Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

সবাই কথা বলার অভ্যাসটা গড়ে তুলছে

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ ছক্কা সবই তানজিদ হাসান তামিমের। ছবি: এএফপি

আয়ারল্যান্ড সিরিজের পরই জাতীয় দলের বেশিরভাগ সতীর্থ গেছেন ছুটিতে। তানজিদ হাসান তামিম সেখানে ব্যতিক্রম। ছুটিতে অনুশীলন ক্যাম্প করছেন কোচিং স্টাফদের সঙ্গে। অথচ টি-টোয়েন্টি এ বছর এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ ছক্কা, এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন তানজিদ। কাল আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুধু বছরটা ফিরে দেখেননি, তরুণ বাঁহাতি ওপেনার চোখ রেখেছেন আসন্ন বিপিএল ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৩

প্রশ্ন: এ বছরের টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক আপনি। তারপরও এই ছুটিতে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন?

তানজিদ তামিম: দেখুন স্কিলের ব্যাপারে তো আমাদের নিয়মিত উন্নতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কারণ, ম্যাচের মধ্যে একেকরকম পরিস্থিতি আসে। সব রকম পরিস্থিতিই সামলাতে হয়। তো আমার কাছে মনে হয় এখানে যেরকম ক্যাম্পটা হচ্ছে এখন, এখানে আমরা লো-রিস্কের গ্যাপটা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি এবং সিঙ্গেলস-ডাবলসের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। যেটা অনেক সময় হয়তোবা থাকে, আবার অনেক সময় হাইরিস্ক নিয়ে খেলি আমরা। সেখানে আমরা লো-রিস্ক নিয়ে রানের চাকা সচল রাখতে পারি, এটা নিয়েই মূলত কাজ হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় এটা ভালো কাজে দেবে।

প্রশ্ন: মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন, মোহাম্মদ আশরাফুল দুজন ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ আছেন। কার কাছ থেকে কী শিখছেন?

তানজিদ: সালাহ উদ্দীন স্যারের সঙ্গে অনেক দিন ধরে কাজ করা হচ্ছে। সেটা সবাই খুব ভালোভাবেই জানেন যে সালাহ উদ্দীন স্যার কেমন কাজ করেন টেকনিক্যাল বিষয়ের দিক থেকে। আশরাফুল ভাইয়ের কাছ থেকে যে জিনিসটা ভালো হচ্ছে আর কী, তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের সবকিছু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। তিনি কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে কী রকম ব্যাটিং করতেন অথবা বড় দলগুলোর সঙ্গে বড় রান করেছেন, তাঁর মানসিকতা কেমন ছিল কিংবা কী প্রক্রিয়ায় খেলেছেন। তো আমি সব সময় তাঁর কাছে এসব প্রশ্নই করি এবং সব সময় জানার চেষ্টা করি যে এসব বড় দলের সঙ্গে কীভাবে রান করা যায়। তো আমার কাছে মনে হয় এটা খুব ভালোভাবে কাজে লাগছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পাওয়ার হিটিংয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন থাকে। সেখানে আপনি এক বছরে ৪১ ছক্কা মেরেছেন। শুধু বেসিক ক্রিকেটেই ছক্কা নাকি পাওয়ার হিটিং নিয়ে বিশেষ কাজ করেছেন?

তানজিদ: কখনো এরকম চিন্তা করি না যে ছক্কা মারব বা ছক্কার অনুশীলন করব। কিংবা ছক্কা মারতে অতিরিক্ত অনুশীলন করতে হবে। কখনো এভাবে চিন্তা করি না। আমি শুধুই স্বাভাবিক অনুশীলন করি কিংবা সাধারণ যে ব্যাটিং অনুশীলন হয় স্কিল নিয়ে, সেই বেসিকটাই ঠিক রাখার চেষ্টা করি এবং মাঠে যখন আমার জোনে যে বল পাই, আমার শক্তির জায়গা যেটা থাকে, যেটা অনুশীলন করি, সেটা যেন মাঠে প্রয়োগ করতে পারি। একই প্রক্রিয়াই ধরে রাখার চেষ্টা করি। কখনো চিন্তা করি না আমার ছক্কা মারতে হবে কিংবা ছয়ের অনুশীলন আলাদাভাবে করব। আমি সাধারণত শক্তি দিয়ে খুব কম মারতে পারি। শুধু টাইমিংয়ের ওপরে খেলি। কখনো চিন্তা করি না যে বল জোরে মারব কিংবা অনেক শক্তি দিয়ে খেলার চেষ্টা করি না।

প্রশ্ন: আপনার একটা ক্যাচের রেকর্ড হয়ে গেল। স্নায়ুচাপে ক্যাচ ড্রপ হয় বাংলাদেশের ফিল্ডারদের। কিন্তু ক্যাচ ধরার হার এত ভালো হওয়ার কারণ কী?

তানজিদ: এমন কিছু না। আসলে ক্যাচ মিস যেটা হয়, সেটা খেলারই একটা অংশ। এটা হতেই পারে। সেখান থেকে আমরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারি, সেই দিকেই ফোকাস থাকতে হয় সব সময়। আমাদের শেষ কয়েকটা সিরিজ দেখবেন। আমরা ফিল্ডিংয়ে অনেক ভালো করছি। আমাদের যিনি ফিল্ডিং কোচ আছেন, তিনি সবার সঙ্গে আলাদাভাবে অনেক কাজ করেন এবং টিম বন্ডিং... আসলে টিম বন্ডিং না হলে ফিল্ডিংয়ে অনেক সমস্যা হয়। ছোট ব্যাপারগুলো আমাদের অনেক উপকার করছে। আর ৫ ক্যাচের যেটা বললেন, আমার কাছে সত্যিই অনেক মজার লেগেছে। কারণ, এক ম্যাচে পাঁচটা ক্যাচ আমি ধরব, কখনো কল্পনা করিনি। এদিক থেকে আমি বলব যে ভাগ্যবান। আলহামদুলিল্লাহ। চেষ্টা করব প্রতিদিন যেন ফিল্ডিংয়ে আরও একটু উন্নতি করা যাচ্ছে।

প্রশ্ন: ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। এবার কী গল্প লেখার স্বপ্ন নিয়ে যেতে চান?

তানজিদ: এভাবে চিন্তা করি না। সবকিছুর একটা প্রক্রিয়া আছে। সেই একই প্রক্রিয়ায় এগোতে চাই। অবশ্যই লক্ষ্য তো ভালো কিছু করারই থাকবে। বিশ্বকাপে যাতে ভালো একটা জায়গায় যেতে পারি এবং বাংলাদেশকে ভালো জায়গায় দেখতে চান সবাই। প্রথমে আমরা গ্রুপ পর্ব থেকে কীভাবে সুপার এইটে যেতে পারি, ধাপে ধাপে যদি এগোতে পারি, তাহলে আমাদের দলের জন্য অনেক ভালো। আর ভারতের কথা যেটা বললেন, ২০২৩ সালে অনেক ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েছি। যে শুরুগুলো বড় করতে পারিনি। আর আইসিসি ইভেন্টে আমি সত্যি কথা বলতে অতটা সফল না। আইসিসি ইভেন্ট বলেন, এশিয়া কাপ বলেন, আমার সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি। যেটা এখনো আমার ভাবতে খারাপ লাগে। তো চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে এমন ভালো শুরু পেলে কীভাবে বড় করা যায় কিংবা ইনিংসটা আমি লম্বা করতে পারি। যেটা আমার জন্যও উপকারী হবে এবং দলকেও অনেক সহায়তা করবে। চেষ্টা থাকবে যেন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে পারি এবং আইসিসি ইভেন্টে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশ দলে অবদান রাখতে পারি, এই চেষ্টা থাকবে।

প্রশ্ন: একটা পডকাস্টে সাকিব আল বলেছেন, বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে জুনিয়ররা কম কথা বলেন। এখানে কি এখন কোনো পরিবর্তন আসছে?

তানজিদ: আসলে ভাই (সাকিব) একদম ঠিক বলেছেন। এখন আমাদের প্রধান কোচ, সালাহ উদ্দীন স্যার ও টিম ম্যানেজমেন্টে যাঁরা কোচ আছেন, চেষ্টা করছেন সংস্কৃতিটা যেন বদলাতে পারি। যখন দলীয় বৈঠক হয়, সব কোচেরা আলোচনা করেন, যাতে সবাই (ক্রিকেটাররা) কিছু না কিছু মতামত দেয়। যেকোনো ম্যাচের আগে কিংবা দলীয় বৈঠকে এখানে আসলে সবাইকে কথা বলতে হয়। ব্যাটার, বোলার বলেন সবাইকেই কিছু না কিছু। যেকোনো কিছুই হোক, এক দুই লাইন হলেও টিম মিটিংয়ে আপনাকে বলতে হবে। আসলে আমার কাছে মনে হয় যে সবার ভেতর থেকে একটা দুইটা বিষয় যে আসে, অনেক সময় দলের কাজে লাগে। অথবা আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। অনেক ছোট কথা হলেও সেখানে অনেক বড় কিছু থাকতে পারে। তো আমার কাছে মনে হয়, এটা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। সবাই আসলে কথা বলার অভ্যাসটা গড়ে তুলছে। আমার কাছে মনে হয় সংস্কৃতিটা পরিবর্তন হচ্ছে।

প্রশ্ন: নিকট ভবিষ্যতে টেস্ট খেলার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

তানজিদ: যদি এখনো সাদা বলে খেলা বেশি, সাদা বলেই মূলত মনোযোগ থাকছে। আমি যখনই সুযোগ পাই, জাতীয় লিগ খেলি। লাল বলের ক্রিকেট খেলতে আমার ভালো লাগে। যদি কখনো সুযোগ আসে, অবশ্যই লাল বলের ক্রিকেটও খেলতে চাই। তার জন্য আমাকে বেশি পরিশ্রম এবং আরও বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করে যাব। যদি আল্লাহ চান এবং আমি লাল বলে রান করতে থাকি, তাহলে ইনশা আল্লাহ অবশ্যই খেলব টেস্ট।

প্রশ্ন: বিপিএলে সরাসরি চুক্তিতে না গিয়ে নিলামে উঠলে কি বেশি দাম পেতেন বলে মনে হয়?

তানজিদ: যেটা পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। নাবিল গ্রুপকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কারণ, তারা আমাকে সরাসরি সাইনিংয়ে রেখেছে (রাজশাহী)। অনেক ভালো একটা ভারসাম্যপূর্ণ দল হয়েছে। যেখানে শান্ত ভাই, মুশি ভাইয়ের মতো ক্রিকেটার আছেন। অনেক অভিজ্ঞতাপূর্ণ এবং কিংবদন্তি আমাদের দেশের জন্য। তাদের বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও অভিজ্ঞতা আছে। তো আশা করি ভালো কিছুই হবে। নিজ বিভাগের হয়ে এবার খেলছি। কখনো খেলা হয়নি রাজশাহীর হয়ে। তো এটা একটা গর্বের বিষয়। তো দেখা যাক ইনশা আল্লাহ ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...