Ajker Patrika

করোনা নির্মূল বটিকা ও বাস্তবতা

ফখরুল ইসলাম
করোনা নির্মূল বটিকা ও বাস্তবতা

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক হারে বাড়ছে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। চোখে সরষে ফুল দেখছেন অনেকেই। বিশেষত নিম্নবিত্ত মানুষ আছেন শাঁখের করাতের ওপর বসে। একদিকে করোনা, অন্যদিকে অভাব দুই–ই কাটছে তাদের। বলে রাখা ভালো–যারা বলেন, দেশে কেউ দায়িত্বশীল নেই, তাদের মুখে ছাই ছিটাতেই বুঝে তাঁরা মুখের সব আগল খুলে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে পদাধিকারবলেই সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

অভয়বাণী
দেশে প্রথম প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের আগে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে বসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ‘এই ভাইরাস বাংলাদেশে আসবে না। এটি যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে, এ জন্য দেশের সব বন্দরে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

উদ্দেশ্য সৎ ছিল নিশ্চয়। করোনা আতঙ্কে দিন কাটানো গোটা বিশ্বের সামনে নজির সৃষ্টি করতেই বুঝি তিনি এ কথা বলেছিলেন। আশ্বস্ত করতে চাইলেন মানুষকে। কিন্তু মানুষ? ভুল বুঝল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু দুরাচারী রীতিমতো ট্রল শুরু করল। এখানে থামলেও হতো। জেগে উঠল সংগঠনগুলো। বক্তৃতা হলো, বিবৃতি হলো। এমনকি মানবন্ধনও হলো করোনা নিয়ে। বিশ্বের ইতিহাসে এটাই প্রথম কিনা খুঁজে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা।

বাস্তবতা:
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তাবৎ সু–উদ্দেশ্যকে কাঁচকলা দেখিয়ে করোনা ঠিকই চলে এল দেশে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলো। বাকিটা ইতিহাস—যা এখনো চলমান।

গবেষকের ভূমিকা
মানুষের আতঙ্ক কমাতে কী না করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এমন মন্ত্রী হয় না। সেই সত্যযুগে থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এই যুগে এমন মন্ত্রী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা  শনাক্তের পর হাল না ছেড়ে দ্রুততম সময়ে একটি গবেষণা করলেন তিনি। গেবষণার ফলও জানিয়ে দিলেন তদ্‌নগদ। পরদিন ৯ মার্চ সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, ‘করোনাভাইরাস মারাত্মক রোগ নয়, ছোঁয়াচে।’

ভাগ্যিস আমাদের একটা সচিবালয় ছিল।

বাস্তবতা: 
করোনা মারাত্মক একটি ভাইরাস। একই সঙ্গে ছোঁয়াচেও। করোনা যে প্রানসংহারী তা তো পৃথিবীর ২৯ লাখের বেশি মানুষ মরে প্রমাণ করেছে।

প্রস্তুতিতে বিশ্বসেরা
গত বছরের ২৩ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবিলায় কেউ আগে থেকে প্রস্তুত থাকে না। বাংলাদেশ তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুত ছিল।

 বাস্তবতা
তিন মাস আগে তো দূরের কথা; বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশে এখনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রস্তুতির কোনো  লক্ষণ নেই। সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে প্রতিদিন যে হারে পরীক্ষা করানো হয়, তাতে সবার পরীক্ষা সম্পন্ন হতে পাঁচ–সাত বছর লাগবে।

পরিসংখ্যানবিদ
এত কিছুর পরও যখন কিছুতে কিছু হলো না, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিসংখ্যানবিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। গত বছরের ২৯ মার্চ  রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, ‘আমাদের প্রায় ৫০০ ভেন্টিলেটর আছে। অনেক বড় বড় দেশেও এত ভেন্টিলেটর থাকে না। ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থা কী রকম, সেটা আপনারা জানেন।’

 বাস্তবতা
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, ৩২ কোটি জনগণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ভেন্টিলেটর রয়েছে। আর ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এনএইচএসের হিসাবমতে, সাড়ে ছয় কোটি মানুষের বিপরীতে যুক্তরাজ্যে ভেন্টিলেটর রয়েছে প্রায় ছয় হাজার। জার্মান সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, দেশটির আট কোটি জনসংখ্যার জন্য রয়েছে ২৫ হাজার ভেন্টিলেটর। আগামী বছরের মধ্যে আরও ১০ হাজার ভেন্টিলেটর তৈরির জন্য স্থানীয় একটি কোম্পানিকে বলেছে দেশটির সরকার।

এ ছাড়া কানাডায় ৪ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে ৫ হাজার, ফ্রান্সের সাড়ে ৬ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে ভেন্টিলেটর রয়েছে ৬ হাজার ৬৫টি।

স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছরের জুনে যখন গোটা দেশ তটস্থ, তখন আবারও ত্রাতা হিসেবে সামনে এলেন জাহিদ মালেক। দুর্বার এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বলেন, ‘ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেশনে যারা গেছেন, প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন নতুন তত্ত্বের পর বেরসিক জনতা নামল সমালোচনায়। এ দেশের গুণীর কদর কে কবে করেছে?

বাস্তবতা
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বিভ্রান্ত মানুষকে সত্য সম্পর্কে নিশ্চিত করতে অনেক বিশেষজ্ঞ বললেন, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম এবং নিউমোনিয়াতে চলে যাওয়া রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর প্রয়োজন।

জ্যোতিষবিদ্যা
শুধু মানুষের কথা ভেবে আামাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কত বিদ্যাই না রপ্ত করেছেন! আগস্ট নাগাদ তাঁর জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রভূত দখলের প্রমাণ পেল দেশবাসী। গত ১৫ আগস্ট মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে জাহিদ মালেক মন্তব্য করেন, ‘ভ্যাকসিন লাগবে না। বেশি দিন লাগবে না; বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাস চলে যাবে।’

এই বক্তব্যের পর দেশের বহু প্রথিতযশা জ্যোতিষবিদ বাপ–দাদা থেকে পাওয়া জ্ঞানের চুলোয় আগুন দিয়ে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে অবিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে।

বাস্তবতা:
জনস্বাস্থ্যবিদেরা এই বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে বললেন, ‘বিজ্ঞানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞান বলছে, করোনা নিয়ন্ত্রণের দুটো উপায়। একটি ভ্যাকসিন। আরেকটা হল বিশ্ব স্বাস্থ্র সংস্থার নির্দেশনার সব পর্যায়ে প্রয়োগ।

দেশপ্রেমের নিদর্শন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী নতুন বছরের প্রথম মাসটি কীভাবে যেন চুপ থাকলেন। নিশ্চয় বড় কোনো সংকট ছিল। কিন্তু নীরবতা দীর্ঘ হলো না। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘হোয়াট বাংলাদেশ থিংকস টুডে, ইউএসএ থিংকস থ্রি মান্থস লেটার।’

বলার অপেক্ষা রাখে না দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়েই তিনি এমন কথা বলেছেন। আর বাংলাদেশের এমন অর্জনের কথা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতেই বেছে নিয়েছেন এ যুগের আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিকে। ভাষার মাস, তাতে কী।

বাস্তবতা
না বললেও চলে যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সত্য নয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু বিবেচনাতেই ঢের পিছিয়ে রয়েছে।

শেষ কথা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এমন পারফর্ম্যান্সে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিলেন অন্যরা। মাইক্রোফোন খুঁজে কে কী বলবেন, তা নিয়ে একটা হুজ্জত লেগে গিয়েছিল নিশ্চয়। অনেকে অনেক কথা বলেছেনও, কিন্তু তেমন মার্কেট পাননি। এ অবস্থায় প্রধান সেনাধ্যক্ষ হিসেবে সামনে এলেন ওবায়দুল কাদের। সরকারের জ্যেষ্ঠ এই মন্ত্রী মাঠে নেমেই ছক্কা মারলেন। দেশবাসীর মনোবল চাঙা করতে গত বছরের মার্চে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী।’

বাস্তবতা
কতটা শক্তিশালী, তা এখন দিনে ৮০–পেরোনো মৃত্যু দিয়েই আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝছি। তবে সবাই যে বুঝছে না, তা লোকেদের শপিংমল, বাজার, প্রমোদ ভ্রমণে প্রমাণ। অনেকে বেশ সচেতন হয়ে থুতনিতে মাস্ক লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সে অবস্থায় কেউ পাকড়াও করলে মিষ্টি করে হাসছেন। এই দুরন্ত সাহসীদের সাহস জুগিয়ে চলা মন্ত্রীবর্গকে সালাম ঠোকা ছাড়া আর কী করার আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাগ্দত্তা ‘বেশি খায়’, বিয়ে ভেঙে দিয়ে ক্ষতিপূরণ চাইলেন প্রেমিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৫
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক
প্রতীকী ছবি। ছবি: ফ্রিপিক

এক চীনা ব্যক্তি তাঁর প্রাক্তন বাগ্দত্তার বিরুদ্ধে মামলা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর বাগ্‌দত্তা ‘খুব বেশি খাবার খেতেন।’ তাই সম্পর্কের পেছনে ব্যয় করা সব টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জংলান নিউজের বরাত দিয়ে হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ৯ ডিসেম্বর এই যুগলকে নিয়ে আদালতের একটি শুনানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। হে পদবির ওই ব্যক্তি তাঁর বান্ধবী ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় হে দাবি করেন, তাঁর পরিবার কনেপক্ষকে অগ্রিম যৌতুক (ব্রাইড প্রাইস) হিসেবে যে ২০ হাজার ইউয়ান বা ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিল, তা তিনি ফেরত পেতে চান।

শুধু তা-ই নয়, সম্পর্কের সময় ওয়াংয়ের পেছনে খরচ হওয়া আরও ৩০ হাজার ইউয়ানও (৪ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার) দাবি করেন হে। এই খরচের তালিকায় তাঁর কেনা কালো টাইটস এবং অন্তর্বাসও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের একই গ্রামের বাসিন্দা হে এবং ওয়াং। এক ঘটকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং পরে বাগ্‌দান সম্পন্ন হয়। বাগ্‌দানের পর তাঁরা উত্তর চীনের হেবেই প্রদেশে হের পরিবারের মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁ চালাতে যান।

উল্লেখ্য, মালাতাং চীনের একটি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড, যা মাংস, সবজি ও নুডলসের ঝাল ঝোলে তৈরি করা হয়। ওয়াং সেখানে ছয় মাস কাজ করেন। তবে হের অভিযোগ, ওয়াং ‘সহজ কাজগুলো’ করতেন। হেইলংজিয়াং টিভিকে হে বলেন, ‘সে প্রতিদিন আমাদের মালাতাং খেত। আমাদের বিক্রির জন্য যা থাকত, তা-ও তার খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।’ তিনি আরও যোগ করেন, তাঁর পরিবারও ওয়াংয়ের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল। কারণ, তাদের মনে হয়েছে মেয়েটি বদলে গেছে।

আদালতে হে সেসব জিনিসের তালিকা পেশ করেন, যা তিনি ওয়াংয়ের জন্য কিনেছিলেন। জবাবে ওয়াং বলেন, ‘ও বড্ড বেশি হিসাবি। আমি তো ওর বান্ধবী ছিলাম।’ আদালতে তিনি হেকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি আমাকে যে টাইটস আর অন্তর্বাস কিনে দিয়েছিলে, সেগুলো কি তুমি নিজেও উপভোগ করনি?’

আদালত ৩০ হাজার ইউয়ান ফেরত দেওয়ার দাবিটি খারিজ করে দেন। বিচারক জানান, এগুলো ব্যক্তিগত জিনিস, যা উভয় পক্ষকেই আবেগীয় তৃপ্তি দিয়েছে। তবে অগ্রিম দেওয়া ২০ হাজার ইউয়ান যৌতুকের অর্ধেক টাকা ওয়াংকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের এই রায়ে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

চীনে যৌতুক বা ‘ব্রাইড প্রাইস’ একটি প্রাচীন প্রথা। বিয়ের সময় বরের পরিবার কনের পরিবারকে উপহার হিসেবে এই টাকা দেয়, যা মূলত মেয়েটিকে পরিবারে স্বাগত জানানোর একটি আন্তরিক প্রথা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ একে সেকেলে এবং নারীকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করার নামান্তর মনে করেন। আবার অনেকে একে বিয়ের পর নারীর ত্যাগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখেন।

২০২১ সালে কার্যকর হওয়া চীনের সিভিল কোড অনুযায়ী, যদি বিয়ে সম্পন্ন না হয় কিংবা বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস না করেন, তবে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি আদালত সমর্থন করতে পারেন।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ইন্টারনেটে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ও যদি এতই হিসাবি হয়, তবে কেন মেয়েটিকে বেতন দিল না?’ অন্য একজন লিখেছেন, ‘ওর বউ নয়, একজন আয়া দরকার ছিল।’ তৃতীয় আরেকজন লিখেছেন, ‘মেয়েটিকে অভিনন্দন যে সে এমন এক সংকীর্ণমনা মানুষের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি

ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাৎ পাওয়া একটি হিরার খোঁজ দুই বন্ধুর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় সম্প্রতি এক শীতের সকালে শৈশবের বন্ধু সতীশ খাটিক ও সাজিদ মোহাম্মদের হাতে ধরা পড়েছে ১৫.৩৪ ক্যারেটের মূল্যবান ওই হিরাটি। এটির বাজারমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পান্না জেলা ভারতের অন্যতম হিরা উত্তোলন অঞ্চল। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিজ নেওয়া একটি জমিতে কাজ করতে গিয়ে চকচকে পাথরটির সন্ধান পান সতীশ ও সাজিদ। পরে সেটি শহরের সরকারি হিরা মূল্যায়ন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক হিরা।

সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি
সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি

মূল্যায়ন কর্মকর্তা অনুপম সিং জানান, হিরাটির সম্ভাব্য দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শিগগিরই এটিকে সরকারি নিলামে তোলা হবে। এই নিলামে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, হিরার দাম নির্ভর করে ডলারের বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক রাপাপোর্ট রিপোর্টের মানদণ্ডের ওপর।

২৪ বছর বয়সী সতীশ খাটিক একটি মাংসের দোকান চালান, আর ২৩ বছরের সাজিদ মোহাম্মদ ফল বিক্রি করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার পান্নায় হিরা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত দিন কোনো বড় সাফল্য আসেনি।

উন্নয়ন সূচকে পান্না জেলা পিছিয়ে থাকা একটি এলাকা। এখানে দারিদ্র্য, পানির সংকট ও বেকারত্ব নিত্যদিনের বাস্তবতা। তবে এই জেলাতেই ভারতের অধিকাংশ হিরা মজুত রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়।

সাজিদের বাবা নাফিস জানান, বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করেও তাঁরা পেয়েছেন শুধু ধুলো আর কাঁচের টুকরো। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অবশেষে আমাদের ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।’ সংসারের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বিয়ের ব্যয় মেটাতে না পেরে হতাশা থেকেই জমিটি লিজ নিয়েছিলেন সাজিদ।

হিরা খোঁজার কাজ সহজ নয়। দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা ছুটির সময় মাটি খুঁড়ে, পাথর ধুয়ে, চালুনিতে ছেঁকে হাজারো কণার ভিড় থেকে সম্ভাব্য হিরা আলাদা করতেন সতীশ ও সাজিদ। পান্নার জেলা খনি কর্মকর্তা রবি প্যাটেল বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর তারা জমিটি লিজ নেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমন মানের হিরা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

এখনো নিলামের টাকা হাতে না পেলেও দুই বন্ধু আশাবাদী। বড় শহরে চলে যাওয়া বা ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আপাতত তাঁরা বাদ দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য—এই অর্থ দিয়ে নিজেদের বোনদের বিয়ে দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত