মাহবুবুল আলম

৫ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশ একটি অবিস্মরণীয় ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ৯ দফা যখন এক দফায় পরিণত হয় এবং তার ফলে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এ বিজয়ে অবশ্যই ছাত্ররা প্রকৃত বিজয়ীর দাবিদার। কিন্তু মনে রাখা দরকার, শুধু তারাই এই বিজয়ীর দাবিদার নয়। বিজয়ীর মুকুট তাদের মাথায় শোভা পায় এবং সেই মুকুট কেউ ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছে না। কিন্তু এই আন্দোলনে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। শুধু মৃত্যুর সংখ্যা হিসাব করলে দেখা যায়, ৫০ শতাংশের অধিক ছাত্র নয়, এমন ব্যক্তির মৃত্যু এই দাবির পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। অবিচ্ছেদ্য রূপে তাই এই আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে ৷ তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহান্তে এই আন্দোলন কিছু ক্ষেত্রে শুধু ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবে পরিগণিত হয়ে চলছে। আর সে ক্ষেত্রে কিছু আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের লেখার অবতারণা।
অন্তর্বর্তী সরকারে আমরা একটি ডায়নামিক উপদেষ্টামণ্ডলী পেয়েছি, যাঁরা নিজস্ব কর্মে ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও দক্ষতাও ঈর্ষণীয়। গণমানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁদের অনেকের আছে। তবু মাঠপর্যায়ের রাজনীতি তাঁদের সবার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দাবি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের আন্দোলন, সড়ক অবরোধ এবং সচিবালয় ঘেরাও এবং তার ফল কঠিন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ হলো এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত। আন্দোলনকারী ছাত্রদের একটি গ্রুপ জোর করে সচিবালয়ের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়ে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করে। ফলে পুরো পরীক্ষা বাতিল করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়। ঠিক একই রকম আচরণ পরিলক্ষিত হলো আনসার বাহিনীর আন্দোলনে। তারাও সাময়িক বিজয় এবং ভবিষ্যতে আরও পাওয়ার প্রত্যাশায় তাদের আন্দোলন স্থগিত করে। যদিও এ দুটি উদাহরণ ভবিষ্যতে দাবি আদায়কারী বা আন্দোলনকারী গ্রুপগুলোর জন্য একটা অবলম্বন হয়ে থাকবে। যেটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য মোটেই সুখকর কিছু হবে বলে মনে হয় না।
প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনে সূত্র লুক্কায়িত আন্দোলনকারী ছাত্রদের আদালত ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে। ১০ আগস্ট জুডিশিয়াল ক্যু ঘটতে যাচ্ছে, এই সন্দেহে বিক্ষোভরত ছাত্ররা আদালত ভবন ঘেরাও করে। ফলে প্রধান বিচারপতি সব বিচারপতির সমন্বয়ে ডাকা ভার্চুয়াল সভাটি বাতিল করেন এবং পরে বিচারপতিরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। জুডিশিয়াল ক্যুর ধারণাটি একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উপরন্তু নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যার হাতে একটি সুসংহত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেই, তার এ রকম জুডিশিয়াল ক্যুর ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ছিল কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসমাজের আন্দোলনই সম্ভবত ছিল একমাত্র উপায় ষড়যন্ত্র বানচালের। ছাত্রসমাজের এই আন্দোলনের সফলতা তাদের কার্যক্রমের কার্যকারিতা নির্দেশ করে।
২৫ আগস্ট রাতে আনসারের একটি অংশের সচিবালয় অবরোধ আরেকটি উদাহরণ। আবারও ছাত্র-জনতার ত্বরিত পদক্ষেপে বড় কিছু ঘটনা ছাড়াই আপাতত অঘটন এড়ানো গেছে। কিন্তু এই কৌশল ভবিষ্যতে সরকারের বিরুদ্ধেই বারবার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থেকে যায়। সুতরাং এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভালো হবে বলে মনে করি। সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি প্রধানতম চ্যালেঞ্জের একটি হলো, পুলিশের তথাকথিত চরিত্রের পরিবর্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি; বিশেষ করে স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করা হচ্ছে, তা সরকারের দমননীতির ব্লুপ্রিন্ট। সাধারণ জনগণের একটি ধারণা (পাবলিক পারসেপশন) হলো, এই মামলাগুলো আপাতত আসামিদের আটকানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে। পরে সময়-সুযোগ বুঝে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করা হবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, একজন ব্যক্তির বিপক্ষে করা একটি ভুল বা দুর্বল মামলা, সেই ব্যক্তির বিপক্ষে প্রকৃত মামলা দুর্বল করে দিতে পারে। সাধারণ জনগণ এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দিন শেষে মামলার প্রক্রিয়া এবং গুণমান (মেরিট) নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং আদতে দোষী ব্যক্তির খালাস পাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। সুতরাং ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন বিবেচনায় মামলা করতে হবে। এখন পর্যন্ত এ রকম যত মামলা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত রিভিউ করে বাতিল বা রিভিশন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার নির্দেশনা দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, স্বৈরাচার সরকারের দমনপীড়নের কৌশল আবার ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার এই অর্জনকে বৃথা করা যাবে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় হলো ‘মব জাস্টিস’কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা। বিচারপতি মানিক কীভাবে তাঁর বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন অথবা সামাজিকভাবে মানুষকে হেয় করেছেন, সেই প্রশ্ন বিবেচনা করার পরও, কোনোভাবেই আদালত চত্বরে তাঁর বা তাঁর মতো কারও প্রতি শারীরিক আঘাত বর্তমান সরকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে ঠিক বার্তা দেয় না। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সর্তকর্তা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করি। সরকারের পক্ষ থেকে বঞ্চিত ও নির্যাতিত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত এই পরিস্থিতির উন্নয়নে। নতুবা অনুচিতভাবেই এই শোষক-স্বৈরাচার দোসরদের পক্ষে একটা সহানুভূতি গড়ে উঠছে, যেটি আদতে এই গণজাগরণের স্পিরিটের পক্ষে যায় না।
দ্বিতীয় যে সমস্যার কিছুটা ঝলক এখন দেখা যাচ্ছে, তা ছাত্র-সমন্বয়ক সম্পর্কিত। যদিও অনেকে বলবেন, এ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্থাপন এখনো বাস্তবিক হয়নি। তবু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিছু ঘটনার সংঘটন আর বিচ্ছিন্ন বলার উপায় নেই। শিক্ষা উপদেষ্টা ইতিমধ্যে জোরপূর্বক ক্ষমতা হস্তান্তরে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা উল্লেখ করেছেন। যদিও এটি অনস্বীকার্য, অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলুষিত করা হয়েছে। জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত শিক্ষক সম্প্রদায়ের বক্তব্য এবং কার্যক্রম দলীয় ক্যাডার বাহিনীর সঙ্গে পৃথক করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। দেশের প্রচলিত আইনে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিচারের আওতায় আসবে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়কের পরিচয়ে যে কর্তৃত্বমূলক দাবির আবরণে শাসন, তা চিন্তার খোরাক জোগায় বৈকি। অথচ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল কর্তৃত্বমূলক শাসনের অবসান। ইতিমধ্যে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক সমন্বয়ক তাঁদের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শুধু এই শঙ্কা থেকেই। তা ছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের অন্তত দুজন এ ব্যাপারে তাঁদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যেটি সাক্ষ্য দেয়, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের হয়তো সারা দেশের সব আন্দোলনকারী গ্রুপগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশেষ করে স্কুলগুলোতে কোমলমতি ছাত্রদের শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষকদের ওপর দৃষ্টিকটুভাবে বলপ্রয়োগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুস্থ পরিবেশের জন্য সহায়ক নয়। দাবি আদায়ে আলটিমেটাম বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা ব্যক্তির দুর্নীতির তথ্য দেওয়া আর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা এক কথা নয়। বয়সে ছোট আর আবেগপ্রবণ হওয়ার জন্য হয়তো স্কুলপড়ুয়ারা এ ধরনের কাজের ফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। কিন্তু এই ধরনের কাজে অংশগ্রহণ-পরবর্তী সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক না-ও হতে পারে। সুতরাং তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে মনে করি।
ছাত্র সমন্বয়কেরা যেহেতু নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে, তাদের উচিত এই সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখা, তাদের মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া এবং নিজেদের মূল কাজ পড়াশোনায় ফিরে যাওয়া। পাশাপাশি নিজেদের একটি প্রেশার গ্রুপ বা ওয়াচডগের ভূমিকা বজায় রাখা। যদি সেটি সম্ভব না হয় এবং তারা নিজেদের বর্তমান ভূমিকা প্রয়োজনীয় বলে মনে করে, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উচিত দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের সহ-সমন্বয়কদের জন্য স্পষ্ট নীতিমালা বা কার্যপ্রণালি তৈরি করা, যাতে ব্যক্তির অপেশাদার আচরণ গণবিপ্লবের মাধুর্য ও উদ্দেশ্য ম্লান করতে না পারে। তবে এই লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত, এটি করা তাদের জন্য একটু কঠিন হবে। কারণ, এই গণজাগরণের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই; বরং তাদের এই একতাবদ্ধতা স্বেচ্ছাশ্রম আর দাবিভিত্তিক অ্যাজেন্ডার ওপর গড়ে উঠেছে।
স্বৈরাচারী শাসনের পতন এবং বাক্স্বাধীনতার আগল খুলে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে পাবলিক জাজমেন্ট বা পাবলিক ট্রায়ালের একটি মাধ্যম। যে কথাগুলো বলা যেত না, যে ক্ষতগুলো দিনের পর দিন একজন সহ্য করেছে, তা আজ প্রকাশ্যে চলে আসছে। তবে পাবলিক ট্রায়ালের সমস্যা হলো, এতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে না। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর অভিযোগের সারবত্তা (মেরিট) থাকলেও এতে নিরীহ ব্যক্তির অভিযুক্ত হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির কার্যকারণের ব্যাখ্যা থাকলেও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের আগেই সামাজিক বিচার হয়ে যায়। সুতরাং বাক্স্বাধীনতার মানে শুধু একপক্ষীয়ভাবে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এর মর্ম উপলব্ধি সাপেক্ষে সঠিক মাত্রায় ও উপায়ে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় বলেই মনে করি। না হলে হয়তো এই বাক্স্বাধীনতার স্বাধীনতা আবার আমরা অচিরেই হারাব।
এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, এই দেশ এখনো স্থিতিশীল অবস্থা পৌঁছায়নি। স্বৈরাচারসহ বৈশ্বিক শক্তি এখনো এই দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিতে সক্রিয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনগণসহ ছাত্রদের সজাগ দৃষ্টি এবং সরকারের প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থন দরকার আছে। তবে এ কথা বলা বাতুলতা হবে না, এ ক্ষেত্রে সরকার, প্রতিষ্ঠানগুলো, জনগণ এবং সর্বোপরি ছাত্রসম্প্রদায় সংযত, সহমর্মী, পরিশীলিত এবং পেশাদার আচরণে অপারগ হলে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন আরও একবার থমকে যাবে। এটা জানি, ছাত্র-জনতার এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। সুতরাং কালকের জন্য অপেক্ষা না করে আজ থেকেই দুর্বলতাগুলো দূর করার প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে।
লেখক: গবেষক ও অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

৫ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশ একটি অবিস্মরণীয় ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ৯ দফা যখন এক দফায় পরিণত হয় এবং তার ফলে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এ বিজয়ে অবশ্যই ছাত্ররা প্রকৃত বিজয়ীর দাবিদার। কিন্তু মনে রাখা দরকার, শুধু তারাই এই বিজয়ীর দাবিদার নয়। বিজয়ীর মুকুট তাদের মাথায় শোভা পায় এবং সেই মুকুট কেউ ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছে না। কিন্তু এই আন্দোলনে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। শুধু মৃত্যুর সংখ্যা হিসাব করলে দেখা যায়, ৫০ শতাংশের অধিক ছাত্র নয়, এমন ব্যক্তির মৃত্যু এই দাবির পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। অবিচ্ছেদ্য রূপে তাই এই আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে ৷ তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহান্তে এই আন্দোলন কিছু ক্ষেত্রে শুধু ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবে পরিগণিত হয়ে চলছে। আর সে ক্ষেত্রে কিছু আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের লেখার অবতারণা।
অন্তর্বর্তী সরকারে আমরা একটি ডায়নামিক উপদেষ্টামণ্ডলী পেয়েছি, যাঁরা নিজস্ব কর্মে ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও দক্ষতাও ঈর্ষণীয়। গণমানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁদের অনেকের আছে। তবু মাঠপর্যায়ের রাজনীতি তাঁদের সবার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দাবি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের আন্দোলন, সড়ক অবরোধ এবং সচিবালয় ঘেরাও এবং তার ফল কঠিন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ হলো এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত। আন্দোলনকারী ছাত্রদের একটি গ্রুপ জোর করে সচিবালয়ের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়ে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করে। ফলে পুরো পরীক্ষা বাতিল করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়। ঠিক একই রকম আচরণ পরিলক্ষিত হলো আনসার বাহিনীর আন্দোলনে। তারাও সাময়িক বিজয় এবং ভবিষ্যতে আরও পাওয়ার প্রত্যাশায় তাদের আন্দোলন স্থগিত করে। যদিও এ দুটি উদাহরণ ভবিষ্যতে দাবি আদায়কারী বা আন্দোলনকারী গ্রুপগুলোর জন্য একটা অবলম্বন হয়ে থাকবে। যেটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য মোটেই সুখকর কিছু হবে বলে মনে হয় না।
প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনে সূত্র লুক্কায়িত আন্দোলনকারী ছাত্রদের আদালত ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে। ১০ আগস্ট জুডিশিয়াল ক্যু ঘটতে যাচ্ছে, এই সন্দেহে বিক্ষোভরত ছাত্ররা আদালত ভবন ঘেরাও করে। ফলে প্রধান বিচারপতি সব বিচারপতির সমন্বয়ে ডাকা ভার্চুয়াল সভাটি বাতিল করেন এবং পরে বিচারপতিরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। জুডিশিয়াল ক্যুর ধারণাটি একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উপরন্তু নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যার হাতে একটি সুসংহত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেই, তার এ রকম জুডিশিয়াল ক্যুর ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ছিল কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসমাজের আন্দোলনই সম্ভবত ছিল একমাত্র উপায় ষড়যন্ত্র বানচালের। ছাত্রসমাজের এই আন্দোলনের সফলতা তাদের কার্যক্রমের কার্যকারিতা নির্দেশ করে।
২৫ আগস্ট রাতে আনসারের একটি অংশের সচিবালয় অবরোধ আরেকটি উদাহরণ। আবারও ছাত্র-জনতার ত্বরিত পদক্ষেপে বড় কিছু ঘটনা ছাড়াই আপাতত অঘটন এড়ানো গেছে। কিন্তু এই কৌশল ভবিষ্যতে সরকারের বিরুদ্ধেই বারবার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থেকে যায়। সুতরাং এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভালো হবে বলে মনে করি। সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি প্রধানতম চ্যালেঞ্জের একটি হলো, পুলিশের তথাকথিত চরিত্রের পরিবর্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি; বিশেষ করে স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করা হচ্ছে, তা সরকারের দমননীতির ব্লুপ্রিন্ট। সাধারণ জনগণের একটি ধারণা (পাবলিক পারসেপশন) হলো, এই মামলাগুলো আপাতত আসামিদের আটকানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে। পরে সময়-সুযোগ বুঝে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করা হবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, একজন ব্যক্তির বিপক্ষে করা একটি ভুল বা দুর্বল মামলা, সেই ব্যক্তির বিপক্ষে প্রকৃত মামলা দুর্বল করে দিতে পারে। সাধারণ জনগণ এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দিন শেষে মামলার প্রক্রিয়া এবং গুণমান (মেরিট) নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং আদতে দোষী ব্যক্তির খালাস পাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। সুতরাং ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন বিবেচনায় মামলা করতে হবে। এখন পর্যন্ত এ রকম যত মামলা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত রিভিউ করে বাতিল বা রিভিশন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার নির্দেশনা দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, স্বৈরাচার সরকারের দমনপীড়নের কৌশল আবার ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার এই অর্জনকে বৃথা করা যাবে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় হলো ‘মব জাস্টিস’কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা। বিচারপতি মানিক কীভাবে তাঁর বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন অথবা সামাজিকভাবে মানুষকে হেয় করেছেন, সেই প্রশ্ন বিবেচনা করার পরও, কোনোভাবেই আদালত চত্বরে তাঁর বা তাঁর মতো কারও প্রতি শারীরিক আঘাত বর্তমান সরকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে ঠিক বার্তা দেয় না। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সর্তকর্তা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করি। সরকারের পক্ষ থেকে বঞ্চিত ও নির্যাতিত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত এই পরিস্থিতির উন্নয়নে। নতুবা অনুচিতভাবেই এই শোষক-স্বৈরাচার দোসরদের পক্ষে একটা সহানুভূতি গড়ে উঠছে, যেটি আদতে এই গণজাগরণের স্পিরিটের পক্ষে যায় না।
দ্বিতীয় যে সমস্যার কিছুটা ঝলক এখন দেখা যাচ্ছে, তা ছাত্র-সমন্বয়ক সম্পর্কিত। যদিও অনেকে বলবেন, এ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্থাপন এখনো বাস্তবিক হয়নি। তবু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিছু ঘটনার সংঘটন আর বিচ্ছিন্ন বলার উপায় নেই। শিক্ষা উপদেষ্টা ইতিমধ্যে জোরপূর্বক ক্ষমতা হস্তান্তরে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা উল্লেখ করেছেন। যদিও এটি অনস্বীকার্য, অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলুষিত করা হয়েছে। জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত শিক্ষক সম্প্রদায়ের বক্তব্য এবং কার্যক্রম দলীয় ক্যাডার বাহিনীর সঙ্গে পৃথক করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। দেশের প্রচলিত আইনে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিচারের আওতায় আসবে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়কের পরিচয়ে যে কর্তৃত্বমূলক দাবির আবরণে শাসন, তা চিন্তার খোরাক জোগায় বৈকি। অথচ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল কর্তৃত্বমূলক শাসনের অবসান। ইতিমধ্যে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক সমন্বয়ক তাঁদের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শুধু এই শঙ্কা থেকেই। তা ছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের অন্তত দুজন এ ব্যাপারে তাঁদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যেটি সাক্ষ্য দেয়, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের হয়তো সারা দেশের সব আন্দোলনকারী গ্রুপগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশেষ করে স্কুলগুলোতে কোমলমতি ছাত্রদের শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষকদের ওপর দৃষ্টিকটুভাবে বলপ্রয়োগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুস্থ পরিবেশের জন্য সহায়ক নয়। দাবি আদায়ে আলটিমেটাম বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা ব্যক্তির দুর্নীতির তথ্য দেওয়া আর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা এক কথা নয়। বয়সে ছোট আর আবেগপ্রবণ হওয়ার জন্য হয়তো স্কুলপড়ুয়ারা এ ধরনের কাজের ফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। কিন্তু এই ধরনের কাজে অংশগ্রহণ-পরবর্তী সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক না-ও হতে পারে। সুতরাং তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে মনে করি।
ছাত্র সমন্বয়কেরা যেহেতু নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে, তাদের উচিত এই সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখা, তাদের মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া এবং নিজেদের মূল কাজ পড়াশোনায় ফিরে যাওয়া। পাশাপাশি নিজেদের একটি প্রেশার গ্রুপ বা ওয়াচডগের ভূমিকা বজায় রাখা। যদি সেটি সম্ভব না হয় এবং তারা নিজেদের বর্তমান ভূমিকা প্রয়োজনীয় বলে মনে করে, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উচিত দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের সহ-সমন্বয়কদের জন্য স্পষ্ট নীতিমালা বা কার্যপ্রণালি তৈরি করা, যাতে ব্যক্তির অপেশাদার আচরণ গণবিপ্লবের মাধুর্য ও উদ্দেশ্য ম্লান করতে না পারে। তবে এই লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত, এটি করা তাদের জন্য একটু কঠিন হবে। কারণ, এই গণজাগরণের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই; বরং তাদের এই একতাবদ্ধতা স্বেচ্ছাশ্রম আর দাবিভিত্তিক অ্যাজেন্ডার ওপর গড়ে উঠেছে।
স্বৈরাচারী শাসনের পতন এবং বাক্স্বাধীনতার আগল খুলে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে পাবলিক জাজমেন্ট বা পাবলিক ট্রায়ালের একটি মাধ্যম। যে কথাগুলো বলা যেত না, যে ক্ষতগুলো দিনের পর দিন একজন সহ্য করেছে, তা আজ প্রকাশ্যে চলে আসছে। তবে পাবলিক ট্রায়ালের সমস্যা হলো, এতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে না। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর অভিযোগের সারবত্তা (মেরিট) থাকলেও এতে নিরীহ ব্যক্তির অভিযুক্ত হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির কার্যকারণের ব্যাখ্যা থাকলেও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের আগেই সামাজিক বিচার হয়ে যায়। সুতরাং বাক্স্বাধীনতার মানে শুধু একপক্ষীয়ভাবে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এর মর্ম উপলব্ধি সাপেক্ষে সঠিক মাত্রায় ও উপায়ে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় বলেই মনে করি। না হলে হয়তো এই বাক্স্বাধীনতার স্বাধীনতা আবার আমরা অচিরেই হারাব।
এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, এই দেশ এখনো স্থিতিশীল অবস্থা পৌঁছায়নি। স্বৈরাচারসহ বৈশ্বিক শক্তি এখনো এই দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিতে সক্রিয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনগণসহ ছাত্রদের সজাগ দৃষ্টি এবং সরকারের প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থন দরকার আছে। তবে এ কথা বলা বাতুলতা হবে না, এ ক্ষেত্রে সরকার, প্রতিষ্ঠানগুলো, জনগণ এবং সর্বোপরি ছাত্রসম্প্রদায় সংযত, সহমর্মী, পরিশীলিত এবং পেশাদার আচরণে অপারগ হলে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন আরও একবার থমকে যাবে। এটা জানি, ছাত্র-জনতার এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। সুতরাং কালকের জন্য অপেক্ষা না করে আজ থেকেই দুর্বলতাগুলো দূর করার প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে।
লেখক: গবেষক ও অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
১০ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
১০ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
১০ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
১০ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শোকের নীরবতায় থমকে গেল দেশ। আর কাঁপিয়ে দিয়ে গেল রাজনৈতিক-মানসিক ভূমিকম্পের সূক্ষ্ম রেখাগুলো। সংগ্রাম, কারাবাস, অসুস্থতা—সবকিছুর মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল; বিশ্বাসে দৃঢ় আর নেতৃত্বে অনমনীয়।
কারাগারের দেয়াল, হাসপাতালের শয্যা, রাজনীতির নির্মম অন্ধকার—সব মিলিয়ে দীর্ঘ বছর খালেদা জিয়া কাটিয়েছেন লড়াইয়ের ভার বহন করে; যে মানুষটি রাজপথে কখনো মাথানত করেননি। এমনিতে একটি লড়াই থেকে আরেকটিতে যাত্রা করতে করতে তাঁর শরীর হয়ে উঠেছিল ভঙ্গুর, মন ক্ষয়ে গিয়েছিল প্রতিহিংসার ধারাবাহিক আঘাতে। বিদেশে চিকিৎসা, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরিবারের অসীম ব্যাকুলতা—সবই ছিল, সবই হলো; তবু তাঁকে আর ফেরানো গেল না।
তুমুল জনপ্রিয় এই নেত্রীর প্রস্থান শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু নয়; এটি একটি যুগের সমাপ্তি। সেই যুগের মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধের অন্ধকারে তাঁর বন্দিত্ব, স্বামীর শাহাদাতে জীবনচক্রের ভেঙে পড়া, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অশ্রু, ওয়ান-ইলেভেনের নিঃসঙ্গ বন্দিত্ব, আর পুরান ঢাকার কারাগারের শীতল দেয়ালে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস। সবকিছুর পরও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন—বাধা, ব্যথা আর ব্যর্থতা পেরিয়ে।
খালেদা জিয়ার জীবন ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে পূর্ণ। একদিকে তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের সংগ্রামের মুখ; অন্যদিকে সমালোচনাও তাঁর পিছু ছাড়েনি। গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে গিয়ে যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি তীব্র বিরোধিতাও কম ছিল না। অনেক ভুলের দায় তাঁকে বহন করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর অটলতা, প্রতিকূলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা, আর ব্যক্তিজীবনের অবর্ণনীয় ক্ষতবিক্ষত অধ্যায় তাঁকে আলাদাভাবে স্মরণীয় করে তুলেছে।
শোকের এই মুহূর্তে আমরা এক রাজনীতিককে নয়; এক দৃঢ় চরিত্র নারীকে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। যাঁর জীবনের গল্প শুধু সংগ্রামের নয়, অবিচল থাকার অনুশাসনও বটে। একটি অন্তর্দীপ নিভে গেছে; কিন্তু তার আলো অনেক দিন ধরে পথ দেখাবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসকে।
অসুস্থ শরীর নিয়েও যে মানুষটি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন, তিনি আমাদের শিখিয়ে গেলেন—দৃঢ়তা কীভাবে জন্ম নেয়। তাঁর কণ্ঠে ছিল সংগ্রামের ইতিহাস, নীরবতায় ছিল ত্যাগের গভীরতা। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে শূন্যতা শুধু রাজনীতিতে নয়, জাতির অনুভূতিতেও।
খালেদা জিয়া ছিলেন রাজনীতির এক অশ্বারোহিণী। যিনি প্রতিদিন আহত হন, প্রতিদিন অভিযুক্ত হন, আবার প্রতিদিনই ঘুরে দাঁড়ান। জয়-পরাজয়ের হিসাবের বাইরে ছিল তাঁর দৃঢ়তার বর্ণমালা। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু যে অন্ধকার-আলো মেশানো উপস্থিতি তিনি রেখে গেলেন, তা বহুদিন পর্যন্ত রাজনীতির ভাষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বোঝাপড়া এবং ইতিহাসের নির্মোহ রেকর্ডে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকবে। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে—ভালোবাসা, বিতর্ক আর অবিচল সাহসের এক অনন্য নাম হিসেবে।
বিদায় খালেদা জিয়া।

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শোকের নীরবতায় থমকে গেল দেশ। আর কাঁপিয়ে দিয়ে গেল রাজনৈতিক-মানসিক ভূমিকম্পের সূক্ষ্ম রেখাগুলো। সংগ্রাম, কারাবাস, অসুস্থতা—সবকিছুর মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল; বিশ্বাসে দৃঢ় আর নেতৃত্বে অনমনীয়।
কারাগারের দেয়াল, হাসপাতালের শয্যা, রাজনীতির নির্মম অন্ধকার—সব মিলিয়ে দীর্ঘ বছর খালেদা জিয়া কাটিয়েছেন লড়াইয়ের ভার বহন করে; যে মানুষটি রাজপথে কখনো মাথানত করেননি। এমনিতে একটি লড়াই থেকে আরেকটিতে যাত্রা করতে করতে তাঁর শরীর হয়ে উঠেছিল ভঙ্গুর, মন ক্ষয়ে গিয়েছিল প্রতিহিংসার ধারাবাহিক আঘাতে। বিদেশে চিকিৎসা, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরিবারের অসীম ব্যাকুলতা—সবই ছিল, সবই হলো; তবু তাঁকে আর ফেরানো গেল না।
তুমুল জনপ্রিয় এই নেত্রীর প্রস্থান শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু নয়; এটি একটি যুগের সমাপ্তি। সেই যুগের মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধের অন্ধকারে তাঁর বন্দিত্ব, স্বামীর শাহাদাতে জীবনচক্রের ভেঙে পড়া, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অশ্রু, ওয়ান-ইলেভেনের নিঃসঙ্গ বন্দিত্ব, আর পুরান ঢাকার কারাগারের শীতল দেয়ালে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস। সবকিছুর পরও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন—বাধা, ব্যথা আর ব্যর্থতা পেরিয়ে।
খালেদা জিয়ার জীবন ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে পূর্ণ। একদিকে তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের সংগ্রামের মুখ; অন্যদিকে সমালোচনাও তাঁর পিছু ছাড়েনি। গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে গিয়ে যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি তীব্র বিরোধিতাও কম ছিল না। অনেক ভুলের দায় তাঁকে বহন করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর অটলতা, প্রতিকূলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা, আর ব্যক্তিজীবনের অবর্ণনীয় ক্ষতবিক্ষত অধ্যায় তাঁকে আলাদাভাবে স্মরণীয় করে তুলেছে।
শোকের এই মুহূর্তে আমরা এক রাজনীতিককে নয়; এক দৃঢ় চরিত্র নারীকে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। যাঁর জীবনের গল্প শুধু সংগ্রামের নয়, অবিচল থাকার অনুশাসনও বটে। একটি অন্তর্দীপ নিভে গেছে; কিন্তু তার আলো অনেক দিন ধরে পথ দেখাবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসকে।
অসুস্থ শরীর নিয়েও যে মানুষটি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন, তিনি আমাদের শিখিয়ে গেলেন—দৃঢ়তা কীভাবে জন্ম নেয়। তাঁর কণ্ঠে ছিল সংগ্রামের ইতিহাস, নীরবতায় ছিল ত্যাগের গভীরতা। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে শূন্যতা শুধু রাজনীতিতে নয়, জাতির অনুভূতিতেও।
খালেদা জিয়া ছিলেন রাজনীতির এক অশ্বারোহিণী। যিনি প্রতিদিন আহত হন, প্রতিদিন অভিযুক্ত হন, আবার প্রতিদিনই ঘুরে দাঁড়ান। জয়-পরাজয়ের হিসাবের বাইরে ছিল তাঁর দৃঢ়তার বর্ণমালা। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু যে অন্ধকার-আলো মেশানো উপস্থিতি তিনি রেখে গেলেন, তা বহুদিন পর্যন্ত রাজনীতির ভাষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বোঝাপড়া এবং ইতিহাসের নির্মোহ রেকর্ডে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকবে। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে—ভালোবাসা, বিতর্ক আর অবিচল সাহসের এক অনন্য নাম হিসেবে।
বিদায় খালেদা জিয়া।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি প্রধানতম চ্যালেঞ্জের একটি হলো, পুলিশের তথাকথিত চরিত্রের পরিবর্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি; বিশেষ করে স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করা হচ্ছে, তা ওই সরকারের দমননীতির ব্লুপ্রিন্ট।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
১০ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
১০ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
১০ ঘণ্টা আগেরাকিবুল ইসলাম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়। কেউ ক্ষমতার উষ্ণতা সহ্য করতে পারেনি, কেউ বিকৃত রাজনৈতিক বাস্তবতায় চরিত্রহীন হয়ে গিয়েছিল, কেউ আবার নিজের আগুনেই ভস্মীভূত হয়েছে। কিন্তু এমনও কিছু নেতৃত্ব আছেন, যাঁরা সময়ের দহনক্ষেত্র পেরিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে এক ‘ধারাবাহিক প্রতিরোধের আদর্শ’ হিসেবে। এই ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক বাস্তবতায় যদি কারও নাম নেওয়া যায়, তিনি হলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া মূলত এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে। যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ড, বন্দিত্ব, দলন, চক্রান্ত, আন্দোলন, ক্ষমতা, পতন, প্রতিরোধ সব ধারাই তাঁর জীবনকে স্পর্শ করেছে। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, তিনি শুরু করেছিলেন একদম সাধারণ নিরহংকারী গৃহবধূ থেকে।
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া ‘পুতুল’ নামের সেই মেয়ে জানতেও পারেননি, ভবিষ্যৎ তাঁকে কোন অগ্নিপরীক্ষার দিকে টেনে নিয়ে যাবে। ক্ষমতার বাস্তবতা মানবজীবনে অনেক সময় নির্মম। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলেন সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে। সেই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি মানুষ, একটি পরিবার, একটি রাজনৈতিক দলকে নয়, পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখনো রাজনীতির ময়দানে খালেদা জিয়া অপরিচিত। কিন্তু ইতিহাস সেই শান্ত গৃহবধূকে ঘরেই থাকতে দিল না। দল, নেতা-কর্মী, সমর্থক—সবাই তাঁকে ডাকলেন। ভেঙে পড়া থেকে একটি দলকে বাঁচাতে, একটি জাতির নেতৃত্বশূন্যতা রোধ করতে তাঁকে সামনে আসতেই হলো। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করলেন; ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান; ১৯৮৪ সালে দলের সর্বোচ্চ নেতা চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলন এরশাদ সরকারকে সরিয়ে দিলে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নতুন দ্বারে দাঁড়ায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলো। দেশ পেল তার ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী। এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশীয় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এক বিশাল অধ্যায়। তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি যা করলেন, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ভিত্তি স্থাপন করে। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা, মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি ও ফ্রি টিউশন, বৃক্ষরোপণ আন্দোলন, সার্কে নেতৃত্ব, যমুনা সেতুর ভিত্তি—এসবই দেশের পরবর্তী উন্নয়ন ধারার মূল স্থপতির পদে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের এক অনন্য ও বিরল কৃতিত্ব হলো, তাঁর অংশ নেওয়া প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয় পেয়েছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতে জয়লাভ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এত ভিন্ন ভিন্ন আসনে একসঙ্গে জয়লাভের নজির আর কোনো নেতার নেই।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়। খালেদা জিয়ার তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাবকে সর্বোচ্চে নিয়ে যায়। এই মেয়াদে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যখন রাজনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে, তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের নতুন অধ্যায় রচনা শুরু করে। কিন্তু সবচেয়ে নির্মম অধ্যায় শুরু হয় ২০১৮ সালে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি যান পুরোনো নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি একক সেলে। খালেদা জিয়ার বয়স, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা এবং নির্বাচনের আগমুহূর্তে হাজারো নেতা-কর্মীর গ্রেপ্তার, মামলা, হামলা—সব মিলিয়ে বিএনপি যেন এক অচেনা অন্ধকারে ঢুকে পড়ে। আর তখন দলের প্রধান নেত্রীর অনুপস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে ভারসাম্য ভেঙে যায়।
অবশেষে ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রেক্ষাপটে ‘দণ্ড স্থগিত’ করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, শর্ত সাপেক্ষে। তিনি বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না; বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। ফলে তিনি মুক্তি পেলেও তৈরি হয় নতুন একধরনের রাজনৈতিক বন্দিত্ব।
এরপর ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তীব্রভাবে বদলে দেয়। পরদিন রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। দীর্ঘ দমন-পীড়ন, কারাবাস, নিপীড়ন—সব পেরিয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন রাজনৈতিক ময়দানে সেই দৃঢ়তার সঙ্গেই, যেভাবে তিনি জীবনের প্রতিটি সংকট মোকাবিলা করেছেন।
ইতিহাস তাঁদেরই শ্রদ্ধা জানায়, যাঁরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাথানত করেন না। সেই ইতিহাসে খালেদা জিয়ার নাম আলাদা লেখা থাকবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়। কেউ ক্ষমতার উষ্ণতা সহ্য করতে পারেনি, কেউ বিকৃত রাজনৈতিক বাস্তবতায় চরিত্রহীন হয়ে গিয়েছিল, কেউ আবার নিজের আগুনেই ভস্মীভূত হয়েছে। কিন্তু এমনও কিছু নেতৃত্ব আছেন, যাঁরা সময়ের দহনক্ষেত্র পেরিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে এক ‘ধারাবাহিক প্রতিরোধের আদর্শ’ হিসেবে। এই ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক বাস্তবতায় যদি কারও নাম নেওয়া যায়, তিনি হলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া মূলত এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে। যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ড, বন্দিত্ব, দলন, চক্রান্ত, আন্দোলন, ক্ষমতা, পতন, প্রতিরোধ সব ধারাই তাঁর জীবনকে স্পর্শ করেছে। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, তিনি শুরু করেছিলেন একদম সাধারণ নিরহংকারী গৃহবধূ থেকে।
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া ‘পুতুল’ নামের সেই মেয়ে জানতেও পারেননি, ভবিষ্যৎ তাঁকে কোন অগ্নিপরীক্ষার দিকে টেনে নিয়ে যাবে। ক্ষমতার বাস্তবতা মানবজীবনে অনেক সময় নির্মম। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলেন সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে। সেই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি মানুষ, একটি পরিবার, একটি রাজনৈতিক দলকে নয়, পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখনো রাজনীতির ময়দানে খালেদা জিয়া অপরিচিত। কিন্তু ইতিহাস সেই শান্ত গৃহবধূকে ঘরেই থাকতে দিল না। দল, নেতা-কর্মী, সমর্থক—সবাই তাঁকে ডাকলেন। ভেঙে পড়া থেকে একটি দলকে বাঁচাতে, একটি জাতির নেতৃত্বশূন্যতা রোধ করতে তাঁকে সামনে আসতেই হলো। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করলেন; ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান; ১৯৮৪ সালে দলের সর্বোচ্চ নেতা চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলন এরশাদ সরকারকে সরিয়ে দিলে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নতুন দ্বারে দাঁড়ায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলো। দেশ পেল তার ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী। এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশীয় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এক বিশাল অধ্যায়। তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি যা করলেন, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ভিত্তি স্থাপন করে। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা, মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি ও ফ্রি টিউশন, বৃক্ষরোপণ আন্দোলন, সার্কে নেতৃত্ব, যমুনা সেতুর ভিত্তি—এসবই দেশের পরবর্তী উন্নয়ন ধারার মূল স্থপতির পদে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের এক অনন্য ও বিরল কৃতিত্ব হলো, তাঁর অংশ নেওয়া প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয় পেয়েছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতে জয়লাভ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এত ভিন্ন ভিন্ন আসনে একসঙ্গে জয়লাভের নজির আর কোনো নেতার নেই।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়। খালেদা জিয়ার তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাবকে সর্বোচ্চে নিয়ে যায়। এই মেয়াদে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যখন রাজনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে, তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের নতুন অধ্যায় রচনা শুরু করে। কিন্তু সবচেয়ে নির্মম অধ্যায় শুরু হয় ২০১৮ সালে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি যান পুরোনো নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি একক সেলে। খালেদা জিয়ার বয়স, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা এবং নির্বাচনের আগমুহূর্তে হাজারো নেতা-কর্মীর গ্রেপ্তার, মামলা, হামলা—সব মিলিয়ে বিএনপি যেন এক অচেনা অন্ধকারে ঢুকে পড়ে। আর তখন দলের প্রধান নেত্রীর অনুপস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে ভারসাম্য ভেঙে যায়।
অবশেষে ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রেক্ষাপটে ‘দণ্ড স্থগিত’ করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, শর্ত সাপেক্ষে। তিনি বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না; বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। ফলে তিনি মুক্তি পেলেও তৈরি হয় নতুন একধরনের রাজনৈতিক বন্দিত্ব।
এরপর ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তীব্রভাবে বদলে দেয়। পরদিন রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। দীর্ঘ দমন-পীড়ন, কারাবাস, নিপীড়ন—সব পেরিয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন রাজনৈতিক ময়দানে সেই দৃঢ়তার সঙ্গেই, যেভাবে তিনি জীবনের প্রতিটি সংকট মোকাবিলা করেছেন।
ইতিহাস তাঁদেরই শ্রদ্ধা জানায়, যাঁরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাথানত করেন না। সেই ইতিহাসে খালেদা জিয়ার নাম আলাদা লেখা থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি প্রধানতম চ্যালেঞ্জের একটি হলো, পুলিশের তথাকথিত চরিত্রের পরিবর্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি; বিশেষ করে স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করা হচ্ছে, তা ওই সরকারের দমননীতির ব্লুপ্রিন্ট।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
১০ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
১০ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
১০ ঘণ্টা আগেআব্দুল্লাহ নাজিম আল মামুন

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানকেও প্রদানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল করে দেন। তবে চলতি বছর অন্তর্বর্তী সরকার জিয়াউর রহমানের পুরস্কার পুনরায় বহাল রেখেছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার চালু করেন।
প্রতিপক্ষের প্রতি কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে ভূষিত হওয়া পুরস্কার বাতিল করা হয়, তা আমরা শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই দেখতে পেয়েছি। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ছিলেন উদারতার মূর্ত প্রতীক। শত্রুকেও বুকে টেনে নিতেন। ন্যায়ের ভাষায় কথা বলতেন। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অপ্রতিরোধ্য। তিনি ছিলেন আপসহীন। আপস করেননি কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে। এমনকি গণতন্ত্র রক্ষার্থে তিনি নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়াই যেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে আরও জোরদার করেছিল, যা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর অন্যতম উপায়। যুগে যুগে দেখা গেছে, কোনো অগণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘস্থায়ীভাবে টিকতে পারেনি। গণতন্ত্রের উত্তরণে বিএনপির ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েন। রাজনীতির প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল।
সেই অনুরাগ ভাঙাতে এগিয়ে আসেন দলের একাংশের কিছু নেতা-কর্মী। তাঁদের অনুরোধে খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া, ১৯৮৩ সালে। তিনি প্রথমে এককভাবে এবং পরে ৭ দলীয় জোট গঠন করে তৎকালীন সামরিক সরকারের প্রধান এরশাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করে বিরোধিতা করেন, যা তৎকালীন বিরোধীদের মধ্যে দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে এবং আপসহীনতার স্পষ্টতা ফুটে ওঠে। এরপর ১৯৮৭-৯০ সাল পর্যন্ত টানা হরতাল, মিছিল, সমাবেশ, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন ঘটে, যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সামরিক শাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়ী হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথরেখায় এটি ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
খালেদা জিয়াই প্রথম গণভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন তিনি, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তনের অন্যতম বড় মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং স্বল্পতম সময়ে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে শান্তিপূর্ণভাবে। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তন।
এরপর ২০০১ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, যিনি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু নারী বলে নয়; একজন দৃঢ়চেতা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে তাঁর নেতৃত্ব স্বীকৃত হয়েছে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন কখনো সহজ ছিল না। তিনি হয়েছেন কারাবন্দী, হয়েছেন গৃহবন্দী। তাঁর ওপর চাপানো হয়েছে মামলার পাহাড়, স্বাস্থ্য নিয়ে করা হয়েছে অবহেলা। তবু তিনি কখনো নিজের নীতিতে আপস করেননি। তাঁর ‘আপসহীন’ তকমাটি শুধু কাগুজে নয়, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি অভিধা।
২০১৮ সালের পর থেকে বারবার অসুস্থ হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর চিকিৎসা বিষয়ে যে অমানবিকতা দেখিয়েছে, তা বহুবার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অথচ দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি ছিল তাঁর প্রাপ্য মৌলিক অধিকার।
এই দেশের মা, মাটির প্রতি খালেদা জিয়ার ছিল আবেগ ও অসম্ভব ভালোবাসা। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশই হলো আমার ঠিকানা। এই দেশ, এই দেশের মাটি আর মানুষই আমার সবকিছু’—এই আবেগমাখা উচ্চারণ ছিল তাঁর।
তিনি চলে গেলেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাঁর অদম্য প্রজ্ঞা, সাহসিকতা, মানবিকতা, উদারতা ও আপসহীনতা। এভাবেই তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায়—ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানকেও প্রদানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল করে দেন। তবে চলতি বছর অন্তর্বর্তী সরকার জিয়াউর রহমানের পুরস্কার পুনরায় বহাল রেখেছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার চালু করেন।
প্রতিপক্ষের প্রতি কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে ভূষিত হওয়া পুরস্কার বাতিল করা হয়, তা আমরা শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই দেখতে পেয়েছি। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ছিলেন উদারতার মূর্ত প্রতীক। শত্রুকেও বুকে টেনে নিতেন। ন্যায়ের ভাষায় কথা বলতেন। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অপ্রতিরোধ্য। তিনি ছিলেন আপসহীন। আপস করেননি কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে। এমনকি গণতন্ত্র রক্ষার্থে তিনি নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়াই যেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে আরও জোরদার করেছিল, যা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর অন্যতম উপায়। যুগে যুগে দেখা গেছে, কোনো অগণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘস্থায়ীভাবে টিকতে পারেনি। গণতন্ত্রের উত্তরণে বিএনপির ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েন। রাজনীতির প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল।
সেই অনুরাগ ভাঙাতে এগিয়ে আসেন দলের একাংশের কিছু নেতা-কর্মী। তাঁদের অনুরোধে খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া, ১৯৮৩ সালে। তিনি প্রথমে এককভাবে এবং পরে ৭ দলীয় জোট গঠন করে তৎকালীন সামরিক সরকারের প্রধান এরশাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করে বিরোধিতা করেন, যা তৎকালীন বিরোধীদের মধ্যে দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে এবং আপসহীনতার স্পষ্টতা ফুটে ওঠে। এরপর ১৯৮৭-৯০ সাল পর্যন্ত টানা হরতাল, মিছিল, সমাবেশ, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন ঘটে, যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সামরিক শাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়ী হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথরেখায় এটি ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
খালেদা জিয়াই প্রথম গণভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন তিনি, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তনের অন্যতম বড় মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং স্বল্পতম সময়ে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে শান্তিপূর্ণভাবে। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তন।
এরপর ২০০১ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, যিনি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু নারী বলে নয়; একজন দৃঢ়চেতা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে তাঁর নেতৃত্ব স্বীকৃত হয়েছে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন কখনো সহজ ছিল না। তিনি হয়েছেন কারাবন্দী, হয়েছেন গৃহবন্দী। তাঁর ওপর চাপানো হয়েছে মামলার পাহাড়, স্বাস্থ্য নিয়ে করা হয়েছে অবহেলা। তবু তিনি কখনো নিজের নীতিতে আপস করেননি। তাঁর ‘আপসহীন’ তকমাটি শুধু কাগুজে নয়, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি অভিধা।
২০১৮ সালের পর থেকে বারবার অসুস্থ হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর চিকিৎসা বিষয়ে যে অমানবিকতা দেখিয়েছে, তা বহুবার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অথচ দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি ছিল তাঁর প্রাপ্য মৌলিক অধিকার।
এই দেশের মা, মাটির প্রতি খালেদা জিয়ার ছিল আবেগ ও অসম্ভব ভালোবাসা। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশই হলো আমার ঠিকানা। এই দেশ, এই দেশের মাটি আর মানুষই আমার সবকিছু’—এই আবেগমাখা উচ্চারণ ছিল তাঁর।
তিনি চলে গেলেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাঁর অদম্য প্রজ্ঞা, সাহসিকতা, মানবিকতা, উদারতা ও আপসহীনতা। এভাবেই তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায়—ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি প্রধানতম চ্যালেঞ্জের একটি হলো, পুলিশের তথাকথিত চরিত্রের পরিবর্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি; বিশেষ করে স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করা হচ্ছে, তা ওই সরকারের দমননীতির ব্লুপ্রিন্ট।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
১০ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
১০ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
১০ ঘণ্টা আগেসেলিম জাহান

আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই ২০২৫ সালের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে এই হিসাব মেলানোর একটি বিরাট তাৎপর্য আছে; আমাদের অর্জনগুলোর উদ্যাপন এবং আমাদের ভুলগুলো থেকে শেখার জন্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সেগুলো একটি পাথেয় হয়ে থাকতে পারে।
রাজনৈতিক দিক থেকে পুরো বছরটি নানা উদ্বেগ, শঙ্কার, আশা-নিরাশার মধ্যে ছিল। জনগণের কাছে নানান রাজনৈতিক সমীকরণ এবং সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার ছিল না। রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন দল প্রাধান্য পাচ্ছে, কে কার সঙ্গে জোট বাঁধছে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা সারা বছর ধরে ছিল। জনমনে, বিশেষত নারীদের মনে প্রশ্ন ছিল যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে নারী-স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে কি না। নির্বাচন হবে, নাকি হবে না, তা নিয়েও নানান মহল প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বাচনের তারিখ নিয়েও একটা ধোঁয়াশা ছিল। নানা রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় উল্লেখ করছিল সম্ভাব্য নির্বাচন সম্পর্কে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিভিন্ন সময়ে নানা সময়কালের কথা বললেও সুনির্দিষ্ট তারিখ বলছিল না। অবস্থাটা এমনই ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও কথা বলেছিলেন নানা বিজ্ঞজন। জনমনে একটা বড় জিজ্ঞাসা ছিল যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন। সে ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত ছিল।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সেই সব শঙ্কা-আশঙ্কার অবসান ঘটেছে। নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটার তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী তালিকাও বেরোচ্ছে। তারেক রহমানও কদিন আগে দেশে ফিরেছেন। সুতরাং রাজনীতির অঙ্গনে নানান বিষয়ে একটা স্বস্তি এবং ভারসাম্য ফিরে এসেছে। যদিও বিভিন্ন দিকে নানা অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান। এসব অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে বলেছেন, কোনো কোনো অপশক্তি এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য তৎপর। রাজনীতি-সম্পৃক্ত সহিংসতা বেশ ব্যাপক। এ ক্ষেত্রে নানান জায়গায় সন্ত্রাসও চলছে। সত্যি কথা বলতে, আমরা এখনো যথার্থ রাজনৈতিক পরিপক্বতা অর্জন করতে পারিনি এবং গণতন্ত্রের একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ২০২৫ সালে অর্থনীতি বিষয়টিই সাধারণ মানুষের মনের বিরাট অংশ জুড়ে ছিল। ২০২৫ সালে তাদের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু চিন্তাও তাদের কম ছিল না। সে প্রত্যাশা আর চিন্তা আবর্তিত হয়েছে তাদের জীবনের অর্থনীতি নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, ঋণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সহিংসতা ইত্যাদি।
শেষ হয়ে যাওয়া বছরটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ছিল অনেকটাই নেতিবাচক। বাংলাদেশের প্রবহমান সমস্যাগুলোর শীর্ষে রয়েছে দারিদ্র্য ও অসমতা। গত তিন বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার ১৮ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে উঠে গেছে। আজকে দেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আরও ৬ কোটি ২০ লাখ লোক দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ার হুমকিতে আছে। দারিদ্র্য-বহির্ভূত মানব-বঞ্চনা আরও তীব্রতর হচ্ছে। প্রায় ১১ কোটি মানুষের নিরাপদ সুপেয় জলের সুবিধা নেই। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ৫৭ শতাংশ শিশু দশম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। গত ছয় বছরে শিশুশ্রম বেড়ে গেছে—২০১৯ সালের ৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের ৯ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৫৬ শতাংশ, যার মানে, ১৮ বছর অনূর্ধ্ব প্রতি দুজনের একজনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অন্যতম বাস্তবতা হচ্ছে অসমতা ও বৈষম্য। বাংলাদেশের উচ্চতম ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৫৮ শতাংশ সম্পদের মালিক, আর দেশের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষ (দেশের অর্ধেক লোক) ৪ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে। দেশের উচ্চতম ২০ শতাংশ পরিবারে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুমৃত্যুর হার যেখানে হাজারে ২০, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সে হার হচ্ছে হাজারে ২০ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও গ্রামীণ বাংলায় আয় অসমতা স্থিতিশীল রয়েছে, দেশের শহরাঞ্চলে তা বেড়ে গেছে।
কর্মবিহীন প্রবৃদ্ধি, বিপুল বেকারত্ব, খেলাপি ঋণ, উল্লেখযোগ্য মানব-বঞ্চনা বাংলাদেশ অর্থনীতিতে গেড়ে বসেছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শিল্প খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১১ লাখ কর্মসংস্থান চলে গেছে। এই সময়কালে পোশাকশিল্পের রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে, কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থান স্থবিরই থেকে গেছে। সরকারি ভাষ্যমতে, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্তদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দেশের সার্বিক বেকারত্বের হারের দ্বিগুণ। দেশের আর্থিক খাত একটি গভীর সংকটের মধ্যে আছে। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বর্তমানে ৬ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ঋণভার এবং ঋণ পরিশোধের দায়ভার একটি সংকটজনক জায়গায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি আয়ের অনুপাত ১৯২ শতাংশ, যেখানে এই অনুপাত ১৮০ শতাংশ হলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে একটি শ্লথতা ছিল। দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন এখনো প্রার্থিত স্তরে পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-সংকট এবং সেই সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা এই উৎপাদন স্তরকে আরও বিপর্যস্ত করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব মানুষের যাপিত জীবনকে প্রভাবিত করেছে এবং দেশে বিনিয়োগ নিম্নস্তরে রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে নানা নাজুকতা ও ভঙ্গুরতার জন্ম দিয়েছে। পোশাকশিল্পে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বহু উদ্যোক্তা সক্রিয় নয়, বিদেশি বিনিয়োগেও স্থবিরতা আছে। ফলে দেশের উৎপাদন ভিত্তিও দুর্বল এবং উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা বাংলাদেশ অর্থনীতির একটি সমস্যা হিসেবে বিরাজ করেছে। একদিকে উচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় একটি সমস্যা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকিও একটি ভাবনার ব্যাপার। প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সম্পাদন এবং সেই সঙ্গে জ্বালানি উৎপাদনে আমদানি করা উপকরণের ওপরে অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি খাতে যথাযথ সমন্বয়ের অনুপস্থিতি এবং সেই সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি খাতে যে বিপুলভর্তুকি দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই ভোগ করে সমাজের ধনাঢ্য এবং সম্পদশালী অংশ। আমাদের জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকির ৫৪ শতাংশই যায় দেশের ৪০ শতাংশ সবচেয়ে সম্পদশালী গোষ্ঠীর কাছে।
২০২৫ সালের বাংলাদেশ অর্থনীতির অন্যতম বাস্তবতা ছিল নানান বিষয়ে বৈশ্বিক চাপ। প্রথমত, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি প্রবৃদ্ধি-শ্লথতায় ভুগেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশ অর্থনীতিতেও পড়েছে। বিশ্বের নানান জায়গার যুদ্ধ এবং সংঘাতের প্রভাবও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের কারণে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যদিও উত্তরণ সময় পিছিয়ে দেওয়ার কথা উঠেছে, কিন্তু সম্ভবত ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছু কিছু সুযোগ হারাবে। যেমন স্বল্প বা শূন্য শুল্কে রপ্তানি সুবিধা, অনুদান সুবিধা ইত্যাদি। উন্নয়নশীল দেশ পর্যায়ে উন্নীত হলে বাংলাদেশ এসব সুবিধা পাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব আসন্ন সংকটের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটা এবং সেই বিপৎসংকুল পথযাত্রায় বিজ্ঞতা, সংনম্যতা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে সেই বিপদ মোকাবিলা করে সব সংকট উতরে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে কি না।
অসমতা বা বৈষম্য তো শুধু অর্থনৈতিক নয়, তা ব্যাপ্ত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বলয়েও। বৈষম্য শুধু ফলাফলে নয়, তা পরিস্ফুট হয়েছে সুযোগেও। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত।
নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতা বাংলাদেশি সমাজের অসমতার অন্যতম বাস্তবতা। সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়, যা প্রতিফলিত হয় ফলাফলে। ঘরে-বাইরে নানা হয়রানি আর সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। সেসব নির্যাতনের অংশ হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, গৃহাভ্যন্তরের সহিংসতা এবং ধর্ষণ।
২০২৫ সালে একধরনের অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সমাজের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে অব্যাহত ছিল। সেই সঙ্গে সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং মবতন্ত্রের ফলে এ দেশের সমাজ একটি শঙ্কার মধ্য দিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করেছে। ‘মব ভায়োলেন্সকে’ ‘মব জাস্টিস’ বলে যৌক্তিকতা দানের প্রচেষ্টা পরিপূর্ণভাবে অন্যায়। ন্যায্যতা অনেক উঁচু মার্গের বিষয়। সহিংসতার মতো বিকৃত একটি পন্থা দিয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য যৌক্তিক, অর্থবহ এবং প্রাসঙ্গিক অনেক পন্থা আছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সেগুলোর ব্যবহার ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে ‘মব ভায়োলেন্সকে’ কিছুতেই ‘মবোক্রেসির’ সমার্থক বলা যায় না। একটি হিংসাত্মক প্রক্রিয়াকে ‘ডেমোক্রেসির’ সঙ্গে তুলনা করা অন্যায়। চূড়ান্ত বিচারে, ‘মব ভায়োলেন্স’ হিংস্র সহিংসতা ভিন্ন কিছুই নয়।
দুই মাসের কম সময়ে বাংলাদেশ একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে গণমানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি সেই দিকে। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পথযাত্রার শুরু করুক, গতিময়তা আনুক, সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক, সেটাই আমরা চাই। ২০২৬ সাল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমবৃদ্ধির সুবাতাস নিয়ে আসুক।

আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই ২০২৫ সালের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে এই হিসাব মেলানোর একটি বিরাট তাৎপর্য আছে; আমাদের অর্জনগুলোর উদ্যাপন এবং আমাদের ভুলগুলো থেকে শেখার জন্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সেগুলো একটি পাথেয় হয়ে থাকতে পারে।
রাজনৈতিক দিক থেকে পুরো বছরটি নানা উদ্বেগ, শঙ্কার, আশা-নিরাশার মধ্যে ছিল। জনগণের কাছে নানান রাজনৈতিক সমীকরণ এবং সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার ছিল না। রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন দল প্রাধান্য পাচ্ছে, কে কার সঙ্গে জোট বাঁধছে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা সারা বছর ধরে ছিল। জনমনে, বিশেষত নারীদের মনে প্রশ্ন ছিল যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে নারী-স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে কি না। নির্বাচন হবে, নাকি হবে না, তা নিয়েও নানান মহল প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বাচনের তারিখ নিয়েও একটা ধোঁয়াশা ছিল। নানা রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় উল্লেখ করছিল সম্ভাব্য নির্বাচন সম্পর্কে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিভিন্ন সময়ে নানা সময়কালের কথা বললেও সুনির্দিষ্ট তারিখ বলছিল না। অবস্থাটা এমনই ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও কথা বলেছিলেন নানা বিজ্ঞজন। জনমনে একটা বড় জিজ্ঞাসা ছিল যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন। সে ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত ছিল।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সেই সব শঙ্কা-আশঙ্কার অবসান ঘটেছে। নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটার তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী তালিকাও বেরোচ্ছে। তারেক রহমানও কদিন আগে দেশে ফিরেছেন। সুতরাং রাজনীতির অঙ্গনে নানান বিষয়ে একটা স্বস্তি এবং ভারসাম্য ফিরে এসেছে। যদিও বিভিন্ন দিকে নানা অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান। এসব অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে বলেছেন, কোনো কোনো অপশক্তি এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য তৎপর। রাজনীতি-সম্পৃক্ত সহিংসতা বেশ ব্যাপক। এ ক্ষেত্রে নানান জায়গায় সন্ত্রাসও চলছে। সত্যি কথা বলতে, আমরা এখনো যথার্থ রাজনৈতিক পরিপক্বতা অর্জন করতে পারিনি এবং গণতন্ত্রের একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ২০২৫ সালে অর্থনীতি বিষয়টিই সাধারণ মানুষের মনের বিরাট অংশ জুড়ে ছিল। ২০২৫ সালে তাদের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু চিন্তাও তাদের কম ছিল না। সে প্রত্যাশা আর চিন্তা আবর্তিত হয়েছে তাদের জীবনের অর্থনীতি নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, ঋণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সহিংসতা ইত্যাদি।
শেষ হয়ে যাওয়া বছরটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ছিল অনেকটাই নেতিবাচক। বাংলাদেশের প্রবহমান সমস্যাগুলোর শীর্ষে রয়েছে দারিদ্র্য ও অসমতা। গত তিন বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার ১৮ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে উঠে গেছে। আজকে দেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আরও ৬ কোটি ২০ লাখ লোক দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ার হুমকিতে আছে। দারিদ্র্য-বহির্ভূত মানব-বঞ্চনা আরও তীব্রতর হচ্ছে। প্রায় ১১ কোটি মানুষের নিরাপদ সুপেয় জলের সুবিধা নেই। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ৫৭ শতাংশ শিশু দশম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। গত ছয় বছরে শিশুশ্রম বেড়ে গেছে—২০১৯ সালের ৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের ৯ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৫৬ শতাংশ, যার মানে, ১৮ বছর অনূর্ধ্ব প্রতি দুজনের একজনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অন্যতম বাস্তবতা হচ্ছে অসমতা ও বৈষম্য। বাংলাদেশের উচ্চতম ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৫৮ শতাংশ সম্পদের মালিক, আর দেশের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষ (দেশের অর্ধেক লোক) ৪ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে। দেশের উচ্চতম ২০ শতাংশ পরিবারে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুমৃত্যুর হার যেখানে হাজারে ২০, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সে হার হচ্ছে হাজারে ২০ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও গ্রামীণ বাংলায় আয় অসমতা স্থিতিশীল রয়েছে, দেশের শহরাঞ্চলে তা বেড়ে গেছে।
কর্মবিহীন প্রবৃদ্ধি, বিপুল বেকারত্ব, খেলাপি ঋণ, উল্লেখযোগ্য মানব-বঞ্চনা বাংলাদেশ অর্থনীতিতে গেড়ে বসেছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শিল্প খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১১ লাখ কর্মসংস্থান চলে গেছে। এই সময়কালে পোশাকশিল্পের রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে, কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থান স্থবিরই থেকে গেছে। সরকারি ভাষ্যমতে, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্তদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দেশের সার্বিক বেকারত্বের হারের দ্বিগুণ। দেশের আর্থিক খাত একটি গভীর সংকটের মধ্যে আছে। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বর্তমানে ৬ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ঋণভার এবং ঋণ পরিশোধের দায়ভার একটি সংকটজনক জায়গায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি আয়ের অনুপাত ১৯২ শতাংশ, যেখানে এই অনুপাত ১৮০ শতাংশ হলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে একটি শ্লথতা ছিল। দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন এখনো প্রার্থিত স্তরে পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-সংকট এবং সেই সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা এই উৎপাদন স্তরকে আরও বিপর্যস্ত করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব মানুষের যাপিত জীবনকে প্রভাবিত করেছে এবং দেশে বিনিয়োগ নিম্নস্তরে রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে নানা নাজুকতা ও ভঙ্গুরতার জন্ম দিয়েছে। পোশাকশিল্পে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বহু উদ্যোক্তা সক্রিয় নয়, বিদেশি বিনিয়োগেও স্থবিরতা আছে। ফলে দেশের উৎপাদন ভিত্তিও দুর্বল এবং উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা বাংলাদেশ অর্থনীতির একটি সমস্যা হিসেবে বিরাজ করেছে। একদিকে উচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় একটি সমস্যা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকিও একটি ভাবনার ব্যাপার। প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সম্পাদন এবং সেই সঙ্গে জ্বালানি উৎপাদনে আমদানি করা উপকরণের ওপরে অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি খাতে যথাযথ সমন্বয়ের অনুপস্থিতি এবং সেই সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি খাতে যে বিপুলভর্তুকি দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই ভোগ করে সমাজের ধনাঢ্য এবং সম্পদশালী অংশ। আমাদের জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকির ৫৪ শতাংশই যায় দেশের ৪০ শতাংশ সবচেয়ে সম্পদশালী গোষ্ঠীর কাছে।
২০২৫ সালের বাংলাদেশ অর্থনীতির অন্যতম বাস্তবতা ছিল নানান বিষয়ে বৈশ্বিক চাপ। প্রথমত, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি প্রবৃদ্ধি-শ্লথতায় ভুগেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশ অর্থনীতিতেও পড়েছে। বিশ্বের নানান জায়গার যুদ্ধ এবং সংঘাতের প্রভাবও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের কারণে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যদিও উত্তরণ সময় পিছিয়ে দেওয়ার কথা উঠেছে, কিন্তু সম্ভবত ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছু কিছু সুযোগ হারাবে। যেমন স্বল্প বা শূন্য শুল্কে রপ্তানি সুবিধা, অনুদান সুবিধা ইত্যাদি। উন্নয়নশীল দেশ পর্যায়ে উন্নীত হলে বাংলাদেশ এসব সুবিধা পাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব আসন্ন সংকটের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটা এবং সেই বিপৎসংকুল পথযাত্রায় বিজ্ঞতা, সংনম্যতা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে সেই বিপদ মোকাবিলা করে সব সংকট উতরে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে কি না।
অসমতা বা বৈষম্য তো শুধু অর্থনৈতিক নয়, তা ব্যাপ্ত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বলয়েও। বৈষম্য শুধু ফলাফলে নয়, তা পরিস্ফুট হয়েছে সুযোগেও। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত।
নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতা বাংলাদেশি সমাজের অসমতার অন্যতম বাস্তবতা। সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়, যা প্রতিফলিত হয় ফলাফলে। ঘরে-বাইরে নানা হয়রানি আর সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। সেসব নির্যাতনের অংশ হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, গৃহাভ্যন্তরের সহিংসতা এবং ধর্ষণ।
২০২৫ সালে একধরনের অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সমাজের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে অব্যাহত ছিল। সেই সঙ্গে সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং মবতন্ত্রের ফলে এ দেশের সমাজ একটি শঙ্কার মধ্য দিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করেছে। ‘মব ভায়োলেন্সকে’ ‘মব জাস্টিস’ বলে যৌক্তিকতা দানের প্রচেষ্টা পরিপূর্ণভাবে অন্যায়। ন্যায্যতা অনেক উঁচু মার্গের বিষয়। সহিংসতার মতো বিকৃত একটি পন্থা দিয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য যৌক্তিক, অর্থবহ এবং প্রাসঙ্গিক অনেক পন্থা আছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সেগুলোর ব্যবহার ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে ‘মব ভায়োলেন্সকে’ কিছুতেই ‘মবোক্রেসির’ সমার্থক বলা যায় না। একটি হিংসাত্মক প্রক্রিয়াকে ‘ডেমোক্রেসির’ সঙ্গে তুলনা করা অন্যায়। চূড়ান্ত বিচারে, ‘মব ভায়োলেন্স’ হিংস্র সহিংসতা ভিন্ন কিছুই নয়।
দুই মাসের কম সময়ে বাংলাদেশ একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে গণমানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি সেই দিকে। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পথযাত্রার শুরু করুক, গতিময়তা আনুক, সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক, সেটাই আমরা চাই। ২০২৬ সাল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমবৃদ্ধির সুবাতাস নিয়ে আসুক।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি প্রধানতম চ্যালেঞ্জের একটি হলো, পুলিশের তথাকথিত চরিত্রের পরিবর্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি; বিশেষ করে স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করা হচ্ছে, তা ওই সরকারের দমননীতির ব্লুপ্রিন্ট।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
১০ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
১০ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
১০ ঘণ্টা আগে