Ajker Patrika

ল্যাপটপ বাজারে আনল মটোরোলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ২৫
ল্যাপটপটি পাওয়া যাবে প্যান্টোন-কিউরেটেড ব্রোঞ্জ গ্রিন (সবুজ) ও ওয়েজউড (বেগুনি) রঙে। ছবি: মটোরোলা
ল্যাপটপটি পাওয়া যাবে প্যান্টোন-কিউরেটেড ব্রোঞ্জ গ্রিন (সবুজ) ও ওয়েজউড (বেগুনি) রঙে। ছবি: মটোরোলা

প্রযুক্তি খাতে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করতে এবার ল্যাপটপ নিয়ে এল মটোরোলা। ভারতের বাজারের জন্য উন্মোচন করা হয়েছে তাদের প্রথম ল্যাপটপ মটো বুক ৬০। পেশাজীবী, শিক্ষার্থী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে এই ডিভাইস। একই সঙ্গে মটোরোলা চালু করেছে মটো প্যাড ৬০ প্রো ট্যাবলেট।

মটো বুক ৬০-এর বৈশিষ্ট্য

মটো বুক ৬০-এ রয়েছে ১৪ ইঞ্চির ২.৮কে ওএলইডি ডিসপ্লে, যাতে রয়েছে ডলবি ভিশন, এইচডিআর ও টিইউভি সার্টিফিকেশন। এর রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্টজ। এই ল্যাপটপটি একটি মিলিটারি-গ্রেড ধাতব কাঠামো রয়েছে, যার ওজন মাত্র ১ দশমিক ৩৯ কেজি। ল্যাপটপটি পাওয়া যাবে প্যান্টোন-কিউরেটেড ব্রোঞ্জ গ্রিন (সবুজ) ও ওয়েজউড (বেগুনি) রঙে।

ডিভাইসটি চালিত হচ্ছে ইন্টেলের সর্বশেষ কোর ৫-২১০ এইচ এবং কোর ৭-২৪০ এইচ প্রসেসরে। সেই সঙ্গে থাকছে ১৬ জিবি ডিডিআর ৫ র‍্যাম (যা ৩২ জিবি পর্যন্ত আপগ্রেডযোগ্য) এবং সর্বোচ্চ ১ টেরাবাইট পিসিআইই ৪.০ এসএসডি স্টোরেজ। এটি উইন্ডোজ ১১ অপারেটিং সিস্টেমে চলবে।

ল্যাপটপটিতে রয়েছে স্মার্ট কানেক্ট নামের মাল্টি-ডিভাইস সিংক প্রযুক্তি, যা ব্যবহারকারীদের মটোরোলা স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের সঙ্গে সহজে সংযোগ করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে রয়েছে স্মার্ট ক্লিপবোর্ড, সুইপ টু শেয়ার এবং ফাইল ট্রান্সফার।

মটো বুক ৬০-এ রয়েছে ওয়াই-ফাই ৭ এবং ব্লুটুথ ৫ দশমিক ৪।

ল্যাপটপটিতে বেশ কয়েকটি পোর্ট রয়েছে। সেগুলো হলো—দুটি ইউএসবি টাইপে ৩.২ জেন ১, দুটি ইউএসবি টাইপ-সি ৩.২ জেন ১ (ডিসপ্লেপোর্ট ১.৪ সহ), একটি এইচডিএমআই পোর্ট, মাইক্রোএসডি কার্ড রিডার এবং ৩.৫ এমএম অডিও জ্যাক।

মিউজিক ও অডিও শোনার জন্য রয়েছে ডলবি অ্যাটমস সমর্থিত স্টেরিও স্পিকার। এদিকে ভিডিও কল বা অনলাইন ক্লাসের জন্য রয়েছে প্রাইভেসি শাটারসহ ১০৮০পি আইআর ওয়েবক্যাম। ডিভাইসটিতে আরও রয়েছে ডুয়েল মাইক্রোফোন এবং ৬০ ওয়াট-ঘণ্টা ব্যাটারি, যা ৬৫ ওয়াট ইউএসবি-সি ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করে। এ ছাড়া ল্যাপটপটি একাধিক এআইভিত্তিক ফিচারও দেখা যাবে।

মটো বুক ৬০ পাওয়া যাবে তিনটি ভিন্ন কনফিগারেশনে। সেগুলোর দাম হলো—

ইন্টেল কোর ৫ (১৬ জিবি র‍্যাম + ৫১২ জিবি এসএসডি) সংস্করণের মূল্য ৬১ হাজার ৯৯৯ রুপি বা প্রায় ৮৮ হাজার ১৬৩ টাকা

ইন্টেল কোর ৭ (১৬ জিবি র‍্যাম + ৫১২ জিবি এসএসডি) সংস্করণের মূল্য ৬৯ হাজার ৯৯৯ রুপি বা প্রায় ৯৯ হাজার ৫৩৯ টাকা

ইন্টেল কোর ৭ (১৬ জিবি র‍্যাম + ১ টিবি এসএসডি) সংস্করণের মূল্য ৭৩ হাজার ৯৯৯ রুপি বা প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ২২৭ টাকা।

ভারতে বাজারে ল্যাপটপটি পাওয়া যাবে ২৩ এপ্রিল ২০২৫ থেকে।

মটোরোলার নতুন ল্যাপটপ মটো বুক ৬০-এর সঙ্গে একই দিনে ভারতের বাজারে উন্মোচিত হচ্ছে তাদের নতুন ট্যাবলেট মটো প্যাড ৬০ প্রো। এই ট্যাবলেটটি মূলত অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক এবং পারফরম্যান্স ও ডিসপ্লে—দুই ক্ষেত্রেই ফ্ল্যাগশিপ মানের ফিচার নিয়ে এসেছে।

স্পেসিফিকেশন ও ফিচারসমূহ

মটো প্যাড ৬০ প্রোতে ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৮৩০০ চিপসেট। এতে সর্বোচ্চ ১২ জিবি এলপিডিডিআর ৫ এক্স র‍্যাম এবং ২৫৬ জিবি স্টোরেজ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, আছে মাইক্রোএসডি স্লট—যার মাধ্যমে স্টোরেজ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১ টেরাবাইট পর্যন্ত নেওয়া যাবে।

ট্যাবলেটটির ডিসপ্লে ১২.৭ ইঞ্চির এলটিপিএস এলসিডি, যার রেজল্যুশন ২,৯৪৪ x ১,৮৪০ পিক্সেল এবং রিফ্রেশ রেট ১৪৪ হার্টজ। এতে দেওয়া হয়েছে বিশাল ১০ হাজার ২০০ এমএএইচ ব্যাটারি, যা কোম্পানির দাবি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে পারবে।

ডিজাইন ও রঙের বিশেষত্ব

মটো প্যাড ৬০ প্রো মূলত লেনোভো আইডিয়া ট্যাব প্রোর মতো স্পেসিফিকেশন নিয়ে এসেছে। তবে এর বড় পার্থক্য হচ্ছে ডিজাইনে—এই ট্যাবলেটটি পাওয়া যাবে প্যান্টোন কিউরেটেড ব্রোঞ্জ গ্রিন রঙে (সবুজ), যা দেখতে বেশ নজরকাড়া। এর মূল্য ২৯ হাজার ৯৯৯ রুপি বা প্রায় ৪২ হাজার ৬৫৮ টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডায়াবেটিসের রোগীদের কেন সময় মতো খাবার খাওয়া জরুরি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যেখানে শর্করাজাতীয় খাবার বিপাকের জন্য শরীরে যতটুকু ইনসুলিন প্রয়োজন হয়, ততটুকু থাকে না। আপনারা জেনে থাকবেন, ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়—টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন একেবারেই থাকে না। তাই রোগ ধরা পড়ার সময় থেকে ইনসুলিন নিতে হয়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন থাকে, কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্য তা কাজ করতে পারে না। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগে শর্করাজাতীয় খাবারের বিপাকে সমস্যা হয়, তাই আমরা চিকিৎসকেরা এ ধরনের খাবার; যেমন চিনি, মিষ্টি, ভাত, মিষ্টি ফল, মধু ইত্যাদি পরিমাণমতো খেতে বলি। ডা. মাজহারুল হক তানিম, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ

কেন খাবারের সময় মেনে চলা জরুরি

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একই সময়ে নিয়মিত খাবার ও প্রয়োজন অনুযায়ী হালকা নাশতা খেলে রক্তে শর্করা তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে এবং শরীরের শক্তির মাত্রাও বজায় থাকে। বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এবং সেই সব টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেন।

খাবার বাদ দিলে কী সমস্যা হয়

খাবার না খেলে অনেক সময় পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এতে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। আবার নিয়মিত খাবার না খেলে রাতে ঘুমের মধ্যেও রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যাকে বলা হয় রাতের হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটি বিপজ্জনক হতে পারে; কারণ, ঘুমের মধ্যে অনেক সময় বোঝা যায় না কী হচ্ছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করা কমে গেলেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া আন অ্যাওয়ারনেস। এটি গাড়ি চালানো বা ব্যায়ামের সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সকালের নাশতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর নাশতা দিনের শুরুতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সারা দিন শক্তি ধরে রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে ভালোভাবে খেয়ে দুপুর ও রাতের খাবার তুলনামূলক হালকা রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনও কমে। অন্যদিকে, নাশতা বাদ দিলে বিকেল ও রাতে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ পরে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন।

দুপুর ও রাতের খাবার

দুপুর ও রাতের খাবারে প্রতিদিন প্রায় একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রাখা ভালো। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খুব দেরিতে রাতের খাবার খাওয়া উচিত নয়। ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে রাতের খাবার খেলে ওজন এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নাশতার প্রয়োজন

সব ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত নাশতার প্রয়োজন হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা ও ক্ষুধার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। তবে ইনসুলিন গ্রহণকারী বা যাঁদের রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হালকা নাশতা উপকারী হতে পারে। রাতে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে ঘুমের আগে অল্প নাশতা উপকারী হতে পারে।

ব্যায়াম ও খাবারের সময়

খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর হালকা ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে; বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। তবে যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ নেন, তাঁদের ব্যায়ামের আগে বা পরে সামান্য খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যায়ামের সময় পেশি বেশি গ্লুকোজ ব্যবহার করে, ফলে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। তাই ব্যায়ামের সময় খাবার ও ইনসুলিনের সমন্বয় চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।

নিজের জন্য সঠিক পরিকল্পনা কীভাবে করবেন

ডায়াবেটিসে খাবারের সময় ও ধরন ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে পরিকল্পনা করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো—

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সুষম খাবার খান।
  • কী খাচ্ছেন ও কখন খাচ্ছেন, তার সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা নোট করুন।
  • প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যকর নাশতা রাখুন।
  • ব্যায়ামের আগে ও পরে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করুন।

চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে খাবারের সময়সূচি ঠিক করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

সূত্র: হেলথ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গ্রামের নাম মহিষখোলা

সুমন্ত গুপ্ত
গ্রামের নাম মহিষখোলা

জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।

প্রকৃতির পালাবদলে শীতকাল এসেছে। তাই প্রকৃতির মাঝে চলেছে ঋতুবরণের পালা। আমরা চলেছি নতুন গন্তব্যে। পাগলা বাজারে এসে নামলাম। ঢুকে পড়লাম দয়াল মিষ্টান্ন ভান্ডারে। গরম-গরম পরোটা আর ভাজি দেওয়া হলো। পেটপূজা শেষ করে আমরা এগিয়ে চললাম গন্তব্যের পানে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসে পৌঁছালাম সুনামগঞ্জ শহরে। সেখান থেকে যেতে হবে তাহিরপুর। প্রায় আড়াই ঘণ্টা যাত্রা শেষে হাজির হলাম সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের রোজ গার্ডেনে। এখানে দুপুরের খাওয়া শেষে আবারও রওনা দিলাম তাহিরপুরের দিকে।

গ্রামীণ পথে চলার মজাই আলাদা। দুই পাশে ধানখেত। মাঝ দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। প্রায়

দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এসে আমরা পৌঁছালাম তাহিরপুর বাজারে। এবার আমাদের পাড়ি দিতে

হবে টাঙ্গুয়ার হাওর। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। মনে মনে সবাই খুশিই হলাম টাঙ্গুয়ার হাওর দেখা যাবে বলে। বাহন রয়েছে দুই ধরনের—ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর স্পিডবোট। আমরা চেপে বসলাম ইঞ্জিন নৌকায়।

টাঙ্গুয়ার ঢেউয়ের তালে তালে এগিয়ে চলছি। নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনধারা আমাদের মোহিত করছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে পৌঁছালাম ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর গ্রামে। সেখানে জন্য অপেক্ষা করছিলেন সোহাগ আর মুনিম নামে দুজন। আমরা চেপে বসলাম দুই চাকার বাহনে। এখান থেকে মহিষখোলা গ্রামের দূরত্ব ১০ মিনিট। এই বাইকে করেই সেখানে যেতে হবে। সময়মতো পৌঁছানো গেল মহিষখোলা গ্রামে।

শান্ত নীরব পরিবেশ। ঘাসফড়িং মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। এগিয়ে চললাম মহিষখোলা নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষে একখানা প্রায় নিশ্চিহ্ন টিনের ঘরের উদ্দেশে। এর অস্তিত্ব সরেজমিনে দেখেও কল্পনায় তার পূর্ণ রূপ দেখা কল্পনাবিলাসীদের জন্যও হয়তো দুরূহ হবে। তার আশপাশে ৪২ বছর ধরে মানুষের ছোঁয়া পড়েনি, তাই জঙ্গলাকীর্ণ। সেই ঘরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিতেন। পাকিস্তানি হানাদারদের মাঝেমধ্যে ধরে বন্দী করেও রাখতেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এই অঞ্চল ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সাব-সেক্টর। এর পশ্চিমে গা ঘেঁষে মহিষখোলা নদী, উত্তরে ২০০ গজের মধ্যে ভারত সীমান্তে মেঘালয় পর্বতমালা, পূর্বে সংখ্যাহীন খালবিল এবং বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওর। এর সঙ্গে রাগে-অনুরাগে জড়িয়ে আছে আরেকটি স্নিগ্ধ নদী—জাদুকাটা। শ্রীচৈতন্যের জ্যেষ্ঠ পার্ষদ অদ্বৈতাচার্য এই নদীপারের সন্তান ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াল সংঘর্ষ হয়। এতে অনেক যোদ্ধা মারা যান। মহিষখোলা নদীর পাড়ঘেঁষা সেই বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় তখনই, শহীদ যোদ্ধাদের গণকবর রচিত হয় তারই এদিক-সেদিক। তারপর ৪২ বছর লতা-গুল্ম-বৃক্ষের চাদরে ঢাকা ছিল এই ইতিহাস। বলছিলেন আমাদের সঙ্গী স্থপতি রাজন দাস। তিনি এখানে তৈরি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক। এখানে শায়িত আছেন একাত্তরের শহীদ হওয়া বীর প্রাণেরা।

পূর্ব-পশ্চিম অক্ষ বরাবর সমান্তরাল দুটি সুউচ্চ দেয়াল ৯ ফুট বেদির ওপর এসে দাঁড়ায়, তার ওপর ছায়া হয়ে ছাদ এসে বসে। সিঁড়ি ভেঙে পূর্ব দিকের প্রবেশবিন্দুতে চোখ রাখলে পশ্চিমের নদী আর তার গায়ে এসে পড়া আকাশ দেখা যায়। পূর্ব-পশ্চিম উন্মুক্ত হওয়ায় দুই দেয়ালের ঘর রচিত হয়ে যায়। উত্তর-দক্ষিণের ২৭ ফুট উঁচু দেয়ালে ব্যাকরণ ভেঙে অনেক ছোট-বড় জানালা আড়াল খুলে আলোর উৎস হয়ে ওঠে। ঠিক চোখ মেলে তাকানোর মতো। ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’ তারা তো বদ্ধ ঘরে থাকে না, যে ঘরে দোর-জানালায় অর্গল টানা, যে ঘরে আলোর ঝলক নেই, দোলা নেই, সে ঘরে স্বাধীনতা প্রবেশ করে না! তাই ‘সব কয়টা জানালা’ই খুলে রাখা হয়েছে। জানালা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যাংশ, যার ব্যবহারিক ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্য অতুলনীয়। এটি আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ের মতো।

চোখ দিয়ে যেমন আমাদের দেহ-ঘরে আলো প্রবেশ করে, আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা চোখ দিয়ে হয়, তেমনই দেয়ালকে মুক্তি দেয় জানালা। তবেই দেয়ালের চোখ ফুটে আলো-বাতাস প্রবেশ করে গৃহে প্রাণের সঞ্চার হয়। এ জন্যই ‘খোলা জানালা’ আর ‘স্বাধীনতার চেতনা’ সমার্থক হয়ে উঠেছে। বেদির তিন দিক ঘিরে রয়েছে পানির আধার, যা পশ্চিমে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। প্রতি বর্ষাতেই মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল নামলে নদী উপচে বেদির তলায় কিছুক্ষণের জন্য হাঁটুপানি জমে। এটা হাওরাঞ্চলের চেনা দৃশ্য। এভাবে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে ‘সব কটা জানালা’ খুলে আমাদের ডাকছে ওরা, ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’।

যাবেন কীভাবে

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি এনা, হানিফ, শ্যামলী, ইউনিকসহ অনেক কোম্পানির বাস এই পথে চলাচল করে। তবে অবশ্যই অগ্রিম টিকিট কেটে রাখুন। তাহলে ঝামেলায় পড়তে হবে না। সুনামগঞ্জ শহরে এসে এম এ খান সেতুর কাছে পাবেন মোটরবাইক অথবা গাড়ি। সেগুলোতে যেতে হবে তাহিরপুর বাজার। সেখান থেকে নৌকায় করে যেতে হবে মধ্যনগর গ্রামে। মধ্যনগর থেকে মহিষখোলা গ্রাম ১০ মিনিটের রাস্তা। দল বেঁধে ঘুরতে গেলেই বেশি আনন্দ করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাধবকুণ্ড ঝরনার পানিতে বিরল ঝরনাপাখি

নাকিব বাপ্পি
মাধবকুণ্ড ঝরনার পানিতে বিরল ঝরনাপাখি

ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।

ইংরেজিতে এর নাম প্লাম্বিয়াস ওয়াটার রেডস্টার্ট; আর দাঁতভাঙা বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিকিউরাস ফুলিগিনোসাস।

ডিসেম্বরের শুরুর দিকের ঘটনা। মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে এই পাখির আগমন ঘটেছে—খবরটি পেয়েই মন অস্থির হয়ে উঠল। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রী এর ছবি পোস্ট করে যেন সেই অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন। ভাবছি কী করা যায়! ঠিক তখন কাকতালীয়ভাবে সিলেট থেকে অতি প্রিয় এক আলোকচিত্রীর কল পেলাম। আমি কল রিসিভ করতেই তিনি বললেন, ‘চলে আসো।’ তারপর জানালেন কারা কারা থাকবেন, কখন উপস্থিত হবেন ইত্যাদি তথ্য।

পরদিন রাতের বাসে কয়েকজন মিলে রওনা দিলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।

ভোরে পৌঁছে দেখি, ফটোগ্রাফার শামীম ভাই আর তাঁর সঙ্গী-সাথিরা ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছেন। ফলে ‘মহাশয়কে’ খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হলো না। দীর্ঘ সময় নিয়ে মন-প্রাণ ভরে ছবি তুললাম। মাঝেমধ্যে ক্যামেরার শাটার চাপা থামিয়ে চর্মচক্ষু দিয়েও তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলিনি।

আকারে অত্যন্ত ছোট এই পাখির পুরুষ প্রজাতির গড় ওজন প্রায় ২২ গ্রাম আর স্ত্রী পাখির ১৮ গ্রাম। এত হালকা শরীরে কী পাহাড়সম সৌন্দর্যই না বয়ে বেড়ায় এরা!

শীতকালে পাহাড়ি নদীর ধারে এই ঝরনাপাখি অস্থায়ী নীড় বানায়। শীত বিদায় নিতেই চলে যায় গ্রীষ্মের গন্তব্যে। সেখানে পৌঁছেই সংসার গড়ায় মনোযোগী হয়। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী নীল পানগির্দি সাধারণত তিন অথবা চারটি হালকা গোলাপি-ধূসর কিংবা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিমে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে একাই দায়িত্ব পালন করে। তবে ছানা লালন-পালনের দায়িত্ব পুরুষটির কাঁধেও সমানভাবে বর্তায়।

বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এদের দেখা মেলে।

সবশেষে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে সাগরনালে নীলপরীর সন্ধানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, যা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভিন্ন এক গল্প। সেটি অন্য সময়ের জন্য তোলা থাক।

ক্যামেরা ব্যাগে নেওয়ার আগমুহূর্তে পাখিটি পানি আর মাটির সীমানাস্থলে এমনভাবে এসে বসল, দৃশ্যটা যেন এক ইলিউশন। মনে হলো, একটি পাখি হুট করে দুটো পাখি হয়ে গেছে। মনে মনে ‘ঝরনার জলে কার ছায়া গো’ বলতে বলতে সেদিনের মতো ক্লিক করলাম ঝরনাপাখির শেষ ছবিটি।

ছবি ও লেখা: নাকিব বাপ্পি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের পর্যটক কমায় ভারতে নিম্নমুখী আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।

ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্কিফট’ তাদের প্রতিবেদনে সরকারি মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, বৈশ্বিক ভ্রমণ দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার করা সত্ত্বেও ভারত পর্যটনের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। মহামারি-পরবর্তী ভ্রমণ প্রবণতার হার বাড়া, উন্নত বিমান সংযোগ এবং শিথিল ভিসা নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।

‘স্কিফট’ জানিয়েছে, ভারত এই প্রবৃদ্ধির সামান্য অংশ ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ট্যাক্স টিএমআই জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চে ২৬ দশমিক ১৫ লাখ পর্যটকের তুলনায় এপ্রিল থেকে জুনে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমন (এফটিএ) কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ লাখে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কিছুটা বেড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর সংসদে একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মোট বিদেশি পর্যটক আগমন দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৮৩ লাখ।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিক ভিত্তিতে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমনের তথ্য পেশ করেন। সেই সংখ্যাগুলো হলো জানুয়ারি-মার্চ বা প্রথম প্রান্তিক: ২৬ দশমিক ১৫ লাখ, এপ্রিল-জুন বা দ্বিতীয় প্রান্তিক: ১৬ দশমিক ৪৮ লাখ এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর বা তৃতীয় প্রান্তিক: ১৯ দশমিক ২০ লাখ।

শেখাওয়াত সংসদে তাঁর লিখিত জবাবে আরও জানান, বিদেশি পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ার মূল কারণ বাংলাদেশ থেকে আসার সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া। এ ছাড়া তিনি আরও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণের ধরনে মৌসুমি তারতম্য, চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দেশ-নির্দিষ্ট গতিশীলতা।

শেখাওয়াত বলেন, পর্যটনমন্ত্রী ভারতকে একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আকর্ষণীয় বৈশ্বিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে ভ্রমণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতের পর্যটনশিল্পের জন্য আরও একটি কঠিন বছর পার হতে চলেছে।

সূত্র: স্কিফট, ট্যাক্স টিএমআই, মিন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত