জিনাতুন নূর

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।

এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।

জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।

প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।

প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।

চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।

এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।

জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।

প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।

প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।

চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।
জিনাতুন নূর

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।

এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।

জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।

প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।

প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।

চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।

এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।

জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।

প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।

প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।

চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।

২০২১ সালে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে। জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন অনুসন্ধানের পাশাপাশি গত চার বছর ধরে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যও পরীক্ষা করছে এই রোভার। এটিতে সংযুক্ত সুপারক্যাম যন্ত্রের অডিও ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেকর্ডিং...
৬ দিন আগে
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের মস্তিষ্ক মোট পাঁচটি স্বতন্ত্র পর্ব অতিক্রম করে। এর মধ্যে কিশোর বয়স বা ‘অ্যাডোলেসেন্স’ আমাদের টেনে নিয়ে যায় ত্রিশের কোঠায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতার প্রধান চারটি মোড় আসে পর্যায়ক্রমে
১০ দিন আগে
সব ভূমিকম্পের সঙ্গেই যে ফোরশক হবে, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো ফোরশক ছাড়াই একটিমাত্র শক্তিশালী কম্পন (মেইনশক) দেখা যায়। এই কারণেই, ফোরশকগুলো মেইনশকের আগে ঘটলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না।
১২ দিন আগে
মানুষ থেকে শিম্পাঞ্জি, এমনকি মেরু ভালুক বা নেকড়ে পর্যন্ত—চুম্বন এক সর্বজনীন আচরণ। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ আচরণের জন্ম কবে? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্ত করার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, লাল গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ ধরা পড়েছে, যা ইঙ্গিত দেয়—মঙ্গলেও পৃথিবীর মতো বজ্রপাত হতে পারে।
২০২১ সালে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে। জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন অনুসন্ধানের পাশাপাশি গত চার বছর ধরে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যও পরীক্ষা করছে এই রোভার। এটিতে সংযুক্ত সুপারক্যাম যন্ত্রের অডিও ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেকর্ডিং থেকে বিজ্ঞানীরা এবার বৈদ্যুতিক ঝলক শনাক্ত করেছেন।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সের একদল গবেষক নাসা রোভারের সংগৃহীত দুই মঙ্গল বছর—অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে ১ হাজার ৩৭৪ দিনের মোট ২৮ ঘণ্টার অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, এই বিদ্যুৎ চমক সাধারণত মঙ্গলের ডাস্ট ডেভিল বা ধুলিঝড়ের সামনের অংশে দেখা যায়। ডাস্ট ডেভিল মূলত উত্তপ্ত বায়ু ওপরে উঠতে উঠতে ছোট ঘূর্ণিবাতাস তৈরি করে, যার অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণ বৈদ্যুতিক চার্জ সৃষ্টি করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক দলটির প্রধান লেখক ড. ব্যাপ্টিস্ট চিদে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এই বিচ্ছুরণগুলো একটি বড় ধরনের আবিষ্কার, যা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু, সম্ভাব্য বাসযোগ্যতা এবং ভবিষ্যতের রোবটিক ও মানব অনুসন্ধানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী—এই আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবী, শনি ও বৃহস্পতির সঙ্গে মঙ্গল গ্রহ সেই তালিকায় যুক্ত হলো—যেসব গ্রহে ইতিমধ্যেই বায়ুমণ্ডলীয় বজ্রপাতের কার্যকলাপ নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে সন্দেহের জায়গাও রয়েছে। পার্টিকল ফিজিসিস্ট ড. ড্যানিয়েল প্রিটচার্ড নেচার সাময়িকীতে লিখেছেন—অডিও রেকর্ডিংগুলো ধুলোর ঘর্ষণে সৃষ্টি হওয়া বিচ্ছুরণের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিলেও দৃশ্যমান প্রমাণ না থাকায় কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রের দীর্ঘ ইতিহাস বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আরও কিছুদিন চলবে।
এর আগে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মঙ্গল গ্রহের কিছু শিলায় অদ্ভুত দাগ আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। ‘লেপার্ড স্পট’ ও ‘পপি সিড’ নাম দেওয়া এসব দাগে এমন কিছু খনিজ পাওয়া গেছে, যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি এবং এই কার্যকলাপ প্রাচীন জীবাণুর উপস্থিতিরও ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে সেগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভূপ্রক্রিয়ায়ও জন্ম নিতে পারে। যদিও নাসা বলছে—এগুলো এখন পর্যন্ত মঙ্গল গ্রহে জীবনের সবচেয়ে জোরালো সম্ভাব্য চিহ্ন।
বর্তমানে মঙ্গল গ্রহ শীতল ও শুষ্ক মরুভূমি। কিন্তু বিলিয়ন বছর আগে গ্রহটিতে ঘন বাতাস, নদী-নালা ও হ্রদের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। সেই কারণেই মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারে পারসিভিয়ারেন্সের অনুসন্ধান বিজ্ঞানীদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্ত করার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, লাল গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ ধরা পড়েছে, যা ইঙ্গিত দেয়—মঙ্গলেও পৃথিবীর মতো বজ্রপাত হতে পারে।
২০২১ সালে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে। জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন অনুসন্ধানের পাশাপাশি গত চার বছর ধরে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যও পরীক্ষা করছে এই রোভার। এটিতে সংযুক্ত সুপারক্যাম যন্ত্রের অডিও ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেকর্ডিং থেকে বিজ্ঞানীরা এবার বৈদ্যুতিক ঝলক শনাক্ত করেছেন।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সের একদল গবেষক নাসা রোভারের সংগৃহীত দুই মঙ্গল বছর—অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে ১ হাজার ৩৭৪ দিনের মোট ২৮ ঘণ্টার অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, এই বিদ্যুৎ চমক সাধারণত মঙ্গলের ডাস্ট ডেভিল বা ধুলিঝড়ের সামনের অংশে দেখা যায়। ডাস্ট ডেভিল মূলত উত্তপ্ত বায়ু ওপরে উঠতে উঠতে ছোট ঘূর্ণিবাতাস তৈরি করে, যার অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণ বৈদ্যুতিক চার্জ সৃষ্টি করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক দলটির প্রধান লেখক ড. ব্যাপ্টিস্ট চিদে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এই বিচ্ছুরণগুলো একটি বড় ধরনের আবিষ্কার, যা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু, সম্ভাব্য বাসযোগ্যতা এবং ভবিষ্যতের রোবটিক ও মানব অনুসন্ধানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী—এই আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবী, শনি ও বৃহস্পতির সঙ্গে মঙ্গল গ্রহ সেই তালিকায় যুক্ত হলো—যেসব গ্রহে ইতিমধ্যেই বায়ুমণ্ডলীয় বজ্রপাতের কার্যকলাপ নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে সন্দেহের জায়গাও রয়েছে। পার্টিকল ফিজিসিস্ট ড. ড্যানিয়েল প্রিটচার্ড নেচার সাময়িকীতে লিখেছেন—অডিও রেকর্ডিংগুলো ধুলোর ঘর্ষণে সৃষ্টি হওয়া বিচ্ছুরণের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিলেও দৃশ্যমান প্রমাণ না থাকায় কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রের দীর্ঘ ইতিহাস বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আরও কিছুদিন চলবে।
এর আগে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মঙ্গল গ্রহের কিছু শিলায় অদ্ভুত দাগ আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। ‘লেপার্ড স্পট’ ও ‘পপি সিড’ নাম দেওয়া এসব দাগে এমন কিছু খনিজ পাওয়া গেছে, যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি এবং এই কার্যকলাপ প্রাচীন জীবাণুর উপস্থিতিরও ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে সেগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভূপ্রক্রিয়ায়ও জন্ম নিতে পারে। যদিও নাসা বলছে—এগুলো এখন পর্যন্ত মঙ্গল গ্রহে জীবনের সবচেয়ে জোরালো সম্ভাব্য চিহ্ন।
বর্তমানে মঙ্গল গ্রহ শীতল ও শুষ্ক মরুভূমি। কিন্তু বিলিয়ন বছর আগে গ্রহটিতে ঘন বাতাস, নদী-নালা ও হ্রদের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। সেই কারণেই মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারে পারসিভিয়ারেন্সের অনুসন্ধান বিজ্ঞানীদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের মস্তিষ্ক মোট পাঁচটি স্বতন্ত্র পর্ব অতিক্রম করে। এর মধ্যে কিশোর বয়স বা ‘অ্যাডোলেসেন্স’ আমাদের টেনে নিয়ে যায় ত্রিশের কোঠায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতার প্রধান চারটি মোড় আসে পর্যায়ক্রমে
১০ দিন আগে
সব ভূমিকম্পের সঙ্গেই যে ফোরশক হবে, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো ফোরশক ছাড়াই একটিমাত্র শক্তিশালী কম্পন (মেইনশক) দেখা যায়। এই কারণেই, ফোরশকগুলো মেইনশকের আগে ঘটলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না।
১২ দিন আগে
মানুষ থেকে শিম্পাঞ্জি, এমনকি মেরু ভালুক বা নেকড়ে পর্যন্ত—চুম্বন এক সর্বজনীন আচরণ। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ আচরণের জন্ম কবে? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের মস্তিষ্ক মোট পাঁচটি স্বতন্ত্র পর্ব অতিক্রম করে। এর মধ্যে কিশোর বয়স বা ‘অ্যাডোলেসেন্স’ আমাদের টেনে নিয়ে যায় ত্রিশের কোঠায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতার প্রধান চারটি মোড় আসে পর্যায়ক্রমে ৯, ৩২, ৬৬ ও ৮৩ বছর বয়সে।
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণাটিতে ৪ হাজার মানুষের ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্কের স্ক্যান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, মস্তিষ্ক আজীবন পরিবর্তনশীল হলেও এই পরিবর্তন কোনো সরলরেখার মতো ঘটে না, বরং আলাদা আলাদা পাঁচটি ‘মস্তিষ্ক-পর্বে’ তা রূপ নেয়।
গবেষণায় চিহ্নিত পাঁচটি পর্ব হলো—১. জন্ম থেকে ৯ বছর বয়স পর্যন্ত ‘শৈশব’। ২. বয়স ৯ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত ‘কৈশোর’। ৩. বয়স ৩২ থেকে ৬৬ বছর পর্যন্ত ‘প্রাপ্তবয়স্ক’। ৪. বয়স ৬৬ থেকে ৮৩ বছর পর্যন্ত বার্ধক্যের প্রাথমিক পর্যায়। ৫. বয়স ৮৩ থেকে পরবর্তী যেকোনো সময় বার্ধক্যের শেষ পর্যায়।
এর মধ্যে শৈশবে তথা জন্ম থেকে ৯ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের আকার দ্রুত বাড়ে। পাশাপাশি জীবনের শুরুতে যেসব অতিরিক্ত ‘সিন্যাপস’ বা মস্তিষ্কে বার্তা আদান-প্রদানের সেতু তৈরি হয়েছিল, সেগুলো ছাঁটাই হওয়া শুরু করে। ফলে মস্তিষ্ক অনেকটা এলোমেলোভাবে কাজ করে—ঠিক যেমন একটি শিশু পার্কে হাঁটতে হাঁটতে দিক হারিয়ে ফেলে।
কৈশোর যখন শুরু হয়, অর্থাৎ ৯ বছর বয়স থেকে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের সংযোগগুলো অতি দক্ষ হয়ে ওঠে। গবেষকদের মতে, মানুষের জীবনে এটিই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। এ সময় তাই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হতো, কিশোর বয়স শুধু ১৮-১৯ বছর বয়স পর্যন্ত। কিন্তু পরে বোঝা যায়, এই বয়স ২০–এর কোঠায়ও থাকে। নতুন গবেষণাটি বলছে, মস্তিষ্কের অ্যাডোলেসেন্স বা কৈশোর পর্যায় শেষ হয় ৩২ বছরের কাছাকাছি সময়ে। এ সময়ে মস্তিষ্কের দক্ষতা শীর্ষে পৌঁছায়।
৩২ থেকে ৬৬ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্ক তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে। পরিবর্তনের গতি ধীর হয়ে আসে। এ সময়কে গবেষকেরা বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বের স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
৬৬ বছর বয়সের পর মানুষের মস্তিষ্কের কাজের ধরন একসঙ্গে সমন্বিত থাকার বদলে আলাদা আলাদা অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায়। যেন একটি ব্যান্ডের সদস্যরা নিজেদের একক ক্যারিয়ার শুরু করেছে। এই বয়স থেকেই উচ্চ রক্তচাপ ও ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক ঝুঁকি দেখা দিতে থাকে।
৮৩ বছরের পরের পর্যায় সম্পর্কে তুলনামূলক কম ডেটা সংগ্রহ করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে দেখা গেছে, এ সময়ে মস্তিষ্কের বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয় এবং সংযোগগুলো আরও দুর্বল হতে থাকে।
গবেষণা দলের সদস্য ড. অ্যালেক্সা মাউজলি বলেন, মস্তিষ্ক জীবনের প্রতিটি ধাপে নিজের সংযোগগুলো বদলে নেয়। এভাবে কখনো তা শক্তিশালী, কখনো তা দুর্বল হয়। কিন্তু এই পরিবর্তন একরকম নয়; এটির স্পষ্ট কিছু পর্ব রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা মানসিক রোগ, স্নায়বিক ব্যাধি ও বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার নতুন পথ খুলে দিতে পারে। স্ক্যানের বিশাল পরিসরই প্রথমবারের মতো মস্তিষ্কের এই পাঁচটি স্পষ্ট পর্বকে সামনে এনেছে।

নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের মস্তিষ্ক মোট পাঁচটি স্বতন্ত্র পর্ব অতিক্রম করে। এর মধ্যে কিশোর বয়স বা ‘অ্যাডোলেসেন্স’ আমাদের টেনে নিয়ে যায় ত্রিশের কোঠায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতার প্রধান চারটি মোড় আসে পর্যায়ক্রমে ৯, ৩২, ৬৬ ও ৮৩ বছর বয়সে।
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণাটিতে ৪ হাজার মানুষের ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্কের স্ক্যান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, মস্তিষ্ক আজীবন পরিবর্তনশীল হলেও এই পরিবর্তন কোনো সরলরেখার মতো ঘটে না, বরং আলাদা আলাদা পাঁচটি ‘মস্তিষ্ক-পর্বে’ তা রূপ নেয়।
গবেষণায় চিহ্নিত পাঁচটি পর্ব হলো—১. জন্ম থেকে ৯ বছর বয়স পর্যন্ত ‘শৈশব’। ২. বয়স ৯ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত ‘কৈশোর’। ৩. বয়স ৩২ থেকে ৬৬ বছর পর্যন্ত ‘প্রাপ্তবয়স্ক’। ৪. বয়স ৬৬ থেকে ৮৩ বছর পর্যন্ত বার্ধক্যের প্রাথমিক পর্যায়। ৫. বয়স ৮৩ থেকে পরবর্তী যেকোনো সময় বার্ধক্যের শেষ পর্যায়।
এর মধ্যে শৈশবে তথা জন্ম থেকে ৯ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের আকার দ্রুত বাড়ে। পাশাপাশি জীবনের শুরুতে যেসব অতিরিক্ত ‘সিন্যাপস’ বা মস্তিষ্কে বার্তা আদান-প্রদানের সেতু তৈরি হয়েছিল, সেগুলো ছাঁটাই হওয়া শুরু করে। ফলে মস্তিষ্ক অনেকটা এলোমেলোভাবে কাজ করে—ঠিক যেমন একটি শিশু পার্কে হাঁটতে হাঁটতে দিক হারিয়ে ফেলে।
কৈশোর যখন শুরু হয়, অর্থাৎ ৯ বছর বয়স থেকে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের সংযোগগুলো অতি দক্ষ হয়ে ওঠে। গবেষকদের মতে, মানুষের জীবনে এটিই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। এ সময় তাই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হতো, কিশোর বয়স শুধু ১৮-১৯ বছর বয়স পর্যন্ত। কিন্তু পরে বোঝা যায়, এই বয়স ২০–এর কোঠায়ও থাকে। নতুন গবেষণাটি বলছে, মস্তিষ্কের অ্যাডোলেসেন্স বা কৈশোর পর্যায় শেষ হয় ৩২ বছরের কাছাকাছি সময়ে। এ সময়ে মস্তিষ্কের দক্ষতা শীর্ষে পৌঁছায়।
৩২ থেকে ৬৬ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্ক তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে। পরিবর্তনের গতি ধীর হয়ে আসে। এ সময়কে গবেষকেরা বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বের স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
৬৬ বছর বয়সের পর মানুষের মস্তিষ্কের কাজের ধরন একসঙ্গে সমন্বিত থাকার বদলে আলাদা আলাদা অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায়। যেন একটি ব্যান্ডের সদস্যরা নিজেদের একক ক্যারিয়ার শুরু করেছে। এই বয়স থেকেই উচ্চ রক্তচাপ ও ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক ঝুঁকি দেখা দিতে থাকে।
৮৩ বছরের পরের পর্যায় সম্পর্কে তুলনামূলক কম ডেটা সংগ্রহ করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে দেখা গেছে, এ সময়ে মস্তিষ্কের বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয় এবং সংযোগগুলো আরও দুর্বল হতে থাকে।
গবেষণা দলের সদস্য ড. অ্যালেক্সা মাউজলি বলেন, মস্তিষ্ক জীবনের প্রতিটি ধাপে নিজের সংযোগগুলো বদলে নেয়। এভাবে কখনো তা শক্তিশালী, কখনো তা দুর্বল হয়। কিন্তু এই পরিবর্তন একরকম নয়; এটির স্পষ্ট কিছু পর্ব রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা মানসিক রোগ, স্নায়বিক ব্যাধি ও বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার নতুন পথ খুলে দিতে পারে। স্ক্যানের বিশাল পরিসরই প্রথমবারের মতো মস্তিষ্কের এই পাঁচটি স্পষ্ট পর্বকে সামনে এনেছে।

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫
২০২১ সালে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে। জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন অনুসন্ধানের পাশাপাশি গত চার বছর ধরে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যও পরীক্ষা করছে এই রোভার। এটিতে সংযুক্ত সুপারক্যাম যন্ত্রের অডিও ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেকর্ডিং...
৬ দিন আগে
সব ভূমিকম্পের সঙ্গেই যে ফোরশক হবে, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো ফোরশক ছাড়াই একটিমাত্র শক্তিশালী কম্পন (মেইনশক) দেখা যায়। এই কারণেই, ফোরশকগুলো মেইনশকের আগে ঘটলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না।
১২ দিন আগে
মানুষ থেকে শিম্পাঞ্জি, এমনকি মেরু ভালুক বা নেকড়ে পর্যন্ত—চুম্বন এক সর্বজনীন আচরণ। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ আচরণের জন্ম কবে? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর ভূত্বকের অভ্যন্তরে হঠাৎ শক্তি নির্গমনের ফল, এটিই ভূপৃষ্ঠে কম্পন সৃষ্টি করে। সাধারণত একটি ভূমিকম্পের ঘটনাকে তিনটি পর্যায়ক্রমিক কম্পনের একটি সিরিজ হিসেবে দেখা হয়: ফোরশক, মেইনশক এবং আফটারশক। এই তিনটি পর্যায় একসঙ্গে একটি সম্পূর্ণ ভূমিকম্পের প্রক্রিয়াকে সংজ্ঞায়িত করে।
ফোরশক হলো এমন ভূমিকম্প যা একই স্থানে একটি বৃহত্তর ভূমিকম্পের আগে ঘটে থাকে। একটি ভূমিকম্পকে ফোরশক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না যতক্ষণ না একই এলাকায় এর পরে একটি বৃহত্তর ভূমিকম্প আঘাত হানে।
আফটারশক হলো অপেক্ষাকৃত ছোট ভূমিকম্প, যা একটি বৃহত্তর ঘটনা বা ‘মেইনশক’-এর পরে একই অঞ্চলে কয়েক দিন থেকে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে। এগুলো সাধারণত ফাটলের (ফল্ট লাইন) ১-২টি দৈর্ঘ্যের মধ্যেই ঘটে। স্বাভাবিক পটভূমি স্তরে ফিরে আসার আগে পর্যন্ত এটি চলতে থাকে।
একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে, আফটারশকগুলো মেইনশকের সময় স্থানচ্যুত হওয়া ফাটলের অংশ বরাবর সামান্য পুনঃসামঞ্জস্যকে বোঝায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আফটারশকগুলোর পুনঘটন কমতে থাকে।
ঐতিহাসিকভাবে, অগভীর ভূমিকম্পের তুলনায় গভীর ভূমিকম্পের (৩০ কিমির বেশি) পরে আফটারশক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। নিচে এই তিনটি পর্যায় সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

১. ফোরশক বা প্রাথমিক কম্পন
ভূমিকম্পের প্রধান কম্পন (মেইনশক) আঘাত হানার আগে যে ছোট ছোট কম্পন অনুভূত হয়, সেগুলোকে ফোরশক বলা হয়। এগুলো মেইনশকের আগে ভূ-ত্বকে চাপ তৈরি হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়।
ফোরশকের বৈশিষ্ট্য:
কোনো একটি নির্দিষ্ট ফাটল অঞ্চলে শক্তি জমা হওয়ার ফলে মেইনশক শুরু হওয়ার আগে যে মৃদু কম্পনগুলো হয়ে থাকে, তা-ই হলো ফোরশক। এই কম্পনগুলো প্রধান প্লেট (টেকটোনিক) বরাবর চাপ মুক্ত করতে শুরু করে এবং মেইনশকের জন্য অঞ্চলটিকে প্রস্তুত করে তোলে।
ফোরশকগুলোর মাত্রা সাধারণত মেইনশকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়। এই কম্পনগুলোর তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার কারণে অনেক সময় সাধারণ মানুষ তা অনুভবও করতে পারে না।
ফোরশকগুলো মেইনশকের কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত ঘটতে পারে।
ভূতত্ত্ববিদদের জন্য ফোরশকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে, যদিও এগুলো নির্ভরযোগ্যভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা কেবল মেইনশক হওয়ার পরেই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন যে, আগের কম্পনটি ফোরশক ছিল। যদি এই কম্পনগুলো শনাক্ত করা যায়, তবে এটি বড় ভূমিকম্পের সতর্কতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
২. মেইনশক বা প্রধান কম্পন
ভূমিকম্পের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বা পর্যায় ক্রমে সবচেয়ে তীব্র এবং শক্তিশালী কম্পনটিকে মেইনশক বলা হয়। এই কম্পনটিই স্থিতিশক্তির চূড়ান্ত মুক্তি ঘটায় এবং সাধারণত সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি করে ও জনজীবনের ওপর প্রভাব ফেলে।
মেইনশকের বৈশিষ্ট্য:
এটি একটি নির্দিষ্ট ভূমিকম্পের ঘটনার সবচেয়ে বড় মাত্রার কম্পনের ঘটনা। এর মাত্রা অন্য ফোরশক বা আফটারশকগুলোর চেয়ে বেশি হয়। মেইনশকের সময় জমে থাকা অধিকাংশ স্থিতিশক্তি হঠাৎ গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে তরঙ্গাকারে নির্গত হয়।
যেহেতু এর মাত্রা এবং তীব্রতা সবচেয়ে বেশি, তাই ভবন, পরিকাঠামো এবং ভূ-প্রকৃতির ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হয়।
মেইনশকের উৎপত্তিস্থানকে হাইপোসেন্টার বা ফোকাস এবং তার ঠিক ওপরের ভূ-পৃষ্ঠের স্থানকে এপিসেন্টার বলা হয়।
৩. আফটারশক বা পরবর্তী কম্পন
মেইনশক আঘাত হানার পরে একই অঞ্চলে যে ক্ষুদ্র কম্পনগুলো বারবার অনুভূত হতে থাকে, সেগুলোকে আফটারশক বলা হয়। এই কম্পনগুলো মেইনশকের পরে প্রধান ফাটল অঞ্চলে চাপের পুনঃসামঞ্জস্যের কারণে সৃষ্টি হয়।
আফটারশকের বৈশিষ্ট্য:
মেইনশকের আঘাতের ফলে ভূ-ত্বকের যে অংশ স্থানচ্যুত হয়েছে, সেখানে চাপ পুনরায় সামঞ্জস্য করার কারণে এই কম্পনগুলো সৃষ্টি হয়। এই চাপ কমার প্রক্রিয়া যতদিন চলে, ততদিন আফটারশক অনুভূত হতে থাকে।
আফটারশকগুলোর মাত্রা সব সময় মেইনশকের চেয়ে কম হয়, তবে প্রথম দিকের আফটারশকগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে এবং মেইনশকের কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়া কাঠামোর আরও ক্ষতি করতে পারে। মেইনশকে দুর্বল হয়ে যাওয়া বাড়ি বা পরিকাঠামোর চূড়ান্ত পতন সাধারণত আফটারশকের ফলেই ঘটে থাকে।
মেইনশকের পর থেকে আফটারশকগুলো কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আফটারশক এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরেও চলতে পারে।
আফটারশকের পুনঘটন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে। এই নিয়মটি ওমোরি’স ল নামে পরিচিত। এর অর্থ হলো, মেইনশকের ঠিক পরের দিনগুলোতে আফটারশক যত ঘন ঘন হয়, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যা কমতে থাকে।
মনে রাখা প্রয়োজন, সব ভূমিকম্পের সঙ্গেই যে ফোরশক হবে, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো ফোরশক ছাড়াই একটিমাত্র শক্তিশালী কম্পন (মেইনশক) দেখা যায়। এই কারণেই, ফোরশকগুলো মেইনশকের আগে ঘটলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না। এই পর্যায়গুলো ভূমিকম্পের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এবং ফাটল অঞ্চলের স্থিতিশীল হওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝাতে সাহায্য করে।

ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর ভূত্বকের অভ্যন্তরে হঠাৎ শক্তি নির্গমনের ফল, এটিই ভূপৃষ্ঠে কম্পন সৃষ্টি করে। সাধারণত একটি ভূমিকম্পের ঘটনাকে তিনটি পর্যায়ক্রমিক কম্পনের একটি সিরিজ হিসেবে দেখা হয়: ফোরশক, মেইনশক এবং আফটারশক। এই তিনটি পর্যায় একসঙ্গে একটি সম্পূর্ণ ভূমিকম্পের প্রক্রিয়াকে সংজ্ঞায়িত করে।
ফোরশক হলো এমন ভূমিকম্প যা একই স্থানে একটি বৃহত্তর ভূমিকম্পের আগে ঘটে থাকে। একটি ভূমিকম্পকে ফোরশক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না যতক্ষণ না একই এলাকায় এর পরে একটি বৃহত্তর ভূমিকম্প আঘাত হানে।
আফটারশক হলো অপেক্ষাকৃত ছোট ভূমিকম্প, যা একটি বৃহত্তর ঘটনা বা ‘মেইনশক’-এর পরে একই অঞ্চলে কয়েক দিন থেকে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে। এগুলো সাধারণত ফাটলের (ফল্ট লাইন) ১-২টি দৈর্ঘ্যের মধ্যেই ঘটে। স্বাভাবিক পটভূমি স্তরে ফিরে আসার আগে পর্যন্ত এটি চলতে থাকে।
একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে, আফটারশকগুলো মেইনশকের সময় স্থানচ্যুত হওয়া ফাটলের অংশ বরাবর সামান্য পুনঃসামঞ্জস্যকে বোঝায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আফটারশকগুলোর পুনঘটন কমতে থাকে।
ঐতিহাসিকভাবে, অগভীর ভূমিকম্পের তুলনায় গভীর ভূমিকম্পের (৩০ কিমির বেশি) পরে আফটারশক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। নিচে এই তিনটি পর্যায় সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

১. ফোরশক বা প্রাথমিক কম্পন
ভূমিকম্পের প্রধান কম্পন (মেইনশক) আঘাত হানার আগে যে ছোট ছোট কম্পন অনুভূত হয়, সেগুলোকে ফোরশক বলা হয়। এগুলো মেইনশকের আগে ভূ-ত্বকে চাপ তৈরি হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়।
ফোরশকের বৈশিষ্ট্য:
কোনো একটি নির্দিষ্ট ফাটল অঞ্চলে শক্তি জমা হওয়ার ফলে মেইনশক শুরু হওয়ার আগে যে মৃদু কম্পনগুলো হয়ে থাকে, তা-ই হলো ফোরশক। এই কম্পনগুলো প্রধান প্লেট (টেকটোনিক) বরাবর চাপ মুক্ত করতে শুরু করে এবং মেইনশকের জন্য অঞ্চলটিকে প্রস্তুত করে তোলে।
ফোরশকগুলোর মাত্রা সাধারণত মেইনশকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়। এই কম্পনগুলোর তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার কারণে অনেক সময় সাধারণ মানুষ তা অনুভবও করতে পারে না।
ফোরশকগুলো মেইনশকের কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত ঘটতে পারে।
ভূতত্ত্ববিদদের জন্য ফোরশকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে, যদিও এগুলো নির্ভরযোগ্যভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা কেবল মেইনশক হওয়ার পরেই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন যে, আগের কম্পনটি ফোরশক ছিল। যদি এই কম্পনগুলো শনাক্ত করা যায়, তবে এটি বড় ভূমিকম্পের সতর্কতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
২. মেইনশক বা প্রধান কম্পন
ভূমিকম্পের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বা পর্যায় ক্রমে সবচেয়ে তীব্র এবং শক্তিশালী কম্পনটিকে মেইনশক বলা হয়। এই কম্পনটিই স্থিতিশক্তির চূড়ান্ত মুক্তি ঘটায় এবং সাধারণত সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি করে ও জনজীবনের ওপর প্রভাব ফেলে।
মেইনশকের বৈশিষ্ট্য:
এটি একটি নির্দিষ্ট ভূমিকম্পের ঘটনার সবচেয়ে বড় মাত্রার কম্পনের ঘটনা। এর মাত্রা অন্য ফোরশক বা আফটারশকগুলোর চেয়ে বেশি হয়। মেইনশকের সময় জমে থাকা অধিকাংশ স্থিতিশক্তি হঠাৎ গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে তরঙ্গাকারে নির্গত হয়।
যেহেতু এর মাত্রা এবং তীব্রতা সবচেয়ে বেশি, তাই ভবন, পরিকাঠামো এবং ভূ-প্রকৃতির ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হয়।
মেইনশকের উৎপত্তিস্থানকে হাইপোসেন্টার বা ফোকাস এবং তার ঠিক ওপরের ভূ-পৃষ্ঠের স্থানকে এপিসেন্টার বলা হয়।
৩. আফটারশক বা পরবর্তী কম্পন
মেইনশক আঘাত হানার পরে একই অঞ্চলে যে ক্ষুদ্র কম্পনগুলো বারবার অনুভূত হতে থাকে, সেগুলোকে আফটারশক বলা হয়। এই কম্পনগুলো মেইনশকের পরে প্রধান ফাটল অঞ্চলে চাপের পুনঃসামঞ্জস্যের কারণে সৃষ্টি হয়।
আফটারশকের বৈশিষ্ট্য:
মেইনশকের আঘাতের ফলে ভূ-ত্বকের যে অংশ স্থানচ্যুত হয়েছে, সেখানে চাপ পুনরায় সামঞ্জস্য করার কারণে এই কম্পনগুলো সৃষ্টি হয়। এই চাপ কমার প্রক্রিয়া যতদিন চলে, ততদিন আফটারশক অনুভূত হতে থাকে।
আফটারশকগুলোর মাত্রা সব সময় মেইনশকের চেয়ে কম হয়, তবে প্রথম দিকের আফটারশকগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে এবং মেইনশকের কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়া কাঠামোর আরও ক্ষতি করতে পারে। মেইনশকে দুর্বল হয়ে যাওয়া বাড়ি বা পরিকাঠামোর চূড়ান্ত পতন সাধারণত আফটারশকের ফলেই ঘটে থাকে।
মেইনশকের পর থেকে আফটারশকগুলো কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আফটারশক এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরেও চলতে পারে।
আফটারশকের পুনঘটন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে। এই নিয়মটি ওমোরি’স ল নামে পরিচিত। এর অর্থ হলো, মেইনশকের ঠিক পরের দিনগুলোতে আফটারশক যত ঘন ঘন হয়, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যা কমতে থাকে।
মনে রাখা প্রয়োজন, সব ভূমিকম্পের সঙ্গেই যে ফোরশক হবে, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো ফোরশক ছাড়াই একটিমাত্র শক্তিশালী কম্পন (মেইনশক) দেখা যায়। এই কারণেই, ফোরশকগুলো মেইনশকের আগে ঘটলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না। এই পর্যায়গুলো ভূমিকম্পের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এবং ফাটল অঞ্চলের স্থিতিশীল হওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝাতে সাহায্য করে।

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫
২০২১ সালে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে। জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন অনুসন্ধানের পাশাপাশি গত চার বছর ধরে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যও পরীক্ষা করছে এই রোভার। এটিতে সংযুক্ত সুপারক্যাম যন্ত্রের অডিও ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেকর্ডিং...
৬ দিন আগে
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের মস্তিষ্ক মোট পাঁচটি স্বতন্ত্র পর্ব অতিক্রম করে। এর মধ্যে কিশোর বয়স বা ‘অ্যাডোলেসেন্স’ আমাদের টেনে নিয়ে যায় ত্রিশের কোঠায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতার প্রধান চারটি মোড় আসে পর্যায়ক্রমে
১০ দিন আগে
মানুষ থেকে শিম্পাঞ্জি, এমনকি মেরু ভালুক বা নেকড়ে পর্যন্ত—চুম্বন এক সর্বজনীন আচরণ। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ আচরণের জন্ম কবে? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মানুষ থেকে শিম্পাঞ্জি, এমনকি মেরু ভালুক বা নেকড়ে পর্যন্ত—চুম্বন এক সর্বজনীন আচরণ। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ আচরণের জন্ম কবে? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, মুখ দিয়ে মুখ স্পর্শ করার এই আচরণটি প্রায় ২১ মিলিয়ন (২ কোটি ১০ লাখ) বছর আগে বিবর্তিত হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, মানুষ এবং অন্যান্য গ্রেট এপস বা বৃহৎ বানর প্রজাতির সাধারণ পূর্বপুরুষেরা সম্ভবত চুমুতে অভ্যস্ত ছিল।
গবেষকেরা মনে করছেন, এই গবেষণা প্রমাণ করে, চুম্বন মানব সমাজের নিজস্ব কোনো উদ্ভাবন নয়, বরং এটি সমগ্র প্রাণিজগতে বহু আগে থেকেই বিদ্যমান একটি বিবর্তনগত আচরণ।
চুম্বনের মতো একটি আবেগময় আচরণের উৎস বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে এর একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা তৈরি করেন। ‘ইভোলিউশন অ্যান্ড হিউম্যান বিহেভিয়র’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা চুম্বনকে একটি ‘অ-আক্রমণাত্মক, নির্দেশিত মৌখিক-মৌখিক যোগাযোগ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যেখানে ঠোঁট বা মুখের পারস্পরিক স্পর্শ ও ঘষাঘষি থাকবে, কিন্তু কোনো খাদ্য আদান-প্রদান হবে না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ড. মাটিল্ডা ব্রিন্ডল ব্যাখ্যা করেন, ‘মানুষ, শিম্পাঞ্জি এবং বোনোবো—সবাই চুম্বন করে। তাই এটি সম্ভবত তাদের সবচেয়ে সাম্প্রতিক সাধারণ পূর্বপুরুষের মধ্যেও বিদ্যমান ছিল। আমাদের ধারণা, চুম্বন প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ বছর আগে গ্রেট এপসদের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছিল।’
গবেষকেরা মানুষের নিকটতম প্রাচীন আত্মীয়, নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও চুম্বনের প্রমাণ পেয়েছেন, যারা প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ড. ব্রিন্ডল জানান, নিয়ান্ডারথালদের ডিএনএ নিয়ে একটি পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, আধুনিক মানুষ এবং নিয়ান্ডারথালরা মুখগহ্বরের একই ধরনের জীবাণু ভাগ করে নিত।
ড. ব্রিন্ডল বলেন, ‘এর অর্থ হলো, দুটি প্রজাতি বিভক্ত হওয়ার পরও কয়েক লাখ বছর ধরে তাদের মধ্যে লালা বিনিময় হয়েছিল।’ এর থেকেই স্পষ্ট হয়, মানব এবং নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে সম্ভবত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বা ‘স্মুচিং’ ঘটেছিল।
বিবর্তনগত ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে চুম্বনের অনুরূপ আচরণ খুঁজে বের করেছেন। গবেষণায় নেকড়ে, প্রেইরি ডগ, এমনকি পোলার বিয়ার (মেরু ভালুক) এবং অ্যালবাট্রস পাখির মধ্যেও চুম্বনের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার সঙ্গে মিলে যাওয়া আচরণের প্রমাণ মিলেছে।
যদিও এই গবেষণাটি চুম্বন কখন বিকশিত হয়েছে তা চিহ্নিত করে। তবে কেন এমন আচরণ বিকশিত হলো—এই বিবর্তনীয় ধাঁধার উত্তর দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে একাধিক তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি এপসদের মধ্যে ‘গ্রুমিং’ বা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার আচরণ থেকে এসেছে। আবার কারও মতে, এটি সঙ্গীর স্বাস্থ্য এবং উপযুক্ততা মূল্যায়ন করার একটি ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ উপায় হতে পারে।
ড. ব্রিন্ডল আশা করেন, এই গবেষণাটি ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নতুন পথ খুলে দেবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বোঝা উচিত যে এটি এমন একটি আচরণ, যা আমরা আমাদের অ-মানব আত্মীয়দের সঙ্গে ভাগ করে নিই। এটিকে কেবল মানুষের রোমান্টিক আচরণ বলে উড়িয়ে না দিয়ে, এর উৎস নিয়ে আমাদের আরও গবেষণা করা উচিত।’

মানুষ থেকে শিম্পাঞ্জি, এমনকি মেরু ভালুক বা নেকড়ে পর্যন্ত—চুম্বন এক সর্বজনীন আচরণ। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ আচরণের জন্ম কবে? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, মুখ দিয়ে মুখ স্পর্শ করার এই আচরণটি প্রায় ২১ মিলিয়ন (২ কোটি ১০ লাখ) বছর আগে বিবর্তিত হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, মানুষ এবং অন্যান্য গ্রেট এপস বা বৃহৎ বানর প্রজাতির সাধারণ পূর্বপুরুষেরা সম্ভবত চুমুতে অভ্যস্ত ছিল।
গবেষকেরা মনে করছেন, এই গবেষণা প্রমাণ করে, চুম্বন মানব সমাজের নিজস্ব কোনো উদ্ভাবন নয়, বরং এটি সমগ্র প্রাণিজগতে বহু আগে থেকেই বিদ্যমান একটি বিবর্তনগত আচরণ।
চুম্বনের মতো একটি আবেগময় আচরণের উৎস বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে এর একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা তৈরি করেন। ‘ইভোলিউশন অ্যান্ড হিউম্যান বিহেভিয়র’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা চুম্বনকে একটি ‘অ-আক্রমণাত্মক, নির্দেশিত মৌখিক-মৌখিক যোগাযোগ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যেখানে ঠোঁট বা মুখের পারস্পরিক স্পর্শ ও ঘষাঘষি থাকবে, কিন্তু কোনো খাদ্য আদান-প্রদান হবে না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ড. মাটিল্ডা ব্রিন্ডল ব্যাখ্যা করেন, ‘মানুষ, শিম্পাঞ্জি এবং বোনোবো—সবাই চুম্বন করে। তাই এটি সম্ভবত তাদের সবচেয়ে সাম্প্রতিক সাধারণ পূর্বপুরুষের মধ্যেও বিদ্যমান ছিল। আমাদের ধারণা, চুম্বন প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ বছর আগে গ্রেট এপসদের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছিল।’
গবেষকেরা মানুষের নিকটতম প্রাচীন আত্মীয়, নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও চুম্বনের প্রমাণ পেয়েছেন, যারা প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ড. ব্রিন্ডল জানান, নিয়ান্ডারথালদের ডিএনএ নিয়ে একটি পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, আধুনিক মানুষ এবং নিয়ান্ডারথালরা মুখগহ্বরের একই ধরনের জীবাণু ভাগ করে নিত।
ড. ব্রিন্ডল বলেন, ‘এর অর্থ হলো, দুটি প্রজাতি বিভক্ত হওয়ার পরও কয়েক লাখ বছর ধরে তাদের মধ্যে লালা বিনিময় হয়েছিল।’ এর থেকেই স্পষ্ট হয়, মানব এবং নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে সম্ভবত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বা ‘স্মুচিং’ ঘটেছিল।
বিবর্তনগত ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে চুম্বনের অনুরূপ আচরণ খুঁজে বের করেছেন। গবেষণায় নেকড়ে, প্রেইরি ডগ, এমনকি পোলার বিয়ার (মেরু ভালুক) এবং অ্যালবাট্রস পাখির মধ্যেও চুম্বনের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার সঙ্গে মিলে যাওয়া আচরণের প্রমাণ মিলেছে।
যদিও এই গবেষণাটি চুম্বন কখন বিকশিত হয়েছে তা চিহ্নিত করে। তবে কেন এমন আচরণ বিকশিত হলো—এই বিবর্তনীয় ধাঁধার উত্তর দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে একাধিক তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি এপসদের মধ্যে ‘গ্রুমিং’ বা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার আচরণ থেকে এসেছে। আবার কারও মতে, এটি সঙ্গীর স্বাস্থ্য এবং উপযুক্ততা মূল্যায়ন করার একটি ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ উপায় হতে পারে।
ড. ব্রিন্ডল আশা করেন, এই গবেষণাটি ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নতুন পথ খুলে দেবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বোঝা উচিত যে এটি এমন একটি আচরণ, যা আমরা আমাদের অ-মানব আত্মীয়দের সঙ্গে ভাগ করে নিই। এটিকে কেবল মানুষের রোমান্টিক আচরণ বলে উড়িয়ে না দিয়ে, এর উৎস নিয়ে আমাদের আরও গবেষণা করা উচিত।’

গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫
২০২১ সালে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে। জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন অনুসন্ধানের পাশাপাশি গত চার বছর ধরে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যও পরীক্ষা করছে এই রোভার। এটিতে সংযুক্ত সুপারক্যাম যন্ত্রের অডিও ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেকর্ডিং...
৬ দিন আগে
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের মস্তিষ্ক মোট পাঁচটি স্বতন্ত্র পর্ব অতিক্রম করে। এর মধ্যে কিশোর বয়স বা ‘অ্যাডোলেসেন্স’ আমাদের টেনে নিয়ে যায় ত্রিশের কোঠায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতার প্রধান চারটি মোড় আসে পর্যায়ক্রমে
১০ দিন আগে
সব ভূমিকম্পের সঙ্গেই যে ফোরশক হবে, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো ফোরশক ছাড়াই একটিমাত্র শক্তিশালী কম্পন (মেইনশক) দেখা যায়। এই কারণেই, ফোরশকগুলো মেইনশকের আগে ঘটলেও, বিজ্ঞানীরা এটিকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না।
১২ দিন আগে