সচেতন মানুষ তাঁদের লড়াইয়ে শরিক না হয়।

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
একজন নারী বক্তব্য দিতে উঠেছেন, লিকলিকে কাঠির মতো শক্ত হাত-পা, উজ্জ্বল লাল রঙের সস্তার সুতি শাড়ি পরনে। তাঁর ভাষা শুদ্ধ নয়, বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক লাইন স্পষ্ট বোঝা যায় না, বাক্য গঠন ও শব্দের ব্যবহার অতি এলোমেলো। কিন্তু তাঁর কণ্ঠদৃঢ় এবং উচ্চারিত বক্তব্য স্পষ্ট।
আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাত অকম্প। তিনি চা-শ্রমিকদের কষ্টের জীবনের কথা উচ্চারণ করেন, মালিক ও সরকারপক্ষের প্রতারণার বিষয় বর্ণনা করেন। এমনকি তাঁদের যে বিদ্যমান ইউনিয়ন রয়েছে, সেই ইউনিয়নের দালালির কথাও জানাতে দ্বিধা করেননি। দ্বিধাহীন কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, চা-শ্রমিকদের চলমান সংগ্রামের অগ্রভাগেই তিনি আছেন, থাকবেন। ওরা যদি তাঁকে হত্যা করতে চায়, মৃত্যুতে তিনি শঙ্কিত নন—লড়াই অব্যাহত থাকবে।
না, সংগ্রামটা কেবল একটা বড় সমাবেশে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে নয়। চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। সারা দিনের পরিক্রমার পর সূর্য অস্ত যায়। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম শেষ হয় না। আমরা, বাম নারীবাদীরা খবরের কাগজে, বইতে, অন্তর্জালে লিখতে থাকি, খেটে খাওয়া নারীকে সংগ্রাম করতে হয় সব সময় দুটি ফ্রন্টে, এক ফ্রন্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে। যেখানে নারী ও পুরুষ সবাইকে লড়তে হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর দ্বিতীয় ফ্রন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তথা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেখানে তাঁর পুরুষ কমরেডটিরও অবস্থান হতে পারে শত্রুর ক্যাম্পে। আমরা কেবল লিখি মাত্র। অথবা কখনো কখনো মুখে বলি বক্তব্য দিতে গিয়ে। এই সংগ্রামী জীবনটা প্রতিদিন যাপন করেন আমাদের চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা। একদিকে তাঁকে লড়তে হয় প্রতিদিন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য, অন্যদিকে নারী হিসেবে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে।
কোন অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করেন চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা? মনে রাখবেন, চা-বাগানের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক নারী। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানে চা-শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ নারী। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা করেছে ২০১৮ সালে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নারী শ্রমিকদের ১৫ শতাংশই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত।
এ রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ইত্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান এবং সাধারণভাবে প্রজননস্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা। চা-বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকেরা এসব কারণের সব কটিতেই ভোগেন প্রতিদিন। সেই সঙ্গে ভোগেন অপুষ্টিতে। চা-বাগানে নারী শিশুদের জন্মের পর থেকে মোকাবিলা করতে হয় পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্যের। এমনিতেই অভাব। তার ওপর পরিবারের নারী শিশুরাই থাকে সবচেয়ে অবহেলিত। পুরুষদের খাওয়ার পর যেটুকু থাকে, সেটুকু জোটে নারীদের। পড়ালেখার সুযোগ খুবই সীমিত। একটু বড় হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর বিয়ের পর শুরু হয় সন্তান ধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পালা। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও অধিকাংশ নারী স্বাস্থ্যসম্মত প্রসবের সুযোগ পান না। বেশির ভাগ প্রসূতিই হাসপাতালের সেবা পান না। আর আছে মাসিকের সময় পুরোনো ন্যাকড়ার অস্বাস্থ্যকর ব্যবহার। জরায়ুমুখ ক্যানসারের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কত প্রকার ব্যাধিতে যে ভুগতে হয় চা-বাগানের নারীদের, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই! মানে পাওয়া যায় না। পরিবারের রোজগেরে সদস্য হলেও নিজের ঘরে নারী শ্রমিকেরা চিরায়ত পুরুষতান্ত্রিক নিয়মে বেঁধে দেওয়া যে নারীর ভূমিকা রয়েছে, সেগুলোও পালন করতে বাধ্য নিয়ম মেনে।
অন্যান্য শিল্পে নারী শ্রমিকের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা নিশ্চিত করা আছে শ্রম আইনে। চা-শ্রমিক নারীদের ক্ষেত্রে সেসব সুযোগও মেলে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি অকল্পনীয় বিষয়। দুপুরের খাবারের বিরতিতে নারী শ্রমিকদের খেতে হয় বাগানের মধ্যে বসেই। সেই খাবারটাই-বা কী? হয়তো দুখানা শুকনো রুটি বা অল্প একটু ভাত—মরিচ আর চা-পাতার ভর্তা দিয়ে খাওয়া! অতি নিম্নমানের এক রকম চা তৈরি করে নিয়ে যান শ্রমিকেরা। কেউ কেউ সেই চায়ে ভিজিয়ে ওই শুকনো রুটিটুকু খেয়েই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন। বসে খাওয়ার জায়গা নেই। নেই কোনো টয়লেট বা সেরকম ব্যবস্থা। এই অবস্থাই চলে আসছে প্রায় শত বছর ধরে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাতা তুলতে হয় প্রতিদিন। বিনিময়ে মজুরির তথ্য তো সবাই জেনেছেন ইতিমধ্যে। শ্রমিকদের তোলা পাতা দিয়ে যে উৎকৃষ্ট চা উৎপাদন হয়, তা পানের সুযোগ শ্রমিকদের হয় না। এইটাই চলে আসছে সেই উনিশ শতক থেকে।
ব্রিটিশ আমলে চা-শ্রমিকদের ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিথ্যা প্রলোভন ও লাভজনক চুক্তির আশ্বাস দিয়ে আনা হয়েছিল আসামে এবং আমাদের সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়। পাহাড়ে জঙ্গল সাফ করে চায়ের আবাদ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে, অনাহারে, অপুষ্টিতে ও সাহেবদের অত্যাচারে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নারী-পুরুষ চা-শ্রমিকদের জীবন ছিল তখন আমেরিকার প্ল্যান্টেশনে কাজ করা ক্রীতদাসদের মতোই। এই দাসসুলভ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য চা-শ্রমিক নারী-পুরুষ বিভিন্ন সময় বিদ্রোহ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯২১ সালের মুল্লুক চলো আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার। ব্রিটিশ সরকার ও চা-বাগানের মালিকেরা মিলে মুল্লুক চলো আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহারে হত্যা করে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
আজকের চা-বাগানে নারী শ্রমিক এবং সাধারণভাবে সব শ্রমিকের অবস্থার যে খুব উন্নতি হয়েছে সে কথা বলা যাবে না। আশার কথা, সংগ্রামের সূচনা হয়েছে ইতিমধ্যে। চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছেন, প্রস্তুত হচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য। এ লড়াই শ্রমিকের অধিকার এবং পিতৃতন্ত্র, এ দুইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের এই লড়াই হয়তো সফল হবে না, যদি আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু নারী এবং সচেতন মানুষ তাঁদের লড়াইয়ে শরিক না হয়।

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
১ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
১ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
১ দিন আগে
একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।
১ দিন আগেকাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট
এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’
কেন কমছে মেলার সংখ্যা
নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’
রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন
মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’
অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।
সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি
হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট
এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’
কেন কমছে মেলার সংখ্যা
নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’
রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন
মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’
অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।
সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি
হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
২১ ডিসেম্বর ২০২২
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
১ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
১ দিন আগে
একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।
১ দিন আগেআল আমিন

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।
২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।
খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।
রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।
২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।
খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।
রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
২১ ডিসেম্বর ২০২২
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
১ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
১ দিন আগে
একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।
চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই
মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।
ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা
২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।
সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।
আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।
অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য
মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।
ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা
মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন
মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।
সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।
চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই
মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।
ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা
২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।
সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।
আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।
অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য
মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।
ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা
মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন
মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।
সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
২১ ডিসেম্বর ২০২২
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
১ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
১ দিন আগে
একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক

একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।
১৮৪৮ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই নিউইয়র্কের সেনেকা ফলসে অনুষ্ঠিত সে সম্মেলনটি ছিল আধুনিক নারী অধিকার আন্দোলনের বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। সেটিই ছিল আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রকাশ্য সম্মেলন, যা আয়োজিত হয়েছিল শুধু নারীদের সামাজিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে আলোচনার জন্য। শুধু এর আয়োজক হিসেবে নয়, উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে একাধিক জাতীয় নারী অধিকার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মার্থা। ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ইকুয়াল রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। সাম্যবাদে বিশ্বাসী একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন মার্থা। তিনি কাজ করেছেন দাসপ্রথার বিরুদ্ধে। নিউইয়র্কের অবার্নে তাঁর বাড়িটি ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড রেল রোডের একটি অন্যতম প্রধান স্টেশনের পাশেই। তিনি পালিয়ে আসা দাসদের আশ্রয় দিতেন এবং তাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতেন।
সাত সন্তানের জননী মার্থা পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক লড়াইয়ে কখনো পিছপা হননি। তাঁর জন্ম ১৮০৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ১৮৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি মৃত্যুর পর তাঁকে অবার্নের ফোর্ট হিল সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।

একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।
১৮৪৮ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই নিউইয়র্কের সেনেকা ফলসে অনুষ্ঠিত সে সম্মেলনটি ছিল আধুনিক নারী অধিকার আন্দোলনের বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। সেটিই ছিল আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রকাশ্য সম্মেলন, যা আয়োজিত হয়েছিল শুধু নারীদের সামাজিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে আলোচনার জন্য। শুধু এর আয়োজক হিসেবে নয়, উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে একাধিক জাতীয় নারী অধিকার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মার্থা। ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ইকুয়াল রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। সাম্যবাদে বিশ্বাসী একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন মার্থা। তিনি কাজ করেছেন দাসপ্রথার বিরুদ্ধে। নিউইয়র্কের অবার্নে তাঁর বাড়িটি ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড রেল রোডের একটি অন্যতম প্রধান স্টেশনের পাশেই। তিনি পালিয়ে আসা দাসদের আশ্রয় দিতেন এবং তাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতেন।
সাত সন্তানের জননী মার্থা পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক লড়াইয়ে কখনো পিছপা হননি। তাঁর জন্ম ১৮০৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ১৮৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি মৃত্যুর পর তাঁকে অবার্নের ফোর্ট হিল সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।

কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
২১ ডিসেম্বর ২০২২
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
১ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
১ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
১ দিন আগে