মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া

বঙ্গবন্ধুর সরকারের শাসনামলের মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়ন, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান, ভারত প্রত্যাগত প্রায় এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন, পাকিস্তান থেকে ৫ লক্ষাধিক বাঙালিকে ফিরিয়ে আনা, ১২১টি দেশের স্বীকৃতি অর্জন, জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সদস্যপদ লাভ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে অংশগ্রহণ, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, ভারতের সাথে বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর, দেশের অভ্যন্তরে অব্যাহত সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরী, চোরাচালানি এবং সব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণ, বন্যা-দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি মোকাবিলা করে দেশে যখন শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে যখন অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেমে আসে এক অকল্পনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ।
মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের জন্য যা যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী, শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা সরকারের কাছে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? তথাপি একদল ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতালোভী বিপথগামী ব্যক্তি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরির সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ তাঁর পরিবার, মন্ত্রিসভা, আওয়ামী লীগের নেতারাসহ দেশের আপামর জনতা যা কোনো দিন কল্পনাও করেনি, ইতিহাসের নির্মম ও জঘন্য সেই হত্যাকাণ্ডই সংঘটিত হলো ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে। অন্যান্য কর্মব্যস্ত দিনের মতো ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখেও বঙ্গবন্ধু রাত ৮-৯টায় গণভবন থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসায় ফেরেন। তারপর যথারীতি আহার ও অন্যান্য কার্য শেষ করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু ঘুমাতে গেলেন। ১৫ আগস্ট সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করতে যাবেন। সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
পূর্বপরিকল্পনামতো ঘাতক দলের অপারেশন কমান্ডার আর্মার্ড কোরের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রশিদ, মেজর শরিফুল হক ডালিম, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর বজলুল হুদা, মেজর মহিউদ্দিন, মেজর আজিজ পাশা প্রমুখ তাঁদের অধীন সৈন্য, ট্যাংক, কামান, মেশিনগান, স্টেনগান নিয়ে ১৪ আগস্ট রাত থেকেই অভিযানের প্রস্তুতি নেন। তাঁরা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে ১৫ আগস্ট ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে তিনটি দল ধানমন্ডি ও সংলগ্ন এলাকায় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর রোডের বাড়ি, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণির বাড়ি ও ভগ্নিপতি মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের বাড়ি ঘেরাও করে আক্রমণ করে। শেষোক্ত দুজনের বাড়িতে ভোর ৫টার আগেই আক্রমণ করে শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর স্ত্রী আরজু মণি, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর কন্যা বেবী ও পুত্র আরিফ, নাতি সুকান্তসহ সেরানিবাতের বাড়িতে সেই রাতে অবস্থানরত আরও কয়েকজন আত্মীয় ও আশ্রিতজন এবং গৃহপরিচারিকাকে হত্যা করে। এই অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন মেজর ডালিম ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।
বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমানের বিশ্বস্ত মেজর মহিউদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন মেজর নূর, মেজর হুদা ও আরও অনেকে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রান্ত হলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে আক্রমণকারী সেনাদের তুমুল গোলাগুলি হয়। তখন ভোর সাড়ে ৫টা। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন দিকে বেশ কয়েকটি ফোন করেন। তিনি তাঁর মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিলকে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন। সেনাবাহিনীপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকেও খবর দিতে বলেন যেন সেনাপ্রধান ফোর্স পাঠান। কর্নেল জামিল তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে আসার পথে সোবহানবাগ মসজিদের কাছে বিদ্রোহী সৈনিকদের গুলিতে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেনাপ্রধানের কথা হয়। জেনারেল সফিউল্লাহ বলেছিলেন, ‘স্যার, ক্যান ইউ গেটআউট। আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং।’ কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই সেনাসদস্যরা বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সফিউল্লাহ ফোনে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল বাড়ির গেটের সামনে গোলমাল ও উত্তেজনা দেখে নিচে নেমে আসেন। তাঁর পরিচয় পেয়ে ঘাতক সৈনিকেরা শেখ কামালকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার পথে মেজর নূরসহ কয়েকজনের মুখোমুখি হন। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস?’ অমনি অতর্কিত ব্রাশফায়ারে তাঁর বুক ঝাঁজরা হয়ে যায়। তিনি সিঁড়িতে পড়ে গেলেন। তারপর একে একে হত্যা করা হয় শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রী রোজীকে, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকি, বেগম মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের এবং সর্বশেষে কনিষ্ঠ পুত্র ১০ বছর বয়সী শেখ রাসেলকে। আক্রমণকালে ওই বাড়িতে বেশ কিছুসংখ্যক পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। সে জন্য তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক ট্যাংক নিয়ে রক্ষীবাহিনীকে প্রতিরোধের দায়িত্বে ছিলেন। অন্য অফিসাররা টার্গেট করা বাড়িগুলোর চারদিকে সম্ভাব্য বাধাদানে আসা কোনো পুলিশ বা সৈন্যদের প্রতিরোধে নিয়োজিত ছিলেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল রশিদের দায়িত্ব ছিল অপারেশন-পরবর্তী অবস্থা সামাল দেওয়া ও সার্বিক রাজনৈতিক সমন্বয়সাধন।
জেনারেল সফিউল্লাহ যখন বঙ্গবন্ধুর ফোনের জবাব দিচ্ছিলেন, তখন ভোর আনুমানিক ৫টা ৫০ মিনিট। সেনাপ্রধান বিভিন্ন দিকে ফোন করতে থাকেন। ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াত জামিলকে ফোন করে প্রথম বেঙ্গল ও চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্ট মুভ করতে বলেন। তাঁর নির্দেশ সত্ত্বেও শাফায়াত জামিল কোনো ব্যবস্থা নেননি। সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমান, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ প্রমুখকেও ফোন করেছিলেন, কিন্তু কোনো ট্রুপস মুভ করাতে পারেননি। তিনি নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানের সঙ্গেও কথা বলেন।
অপারেশন শেষ করে মেজর ডালিম ঢাকা বেতার কেন্দ্র দখল করেন এবং নিজেই বেতারে প্রচার করলেন ‘স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ সকাল ৭টায় ঢাকা বেতারে ফারুক হোসেইনের নিয়মিত সংবাদ পাঠে জানা গেল, খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।
গোটা জাতি এই হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল। যে মানুষটি তাঁর সারা জীবন বাংলার মানুষের অধিকার আদায়, তাদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, পাকিস্তানের কারাগারে নিঃসঙ্গ, অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন, জাতিকে স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন, তাঁকে কিনা হত্যা করেছে একদল বিপথগামী ষড়যন্ত্রকারী সৈনিক। আর্মার্ড কোরের মাত্র দুটি ইউনিট এ অভিযানে যোগ দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরও চাইলেই বাংলাদেশের তৎকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনী বিদ্রোহীদের কাবু করতে পারত। কিন্তু এক অজ্ঞাত কারণে তারা তা করেনি। ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যাঁরা ভালোবাসেন কিংবা তাঁকে নিয়ে গবেষণা করেন বা আলোচনা করেন, তাঁরা অনেক সময় বিস্ময় বোধ করেন বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি শুরু করে, বাংলার মানুষকে ভালোবেসে, তাদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে তেরো বছরের অধিক সময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কারা প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন, বলতে গেলে তাঁর জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত হয়েছে নির্জন বন্দিশালায়, তিনি জীবনে আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখেননি, দীর্ঘসময় অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন, ক্ষমতার লোভ কিংবা সম্পদের উচ্চাভিলাষ তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি, সেই মানুষটিকে বাঙালিরা কীভাবে হত্যা করল? তাহলে ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি, ছলচাতুরী এই সব কি বাঙালি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য? বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সংস্থাপন বিভাগের সচিব হিসেবে কাজ করেছেন মাহবুবুর রহমান। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত তাঁর রচিত ‘কিছু স্মৃতি কিছু ধৃতি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এ কেমন দেশ বা এ কেমন জাতি? যার মুখের কথা শোনার জন্য লক্ষ লক্ষ লোক জমা হতো, আর যাকে লক্ষ লক্ষ লোক মিছিল করে অভ্যর্থনা করত, যার জয়ধ্বনিতে গগন বিদারিত হতো, তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হলো, মনে কোনো দুঃখ হলো না। যার জন্ম না হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ হতো না, আর বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না, তার হত্যার সাথে সাথে সবাই তার কথা হেলায় মন থেকে মুছে ফেলল। এ ঘটনার নজির খুঁজে বের করা কঠিন। এ ব্যাপারে আজও অনেকের আত্মজিজ্ঞাসা রয়ে গেছে।’
বঙ্গবন্ধু নিজ বাড়িতে সাধারণ নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে থাকতেন। দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রাপ্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা তিনি নেননি। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন এবং বলতেন, ‘বাঙালি আমাকে মারবে না। তাঁর এ বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল তাঁর দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম। বাংলাদেশকে ও বাঙালিদের তিনি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। এর প্রকাশ দেখা যায় বাংলায় ১৯৫০-এর মন্বন্তরের সময় মুসলিম যুব কর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ, দুর্গতদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও সেবাদান করার মধ্যে। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জীবনের মায়া তুচ্ছ করে আহতদের সেবা করেছেন। ১৯৫৪ সালে আদমজী জুট মিলের দাঙ্গা হামলার সময়, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তিনি দলীয় কর্মীদের নিয়ে বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেছেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দিয়ে তিনি বাংলার মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন, স্বাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর এই আত্মবিশ্বাস ছিল যে তিনি যেমন এ দেশের মানুষকে ভালোবাসেন, বাংলার মানুষও তাঁকে ভালোবাসে। তাঁর ডাকে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, দেশকে মুক্ত ও স্বাধীন করেছে। তাঁর একটি স্বপ্ন বাংলার মানুষ খেয়ে-পরে সুখে-শান্তিতে বাস করুক। আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে নিজের স্থান করে নিক। তিনি বলতেন, ‘ভিক্ষুক জাতির পৃথিবীতে কোনো সম্মান নেই।’
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের প্রারম্ভে উল্লিখিত তাঁর নোটবুকে ৩০.০৫.৭৩ তারিখে ইংরেজিতে লেখা একটি উক্তির বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ: ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তা-ই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তন সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ বাংলার মানুষের প্রতি হৃদয়ের এই উষ্ণতা ও ভালোবাসার কারণে সব চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের মুখে এই বিশ্বাস প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন যে কোনো বাঙালি তাঁকে হত্যা করতে পারে না। তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে সন্দিহান ও চিন্তিত হয়ে অনেকে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ তাদের সোর্স মারফত জানতে পারে যে বাংলাদেশে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুমতি নিয়ে ‘র’-এর অন্যতম নীতিনির্ধারক আর এন কাড ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করলে বঙ্গবন্ধু তা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘সবাই আমার সন্তান, আমাকে কেউ মারবে না।’
বাংলার মানুষের প্রতি এই অবিচল ও সীমাহীন বিশ্বাসই তাঁর উত্তম চরিত্রের ও মহৎ গুণাবলির বৈশিষ্ট্য। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস একদল বিপথগামী বাঙালিই তাঁকে হত্যা করেছে। তবে হত্যাকারীরা বাঙালি হলেও তারা ছিল বহিঃশত্রুর মদদপুষ্ট ও বেতনভুক্ত জল্লাদ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ‘মোশতাক-ফারুক-রশীদরা চেয়েছিলেন’ যেকোনোভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন। ফারুক-রশীদ পাকিস্তান থেকে এসে মুক্তিযুদ্ধেও যোগদান করেছেন বিলম্বে। তাঁরা কোনো সেক্টরে যুদ্ধ করেননি। কলকাতায় অবস্থান করেছেন।
জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে সিআইএর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। পৃথিবীর কোটি কোটি দরিদ্র, শোষিত, নির্যাতিত মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দের হত্যাকাণ্ডের (১৯৭৩) পর অবশ্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘একে একে আমাদের সবাইকে এভাবে শেষ করা হবে। এবার টার্গেট করা হবে আমাকে।’
কী আশ্চর্য ভবিষ্যদ্বাণী! হয়তো মনের অগোচরে তিনি এ কথাটি বলে ফেলেছিলেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের নীলনকশা ছিল দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির ফসল। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লব ও একদলীয় শাসন প্রবর্তনের সময় খন্দকার মোশতাক এর বিরোধিতা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসায় এসে তাঁর সঙ্গে উত্তেজিতভাবে তর্কাতর্কি করেন, কিন্তু জেনারেল এমএজি ওসমানী বা ব্যারিস্টার মইনুলের মতো পদত্যাগ করেননি। তিনি পার্লামেন্টেও ছিলেন, মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি থেকে ঘাতকদের হত্যাকাণ্ডের সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আছে যে খন্দকার মোশতাক ১৪ আগস্ট বাসা থেকে খাবার রান্না করে এনে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে খাইয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর লাশ নিয়ে কবরে নেমেছিলেন, এ ছাড়া শেখ কামালের বিবাহের উকিলও ছিলেন খন্দকার মোশতাক। বিশ্বাসঘাতক আর কাকে বলে!
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্বাসন দেওয়ার প্রয়াস চলে। কিন্তু ঘন কালো মেঘের আড়ালে লুকায়িত সূর্যের উদয়কে যেমন ঠেকানো যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় পর্বতপ্রমাণ অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে এবং ২০০৯ থেকে একনাগাড়ে আরও তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার শাসনামলে বঙ্গবন্ধুকে যেমন পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে, তেমনি তাঁর আদর্শ ও পথ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, বৈরী সময়ের ঘটনাবহুল শাসনামলের আজ নতুনভাবে পুনর্মূল্যায়ন হচ্ছে। কীভাবে একটি দেশ ও জাতিকে শূন্যাবস্থা থেকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, উপর্যুপরি বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ, সন্ত্রাস, উগ্রবাদী তৎপরতা, দুর্নীতি ইত্যাদি কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিকে একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন, তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
পঁচাত্তরে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট কোনো এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি কী?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল।’ পরের প্রশ্ন ‘আপনার দুর্বলতা কী?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল টু মাচ। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার হানি না ঘটে।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির উৎসই ছিল জনগণ। এ রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়েছে গ্রাম বাংলার হাটে-ঘাটে, প্রতারিত, শোষিত বাঙালির পর্ণকুটিরে। মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা, আন্দোলন-সংগ্রাম নিঃস্বার্থ ত্যাগের ওপর রচিত এবং ত্যাগেই ভালোবাসা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। আজীবন সংগ্রামী এ মানুষটি তাঁর আরাধ্য কাজ সমাপ্ত করার আগেই ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকদের নির্মম হত্যার শিকার হন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় লেখা হয়, ‘সবকিছু সত্ত্বেও শেখ মুজিব স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এ জন্য যে তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশ কখনো বাস্তবে পরিণত হতো না’ (১৬.৮.১৯৭৫)।
কিউবার সংগ্রামী প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল হিমালয়ের মতোই বিশাল।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ বিবিসি প্রচার করে, শেখ মুজিব নিহত হলেন তাঁর নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাঁকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচ বোধ করেছে।
ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত মন্তব্য করেন আপসহীন-সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুমকোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।
জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ডট মন্তব্য করেন, মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে, তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার সংবাদ বেতারে শোনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সাহিত্যিক সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দীন তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ‘মৃত মুজিব জীবিত মুজিবের চেয়ে শক্তিশালীরূপে আবির্ভূত হবেন।’
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদত দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাংক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ। আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জার্মানিতে অবস্থানরত তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আশায় ভারতে আসার পথে ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অফিসারকে শেখ হাসিনা তাঁর পাসপোর্ট দেখালে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে সেই অফিসার শেখ হাসিনাকে বললেন, ‘ছিঃ, তোমরা বাংলাদেশিরা জঘন্য জাতি। যে মানুষটি তোমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তাঁকেই তোমরা হত্যা করে ফেললে?’ শেখ হাসিনা চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এয়ারপোর্টের লোক দেখল দুই বোনের আহাজারি।
বিবিসি বাংলা বিভাগের শ্রোতাদের জনমত জরিপে ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল, ১৪১১ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ উপাধিতে ভূষিত হন। যুগে যুগে যেসব বাঙালি মনীষী, কবি সাহিত্যিক বাংলাকে ভালোবেসে অমরত্ব লাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছেন আমাদের বঙ্গবন্ধু। কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে তাই বলা যায়:
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
(রচনাটি লেখকের ‘চিরঞ্জীব শেখ মুজিব-জীবন ও কর্মের সংক্ষিপ্ত পাঠ’ গ্রন্থের অংশবিশেষ)
লেখক: সাবেক সিনিয়র সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

বঙ্গবন্ধুর সরকারের শাসনামলের মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়ন, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান, ভারত প্রত্যাগত প্রায় এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন, পাকিস্তান থেকে ৫ লক্ষাধিক বাঙালিকে ফিরিয়ে আনা, ১২১টি দেশের স্বীকৃতি অর্জন, জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সদস্যপদ লাভ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে অংশগ্রহণ, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, ভারতের সাথে বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর, দেশের অভ্যন্তরে অব্যাহত সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরী, চোরাচালানি এবং সব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণ, বন্যা-দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি মোকাবিলা করে দেশে যখন শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে যখন অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেমে আসে এক অকল্পনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ।
মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের জন্য যা যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী, শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা সরকারের কাছে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? তথাপি একদল ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতালোভী বিপথগামী ব্যক্তি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরির সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ তাঁর পরিবার, মন্ত্রিসভা, আওয়ামী লীগের নেতারাসহ দেশের আপামর জনতা যা কোনো দিন কল্পনাও করেনি, ইতিহাসের নির্মম ও জঘন্য সেই হত্যাকাণ্ডই সংঘটিত হলো ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে। অন্যান্য কর্মব্যস্ত দিনের মতো ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখেও বঙ্গবন্ধু রাত ৮-৯টায় গণভবন থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসায় ফেরেন। তারপর যথারীতি আহার ও অন্যান্য কার্য শেষ করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু ঘুমাতে গেলেন। ১৫ আগস্ট সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করতে যাবেন। সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
পূর্বপরিকল্পনামতো ঘাতক দলের অপারেশন কমান্ডার আর্মার্ড কোরের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রশিদ, মেজর শরিফুল হক ডালিম, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর বজলুল হুদা, মেজর মহিউদ্দিন, মেজর আজিজ পাশা প্রমুখ তাঁদের অধীন সৈন্য, ট্যাংক, কামান, মেশিনগান, স্টেনগান নিয়ে ১৪ আগস্ট রাত থেকেই অভিযানের প্রস্তুতি নেন। তাঁরা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে ১৫ আগস্ট ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে তিনটি দল ধানমন্ডি ও সংলগ্ন এলাকায় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর রোডের বাড়ি, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণির বাড়ি ও ভগ্নিপতি মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের বাড়ি ঘেরাও করে আক্রমণ করে। শেষোক্ত দুজনের বাড়িতে ভোর ৫টার আগেই আক্রমণ করে শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর স্ত্রী আরজু মণি, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর কন্যা বেবী ও পুত্র আরিফ, নাতি সুকান্তসহ সেরানিবাতের বাড়িতে সেই রাতে অবস্থানরত আরও কয়েকজন আত্মীয় ও আশ্রিতজন এবং গৃহপরিচারিকাকে হত্যা করে। এই অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন মেজর ডালিম ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।
বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমানের বিশ্বস্ত মেজর মহিউদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন মেজর নূর, মেজর হুদা ও আরও অনেকে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রান্ত হলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে আক্রমণকারী সেনাদের তুমুল গোলাগুলি হয়। তখন ভোর সাড়ে ৫টা। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন দিকে বেশ কয়েকটি ফোন করেন। তিনি তাঁর মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিলকে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন। সেনাবাহিনীপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকেও খবর দিতে বলেন যেন সেনাপ্রধান ফোর্স পাঠান। কর্নেল জামিল তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে আসার পথে সোবহানবাগ মসজিদের কাছে বিদ্রোহী সৈনিকদের গুলিতে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেনাপ্রধানের কথা হয়। জেনারেল সফিউল্লাহ বলেছিলেন, ‘স্যার, ক্যান ইউ গেটআউট। আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং।’ কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই সেনাসদস্যরা বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সফিউল্লাহ ফোনে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল বাড়ির গেটের সামনে গোলমাল ও উত্তেজনা দেখে নিচে নেমে আসেন। তাঁর পরিচয় পেয়ে ঘাতক সৈনিকেরা শেখ কামালকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার পথে মেজর নূরসহ কয়েকজনের মুখোমুখি হন। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস?’ অমনি অতর্কিত ব্রাশফায়ারে তাঁর বুক ঝাঁজরা হয়ে যায়। তিনি সিঁড়িতে পড়ে গেলেন। তারপর একে একে হত্যা করা হয় শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রী রোজীকে, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকি, বেগম মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের এবং সর্বশেষে কনিষ্ঠ পুত্র ১০ বছর বয়সী শেখ রাসেলকে। আক্রমণকালে ওই বাড়িতে বেশ কিছুসংখ্যক পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। সে জন্য তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক ট্যাংক নিয়ে রক্ষীবাহিনীকে প্রতিরোধের দায়িত্বে ছিলেন। অন্য অফিসাররা টার্গেট করা বাড়িগুলোর চারদিকে সম্ভাব্য বাধাদানে আসা কোনো পুলিশ বা সৈন্যদের প্রতিরোধে নিয়োজিত ছিলেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল রশিদের দায়িত্ব ছিল অপারেশন-পরবর্তী অবস্থা সামাল দেওয়া ও সার্বিক রাজনৈতিক সমন্বয়সাধন।
জেনারেল সফিউল্লাহ যখন বঙ্গবন্ধুর ফোনের জবাব দিচ্ছিলেন, তখন ভোর আনুমানিক ৫টা ৫০ মিনিট। সেনাপ্রধান বিভিন্ন দিকে ফোন করতে থাকেন। ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াত জামিলকে ফোন করে প্রথম বেঙ্গল ও চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্ট মুভ করতে বলেন। তাঁর নির্দেশ সত্ত্বেও শাফায়াত জামিল কোনো ব্যবস্থা নেননি। সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমান, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ প্রমুখকেও ফোন করেছিলেন, কিন্তু কোনো ট্রুপস মুভ করাতে পারেননি। তিনি নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানের সঙ্গেও কথা বলেন।
অপারেশন শেষ করে মেজর ডালিম ঢাকা বেতার কেন্দ্র দখল করেন এবং নিজেই বেতারে প্রচার করলেন ‘স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ সকাল ৭টায় ঢাকা বেতারে ফারুক হোসেইনের নিয়মিত সংবাদ পাঠে জানা গেল, খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।
গোটা জাতি এই হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল। যে মানুষটি তাঁর সারা জীবন বাংলার মানুষের অধিকার আদায়, তাদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, পাকিস্তানের কারাগারে নিঃসঙ্গ, অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন, জাতিকে স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন, তাঁকে কিনা হত্যা করেছে একদল বিপথগামী ষড়যন্ত্রকারী সৈনিক। আর্মার্ড কোরের মাত্র দুটি ইউনিট এ অভিযানে যোগ দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরও চাইলেই বাংলাদেশের তৎকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনী বিদ্রোহীদের কাবু করতে পারত। কিন্তু এক অজ্ঞাত কারণে তারা তা করেনি। ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যাঁরা ভালোবাসেন কিংবা তাঁকে নিয়ে গবেষণা করেন বা আলোচনা করেন, তাঁরা অনেক সময় বিস্ময় বোধ করেন বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি শুরু করে, বাংলার মানুষকে ভালোবেসে, তাদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে তেরো বছরের অধিক সময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কারা প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন, বলতে গেলে তাঁর জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত হয়েছে নির্জন বন্দিশালায়, তিনি জীবনে আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখেননি, দীর্ঘসময় অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন, ক্ষমতার লোভ কিংবা সম্পদের উচ্চাভিলাষ তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি, সেই মানুষটিকে বাঙালিরা কীভাবে হত্যা করল? তাহলে ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি, ছলচাতুরী এই সব কি বাঙালি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য? বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সংস্থাপন বিভাগের সচিব হিসেবে কাজ করেছেন মাহবুবুর রহমান। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত তাঁর রচিত ‘কিছু স্মৃতি কিছু ধৃতি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এ কেমন দেশ বা এ কেমন জাতি? যার মুখের কথা শোনার জন্য লক্ষ লক্ষ লোক জমা হতো, আর যাকে লক্ষ লক্ষ লোক মিছিল করে অভ্যর্থনা করত, যার জয়ধ্বনিতে গগন বিদারিত হতো, তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হলো, মনে কোনো দুঃখ হলো না। যার জন্ম না হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ হতো না, আর বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না, তার হত্যার সাথে সাথে সবাই তার কথা হেলায় মন থেকে মুছে ফেলল। এ ঘটনার নজির খুঁজে বের করা কঠিন। এ ব্যাপারে আজও অনেকের আত্মজিজ্ঞাসা রয়ে গেছে।’
বঙ্গবন্ধু নিজ বাড়িতে সাধারণ নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে থাকতেন। দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রাপ্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা তিনি নেননি। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন এবং বলতেন, ‘বাঙালি আমাকে মারবে না। তাঁর এ বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল তাঁর দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম। বাংলাদেশকে ও বাঙালিদের তিনি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। এর প্রকাশ দেখা যায় বাংলায় ১৯৫০-এর মন্বন্তরের সময় মুসলিম যুব কর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ, দুর্গতদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও সেবাদান করার মধ্যে। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জীবনের মায়া তুচ্ছ করে আহতদের সেবা করেছেন। ১৯৫৪ সালে আদমজী জুট মিলের দাঙ্গা হামলার সময়, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তিনি দলীয় কর্মীদের নিয়ে বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেছেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দিয়ে তিনি বাংলার মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন, স্বাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর এই আত্মবিশ্বাস ছিল যে তিনি যেমন এ দেশের মানুষকে ভালোবাসেন, বাংলার মানুষও তাঁকে ভালোবাসে। তাঁর ডাকে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, দেশকে মুক্ত ও স্বাধীন করেছে। তাঁর একটি স্বপ্ন বাংলার মানুষ খেয়ে-পরে সুখে-শান্তিতে বাস করুক। আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে নিজের স্থান করে নিক। তিনি বলতেন, ‘ভিক্ষুক জাতির পৃথিবীতে কোনো সম্মান নেই।’
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের প্রারম্ভে উল্লিখিত তাঁর নোটবুকে ৩০.০৫.৭৩ তারিখে ইংরেজিতে লেখা একটি উক্তির বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ: ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তা-ই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তন সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ বাংলার মানুষের প্রতি হৃদয়ের এই উষ্ণতা ও ভালোবাসার কারণে সব চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের মুখে এই বিশ্বাস প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন যে কোনো বাঙালি তাঁকে হত্যা করতে পারে না। তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে সন্দিহান ও চিন্তিত হয়ে অনেকে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ তাদের সোর্স মারফত জানতে পারে যে বাংলাদেশে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুমতি নিয়ে ‘র’-এর অন্যতম নীতিনির্ধারক আর এন কাড ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করলে বঙ্গবন্ধু তা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘সবাই আমার সন্তান, আমাকে কেউ মারবে না।’
বাংলার মানুষের প্রতি এই অবিচল ও সীমাহীন বিশ্বাসই তাঁর উত্তম চরিত্রের ও মহৎ গুণাবলির বৈশিষ্ট্য। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস একদল বিপথগামী বাঙালিই তাঁকে হত্যা করেছে। তবে হত্যাকারীরা বাঙালি হলেও তারা ছিল বহিঃশত্রুর মদদপুষ্ট ও বেতনভুক্ত জল্লাদ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ‘মোশতাক-ফারুক-রশীদরা চেয়েছিলেন’ যেকোনোভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন। ফারুক-রশীদ পাকিস্তান থেকে এসে মুক্তিযুদ্ধেও যোগদান করেছেন বিলম্বে। তাঁরা কোনো সেক্টরে যুদ্ধ করেননি। কলকাতায় অবস্থান করেছেন।
জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে সিআইএর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। পৃথিবীর কোটি কোটি দরিদ্র, শোষিত, নির্যাতিত মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দের হত্যাকাণ্ডের (১৯৭৩) পর অবশ্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘একে একে আমাদের সবাইকে এভাবে শেষ করা হবে। এবার টার্গেট করা হবে আমাকে।’
কী আশ্চর্য ভবিষ্যদ্বাণী! হয়তো মনের অগোচরে তিনি এ কথাটি বলে ফেলেছিলেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের নীলনকশা ছিল দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির ফসল। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লব ও একদলীয় শাসন প্রবর্তনের সময় খন্দকার মোশতাক এর বিরোধিতা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসায় এসে তাঁর সঙ্গে উত্তেজিতভাবে তর্কাতর্কি করেন, কিন্তু জেনারেল এমএজি ওসমানী বা ব্যারিস্টার মইনুলের মতো পদত্যাগ করেননি। তিনি পার্লামেন্টেও ছিলেন, মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি থেকে ঘাতকদের হত্যাকাণ্ডের সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আছে যে খন্দকার মোশতাক ১৪ আগস্ট বাসা থেকে খাবার রান্না করে এনে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে খাইয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর লাশ নিয়ে কবরে নেমেছিলেন, এ ছাড়া শেখ কামালের বিবাহের উকিলও ছিলেন খন্দকার মোশতাক। বিশ্বাসঘাতক আর কাকে বলে!
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্বাসন দেওয়ার প্রয়াস চলে। কিন্তু ঘন কালো মেঘের আড়ালে লুকায়িত সূর্যের উদয়কে যেমন ঠেকানো যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় পর্বতপ্রমাণ অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে এবং ২০০৯ থেকে একনাগাড়ে আরও তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার শাসনামলে বঙ্গবন্ধুকে যেমন পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে, তেমনি তাঁর আদর্শ ও পথ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, বৈরী সময়ের ঘটনাবহুল শাসনামলের আজ নতুনভাবে পুনর্মূল্যায়ন হচ্ছে। কীভাবে একটি দেশ ও জাতিকে শূন্যাবস্থা থেকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, উপর্যুপরি বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ, সন্ত্রাস, উগ্রবাদী তৎপরতা, দুর্নীতি ইত্যাদি কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিকে একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন, তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
পঁচাত্তরে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট কোনো এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি কী?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল।’ পরের প্রশ্ন ‘আপনার দুর্বলতা কী?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল টু মাচ। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার হানি না ঘটে।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির উৎসই ছিল জনগণ। এ রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়েছে গ্রাম বাংলার হাটে-ঘাটে, প্রতারিত, শোষিত বাঙালির পর্ণকুটিরে। মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা, আন্দোলন-সংগ্রাম নিঃস্বার্থ ত্যাগের ওপর রচিত এবং ত্যাগেই ভালোবাসা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। আজীবন সংগ্রামী এ মানুষটি তাঁর আরাধ্য কাজ সমাপ্ত করার আগেই ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকদের নির্মম হত্যার শিকার হন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় লেখা হয়, ‘সবকিছু সত্ত্বেও শেখ মুজিব স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এ জন্য যে তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশ কখনো বাস্তবে পরিণত হতো না’ (১৬.৮.১৯৭৫)।
কিউবার সংগ্রামী প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল হিমালয়ের মতোই বিশাল।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ বিবিসি প্রচার করে, শেখ মুজিব নিহত হলেন তাঁর নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাঁকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচ বোধ করেছে।
ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত মন্তব্য করেন আপসহীন-সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুমকোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।
জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ডট মন্তব্য করেন, মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে, তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার সংবাদ বেতারে শোনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সাহিত্যিক সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দীন তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ‘মৃত মুজিব জীবিত মুজিবের চেয়ে শক্তিশালীরূপে আবির্ভূত হবেন।’
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদত দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাংক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ। আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জার্মানিতে অবস্থানরত তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আশায় ভারতে আসার পথে ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অফিসারকে শেখ হাসিনা তাঁর পাসপোর্ট দেখালে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে সেই অফিসার শেখ হাসিনাকে বললেন, ‘ছিঃ, তোমরা বাংলাদেশিরা জঘন্য জাতি। যে মানুষটি তোমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তাঁকেই তোমরা হত্যা করে ফেললে?’ শেখ হাসিনা চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এয়ারপোর্টের লোক দেখল দুই বোনের আহাজারি।
বিবিসি বাংলা বিভাগের শ্রোতাদের জনমত জরিপে ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল, ১৪১১ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ উপাধিতে ভূষিত হন। যুগে যুগে যেসব বাঙালি মনীষী, কবি সাহিত্যিক বাংলাকে ভালোবেসে অমরত্ব লাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছেন আমাদের বঙ্গবন্ধু। কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে তাই বলা যায়:
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
(রচনাটি লেখকের ‘চিরঞ্জীব শেখ মুজিব-জীবন ও কর্মের সংক্ষিপ্ত পাঠ’ গ্রন্থের অংশবিশেষ)
লেখক: সাবেক সিনিয়র সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৮ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের জন্য যা যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী, শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা সরকারের কাছে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? তথাপি একদল ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতালোভী বিপথগামী ব্যক্তি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরির সুযোগের অপেক্ষায় থাকে...
১৫ আগস্ট ২০২২
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৮ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের জন্য যা যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী, শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা সরকারের কাছে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? তথাপি একদল ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতালোভী বিপথগামী ব্যক্তি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরির সুযোগের অপেক্ষায় থাকে...
১৫ আগস্ট ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের জন্য যা যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী, শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা সরকারের কাছে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? তথাপি একদল ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতালোভী বিপথগামী ব্যক্তি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরির সুযোগের অপেক্ষায় থাকে...
১৫ আগস্ট ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৮ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের জন্য যা যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী, শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা সরকারের কাছে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? তথাপি একদল ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতালোভী বিপথগামী ব্যক্তি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরির সুযোগের অপেক্ষায় থাকে...
১৫ আগস্ট ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৮ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৮ ঘণ্টা আগে