Ajker Patrika

অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে আফগানদের জয় কেড়ে নিলেন ম্যাক্সওয়েল

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১: ২৯
অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে আফগানদের জয় কেড়ে নিলেন ম্যাক্সওয়েল

জীবন পেলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যে কতটা ভয়ংকর হয়ে ওঠেন, সেটাই যেন আজ আবার নতুন করে প্রমাণ করলেন। আফগানিস্তানের পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে হারতে থাকা ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরিয়েছেন। একটা পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় ও তাঁর (ম্যাক্সওয়েল) ডাবল সেঞ্চুরির সমীকরণ চলে এসেছিল সমান্তরালে। শেষ পর্যন্ত এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন ম্যাক্সওয়েল। অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় ৪ রানেই। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে নাভিন উল হককে ড্রাইভ করতে যান ট্রাভিস হেড। আউটসাইড এজ হওয়া বল সহজেই তালুবন্দী করেছেন আফগানিস্তান উইকেটরক্ষক ইকরাম আলি খিল। ২ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি হেড। প্রথম উইকেট নেওয়ার পর নাভিনের সঙ্গে উল্লাসে মেতেছেন আফগান ক্রিকেটাররা।

প্রথম উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে আসেন মিচেল মার্শ। এসেই আফগানিস্তানের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন মার্শ। তবে অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে মার্শকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন নাভিন। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর মার্শও রিভিউ করেননি। ১১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। তাতে ভেঙে যায় দ্বিতীয় উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্শের ২৬ বলে ৩৯ রানের জুটি।

মার্শের পর দ্রুত ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন ওয়ার্নার।নবম ওভারের প্রথম বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ওয়ার্নার। ২৯ বলে ৩ চারে ১৮ রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি ব্যাটার। ঠিক তার পরের বলেই ওমরজাই পেয়েছেন আরও এক উইকেট। কাট শট খেলতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ান উইকেটরক্ষক ব্যাটার জস ইংলিশ প্রথম স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের তালুবন্দী হয়েছেন।

ওয়ার্নার, ইংলিশ টানা দুই বলে আউট হয়ে ফিরে গেলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয়ে যায় ৮.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৯ রান।ইংলিশ গোল্ডেন ডাক মারার পর  ব্যাটিংয়ে আসেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাক্সওয়েলকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে পরাস্ত করে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকের ব্যবস্থা করেই ফেলেছিলেন ওমরজাই। পরে রিভিউতে দেখা যায়, বল ব্যাটে লেগে তা আফগান উইকেটরক্ষকের কাছাকাছি গিয়ে ড্রপ করেছে।

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা মারনাস লাবুশেন ধীরে সুস্থে ব্যাটিং করতে থাকেন। ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা করছিলেন লাবুশেন। তবে বেশিক্ষণ টেকেনি ম্যাক্সওয়েল-লাবুশেনের পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ হয়েছে ৩৫ বলে ২০ রান। যেখানে ১৫তম ওভারের প্রথম বলে রশিদ খানকে মিড উইকেটে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে যান ম্যাক্সওয়েল। স্ট্রাইক প্রান্তে লাবুশেন পৌঁছানোর আগেই মিড উইকেট থেকে রহমত শাহর অসাধারণ ডিরেক্ট থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে যায়। তাতে অজিদের স্কোর হয়ে যায় ১৪.১ ওভারে ৫ উইকেটে ৬৯ রান।

অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ উইকেট পড়তে পারত ৭৩ রানেই। ১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে সদ্য ব্যাটিংয়ে আসা মার্কাস স্টয়নিসের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন রশিদ। রিভিউতে দেখা যায় বল ব্যাটে লাগেনি। আর প্যাডে লাগলেও আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লু থেকে বেঁচে যান স্টয়নিস। তবে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি তিনি। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে রশিদকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লুর ফাদে পড়েন স্টয়নিস। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। ৭ বলে ১ চারে ৬ রান করেছেন স্টয়নিস। তাতে অজিদের স্কোর হয়ে যায় ১৬.৪ ওভারে ৬ উইকেটে ৮৭ রান। 

এক ওভার বিরতিতে রশিদ যখন বোলিংয়ে আসেন, তখন অস্ট্রেলিয়াকে দিয়েছেন আরও এক ধাক্কা। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে স্টার্ককে কট বিহাইন্ড করেন রশিদ। তাতে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ১৮.৩ ওভারে ৭ উইকেটে ৯১ রান। এরপর ২২তম ওভারে গিয়ে জোড়া জীবন পেলেন ম্যাক্সওয়েল। ওভারের দ্বিতীয় বলে অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডারের বিপক্ষে নুর আহমাদ এলবিডব্লুর আবেদন করেন। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিলে দেখা যায় বল স্টাম্পের অনেক ওপর দিয়ে বেড়িয়ে যায়। তারপর একই ওভারের পঞ্চম বলে সুইপ করেছেন ম্যাক্সওয়েল। শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন মুজিব উর রহমান। ব্যক্তিগত ২৭ রান ও ৩৩ রানে ম্যাক্সওয়েল যখন জীবন পেয়েছেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ১০১ ও ১১২ রান।

জোড়া জীবন পাওয়া ম্যাক্সওয়েল ধীরেসুস্থে এগিয়েছেন।  ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নুরকে মিড অফ দিয়ে চার মেরে ফিফটি করেন ম্যাক্সওয়েল। ৫১ বলে ৭ চারে ফিফটি তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। এই নুরকেই ২৯তম ওভারের প্রথম ও দ্বিতীয় বলে টানা দুটি ছক্কা মেরেছেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিধ্বংসী হয়েছেন। তাঁকে (ম্যাক্সওয়েল) দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন ৯ নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা প্যাট কামিন্স। কামিন্স এক প্রান্ত আগলে রেখে সিঙ্গেল নিয়েছেন। অন্যপ্রান্তে বেধড়ক পেটাচ্ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। ৭৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার।

সেঞ্চুরির পর বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠেছেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁর একের পর এক বাউন্ডারিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ের গ্যালারি। বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই যেন অস্ট্রেলিয়াকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নুরকে লং অফে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ডান পায়ে মারাত্মক চোট পান ম্যাক্সওয়েল। ব্যথায় কাতড়াতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডারের ইনিংসই তখন শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ১০১ বলে ১৪৭ রান করার পর যখন তিনি যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছিলেন, তখনও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ৫৮ বলে ৫৫ রান। ওদিকে অ্যাডাম জাম্পা ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল যেন ম্যাচ জেতানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েই আজ মাঠে নেমেছেন। এক পায়ের ওপর ভর করে একের পর এক চার-ছক্কায় আফগানিস্তানের থেকে ম্যাচের লাগাম কেড়ে নিতে থাকেন ম্যাক্সওয়েল। ৪৬ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৭১ রান।

অস্ট্রেলিয়ার জিততে যেমন ২১ রান দরকার ছিল, ম্যাক্সওয়েলের রান ছিল তখন ১৭৯। যে মুজিবের হাতে জীবন পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার, সেই মুজিবই করতে এসেছেন ইনিংসের ৪৭তম ওভার। ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে টানা দুটি ছক্কা মারেন ম্যাক্সওয়েল। অজি অলরাউন্ডার পরের বলটা কাভার দিয়ে মেরেছেন চার। এরপর ওভারের পঞ্চম বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে ১৯ বল হাতে রেখে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিলেন ৩ উইকেটের জয়। একই সঙ্গে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও তুলে নিলেন ম্যাক্সওয়েল। তাতে নিশ্চিত হলো ২০২৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল। অজিদের এই জয়ে অধিনায়কের দায়িত্ব ব্যাটিংয়ে যথাযথভাবে পালন করেছেন কামিন্স। ৬৮ বলে ১২ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই প্রমাণ করে তিনি (কামিন্স) ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গীর দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছেন। ১২৮ বলে ২১ চার ও ১০ ছক্কায় ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ম্যাক্সওয়েল। পাশাপাশি বোলিংয়ে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদী। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ রান করেছে আফগানরা। ১৪৩ বলে  ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। বিশ্বকাপে আফগানদের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে গেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন জশ হ্যাজলউড। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল স্টার্ক ও জাম্পা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আবারও কিংসের বড় জয়, রাকিবের হ্যাটট্রিক অ্যাসিস্ট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড় জয় পেয়েছে কিংস। ফাইল ছবি
বড় জয় পেয়েছে কিংস। ফাইল ছবি

মৌসুমের শুরুটা তারা করেছে নবাগত পিডব্লিউডি স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে ড্র করে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশ ফুটবল লিগে টানা চার ম্যাচে জয় তুলে নিল বসুন্ধরা কিংস। আজ ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। এনিয়ে টানা দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৫ গোল করে বড় জয় আদায় করল মারিও গোমেসের দল।

মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে কিংসকে ৪১ মিনিটের বেশি সামলে রাখতে পারেনি ব্রাদার্স। রাকিব হোসেন ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ডানপ্রান্ত ত্রাস সৃষ্টি করা এই উইঙ্গার পেয়েছেন হ্যাটট্রিক অ্যাসিস্টের স্বাদ। যদিও গোলের দেখা পাননি। দোরিয়েলতনকে দিয়ে প্রথম গোলের উপলক্ষ্য এনে দেন তিনি। ডানপ্রান্ত দিয়ে বাড়ানো ক্রস দুই ডিফেন্ডারের মাথার ওপর দিয়ে হেডে জালে পাঠান দোরিয়েলতন।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। দোরিয়েলতনের শট ব্রাদার্স গোলরক্ষক ইশাক আলী ফিরিয়ে দিলেও রিবাউন্ড শটে জাল খুঁজে নেন তিনি।

বিরতির পর আরও ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে কিংস। ৫০ মিনিটে রাকিবের কাটব্যাক থেকে বার ঘেঁষে গোল আদায় করেন এমানুয়েল সানডে। চার মিনিট পর আবারও রাকিবের অ্যাসিস্ট। এবার তাঁর ব্যাকপাসে ডিফ্লেক্টেড শটে বল জালে পাঠান সোহেল রানা জুনিয়র। ৭৭ মিনিটে শাহরিয়ার ইমনের লং পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান দোরিয়েলতন। ৯০ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান কমান ব্রাদার্সের মোজাম্মেল হোসেন নীরা।

৫ ম্যাচে ৪ জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও পোক্ত করল কিংস।  দ্বিতীয় হারের স্বাদ পাওয়া ব্রাদার্স ৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে চারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদায়ী ম্যাচের আগে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন মেসির সতীর্থ

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৮
বার্সেলোনায় একসঙ্গে খেলার সময় ইন্টার মায়ামিতেও সতীর্থ জর্দি আলবা ও লিওনেল মেসি। আলবা আগামীকাল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবেন। ছবি: এএফপি
বার্সেলোনায় একসঙ্গে খেলার সময় ইন্টার মায়ামিতেও সতীর্থ জর্দি আলবা ও লিওনেল মেসি। আলবা আগামীকাল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবেন। ছবি: এএফপি

পেশাদার ক্যারিয়ারে কাউকে না কাউকে একদিন ফুলস্টপ তো দিতেই হয়। সেই বিদায়টা যদি হয় শিরোপা দিয়ে, তাহলে এর চেয়ে স্মরণীয় আর কী হতে পারে! জর্দি আলবারও ফুটবল ক্যারিয়ারের বিদায় বলার সময় এসে গেছে। আগামীকাল এমএলএস কাপ ফাইনাল ম্যাচটা তাই আলবার কাছে অন্য সব ম্যাচের চেয়ে আলাদা।

এ বছরের অক্টোবরে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন আলবা। ২০২৫ এমএলএস দিয়ে শেষ করবেন তাঁর দীর্ঘ ২০ বছরের ক্যারিয়ার। চেজ স্টেডিয়ামে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায় শুরু হবে এমএলএস কাপের ইন্টার মায়ামি-ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপস ফাইনাল ম্যাচ। এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন আলবা। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচের সময় মুহূর্তটা কেমন হবে, সেটা অনুভব করতে পারছেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সী স্প্যানিশ এই ডিফেন্ডার বলেন, ‘এটা একেবারে আলাদা। কারণ, আমি জানি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। অবশ্যই এটা ফাইনাল ম্যাচ। এর গুরুত্ব আছে। কিন্তু এটা ক্লাব ছাপিয়ে বড় কিছু। যা-ই হোক না কেন, আমি ছেড়ে যাচ্ছি। অবশ্যই শিরোপা দিয়ে শেষ করতে চাই।’

২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১১ বছর বার্সেলোনায় খেলেছেন জর্দি আলবা। যে ২০২৩ সালে মেসি প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছেড়ে ইন্টার মায়ামিতে গিয়েছেন, সে বছরই আলবা পাড়ি জমান ইন্টার মায়ামিতে। বার্সা থেকে যখন বিদায় নিয়েছিলেন, সেই মুহূর্তের কথা এমএলএস কাপ ফাইনালের আগের দিন স্মরণ করেছেন। আলবা বলেন, ‘আমি জানি না কীভাবে এটা সামলাব। সেই আবেগময় মুহূর্তটা অনুভব করা যায় না। বার্সেলোনার হয়ে আমার শেষ ম্যাচের দিনও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এটা (এমএলএস কাপ ফাইনাল) তো শুধু দলবদল নয়। আমার তো এরপর আর মাঠেই নামা হবে না।’

ইন্টার মায়ামি যেন বার্সেলোনার সাবেক ফুটবলারদের মিলনমেলা হয়ে উঠেছে। মেসি, সুয়ারেজ, সার্জিও বুসকেতস, আলবারা ফের মিলেছেন মায়ামিতে এসে। মেসি আসার পর ২০২৩ সালে লিগস কাপ, ২০২৪ সালে সাপোর্টার্স শিল্ড—এই দুটি শিরোপা জিতেছে মায়ামি। যে স্টেডিয়ামেই ইন্টার মায়ামির ম্যাচ হোক না কেন, মেসির খেলা দেখতে গ্যালারি ভরপুর হয়ে ওঠে। তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে ভক্ত-সমর্থকেরা উন্মুখ হয়ে থাকেন। গত বছর কোপা আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের যে স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার খেলা হয়েছে, সেখানে তাঁর জার্সি পরিহিত ভক্ত-সমর্থকদের মাঠে দেখা গেছে।

মেসি-সুয়ারেজদের সঙ্গে আবার যে পুনরায় একত্র হতে পেরেছেন, সেটা আলবার কাছে রোমাঞ্চকর। ৩৬ বছর বয়সী স্প্যানিশ ডিফেন্ডার বলেন, ‘নতুন একধরনের অভিজ্ঞতা হবে। তবে রোমাঞ্চকর। সাবেক সতীর্থদের সঙ্গে আবার পুনর্মিলন হয়েছে। ক্লাবটা (ইন্টার মায়ামি) কতটা গড়ে উঠেছে, সেটা স্পষ্ট। ফাইনালে ওঠা ইন্টার মায়ামির জন্য ঐতিহাসিক। তাদের সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলতে পেরে সৌভাগ্য।’ বার্সার জার্সিতে আলবা ছয়বার লা লিগা ও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। আগামীকাল এমএলএস কাপ ফাইনাল জিতলে মায়ামির হয়ে শিরোপার হ্যাটট্রিক করবেন তিনি। মেসির মতো আলবাও মায়ামির হয়ে লিগস কাপ ও সাপোর্টার্স শিল্ডের শিরোপা জিতেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন হরভজন

ক্রীড়া ডেস্ক    
৩৫৮ রান করেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেনি ভারত। ছবি: ক্রিকইনফো
৩৫৮ রান করেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেনি ভারত। ছবি: ক্রিকইনফো

টেস্টে পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার মতো বোলারের অভাব নেই ভারতের। যশপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ, আকাশ দীপরা নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের জন্য যমদূত হয়ে উঠেন। এদিক থেকে দলটির সাদা বলের ক্রিকেটের বোলিং লাইন ব্যতিক্রম বলে মনে করেন হরভজন সিংহ। তাঁর মতে, ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টিতে ভারতের যথেষ্ট ম্যাচ উইনিং বোলার নেই।

সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের বোলিং লাইনের দুর্বলতা কেমন চলমান দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজই সেটার বড় প্রমাণ। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৪৯ রান করেও স্বস্তিতে ছিল না স্বাগতিকেরা। বড় লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে ১৩০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও অলআউট হওয়ার আগে ৩২২ রান করে অতিথিরা।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতের পুঁজি ছিল আরও বেশি; ৩৫৮ রানের। এবার আর রক্ষা হয়নি লোকেশ রাহুলদের। ৪ বল এবং সমান উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮.২ ওভারে ৮৫ রান দেন প্রসিধ কৃষ্ণা। ১০ ওভার বল করা হার্শিত রানার খরচ ৭০ রান। এর আগে প্রথম ম্যাচেও খরুচে বোলিং করেছিলেন আর্শদীপ সিং, রানা, কুলদীপ, রবীন্দ্র জাদেজারা।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে হরভজন বলেন, ‘ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে বুমরাহ ছাড়াও সিরাজ অবিশ্বাস্য বোলিং করেছে। ভারত এমন সব টেস্ট জিতেছে যেখানে বুমরাহ খেলেনি। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে এমন সব বোলার খুঁজে বের করতে হবে যারা ম্যাচ জেতাতে পারবে। সেটা হোক পেসার কিংবা স্পিনার। এমন স্পিনার খুঁজে বের করতে হবে যারা মাঠে নেমে উইকেট নিতে পারে। দলে কুলদীপ আছে। কিন্তু বাকিদের কী হবে?’

দারুণ ফর্মে থাকার পরও অজানা কারণে দলের বাইরে আছেন মোহাম্মদ শামি। যেটা নিয়ে ভারতীয় ম্যানেজমেন্টকে ধুয়ে দিয়েছেন হরভজন, ‘শামি কোথায়? আমি জানি না কেন তাকে খেলাতে হচ্ছে না। আমি বুঝতে পারছি, দলে প্রসিধ আছে। সে একজন ভালো বোলার। কিন্তু তার এখনো অনেক কিছু শেখার আছে। দলে কয়েকজন ভালো বোলার ছিল। ধীরে ধীরে তাদের দলের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুমরা দলে থাকলে ভারতের বোলিং আক্রমণ ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সে না থাকলে তেমন ধার থাকে না। তাই ভারতীয় দলকে বুমরা ছাড়া আমাদের খেলা জেতার কৌশল শিখতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাকিবের রেকর্ড ভেঙে আইসিসির সেরাদের তালিকায় তাইজুল

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৬
আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ছবি: বিসিবি
আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ছবি: বিসিবি

টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা এখন তাইজুল ইসলামের। সাকিব আল হাসানের ২৪৬ উইকেট ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ২৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গত মাসে গড়েছেন তাইজুল। আয়ারল্যান্ড সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সেরাদের তালিকায় নাম উঠে গেছে তাইজুলের।

আইসিসি আজ নিজেদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পুরুষ, নারী দুই বিভাগেই নভেম্বর মাসের সেরা ক্রিকেটারের মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। ছেলেদের ক্রিকেটে গত মাসের সেরাদের তালিকায় তাইজুলের প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকার সায়মন হারমার ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজ। তাইজুল গত মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্টই খেলেছেন। আইরিশদের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়ে জিতেছেন সিরিজসেরার পুরস্কার।

নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট নিয়েছেন সায়মন হারমার। এই ১৭ উইকেট তিনি পেয়েছেন ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে। ভারতকে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্পিনার ম্যান অব দ্য সিরিজও হয়েছেন। নভেম্বর মাসের সেরা হওয়ার দৌড়ে থাকা পাকিস্তানের নাওয়াজেরও গত মাসটা দুর্দান্ত কেটেছে। বোলিংয়ে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। যার মধ্যে ১০টিই নিয়েছেন জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে হওয়া ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের পর ফাইনালসেরা, সিরিজসেরা দুটি পুরস্কারই তিনি পেয়েছেন। ব্যাটিংয়ে করেছেন ১৫৬ রান। যার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর একটি ফিফটি রয়েছে। নাওয়াজের সমান ১৫ উইকেট নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের জ্যাকব ডাফি।

আইসিসির নভেম্বরে মেয়েদের মাসসেরাদের তালিকাতেও তিন ক্রিকেটার তিন দেশের। ভারতের শেফালি ভার্মার সঙ্গে এই তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন থাইল্যান্ডের থিপাচা পুত্তাওয়াং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইশা ওঝা। শেফালি গত ২ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ভারতের নারী ক্রিকেটের

ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তিনি পেয়েছেন ফাইনালসেরার পুরস্কার। ৭৮ বলে ৮৭ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবশেষ ম্যাচ সাকিব খেলেছেন গত বছরের অক্টোবরে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে। গত ১৪ মাসে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার সুযোগ পাননি। যদি নিয়মিত হতে পারতেন, তাহলে তাঁর সঙ্গে তাইজুলের বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর লড়াইটা হতো সমানে সমানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন নন সাকিব। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), যুক্তরাষ্ট্রের মাইনর লিগ ক্রিকেট (এমআইএলসি) এই দুই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত