অরুণ কর্মকার
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর যখন থেকে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলোর আমূল সংস্কারের উদ্যোগ শুরু করা হয়, তখন থেকেই সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে একটি বিতর্কও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্তার লাভ করতে থাকে। বিতর্কটি হলো—সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন, নাকি নির্বাচনী ব্যবস্থার মতো জরুরি কিছু বিষয়ে সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বাকি সব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে—এমন একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার কার্যকাল শেষ করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাত মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও, এখন পর্যন্ত সেই পুরোনো বিতর্কের ঘেরাটোপেই আটকে আছে দেশের রাজনীতি।
অবশ্য এই বিতর্কের মধ্যে আরও দু-একটি অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে। আগেও এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কথাবার্তা শোনা গেছে। এখন তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর একটি হলো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা এবং ঘনিষ্ঠদের বিচার এবং অন্যটি গণপরিষদের নির্বাচন। নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হওয়ার দিনই দাবি করেছে প্রথমে গণপরিষদ নির্বাচনের এবং তাদের লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠনের কথা। পরে অবশ্য দলের অহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন যে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদের নির্বাচন একই সঙ্গে হতে পারে। তাতে গণপরিষদ গঠনের বিষয়টি ভালোভাবেই টিকে থাকল। সঙ্গে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠনের প্রধান অনুষঙ্গ নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টিও থাকল, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্নমত আছে।
এর পাশাপাশি, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম কয়েক দিন আগে বলেছেন, ‘যত দিন না খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’ গত মঙ্গলবার রায়েরবাজারে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে সারজিস আলম এ কথাও বলেছেন যে ‘খুনি হাসিনা লাশ কই ফেলেছে তা জানা যায়নি। মায়েরা লাশ খুঁজতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এই বাংলাদেশে অন্য কিছু চিন্তা করব।’ অর্থাৎ তিনি শেখ হাসিনা এবং সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারকে নির্বাচনের সঙ্গে শর্তযুক্ত করে দিয়েছেন। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অবশ্য তা করেননি। তিনি দ্রুত বিচারের দাবি করেছেন এবং সেই বিচার যেন এমন নিদর্শন সৃষ্টি করে, যাতে ভবিষ্যতে এ দেশে আর কোনো ফ্যাসিজম গড়ে না ওঠে। নির্বাচনের সঙ্গে বিচারকে শর্তযুক্ত করা না-করার এনসিপির এই যে দোলাচল, শেষ পর্যন্ত তা কোথায় গিয়ে স্থিত হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ওদিকে বিএনপি কিন্তু সারজিস আলমের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে। গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কী সম্পর্ক! বিচার তো হবেই। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, শেখ হাসিনা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিচার অবশ্যই হবে। তার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও শেখ হাসিনার বিচারের কথা বলেছেন এক বিদেশি সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সেই বিচারের প্রক্রিয়াও চলমান। অবশ্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা নিশ্চিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে
বিচার নিশ্চিত করার কথা সম্প্রতি বলেছে। এরপরই চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের একটি মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার খুব কঠিন একটি বিষয়।
এই বিচার অনেক দিক দিয়েই কঠিন। আইনকানুন, তথ্য-প্রমাণের দিক দিয়ে যেমন, তেমনি শেখ হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রে সময়টাও একটা কঠিন বিষয়। কারণ, অদৃশ্য হলেও এই বিচারের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচির একটা যোগসূত্র রয়েছে। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়েও ইতিমধ্যে অনেক কথা হয়েছে। বিএনপি অব্যাহতভাবে দাবি জানিয়ে আসছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগে একটা সম্ভাব্য সময়ের কথা বলে রেখেছেন যে এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। অতিসম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফররত একজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, যদি ন্যূনতম সংস্কার এবং একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তাহলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। এই বক্তব্য অবশ্য নির্বাচনের প্রকৃত সময় নির্দেশ করে না। কেননা, সংস্কার কতটুকু সম্পন্ন করার পর নির্বাচন আয়োজন করা হবে, তা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর। সেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে এই মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই তা শুরু হওয়ার কথা। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সময় আলোচনা শুরু করবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দিকে যেমন সংস্কার নিয়ে দেশব্যাপী একটা আলাপ-আলোচনা চলছিল, এখন তাতে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এখন সংস্কারের চেয়ে বেশি কথা হয় নির্বাচন এবং স্বৈরশাসকের বিচার প্রসঙ্গে। আর আলোচনা আইনশৃঙ্খলার মতো নৈমিত্তিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হলেও পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য হবে এবং যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে তারও কতটা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। সামগ্রিক অবস্থা দেখে এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে সংস্কার এখন আর অন্তর্বর্তী সরকারেরও এক নম্বর অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই। অন্তত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ের সংস্কার তো নয়ই।
এ বিষয়ে একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন উল্লেখযোগ্য। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে সংস্কারের দুটি প্রতিবেদন জমা পড়ে আছে। কিন্তু এসব প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই। এর মধ্যে একটি হলো সিপিডির সম্মানীয় ফেলো, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটির শ্বেতপত্র, যেখানে বিগত সরকারের সময়কার অর্থনৈতিক লুটপাটের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে করণীয় হিসেবে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই শ্বেতপত্র জমা দেওয়া হয়েছে গত ১ ডিসেম্বর। অন্যটি হলো বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন। এটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয় গত ৩০ জানুয়ারি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ওই দুটির একটি প্রতিবেদন নিয়েও কোনো আলোচনা বা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। সুতরাং এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে সংস্কার ও নির্বাচনের সেই পুরোনো বিতর্কের ঘেরাটোপের মধ্যে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার রাষ্ট্র সংস্কার থেকে অন্যত্র পরিবর্তিত হয়েছে কি না।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর যখন থেকে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলোর আমূল সংস্কারের উদ্যোগ শুরু করা হয়, তখন থেকেই সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে একটি বিতর্কও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্তার লাভ করতে থাকে। বিতর্কটি হলো—সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন, নাকি নির্বাচনী ব্যবস্থার মতো জরুরি কিছু বিষয়ে সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বাকি সব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে—এমন একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার কার্যকাল শেষ করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাত মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও, এখন পর্যন্ত সেই পুরোনো বিতর্কের ঘেরাটোপেই আটকে আছে দেশের রাজনীতি।
অবশ্য এই বিতর্কের মধ্যে আরও দু-একটি অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে। আগেও এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কথাবার্তা শোনা গেছে। এখন তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর একটি হলো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা এবং ঘনিষ্ঠদের বিচার এবং অন্যটি গণপরিষদের নির্বাচন। নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হওয়ার দিনই দাবি করেছে প্রথমে গণপরিষদ নির্বাচনের এবং তাদের লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠনের কথা। পরে অবশ্য দলের অহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন যে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদের নির্বাচন একই সঙ্গে হতে পারে। তাতে গণপরিষদ গঠনের বিষয়টি ভালোভাবেই টিকে থাকল। সঙ্গে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠনের প্রধান অনুষঙ্গ নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টিও থাকল, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্নমত আছে।
এর পাশাপাশি, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম কয়েক দিন আগে বলেছেন, ‘যত দিন না খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’ গত মঙ্গলবার রায়েরবাজারে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে সারজিস আলম এ কথাও বলেছেন যে ‘খুনি হাসিনা লাশ কই ফেলেছে তা জানা যায়নি। মায়েরা লাশ খুঁজতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এই বাংলাদেশে অন্য কিছু চিন্তা করব।’ অর্থাৎ তিনি শেখ হাসিনা এবং সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারকে নির্বাচনের সঙ্গে শর্তযুক্ত করে দিয়েছেন। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অবশ্য তা করেননি। তিনি দ্রুত বিচারের দাবি করেছেন এবং সেই বিচার যেন এমন নিদর্শন সৃষ্টি করে, যাতে ভবিষ্যতে এ দেশে আর কোনো ফ্যাসিজম গড়ে না ওঠে। নির্বাচনের সঙ্গে বিচারকে শর্তযুক্ত করা না-করার এনসিপির এই যে দোলাচল, শেষ পর্যন্ত তা কোথায় গিয়ে স্থিত হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ওদিকে বিএনপি কিন্তু সারজিস আলমের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে। গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কী সম্পর্ক! বিচার তো হবেই। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, শেখ হাসিনা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিচার অবশ্যই হবে। তার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও শেখ হাসিনার বিচারের কথা বলেছেন এক বিদেশি সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সেই বিচারের প্রক্রিয়াও চলমান। অবশ্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা নিশ্চিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে
বিচার নিশ্চিত করার কথা সম্প্রতি বলেছে। এরপরই চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের একটি মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার খুব কঠিন একটি বিষয়।
এই বিচার অনেক দিক দিয়েই কঠিন। আইনকানুন, তথ্য-প্রমাণের দিক দিয়ে যেমন, তেমনি শেখ হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রে সময়টাও একটা কঠিন বিষয়। কারণ, অদৃশ্য হলেও এই বিচারের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচির একটা যোগসূত্র রয়েছে। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়েও ইতিমধ্যে অনেক কথা হয়েছে। বিএনপি অব্যাহতভাবে দাবি জানিয়ে আসছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগে একটা সম্ভাব্য সময়ের কথা বলে রেখেছেন যে এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। অতিসম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফররত একজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, যদি ন্যূনতম সংস্কার এবং একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তাহলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। এই বক্তব্য অবশ্য নির্বাচনের প্রকৃত সময় নির্দেশ করে না। কেননা, সংস্কার কতটুকু সম্পন্ন করার পর নির্বাচন আয়োজন করা হবে, তা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর। সেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে এই মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই তা শুরু হওয়ার কথা। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সময় আলোচনা শুরু করবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দিকে যেমন সংস্কার নিয়ে দেশব্যাপী একটা আলাপ-আলোচনা চলছিল, এখন তাতে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এখন সংস্কারের চেয়ে বেশি কথা হয় নির্বাচন এবং স্বৈরশাসকের বিচার প্রসঙ্গে। আর আলোচনা আইনশৃঙ্খলার মতো নৈমিত্তিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হলেও পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য হবে এবং যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে তারও কতটা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। সামগ্রিক অবস্থা দেখে এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে সংস্কার এখন আর অন্তর্বর্তী সরকারেরও এক নম্বর অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই। অন্তত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ের সংস্কার তো নয়ই।
এ বিষয়ে একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন উল্লেখযোগ্য। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে সংস্কারের দুটি প্রতিবেদন জমা পড়ে আছে। কিন্তু এসব প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই। এর মধ্যে একটি হলো সিপিডির সম্মানীয় ফেলো, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটির শ্বেতপত্র, যেখানে বিগত সরকারের সময়কার অর্থনৈতিক লুটপাটের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে করণীয় হিসেবে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই শ্বেতপত্র জমা দেওয়া হয়েছে গত ১ ডিসেম্বর। অন্যটি হলো বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন। এটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয় গত ৩০ জানুয়ারি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ওই দুটির একটি প্রতিবেদন নিয়েও কোনো আলোচনা বা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। সুতরাং এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে সংস্কার ও নির্বাচনের সেই পুরোনো বিতর্কের ঘেরাটোপের মধ্যে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার রাষ্ট্র সংস্কার থেকে অন্যত্র পরিবর্তিত হয়েছে কি না।
৭ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালের একটি বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দুমুখো নীতির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক...
২১ ঘণ্টা আগেআগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংশয় যেন কাটছেই না। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল বিএনপি বড় ধরনের সংশয়ের মধ্যে আছে। বিভিন্ন সময় এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে যে আভাস পাওয়া যায়, তাকে অবিশ্বাসও বলা যেতে পারে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ...
২১ ঘণ্টা আগেধর্ষণের পর মাগুরার আট বছরের শিশুটির মৃত্যু আমাদের বিবেককে কতটুকু নাড়া দিল? তার ক্ষতবিক্ষত দেহ, শ্বাসরুদ্ধকর কান্না, মায়ের আর্তচিৎকার কি আমাদের চোখের ঠুলি খুলে দিতে পারল? এবারও কি আমরা চুপ করে থাকব, যেমন থাকি প্রতিবার? কয়েক দিনের জন্য ক্ষোভ দেখিয়ে আবার চুপ থাকা আমাদের স্বভাববৈশিষ্ট্য। এই সমাজের...
২১ ঘণ্টা আগেপ্যাটার্নটা লক্ষ করা দরকার। নারীর পোশাক নিয়ে অশালীন কথা বলছে বখাটের দল। প্রতিবাদ করলে হামলে পড়ছে প্রতিবাদকারীর ওপর। এরা ‘বখাটে’—মনে-মননে-বিশ্বাসে। এরা হতে পারে কোনো বয়ানের অন্ধ সমর্থক। এই অন্ধ দুরাচারদেরই একটা অংশ ধর্ষণবিরোধী মিছিলে হামলা চালাচ্ছে। অর্থাৎ নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকাশ্য রূপ দেখা...
২১ ঘণ্টা আগে