
আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি ‘অলটারনেটিভস’ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক। বাংলাদেশ ও ভারতের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরার কারণ কী?
বড় একটা কারণ হলো, দিল্লি শুধু বিগত সরকারের সঙ্গে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আবার এটাও বলা যেতে পারে দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাতে যেটা হয়েছে, জনগণের মধ্যে ভারত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক বিষয় ছিল, সেগুলো প্রকাশ পায়নি।
শুধু দলের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ভারতের ব্যাপারে জনগণের একধরনের অসন্তোষ থাকার কারণে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এখন পর্যন্ত সেটার কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার একটা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর কি উত্তেজনা আরও বাড়ল?
বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যদিও সরকার বলছে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু আমার মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগে ইসকন বা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের তৎপরতা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সঙ্গে বসে সেটা নিয়ে সমাধানের পথ বের করা দরকার ছিল। সমস্যার প্রকৃতি বুঝে তার গভীরে গিয়ে আমরা যদি সমাধান না করি এবং এসব শুধু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা বলে এড়িয়ে যাই, তাহলে সমাধানের সূত্রটা বের করা যাবে না। বরং সামনে সমস্যাটা আরও বাড়তে পারে। এটাকে সমাধান করার নানা উপায় আছে। ভারতের মিডিয়া এটা নিয়ে বড় অপপ্রচার চালাচ্ছে, যার হয়তো তেমন ভিত্তি নেই। তারপরেও তাদের মিডিয়ার লোকদের এখানে এনে বাস্তব অবস্থা দেখানো দরকার। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক মিডিয়াকেও এখানে নিয়ে আসা দরকার। যেহেতু ভারতের মিডিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার একটা সম্পর্ক আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়ার লোকগুলো যদি স্বচক্ষে বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে বড় আকারে যে সমালোচনাটা হচ্ছে, সেটা থামানো সম্ভব হবে। পরবর্তী সময়ে সেটাকে আর বড় করে দেখানোর সুযোগ পাবে না। যদি আমরা বারবার শুধু বলতে থাকি এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তাহলে দেখা যাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ শক্তি এই পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার সুযোগ পাবে।
ভারত বড় দেশ হওয়ার জন্যই কি বাংলাদেশকে পদানত করে রাখতে চায়?
বড় দেশের কাঠামোগত কারণে সেটা হয়ে থাকে। আমরা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার কথা ধরি—মেক্সিকো বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে বড় ভাইয়ের মতো আচরণ করে থাকে। দেখার বিষয়, সে ধরনের আচরণের কারণে ছোট দেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না। বড় আকারে আমরা যেটা দেখে থাকি, সেটা হলো, দিল্লি সব সময়ই শুধু দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই বিনিয়োগ করেছে। তারা এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে কখনো বিনিয়োগ করেনি। আমি ব্যতিক্রম উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কানাডা সরকারের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র অনেক সময় বড়ত্বের ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কানাডার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বড় আকারে আছে বলে, সেটাতে জনগণ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। মানে সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের ব্যতিক্রম থাকলেও সেটা জনগণের ওপর পড়ে না। যদি ভারত আমাদের জনগণের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখত, তাহলে এ দেশের মানুষ ভারতবিরোধী হতো না।
কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভারতের সরকারের সঙ্গে আমাদের সরকারের ঝামেলা হয়, তখন সেটা এ দেশের জনগণের ওপর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে। এখন যেমন ভারতের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সেই জায়গায় এখন পর্যন্ত সম্পর্কের পরিবর্তন করতে পারিনি।
ভারত কি এভাবেই চলবে?
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ভারত একটা বড় শিক্ষা নিতে পারে, সেটা হলো যে শুধু সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক করলে তার একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। সেটা কিছু দূর পর্যন্ত চলতে পারে। সেটা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কিছু চুক্তির কিছু সুবিধা হতে পারে। দুই দেশের সম্পর্ক যদি ভালো করতে হয়, তাহলে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করতে হবে। সেই জায়গায় যে একটা বড় ঘাটতি আছে, সেটা তাদের না বোঝার কোনো কারণ নেই। এখন তারা এটাকে কীভাবে ঠিক করবে, সেটা তো আমরা বলতে পারব না। তবে আমাদের আশা থাকবে, ভারত যেন এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্কটা নির্মাণ করে। আগে যেভাবে তারা চলেছে, সেখানে যেন নতুনত্ব আসে।
ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশের কী করণীয়?
প্রথমত, পেশাদারত্ব বাড়ানো দরকার। দুই দেশের সম্পর্ক সম পর্যায়ে আনার জন্য পেশাদারত্বের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই উপমহাদেশের একটা ঝামেলা আছে। সবাই আমরা পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলে থাকি। সাম্প্রতিক ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব না থাকার পরেও (যেটা আসলে দিল্লির দায়িত্ব) তিনি বললেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর কথা। এটা দিয়ে বোঝা গেল, তিনি তাঁর রাজনীতির ফায়দা নিতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সূত্র ধরে বাংলাদেশের কেউ কেউ পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কূটনীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিপক্বতা দেখা যায় না এই উপমহাদেশে।
ইউরোপ বা আমেরিকার দেশগুলোয় আমরা দেখি না একজন আইনমন্ত্রীকে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলতে। যার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলা দরকার, তিনি সেটা করবেন। এটা করলে যা হয়, সেটা হলো, যিনি পররাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকেন তাঁর তখন সমস্যা হয়। আমি তাই বারবার বলছি, পেশাদারত্ব বাড়ানো দরকার। এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন দরকার প্রটোকল অনুযায়ী হাইকমিশনারকে তলব করা। এটা হলো শুরুর কাজ। তাঁকে তলব করে বলা দরকার, এটা কেন হচ্ছে? যদিও প্রায় এক সপ্তাহ পর সেটা করা হয়েছে।
বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। আপনি কি তাঁর বক্তব্যকে সঠিক মনে করেন?
আমি মনে করি না যে কূটনীতিকদের নিয়ে সভা করে কথা বলে কোনো লাভ হয়। যাদের এখানে মিশন আছে, তাদের সবারই নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ আছে। এটা যদি কোনো গোষ্ঠীর কাজ হয়ে থাকে, সেটা তাদের অজানা থাকার কথা নয়। তাদের ডেকে এনে এভাবে বলার দরকার পড়ে না।
আমাদের সঙ্গে ভারতের সমস্যা যেহেতু তৈরি হয়েছে, সেহেতু আপাতত করণীয় হলো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সে দেশের হাইকমিশনারকে তলব করা। সবাইকে নিয়ে কথা বলার সমস্যা হলো, কূটনীতিকেরা এমনিতেই একটু কনজারভেটিভ ধরনের। আবার বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনাররা থাকার কারণে অনেক দেশের প্রতিনিধিরা কথা বলতে চান না। অবশ্য এ ধরনের বৈঠকের নিউজ ভ্যালু থাকতে পারে। কিন্তু আমরা আপাতত যে সমস্যায় পড়েছি, এটা তো আমাদেরই সমাধান করতে হবে। আর কূটনীতি ছাড়া সমাধানের অন্য কোনো উপায় নেই। তাই এসব ব্যাপারে আরও একটু চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
আগরতলায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনে হামলা, সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশেও প্রতিবাদ হচ্ছে। এভাবে চললে পরিস্থিতি কি আরও খারাপের দিকে যাবে না?
আগরতলার ঘটনায় তিনটি বিষয়ে নজর রাখা দরকার। ভিয়েনা কনভেনশনে যা যা লেখা আছে, একটি দেশের হাইকমিশনে নিরাপত্তার জন্য কী কী করতে হবে। এই ঘটনায় সেটা বড় আকারের বিঘ্ন হয়েছে। আমি মনে করি, এ দেশের পক্ষ থেকে সেটা ফরমালি জানানো দরকার, সেটা অবশ্যই পত্রিকার মাধ্যমে না। ফরমালি জানানোর সহজ উপায়—একটা নোট আকারে পাঠানো যেতে পারে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তাদের হাইকমিশনারকে তলব করে জানানো।
দ্বিতীয়ত, বড় আকারে প্রচার করা দরকার যে ভারতের বিভিন্ন দেশের মিশন বিভিন্ন সময় টার্গেট হয়েছে। লন্ডন, কানাডায় হয়েছে। ভারত কিন্তু বরাবরই সেসব দেশকে বলেছে, কেন এসব হচ্ছে? এমনও হয়েছে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে ভারতের মিশনে। সেই জায়গা থেকে ভারতে কেন বাংলাদেশের উপহাইকমিশনে হামলা করা হলো? আমরা বলতে পারি, তোমরা নিজেরাও তো সেসব চাও না। তাহলে তোমাদের দেশে কেন এ রকম হচ্ছে?
তৃতীয়ত, প্রতিবাদ হতেই পারে। এক দেশের ঘটনায় অন্য দেশে প্রতিবাদ হতে পারে। যেমন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদটা যেন সীমা লঙ্ঘন না করে, সেই ব্যবস্থাটা করা জরুরি। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রতিবাদ হয়েছে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আগরতলায় যেভাবে প্রতিবাদ করে উপহাইকমিশনে হামলা করা হয়েছে, সেটায় সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা কীভাবে উপহাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে যেতে পারল? ব্যাপারটাকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমি মনে করি, সেটা ভারত সরকারের না জানার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
ভারত কি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারছে না?
আপাতত বড় কারণ হলো, ভারত দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি দল এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। আমরা যদি একটু গভীরভাবে দেখি, বাংলাদেশে তো একাধিক পার্টি আছে। তারা কিন্তু একাধিক পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। একইভাবে জনগণের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখেনি। এতে করে তারাই কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন সেই সরকারের যখন পতন হলো, তারা দেখল তারা যেভাবে একটি দলের সঙ্গে কাঠামো নির্মাণ করেছে, সেটা আকস্মিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আমার কাছে মনে হয়, আপাতত তাদের যে পরাজয় হয়েছে, সেটা কীভাবে ঢাকা দেবে? এখন ঢাকা দেওয়ার জন্য নতুন করে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে।
সে জন্য তারা সংখ্যালঘু ইস্যুটাকে সামনে আনছে। এখন যদি ইসকনের ঘটনাটা না ঘটত এবং চিন্ময়কে মুক্তি দেওয়া হতো, তাহলে তারা কোনো সুযোগ পেত না। তারপর একজন আইনজীবীকে হত্যা করার পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলো। এসব ঘটনায় তারা সুযোগ গ্রহণ করেছে। এ সময় আমাদের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যেটা নিয়ে অন্য দেশ কোনো সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। বিভিন্ন দেশ তার স্বার্থের কারণে সুযোগ গ্রহণ করতে চাইবে।
ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়াতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো কূটনৈতিক ঘাটতি আছে বলে মনে করেন?
এখন পর্যন্ত কোনো কূটনীতিই শুরু হয়নি। আবার শুরু করার পথগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম কথা হলো কূটনীতি দিয়েই তো সমাধানে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু কীভাবে সেটা শুরু হবে? আমরা কি লন্ডন বা তৃতীয় কোনো দেশে বসে আলোচনা করব? আমরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কাজটা শুরু করব? যখন কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হবে, তখন সেটা বলা যাবে। এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি কথার মধ্যে ব্যাপারটি রয়ে গেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করব। এখন দেখা দরকার তারা কীভাবে সেটা শুরু করে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরার কারণ কী?
বড় একটা কারণ হলো, দিল্লি শুধু বিগত সরকারের সঙ্গে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আবার এটাও বলা যেতে পারে দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাতে যেটা হয়েছে, জনগণের মধ্যে ভারত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক বিষয় ছিল, সেগুলো প্রকাশ পায়নি।
শুধু দলের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ভারতের ব্যাপারে জনগণের একধরনের অসন্তোষ থাকার কারণে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এখন পর্যন্ত সেটার কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার একটা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর কি উত্তেজনা আরও বাড়ল?
বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যদিও সরকার বলছে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু আমার মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগে ইসকন বা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের তৎপরতা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সঙ্গে বসে সেটা নিয়ে সমাধানের পথ বের করা দরকার ছিল। সমস্যার প্রকৃতি বুঝে তার গভীরে গিয়ে আমরা যদি সমাধান না করি এবং এসব শুধু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা বলে এড়িয়ে যাই, তাহলে সমাধানের সূত্রটা বের করা যাবে না। বরং সামনে সমস্যাটা আরও বাড়তে পারে। এটাকে সমাধান করার নানা উপায় আছে। ভারতের মিডিয়া এটা নিয়ে বড় অপপ্রচার চালাচ্ছে, যার হয়তো তেমন ভিত্তি নেই। তারপরেও তাদের মিডিয়ার লোকদের এখানে এনে বাস্তব অবস্থা দেখানো দরকার। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক মিডিয়াকেও এখানে নিয়ে আসা দরকার। যেহেতু ভারতের মিডিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার একটা সম্পর্ক আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়ার লোকগুলো যদি স্বচক্ষে বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে বড় আকারে যে সমালোচনাটা হচ্ছে, সেটা থামানো সম্ভব হবে। পরবর্তী সময়ে সেটাকে আর বড় করে দেখানোর সুযোগ পাবে না। যদি আমরা বারবার শুধু বলতে থাকি এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তাহলে দেখা যাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ শক্তি এই পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার সুযোগ পাবে।
ভারত বড় দেশ হওয়ার জন্যই কি বাংলাদেশকে পদানত করে রাখতে চায়?
বড় দেশের কাঠামোগত কারণে সেটা হয়ে থাকে। আমরা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার কথা ধরি—মেক্সিকো বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে বড় ভাইয়ের মতো আচরণ করে থাকে। দেখার বিষয়, সে ধরনের আচরণের কারণে ছোট দেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না। বড় আকারে আমরা যেটা দেখে থাকি, সেটা হলো, দিল্লি সব সময়ই শুধু দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই বিনিয়োগ করেছে। তারা এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে কখনো বিনিয়োগ করেনি। আমি ব্যতিক্রম উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কানাডা সরকারের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র অনেক সময় বড়ত্বের ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কানাডার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বড় আকারে আছে বলে, সেটাতে জনগণ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। মানে সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের ব্যতিক্রম থাকলেও সেটা জনগণের ওপর পড়ে না। যদি ভারত আমাদের জনগণের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখত, তাহলে এ দেশের মানুষ ভারতবিরোধী হতো না।
কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভারতের সরকারের সঙ্গে আমাদের সরকারের ঝামেলা হয়, তখন সেটা এ দেশের জনগণের ওপর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে। এখন যেমন ভারতের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সেই জায়গায় এখন পর্যন্ত সম্পর্কের পরিবর্তন করতে পারিনি।
ভারত কি এভাবেই চলবে?
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ভারত একটা বড় শিক্ষা নিতে পারে, সেটা হলো যে শুধু সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক করলে তার একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। সেটা কিছু দূর পর্যন্ত চলতে পারে। সেটা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কিছু চুক্তির কিছু সুবিধা হতে পারে। দুই দেশের সম্পর্ক যদি ভালো করতে হয়, তাহলে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করতে হবে। সেই জায়গায় যে একটা বড় ঘাটতি আছে, সেটা তাদের না বোঝার কোনো কারণ নেই। এখন তারা এটাকে কীভাবে ঠিক করবে, সেটা তো আমরা বলতে পারব না। তবে আমাদের আশা থাকবে, ভারত যেন এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্কটা নির্মাণ করে। আগে যেভাবে তারা চলেছে, সেখানে যেন নতুনত্ব আসে।
ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশের কী করণীয়?
প্রথমত, পেশাদারত্ব বাড়ানো দরকার। দুই দেশের সম্পর্ক সম পর্যায়ে আনার জন্য পেশাদারত্বের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই উপমহাদেশের একটা ঝামেলা আছে। সবাই আমরা পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলে থাকি। সাম্প্রতিক ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব না থাকার পরেও (যেটা আসলে দিল্লির দায়িত্ব) তিনি বললেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর কথা। এটা দিয়ে বোঝা গেল, তিনি তাঁর রাজনীতির ফায়দা নিতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সূত্র ধরে বাংলাদেশের কেউ কেউ পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কূটনীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিপক্বতা দেখা যায় না এই উপমহাদেশে।
ইউরোপ বা আমেরিকার দেশগুলোয় আমরা দেখি না একজন আইনমন্ত্রীকে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলতে। যার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলা দরকার, তিনি সেটা করবেন। এটা করলে যা হয়, সেটা হলো, যিনি পররাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকেন তাঁর তখন সমস্যা হয়। আমি তাই বারবার বলছি, পেশাদারত্ব বাড়ানো দরকার। এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন দরকার প্রটোকল অনুযায়ী হাইকমিশনারকে তলব করা। এটা হলো শুরুর কাজ। তাঁকে তলব করে বলা দরকার, এটা কেন হচ্ছে? যদিও প্রায় এক সপ্তাহ পর সেটা করা হয়েছে।
বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। আপনি কি তাঁর বক্তব্যকে সঠিক মনে করেন?
আমি মনে করি না যে কূটনীতিকদের নিয়ে সভা করে কথা বলে কোনো লাভ হয়। যাদের এখানে মিশন আছে, তাদের সবারই নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ আছে। এটা যদি কোনো গোষ্ঠীর কাজ হয়ে থাকে, সেটা তাদের অজানা থাকার কথা নয়। তাদের ডেকে এনে এভাবে বলার দরকার পড়ে না।
আমাদের সঙ্গে ভারতের সমস্যা যেহেতু তৈরি হয়েছে, সেহেতু আপাতত করণীয় হলো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সে দেশের হাইকমিশনারকে তলব করা। সবাইকে নিয়ে কথা বলার সমস্যা হলো, কূটনীতিকেরা এমনিতেই একটু কনজারভেটিভ ধরনের। আবার বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনাররা থাকার কারণে অনেক দেশের প্রতিনিধিরা কথা বলতে চান না। অবশ্য এ ধরনের বৈঠকের নিউজ ভ্যালু থাকতে পারে। কিন্তু আমরা আপাতত যে সমস্যায় পড়েছি, এটা তো আমাদেরই সমাধান করতে হবে। আর কূটনীতি ছাড়া সমাধানের অন্য কোনো উপায় নেই। তাই এসব ব্যাপারে আরও একটু চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
আগরতলায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনে হামলা, সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশেও প্রতিবাদ হচ্ছে। এভাবে চললে পরিস্থিতি কি আরও খারাপের দিকে যাবে না?
আগরতলার ঘটনায় তিনটি বিষয়ে নজর রাখা দরকার। ভিয়েনা কনভেনশনে যা যা লেখা আছে, একটি দেশের হাইকমিশনে নিরাপত্তার জন্য কী কী করতে হবে। এই ঘটনায় সেটা বড় আকারের বিঘ্ন হয়েছে। আমি মনে করি, এ দেশের পক্ষ থেকে সেটা ফরমালি জানানো দরকার, সেটা অবশ্যই পত্রিকার মাধ্যমে না। ফরমালি জানানোর সহজ উপায়—একটা নোট আকারে পাঠানো যেতে পারে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তাদের হাইকমিশনারকে তলব করে জানানো।
দ্বিতীয়ত, বড় আকারে প্রচার করা দরকার যে ভারতের বিভিন্ন দেশের মিশন বিভিন্ন সময় টার্গেট হয়েছে। লন্ডন, কানাডায় হয়েছে। ভারত কিন্তু বরাবরই সেসব দেশকে বলেছে, কেন এসব হচ্ছে? এমনও হয়েছে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে ভারতের মিশনে। সেই জায়গা থেকে ভারতে কেন বাংলাদেশের উপহাইকমিশনে হামলা করা হলো? আমরা বলতে পারি, তোমরা নিজেরাও তো সেসব চাও না। তাহলে তোমাদের দেশে কেন এ রকম হচ্ছে?
তৃতীয়ত, প্রতিবাদ হতেই পারে। এক দেশের ঘটনায় অন্য দেশে প্রতিবাদ হতে পারে। যেমন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদটা যেন সীমা লঙ্ঘন না করে, সেই ব্যবস্থাটা করা জরুরি। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রতিবাদ হয়েছে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আগরতলায় যেভাবে প্রতিবাদ করে উপহাইকমিশনে হামলা করা হয়েছে, সেটায় সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা কীভাবে উপহাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে যেতে পারল? ব্যাপারটাকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমি মনে করি, সেটা ভারত সরকারের না জানার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
ভারত কি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারছে না?
আপাতত বড় কারণ হলো, ভারত দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি দল এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। আমরা যদি একটু গভীরভাবে দেখি, বাংলাদেশে তো একাধিক পার্টি আছে। তারা কিন্তু একাধিক পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। একইভাবে জনগণের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখেনি। এতে করে তারাই কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন সেই সরকারের যখন পতন হলো, তারা দেখল তারা যেভাবে একটি দলের সঙ্গে কাঠামো নির্মাণ করেছে, সেটা আকস্মিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আমার কাছে মনে হয়, আপাতত তাদের যে পরাজয় হয়েছে, সেটা কীভাবে ঢাকা দেবে? এখন ঢাকা দেওয়ার জন্য নতুন করে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে।
সে জন্য তারা সংখ্যালঘু ইস্যুটাকে সামনে আনছে। এখন যদি ইসকনের ঘটনাটা না ঘটত এবং চিন্ময়কে মুক্তি দেওয়া হতো, তাহলে তারা কোনো সুযোগ পেত না। তারপর একজন আইনজীবীকে হত্যা করার পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলো। এসব ঘটনায় তারা সুযোগ গ্রহণ করেছে। এ সময় আমাদের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যেটা নিয়ে অন্য দেশ কোনো সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। বিভিন্ন দেশ তার স্বার্থের কারণে সুযোগ গ্রহণ করতে চাইবে।
ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়াতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো কূটনৈতিক ঘাটতি আছে বলে মনে করেন?
এখন পর্যন্ত কোনো কূটনীতিই শুরু হয়নি। আবার শুরু করার পথগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম কথা হলো কূটনীতি দিয়েই তো সমাধানে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু কীভাবে সেটা শুরু হবে? আমরা কি লন্ডন বা তৃতীয় কোনো দেশে বসে আলোচনা করব? আমরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কাজটা শুরু করব? যখন কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হবে, তখন সেটা বলা যাবে। এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি কথার মধ্যে ব্যাপারটি রয়ে গেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করব। এখন দেখা দরকার তারা কীভাবে সেটা শুরু করে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

বড় একটা কারণ হলো, দিল্লি শুধু বিগত সরকারের সঙ্গে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আবার এটাও বলা যেতে পারে দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাতে যেটা হয়েছে, জনগণের মধ্যে ভারত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক বিষয় ছিল,
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

বড় একটা কারণ হলো, দিল্লি শুধু বিগত সরকারের সঙ্গে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আবার এটাও বলা যেতে পারে দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাতে যেটা হয়েছে, জনগণের মধ্যে ভারত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক বিষয় ছিল,
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বড় একটা কারণ হলো, দিল্লি শুধু বিগত সরকারের সঙ্গে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আবার এটাও বলা যেতে পারে দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাতে যেটা হয়েছে, জনগণের মধ্যে ভারত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক বিষয় ছিল,
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বড় একটা কারণ হলো, দিল্লি শুধু বিগত সরকারের সঙ্গে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আবার এটাও বলা যেতে পারে দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাতে যেটা হয়েছে, জনগণের মধ্যে ভারত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক বিষয় ছিল,
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১ দিন আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১ দিন আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১ দিন আগে