Ajker Patrika

ভবিষ্যৎ গোল্লায় গেলেও রস বেঁচে থাকুক

অজয় দাশগুপ্ত
সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত
সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’ যেই কথা, সেই কাজ। ছোট ভাই ভাবল, ‘দাদা যে বলল গোল্লায় যেতে, তা সেখানে যাব কী করে?’ ভাবতে ভাবতে একসময় ঠান্ডা পানি পান করার জন্য ফ্রিজ খুলতেই দেখল, একটা পাত্রে বেশ কয়েকটা রসে জবজবে রসগোল্লা। সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইন বা মগজ খুলে গেল তার। ‘আহা! বড় ভাই বলে কথা! ভাই তো আমাকে এই গোল্লাতেই যেতে বলেছে।’ ভাবল, ‘আমি যেতে না পারি, গোল্লা আমার ভেতর গেলেই তো কেল্লা ফতে!’ টপাটপ সব কটা রসগোল্লা মুখে পুরে নিয়েছিল গোবর্ধন। কাজ শেষে বড় ভাই যখন তার আগত বন্ধুদের আপ্যায়ন করতে রসগোল্লা আনতে ফ্রিজের দুয়ার খুলেছিল এবং তারপরের ঘটনা লেখার চেয়ে অনুমান করে নেওয়াই ভালো।

গল্পটা মনে পড়ল এই কারণে, আমাদের এখন প্রায় সবকিছুই গোল্লায় গেছে অথবা গোল্লা আমাদের ভেতরে চলে গেছে। যেমন ধরুন রাজনীতি। এর কোন দিকটা গোল্লায় আর কোন দিকটা গোল্লার বাইরে, তা নির্ণয় করা খুব কঠিন। আমরা যারা দেশে থাকি না, দেশের বাইরে বসবাস করি, আমাদেরও এই রাজনীতি ছাড় দেয় না। মজার বিষয় হচ্ছে, এখন দেশের চেয়ে দেশের বাইরেই রাজনীতির বাজার জমজমাট। হবে নাই-বা কেন? ভবিষ্যতে যাঁরা দেশ চালাবেন বা চালাতে পারবেন বলে ধারণা করা হয়, চব্বিশের গণজাগরণের বাইরে যেসব নেতা, তাঁদের বেশির ভাগ কিন্তু দেশের বাইরে থাকেন। কেউ লন্ডনে, কেউ আমেরিকায়, কেউবা দিল্লিতে। তাঁদের জনপ্রিয়তাও সে রকম। সবচেয়ে বড় কথা, চব্বিশের তরুণ তুর্কি নামে পরিচিতরা অতি অল্প সময়ে তাঁদের ইমেজ ফিকে করে ফেললেও বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা টিকে আছেন। শুধু টিকে থাকা কেন বলছি, মাঝে মাঝে তাঁরা অনলাইনে এমন সব ভাষণ-বিবৃতি বা আদেশ-উপদেশ দিয়ে থাকেন, যা দেখে-শুনে-পড়ে জাতি নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়।

দেশে কি মেধা আর প্রজ্ঞার এতটা আকাল? এ রকম নানা কথা নানা জনে বলে। অত গভীর আলাপে না গিয়েও বলা যায়, এটাও আমাদের গোল্লায় যাওয়ার এক তরিকা। খুব স্বাভাবিকভাবে দেশের ভেতরে থেকে যাঁরা লড়াই করেন বা রাজনীতি করেন, তাঁরা জানেন কত ধানে কত চাল। তাঁদের যা যা বাধাবিপত্তি বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তার আলোকেই পথ ঠিক করেন তাঁরা। যত মেধাবী আর যত বড় লবিস্টই হন না কেন, উড়ে গিয়ে জুড়ে বসা মানুষ রসগোল্লার রস খাবেন ঠিকই, কিন্তু শেষতক কারও জন্য আর কিছু থাকবে কি না, তার গ্যারান্টি নেই।

বেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। এটা বললে আবার অনেকে না বুঝে ‘ফ্যাসিস্ট’ নামের এক গোল্লার ভেতরে ঠেলে দিতে চায়। তা দিক। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণগুলো তো আছে। সে যাত্রা স্থগিত বা বন্ধ করার পেছনে যে অপশক্তি বা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, সেটার দায় স্বীকার করতেই হবে অপরাধীদের। আগের আমলের যাবতীয় ভালো দিক খারাপ করার জন্য তাঁদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন একাই এক শ! অথচ তাঁর ভেতরেও কোনো অনুশোচনা নেই। কোনো এক অজানা গর্ত থেকে বেরিয়ে মাথা উঁচু করে বলেন, ‘তোমাদের আমি আবার গোল্লায় নিলেও তোমরা আমাকে মনে রেখো।’ অর্থনীতির কথা বলতে গেলে গোল্লাগুলো শূন্য মনে হবে। তখন তত্ত্ব আর তথ্য বলবে, সব শূন্য যোগ করলেও যোগফলে কোনো সংখ্যার পয়দা করা যায় না।

সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। খবরে দেখলাম, সে-ও এখন গোল্লায় যাওয়ার পথে। কী ঘটছে জানুন:

‘নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে ১ নভেম্বর থেকে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও কক্সবাজার থেকে একটিও জাহাজ ছাড়েনি। সকালজুড়ে শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ছিল সুনসান নীরবতা, পর্যটকের আনাগোনাও ছিল না বললেই চলে।

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সকালে মাত্র চারজন যাত্রী ঘাটে এসেছিলেন, পরে তাঁরাও ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে এত দীর্ঘ সমুদ্রপথে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার সিদ্ধান্তে পর্যটক পাওয়া যাবে না। এই বাস্তবতায় জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’

সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাহাজমালিকেরা। বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা; আসা-যাওয়ায় মোট ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। ফলে দ্বীপে এক ঘণ্টা অবস্থানের সুযোগে পর্যটকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে আগ্রহী পর্যটক প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন। কিন্তু একটি জাহাজ চালু রাখতে অন্তত ৩৫০ যাত্রী দরকার। একবার যাত্রায় খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তাই কম যাত্রী নিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’

যা! এবার পর্যটন, তা-ও কি না দেশীয় পর্যটন, সে-ও যাওয়ার পথে। ওই যে গল্পটা—এক ভাই রসগোল্লা এনে রাখবে আর এক ভাই বুঝে বা না বুঝে তা সাবাড় করবে, এটাই আমাদের বাঙালিদের নিয়তি।

তবু আমাদের আশা নিয়েই বাঁচতে হয়। দেশের বাইরে যারা, তারা যেমন আশায় দিন গোনে; দেশের ভেতরের লোকজন আশাতেই বেঁচে আছে। রসগোল্লা শেষ হলেও রস তো থাকুক। রসেবশেই বেঁচে থাকে বাঙালি। সেটা যেন ভুলে না যায় কেউ।

লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা ফুল বেঁচে থাক

রাজিউল হাসান
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্‌ক্তিগুলো আওড়াই। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা বিশ্বটাকে আরও বাসযোগ্য করব। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পারছি? জঞ্জাল তো সরছেই না, বরং এই আধুনিক যুগেও পৃথিবীর বুকে শ্বাস ফেলতে না ফেলতেই কিছু নবজাতকের ঠাঁই হয় আবর্জনার স্তূপে, অকারণে-নিঃশব্দে ঝরে যায় তাদের প্রাণ।

পৃথিবীটা সুন্দর। জীবন আরও সুন্দর। কিন্তু এত এত সুন্দরের মাঝে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা সম্ভবত ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁই হওয়া। আবর্জনার স্তূপ কেন কিছু নবজাতকের ঠিকানা হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। প্রতিটা প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রেক্ষাপট থেকে জীবন বাঁচানোর দিকে মনোযোগ আকর্ষণই এ লেখার উদ্দেশ্য। কারও জীবনে সেই নবজাতক সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই নিজের কিংবা সঙ্গীর নাড়ি ছেঁড়া ধনকে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সভ্য জগতে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

মানবাধিকার সংগঠন সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যের বরাত দিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ৯৪টি নবজাতক উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৬৪টিই মৃত।

১২ এপ্রিল ‘বিশ্ব পথশিশু দিবস’ সামনে রেখে গত ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন’। এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নবজাতকসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার পথশিশু ও নবজাতকের সন্ধান মিলেছে। তাদের মধ্যে ৮০০ ছিল নবজাতক। ২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়। অথচ পৃথিবীর নতুন এই অতিথিদের জীবন এভাবে চোখ মেলার আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল না। তাদের থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, পরিবারের আলো হয়ে। কিন্তু তা না হয়ে তাদের ঠিকানা হয়েছে আবর্জনার স্তূপে।

অথচ এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে আমাদের সমাজে। একটা সন্তানের জন্য অনেক দম্পতির জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা সেই নবজাতকের সঙ্গে যদি কোনোভাবে ওই সব দম্পতির যোগসূত্র ঘটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। একটু সচেতন আর উদ্যোগী হলে এই যোগসূত্র ঘটানো সম্ভব, ঠেকানো সম্ভব নতুন প্রাণগুলোর ঝরে পড়া।

একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তার প্রতি যেমন মা-বাবার দায়িত্ব থাকে, একইভাবে দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রেরও। উন্নত বিশ্বে শিশুর দায়দায়িত্ব পালনে মা-বাবা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র রীতিমতো হস্তক্ষেপ করে বসে। বলিউডে এ নিয়ে একটি ছবিও আছে—‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। ছবিটিতে যদিও কোল থেকে সন্তান কেড়ে নেওয়ার পর একজন মায়ের আকুতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে বড় একটি বার্তাও আছে। নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো মনে করে, আজকের শিশু আগামী দিনের সম্পদ। কাজেই তার সুরক্ষা, তাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মা-বাবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা যদি কোনোভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে রাষ্ট্র নিজেই সে দায়িত্ব নিয়ে নেবে।

এমন ব্যবস্থার কারণেই উন্নত বিশ্বে ডাস্টবিন কখনো কোনো নবজাতকের ঠিকানা হয় না। এমন ঘটনা কেবল ঘটে আমাদের দেশের মতো উন্নত হওয়ার চেষ্টায় থাকা দেশগুলোয়। কারণ, এখানে এখনো আজকের শিশুকে আগামীর সম্পদ বলে মনে করা হয় না।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঠেকানোর উপায় কী? আমাদের দেশে অবশ্য একটি সমাধান আছে। সেটা হলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ছোটমনি নিবাস’। সারা দেশে ছয়টি বিভাগে পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী উদ্ধারকৃত শিশুদের এখানে লালনপালন করা হয়। কিন্তু ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুকে উদ্ধার করে সেই নিবাস পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। এর পাশাপাশি যদি হাসপাতালগুলোয় ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকত, তাহলে হয়তো ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁইই হতো না। তারপরও যদি কোনো নবজাতককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়, তার জীবন অন্তত সেই আবর্জনার স্তূপেই শেষ হতো না। এই ব্যবস্থা এমনভাবে করা যেতে পারে যেখানে কেউ চাইলে তাঁর ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে’ ডাস্টবিনে ছুড়ে না ফেলে নবজাতক ব্যাংকে রেখে যাবেন। সেখানে তাঁর পরিচয় গোপন থাকবে। আগ্রহী দম্পতিরা হাসপাতালে যোগাযোগ করে সেই ব্যাংক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারবেন। এতে সন্তানহীন দম্পতিরা যেমন মা-বাবা হওয়ার স্বাদ পাবেন, একইভাবে মা-বাবাহীন নবজাতকগুলোও পরিবার খুঁজে পাবে।

কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, দেশজুড়ে থাকা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের এতিমখানা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ছোটমনি নিবাস’ থেকেই তো দত্তক নেওয়া যায়। হাসপাতালে আবার ‘নবজাতক ব্যাংক’ খোলার ঝক্কি নিতে হবে কেন? ওপরে যে তথ্যগুলো আমি উল্লেখ করেছি, তাতেই এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে। একটি তথ্য আবার উল্লেখ করছি—২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়।

একটি শিশুর জন্মের পর তার কিছু সেবার প্রয়োজন হয়। সেই সেবাটা না পেলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কাজেই একটি নবজাতককে ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে ‘ছোটমনি নিবাস’ কিংবা এতিমখানায় নেওয়ার চেয়ে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া জরুরি। হাসপাতালে যদি ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকে, তাহলে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা শিশুগুলোর জন্য সেই সেবা পাওয়া সহজ হবে। ফলে শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে না, অকালে ঝরবে না তাদের প্রাণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পেঁয়াজ

সম্পাদকীয়
পেঁয়াজ

পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। কিছুটা ছোট পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা দরে।

পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, সেটা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। শঙ্কার ব্যাপার, গত বছরের মজুত পেঁয়াজের ১০ শতাংশ রয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশ খাওয়া হয়ে গেছে। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হলেও তা বাজারে আসতে আরও মাস দেড়েক লাগবে। তাহলে পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য কমবে কী করে?

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত পেঁয়াজ-সংক্রান্ত খবরটিতে ক্রেতার জন্য আশাবাদী কোনো উপাদান নেই। বোঝাই যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে। আর সরকার যদি চায়, তাহলে দাম কমতে পারে। আপাতত তার একটাই পথ—আমদানি। সরকার কি পেঁয়াজ আমদানির দিকে যাবে, নাকি নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ খাওয়াকেই স্বাভাবিক বলে মনে করবে? কেউ কেউ তো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, গত বছরও এই সময় এ রকমই ছিল পেঁয়াজের দাম। যদি সেটা জানাই থাকে, তাহলে আগেই কেন দাম স্থিতিশীল রাখার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে, গত বছর নভেম্বরে আলুর কেজি হয়েছিল ৭০ টাকা। এবার কেন যেন আলু তার রক্তচক্ষু এখনো দেখায়নি। মোটামুটি ২০-২৫ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে গোল আলু। পেঁয়াজের সঙ্গে সন্ধি করে আলুর দামও যেন বেড়ে না যায়, কায়মনোবাক্যে তা প্রার্থনা করি।

পেঁয়াজের ঘাটতির কারণেই কি দাম বাড়ল, নাকি এর পেছনে কোনো সিন্ডিকেটের হাত আছে, তা জানা দরকার। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছিল, পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পার হলেই আমদানির অনুমতি দিতে হবে। আর সেটা করা হলে একই সঙ্গে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। ভাবনাটি ভালো ছিল। পেঁয়াজ নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দিনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশকে কাজে পরিণত করলে ভালো হয়।

সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এ সময় বাজার স্থিতিশীল না থাকলে মানুষ বিপদে পড়বে। শীতের সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির বাজার হয়তো স্থিতিশীল হবে। মাছ-মাংসের দাম নিয়েও ভাবা দরকার। আমাদের দেশে পুষ্টিকর খাদ্য সহজলভ্য নয়। দরিদ্র মানুষের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ডিম আর ব্রয়লার মুরগি থেকে মূলত প্রোটিন পায় দরিদ্র মানুষ। সে খাদ্যপণ্যের দাম যদি গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে না থাকে, তাহলে প্রোটিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার।

অনেক বিষয়েই কথা বলা যায়। তবে এ মুহূর্তে পেঁয়াজকে নাগালের মধ্যে রাখার জন্য চিন্তা করুক সংশ্লিষ্ট মহল—এটাই সবচেয়ে জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রেফারি নিষ্ক্রান্ত, সরকার উদ্যোগহীন

অরুণ কর্মকার
রেফারি নিষ্ক্রান্ত, সরকার উদ্যোগহীন

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর, আজ শনিবার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো বিকার নেই। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কয়েকটি দল ছাড়া এ বিষয়ে কথাবার্তাও বলছে খুব কম দলই। সবচেয়ে বড় দল বিএনপি তো সরকারের আলটিমেটাম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই জাতীয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে তাঁদের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করেছে। এর পর থেকে এমনকি টেলিফোন করেও নাকি আলাপ-আলোচনার জন্য বিএনপির কোনো সাড়া পায়নি বলে অভিযোগ করেছে জামায়াত। এনসিপির পক্ষ থেকেও সরকারের আলটিমেটামের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। আর কাদের কথা বলার আছে! অবশ্য ফেসবুক এবং টিভি টক শোতে উপস্থিত হয়ে কোনো কোনো ক্ষুদ্র দলের নেতারা কিছু কথা বলছেন। তাতেও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নিশ্চিত জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও আশাপ্রদ কিছু নেই।

২৭০ দিন ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ সৃষ্টির গলদঘর্ম অধ্যবসায়ে রেফারির ভূমিকা পালন করা ঐকমত্য কমিশন জোড়াতালি দেওয়া এক সুপারিশ সরকারকে ধরিয়ে দিয়ে দৃশ্যপট থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়েছে। ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র কৌশলে এমনই এক সুপারিশ তারা দিয়ে গেছে যে তা প্রকাশ হওয়ার পর প্রায় সব দল, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই সুপারিশ জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে নতুন করে জাতীয় অনৈক্য সৃষ্টি করবে। দৃশ্যত এখন তেমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। এমনকি এই সুপারিশ নিয়ে সরকার কী করবে, তা-ও নির্ধারণ করতে না পেরে বন্দুকটা ফের রাজনীতিকদের ঘাড়ে রাখার কৌশল নিয়েছে। গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর এসেছে তাদের আলটিমেটাম। তাতে বলা হয়, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে এবং জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাত দিনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়। দলগুলো এটা করতে ব্যর্থ হলে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ছিলেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে তাঁরই সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায়। তিনি সভাপতি হিসেবে তাতে স্বাক্ষর করেছেন। ওই সুপারিশমালায় কোন কোন বিষয়ে কী কী ভিন্নমত আছে, সেগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বপ্রণোদিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করা সম্ভব কি না—সবই তিনি জানেন। কাজেই সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে আলোচনা করলে সমাধান সহজ হতো নাকি? যদি সমাধান না-ও হতো তাহলেও জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ থাকত না। এখন সে সন্দেহ অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার মুখেই শোনা যায়। তাহলে দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠানে সরকার কেন উদ্যোগহীন থাকল! আবার শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিন্তু সরকারই নেবে। এ যেন এক সাপলুডু খেলা। দুই. রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শেষ করে সরকারকে দিকনির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। যে বিষয়গুলোর ফয়সালা রেফারির মধ্যস্থতায় ২৭০ দিনের অধ্যবসায়ে নিরসন হলো না, সেগুলো সাত দিনের আলোচনায় ফয়সালা যে হওয়ার নয়, তা সবাই বোঝে। তা ছাড়া, জাতীয় রাজনীতির কোনো জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক দলগুলো স্বপ্রণোদিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করেছে—এমন কোনো নজিরই তো নেই। এই কথা কি অন্তর্বর্তী সরকারের অজানা? তারপরও কেন এই অনর্থক আলটিমেটামের অবতারণা।

বলা হতে পারে যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বশেষ সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সবকিছু জেনে-বুঝেও এমন একটি পদক্ষেপ ভবিষ্যতে শুধু লোকদেখানো হিসেবেই গণ্য হতে পারে। তিন. রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে। কিন্তু এ কথা কে না বোঝে, যা ২৭০ দিনের অধ্যবসায়ে হয়নি তা সাত দিনে হবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তো জানে যে তাদের মতানৈক্য কোন কোন প্রশ্নে এবং কোনটা কত গভীর। কাজেই এখন যখন বিএনপি আর এনসিপি কার্যত আলোচনার বিষয়ে নিস্পৃহ, অন্যদিকে জামায়াতসহ আট দলের নেতারা আন্দোলনে নেমে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করার হুমকি দিচ্ছেন, প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েও নির্বাচনের আগে গণভোট হতেই হবে বলে বক্তৃতা দিচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে কীভাবে আলোচনায় বসবে আর কী-ইবা সিদ্ধান্ত নেবে? সুতরাং চূড়ান্ত বিকল্প হচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন হলো, যদি সেই সিদ্ধান্ত কোনো কোনো দলের মনঃপূত না হয় (না হওয়ারই কথা) তাহলে তারা কী অবস্থান নেবে? তারা কি সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে যাবে, নাকি না। যদি না যায় তাহলে কি নির্বাচন হবে? যদি হয়ও তা কি সুষ্ঠু এবং এমন উৎসবমুখর হবে, যা সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে?

আগামী নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) একটি ‘প্রাক্-নির্বাচনী মূল্যায়ন’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব বর্তমান পরিবেশ নাজুক। নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনী যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, সে বিষয়ে সাধারণের মধ্যে অবিশ্বাস রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ প্রয়োজন। আইআরআই কিছু সুপারিশও দিয়েছে। তার মধ্যে প্রথমেই আছে, সব রাজনৈতিক দলকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? বিএনপির কথাই যদি বলি, যে জুলাই সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করেছে, সেই সনদ তো নাকি ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশে অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি। তাহলে বিএনপি কোন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে? জুলাই সনদ এবং সংবিধান সংশোধনের যেসব প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে, সেখানে তো রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতগুলো (নোট অব ডিসেন্ট) রাখাই হয়নি। তাহলে কীভাবে তারা সবকিছু আইআরআইয়ের সুপারিশ আর অন্তর্বর্তী সরকারের আকাঙ্ক্ষা বা অঙ্গীকার অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে। এসব কারণেই তো আলোচনার বিষয়ে অনেক রাজনৈতিক দল নির্বিকার। তাদের চাওয়া এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আইএমএফের শর্তের লাভ-ক্ষতি

শোয়েব সাম্য সিদ্দিক
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এমন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে একদিকে আছে দ্রুত উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণের নির্ভরতা ও বৈশ্বিক অস্থিরতার চাপ। এই বাস্তবতার কেন্দ্রে অবস্থান করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। সংস্থাটি আমাদের কাছে একদিকে আর্থিক সহযোগী, অন্যদিকে কঠিন শিক্ষক, যে সহায়তা দেয়, কিন্তু শর্তও দেয়। কেউ বলেন, আইএমএফ ছাড়া চলা কঠিন, আবার অনেকে মনে করেন আইএমএফের শর্ত মানলে দেশ পিছিয়ে যায়। বাস্তবতা হলো, এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির মাঝেই সত্য লুকিয়ে আছে।

বাংলাদেশ ২০২৩ সালে আইএমএফ থেকে প্রায় ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ নেয়। এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য ছিল রিজার্ভের ঘাটতি পূরণ করা, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। কোভিড-পরবর্তী সময়, জ্বালানি-সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি তখন এক কঠিন অবস্থায় ছিল। ডলার বাজারে অস্থিরতা, আমদানিতে বাধা, মুদ্রাস্ফীতি এবং রেমিট্যান্সের অনিয়মিত প্রবাহ—সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি চাপে পড়ে। আইএমএফ তখন আসে একধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু এই সহায়তা শুধু অর্থ দেওয়ার মধ্যে আটকে ছিল না, বরং পুরো নীতির দিকনির্দেশনাও বদলে দেয়।

আইএমএফ মূলত চায় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা। তারা মনে করে, ভর্তুকি কমাতে হবে, করজাল বাড়াতে হবে, মুদ্রানীতি বাজারভিত্তিক করতে হবে, বিনিময় হার বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে শৃঙ্খলা আনতে হবে। তাদের মতে, এই নীতিগুলো মানলে দেশের অর্থনীতি টেকসই পথে চলবে। আসলে, বিশ্বব্যাপী আইএমএফ একই মডেল অনুসরণ করে—‘আগে হিসাবের ভারসাম্য, পরে মানুষের স্বস্তি’।

এখানেই বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে আইএমএফের তত্ত্বের সংঘর্ষ তৈরি হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর, আমদানিনির্ভর এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসানির্ভর। এখানে ছোট ব্যবসা, কৃষি এবং প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভর করে জীবন চলে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী যখন জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো হয়, তখন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায়। এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কৃষকের খরচও বাড়ে। ফলে সবকিছুর দাম বাড়ে, কর্মসংস্থান কমে যায়, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।

তবু আইএমএফের কিছু দিক নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। প্রথমত, তারা অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে চায়। রিজার্ভের হিসাব, রাজস্ব ঘাটতি এবং বাজেট পরিকল্পনায় তারা জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়। দ্বিতীয়ত, তাদের কারণে সরকারকে কিছু কাঠামোগত সংস্কারের পথে যেতে হয়, যেমন কর প্রশাসন আধুনিক করা, ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমানো এবং সুদের হার বাজারভিত্তিক করা। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারে আইএমএফের উপস্থিতি মানে বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি আস্থার সংকেত। যেমন আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং জাইকার মতো সংস্থাগুলো নতুন করে সহযোগিতায় আগ্রহ দেখায়। এতে বাজেটে টাকার প্রবাহ কিছুটা বাড়ে এবং স্থিতিশীলতার বার্তা ছড়ায়।

তবে এর পাশাপাশি নেতিবাচক দিকগুলোও স্পষ্ট। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে সরকারকে ধীরে ধীরে জ্বালানি, সার, বিদ্যুৎ এবং সামাজিক খাতে ভর্তুকি কমাতে হয়। এতে সমাজের নিচের স্তরের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, অন্যদিকে আয় বাড়ে না। এতে বিশেষ করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুদের হার বাজারভিত্তিক করার বিষয়টিও এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে ব্যাংকগুলো একটি নির্দিষ্ট সীমায় ঋণ দিত, ফলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা নিশ্চিন্ত ছিলেন। এখন সেই সীমা তুলে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো ঝুঁকি বিবেচনা করে সুদের হার বাড়াচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা নতুন ব্যবসায়ী ঋণ পেতে সমস্যায় পড়ছেন। শিল্প খাতে বিনিয়োগের গতি কমছে, নতুন চাকরির সুযোগও কমছে। অর্থনীতি কাগজে স্থিতিশীল মনে হলেও বাস্তবে তা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ছে।

আরেকটি বড় বিষয় হলো, আইএমএফের নজর রাজস্ব আদায়ে। তারা চায় বাংলাদেশ কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াক। হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের রাজাওয়ালি ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম, প্রায় ৯ শতাংশের মতো। তাই আইএমএফ বলছে করজাল বাড়াতে হবে। কিন্তু যদি তা হয় শুধুই চাপ দিয়ে, তাহলে তা উল্টো ফল দেয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ এখনো জটিল, যেখানে কর রিটার্ন দেওয়া অনেকের জন্য কঠিন। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, কর প্রশাসনকে আধুনিক করা জরুরি, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে করদাতাদের সেবা দেওয়ার অবকাঠামো এখনো দুর্বল।

এই অবস্থায় অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আইএমএফের সংস্কার নীতি যদি মানবিক হয় তাহলে তা দেশের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু যদি তা যান্ত্রিক হয় তাহলে মানুষের জীবনে কষ্ট বাড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভর্তুকি পুরোপুরি কেটে দিলে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অথচ খাদ্যনিরাপত্তা বজায় রাখতে কৃষিকে সহায়তা দেওয়া জরুরি। তাই সংস্কার মানে কেবল কাটছাঁট নয়, বরং ভারসাম্য রক্ষা করা।

প্রশ্ন হলো, আইএমএফ ছাড়া কি আমাদের বিকল্প নেই? বাস্তবে বিকল্প আছে, তবে তা সহজ নয়। প্রথমত, নিজস্ব রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। কর প্রশাসন সহজ করতে হবে এবং ঝামেলামুক্ত রিটার্ন ব্যবস্থা আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, রেমিট্যান্সে স্থায়ী প্রণোদনা দিতে হবে যাতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হয়। তৃতীয়ত, রপ্তানি খাতকে বৈচিত্র্যময় করতে হবে, যাতে পোশাকের পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া, কৃষিপণ্য ও আইটি খাতে নতুন বাজার তৈরি হয়। চতুর্থত, জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা দরকার। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক বা অন্য উৎস থেকে ঋণ নিলেও প্রকল্পগুলো বেছে নিতে হবে উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে। এমন প্রকল্প নিতে হবে, যা থেকে আয় বাড়বে, যেমন রপ্তানি বৃদ্ধি বা আমদানি কমানো। বর্তমানে অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো বৈদেশিক ঋণে চলছে কিন্তু রিটার্ন নেই। এসব প্রকল্প বন্ধ করতে হবে, না হলে ঋণ বাড়বে অথচ আয় বাড়বে না।

বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নীতি ও বাস্তবতার ভারসাম্য রক্ষা করা। আইএমএফের সংস্কার প্রয়োজন, তবে তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে। দাম বাড়ানোর আগে বিকল্প দিতে হবে, কর বাড়ানোর আগে করদাতার সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ঋণ নেওয়ার আগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। মানুষ যেন নীতির ফল নিজের জীবনে দেখতে পায়, সেটিই হবে প্রকৃত সংস্কার।

সবশেষে বলা যায়, আইএমএফ কোনো শত্রু নয়, আবার নিখুঁত বন্ধু হিসেবেও দেখা যায় না। এটি এমন একটি সংস্থা, যা আমাদের ভুলগুলো আয়নায় দেখিয়ে দেয়, কিন্তু আয়না পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত