Ajker Patrika

মেসির এই কান্নার দায় কার

হাসনাত শোয়েব, ঢাকা
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২১, ১৩: ১৩
মেসির এই কান্নার দায় কার

ন্যু ক্যাম্পের ঘাসও হয়তো জানে লিওনেল মেসির স্পর্শ কেমন! মেসি যখন তার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে বিস্ময়কর সব রূপকথার জন্ম দিতেন, সেই ঘাসেরও কি গর্ব হতো না? এই কথাগুলো হয়তো আবেগ আর রূপকের। এর পেছনের যে বাস্তবতা, তা মোটেই রূপকথার চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।

মেসি-বার্সা সম্পর্কের বয়স ২১ বছর। এটি নিছক সাধারণ কোনো সম্পর্ক নয়। অনেক রাজনীতি, অর্থনীতি, সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব–নিকাশ তাতে জড়িয়ে আছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে বড় সত্যটা বোধহয় মেসির চোখের জল। ন্যু ক্যাম্পের অডিটরিয়াম ১৮৯৯-এ অশ্রুভেজা চোখে মেসি যেদিন বিদায় বলতে আসেন, সেদিন ‘মেসি কাঁদলেন, কাঁদালেন’ শিরোনামটাই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছিল। সব হিসাব–নিকাশের পরও চোখের জলই যে সত্যি।

‘বিংশ শতাব্দীতে শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর।’ বলেছিলেন তুরস্কের কিংবদন্তি কবি নাজিম হিকমত। বার্সা থেকে মেসির বিদায়ের শোক হয়তো আরও আগেই থেমে যাবে। কিন্তু ন্যু ক্যাম্পের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে মেসির ঝরঝর করে কেঁদে ফেলার মুহূর্তটা নিশ্চয় অমর হয়ে থাকবে।

মেসি বলেছেন শহর ও ক্লাবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা। তিনি তো শেষ পর্যন্ত থাকতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না কেন? কার দায়? যে ক্লাবকে মেসি নিজের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন, তারা কি নিজেদের সর্বোচ্চটা করেছে মেসিকে ধরে রাখতে? নাকি মেসির বিদায়ের রাস্তাটা তারাই তৈরি করে দিয়েছে? শুনতে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব মনে হলেও এই প্রশ্নগুলো একেবারেই অবান্তর নয়।

বার্সায় শেষ সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন লিওনেল মেসিমেসির কান্না সেদিন অনেক কথা বলে দিয়েছে, যার একটি হচ্ছে মেসি, তাঁর বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসি কিংবা আইনি পরামর্শক কেউই আসলে বুঝতে পারেননি, লা লিগার অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও বার্সার অদ্ভুত অর্থনৈতিক অবস্থার যোগসাজশটা আসলে কেমন। অথচ এই দুই পক্ষের তৈরি করা এমন উদ্ভট পরিস্থিতিই মেসিকে ক্লাব ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। বার্সার সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা ও বোর্ড জানত পরিস্থিতিটা আসলে কেমন। এমন কিছু যে হতে পারে, লাপোর্তার নির্বাচনের আগে-পরে তা আঁচ করা যাচ্ছিল। তারা জানত ক্লাবের বিশাল অঙ্কের বেতন কমাতে হবে এবং এবার দলবদলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয় নিয়ে আসতে হবে। এসব তাদের করতেই হতো, যদি তারা মেসিকে ধরে রাখার প্রয়োজন বোধ করত।

লা লিগার সভাপতি হাভিয়ার তেবাসও শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন যে, এই গ্রীষ্মে ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে নীতিতে কোনো ব্যতিক্রম ঘটবে না, এমনকি সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের জন্যও নয়। লাপোর্তা যখন জনসম্মুখে নিয়ম শিথিল করার কথা বলেছিলেন, তখন প্রতিবারই তেবাস বলেছেন, মেসি থাকতে পারেন। তবে সেটি করতে বার্সাকে নিয়মের ভেতরে থেকেই উপায় খুঁজতে হবে। সব মিলিয়ে কোথাও না কোথাও বোঝাপড়ার বিশাল ঘাটতি ছিল। বার্সা কর্তৃপক্ষ হয়তো এই বিশ্বাস নিয়েই ছিল যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিংবা তারা এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল।

মেসি নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছিলেন ক্লাবে থেকে যেতে। ৫০ শতাংশ বেতন কমানোর প্রস্তাবেও রাজি হয়েছিলেন। ক্লাব ও শহরের প্রতি ভালোবাসা থেকেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। যদি মেসি আগেই ক্লাব ছাড়তেন, বাজারে অবস্থানটাও আরও মজবুত থাকত। শুধু সময়ক্ষেপণের কারণে মেসির জন্য অনেকগুলো ক্লাবের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে আগের মৌসুমে তাঁকে নিতে চাওয়া ম্যানসিটিও রয়েছে।

ন্যু ক্যাম্প থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে লিওনেল মেসির পোস্টার

পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট ছিল যে বার্সার ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউরো ঋণের অর্থ হলো ক্লাবটিকে নিজেদের বেতন ২০১৯-২০ মৌসুমের ৬৭১ মিলিয়ন ইউরোর চূড়া থেকে ২০২১-২২ মৌসুমে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ, বিশ্ব ফুটবলের পরিপ্রেক্ষিতে বেতন নামিয়ে আনতে হবে এভারটন বা অ্যাস্টন ভিলার কাছাকাছি।

কিন্তু সমস্যার সমাধান না করে বার্সা গ্রীষ্মের দলবদলে একের পর এক খেলোয়াড় দলে টেনেছে। যে তালিকায় নাম আছে মেমফিস ডিপাই, আগুয়েরো, এরিক গার্সিয়া ও এমারসন রয়েলের। এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে গত মৌসুমগুলোয় সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে দলে টানা ফিলিপ্পে কুতিনহো, আতোয়াঁন গ্রিজমান ও উসমান দেম্বেলেকে। নাম আসতে পারে স্যামুয়েল উমতিতি ও মিরালেম পিয়ানিচেরও। যাঁরা এখনো ক্লাবে আছেন।

মেসি নিজেও বলেছেন, ৫০ শতাংশ বেতন কমাতে রাজি হওয়ার পর ক্লাব তাঁকে পরবর্তী জটিলতা সম্পর্কে কিছুই জানায়নি। প্রশ্ন তাই উঠতেই পারে, পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে মেসির কান্নার দায় এককভাবে বার্সা কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে বর্তায় কি না!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ