চিররঞ্জন সরকার

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়। এর আগেও কয়েকটি নির্বাচন ঘিরেও বিএনপির এমন সব আন্দোলন দেখা গেছে—জোর আছে, কিন্তু জনসমর্থন নেই।
২০০৭ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলটি যেন বারবার একই বৃত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো হরতাল-অবরোধে দেশ অচল করেছে, কখনো নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে নিজেকে রাজনীতির বাইরে ঠেলে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ভোটে অংশ নেয়নি, আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বহু নাটকের পর অংশ নিয়েও বিভ্রান্তি কাটাতে পারেনি। কেউ প্রার্থী হয়েও শেষ মুহূর্তে সরে গেছেন, কেউ নির্বাচিত হয়েও শপথ নেবেন কি না, তা নিয়ে দোদুল্যমান থেকেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কয়েকজনের সংসদে যাওয়া দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে বিএনপি এখনো যেন এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছে—যে পথে দিকনির্দেশনা অস্পষ্ট, আর প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকাল পেরিয়ে গেলেও দলটি এখনো খুঁজছে নিজের রাজনৈতিক পুনর্জন্মের সূত্র।
এর মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব ঘিরে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা একে বলছেন ‘বিএনপির জন্য কৌশলগত ফাঁদ’। কারণ, সংস্কার মেনে নিলে তা রাজনৈতিক পরাজয়ের স্বীকারোক্তি হবে, আর না মেনে নিলে তাদের ঘাড়ে চেপে বসবে ‘সংস্কারবিরোধী’ তকমা।
বিএনপি তাই এখন সময় কেনার রাজনীতিতে ব্যস্ত। গত দুই দিনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাধিক বৈঠক হয়েছে—লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ আলোচনা, এরপর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন। আপাতত সংযমী ভঙ্গিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুধু বলেছেন, প্রত্যাখ্যানের কথা তো আমরা বলিনি।
এই একটি বাক্যই যেন অনেক কিছু বলে দেয়—বিএনপি জানে, সরাসরি ‘না’ বলার মানে হবে রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ফিরে যাওয়া, আর সেই সুযোগটাই প্রতিপক্ষ হাতছাড়া করবে না।
তবে এই সংযমী অবস্থানের ভেতরে লুকিয়ে আছে গভীর রাজনৈতিক অস্বস্তি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে যে তিনটি বিষয়ে বিএনপির আপত্তি—গণভোটের সময়, ভিন্নমতের উল্লেখ না থাকা এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের ধরন, এগুলো শুধু কারিগরি প্রশ্ন নয়; দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, এই তিনটি দিকই ক্ষমতার কাঠামো ও গণতন্ত্র চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে।
বিএনপি ভেবেছিল, বাস্তবায়নের আগে সুপারিশগুলো নিয়ে আবারও তাদের আলোচনার সুযোগ থাকবে; কিন্তু সেখানে ভিন্নমতের স্থান না রেখেই কমিশন সরাসরি বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বিএনপির আপত্তি এখন ‘বিরোধিতা’ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সরকার ও কমিশন উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক।
এই অবস্থায় বিএনপির সামনে তিনটি সম্ভাব্য পথ খোলা—প্রথমত, সংস্কার বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করা; দ্বিতীয়ত, শর্ত সাপেক্ষে আংশিক সমর্থন জানানো; তৃতীয়ত, সরকার ও কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা। এখন পর্যন্ত দলটি তৃতীয় পথেই হাঁটছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল শিগগির জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে। তবে এই সংযমী অবস্থান কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এরপর বিএনপি হয়তো কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। কারণ, নির্বাচনের সময়সীমা (আগামী ফেব্রুয়ারি) এখন খুব কাছে। বিএনপির নেতারা চান, এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এবং এটাই তাঁদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। কিন্তু এই ‘নির্বাচন চাওয়া’র মনোভাবই এখন তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি যেভাবে সরকারপন্থী অবস্থান নিয়ে কমিশনের সুপারিশ সমর্থন করছে, তাতে বিএনপি ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে একা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্য—‘ওনারা (বিএনপি) ভুল করেছেন, এখন সেই ভুল আমাদের ঘাড়ে চাপানো উচিত নয়’—এ যেন বিএনপির রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকেই প্রকাশ করে।
বিএনপির সংকটের আরেক দিক হচ্ছে তাদের অতীত অভিজ্ঞতা। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সময় তারা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, তা কমিশনের চূড়ান্ত নথিতে স্থান পায়নি। মির্জা ফখরুলের ভাষায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম, ভিন্নমতও নথিভুক্ত হবে, কিন্তু দেখা গেল, আমাদের মন্তব্য গায়েব।’ এই অভিযোগের সত্যতা থাকুক বা না থাকুক, রাজনৈতিকভাবে এটি বিএনপির জন্য একধরনের ‘মানসিক ক্ষোভ’ তৈরি করেছে, যার প্রতিফলন এখনকার সংযত প্রতিক্রিয়ার ভেতরেও স্পষ্ট।
বিএনপি নিশ্চয় জানে, এখনই কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখালে সরকার তাদের ‘সংস্কারবিরোধী’ বলে প্রচার করবে; আবার মেনে নিলে রাজনৈতিক আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দেবে। তাই দলটি আপাতত ভারসাম্য রক্ষা করছে—একদিকে নরম ভাষায় সমালোচনা, অন্যদিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
কিন্তু এই ‘কৌশলগত ভারসাম্য’ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা যত লম্বা হয়, বিভ্রান্তিও তত বেড়ে যায়। বিএনপির ভেতরেই ইতিমধ্যে দুটি মত গড়ে উঠেছে—একদল চায় আংশিক সংস্কার মেনে নিয়ে নির্বাচনের পথে যাওয়া; আরেক দল মনে করছে, সরকারকে চাপে ফেলা উচিত। এই অভ্যন্তরীণ মতভেদই হয়তো আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও তীব্র হয়ে উঠবে।
রাজনীতির ইতিহাসে এমন উভয়সংকট নতুন নয়। অতীতে আওয়ামী লীগও অনুরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল—যখন আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পেতে গিয়ে বারবার সমালোচিত হয়েছে। বিএনপি এখন সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। পার্থক্য শুধু একটাই—তখন রাজপথে আন্দোলনের জায়গা ছিল, এখন তা নেই।
বিএনপির সামনে এখনো সুযোগ আছে, কৌশলগতভাবে নিজের অবস্থান নতুন করে মজবুত করার। চাইলে তারা দাবি তুলতে পারে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের। এতে দলটি অন্তত নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে; জনসমক্ষে বার্তাও যাবে—বিএনপি কোনো সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বরং গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও জন-অংশগ্রহণের পক্ষে।
রাজনীতি কখনো সরলরেখায় চলে না। এখানে অন্ধবিশ্বাসের জায়গা নেই, আবার চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানও সব সময় প্রজ্ঞার পরিচায়ক নয়। বিএনপি যদি এখন নিজের অতীত ভুলগুলো স্বীকার করে, আবেগের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে পারে, তবে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেওয়ার এখনো সুযোগ আছে। কিন্তু সেই সাহস যদি না দেখায়, যদি পুরোনো বিভ্রান্তির ঘূর্ণিতে আটকে থাকে, তবে ইতিহাস হয়তো আবারও একই কথা বলবে, যে দল সময়ের সঙ্গে নিজেদের কৌশল বদলাতে পারে না, তার ভাগ্য শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হয় ইতিহাসের প্রান্তে; খেলোয়াড় নয়, দর্শকের আসনে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়। এর আগেও কয়েকটি নির্বাচন ঘিরেও বিএনপির এমন সব আন্দোলন দেখা গেছে—জোর আছে, কিন্তু জনসমর্থন নেই।
২০০৭ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলটি যেন বারবার একই বৃত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো হরতাল-অবরোধে দেশ অচল করেছে, কখনো নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে নিজেকে রাজনীতির বাইরে ঠেলে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ভোটে অংশ নেয়নি, আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বহু নাটকের পর অংশ নিয়েও বিভ্রান্তি কাটাতে পারেনি। কেউ প্রার্থী হয়েও শেষ মুহূর্তে সরে গেছেন, কেউ নির্বাচিত হয়েও শপথ নেবেন কি না, তা নিয়ে দোদুল্যমান থেকেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কয়েকজনের সংসদে যাওয়া দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে বিএনপি এখনো যেন এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছে—যে পথে দিকনির্দেশনা অস্পষ্ট, আর প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকাল পেরিয়ে গেলেও দলটি এখনো খুঁজছে নিজের রাজনৈতিক পুনর্জন্মের সূত্র।
এর মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব ঘিরে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা একে বলছেন ‘বিএনপির জন্য কৌশলগত ফাঁদ’। কারণ, সংস্কার মেনে নিলে তা রাজনৈতিক পরাজয়ের স্বীকারোক্তি হবে, আর না মেনে নিলে তাদের ঘাড়ে চেপে বসবে ‘সংস্কারবিরোধী’ তকমা।
বিএনপি তাই এখন সময় কেনার রাজনীতিতে ব্যস্ত। গত দুই দিনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাধিক বৈঠক হয়েছে—লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ আলোচনা, এরপর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন। আপাতত সংযমী ভঙ্গিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুধু বলেছেন, প্রত্যাখ্যানের কথা তো আমরা বলিনি।
এই একটি বাক্যই যেন অনেক কিছু বলে দেয়—বিএনপি জানে, সরাসরি ‘না’ বলার মানে হবে রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ফিরে যাওয়া, আর সেই সুযোগটাই প্রতিপক্ষ হাতছাড়া করবে না।
তবে এই সংযমী অবস্থানের ভেতরে লুকিয়ে আছে গভীর রাজনৈতিক অস্বস্তি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে যে তিনটি বিষয়ে বিএনপির আপত্তি—গণভোটের সময়, ভিন্নমতের উল্লেখ না থাকা এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের ধরন, এগুলো শুধু কারিগরি প্রশ্ন নয়; দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, এই তিনটি দিকই ক্ষমতার কাঠামো ও গণতন্ত্র চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে।
বিএনপি ভেবেছিল, বাস্তবায়নের আগে সুপারিশগুলো নিয়ে আবারও তাদের আলোচনার সুযোগ থাকবে; কিন্তু সেখানে ভিন্নমতের স্থান না রেখেই কমিশন সরাসরি বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বিএনপির আপত্তি এখন ‘বিরোধিতা’ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সরকার ও কমিশন উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক।
এই অবস্থায় বিএনপির সামনে তিনটি সম্ভাব্য পথ খোলা—প্রথমত, সংস্কার বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করা; দ্বিতীয়ত, শর্ত সাপেক্ষে আংশিক সমর্থন জানানো; তৃতীয়ত, সরকার ও কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা। এখন পর্যন্ত দলটি তৃতীয় পথেই হাঁটছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল শিগগির জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে। তবে এই সংযমী অবস্থান কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এরপর বিএনপি হয়তো কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। কারণ, নির্বাচনের সময়সীমা (আগামী ফেব্রুয়ারি) এখন খুব কাছে। বিএনপির নেতারা চান, এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এবং এটাই তাঁদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। কিন্তু এই ‘নির্বাচন চাওয়া’র মনোভাবই এখন তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি যেভাবে সরকারপন্থী অবস্থান নিয়ে কমিশনের সুপারিশ সমর্থন করছে, তাতে বিএনপি ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে একা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্য—‘ওনারা (বিএনপি) ভুল করেছেন, এখন সেই ভুল আমাদের ঘাড়ে চাপানো উচিত নয়’—এ যেন বিএনপির রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকেই প্রকাশ করে।
বিএনপির সংকটের আরেক দিক হচ্ছে তাদের অতীত অভিজ্ঞতা। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সময় তারা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, তা কমিশনের চূড়ান্ত নথিতে স্থান পায়নি। মির্জা ফখরুলের ভাষায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম, ভিন্নমতও নথিভুক্ত হবে, কিন্তু দেখা গেল, আমাদের মন্তব্য গায়েব।’ এই অভিযোগের সত্যতা থাকুক বা না থাকুক, রাজনৈতিকভাবে এটি বিএনপির জন্য একধরনের ‘মানসিক ক্ষোভ’ তৈরি করেছে, যার প্রতিফলন এখনকার সংযত প্রতিক্রিয়ার ভেতরেও স্পষ্ট।
বিএনপি নিশ্চয় জানে, এখনই কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখালে সরকার তাদের ‘সংস্কারবিরোধী’ বলে প্রচার করবে; আবার মেনে নিলে রাজনৈতিক আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দেবে। তাই দলটি আপাতত ভারসাম্য রক্ষা করছে—একদিকে নরম ভাষায় সমালোচনা, অন্যদিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
কিন্তু এই ‘কৌশলগত ভারসাম্য’ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা যত লম্বা হয়, বিভ্রান্তিও তত বেড়ে যায়। বিএনপির ভেতরেই ইতিমধ্যে দুটি মত গড়ে উঠেছে—একদল চায় আংশিক সংস্কার মেনে নিয়ে নির্বাচনের পথে যাওয়া; আরেক দল মনে করছে, সরকারকে চাপে ফেলা উচিত। এই অভ্যন্তরীণ মতভেদই হয়তো আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও তীব্র হয়ে উঠবে।
রাজনীতির ইতিহাসে এমন উভয়সংকট নতুন নয়। অতীতে আওয়ামী লীগও অনুরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল—যখন আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পেতে গিয়ে বারবার সমালোচিত হয়েছে। বিএনপি এখন সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। পার্থক্য শুধু একটাই—তখন রাজপথে আন্দোলনের জায়গা ছিল, এখন তা নেই।
বিএনপির সামনে এখনো সুযোগ আছে, কৌশলগতভাবে নিজের অবস্থান নতুন করে মজবুত করার। চাইলে তারা দাবি তুলতে পারে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের। এতে দলটি অন্তত নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে; জনসমক্ষে বার্তাও যাবে—বিএনপি কোনো সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বরং গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও জন-অংশগ্রহণের পক্ষে।
রাজনীতি কখনো সরলরেখায় চলে না। এখানে অন্ধবিশ্বাসের জায়গা নেই, আবার চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানও সব সময় প্রজ্ঞার পরিচায়ক নয়। বিএনপি যদি এখন নিজের অতীত ভুলগুলো স্বীকার করে, আবেগের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে পারে, তবে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেওয়ার এখনো সুযোগ আছে। কিন্তু সেই সাহস যদি না দেখায়, যদি পুরোনো বিভ্রান্তির ঘূর্ণিতে আটকে থাকে, তবে ইতিহাস হয়তো আবারও একই কথা বলবে, যে দল সময়ের সঙ্গে নিজেদের কৌশল বদলাতে পারে না, তার ভাগ্য শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হয় ইতিহাসের প্রান্তে; খেলোয়াড় নয়, দর্শকের আসনে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়। এর আগেও কয়েকটি নির্বাচন ঘিরেও বিএনপির এমন সব আন্দোলন দেখা গেছে—জোর আছে, কিন্তু জনসমর্থন নেই।
২০০৭ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলটি যেন বারবার একই বৃত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো হরতাল-অবরোধে দেশ অচল করেছে, কখনো নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে নিজেকে রাজনীতির বাইরে ঠেলে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ভোটে অংশ নেয়নি, আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বহু নাটকের পর অংশ নিয়েও বিভ্রান্তি কাটাতে পারেনি। কেউ প্রার্থী হয়েও শেষ মুহূর্তে সরে গেছেন, কেউ নির্বাচিত হয়েও শপথ নেবেন কি না, তা নিয়ে দোদুল্যমান থেকেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কয়েকজনের সংসদে যাওয়া দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে বিএনপি এখনো যেন এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছে—যে পথে দিকনির্দেশনা অস্পষ্ট, আর প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকাল পেরিয়ে গেলেও দলটি এখনো খুঁজছে নিজের রাজনৈতিক পুনর্জন্মের সূত্র।
এর মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব ঘিরে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা একে বলছেন ‘বিএনপির জন্য কৌশলগত ফাঁদ’। কারণ, সংস্কার মেনে নিলে তা রাজনৈতিক পরাজয়ের স্বীকারোক্তি হবে, আর না মেনে নিলে তাদের ঘাড়ে চেপে বসবে ‘সংস্কারবিরোধী’ তকমা।
বিএনপি তাই এখন সময় কেনার রাজনীতিতে ব্যস্ত। গত দুই দিনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাধিক বৈঠক হয়েছে—লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ আলোচনা, এরপর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন। আপাতত সংযমী ভঙ্গিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুধু বলেছেন, প্রত্যাখ্যানের কথা তো আমরা বলিনি।
এই একটি বাক্যই যেন অনেক কিছু বলে দেয়—বিএনপি জানে, সরাসরি ‘না’ বলার মানে হবে রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ফিরে যাওয়া, আর সেই সুযোগটাই প্রতিপক্ষ হাতছাড়া করবে না।
তবে এই সংযমী অবস্থানের ভেতরে লুকিয়ে আছে গভীর রাজনৈতিক অস্বস্তি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে যে তিনটি বিষয়ে বিএনপির আপত্তি—গণভোটের সময়, ভিন্নমতের উল্লেখ না থাকা এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের ধরন, এগুলো শুধু কারিগরি প্রশ্ন নয়; দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, এই তিনটি দিকই ক্ষমতার কাঠামো ও গণতন্ত্র চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে।
বিএনপি ভেবেছিল, বাস্তবায়নের আগে সুপারিশগুলো নিয়ে আবারও তাদের আলোচনার সুযোগ থাকবে; কিন্তু সেখানে ভিন্নমতের স্থান না রেখেই কমিশন সরাসরি বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বিএনপির আপত্তি এখন ‘বিরোধিতা’ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সরকার ও কমিশন উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক।
এই অবস্থায় বিএনপির সামনে তিনটি সম্ভাব্য পথ খোলা—প্রথমত, সংস্কার বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করা; দ্বিতীয়ত, শর্ত সাপেক্ষে আংশিক সমর্থন জানানো; তৃতীয়ত, সরকার ও কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা। এখন পর্যন্ত দলটি তৃতীয় পথেই হাঁটছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল শিগগির জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে। তবে এই সংযমী অবস্থান কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এরপর বিএনপি হয়তো কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। কারণ, নির্বাচনের সময়সীমা (আগামী ফেব্রুয়ারি) এখন খুব কাছে। বিএনপির নেতারা চান, এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এবং এটাই তাঁদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। কিন্তু এই ‘নির্বাচন চাওয়া’র মনোভাবই এখন তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি যেভাবে সরকারপন্থী অবস্থান নিয়ে কমিশনের সুপারিশ সমর্থন করছে, তাতে বিএনপি ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে একা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্য—‘ওনারা (বিএনপি) ভুল করেছেন, এখন সেই ভুল আমাদের ঘাড়ে চাপানো উচিত নয়’—এ যেন বিএনপির রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকেই প্রকাশ করে।
বিএনপির সংকটের আরেক দিক হচ্ছে তাদের অতীত অভিজ্ঞতা। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সময় তারা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, তা কমিশনের চূড়ান্ত নথিতে স্থান পায়নি। মির্জা ফখরুলের ভাষায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম, ভিন্নমতও নথিভুক্ত হবে, কিন্তু দেখা গেল, আমাদের মন্তব্য গায়েব।’ এই অভিযোগের সত্যতা থাকুক বা না থাকুক, রাজনৈতিকভাবে এটি বিএনপির জন্য একধরনের ‘মানসিক ক্ষোভ’ তৈরি করেছে, যার প্রতিফলন এখনকার সংযত প্রতিক্রিয়ার ভেতরেও স্পষ্ট।
বিএনপি নিশ্চয় জানে, এখনই কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখালে সরকার তাদের ‘সংস্কারবিরোধী’ বলে প্রচার করবে; আবার মেনে নিলে রাজনৈতিক আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দেবে। তাই দলটি আপাতত ভারসাম্য রক্ষা করছে—একদিকে নরম ভাষায় সমালোচনা, অন্যদিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
কিন্তু এই ‘কৌশলগত ভারসাম্য’ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা যত লম্বা হয়, বিভ্রান্তিও তত বেড়ে যায়। বিএনপির ভেতরেই ইতিমধ্যে দুটি মত গড়ে উঠেছে—একদল চায় আংশিক সংস্কার মেনে নিয়ে নির্বাচনের পথে যাওয়া; আরেক দল মনে করছে, সরকারকে চাপে ফেলা উচিত। এই অভ্যন্তরীণ মতভেদই হয়তো আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও তীব্র হয়ে উঠবে।
রাজনীতির ইতিহাসে এমন উভয়সংকট নতুন নয়। অতীতে আওয়ামী লীগও অনুরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল—যখন আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পেতে গিয়ে বারবার সমালোচিত হয়েছে। বিএনপি এখন সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। পার্থক্য শুধু একটাই—তখন রাজপথে আন্দোলনের জায়গা ছিল, এখন তা নেই।
বিএনপির সামনে এখনো সুযোগ আছে, কৌশলগতভাবে নিজের অবস্থান নতুন করে মজবুত করার। চাইলে তারা দাবি তুলতে পারে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের। এতে দলটি অন্তত নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে; জনসমক্ষে বার্তাও যাবে—বিএনপি কোনো সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বরং গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও জন-অংশগ্রহণের পক্ষে।
রাজনীতি কখনো সরলরেখায় চলে না। এখানে অন্ধবিশ্বাসের জায়গা নেই, আবার চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানও সব সময় প্রজ্ঞার পরিচায়ক নয়। বিএনপি যদি এখন নিজের অতীত ভুলগুলো স্বীকার করে, আবেগের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে পারে, তবে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেওয়ার এখনো সুযোগ আছে। কিন্তু সেই সাহস যদি না দেখায়, যদি পুরোনো বিভ্রান্তির ঘূর্ণিতে আটকে থাকে, তবে ইতিহাস হয়তো আবারও একই কথা বলবে, যে দল সময়ের সঙ্গে নিজেদের কৌশল বদলাতে পারে না, তার ভাগ্য শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হয় ইতিহাসের প্রান্তে; খেলোয়াড় নয়, দর্শকের আসনে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়। এর আগেও কয়েকটি নির্বাচন ঘিরেও বিএনপির এমন সব আন্দোলন দেখা গেছে—জোর আছে, কিন্তু জনসমর্থন নেই।
২০০৭ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলটি যেন বারবার একই বৃত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো হরতাল-অবরোধে দেশ অচল করেছে, কখনো নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে নিজেকে রাজনীতির বাইরে ঠেলে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ভোটে অংশ নেয়নি, আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বহু নাটকের পর অংশ নিয়েও বিভ্রান্তি কাটাতে পারেনি। কেউ প্রার্থী হয়েও শেষ মুহূর্তে সরে গেছেন, কেউ নির্বাচিত হয়েও শপথ নেবেন কি না, তা নিয়ে দোদুল্যমান থেকেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কয়েকজনের সংসদে যাওয়া দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে বিএনপি এখনো যেন এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছে—যে পথে দিকনির্দেশনা অস্পষ্ট, আর প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকাল পেরিয়ে গেলেও দলটি এখনো খুঁজছে নিজের রাজনৈতিক পুনর্জন্মের সূত্র।
এর মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব ঘিরে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা একে বলছেন ‘বিএনপির জন্য কৌশলগত ফাঁদ’। কারণ, সংস্কার মেনে নিলে তা রাজনৈতিক পরাজয়ের স্বীকারোক্তি হবে, আর না মেনে নিলে তাদের ঘাড়ে চেপে বসবে ‘সংস্কারবিরোধী’ তকমা।
বিএনপি তাই এখন সময় কেনার রাজনীতিতে ব্যস্ত। গত দুই দিনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাধিক বৈঠক হয়েছে—লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ আলোচনা, এরপর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন। আপাতত সংযমী ভঙ্গিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুধু বলেছেন, প্রত্যাখ্যানের কথা তো আমরা বলিনি।
এই একটি বাক্যই যেন অনেক কিছু বলে দেয়—বিএনপি জানে, সরাসরি ‘না’ বলার মানে হবে রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ফিরে যাওয়া, আর সেই সুযোগটাই প্রতিপক্ষ হাতছাড়া করবে না।
তবে এই সংযমী অবস্থানের ভেতরে লুকিয়ে আছে গভীর রাজনৈতিক অস্বস্তি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে যে তিনটি বিষয়ে বিএনপির আপত্তি—গণভোটের সময়, ভিন্নমতের উল্লেখ না থাকা এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের ধরন, এগুলো শুধু কারিগরি প্রশ্ন নয়; দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, এই তিনটি দিকই ক্ষমতার কাঠামো ও গণতন্ত্র চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে।
বিএনপি ভেবেছিল, বাস্তবায়নের আগে সুপারিশগুলো নিয়ে আবারও তাদের আলোচনার সুযোগ থাকবে; কিন্তু সেখানে ভিন্নমতের স্থান না রেখেই কমিশন সরাসরি বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বিএনপির আপত্তি এখন ‘বিরোধিতা’ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সরকার ও কমিশন উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক।
এই অবস্থায় বিএনপির সামনে তিনটি সম্ভাব্য পথ খোলা—প্রথমত, সংস্কার বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করা; দ্বিতীয়ত, শর্ত সাপেক্ষে আংশিক সমর্থন জানানো; তৃতীয়ত, সরকার ও কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা। এখন পর্যন্ত দলটি তৃতীয় পথেই হাঁটছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল শিগগির জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে। তবে এই সংযমী অবস্থান কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এরপর বিএনপি হয়তো কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। কারণ, নির্বাচনের সময়সীমা (আগামী ফেব্রুয়ারি) এখন খুব কাছে। বিএনপির নেতারা চান, এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এবং এটাই তাঁদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। কিন্তু এই ‘নির্বাচন চাওয়া’র মনোভাবই এখন তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি যেভাবে সরকারপন্থী অবস্থান নিয়ে কমিশনের সুপারিশ সমর্থন করছে, তাতে বিএনপি ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে একা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্য—‘ওনারা (বিএনপি) ভুল করেছেন, এখন সেই ভুল আমাদের ঘাড়ে চাপানো উচিত নয়’—এ যেন বিএনপির রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকেই প্রকাশ করে।
বিএনপির সংকটের আরেক দিক হচ্ছে তাদের অতীত অভিজ্ঞতা। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সময় তারা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, তা কমিশনের চূড়ান্ত নথিতে স্থান পায়নি। মির্জা ফখরুলের ভাষায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম, ভিন্নমতও নথিভুক্ত হবে, কিন্তু দেখা গেল, আমাদের মন্তব্য গায়েব।’ এই অভিযোগের সত্যতা থাকুক বা না থাকুক, রাজনৈতিকভাবে এটি বিএনপির জন্য একধরনের ‘মানসিক ক্ষোভ’ তৈরি করেছে, যার প্রতিফলন এখনকার সংযত প্রতিক্রিয়ার ভেতরেও স্পষ্ট।
বিএনপি নিশ্চয় জানে, এখনই কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখালে সরকার তাদের ‘সংস্কারবিরোধী’ বলে প্রচার করবে; আবার মেনে নিলে রাজনৈতিক আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দেবে। তাই দলটি আপাতত ভারসাম্য রক্ষা করছে—একদিকে নরম ভাষায় সমালোচনা, অন্যদিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
কিন্তু এই ‘কৌশলগত ভারসাম্য’ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা যত লম্বা হয়, বিভ্রান্তিও তত বেড়ে যায়। বিএনপির ভেতরেই ইতিমধ্যে দুটি মত গড়ে উঠেছে—একদল চায় আংশিক সংস্কার মেনে নিয়ে নির্বাচনের পথে যাওয়া; আরেক দল মনে করছে, সরকারকে চাপে ফেলা উচিত। এই অভ্যন্তরীণ মতভেদই হয়তো আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও তীব্র হয়ে উঠবে।
রাজনীতির ইতিহাসে এমন উভয়সংকট নতুন নয়। অতীতে আওয়ামী লীগও অনুরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল—যখন আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পেতে গিয়ে বারবার সমালোচিত হয়েছে। বিএনপি এখন সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। পার্থক্য শুধু একটাই—তখন রাজপথে আন্দোলনের জায়গা ছিল, এখন তা নেই।
বিএনপির সামনে এখনো সুযোগ আছে, কৌশলগতভাবে নিজের অবস্থান নতুন করে মজবুত করার। চাইলে তারা দাবি তুলতে পারে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের। এতে দলটি অন্তত নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে; জনসমক্ষে বার্তাও যাবে—বিএনপি কোনো সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বরং গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও জন-অংশগ্রহণের পক্ষে।
রাজনীতি কখনো সরলরেখায় চলে না। এখানে অন্ধবিশ্বাসের জায়গা নেই, আবার চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানও সব সময় প্রজ্ঞার পরিচায়ক নয়। বিএনপি যদি এখন নিজের অতীত ভুলগুলো স্বীকার করে, আবেগের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে পারে, তবে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেওয়ার এখনো সুযোগ আছে। কিন্তু সেই সাহস যদি না দেখায়, যদি পুরোনো বিভ্রান্তির ঘূর্ণিতে আটকে থাকে, তবে ইতিহাস হয়তো আবারও একই কথা বলবে, যে দল সময়ের সঙ্গে নিজেদের কৌশল বদলাতে পারে না, তার ভাগ্য শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হয় ইতিহাসের প্রান্তে; খেলোয়াড় নয়, দর্শকের আসনে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন! সেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত ঘটনা। যাঁরা নারীক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেবেন বলে প্রতিশ্রুত, তাঁদেরই কেউ কেউ ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন বিভীষিকা।
৬ মিনিট আগে
নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
১৬ মিনিট আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
২০ ঘণ্টা আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন! সেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত ঘটনা। যাঁরা নারীক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেবেন বলে প্রতিশ্রুত, তাঁদেরই কেউ কেউ ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন বিভীষিকা। এ রকম একটি অভিযোগ ওঠার পর সত্যিই জাতীয় নারী দলের সংগঠক, নেতাদের নীতিবোধ, সততা, স্বচ্ছতা—সবই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
ব্যাপারটা এমন নয় যে, এবারই প্রথম নারী দলের সদস্যরা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। ভয়াবহ তথ্য হলো, অভিযোগ করার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যে কেউ বুঝতে পারবেন, একটি দলে নিয়মানুবর্তিতা, নির্দেশ মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম অনুযায়ী না চললে খেলাধুলায় ভালো ফল আসে না। কিন্তু ভালো পারফরম্যান্সের জন্য মানসিকভাবে যে মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়, শঙ্কাহীন মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়, তার অভাব হলে সরাসরিভাবেই মাঠে তার প্রভাব পড়ে। এ কথা তো সত্য, নিকট অতীত থেকে এখন পর্যন্ত ক্রিকেটে আমাদের যে সাফল্যগুলো এসেছে, তার বেশির ভাগই এনেছেন আমাদের নারী ক্রিকেটাররা। কিন্তু তাদের ওপর যদি দলের অভিভাবকেরাই যৌন হয়রানির মতো অপরাধ করে থাকেন, তবে সেটা খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অভিভাবকেরাই যদি নারী ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, তাহলে তাঁরা নিরাপদ থাকবেন কী করে? এই মানসিক চাপ খেলার মাঠেও সঞ্চারিত হতে বাধ্য।
বিষয়টি খুব জটিল। মূল দলে থাকা না-থাকার বিষয়টিও তো নির্ভর করে নির্বাচক, ফিজিওসহ অনেকের ওপর। তাঁরা পারফরম্যান্স দেখে মূল দলে রাখবেন খেলোয়াড়দের, সেটাই নিয়ম। কিন্তু যদি কোনো ‘অজ্ঞাত কারণে’ (পড়ুন যৌনতার প্রলোভন দেখানোর মাধ্যমে) কোনো খেলোয়াড় সেরা একাদশে না আসতে পারেন, তাহলে ঘটনাটি যাচাই করে দেখবে কে? এ ধরনের অন্যায় আচরণের প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকে না। টেলিফোন রেকর্ড বা সে রকম কিছু হয়তো থাকতে পারে, কিন্তু শরীর স্পর্শ করা, পিরিয়ড শেষ হলে দেখা করতে বলা—এগুলো নিশ্চয়ই সাক্ষী রেখে করা হয় না। দলে সুযোগ পাওয়ার মুলা ঝুলিয়েও ফায়দা হাসিল করার কথা ভাবতে পারেন অপরাধী। দলে যাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকতে পারেন। এখন যাঁরা মূল দলে আছেন, মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত—তদন্ত হলে তাঁরা কী বলবেন? দলের সংগঠকদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কি থাকবে তাঁদের?
যে অভিযোগগুলো উঠেছে, সেগুলো খুবই ভয়াবহ। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য বিসিবি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের ওপর নির্ভর করছে স্বচ্ছ তদন্ত হবে কি না। তবে বিসিবির বাইরে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি হওয়া উচিত ছিল। কেননা, এই কমিটিতে বিসিবির সংশ্লিষ্টতা থাকায় তদন্তকাজে পক্ষপাত হতে পারে। এটা মাথায় রাখা দরকার। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের নারী ক্রিকেটাররা নিরাপদ ক্যারিয়ার গড়ে তুলে সাফল্য অর্জন করুক—এটাই আমাদের কামনা।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন! সেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত ঘটনা। যাঁরা নারীক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেবেন বলে প্রতিশ্রুত, তাঁদেরই কেউ কেউ ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন বিভীষিকা। এ রকম একটি অভিযোগ ওঠার পর সত্যিই জাতীয় নারী দলের সংগঠক, নেতাদের নীতিবোধ, সততা, স্বচ্ছতা—সবই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
ব্যাপারটা এমন নয় যে, এবারই প্রথম নারী দলের সদস্যরা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। ভয়াবহ তথ্য হলো, অভিযোগ করার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যে কেউ বুঝতে পারবেন, একটি দলে নিয়মানুবর্তিতা, নির্দেশ মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম অনুযায়ী না চললে খেলাধুলায় ভালো ফল আসে না। কিন্তু ভালো পারফরম্যান্সের জন্য মানসিকভাবে যে মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়, শঙ্কাহীন মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়, তার অভাব হলে সরাসরিভাবেই মাঠে তার প্রভাব পড়ে। এ কথা তো সত্য, নিকট অতীত থেকে এখন পর্যন্ত ক্রিকেটে আমাদের যে সাফল্যগুলো এসেছে, তার বেশির ভাগই এনেছেন আমাদের নারী ক্রিকেটাররা। কিন্তু তাদের ওপর যদি দলের অভিভাবকেরাই যৌন হয়রানির মতো অপরাধ করে থাকেন, তবে সেটা খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অভিভাবকেরাই যদি নারী ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, তাহলে তাঁরা নিরাপদ থাকবেন কী করে? এই মানসিক চাপ খেলার মাঠেও সঞ্চারিত হতে বাধ্য।
বিষয়টি খুব জটিল। মূল দলে থাকা না-থাকার বিষয়টিও তো নির্ভর করে নির্বাচক, ফিজিওসহ অনেকের ওপর। তাঁরা পারফরম্যান্স দেখে মূল দলে রাখবেন খেলোয়াড়দের, সেটাই নিয়ম। কিন্তু যদি কোনো ‘অজ্ঞাত কারণে’ (পড়ুন যৌনতার প্রলোভন দেখানোর মাধ্যমে) কোনো খেলোয়াড় সেরা একাদশে না আসতে পারেন, তাহলে ঘটনাটি যাচাই করে দেখবে কে? এ ধরনের অন্যায় আচরণের প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকে না। টেলিফোন রেকর্ড বা সে রকম কিছু হয়তো থাকতে পারে, কিন্তু শরীর স্পর্শ করা, পিরিয়ড শেষ হলে দেখা করতে বলা—এগুলো নিশ্চয়ই সাক্ষী রেখে করা হয় না। দলে সুযোগ পাওয়ার মুলা ঝুলিয়েও ফায়দা হাসিল করার কথা ভাবতে পারেন অপরাধী। দলে যাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকতে পারেন। এখন যাঁরা মূল দলে আছেন, মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত—তদন্ত হলে তাঁরা কী বলবেন? দলের সংগঠকদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কি থাকবে তাঁদের?
যে অভিযোগগুলো উঠেছে, সেগুলো খুবই ভয়াবহ। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য বিসিবি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের ওপর নির্ভর করছে স্বচ্ছ তদন্ত হবে কি না। তবে বিসিবির বাইরে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি হওয়া উচিত ছিল। কেননা, এই কমিটিতে বিসিবির সংশ্লিষ্টতা থাকায় তদন্তকাজে পক্ষপাত হতে পারে। এটা মাথায় রাখা দরকার। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের নারী ক্রিকেটাররা নিরাপদ ক্যারিয়ার গড়ে তুলে সাফল্য অর্জন করুক—এটাই আমাদের কামনা।

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়।
৫ দিন আগে
নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
১৬ মিনিট আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
২০ ঘণ্টা আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগেমৃত্যুঞ্জয় রায়

নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়। সারা গায়ে ছাই মেখে আধপোড়া গজার মাছ খেয়ে গগন নেচে নেচে দৌড়িয়েছে কয়েক মাইল ঢাকের তালে তালে। মোটা কাছি দিয়ে বেঁধে বিশজন জোয়ান পুরুষও গগনকে ধরে রাখতে পারেনি। এমনি শক্তিধর নিশকাইন্দা দেওয়ের ভর!’
অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা ছিল পারিল-বলধারার সেই প্রাচীন বটগাছটা দেখার। অবশেষে এ মাসেই সে সুযোগ এল। ড. নওয়াজেশের ভাইপো নাসিম আহমেদ নাদভী ও আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। বিরাট এলাকাজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে সে গাছটা অনেকটা জায়গা ছেয়ে ফেলেছে। গোড়াটা পাকা করে বাঁধানো। তার তলায় শুয়ে আছে নিশকাইন্দা দেওয়ের মাটির ক্ষয়িষ্ণু অবয়ব, বিশাল দেহ, প্রায় ৪০ ফুট লম্বা আর ৩০ ফুট চওড়া। কে এই নিশকাইন্দা দেও তা কেউ বলতে পারে না। কারও কারও ধারণা, ওটা শিবের এক ভয়ংকর রূপ। প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তির দিন সে গাছের তলায় বিরাট মেলা বসে, নিশকাইন্দা দেওয়ের পূজা হয়। ঢাক বাজে, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনিতে সে বটতলাটা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। ভক্তরা মাটির ঘোড়া গাছের তলায় রেখে মানত করে। বড় বড় জটায়, থামের মতো গুঁড়িতে সিঁদুর-তেল দিয়ে দেবতার প্রতীক আঁকে। সে গাছটা স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে হয়ে উঠেছে এক পবিত্র বৃক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, গাছটার বয়স প্রায় ৩০০ বছর। গ্রামবাসীর ধারণা, বলধারার সে গাছটাই গ্রামকে ঝড়ঝাপটা ও বিপদ-আপদ থেকে শত শত বছর ধরে রক্ষা করে চলেছে। তাই ওর প্রতি তাদের এ মান্যতা। কিন্তু যে গাছকে তারা বটবৃক্ষ বলে, নামটা যার কারণে হয়েছে বলধারার বটতলা, আসলে সেটি বটগাছ না, অশ্বত্থ না। ড. নওয়াজেশ আহমদেরও সন্দেহ ছিল ওটা নিয়ে, ভেবেছিলেন পাকুড়গাছ। সে যাই হোক, গাছটি যে অনেক প্রাচীন ও পবিত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এরূপ আরও দুটি প্রাচীন গাছের দেখা পেলাম এ মাসেই। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার হিরনাল গ্রামে সে গাছ দুটি রয়েছে। এর একটি বটগাছ, অন্যটি খিরনিগাছ। পাশাপাশি দুটি গাছের অবস্থান। বটগাছটা প্রায় তিন বিঘা জমিজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে জায়গাটা অন্ধকার করে ফেলেছে। অনেক খুঁজেও সে বটগাছের মূল গাছ বা গোড়া কোনটি, তা দেখতে পেলাম না। অসংখ্য ঝুরি নামিয়ে মোটা মোটা থামের মতো করে তা দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখেছে ভারী ডালপালাগুলোকে। সে বটতলাতেও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা করে, মানত করে। কুলাদি মৌজায় অবস্থিত সে গাছটি হিরনাল বটগাছ নামে পরিচিত। অনেকের ধারণা, বটগাছটির বয়স হবে প্রায় ৪০০ বছর। এর কাছেই রয়েছে এর চেয়েও বয়সী আরেকটি গাছ, সেখানকার অনেকেরই ধারণা সে গাছটির বয়স হবে কমপক্ষে ৫০০ বছর। সেটি বট না, খিরনিগাছ। পাশে হজরত শাহ আল হাদী (র.)-এর মাজার। সে বিশাল গাছটির গোড়াটা বৃত্তাকার বেদি করে বাঁধানো। সে গ্রামে ওই খিরনিগাছটিও পেয়েছে পবিত্র বৃক্ষের মর্যাদা, কেউ তার একটা পাতাও ছেঁড়ে না। মানত করে তা পূরণ হলে কেউ কেউ খিরনিতলায় এসে শিরনি দিয়ে যায়। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে মানুষের প্রগাঢ় বিশ্বাস ও ভয় গাছগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে। গাছগুলোও গ্রামের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আগলে রাখছে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী জমিদারবাড়িতেও আছে প্রায় আড়াই শ বছর বয়সী একটি কাঠগোলাপগাছ। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রামে আছে প্রায় ২০০ বছর বয়সী একটি শিমুলগাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গ্রামে আছে ২২০ বছর বয়সী একটি সূর্যপুরী আমগাছ। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দিতে আছে একটি শতবর্ষী আমগাছ। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী গ্রামের কাছে আছে একটি প্রাচীন গাবগাছ। ধারণা করা হয়, এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি বয়সী একটি গাবগাছ আছে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটকেলবাড়িয়া গ্রামে। এ দুটি গাবগাছেরই বয়স হবে কয়েক শ বছর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়রা গ্রামে আছে প্রায় ৫০০ বছর বয়সী একটি তেঁতুলগাছ, যা তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহের নীরব সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। এসব সুসংবাদের পাশাপাশি দুঃসংবাদও শুনতে পাই। রাজশাহীর তানোরের অমৃতপুর গ্রামের সেই শতবর্ষী তেঁতুলগাছটা কেন কাটা পড়ল?
ঢাকা শহরেও কিছু শতবর্ষী বৃক্ষ আছে। এগুলোর মধ্যে হেয়ার রোডের পাদাউক, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সীমানাপ্রাচীরের কোলে ব্ল্যাকবিন গাছ, ফুলার রোডে উদয়ন স্কুলের সামনে থাকা তেঁতুলগাছ ও রোডের মুখে থাকা বিশাল আকৃতির রেইনট্রিগাছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শামসুন্নাহার হল ও টিএসসির সামনে আছে শতবর্ষী বুদ্ধ নারকেলগাছ, কার্জন হলের সামনে আছে শতবর্ষী নাগলিঙ্গম ও মেহগনিগাছ, একটু দূরেই আছে কনকচূড়া ও গ্লিরিসিডিয়াগাছ। রমনা পার্কের মধ্যে আছে বিশাল আকৃতির দুটি ছাতিমগাছ। এ ছাড়া সেখানে আছে শতবর্ষী মহুয়া ও কুসুমগাছ। লেদার টেকনোলজি কলেজ চত্বরে আছে একটি প্রাচীন খিরনিগাছ। এ রকম শত শত প্রাচীন বৃক্ষ পাওয়া যাবে সারা দেশে।
অতীতে প্রায় গ্রামেই একটা বিশাল বটগাছ থাকত। সে বটগাছগুলো বিভিন্ন দেবতার থান (স্থানের বিকৃত শব্দ) হিসেবে পরিচিতি পেত। সেসব থানে প্রতিবছর বিশেষ কোনো দিনে বিশেষ দেব-দেবীর পূজা হতো, এখনো কোথাও কোথাও তা হয়। বটতলায় মেলা ও হাটবাজার বসত। নদীর ধারে খেয়াঘাটের পাড়ে বট আর অশ্বত্থগাছ লাগানো হতো, যাতে খেয়ার যাত্রীরা সেখানে জিরিয়ে অপেক্ষা করতে পারে। এমনকি অনেক স্কুলের বিশাল মাঠের কোণে থাকত বিশাল বিশাল বৃক্ষ, যার তলায় শিশুরা খেলত। আজ সেসব অনেকের কাছেই অতীতের স্মৃতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীপল্লিতে গিয়েও দেখেছি, সেসব গ্রামে অন্তত একটি প্রাচীন বৃক্ষ রয়েছে। মারমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কোনো স্থানে তাদের নতুন বসতি স্থাপনের আগে প্রথমে সে জায়গায় একটি তেঁতুলগাছ লাগিয়ে রেখে আসে। কয়েক বছর পর সেখানে গিয়ে যদি দেখতে পায় যে গাছটি খুব বেড়েছে, তাহলে সে জায়গায় তারা নতুন বসতি স্থাপন করে। সে তেঁতুলগাছই যেন ওদের রক্ষক ও প্রহরী হয়ে দাঁড়ায়।
কেন একটি প্রাচীন বৃক্ষ কোনো এলাকার মানুষের জন্য রক্ষক হবে না? একটি বর্ষীয়ান আমগাছ গড়ে দিনে ১০০ গ্যালন পানি তার পাতার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে সে এলাকাকে শীতল করে দেয়। এটা অনুভব করা যায় ঢাকা শহরেই, মতিঝিল থেকে ফিরে হঠাৎ করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকলে, আহা কী প্রশান্তি আর শীতলতা সেখানে! তাই যেকোনোভাবে হোক এ দেশের প্রাচীন ও পবিত্র গাছগুলো যত দিন নিজেরা বাঁচতে চায়, তত দিন তাদের বাঁচতে দিতে হবে। আশার কথা যে সরকার ইতিমধ্যে দেশের প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ধারা ২৩ (১) অনুযায়ী স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ ও প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। আবেদন জানিয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের স্বার্থে ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক গাছগুলোকে চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে। এ বিষয়ে আমাদের আশপাশে এরূপ যেসব বৃক্ষ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে তার তথ্য আমাদেরই সরকারকে তথা বন অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। স্থানীয়ভাবে নিজেরা সচেতন হয়ে সেগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পক্ষে কখনো প্রতিটি গাছের পাশে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা সম্ভব না, বিষয়টা হাস্যকরও বটে। আর গবেষকদের দায়িত্ব হবে, তালিকা তৈরির পর সেসব গাছের সঠিক বয়স নিরূপণপূর্বক ডেটাবেইস তৈরি করা, এসব গাছের ইতিহাস উদ্ধার করা।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়। সারা গায়ে ছাই মেখে আধপোড়া গজার মাছ খেয়ে গগন নেচে নেচে দৌড়িয়েছে কয়েক মাইল ঢাকের তালে তালে। মোটা কাছি দিয়ে বেঁধে বিশজন জোয়ান পুরুষও গগনকে ধরে রাখতে পারেনি। এমনি শক্তিধর নিশকাইন্দা দেওয়ের ভর!’
অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা ছিল পারিল-বলধারার সেই প্রাচীন বটগাছটা দেখার। অবশেষে এ মাসেই সে সুযোগ এল। ড. নওয়াজেশের ভাইপো নাসিম আহমেদ নাদভী ও আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। বিরাট এলাকাজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে সে গাছটা অনেকটা জায়গা ছেয়ে ফেলেছে। গোড়াটা পাকা করে বাঁধানো। তার তলায় শুয়ে আছে নিশকাইন্দা দেওয়ের মাটির ক্ষয়িষ্ণু অবয়ব, বিশাল দেহ, প্রায় ৪০ ফুট লম্বা আর ৩০ ফুট চওড়া। কে এই নিশকাইন্দা দেও তা কেউ বলতে পারে না। কারও কারও ধারণা, ওটা শিবের এক ভয়ংকর রূপ। প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তির দিন সে গাছের তলায় বিরাট মেলা বসে, নিশকাইন্দা দেওয়ের পূজা হয়। ঢাক বাজে, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনিতে সে বটতলাটা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। ভক্তরা মাটির ঘোড়া গাছের তলায় রেখে মানত করে। বড় বড় জটায়, থামের মতো গুঁড়িতে সিঁদুর-তেল দিয়ে দেবতার প্রতীক আঁকে। সে গাছটা স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে হয়ে উঠেছে এক পবিত্র বৃক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, গাছটার বয়স প্রায় ৩০০ বছর। গ্রামবাসীর ধারণা, বলধারার সে গাছটাই গ্রামকে ঝড়ঝাপটা ও বিপদ-আপদ থেকে শত শত বছর ধরে রক্ষা করে চলেছে। তাই ওর প্রতি তাদের এ মান্যতা। কিন্তু যে গাছকে তারা বটবৃক্ষ বলে, নামটা যার কারণে হয়েছে বলধারার বটতলা, আসলে সেটি বটগাছ না, অশ্বত্থ না। ড. নওয়াজেশ আহমদেরও সন্দেহ ছিল ওটা নিয়ে, ভেবেছিলেন পাকুড়গাছ। সে যাই হোক, গাছটি যে অনেক প্রাচীন ও পবিত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এরূপ আরও দুটি প্রাচীন গাছের দেখা পেলাম এ মাসেই। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার হিরনাল গ্রামে সে গাছ দুটি রয়েছে। এর একটি বটগাছ, অন্যটি খিরনিগাছ। পাশাপাশি দুটি গাছের অবস্থান। বটগাছটা প্রায় তিন বিঘা জমিজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে জায়গাটা অন্ধকার করে ফেলেছে। অনেক খুঁজেও সে বটগাছের মূল গাছ বা গোড়া কোনটি, তা দেখতে পেলাম না। অসংখ্য ঝুরি নামিয়ে মোটা মোটা থামের মতো করে তা দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখেছে ভারী ডালপালাগুলোকে। সে বটতলাতেও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা করে, মানত করে। কুলাদি মৌজায় অবস্থিত সে গাছটি হিরনাল বটগাছ নামে পরিচিত। অনেকের ধারণা, বটগাছটির বয়স হবে প্রায় ৪০০ বছর। এর কাছেই রয়েছে এর চেয়েও বয়সী আরেকটি গাছ, সেখানকার অনেকেরই ধারণা সে গাছটির বয়স হবে কমপক্ষে ৫০০ বছর। সেটি বট না, খিরনিগাছ। পাশে হজরত শাহ আল হাদী (র.)-এর মাজার। সে বিশাল গাছটির গোড়াটা বৃত্তাকার বেদি করে বাঁধানো। সে গ্রামে ওই খিরনিগাছটিও পেয়েছে পবিত্র বৃক্ষের মর্যাদা, কেউ তার একটা পাতাও ছেঁড়ে না। মানত করে তা পূরণ হলে কেউ কেউ খিরনিতলায় এসে শিরনি দিয়ে যায়। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে মানুষের প্রগাঢ় বিশ্বাস ও ভয় গাছগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে। গাছগুলোও গ্রামের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আগলে রাখছে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী জমিদারবাড়িতেও আছে প্রায় আড়াই শ বছর বয়সী একটি কাঠগোলাপগাছ। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রামে আছে প্রায় ২০০ বছর বয়সী একটি শিমুলগাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গ্রামে আছে ২২০ বছর বয়সী একটি সূর্যপুরী আমগাছ। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দিতে আছে একটি শতবর্ষী আমগাছ। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী গ্রামের কাছে আছে একটি প্রাচীন গাবগাছ। ধারণা করা হয়, এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি বয়সী একটি গাবগাছ আছে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটকেলবাড়িয়া গ্রামে। এ দুটি গাবগাছেরই বয়স হবে কয়েক শ বছর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়রা গ্রামে আছে প্রায় ৫০০ বছর বয়সী একটি তেঁতুলগাছ, যা তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহের নীরব সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। এসব সুসংবাদের পাশাপাশি দুঃসংবাদও শুনতে পাই। রাজশাহীর তানোরের অমৃতপুর গ্রামের সেই শতবর্ষী তেঁতুলগাছটা কেন কাটা পড়ল?
ঢাকা শহরেও কিছু শতবর্ষী বৃক্ষ আছে। এগুলোর মধ্যে হেয়ার রোডের পাদাউক, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সীমানাপ্রাচীরের কোলে ব্ল্যাকবিন গাছ, ফুলার রোডে উদয়ন স্কুলের সামনে থাকা তেঁতুলগাছ ও রোডের মুখে থাকা বিশাল আকৃতির রেইনট্রিগাছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শামসুন্নাহার হল ও টিএসসির সামনে আছে শতবর্ষী বুদ্ধ নারকেলগাছ, কার্জন হলের সামনে আছে শতবর্ষী নাগলিঙ্গম ও মেহগনিগাছ, একটু দূরেই আছে কনকচূড়া ও গ্লিরিসিডিয়াগাছ। রমনা পার্কের মধ্যে আছে বিশাল আকৃতির দুটি ছাতিমগাছ। এ ছাড়া সেখানে আছে শতবর্ষী মহুয়া ও কুসুমগাছ। লেদার টেকনোলজি কলেজ চত্বরে আছে একটি প্রাচীন খিরনিগাছ। এ রকম শত শত প্রাচীন বৃক্ষ পাওয়া যাবে সারা দেশে।
অতীতে প্রায় গ্রামেই একটা বিশাল বটগাছ থাকত। সে বটগাছগুলো বিভিন্ন দেবতার থান (স্থানের বিকৃত শব্দ) হিসেবে পরিচিতি পেত। সেসব থানে প্রতিবছর বিশেষ কোনো দিনে বিশেষ দেব-দেবীর পূজা হতো, এখনো কোথাও কোথাও তা হয়। বটতলায় মেলা ও হাটবাজার বসত। নদীর ধারে খেয়াঘাটের পাড়ে বট আর অশ্বত্থগাছ লাগানো হতো, যাতে খেয়ার যাত্রীরা সেখানে জিরিয়ে অপেক্ষা করতে পারে। এমনকি অনেক স্কুলের বিশাল মাঠের কোণে থাকত বিশাল বিশাল বৃক্ষ, যার তলায় শিশুরা খেলত। আজ সেসব অনেকের কাছেই অতীতের স্মৃতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীপল্লিতে গিয়েও দেখেছি, সেসব গ্রামে অন্তত একটি প্রাচীন বৃক্ষ রয়েছে। মারমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কোনো স্থানে তাদের নতুন বসতি স্থাপনের আগে প্রথমে সে জায়গায় একটি তেঁতুলগাছ লাগিয়ে রেখে আসে। কয়েক বছর পর সেখানে গিয়ে যদি দেখতে পায় যে গাছটি খুব বেড়েছে, তাহলে সে জায়গায় তারা নতুন বসতি স্থাপন করে। সে তেঁতুলগাছই যেন ওদের রক্ষক ও প্রহরী হয়ে দাঁড়ায়।
কেন একটি প্রাচীন বৃক্ষ কোনো এলাকার মানুষের জন্য রক্ষক হবে না? একটি বর্ষীয়ান আমগাছ গড়ে দিনে ১০০ গ্যালন পানি তার পাতার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে সে এলাকাকে শীতল করে দেয়। এটা অনুভব করা যায় ঢাকা শহরেই, মতিঝিল থেকে ফিরে হঠাৎ করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকলে, আহা কী প্রশান্তি আর শীতলতা সেখানে! তাই যেকোনোভাবে হোক এ দেশের প্রাচীন ও পবিত্র গাছগুলো যত দিন নিজেরা বাঁচতে চায়, তত দিন তাদের বাঁচতে দিতে হবে। আশার কথা যে সরকার ইতিমধ্যে দেশের প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ধারা ২৩ (১) অনুযায়ী স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ ও প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। আবেদন জানিয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের স্বার্থে ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক গাছগুলোকে চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে। এ বিষয়ে আমাদের আশপাশে এরূপ যেসব বৃক্ষ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে তার তথ্য আমাদেরই সরকারকে তথা বন অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। স্থানীয়ভাবে নিজেরা সচেতন হয়ে সেগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পক্ষে কখনো প্রতিটি গাছের পাশে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা সম্ভব না, বিষয়টা হাস্যকরও বটে। আর গবেষকদের দায়িত্ব হবে, তালিকা তৈরির পর সেসব গাছের সঠিক বয়স নিরূপণপূর্বক ডেটাবেইস তৈরি করা, এসব গাছের ইতিহাস উদ্ধার করা।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়।
৫ দিন আগে
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন! সেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত ঘটনা। যাঁরা নারীক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেবেন বলে প্রতিশ্রুত, তাঁদেরই কেউ কেউ ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন বিভীষিকা।
৬ মিনিট আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
২০ ঘণ্টা আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগেরাজিউল হাসান

‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা বিশ্বটাকে আরও বাসযোগ্য করব। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পারছি? জঞ্জাল তো সরছেই না, বরং এই আধুনিক যুগেও পৃথিবীর বুকে শ্বাস ফেলতে না ফেলতেই কিছু নবজাতকের ঠাঁই হয় আবর্জনার স্তূপে, অকারণে-নিঃশব্দে ঝরে যায় তাদের প্রাণ।
পৃথিবীটা সুন্দর। জীবন আরও সুন্দর। কিন্তু এত এত সুন্দরের মাঝে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা সম্ভবত ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁই হওয়া। আবর্জনার স্তূপ কেন কিছু নবজাতকের ঠিকানা হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। প্রতিটা প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রেক্ষাপট থেকে জীবন বাঁচানোর দিকে মনোযোগ আকর্ষণই এ লেখার উদ্দেশ্য। কারও জীবনে সেই নবজাতক সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই নিজের কিংবা সঙ্গীর নাড়ি ছেঁড়া ধনকে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সভ্য জগতে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মানবাধিকার সংগঠন সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যের বরাত দিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ৯৪টি নবজাতক উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৬৪টিই মৃত।
১২ এপ্রিল ‘বিশ্ব পথশিশু দিবস’ সামনে রেখে গত ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন’। এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নবজাতকসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার পথশিশু ও নবজাতকের সন্ধান মিলেছে। তাদের মধ্যে ৮০০ ছিল নবজাতক। ২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়। অথচ পৃথিবীর নতুন এই অতিথিদের জীবন এভাবে চোখ মেলার আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল না। তাদের থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, পরিবারের আলো হয়ে। কিন্তু তা না হয়ে তাদের ঠিকানা হয়েছে আবর্জনার স্তূপে।
অথচ এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে আমাদের সমাজে। একটা সন্তানের জন্য অনেক দম্পতির জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা সেই নবজাতকের সঙ্গে যদি কোনোভাবে ওই সব দম্পতির যোগসূত্র ঘটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। একটু সচেতন আর উদ্যোগী হলে এই যোগসূত্র ঘটানো সম্ভব, ঠেকানো সম্ভব নতুন প্রাণগুলোর ঝরে পড়া।
একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তার প্রতি যেমন মা-বাবার দায়িত্ব থাকে, একইভাবে দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রেরও। উন্নত বিশ্বে শিশুর দায়দায়িত্ব পালনে মা-বাবা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র রীতিমতো হস্তক্ষেপ করে বসে। বলিউডে এ নিয়ে একটি ছবিও আছে—‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। ছবিটিতে যদিও কোল থেকে সন্তান কেড়ে নেওয়ার পর একজন মায়ের আকুতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে বড় একটি বার্তাও আছে। নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো মনে করে, আজকের শিশু আগামী দিনের সম্পদ। কাজেই তার সুরক্ষা, তাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মা-বাবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা যদি কোনোভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে রাষ্ট্র নিজেই সে দায়িত্ব নিয়ে নেবে।
এমন ব্যবস্থার কারণেই উন্নত বিশ্বে ডাস্টবিন কখনো কোনো নবজাতকের ঠিকানা হয় না। এমন ঘটনা কেবল ঘটে আমাদের দেশের মতো উন্নত হওয়ার চেষ্টায় থাকা দেশগুলোয়। কারণ, এখানে এখনো আজকের শিশুকে আগামীর সম্পদ বলে মনে করা হয় না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঠেকানোর উপায় কী? আমাদের দেশে অবশ্য একটি সমাধান আছে। সেটা হলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ছোটমনি নিবাস’। সারা দেশে ছয়টি বিভাগে পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী উদ্ধারকৃত শিশুদের এখানে লালনপালন করা হয়। কিন্তু ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুকে উদ্ধার করে সেই নিবাস পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। এর পাশাপাশি যদি হাসপাতালগুলোয় ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকত, তাহলে হয়তো ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁইই হতো না। তারপরও যদি কোনো নবজাতককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়, তার জীবন অন্তত সেই আবর্জনার স্তূপেই শেষ হতো না। এই ব্যবস্থা এমনভাবে করা যেতে পারে যেখানে কেউ চাইলে তাঁর ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে’ ডাস্টবিনে ছুড়ে না ফেলে নবজাতক ব্যাংকে রেখে যাবেন। সেখানে তাঁর পরিচয় গোপন থাকবে। আগ্রহী দম্পতিরা হাসপাতালে যোগাযোগ করে সেই ব্যাংক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারবেন। এতে সন্তানহীন দম্পতিরা যেমন মা-বাবা হওয়ার স্বাদ পাবেন, একইভাবে মা-বাবাহীন নবজাতকগুলোও পরিবার খুঁজে পাবে।
কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, দেশজুড়ে থাকা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের এতিমখানা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ছোটমনি নিবাস’ থেকেই তো দত্তক নেওয়া যায়। হাসপাতালে আবার ‘নবজাতক ব্যাংক’ খোলার ঝক্কি নিতে হবে কেন? ওপরে যে তথ্যগুলো আমি উল্লেখ করেছি, তাতেই এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে। একটি তথ্য আবার উল্লেখ করছি—২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়।
একটি শিশুর জন্মের পর তার কিছু সেবার প্রয়োজন হয়। সেই সেবাটা না পেলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কাজেই একটি নবজাতককে ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে ‘ছোটমনি নিবাস’ কিংবা এতিমখানায় নেওয়ার চেয়ে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া জরুরি। হাসপাতালে যদি ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকে, তাহলে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা শিশুগুলোর জন্য সেই সেবা পাওয়া সহজ হবে। ফলে শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে না, অকালে ঝরবে না তাদের প্রাণ।

‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা বিশ্বটাকে আরও বাসযোগ্য করব। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পারছি? জঞ্জাল তো সরছেই না, বরং এই আধুনিক যুগেও পৃথিবীর বুকে শ্বাস ফেলতে না ফেলতেই কিছু নবজাতকের ঠাঁই হয় আবর্জনার স্তূপে, অকারণে-নিঃশব্দে ঝরে যায় তাদের প্রাণ।
পৃথিবীটা সুন্দর। জীবন আরও সুন্দর। কিন্তু এত এত সুন্দরের মাঝে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা সম্ভবত ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁই হওয়া। আবর্জনার স্তূপ কেন কিছু নবজাতকের ঠিকানা হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। প্রতিটা প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রেক্ষাপট থেকে জীবন বাঁচানোর দিকে মনোযোগ আকর্ষণই এ লেখার উদ্দেশ্য। কারও জীবনে সেই নবজাতক সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই নিজের কিংবা সঙ্গীর নাড়ি ছেঁড়া ধনকে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সভ্য জগতে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মানবাধিকার সংগঠন সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যের বরাত দিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ৯৪টি নবজাতক উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৬৪টিই মৃত।
১২ এপ্রিল ‘বিশ্ব পথশিশু দিবস’ সামনে রেখে গত ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন’। এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নবজাতকসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার পথশিশু ও নবজাতকের সন্ধান মিলেছে। তাদের মধ্যে ৮০০ ছিল নবজাতক। ২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়। অথচ পৃথিবীর নতুন এই অতিথিদের জীবন এভাবে চোখ মেলার আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল না। তাদের থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, পরিবারের আলো হয়ে। কিন্তু তা না হয়ে তাদের ঠিকানা হয়েছে আবর্জনার স্তূপে।
অথচ এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে আমাদের সমাজে। একটা সন্তানের জন্য অনেক দম্পতির জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা সেই নবজাতকের সঙ্গে যদি কোনোভাবে ওই সব দম্পতির যোগসূত্র ঘটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। একটু সচেতন আর উদ্যোগী হলে এই যোগসূত্র ঘটানো সম্ভব, ঠেকানো সম্ভব নতুন প্রাণগুলোর ঝরে পড়া।
একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তার প্রতি যেমন মা-বাবার দায়িত্ব থাকে, একইভাবে দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রেরও। উন্নত বিশ্বে শিশুর দায়দায়িত্ব পালনে মা-বাবা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র রীতিমতো হস্তক্ষেপ করে বসে। বলিউডে এ নিয়ে একটি ছবিও আছে—‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। ছবিটিতে যদিও কোল থেকে সন্তান কেড়ে নেওয়ার পর একজন মায়ের আকুতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে বড় একটি বার্তাও আছে। নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো মনে করে, আজকের শিশু আগামী দিনের সম্পদ। কাজেই তার সুরক্ষা, তাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মা-বাবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা যদি কোনোভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে রাষ্ট্র নিজেই সে দায়িত্ব নিয়ে নেবে।
এমন ব্যবস্থার কারণেই উন্নত বিশ্বে ডাস্টবিন কখনো কোনো নবজাতকের ঠিকানা হয় না। এমন ঘটনা কেবল ঘটে আমাদের দেশের মতো উন্নত হওয়ার চেষ্টায় থাকা দেশগুলোয়। কারণ, এখানে এখনো আজকের শিশুকে আগামীর সম্পদ বলে মনে করা হয় না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঠেকানোর উপায় কী? আমাদের দেশে অবশ্য একটি সমাধান আছে। সেটা হলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ছোটমনি নিবাস’। সারা দেশে ছয়টি বিভাগে পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী উদ্ধারকৃত শিশুদের এখানে লালনপালন করা হয়। কিন্তু ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুকে উদ্ধার করে সেই নিবাস পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। এর পাশাপাশি যদি হাসপাতালগুলোয় ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকত, তাহলে হয়তো ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁইই হতো না। তারপরও যদি কোনো নবজাতককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়, তার জীবন অন্তত সেই আবর্জনার স্তূপেই শেষ হতো না। এই ব্যবস্থা এমনভাবে করা যেতে পারে যেখানে কেউ চাইলে তাঁর ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে’ ডাস্টবিনে ছুড়ে না ফেলে নবজাতক ব্যাংকে রেখে যাবেন। সেখানে তাঁর পরিচয় গোপন থাকবে। আগ্রহী দম্পতিরা হাসপাতালে যোগাযোগ করে সেই ব্যাংক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারবেন। এতে সন্তানহীন দম্পতিরা যেমন মা-বাবা হওয়ার স্বাদ পাবেন, একইভাবে মা-বাবাহীন নবজাতকগুলোও পরিবার খুঁজে পাবে।
কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, দেশজুড়ে থাকা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের এতিমখানা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ছোটমনি নিবাস’ থেকেই তো দত্তক নেওয়া যায়। হাসপাতালে আবার ‘নবজাতক ব্যাংক’ খোলার ঝক্কি নিতে হবে কেন? ওপরে যে তথ্যগুলো আমি উল্লেখ করেছি, তাতেই এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে। একটি তথ্য আবার উল্লেখ করছি—২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়।
একটি শিশুর জন্মের পর তার কিছু সেবার প্রয়োজন হয়। সেই সেবাটা না পেলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কাজেই একটি নবজাতককে ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে ‘ছোটমনি নিবাস’ কিংবা এতিমখানায় নেওয়ার চেয়ে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া জরুরি। হাসপাতালে যদি ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকে, তাহলে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা শিশুগুলোর জন্য সেই সেবা পাওয়া সহজ হবে। ফলে শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে না, অকালে ঝরবে না তাদের প্রাণ।

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়।
৫ দিন আগে
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন! সেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত ঘটনা। যাঁরা নারীক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেবেন বলে প্রতিশ্রুত, তাঁদেরই কেউ কেউ ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন বিভীষিকা।
৬ মিনিট আগে
নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
১৬ মিনিট আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। কিছুটা ছোট পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা দরে।
পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, সেটা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। শঙ্কার ব্যাপার, গত বছরের মজুত পেঁয়াজের ১০ শতাংশ রয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশ খাওয়া হয়ে গেছে। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হলেও তা বাজারে আসতে আরও মাস দেড়েক লাগবে। তাহলে পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য কমবে কী করে?
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত পেঁয়াজ-সংক্রান্ত খবরটিতে ক্রেতার জন্য আশাবাদী কোনো উপাদান নেই। বোঝাই যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে। আর সরকার যদি চায়, তাহলে দাম কমতে পারে। আপাতত তার একটাই পথ—আমদানি। সরকার কি পেঁয়াজ আমদানির দিকে যাবে, নাকি নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ খাওয়াকেই স্বাভাবিক বলে মনে করবে? কেউ কেউ তো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, গত বছরও এই সময় এ রকমই ছিল পেঁয়াজের দাম। যদি সেটা জানাই থাকে, তাহলে আগেই কেন দাম স্থিতিশীল রাখার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে, গত বছর নভেম্বরে আলুর কেজি হয়েছিল ৭০ টাকা। এবার কেন যেন আলু তার রক্তচক্ষু এখনো দেখায়নি। মোটামুটি ২০-২৫ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে গোল আলু। পেঁয়াজের সঙ্গে সন্ধি করে আলুর দামও যেন বেড়ে না যায়, কায়মনোবাক্যে তা প্রার্থনা করি।
পেঁয়াজের ঘাটতির কারণেই কি দাম বাড়ল, নাকি এর পেছনে কোনো সিন্ডিকেটের হাত আছে, তা জানা দরকার। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছিল, পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পার হলেই আমদানির অনুমতি দিতে হবে। আর সেটা করা হলে একই সঙ্গে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। ভাবনাটি ভালো ছিল। পেঁয়াজ নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দিনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশকে কাজে পরিণত করলে ভালো হয়।
সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এ সময় বাজার স্থিতিশীল না থাকলে মানুষ বিপদে পড়বে। শীতের সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির বাজার হয়তো স্থিতিশীল হবে। মাছ-মাংসের দাম নিয়েও ভাবা দরকার। আমাদের দেশে পুষ্টিকর খাদ্য সহজলভ্য নয়। দরিদ্র মানুষের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ডিম আর ব্রয়লার মুরগি থেকে মূলত প্রোটিন পায় দরিদ্র মানুষ। সে খাদ্যপণ্যের দাম যদি গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে না থাকে, তাহলে প্রোটিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার।
অনেক বিষয়েই কথা বলা যায়। তবে এ মুহূর্তে পেঁয়াজকে নাগালের মধ্যে রাখার জন্য চিন্তা করুক সংশ্লিষ্ট মহল—এটাই সবচেয়ে জরুরি।

পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। কিছুটা ছোট পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা দরে।
পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, সেটা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। শঙ্কার ব্যাপার, গত বছরের মজুত পেঁয়াজের ১০ শতাংশ রয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশ খাওয়া হয়ে গেছে। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হলেও তা বাজারে আসতে আরও মাস দেড়েক লাগবে। তাহলে পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য কমবে কী করে?
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত পেঁয়াজ-সংক্রান্ত খবরটিতে ক্রেতার জন্য আশাবাদী কোনো উপাদান নেই। বোঝাই যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে। আর সরকার যদি চায়, তাহলে দাম কমতে পারে। আপাতত তার একটাই পথ—আমদানি। সরকার কি পেঁয়াজ আমদানির দিকে যাবে, নাকি নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ খাওয়াকেই স্বাভাবিক বলে মনে করবে? কেউ কেউ তো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, গত বছরও এই সময় এ রকমই ছিল পেঁয়াজের দাম। যদি সেটা জানাই থাকে, তাহলে আগেই কেন দাম স্থিতিশীল রাখার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে, গত বছর নভেম্বরে আলুর কেজি হয়েছিল ৭০ টাকা। এবার কেন যেন আলু তার রক্তচক্ষু এখনো দেখায়নি। মোটামুটি ২০-২৫ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে গোল আলু। পেঁয়াজের সঙ্গে সন্ধি করে আলুর দামও যেন বেড়ে না যায়, কায়মনোবাক্যে তা প্রার্থনা করি।
পেঁয়াজের ঘাটতির কারণেই কি দাম বাড়ল, নাকি এর পেছনে কোনো সিন্ডিকেটের হাত আছে, তা জানা দরকার। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছিল, পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পার হলেই আমদানির অনুমতি দিতে হবে। আর সেটা করা হলে একই সঙ্গে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। ভাবনাটি ভালো ছিল। পেঁয়াজ নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দিনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশকে কাজে পরিণত করলে ভালো হয়।
সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এ সময় বাজার স্থিতিশীল না থাকলে মানুষ বিপদে পড়বে। শীতের সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির বাজার হয়তো স্থিতিশীল হবে। মাছ-মাংসের দাম নিয়েও ভাবা দরকার। আমাদের দেশে পুষ্টিকর খাদ্য সহজলভ্য নয়। দরিদ্র মানুষের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ডিম আর ব্রয়লার মুরগি থেকে মূলত প্রোটিন পায় দরিদ্র মানুষ। সে খাদ্যপণ্যের দাম যদি গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে না থাকে, তাহলে প্রোটিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার।
অনেক বিষয়েই কথা বলা যায়। তবে এ মুহূর্তে পেঁয়াজকে নাগালের মধ্যে রাখার জন্য চিন্তা করুক সংশ্লিষ্ট মহল—এটাই সবচেয়ে জরুরি।

ঢাকার নয়াপল্টনে একদল নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে নীল-সাদা ব্যানার—তাতে লেখা, ‘দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’ সময়টা ২০২৩ সালের শেষ ভাগ। মুখে স্লোগান, চোখে রাগ, কিন্তু ভেতরে যেন এক অজানা ক্লান্তি। এ দৃশ্য নতুন নয়।
৫ দিন আগে
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন! সেখান থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত ঘটনা। যাঁরা নারীক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেবেন বলে প্রতিশ্রুত, তাঁদেরই কেউ কেউ ক্রিকেটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন বিভীষিকা।
৬ মিনিট আগে
নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
১৬ মিনিট আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
২০ ঘণ্টা আগে