Ajker Patrika

খাড়া পর্বতের গায়ে ঝুলছে কেবিন, সেখানেই রাত কাটানোর সুযোগ

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ২৩
খাড়া পর্বতের গায়ে ঝুলছে কেবিন, সেখানেই রাত কাটানোর সুযোগ

একটি পর্বতের খাড়া গায়ে ঝুলতে থাকা স্বচ্ছ একটি ক্যাপসুল বা ছোট কেবিনে রাত কাটাতে কেমন লাগবে? পেরুর কুজকো অঞ্চলের দুর্গম পর্বতে অবস্থিত স্কাইলজ অ্যাডভেঞ্চার স্যুইটস আপনাকে এমন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা উপভোগেরই সুযোগ করে দেবে।

বুঝতেই পারছেন, আশ্চর্য এই কেবিনে থাকার জন্য দুঃসাহসী হওয়াটা প্রথম শর্ত। সেখানে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে পর্বতের ৪০০ মিটার (১ হাজার ৩০০ ফুট) ওপরে উঠতে হবে। সে জন্য হয় দড়িদড়া ব্যবহার করে খাড়া পথে উঠে যেতে হবে, নতুবা দুর্গম ট্রেইলে হেঁটে যেতে হবে। অবশ্য একটি জিপ লাইন ধরেও পৌঁছে যেতে পারবেন লজটিতে। আর একবার সেখানে পৌঁছে গেলে নিচের উপত্যকার ও চারপাশের পাহাড়ি রাজ্যের যে অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, এর তুলনা নেই। আর রাতের বড় আকর্ষণ ওপরের নক্ষত্রখচিত আকাশ। 

পেরুর কুজকো অঞ্চলের দুর্গম পর্বতে অবস্থান স্কাইলজ অ্যাডভেঞ্চার স্যুইটসের। ছবি: ফেসবুকপর্বতের গায়ে এই খুপরি বা ক্যাপসুলগুলোর পেছনে আছে অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানি ন্যাচার ভাইভ। অতিথিদের ভেতরের রোমাঞ্চপ্রেমী মনটিকে জাগিয়ে তোলার পরিকল্পনা থেকেই তারা এমন উদ্ভট একটি কাজ করে বলে জানা গেছে। কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানায়, আশ্চর্য এই কাঠামোগুলো তৈরিতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সরঞ্জাম ওপরে তোলা এবং নকশাটা এমনভাবে করা যেন প্রবল বাতাসের ঝাপটায়ও এগুলোর কোনো ক্ষতি না হয়। 

তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, অ্যালুমিনিয়াম এবং বৈরী আবহাওয়ায় টিকে থাকতে সক্ষম পলি কার্বোনেট থেকে তৈরি করা হয়েছে খুদে এই আবাসগুলো। ন্যাচার ভাইভও এই আবাস টেকসই এবং পর্যটকেরা সেখানে নিরাপদে থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে। 

ওপরে ওঠার পথটি মোটেই সহজ নয়। ছবি: বুকিং ডট কমঅবাক করা ব্যাপার হলো, এত ওপরের এই কেবিনগুলো যথেষ্ট আরামদায়কও। একটি ডাবল বেডের পাশাপাশি আছে টয়লেট, বেসিন এবং পানির ব্যবস্থা। দুজনের চমৎকার একটি ডিনার, সকালের নাশতাসহ এক রাতের জন্য আপনাকে খরচ গুনতে হবে এক লাখ টাকার মতো। 

২০১৩ সালে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকে এই হোটেল কিংবা লজ পর্যটকদের বড় আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এখানকার আরেকটি বড় সুবিধা, এই লজ থেকে প্রাচীন ইনকা নগরী মাচুপিচুর দূরত্ব মোটে ১২ কিলোমিটার। 

ওপর থেকে নিচের উপত্যকার অসাধারণ দৃশ্য উপভোগের সুযোগ মেলে। ছবি: ফেসবুকসূর্যাস্ত উপভোগের জন্যও এর জুড়ি মেলা ভার। এখান থেকে অস্তায়মান সূর্যের আলোয় উরুবাম্বা উপত্যকা বা সেক্রেড ভ্যালি আপনার সামনে হাজির হবে মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য নিয়ে। 

সকালে আরামদায়ক একটি কম্বল বা লেপ গায়ে জড়িয়ে উপভোগ করবেন পাহাড়ি এলাকার অবিশ্বাস্য সুন্দর সূর্যোদয়। আপনি যদি বন্য প্রাণিপ্রেমী হন; পাহাড়ি শকুন কনডরসহ আন্দিজ পর্বতমালার বিভিন্ন ধরনের পাখির দেখা পেয়েও খুশি হয়ে উঠবেন। নাশতা সেরে যখন একটি জিপ লাইনে চেপে নেমে আসবেন, তখন হয়তো মনটা ভার হয়ে থাকবে এমন একটি জায়গা ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে হওয়ায়। 

ক্যাপসুলগুলো স্বচ্ছ হওয়ায় চারপাশের দৃশ্য চমৎকার দেখা যায়। ছবি: ফেসবুকপূর্ববর্তী অতিথিরা ন্যাচার ভাইভ স্কাইলজে তাদের অবস্থানকে রোমাঞ্চকর ও দুঃসাহসিক এক অভিজ্ঞতা বলেই উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে রাতের আকাশের নিচে ঘুমানোটাকে এই লজ সম্পূর্ণ নতুন এক স্তরে নিয়ে যায় বলে মনে করেন তাঁরা। চাঁদ ও তারাকেও স্বচ্ছ ক্যাপসুল থেকে অবিশ্বাস্যভাবে কাছাকাছি মনে হয়েছে তাঁদের। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা থেকে আসা লরেন ক্রেগেল যেমন বলেছেন যে এখানকার পুরো অভিজ্ঞতাটি ছিল দারুণ উপভোগ্য। 

পেরুর কুজকো এলাকায় আশ্চর্য এই হোটেল বা লজটির অবস্থান। ছবি: বুকিং ডট কম‘ওপরে ওঠাটা ছিল আনন্দদায়ক। আমি উচ্চতাকে ভয় পাই না। কিন্তু এমন কিছু মুহূর্ত ছিল যখন নিজে নিজেই বলে উঠেছি “ওয়াও! আমি অনেক উঁচুতে!” খাবারটাও ছিল অবিশ্বাস্য। একটি টয়লেট, সিঙ্কসহ ক্যাপসুলটি খুব আরামদায়ক এবং আধুনিক ছিল। পর্দা সরিয়ে দিয়েছিলাম, যাতে তারার খুব কাছে ঘুমিয়ে পড়ার একটি অনুভূতি হয়।’ 

আশ্চর্য এই হোটেলে লরেন একাই ছিলেন। কিন্তু এতে অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হননি। ‘অন্য অতিথিরা জোড় বেঁধে এসেছিলেন, তবে এটি অবশ্যই এমন একটি অভিজ্ঞতা, যেটি একা উপভোগ করলেও সমস্যা নেই।’ বলেন লরেন।

ক্যাপসুলের ভেতরে দুই পর্যটক। ছবি: ফেসবুকন্যাচার ভাইভের ডাইনিং ক্যাপসুলে পেরুর নিজস্ব ঘরানার খাবারের স্বাদ পাওয়ার পাশাপাশি চারপাশের অসাধারণ ও ব্যতিক্রমী দৃশ্য উপভোগের সুযোগ মিলবে আপনার। শুনে খুশি হবেন, আপনার রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা ক্যামেরায় বন্দী করার জন্য লজ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আলোকচিত্রীও আছে। 

আপনার যদি উচ্চতাভীতি না থাকে এবং রোমাঞ্চপ্রিয় একটি মন থাকে, তবে রাতের সেরা ঘুম হতে পারে এখানে। কিংবা কে জানে, হয়তো ঘুমালেনই না, সারা রাত প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপ দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দিলেন! 

সূত্র: কালচার ট্রিপ, সিএনএন, ইউরো নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ

এক চুরির ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেল নিউজিল্যান্ডে। এক ব্যক্তি একটি বহুমূল্য হীরকখচিত লকেট চুরি করতে গিয়ে তা গিলে ফেলেন। তবে অবশেষে সেই লকেটটি ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, লকেটটি উদ্ধার করতে ‘মেডিকেল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি’।

৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্যারট্রিজ জুয়েলার্সের দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, লকেটটি গিলে ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ধরা হয়। চুরির প্রায় এক সপ্তাহ পরে এই মূল্যবান জিনিসটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো।

ফেবার্গে এগ-এর আদলে তৈরি এই লকেটটির মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৩ লাখ টাকার বেশি)। জুয়েলারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গিলে ফেলা এই লকেটটিতে ৬০টি সাদা হিরা এবং ১৫টি নীলকান্তমণি বসানো রয়েছে। লকেটটি খুললে এর ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি ছোট অক্টোপাস দেখা যায়। এই কারণে লকেটটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অক্টোপাস ডিম’। ১৯৮৩ সালের জেমস বন্ড ছবি ‘অক্টোপাসি’ থেকে অনুপ্রাণিত।

চুরি করার পর থেকেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে রেখে লাগাতার নজরদারি চালাচ্ছিল। নিউজিল্যান্ড পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, যেহেতু এই ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, তাই যা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য।

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু এই লকেট চুরিই নয়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরি করেছিলেন তিনি। এর একদিন পরে একটি ব্যক্তিগত ঠিকানা থেকে ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের লিটার এবং ফ্লি কন্ট্রোল (মাছি নিয়ন্ত্রণ) পণ্য চুরি করেন।

প্যারট্রিজ জুয়েলার্স জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া এই বিরল ফেবার্গে লকেটটি নির্মাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডে এক ব্যক্তি হীরাখচিত লকেট চুরি করেছেন এমন এক উপায়ে, যা শুনলে সিনেমার দৃশ্যই মনে হয়। দোকানদারেরা টের পাওয়ার আগেই তিনি লকেটটি গিলে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে, গিলে ফেলা ফ্যাবারজে এগ লকেট, যার মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (১৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার) এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, গত শুক্রবার বিকেলে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে পারট্রিজ জুয়েলার্সে পুলিশ ডাকা হলে ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

জুয়েলারির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যে ফ্যাবারজে এগ চুরি করা হয়েছে, তাতে রয়েছে ৬০টি সাদা হীরা এবং ১৫টি নীল নীলা। ডিমটি খুললে দেখা যায়, ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার একটি ছোট্ট অক্টোপাস।

ডিমটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অক্টোপাসি এগ’, যা ১৯৮৩ সালের একই নামের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রাণিত; যার কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে এক জটিল ফ্যাবারজে এগ চুরির ঘটনা।

ফ্যাবারজে দুই শতাব্দীর বেশি আগে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এক বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড, যা রত্ন ও মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি ডিম-আকৃতির শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত।

বিবিসি জানিয়েছে, ৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির। তিনি গত ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরির অভিযোগেও অভিযুক্ত। পরদিন ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কারের সামগ্রী ও পিঁপড়া নিয়ন্ত্রণের পণ্য চুরির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জরায়ুহীন হয়ে জন্মেছিলেন, তাঁর হয়ে সন্তান জন্ম দিলেন প্রিয় বন্ধু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৪
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি

সদ্য মা হয়েছেন জর্জিয়া ব্যারিংটন। কিন্তু মেয়ে ওটিলিকে তিনি জন্ম দেননি। জন্ম দিয়েছেন তাঁর প্রিয় বন্ধু ডেইজি হোপ; যিনি কিশোর বয়সে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে জর্জিয়ার হয়ে সন্তানের জন্ম দেন।

দুই বন্ধু ছোটবেলা থেকেই অবিচ্ছেদ্য। তাঁরা নিজেদের ‘সোল সিস্টার্স’ বলে ডাকেন। একসঙ্গে বড় হয়েছেন। তাঁদের বাবারাও ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

শৈশবের সেই বন্ধনই একদিন হয়ে ওঠে জীবন বদলে দেওয়া উদারতার ভিত্তি।

১৫ বছর বয়সে জর্জিয়া এমন কিছু জানতে পারেন, যা কোনো অল্প বয়সী মেয়ে আশা করে না। তিনি জরায়ু ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং কোনো দিন সন্তান ধারণ করতে পারবেন না।

মেয়ার-রোকিটানস্কি-কুস্টার-হাউসার সিনড্রোম বিরল এক জন্মগত রোগ, যা প্রতি ৫ হাজার নারীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। জর্জিয়ার মনে হয়েছিল, একমুহূর্তে তাঁর ভবিষ্যৎটা যেন বদলে গেল।

১৫ বছর বয়সকালের সেই ঘটনা মনে করে জর্জিয়া বলেন, ‘আমার গোটা পৃথিবীই ভেঙে পড়েছিল। আমি সব সময় ভেবে বড় হয়েছি, আমি একজন মা হব আর সেটা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। আমি যা কিছু স্বপ্ন দেখেছিলাম, সবই শেষ হয়ে গেল।’

সে সময় ডেইজি খুব মাতৃত্বপ্রবণ ছিলেন না। কিন্তু তিনি বন্ধুর রোগ নির্ণয়ের কথা এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন। তাঁর কাছে ‘অন্যায়’ মনে হয়েছিল—যে বন্ধু মাতৃত্বের স্বপ্ন দেখতেন, তিনি কিনা মা হতে পারবেন না!

এমা বার্নেটের সঙ্গে ‘রেডি টু টক’ অনুষ্ঠানে ডেইজি বলেন, ‘আমি তাঁকে ভরসা দিতে চেয়েছিলাম, বোঝাতে চেয়েছিলাম—পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি। তাই বলেছিলাম, একদিন আমি তাঁর হয়ে সন্তান ধারণ করব। তখন হয়তো বুঝিনি কথাটার গভীরতা কতটা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানতাম, জর্জিয়ার জন্য আমি এটা করবই।’

১০ বছরের বেশি সময় পরে ডেইজি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। ২০২৩ সালে দুই বন্ধু মিলে আইভিএফ প্রক্রিয়া শুরু করেন।

জর্জিয়া একজন ধাত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নিজেকে এমন এক জগতে নিমজ্জিত করেছিলেন, যে জগতে তিনি হয়তো কোনো দিন অংশ নিতে পারবেন না বলে ভয় পেয়েছিলেন।

জর্জিয়া বলেন, ‘একবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এটা কি আমার জন্য সঠিক পেশা? কিন্তু আসলে এটা আমাকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। আর অন্তর থেকে জানতাম—কোনো না কোনোভাবে আমি মা হবই।’

কয়েক বছর পরে ডেইজি তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। আর সেই প্রসবে ধাত্রী ছিলেন জর্জিয়াই।

ডেইজি বলেন, ‘আমার সন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা অনুভব করেছি, তা ছিল অসাধারণ। তখন মনে হয়েছিল, প্রত্যেকেরই তো এই অনুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিড়ালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করল নিউজিল্যান্ড সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০৫০ সালের মধ্যে বন্য বিড়াল বা মালিকহীন বিড়াল নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির সংরক্ষণমন্ত্রী তামা পোতাকা গত শুক্রবার এই ঘোষণা দেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার বন্য বিড়ালকে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বস্বীকৃত ‘প্রিডেটর-ফ্রি ২০৫০’ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় কিছু শিকারি প্রাণীকে যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ চালু হওয়ার পর প্রথমবার কোনো নতুন শিকারিকে এ তালিকায় যুক্ত করা হলো।

দীর্ঘদিন ধরেই নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় বন্য বিড়াল ধরা ও মেরে ফেলা হচ্ছিল। তবে তালিকায় যুক্ত হওয়ায় এবার তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত জাতীয় পর্যায়ের অভিযানে নামবে সরকার—যার মধ্যে থাকবে বৃহৎ আকারের নির্মূল কর্মসূচি ও বিশেষ গবেষণা। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে ২০২৬ সালের মার্চ মাসে।

নিউজিল্যান্ডের বনভূমি ও উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে বর্তমানে ২৫ লাখেরও বেশি বন্য বিড়াল ও মালিকহীন বিড়ালের বিচরণ। লেজসহ এসব বিড়ালের দৈর্ঘ্য এক মিটার এবং ওজন প্রায় সাত কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এসব বন্য বিড়াল দেশটির দুর্লভ প্রাণিজগৎ ধ্বংসের মূল কারণগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে একধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মাউন্ট রুয়াপেহু এলাকায় তারা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ বাদুড় শিকার করায় সে প্রজাতিও হুমকিতে।

রেডিও নিউজিল্যান্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংরক্ষণমন্ত্রী পোতাকা বন্য বিড়ালকে আখ্যা দেন ‘স্টোন-কোল্ড কিলার’ বা নির্দয় শিকারি হিসেবে। তিনি বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বনভূমির সৌন্দর্য বজায় রাখা এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এসব হত্যাকারীকে সরিয়ে ফেলতেই হবে।’

বন্য বিড়ালকে তালিকায় যুক্ত করা নিয়ে বহু বছর ধরে প্রচারণা চললেও অতীতে বিষয়টি নিয়ে প্রবল জনমত-বিরোধিতা দেখা গেছে। পরিবেশবিদ গ্যারেথ মরগান ২০১৩ সালে ‘ক্যাটস টু গো’ প্রচারণা শুরু করলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে এবার সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খসড়া কৌশল নিয়ে জনমতের ৯০ শতাংশই বন্য বিড়াল নির্মূল করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এদিকে, গৃহপালিত বিড়াল এ তালিকায় না থাকলেও সেগুলোও দেশটির জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে বিড়াল পালনের দিক থেকে নিউজিল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত