Ajker Patrika

ইউপিতে প্রার্থী দেখে দলের তৃণমূলে ক্ষোভ

তানিম আহমেদ, ঢাকা
ইউপিতে প্রার্থী দেখে  দলের তৃণমূলে ক্ষোভ

তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা, দলীয় আনুগত্য, জনসম্পৃক্ততা, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কি না, সে বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে। কিন্তু প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে কিছু জায়গায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা অনেক জায়গায় দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগও জমা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকাগুলো যাচাই-বাছাই করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল থেকেও বিতর্কিতদের নাম পাঠানো হচ্ছে। কিছু জায়গায় দেখা গেছে তথ্য গোপন করে নাম পাঠানো হয়েছে। সেই অভিযোগগুলো বিচার-বিশ্লেষণও করা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রায় এক হাজার মনোনয়ন দিয়েছি। এর মধ্যে ৩০টা মতো অভিযোগ এসেছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। যেগুলোর বেশির ভাগেরই ভিত্তি নেই। কেউ পায়নি বলে এমন অভিযোগ করেছেন। দু-এক জায়গায় ভুল হয়েছে, সেগুলো আমরা বিবেচনা করছি।’

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বেড়েছে অনেক।

এবারও প্রায় সাড়ে চার হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। এর মধ্যে পাবেন ৮৪৮ জন। এখন যিনি মনোনয়ন পাননি, তিনি আবেগতাড়িত হয়ে অনেক অভিযোগ করেন।

জেলার নেতারা বলছেন, ইউনিয়ন থেকে পাঠানো নামই তাঁরা কেন্দ্রে পাঠান। নাম পাঠানোর আগে কেন্দ্রীয় নেতারাও অনেকের নাম সুপারিশ করেন। আর স্থানীয় সাংসদের পছন্দ তো আছেই। এত সুপারিশ রাখতে গিয়ে অনেক বিতর্কিত নাম তালিকায় ঢুকে পড়ে। 
 
সাবেক বিএনপি নেতার হাতে নৌকা
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা বিএনপির বহিষ্কৃত সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম সেন্টু এবার কুতুবপুর ইউপিতে নৌকার টিকিট পেয়েছেন। সেন্টুর বিরুদ্ধে নাশকতার কয়েকটি মামলাও রয়েছে। বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল বলেন, ‘কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে শুধু সেন্টুর নাম পাঠিয়েছে। আমরা সেই নাম জেলায় পাঠিয়েছি।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউপি ও উপজেলা থেকে শুধু সেন্টুর নামই পাঠানো হয়েছিল। আমরা তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম সে কখন দলে যোগ দিয়েছে। কিন্তু স্পষ্ট করে উত্তর দিতে পারে নাই। তাই আমি চিঠিতে সই করিনি।’

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসচিব আশরাফুল হক। তাঁর বাবা প্রয়াত সিরাজুল হকও বাঁশগাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি রায়পুরা উপজেলা বিএনপি সহসভাপতিও ছিলেন।

রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমান উদ্দিন ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাংসদ রাজিউদ্দিন রাজু ভাইয়ের ইচ্ছায় আশরাফুলের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করি এবং তা কেন্দ্রে পাঠাই। তবে আমি তাঁর নামের পাশে অনুপ্রবেশকারী কথাটা লিখে দিয়েছিলাম। এর পরও দলের মনোনয়ন বোর্ড তাঁকে কীভাবে দলের পক্ষে বাছাই করেছে, তা আমার বোধগম্য নয়।’

পটুয়াখালীর মরিচবুনিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আসাদুল ইসলাম আসাদ। আসাদের পরিবারের সদস্যরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ৯ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, মনোনয়নপ্রত্যাশী আসাদুল ইসলাম আসাদের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম মুন্সি মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়া আসাদের আপন মামাশ্বশুর মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক। আসাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাই বিএনপির মতাদর্শে বিশ্বাসী।

এ বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ‘আবদুর রহমান বলেন, ঢালাও অভিযোগের কথা চিন্তা করে তো আর কাজ ফেলে রাখা যাবে না। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।’ 

বিদ্রোহী প্রার্থীর হাতে নৌকা
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, অতীতে যাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন, তিনি জনপ্রিয় হলেও তাঁকে আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনাও করা হয়েছিল। বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল করা হয়েছিল সে সময়। কিন্তু এবার পটুয়াখালীর দুটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁরা ডামি প্রার্থী ছিলেন ওই নির্বাচনে।

 ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন কামাল হোসেন বিশ্বাস। তিনি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি মাত্র ১৩৫ ভোট পান।

পটুয়াখালীর দশমিনা ইউনিয়নে গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হওয়া ইকবাল মাহমুদ লিটন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়নের তালিকায় তাঁর নাম পাঠানোর বিষয়ে জেলা সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা আমাকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় তাঁর (লিটন) নাম পাঠানোর জন্য বলেছেন। আমি সেভাবে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন মাননীয় নেত্রী তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সেখানে আমার তো কিছু করার নাই।’

তবে আওয়ামী লীগের কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীকে কোনোমতেই মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সে একেবারেই বাদ। পটুয়াখালীতে যিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি ছিলেন আমাদের ডামি প্রার্থী। সেটা আমাদের জানিয়ে রাখা হয়েছিল।’ 

চাঁদাবাজি, হত্যা ও মাদক মামলার আসামি
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা বিহার ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিদুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মী ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগের কর্মী শিমুল হত্যাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। একটি চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

একই উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউপিতে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চঞ্চলকে র‍্যাব ফেনসিডিল পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার করে। 
 
প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা আত্মসাতে অভিযুক্ত
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম রুপম। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করলে সেই আদেশ স্থগিত হয়।

রায়নগর ইউনিয়নে মনোনয়ন পাওয়া শাহজাহান কাজী স্থানীয় বাঘমারা মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সহসভাপতি। সেই মাদ্রাসার গাছ চুরি করে কাটার অপরাধে জেল খাটেন তিনি।

শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা নয়। দলের তৃণমূল থেকে তিনজন করে প্রার্থীর যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। এবং সেখান থেকেই এসব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। 

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নারায়ণগঞ্জ, শিবগঞ্জ (বগুড়া) ও রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি।) 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪০
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবনাবসান হয়েছে। তিনি আজ মঙ্গলবার সকাল ৬ টায় ফজরের পর ইন্তেকাল করেন। বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিএনপির পেইজে শেয়ার করা পোস্টে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং সকলের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া চাচ্ছি।’

এছাড়া, বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানও তাঁর ফেসবুক পেইজে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় আল্লাহর মেহমান হয়েছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল জেএসডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৫
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) মনোনীত প্রার্থীরা ৩১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

জেএসডির প্রার্থীরা হলেন তানিয়া রব (লক্ষ্মীপুর-৪), বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজ মিয়া (নোয়াখালী-৩), অ্যাডভোকেট কে এম জাবির (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী (নোয়াখালী-৩), অ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন (ঢাকা-১০), আজিজুর রহমান (রংপুর-২), মো. ফজলুর ইসলাম খান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), ইলোরা খাতুন সোমা, (সিরাজগঞ্জ-৬), আবু মুসা (যশোর-৪), আব্দুল লতিফ খান (বাগেরহাট-৩), হাবিবুর রহমান মাস্টার (বাগেরহাট-২), খালেকুজ্জামান মোস্তফা (টাঙ্গাইল-৫), মোহাম্মদ আমির উদ্দিন (জামালপুর-৫), শিরীন আকতার (কুমিল্লা-৫), অ্যাডভোকেট তৈমুর রেজা শাহজাদ ভূঁইয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), ইউসুফ তালুকদার (চট্টগ্রাম-১), অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৯), মো. সোহরাব হোসেন (ঝালকাঠি-১), মাসুদ পারভেজ সোহেল (ঝালকাঠি-২), মোশারেফ হোসেন মন্টু (নোয়াখালী-২), আবদুল মোতালিব মাস্টার (নোয়াখালী-৬), ড. গিয়াস উদ্দিন (কুষ্টিয়া-১), অধ্যাপক রেহানা জিলানী (নোয়াখালী-১), হারুন উর রশিদ বাবুল (লক্ষ্মীপুর-৩), অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন মজুমদার (ফেনী-৩), অ্যাডভোকেট প্রসেনজিৎ দত্ত (খুলনা-১), আব্দুল্লাহ আল ওয়াকিং (বগুড়া-৬), শাহানা সুলতানা (ঢাকা-৭), নুরুল আমিন (ঢাকা-১৪), আরিফা আক্তার বেবী (ফরিদপুর-৩) ও ওবায়দুল করিম মোহন (কুমিল্লা-৬)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপিতে তিন ধরনের বিদ্রোহী নেত্রী

অর্চি হক, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভেতরে অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর দলটির একাধিক নারী নেত্রী প্রকাশ্যেই আপত্তি তুলেছেন। কেউ পদত্যাগ করেছেন, কেউ প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আবার কেউ নির্বাচনকালীন সব কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় থাকার কথা জানিয়েছেন। এতে তরুণদের এই দলের সাংগঠনিক ঐক্য ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ ও মধ্যপন্থী রাজনীতির প্রত্যাশা নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়। দলটি শুরুতে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সেই ঘোষণার ভিত্তিতেই সারা দেশে মনোনয়ন সংগ্রহ ও প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম চলে। কিন্তু হঠাৎ করেই জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আসে, যা দলের ভেতর বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

দুজনের পদত্যাগ

জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পর এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেন যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বর ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে এনসিপি। এর মধ্যে ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী হিসেবে তাসনিম জারা ও ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হিসেবে তাজনূভা জাবীনের নাম ছিল।

জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি নির্বাচনী সমঝোতার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগের কথা জানান এই দুই নেত্রী।

গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাসনিম জারা নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।

এরপর গতকাল রোববার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তাজনূভা জাবীন। তিনি পোস্টে লেখেন, ‘ভেবেছিলাম, জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর আমি পদত্যাগ দেবো। শেষ আশায় ছিলাম। কিন্তু গতকাল সবাই নিশ্চিত করেছে এই জোটে সীল পরেছে। আর আবারও বলি, আমার পদত্যাগের কারণ যতটা না জোট তার চেয়ে বেশি যে প্রক্রিয়ায় জোট হয়েছে। অবিশ্বাস, অনাস্থা মূল কারণ।’

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুজন

দল থেকে পদত্যাগ না করলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এনসিপির আরও দুই নেত্রী। তাঁরা হলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও কেন্দ্রীয় কমিটির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মনজিলা ঝুমা। মনিরা শারমিন নওগাঁ-৫ ও মনজিলা ঝুমা খাগড়াছড়ি থেকে এনসিপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

গতকাল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে মনিরা শারমিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষায় গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী একমাত্র মধ্যপন্থী রাজনীতির ভরসাস্থল ছিল। এই দল থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নওগাঁ–৫ থেকে আমি মনোনীত প্রার্থী। তবে মনোনয়ন পাওয়ার আগে আমি জানতাম না, এই দল জামায়াতের সাথে ৩০ সিটের আসন সমঝোতা করবে। আমি জানতাম, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু এখন দলের পজিশন পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমি নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করছি। নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না। আমি এনসিপির স্বতন্ত্র শক্তিতে বিশ্বাসী। দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট আমি ভাঙি নাই। কিন্তু এই মুহূর্তে দলের প্রতি কমিটমেন্টের চেয়ে আমার গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি কমিটমেন্ট ও দেশের মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এনসিপির এই নেত্রী আরও লেখেন, ‘আমি দল থেকে পদত্যাগ করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিই নাই। এনসিপি কারো একার সম্পত্তি না। এনসিপি যতখানি শীর্ষ নেতৃত্বের, তার থেকে অনেক বেশি আমার। আজ পর্যন্ত এমন কিছু বলি নাই বা করি নাই যাতে দল বিতর্কিত হয়। তবে নিজের নৈতিকতা বিক্রি করে রাজনীতি করতে চাই না, ক্ষমতায় যেতে চাই না।’

অন্য দিকে মনজিলা ঝুমা গতকাল রাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এনসিপি প্রাথমিকভাবে যেই ১২৫ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল তার মধ্যে খাগড়াছড়ি ২৯৮ নম্বর আসনে শাপলা কলি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে আমাকে মনোনীত করেছিল। ২৪ তারিখে আমার পক্ষে আমার দলের খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক মনোনয়ন উত্তোলন করেছে। আগামীকাল জমা দেওয়ার লাস্ট ডেইট। আজ প্রায় ২ ঘণ্টা আগেই দলের আহ্বায়ক জনাব নাহিদ ইসলামকে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। তবে আমি বিশ্বাস করি তরুণরা সংসদে যাবে, আজ নয়তো কাল।’

মনজিলা ঝুমা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তিনি এর কারণ জানাননি। গত শনিবার তিনি ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলামের ওপর আস্থা রাখার কথা জানিয়েছিলেন।

নির্বাচনে নিষ্ক্রিয় থাকবেন একাধিক নেত্রী

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম গতকাল রাতে ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে জানান, তিনি নির্বাচনকালে নিষ্ক্রিয় থাকবেন। নুসরাত কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে এনসিপি থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। তবে প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।

ফেসবুক পোস্টে নুসরাত লেখেন, ‘আজ ২৮ ডিসেম্বর ঠিক ১০ মাস পর জামায়াতে ইসলামীসহ ১০–দলীয় জোটে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আমি মনে করি এনসিপির সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দ এবং নীতিনির্ধারকেরা নিজেরাই এনসিপির মূল বক্তব্য থেকে চ্যুত হয়েছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে জনাব আহ্বায়ক (নাহিদ ইসলাম) মহোদয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলদের আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী প্রদান করার ঘোষণা দিতে শুনেছি। এমতাবস্থায় তৃণমূল পর্যন্ত, বিশেষ করে মনোনয়ন নেওয়া ব্যক্তিগণের সাথে এই জোট ঘোষণার মাধ্যমে প্রবঞ্চনা করা হয়েছে বলে মনে করি। এ সমস্ত ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে আমি নুসরাত তাবাসসুম, (যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি) নিজেকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচনকালীন সময়ে পার্টির সব কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় করছি এবং অবস্থা পুনর্বিবেচনাক্রমে যেকোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা করছি।’

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) এক ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে সামান্তা লিখেছেন, ‘মধ্যমপন্থায় পৌঁছানো কোনো সহজ বা তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া নয়। ভিন্ন মতাদর্শ ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে আসা মানুষদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) মতভিন্নতা ও অভ্যন্তরীণ বিতর্ক স্বাভাবিক ও অনিবার্য। পার্টির মাত্র দশ মাসের পথচলায় সাংগঠনিক মধ্যমপন্থার চূড়ান্ত রূপ নির্ধারিত হয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশা বাস্তবসম্মত নয়। ফলত ‘‘ইনার পার্টি স্ট্রাগল’’ একটা অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।’

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতার প্রসঙ্গ টেনে সামান্তা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনী কৌশল, বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট ও আসন সমঝোতার প্রশ্নে পার্টির ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। আমি এই বিষয়ে আমার ভিন্নমত প্রকাশ করেছি। প্রত্যেকে নিজ নিজ রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও বাস্তবতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই অবস্থান নিয়েছে; কোনটি সঠিক, তা সময়ই নির্ধারণ করবে।’

অপর দিকে এনসিপির হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী। আজ এক ফেসবুক পোস্টে দ্যুতি লেখেন, ‘নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না, সেটা আমার দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নয়। বরং আমার দলের সিদ্ধান্ত দলের বহু নেতা-কর্মীর স্বপ্নভঙ্গের কারণ বলে মনে করি।’

এ ছাড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা আপাতত পদত্যাগ করবেন না। তবে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ও প্রচারে তাঁরা অংশ নেবেন না।

জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন নেতা আপত্তি জানিয়ে দলের আহ্বায়ক বরাবর স্মারকলিপি দেন। এই ৩০ জনের মধ্যে পাঁচজন নারী নেত্রী। তাঁরা হলেন—যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দা নীলিমা দোলা।

এনসিপি নেত্রী মনিরা শারমিন আজকের পত্রিকাকে জানান, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর তাঁরা ছয়জন নেত্রী দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে দেখা করে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সেখানে মনিরা শারমিন ছাড়াও ছিলেন সামান্তা শারমিন, তাজনূভা জাবীন, তাসনিম জারা, নুসরাত তাবাসসুম ও নাহিদা সারওয়ার নিভা। তাঁরা সেদিন নাহিদ ইসলামকে জানিয়েছিলেন, জামায়াতকে সঙ্গী করলে এই নারী নেত্রীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

মনিরা শারমিন বলেন, নাহিদ ইসলাম এক মাস আগেও বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসের দায় রয়েছে। যাদের ইতিহাসের দায় রয়েছে, এনসিপি তাদের সঙ্গে জোটে যাবে না। অথচ এখন সেই জোটেই যাওয়া হলো। যদিও বলা হচ্ছে, এটা নির্বাচনী সমঝোতা, আদর্শিক জোট নয়। কিন্তু এই সমঝোতাও এনসিপির আদর্শের পরিপন্থী।

নারী নেত্রীদের পদত্যাগের বিষয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, কেউ দলে থাকবে কি না বা নির্বাচন করবে কি না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

এনসিপির নারী নেত্রীদের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে জোটের পক্ষে আস্থা রাখার কথা জানিয়েছে। গত শনিবার এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ১১৪ জন নেতা জোট বা সমঝোতার প্রতি আস্থা জানিয়ে নাহিদ ইসলামকে চিঠি দেন। সেই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে সাতজন নারী নেত্রী রয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে যাওয়ায় দলে বিভাজনের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, যেকোনো মতামতের ক্ষেত্রে কারও ভেটো (আপত্তি) থাকতে পারে, মতামত থাকতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি, সারা দেশের নেতা–কর্মীরা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা জোটের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত। তিনি বলেন, ‘যারা বিরোধিতা করছে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাদের আরও বোঝানোর চেষ্টা করব। আশা করি, তারা এনসিপির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই থাকবে।’

একাধিক নেত্রীর পদত্যাগ, সরে দাঁড়ানো ও নিষ্ক্রিয় থাকার ঘোষণায় স্পষ্ট, জামায়াতের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত এনসিপির ভেতরে গভীর বিভাজন তৈরি করেছে। সামনে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, এই সংকট দলটির সাংগঠনিক শক্তি ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে কোন পথে নিয়ে যায়, সেদিকেই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা জাসদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা জাসদের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে অংশ নেবে না জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। কারাবন্দী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ও দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন আজ সোমবার এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, জাসদ অসাংবিধানিক গণভোট এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে একপক্ষীয় ও একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সুস্পষ্টভাবেই নিরপেক্ষ না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই সরকার নিরপেক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বদলে একটি অসাংবিধানিক গণভোট, একপক্ষীয় ও একতরফা সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেছে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা বাস্তবায়নে অসাংবিধানিক গণভোট, একপক্ষীয় ও একতরফা সংসদ নির্বাচনের প্রহসন করছে। তাই জাসদ অসাংবিধানিক গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে একপক্ষীয় ও একতরফা নির্বাচন বর্জন করছে।

অন্যদিকে দিলীপ বড়ুয়া নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দলও আসন্ন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনুকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভ্যুত্থান দমনের চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ইনুকে কয়েকটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত