Ajker Patrika

সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু কথার কবর রচনা হোক: জামায়াত আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ২৩: ০২
সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু কথার কবর রচনা হোক: জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘এ দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে এবং সকল ধর্মের মানুষ আওয়াজ তুলে বলবে, আমরা এখানে সংখ্যাগুরুও নই, কেউ সংখ্যালঘুও নই—আমরা সকলেই সমান।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাই, এখানে (বাংলাদেশে) সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু কথাটির কবর রচনা হোক।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীতে মন্দির পরিদর্শন শেষে পূজা কমিটি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিত এবং নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ। আমাদের দ্বিতীয় পরিচয়, এ দেশে আমাদের যাদের জন্ম হয়েছে, আমরা সবাই বাংলাদেশি। একজন বাংলাদেশি নাগরিককে আমার দেশের সংবিধান যে অধিকার দিয়েছে, সকল ধর্মের নাগরিক ইনডিভিজুয়াল (স্বতন্ত্র ব্যক্তি) নাগরিক সমানভাবে তা ভোগ করবে। আমরা তার কমবেশি দেখতে চাই না।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করবে এ দেশের তরুণসমাজ। এখানেও আমরা কোনো ব্যবধান বরদাশত করব না।’

দলের জনশক্তিদের সততার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই ধরনের কোনো অসমতা করাকে, দুর্বৃত্তায়নকে প্রশ্রয় দেই না। কাজেই এই কাজের জন্য আমাদের কাউকে বহিষ্কার করারও প্রয়োজন হয় না। যেহেতু এখানে তৈরিই হয় না এমন কিছু, বহিষ্কার করব কেন? দরকার তো নেই আমার।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘এই আঙিনাকে আমরা পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই। আমি শুধু আমাদের কথা বলছি না। আমি বলব, যারাই রাজনীতি করেন, মেহেরবানি করে একটা রাজকীয় মন নিয়ে আসেন। ফকিরের মন নিয়ে রাজনীতিতে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি রাজনীতি করবেন; আপনি একজন ভিক্ষুকের সন্তান হতে পারেন; কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু মনটা আপনার হতে হবে রাজকীয় মন।’

তিনি বলেন, ‘আপনি সমস্ত মানুষকে ধারণ করবেন। আপনি আত্মাকে বাদ দিয়ে বাকি সবাইকে শ্রদ্ধা করবেন। আপনি আত্মাকেসহ সবাইকে ভালোবাসবেন—তখনই আপনার জন্য রাজনীতি মানায়। রাজনীতির নামে লুটপাট, নিজের কপাল-কিসমত গড়া আর দুই দিন দশ দিন পরে বলবেন যে আমার দেশ এখন সোনালি যুগে পদার্পণ করেছে, আর এই কথা শুনতে চাই না। এই কথা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগে আপনি সোনার মানুষ হোন, তারপর আমার সোনার দেশ হয়ে যাবে। আমি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে অনুরোধ করব যে আসুন, আমরা পরস্পরকে ভাই এবং বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি। তাহলে হিংসা এবং হানাহানি থাকবে না। আর কয়দিন পরপর এখানে এসে এসে পাহারা দিতে হবে না। আমার বিবেক আমাকে পাহারা দেবে। বলবে! তুমি মানব সন্তান; তোমার ধর্মের প্রতি তুমি যেমন শ্রদ্ধাশীল, তেমনি অন্যের ধর্মের প্রতিও তোমার সহনশীল হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ধর্ম কাউকে দুর্বৃত্ত হতে শেখায় না। হিংসা-প্রতিহিংসা শেখায় না, আমি তা বিশ্বাস করি না। এ রকম যদি কেউ হয়, তাহলে ধর্মই না। ধর্ম মানুষকে পরিশীলিত করে। ধর্ম মানুষকে মানুষ বানায়। মানুষকে পশু বানায় না; বরং পাশবিক চরিত্র যাদের আছে, তাদেরকেও মনুষ্যত্বের দিকে নিয়ে আসে।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আসুন, হাতে হাত মেলাই, দেখানোর জন্য না, অন্তরে ধারণ করি। মোনাফেকের হাত নয়, ভালো মানুষের হাত মেলাই, যেই হাত ভাঙবে কিন্তু ছুটবে না। লেগে থাকবে একে অন্যের সাথে। যদি কোনো দুঃখ আসে, তাহলে সকলে মিলে এই দুঃখ বরণ করে নেব, যদি কোনো সুখ আসে, তা-ও ভাগাভাগি করে নেব। সুখ-দুঃখের আমরা সমান অংশীদার হব।’

রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক হয়েছে এই দেশবাসীর ওপর। আসুন, আমরা এখন ভালো হয়ে যাই। আমরা সত্যিকারের একটি সম্প্রীতির আওয়াজ যেমন তুলি, মুখে আওয়াজের দরকার নাই, বাস্তবেই প্রমাণ করি যে এই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।’

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমাকে একটা ফুলের তোড়া দিয়েছিলেন, আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আমি তোড়াটা হাতে নিয়ে বলেছিলাম—আমি এটা উৎসর্গ করলাম সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্য। আবারও আমার শেষ কথা, আসুন, একটা সম্প্রীতির বাংলাদেশ, সত্যিকারের অর্থে আমরা হাতে হাত মিলে গড়ে তুলি।’

মন্দির কমিটির সভাপতি তপনেন্দ্র নারায়ণ হোড়ের সভাপতিত্বে ও হরিপদ দাস দোলনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বক্তব্য দেন মনোজ সরকার, শিব শংকর সাহা, নিথীশ কুমার সাহা ও ডা. বিপ্লব।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতার শোক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৮
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং সকলের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া চাচ্ছি।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শোক জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও সরকারের অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে রহম করুন, ক্ষমা করুন এবং তাঁর প্রিয় জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। তাঁর আপনজন, প্রিয়জন ও সহকর্মীদের মহান আল্লাহ সবরে জামিল দান করুন। আমিন।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এ দেশের মানুষকে পথ দেখিয়েছে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারে রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন এবং চড়াই-উতরাই পার করেছেন, কিন্তু নিজের রাজনৈতিক আদর্শ ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল। দেশ ও জাতির সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার অবদান এবং সংগ্রামের স্মৃতি নিশ্চয়ই সংরক্ষিত থাকবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে থাকবে অনুপ্রেরণা হয়ে। আজ তাঁর প্রয়াণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহর কাছে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও তাঁর অসংখ্য অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৮
এভারকেয়ারে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
এভারকেয়ারে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশাল এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে সাত দিনের কমর্সূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে সাত দিন শোক পালন করবে বিএনপি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

আজ এভারকেযার হাসপাতালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার জানাজ ও দাফনের বিষয়ে পরে জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৃহবধূ থেকে আপসহীন নেত্রী: খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৭
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ফজরের পর তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো পুরোনো নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

জন্ম

খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর দাদা হাজী সালামত আলী, নানা জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় তাঁর জন্ম। আদি পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি।

খালেদা জিয়া পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। এর পর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস শুরুর আগে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন।

১৯৬০ সালের আগস্টে যখন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিয়ে হয়, তখন জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডিএফআইয়ের কর্মকর্তা হিসেবে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। খালেদা জিয়ার এক ভাই মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ফেনী-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাঁর কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্থান

৩০ মে, ১৯৮১ সাল। যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলো, তখন খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশুসন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে ঢাকা সেনানিবাসে কাটছিল তাঁর সাধারণ জীবন। রাজনীতি, ক্ষমতা বা দলের নেতৃত্ব—কোনো কিছুর প্রতিই তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে টেনে নিয়ে গেল এক কঠিন রাজনৈতিক পথে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে।

গৃহবধূর আড়াল থেকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে

জিয়াউর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তখন বিপর্যস্ত এবং নেতৃত্বশূন্য। দলের নেতারা ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত, আর তাঁদের মধ্যে কোন্দলও ছিল প্রবল। এই পরিস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় ৭৮ বছর বয়সী এবং রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হিসেবে বিবেচিত আব্দুস সাত্তারকে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পছন্দ করতেন। কারণ, তাঁরা জানতেন, তাঁর দুর্বল চিত্তের কারণে সামরিক বাহিনীর জন্য ক্ষমতা দখল করা সহজ হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপিতে যখন কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব ঠিক করার আলোচনা চলছিল, ঠিক তখনই সামরিক ও শাসকচক্রের মনে সবচেয়ে বড় ভয় তৈরি হয় খালেদা জিয়াকে নিয়ে। কারণ, দলের একটি অংশ মনে করত, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য খালেদা জিয়াই ছিলেন সে সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি। প্রয়াত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তাঁর 'চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা' বইতে লিখেছেন, ‘বেগম জিয়া যদি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইতেন, তাহলে অন্য কারো প্রার্থী হওয়ার তখন আর প্রশ্ন উঠতো না।’ কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদের ইচ্ছানুযায়ী তড়িঘড়ি করে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।

রাজনীতিতে অনীহা ও দলের আবদার

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মানসিক ধকল এবং পারিবারিক অনীহার কারণে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার কোনো আগ্রহ ছিল না। তিনি হয়তো ভাবতে শুরু করেছিলেন, রাজনীতি মানুষকে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর বাবাও মেয়ের রাজনীতিতে আসার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না।

তবে বিচারপতি সাত্তারের বার্ধক্য এবং দল পরিচালনায় অসন্তোষের কারণে তৎকালীন বিএনপির একাংশ তাঁকে রাজনীতিতে আনার পরিকল্পনা করে। দলের নেতা-কর্মীরা দিনের পর দিন তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি দলের হাল না ধরলে বিএনপি টিকবে না। দলীয় ঐক্যের জন্য 'আপস ফর্মুলা' হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। কারণ, তিনি ক্ষমতা দখলের দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং জানতেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে।

কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, নুরুল ইসলাম শিশু, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, জমির উদ্দিন সরকার এবং মওদুদ আহমদের মতো সিনিয়র নেতারা তাঁকে রাজনীতিতে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

চেয়ারম্যান নির্বাচন ও সামরিক অভ্যুত্থান

অবশেষে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকালে তিনি প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্য দেন।

১৯৮২ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে আবার চরম বিভক্তি দেখা দেয়। খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার—উভয়ই প্রার্থী হন। বিচারপতি সাত্তার তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনুরোধ জানালেও খালেদা জিয়া তা গ্রহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত দলের ঐক্যের স্বার্থে তিনি তাঁর প্রার্থীর পদ প্রত্যাহার করেন।

কিন্তু এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সাত্তারের রাজনৈতিক গুরুত্ব এতে সম্পূর্ণ ফুরিয়ে যায়। আনুষ্ঠানিক চেয়ারম্যান সাত্তার থাকলেও দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে।

১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন হন এবং এপ্রিলের প্রথম দিকে বর্ধিত সভায় ভাষণ দেন। এক বছরের মধ্যেই, ১৯৮৪ সালের ১০ই মে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। মওদুদ আহমদ দাবি করেন, এই পদে তাঁকে দেখতে সামরিক বা গোয়েন্দা বিভাগ কেউই চায়নি, কিন্তু দলের কর্মীদের চাপে তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়।

জিয়া পরিবার
জিয়া পরিবার

স্বৈরশাসকবিরোধী সংগ্রাম ও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠান

চেয়ারম্যান হওয়ার পর খালেদা জিয়া এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁকে কয়েকবার আটক করা হলেও তিনি আন্দোলন থেকে সরে যাননি।

জেনারেল এরশাদের পতনের পর, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির বিজয় লাভ করে। রাজনীতিতে আসার মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তাঁর নেতৃত্বেই বিএনপি ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬—দুই মেয়াদে সরকার পরিচালনা করে।

শেষ পর্ব: মামলা, দণ্ড এবং নিঃসঙ্গতা

রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, খালেদা জিয়া তার সবগুলোতে জয়ী হয়েছেন। তবে ২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকার একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয় এবং বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর দলটি আরও গভীর সংকটে নিপতিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলাগুলো শেষ জীবনে তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

২০১৮ সাল থেকে তিনি কারাবন্দি হন এবং পরে নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে থাকলেও নানা বিধিনিষেধের কারণে রাজনীতিতে অংশ নিতে বা বিদেশ যেতে পারেননি। এমন চিকিৎসার জন্যও তাঁকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। অবশেষে গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করা হয়। এরপর ৭ আগস্ট তিনি মুক্তি পান।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গৃহবধূর এমন চমকপ্রদ উত্থান ও আপসহীন সংগ্রাম বহু বিতর্ক সত্ত্বেও ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তথ্যসূত্র: 'বিএনপি: সময়-অসময়', লেখক: মহিউদ্দিন আহমদ; 'চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা', মওদুদ আহমদ, বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

গৃহবধূ থেকে ধরেছিলেন দলের হাল। ইতিহাসের বাঁক বদলে তিনবার পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। এরপর মামলার রায়ে সাজা ভোগ। রোগশোকে জর্জরিত হয়ে শেষ বয়সে ছিলেন জেলের বাইরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার অনুনয়-বিনয়ে সাড়া দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। চব্বিশের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পর কারামুক্তি হলেও রোগমুক্তি ঘটেনি খালেদা জিয়ার। নানাবিধ রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতেই নিভে গেল তাঁর প্রাণপ্রদীপ।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ২৩ নভেম্বর থেকে শেষবারের মতো এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। শেষ দফায় হাসপাতালে ভর্তির পর দলের পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ বলা হয়েছে।

ঢাকার রমনা বটমূলের খোলা চত্বরে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে বিএনপি নামে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন সেই সময়কার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে খুন হন জিয়া। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি গৃহবধূ খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন মনোনীত হওয়ার পর ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৪টি আসনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি। জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে দলটি। ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়); তথ্য মন্ত্রণালয়; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে বিএনপি। একতরফা ওই নির্বাচনে ২৭৮টি আসনে জিতে ১৯ মার্চ সরকার গঠন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারেন তিনি। সেই সরকারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ নিজের হাতে রেখেছিলেন খালেদা জিয়া।

এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২১৫টি আসনে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। ওই সরকারে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; সংস্থাপন মন্ত্রণালয়; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

খালেদা জিয়া দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর তিনি প্রথম সরকার গঠন করেন। পরে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেন এবং আবারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক যাত্রায় তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুনভাবে রূপ দিয়েছেন, বিশেষ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়।

স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করে তিনি দ্রুত দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রীতে পরিণত হন। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠে।

দীর্ঘ কারাবাস, স্বাস্থ্য সংকট ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর খালেদা জিয়া একাধিকবার কারাবন্দী ছিলেন। পরে অসুস্থতার কারণে সরকার তাঁকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়। মুক্তির পর থেকেই তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা এবং রাজনৈতিক উত্তাপও সৃষ্টি হয়।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত