Ajker Patrika

ঐক্য গড়া সম্ভব হয়েছিল ছাত্রদের স্তরে

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২১, ১৩: ০০
ঐক্য গড়া সম্ভব হয়েছিল ছাত্রদের স্তরে

ছয় দফা ঘোষণার পর শেখ মুজিব কারারুদ্ধ হন; তবে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থাতেও ৭ জুন আওয়ামী লীগ যে হরতালের ডাক দেয়, সেটিকে সফল করার পেছনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কৃতিত্ব ছিল সর্বাধিক। হরতালের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। শ্রমিকেরা এসে যোগ দিয়েছেন। এত দিন আওয়ামী লীগের কোনো শ্রমিক সংগঠন ছিল না; সিরাজুল আলম খান উদ্যোগী হয়ে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করেছিলেন, যার দরুন মিছিলে ও হরতালে শ্রমিকেরা যুক্ত হয়েছেন। জনমনে আইয়ুববিরোধী অসন্তোষ ছিল ধূমায়িত। হরতালের ডাক সেই অসন্তোষ প্রকাশের একটি সুযোগ এনে দিল। হরতালের সময় সরকারি হিসাবেই পুলিশের গুলিবর্ষণে ১০ জন প্রাণ হারায়। সংবাদপত্রে স্বাধীনভাবে কোনো রিপোর্ট ছাপা সম্ভব ছিল না, তাই শুধু প্রেসনোটই ছাপা হয়। তা ছাড়া, প্রায় সব পত্রিকারই অবস্থান ছিল ছয় দফার বিরুদ্ধে। এমনকি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখপাত্র বলে স্বীকৃত ইত্তেফাকও শুরুতে ছয় দফার ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়নি। ইত্তেফাকে ছয় দফা ঘোষণার খবরটি ছাপা হয়েছিল দায়সারা গোছে, প্রথম পৃষ্ঠার মাঝামাঝি এক কলামে, অল্প কয়েকটি লাইনে; শিরোনাম ছিল ‘শেখ মুজিবের ৬ দফা’।

পরে অবশ্য ইত্তেফাক ছয় দফার সমর্থনে লেখা শুরু করে। ধারণা করা হয় যে এর পেছনে ছিল গ্রেপ্তারের আগে শেখ মুজিবের ইত্তেফাক কার্যালয়ে যাওয়া ও সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা। ছয় দফার পক্ষে সমর্থন লাভের জন্য তাঁর বহুমুখী তৎপরতার ওটি ছিল একটি জরুরি অংশ।

কারাবন্দী হওয়ার আগে তিনি যেমন জনসভা করেছেন, তেমনি প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে ব্যস্ত ছিলেন ব্যক্তিগত যোগাযোগের তৎপরতায়। তাঁর জন্য রাজনীতি ছিল সার্বক্ষণিক কাজ। ছয় দফার পক্ষে ইত্তেফাকের এই অবস্থান গ্রহণের মাশুল প্রদানে অবশ্য বিলম্ব ঘটেনি। জুন মাসের ১৬ তারিখেই ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া গ্রেপ্তার হন এবং পরের দিন পত্রিকাটির ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার ফলে কেবল দৈনিক ইত্তেফাক নয়, সাপ্তাহিক ঢাকা টাইমস ও সাপ্তাহিক পূর্বাণীর প্রকাশনাও বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় গণহারে চলতে থাকে। গভর্নর মোনায়েম খান যতভাবে পারা যায় ছয় দফাকে মুছে ফেলবার চেষ্টা করতে থাকেন।

এবং যতই তাঁর চেষ্টা বৃদ্ধি পায়, ততই ছয় দফা জনপ্রিয় হতে থাকে। যেন তিনি শেখ মুজিবের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, নিজের অজান্তে। ইত্তেফাকের ওপর ওই হামলার প্রতিবাদ অন্যরা তেমন একটা না করতে পারলেও সাংবাদিকেরা ও সংবাদপত্রকর্মীরা কিন্তু করেছিলেন; ২২ জুন ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় সব পত্রিকা ধর্মঘটে গিয়েছিল।

ছয় দফার পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন সংগ্রহের জন্য সিরাজুল আলম খান বাম রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসব উদ্যোগের ফলাফল সম্পর্কে পরে তিনি জানিয়েছেনও। মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির (রুশপন্থী) ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক; তিনি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেছেন বটে, তবে ছয় দফাকে আন্দোলনের মূল বিষয় করতে সম্মত হননি। চীনপন্থী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন ছিল; কিন্তু সেটাও তিনি করেছিলেন, মোহাম্মদ তোয়াহা ও আবদুল হকের সঙ্গে তিনি গোপনে মিলিত হন। তাঁরা তাঁকে যা বলেন তার সারমর্ম হলো, পূর্ব পাকিস্তান অবশ্যই স্বাধীন হবে এবং স্বাধীনতার পক্ষেই তাঁরা কাজ করছেন, তবে ‘৬ দফা দিয়ে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে কিংবা ভারত বা আমেরিকার লেজুড়বৃত্তি করে সে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়।’ ছাত্রলীগের এই নেতা আরও লক্ষ করেছেন যে সে সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিক বাঙালির স্বাধীনতার পক্ষে কোনো প্রবন্ধ, নাটক ও উপন্যাস লেখেননি। এঁদের কাজ দালালির পর্যায়ে পড়ে বলে তাঁর মনে হয়েছে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্তরে যে ঐক্য গড়া সম্ভব হয়নি, সেটা কিন্তু ছাত্রদের স্তরে গড়ে উঠেছিল। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী শিক্ষা আন্দোলন যে অভিজ্ঞতা, সেটা নিকট ঐতিহ্য হিসেবে ছাত্রদের ভেতর প্রবহমান ছিল; স্বায়ত্তশাসনের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা সেটাও তীব্র হয়ে উঠেছিল, আইয়ুবি-মোনায়েমি দুঃশাসন দুর্বিষহ আকার নিচ্ছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলছিল। ফলে সমাজের সবচেয়ে সচেতন ও সংবেদনশীল যে অংশ সেই ছাত্রদের ভেতর সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আগ্রহটা শক্তিশালী রূপ নিচ্ছিল। এই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্ররাও সরকারবিরোধী আন্দোলনে চলে এসেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনের অবশ্য একটা গুণগত পার্থক্য ছিল; সেটা এই যে, পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা চাইছিল পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং প্রকারান্তরে গোটা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী পাকিস্তানি রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন; পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের আন্দোলনের লক্ষ্য সে তুলনায় ছিল সীমিত, তারা তাদের ওপর সরকারি অত্যাচার-অবিচারের অবসান ও নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছিল। তবে তাদের সে আন্দোলনও ক্রমাগত তীব্র হচ্ছিল। সরকারি দমন-পীড়নও সমানে ঘটছিল। এবং পূর্ব–পশ্চিমে আওয়াজটা ছিল একই। সেটা হলো আইয়ুবি দুঃশাসনের অবসান চাই।

পূর্ববঙ্গে ছাত্রদের ঐক্যের পথে প্রাথমিক অন্তরায়টা ছিল কিন্তু আবার ওই ছয় দফাই। ছাত্র ইউনিয়ন ততদিনে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে তারাই ছিল প্রধান শক্তি; বিভক্ত অবস্থাতেও তারা ছাত্রলীগের তুলনায় অধিক প্রভাবশালী ছিল বৈকি। ছয় দফা সম্পর্কে বাম রাজনৈতিক নেতাদের যে আপত্তি, সেটা ছাত্র ইউনিয়নের উভয় অংশেরই ছিল, যদিও রুশপন্থী অংশ চরিত্রগতভাবেই ছিল কিছুটা আপসপন্থী। বেশ কিছু দর-কষাকষির পর জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল, যার দলিল হচ্ছে এগারো দফা। বামপন্থীরা ছয় দফাতে আপত্তি করেনি, পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন তারা অবশ্যই চায়, কিন্তু তাদের লক্ষ্য ছিল আরও সম্প্রসারিত। ছয় দফার সঙ্গে তারা যুক্ত করতে চেয়েছে মেহনতি মানুষের অধিকার, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা এবং এক ইউনিটের বিলুপ্তি। ছাত্রলীগের বক্তব্য ছিল, পূর্ব বাংলার মূল সমস্যা হচ্ছে স্বায়ত্তশাসন, তাই অন্যসব প্রশ্ন আপাতত অপ্রাসঙ্গিক, সেগুলো পরে দেখা যাবে। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতায় তাদের আপত্তির সূত্র হয়তো ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি মার্কিন আনুকূল্য লাভের সম্ভাবনা। আর এক ইউনিট ভাঙতে আপত্তির পেছনে হয়তো এই জ্ঞান কাজ করেছে যে ওটি আওয়ামী লীগের ‘কার্যকর’ নেতা সোহরাওয়ার্দীর সমর্থনেই ১৯৫৬ সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। অনেকটা তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘অর্জন’। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মীমাংসা হয়েছে, এগারো দফা প্রণীত হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের উভয় অংশ, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংঘের (ডাকসু) সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে সময়ে ডাকসুর সহসভাপতি ছিলেন ছাত্রলীগের এবং সাধারণ সম্পাদক সরকার-সমর্থক জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের (এনএসএফ)। সরকার-সমর্থকদের মধ্যে একটি অংশ যে তখন কিছুটা স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে চাচ্ছিল এনএসএফ-এর সম্মতি তারই ইঙ্গিতবহ। ১১ দফা গ্রহণ করে সমাজতন্ত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হলো জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে। ১১ দফার ৩ নম্বর দফায় ছয় দফাকে হুবহু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ৪ নম্বর দফায় বলা হয়, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুসহ সকল প্রদেশের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করত সাব-ফেডারেশন গঠন’ চাই। অর্থাৎ এক ইউনিট থাকবে না। এই দফাটির সঙ্গে ন্যাপের দেওয়া চৌদ্দ দফার একেবারে প্রথম দফাটির মিলটা লক্ষ করবার মতো। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ‘সংস্কৃতি ও ভাষায় সমতা এবং ভৌগোলিক সংলগ্নতার ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশসমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসাবে পুনর্গঠন’ করতে হবে। অর্থাৎ এক ইউনিট বিলুপ্ত হবে, আর তার জায়গাতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলো একটি ‘আঞ্চলিক ফেডারেশন’ গঠন করবে। পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে ন্যাপের চৌদ্দ দফায় বলা হয়েছিল, ‘পাকিস্তানকে সিয়াটো ও সেন্টো হইতে সদস্যপদ প্রত্যাহার করিতে হইবে।’ ছাত্রসমাজের এগারো দফাতেও ঠিক একই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, যদিও একটু ভিন্ন ভাষাতে; বলা হয়েছে, ‘সিয়াটো, সেন্টো, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করিয়া জোট-বহির্ভূত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি কায়েম করিতে হইবে’।

দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের এগারো দফা আওয়ামী লীগের ছয় দফার তুলনায় ভাসানী ন্যাপের চৌদ্দ দফার বরঞ্চ কাছাকাছি। কিন্তু এগারো দফার ভিত্তিতেই যেহেতু আন্দোলন হয়েছে, চৌদ্দ দফার ভিত্তিতে হয়নি, চৌদ্দ দফা তাই ইতিহাসের অন্তর্গত হলেও লোকচক্ষুর আড়ালেই চলে গেছে।

এরই মধ্যে আবার আট দফাও এসেছিল। দিয়েছে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)। এটি ছিল আট দলের একটি জোট। ডাকের আট দফাতে পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের উল্লেখ নেই, যেমন উল্লেখ নেই পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভাঙার দাবির। আট দফা পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে একেবারেই নীরব। এই নীরবতা জানিয়ে দেয় যে আইয়ুবের পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ডাকের দাবিনামায় যা আছে তা হলো: ১. ফেডারেল পদ্ধতির পার্লামেন্টারি সরকার; ২. সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন; ৩. অবিলম্বে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার; ৪. পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রবর্তন এবং ১৯৬১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স এবং বিনা বিচারের আটক ব্যবস্থার সকল কালাকানুন বাতিল; ৫. শেখ মুজিব, খান ওয়ালী খান ও জেড এ ভুট্টোসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি এবং কোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে রাজনৈতিক মামলাসহ সকল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার; ৬. ১৪৪ ধারা মোতাবেক সকল অগণতান্ত্রিক নির্দেশ প্রত্যাহার; ৭. শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার প্রত্যর্পণ; এবং ৮. সংবাদপত্রের ওপর আরোপিত সকল বিধিনিষেধ ও পত্রিকা প্রকাশের ওপর সকল বাধা প্রত্যাহার এবং ‘ইত্তেফাক’ ‘চাট্টাম’, ‘প্রগ্রেসিভ পেপারস লিমিটেড ও সকল প্রেস, পত্রিকা ও সাময়িকীসহ যে সকল প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেগুলো মূল মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ।

ডাক-এর এই আট দফা দাবিনামা ঘোষণা করা হয় ১৯৬৯-এর ৮ জানুয়ারি; ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা ঘোষণার তিন দিন পরে। ছাত্রদের ১১ দফার সঙ্গে ডাকের আট দফার পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট। ডাক যা চাইছে তা কোনো মৌলিক পরিবর্তন নয়; স্বায়ত্তশাসনের কথা এতে যেমন নেই তেমনি নেই পররাষ্ট্রনীতিরও কোনো উল্লেখ। ডাক-এর মূল দাবি প্রথম দুটিই; ফেডারেল পদ্ধতির সংসদীয় সরকার ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন। ডাক-এর আট দফা ছাত্রদের ১১ দফা দাবি ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কি না, নিশ্চিত করে বলা যাবে না; তবে আট দফার ঘোষণা যে ১১ দফার পরপরই এল সে-ঘটনাকে নেহাত কাকতালীয় বলাও সম্ভব নয়। মূল বিবেচনায় আট দফা ছাত্রদের ১১ দফার বিরোধী। সেটা দাবিনামাটার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তবে কৌতূহলের বিষয় এটা যে ছাত্রদের ১১ দফায় শিক্ষাসংক্রান্ত দাবিগুলোর ভেতরে, ‘কুখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সম্পূর্ণ বাতিল করিতে হইবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে’ বলে যে জোরালো দাবিটি ছিল, ক্ষীণ কণ্ঠে হলেও ডাক-এর দফাতে সেটা স্থান পেয়েছে। যেন প্রতিধ্বনি। (চলবে)

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনার এক গোলমেলে ব্যাপার

সম্পাদকীয়
খুলনার এক গোলমেলে ব্যাপার

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।

গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।

বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্‌ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।

এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এভাবে চলতে থাকলে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

অরুণ কর্মকার
দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।

এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।

দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।

প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!

তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?

কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব

হাসান আলী 
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। ছবি: এআই
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। ছবি: এআই

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।

প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।

প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।

বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।

আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।

বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।

প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।

আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।

শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সংকট, সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

সাদিয়া সুলতানা রিমি
সংকট, সম্ভাবনার  সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।

একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।

বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।

এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।

একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।

নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।

বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।

বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত