Ajker Patrika

স্নায়ু গবেষণায় স্ত্রী প্রাণী পরিহারের নীতি ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গবেষণায় কোনো প্রাণীকে ব্যবহার করা হলে তখন তার লিঙ্গকে বিবেচনা করতে হবে। ছবি: নরপ্রিক্স
গবেষণায় কোনো প্রাণীকে ব্যবহার করা হলে তখন তার লিঙ্গকে বিবেচনা করতে হবে। ছবি: নরপ্রিক্স

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে বৈচিত্র্য, ন্যায়সংগত সুযোগ এবং অন্তর্ভুক্তি (ডিইআইএ) প্রকল্প বাদ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে সরকারিভাবে কেবল পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ট্রাম্পের এসব উদ্যোগ প্রযুক্তি খাত থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতেও প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এ ধরনের পরিবর্তন চলতে থাকে, তা মস্তিষ্কের কার্যকলাপ এবং স্নায়ুজনিত রোগে সম্পর্কে জানতে বাধা সৃষ্টি করবে এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।

কয়েক বছর ধরে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) একটি নীতি অনুসরণ করে আসছে। এই নীতি অনুসারে, গবেষণায় কোনো প্রাণীকে ব্যবহার করা হলে তখন তার লিঙ্গকে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ, গবেষণার জন্য অর্থায়ন পেতে হলে, গবেষকদের এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে যে তাঁরা কীভাবে তাঁদের গবেষণার নকশায় লিঙ্গের পার্থক্য বিবেচনা করছেন, যাতে পুরুষ ও নারী মধ্যে যেকোনো পার্থক্য স্পষ্টভাবে উঠে আসে।

তবে সম্প্রতি নিউরোসায়েন্স সম্পর্কিত নিউজ মিডিয়া ‘দ্য ট্রান্সমিটার’ জানিয়েছে, এনআইএইচ সম্ভবত এই নীতিটি স্থগিত করেছে। যদিও এনআইএইচ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে এই পদক্ষেপটি ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হতে পারে, যেখানে ‘লিঙ্গ মতাদর্শ’ এবং ডিইআইএ কর্মসূচি বাতিলের কথা বলা হয়েছিল।

যদি সত্যিই এই নীতি স্থগিত হয়ে যায়। তবে গবেষণায় পুরুষ ও নারী প্রাণী উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা কমে যেতে পারে। আর এর ফলস্বরূপ, এটি স্নায়ুবিজ্ঞান সম্পর্কিত মৌলিক গবেষণার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

প্রাণীর ওপর গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি পুরুষ ও নারী মস্তিষ্কের মৌলিক পার্থক্যগুলো সামনে এসেছে। এই পার্থক্যগুলো হরমোনগুলোর প্রভাব, স্মৃতির সৃষ্টি এবং স্নায়ু কোষের কাজের প্রক্রিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। এসব পার্থক্য শুধু গবেষণাগারের প্রাণী নয়, মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। শুধু একটি লিঙ্গের প্রাণী ব্যবহার করলে, মানব মস্তিষ্কের মৌলিক কাঠামো ও ওষুধের প্রভাব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অজানা থেকে যেতে পারে।

নারী ও পুরুষ মস্তিষ্ক কি আলাদাভাবে কাজ করে?—এই প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের মাঝে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলেও উত্তর খোঁজার কাজটি খুব সম্প্রতি শুরু হয়েছে। পুরুষ ও নারী প্রাণীদের পার্থক্য খুঁজে বের করতে হলে উভয় লিঙ্গের প্রাণীই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। অথচ অতীতে বিজ্ঞানীরা এই পার্থক্য উপেক্ষা করে শুধু পুরুষ প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করতেন। ২০০৯ সালের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গবেষণায় পুরুষ প্রাণীর ব্যবহার নারী প্রাণীর চেয়ে ৫ দশমিক ৫ গুণ বেশি হয়েছে।

প্রাণী গবেষণার মাধ্যমে এমন কিছু পরীক্ষা করা সম্ভব হয়, যা মানুষের সঙ্গে করা সম্ভব নয়। গবেষকেরা জীবিত মানুষের মাথা কেটে, তাদের স্নায়ু কোষ বের করে বা ইলেকট্রোড প্রতিস্থাপন করতে পারেন না।

এ ছাড়া পুরুষ ও নারী আলাদা পরিবেশে বড় হন এবং তাদের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা আলাদা। মানব মস্তিষ্কের গঠনে বায়োলজিক্যাল (যেমন হরমোন এবং ক্রোমোজোম) এবং সাংস্কৃতিক (যেমন পরিবার এবং সমাজের প্রভাব) উভয়েরই ভূমিকা থাকে।

গবেষকদের মধ্যে একটি ধারণা ছিল, নারীদের প্রজনন চক্র ‘ডেটা বা তথ্য বিকৃত’ করতে পারে এবং তাই গবেষণার জন্য পুরুষ প্রাণী ব্যবহার করা উচিত। যদিও এই ধারণাটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও দীর্ঘ সময় ধরে গবেষকেরা পুরুষ প্রাণী ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই মনোভাব বদলাতে শুরু করেছে।

গবেষণায় নারী প্রাণী অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এমন কিছু আবিষ্কার হয়েছে, যা মস্তিষ্কের কাজ করার প্রথাগত ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছে। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েইনবার্গ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের নিউরোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্যাথরিন উলি গবেষণায় ইঁদুর ব্যবহার করেন। তাঁর গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো—কীভাবে ইস্ট্রোজেন (লিঙ্গ হরমোন) মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ‘সিন্যাপটিক প্লাস্টিসিটি’কে প্রভাবিত করে।

সিন্যাপটিক প্লাস্টিসিটি হলো মস্তিষ্কের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা, যার মাধ্যমে স্নায়ু কোষের মধ্যে সংযোগগুলো সময়ের সঙ্গে শক্তিশালী বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্কের শিক্ষণ এবং স্মৃতি তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কাথরিন উলি দেখিয়েছেন যে সিন্যাপটিক প্লাস্টিসিটি নারী এবং পুরুষদের মস্তিষ্কে আলাদাভাবে কাজ করে।

মস্তিষ্কে স্নায়ু কোষের মধ্যে সংযোগ শক্তিশালী হওয়ার প্রক্রিয়াটি ‘লং-টার্ম পটেনসিয়েশন’ নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়াটি দুটি পর্যায়ে ঘটে। প্রাথমিক পর্যায়, যা কিছু ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং পরে একটি দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়, যা অনেক সময় ধরে চলে। এই প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম থাকে, যার নাম প্রোটিন ‘কিনেজ এ’ (পিকেএ)। আগে ধারণা করা হয়েছিল যে এই এনজাইমটি শুধু পরবর্তী পর্যায়ের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

তবে, কাথরিন উলির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে নারীদের ক্ষেত্রে এনজাইমটি শুধু পরে নয়, প্রথম পর্যায়েরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অর্থাৎ, নারীদের মস্তিষ্কে স্নায়ু কোষের সংযোগ শক্তিশালী করার এই প্রক্রিয়াটি পুরুষদের থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে।

আরেকটি গবেষণায়, কাথরিন উলি এবং তার দল ‘হিপোক্যাম্পাস’ অঞ্চলে লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন, যা শেখা এবং স্মৃতি গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্কের অঞ্চল। তারা দেখিয়েছেন, শুধু নারী ইঁদুরের একটি নির্দিষ্ট ধরনের ‘ইস্ট্রোজেন’ নিউরনগুলোকে সংকেত প্রেরণের জন্য আরও প্রস্তুত করে।

এই বিশেষ ধরনের ইস্ট্রোজেন উভয় পুরুষ এবং নারী ইঁদুরের মস্তিষ্কে তৈরি হয়। তবে এটি নারীর প্রজনন ব্যবস্থায় তৈরি হওয়া ইস্ট্রোজেনের মতো একটি চক্র অনুসরণ করে না।

গবেষক বলেন, ‘এই গবেষণায়, আমরা একটি পরীক্ষা করছিলাম যা আগে করা হয়েছিল এবং আমাদের ফলাফল ছিল ভিন্ন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে ফলাফলগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রকাশিত গবেষণাগুলোর থেকে আলাদা ছিল কারণ আমরা নারী প্রাণী ব্যবহার করছিলাম। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে শুধু পুরুষ প্রাণী ব্যবহার করা হয়েছিল।’

কাথরিন উলি বলেছেন, ‘অনেক ওষুধ স্নায়ু কোষের মধ্যে সংযোগস্থলে কাজ করে, তাই এই সংযোগগুলো কীভাবে গঠিত এবং রক্ষা করা হয় তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, প্রাণীভিত্তিক গবেষণার ফলাফলগুলো ভবিষ্যতে মানুষের চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

ইঁদুর এবং মানুষের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। যেমন—মানুষের পিরিয়ড সাইকেল ইঁদুরের তুলনায় প্রায় সাত গুণ দীর্ঘ হয়।

তবে অনেক গবেষণা রয়েছে দেখা যায়, ইস্ট্রোজেন কীভাবে ইঁদুরের মস্তিষ্ক এবং মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাইমেটের (স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একটি শ্রেণি) মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে এবং এই প্রভাবগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য ও পার্থক্য খুঁজে বের করেছে।

উলি মনে করছেন, ইঁদুরের মস্তিষ্কে যে পরিবর্তন বা প্রক্রিয়া ঘটছে, তা মানব মস্তিষ্কেও কিছুটা বা একটি ভিন্নভাবে ঘটতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, ইঁদুরের মস্তিষ্কের ওপর করা গবেষণার ফলাফলগুলো মানুষের মস্তিষ্কের গবেষণায় কিছুটা সহায়ক হতে পারে।

বিজ্ঞানী উলি ছাড়াও অন্য বিজ্ঞানীরাও পুরুষ এবং নারী ইঁদুরদের মধ্যে ভয়জনিত স্মৃতি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন। পুরুষ ইঁদুরদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালার সংকেত পাঠানো বন্ধ করলে ভয়জনিত স্মৃতি মস্তিষ্কে জমা হওয়ার প্রক্রিয়া থেমে যায়, তবে নারী ইঁদুরে তা একইভাবে কাজ করে না।

গবেষণার এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, পুরুষ ও নারী ভয়জনিত স্মৃতি ভিন্নভাবে সংরক্ষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা অ্যামিগডালার সংকেতগুলো ব্লক করে, তাহলে তা পুরুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে তেমন কার্যকর না-ও হতে পারে।

আরেকটি গবেষণায় মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস অ্যাকম্বেন্স নামক অংশে পার্থক্য পাওয়া গেছে। এটি মস্তিষ্কের পুরস্কার ব্যবস্থার মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে দেখা গেছে, নারী ইঁদুর তুলনায় পুরুষ ইঁদুরের নিউক্লিয়াস অ্যাকম্বেন্সে বেশি উত্তেজক বা ‘অ্যাকটিভেটিং’ সংকেত ঘটে।

গবেষকেরা আরও উল্লেখ করেছেন, পুরুষদের মধ্যে এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু পদ্ধতি কার্যকর হলেও, সেই একই পদ্ধতিগুলো নারী ইঁদুরে কাজ করে না। এই ফলাফলগুলো (হতাশা ও আসক্তি) বুঝতে সাহায্য করতে পারে। কারণ, পুরস্কার ব্যবস্থায় সংকেতের এই কার্যকলাপ উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, নারী-পুরুষের মধ্যে এই লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য ভালোভাবে বোঝা গেলে, তা মনস্তাত্ত্বিক এবং স্নায়বিক চিকিৎসা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, যা প্রতিটি লিঙ্গের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত হবে। তবে, এই গবেষণার ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চিত। কারণ, বর্তমানে আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা এই গবেষণার অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত

দশকের পর দশক কিংবা শতাব্দীকাল ধরে মানবসভ্যতার নানা অধ্যায়ে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বিশ্বজুড়ে এ বছর গবেষকেরা যেন গোয়েন্দার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রত্নতত্ত্ব, জেনেটিক বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ২০২৫ সালে উন্মোচিত হয়েছে বহু ঐতিহাসিক রহস্য।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে বিদায়ী এই বছরটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইস্টার আইল্যান্ডের একটি খনিতে পড়ে থাকা অসমাপ্ত পাথরের মূর্তিগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, প্রাচীন পলিনেশীয়রা কীভাবে পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে বিশাল মোয়াই মূর্তি তৈরি করত।

এদিকে, ইতালির পম্পেই নগরীতে নতুন করে খননকাজ শুরু হওয়ার পর একটি পাথরের সিঁড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হওয়ার আগে শহরটি দেখতে কেমন ছিল তা জানতে সহায়তা করেছে।

পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫ হাজার ২০০টি গর্ত নিয়েও নতুন ধারণা দিয়েছেন গবেষকেরা। এই গর্তগুলোর নির্মাতা কারা এবং কেন এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল—ড্রোন ফুটেজ ও উদ্ভিদকণা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে।

কিছু গবেষণা আবার নতুন প্রশ্নও উসকে দিয়েছে। যেমন—চিকিৎসা নথি না থাকায় বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জেন অস্টেনের মৃত্যুর কারণ জানতে গবেষকেরা তাঁর লেখার ভাষা ও শব্দচয়ন বিশ্লেষণ করছেন।

রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন
রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন

এ বছর ঐতিহাসিক বিষয়ে আলোচিত আবিষ্কারগুলোর একটি হলো, অস্ট্রিয়ার প্রত্যন্ত গির্জায় সংরক্ষিত রহস্যময় একটি মমি। ১৭০০ সাল থেকে ‘বাতাসে শুকানো যাজক’ নামে পরিচিত এই দেহটির পরিচয় দীর্ঘদিন অজানা ছিল। আধুনিক স্ক্যান ও রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি ছিলেন ফ্রাঞ্জ জাভের সিডলার ফন রোজেনেগ নামে একজন অভিজাত ব্যক্তি। পরবর্তীতে তিনি গির্জার যাজক হয়েছিলেন। গবেষকেরা তাঁর দেহ সংরক্ষণের এক অজানা পদ্ধতি ও মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করেছেন।

এদিকে ডেনমার্কে সংরক্ষিত হিয়র্টস্প্রিং নৌকাটির উৎস নিয়েও রহস্যের পর্দা উঠেছে। ২০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের এই নৌকাটি অস্ত্রে ভরা ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় এটি দ্বীপে আক্রমণ করার উদ্দেশে যোদ্ধাদের বহন করছিল। বিশ্লেষণে একটি আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এটিকে তৎকালীন কোনো নাবিকের সরাসরি প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রমাণ মিলেছে—অভিযাত্রী আর্নেস্ট শ্যাকলটনের জাহাজ এইচএমএস অ্যান্ডিউরেন্স ভাঙা স্টিয়ারিং নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই ডুবে গিয়েছিল।

১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন
১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন

১৪ হাজার বছর আগে বরফ যুগের ‘টুমাট পাপিজ’ নামে পরিচিত দুটি সংরক্ষিত শাবককে এত দিন গৃহপালিত কুকুর মনে করা হলেও নতুন জেনেটিক গবেষণায় জানা গেছে, এগুলো আসলে নেকড়ে শাবক ছিল এবং মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এ ছাড়া ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান নিয়েও নতুন তথ্য মিলেছে। সেই সময়ে নিহত ফরাসি সেনাদের দাঁতের নমুনা বিশ্লেষণ করে টাইফাসের পাশাপাশি প্যারাটাইফয়েড ও রিল্যাপসিং ফিভারের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা ওই বাহিনীর বিপুল প্রাণহানির অন্যতম কারণ হতে পারে।

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল বিজ্ঞানের হাত ধরে ইতিহাসের বহু অন্ধকার কোণ আলোকিত করেছে এবং আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে মানবসভ্যতার দীর্ঘ ও জটিল পথচলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট

কোনো বড় ধরনের সৌরঝড় বা প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে যদি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো হঠাৎ নিজেদের গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা হারায়, তবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব স্যাটেলাইট একযোগে অচল হয়ে পড়লে প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে সময় লাগবে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন।

গত সাত বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রায় ৪ হাজার স্যাটেলাইট ছিল, এখন সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিস্ফোরণধর্মী বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (৩৪০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়) বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি।

কক্ষপথে এত বেশি স্যাটেলাইট থাকার কারণে নিয়মিত সংঘর্ষ এড়াতে ‘কলিশন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার’ বা গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল নিতে হয়। স্পেসএক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে তারা ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে নিও সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা থিয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা স্যাটেলাইটের অবস্থানসংক্রান্ত উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংঘর্ষ ঝুঁকি পরিমাপের জন্য নতুন একটি সূচক তৈরি করেছেন। এই সূচকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ ক্লক’।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যদি সব স্যাটেলাইট হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাত, তবে প্রথম সংঘর্ষ হতে সময় লাগত প্রায় ১২১ দিন। কিন্তু বর্তমানে সেই সময় নেমে এসেছে মাত্র ২.৮ দিনে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে।

সব স্যাটেলাইট একসঙ্গে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও ২০২৪ সালের মে মাসে শক্তিশালী সৌরঝড়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আগামী বছরগুলোতে স্পেসএক্স, অ্যামাজন ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। ফলে কক্ষপথে ভিড় আরও বাড়বে, আর ‘ক্র্যাশ ক্লক’-এর সময়সীমা আরও এগিয়ে আসবে। এই পরিস্থিতি মহাকাশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি

উত্তর ইতালির একটি ন্যাশনাল পার্কে ২১ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তাও আবার একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার। এই পায়ের ছাপগুলোর কয়েকটির ব্যাস ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। আর এগুলো সমান্তরাল সারিতে সাজানো। এসবের মধ্যে অনেকগুলোতে আঙুল ও নখের ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই ডাইনোসরগুলো ছিল ‘প্রোসাওরোপড’ (prosauropod) প্রজাতির। এ প্রজাতির ডাইনোসরের গলা লম্বা ও মাথা ছোট এবং ধারালো নখবিশিষ্ট তৃণভোজী প্রাণী ছিল।

মিলানভিত্তিক জীবাশ্মবিদ ক্রিস্টিয়ানো ডাল সাসো বলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি, আমি যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানেই এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দেখা পাব।’

গত সেপ্টেম্বরে মিলানের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কের একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো একজন আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এই পাহাড়ের অংশটি ছিল একটি সমুদ্র তীরবর্তী সমতল ভূমি, যা পরে আল্পাইন পর্বতমালায় রূপান্তরিত হয়।

ডাল সাসো আরও বলেন, এই জায়গা ডাইনোসরে পরিপূর্ণ ছিল; এটি একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক সম্পদ।

ডাল সাসো আরও যোগ করেন, ডাইনোসরের দলগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করত এবং সেখানে আরও কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে মনে হয়, পশুরা আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ হয়ে বৃত্তাকারে অবস্থান নিত।

আবিষ্কারকেরা বলছেন, প্রোসাওরোপডগুলো ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারত। তারা সাধারণত দুই পায়ে হাঁটত, তবে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ছাপের সামনে হাতের ছাপও পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সম্ভবত মাঝেমধ্যে থেমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের সামনের পা মাটিতে রাখত।

আলোকচিত্রী এলিয়ো ডেলা ফেরেরা এই স্থান আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই আবিষ্কার আমাদের সবার মধ্যে ভাবনার খোরাক জোগাবে এবং আমরা যেখানে বাস করি, আমাদের ঘর, আমাদের পৃথিবী, এই জায়গাগুলো সম্পর্কে আমরা কতটা কম জানি, তা বোঝায়।’

ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম এবং যাতায়াতের কোনো পথ নেই। তাই গবেষণার কাজে ড্রোনের পাশাপাশি রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী বছর ইতালিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কটি সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইতালির সীমান্তবর্তী ফ্রায়েল উপত্যকায় অবস্থিত। মন্ত্রণালয় জানায়, এটি যেন অনেকটা এমন যে, স্বয়ং ইতিহাসই বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছে; প্রকৃতি ও ক্রীড়ার মধ্যে এক প্রতীকী সেতুবন্ধনের মাধ্যমে অতীত ও বর্তমানকে এক সুতায় গেঁথেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪০
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে একদিন। স্যামন মাছের ঝাঁক পড়িমড়ি করে ছুটতে দেখা গেল। তাদের পিছেই চোখে পড়ল কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিনের দলকে। তাও আবার একসঙ্গে! এই দুই শিকারী প্রাণীকে জোটবেঁধে স্যামন শিকারে ছুটতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। শিকার একই হওয়ায় দুই শিকারী জোট বেঁধেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ নিয়ে একটি গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুই শিকারি প্রাণীর মধ্যে হয়তো একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

গবেষকেরা বলছেন, ‘কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া উপকূলে প্যাসিফিক হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন ও নর্দার্ন রেসিডেন্ট কিলার হোয়েলের মধ্যে এ ধরনের একটি রহস্যজনক সম্পর্ক দেখা যায়, যেখানে এই দুই সিটাসিয়ান প্রজাতিকে প্রায়ই একে অপরের কয়েক মিটারের মধ্যেই দেখা যায়।’

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লাইবনিজ ইনস্টিটিউট ও হাকাই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীরা ড্রোন ভিডিও ও শব্দগত রেকর্ডিং সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে জানান, এই প্রথম অরকা ও ডলফিনের এভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণে যৌথভাবে কাজ করতে দেখা গেল।

গবেষণার প্রধান লেখক সারা ফরচুন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘স্যামন শিকারের পারদর্শিতায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই তিমিগুলো। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও বিশেষায়িত শিকারি। মনে হচ্ছিল ডলফিনগুলো তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অরকাদের এভাবে ডলফিনের অনুসরণ করতে দেখা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত আর ভীষণ রোমাঞ্চকর।’

দুই শিকারির মধ্যে সদ্য গড়ে ওঠা এই সম্পর্কের কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। একটি সম্ভাবনা হলো ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম, যেখানে ডলফিনেরা অরকার শিকার ছিনিয়ে নিতে পারে।

আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, ডলফিনেরা স্তন্যপায়ীভোজী ট্রানসিয়েন্ট কিলার হোয়েল এবং কিছুটা কম মাত্রায় বড় হাঙরের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে এই সম্পর্ক গড়ে তুলছে।

তবে সারা ফরচুনের মতে, যদি ডলফিনেরা পরজীবীর মতো আচরণ করত, তাহলে সদ্য ধরা শিকার নিয়ে সাধারণত অত্যন্ত রক্ষণশীল কিলার হোয়েলেরা এতটা শান্ত থাকত না, যেমনটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এতে গবেষকদের সামনে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যাটি উঠে এসেছে, এই দুই শিকারি আসলে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

সারা ফরচুন আরও বলেন, ‘অরকাগুলো নিজেদের অবস্থান এমনভাবে নিচ্ছিল, যেন তারা ডলফিনদের অনুসরণ করছে। ফলে ডলফিনদেরই নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি আমাদের আরও গভীরভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং আসলে কী ঘটছে তা বোঝার চেষ্টা করতে আগ্রহী করে তোলে।’

এই সহযোগিতা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ নর্দার্ন রেসিডেন্ট অরকারা মূলত স্যামন শিকারে বিশেষজ্ঞ আর হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন সাধারণত হেরিং ও অ্যাঙ্কোভির মতো ছোট মাছ খেয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত