স্বপ্না রেজা

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে বয়স কত, আর কত অল্প বয়স থেকে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন অভিনয়ের মাধ্যমে? সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলার কথা বলা হয়েছে। এইসব অভিযোগেই নাকি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় যখন হত্যাচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তখন নুসরাত ফারিয়া দেশেই ছিলেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া নন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এমন সব যুক্তিহীন তথ্য ও অভিযোগ শুনে গোটা দেশের মানুষ তাজ্জব বনে গেছে, বিস্ময় প্রকাশ করেছে, এ-ও সম্ভব!
ইতিহাসধর্মী কোনো একটি চলচ্চিত্রে কোনো এক চরিত্রে অভিনয় করাটা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে? রীতিমতো আকাশ থেকে পড়া যাকে বলে! লোকটা আসলেই আইনজীবী তো, নাকি কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধি? কারও কারও মনে সংশয় দেখা দিল—এমন যুক্তিতে কখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় কি না, গ্রেপ্তার হয় বা হয়েছে কি না এর আগে? এমন বিস্ময়কর প্রশ্নের জবাব কিন্তু খুঁজতে কমবেশি সবাই নড়েচড়ে বসেছে। সম্ভবত বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই যে, কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্রের কোনো একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কোনো অভিনয়শিল্পীকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে।
বলা বাহুল্য, এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামীবিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছে। তারা মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণ বলে তো সর্ববৃহৎ একটা অস্তিত্ব আছে, যে কিনা সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে। ন্যায় ও অন্যায় যারা বেশ ভালো বোঝে। নিরীহ হয়ে জীবনযাপন করলেও সময়মতো তারা প্রচণ্ড আওয়াজ তোলে, সরব হয়। সঠিক জবাব দিতে ভুল করে না।
এই ঘটনায় অনেকের মনে এই প্রশ্নও জেগেছে যে, মুজিব চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের অভিযোগে যদি নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাহলে হাসিনার মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বর্তমান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার স্ত্রী তিশাকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? যাঁকে ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে তো এই দুজন স্বামী ও স্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবিও রয়েছে, কেউ কেউ সেই কথা বলতে শুরু করেছেন। এমনও লোকে বলে, সখ্যও ছিল। কয়েকটা ছবি ভাইরালও হয়েছে। এসব কিন্তু মোটেও দোষের নয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই দেশের জনপ্রিয় ও গুণী ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে তো তাঁদের ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে, থাকতে পারে দু-একটা ছবিও। সেটা হোক অতীত বা বর্তমান। তাহলে? তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, উপদেষ্টার স্ত্রী হওয়াতে কি তিশা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন? কঠিন বৈষম্য তো তবে এখানেই থাকছে—ইত্যাদি ইত্যাদিতে মুখরিত উৎসুক জনগণের মন। এমন প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক।
যাহোক, অভিনয়ের জন্য গ্রেপ্তার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অফিস-আদালত, চায়ের টেবিলে ঘুরেফিরে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বেশি রকম আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকে। তীব্র প্রতিবাদ, সমালোচনা ও তাঁর মুক্তির পক্ষে দাবি ওঠে। সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা বলেই ফেলেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিব্রতকর। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বাইরেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। অনেকে মনে করেন যে এসব কারণে জামিনের জন্য শুনানির নির্ধারিত দিনের আগেই নুসরাত জামিন পেয়ে যান। কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই নুসরাতকে তড়িঘড়ি করে জামিনে কারামুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে নানান সংস্কারের কথা বলছিল, তাতে জনসাধারণের মনে একধরনের কৌতূহল ও অধীর অপেক্ষা তৈরি হয়েছিল। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তারা উদগ্রীব ছিল। না বললেই নয় যে আজ তাদের অনেকেই বিব্রত, আশাহত। যা হচ্ছে, ঘটছে তাতে সবার মাঝেই কমবেশি নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত থাকছে সাধারণ মানুষ। মব সংস্কৃতি, ভুয়া মামলা, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, প্রায় অচল শিক্ষাঙ্গন, তরুণদের মধ্যে অত্যধিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিপ্রীতি, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। আর এসব ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথিত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধাচরণ করার নামে, অজুহাতে।
প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা রাজনীতির এক ভয়ংকর অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ জনগণ এমন পরিস্থিতি থেকে সব সময়ই পরিত্রাণ চেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের চেতনার ধরন থেকে আশ্বস্ত ও স্বস্তি পাওয়ার যে আশা রচিত হয়েছিল কারও কারও হৃদয়ে, তা যেন অনেকটা দুরাশার রূপ নিয়ে থমকে গেছে। সবকিছুই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ যেন অসহায় হয়ে পড়ছে, যা অতীতের দুঃশাসনেরই পুনরাবৃত্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে লাগামহীন বলেই কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করছেন।
আবার কেউ কেউ এমন অভিমত প্রকাশ করছেন যে, বাংলা সংস্কৃতি ও শিল্পীসমাজ আজ হুমকির সম্মুখীন, ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত। নুসরাত ফারিয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, অভিনয়ে ও গানে অনেক শিল্পী ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন। যখন একটি রাষ্ট্রের সরকার কোনো শিল্পীকে কোনো কিছু করতে আহ্বান করে, তখন কার দুঃসাহস থাকে সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার? যেভাবে, যে মানদণ্ডে আজ শিল্পীসমাজকে মূল্যায়ন বা অপরাধী বানাবার পাঁয়তারা চলছে, তাতে ভবিষ্যতে কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্র বা গান এই দেশে হবে না এবং এইসব চলচ্চিত্রে বা গানে কোনো শিল্পী অভিনয় বা গান পরিবেশন করতে সাহস পাবেন না, আগ্রহ তো দূরের কথা। ফলে ইতিহাস নামক বিষয়েরও বিলুপ্তি ঘটবে কিংবা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তখন সেই সরকার তার মতো করে ইতিহাস রচনা করবে।
বর্তমান মামলাবাজি দেখে একজন প্রবীণ ভদ্রলোক বেশ রসিকতা করে বলছিলেন, যেভাবে মামলা হচ্ছে তাতে তো ১৮ কোটি জনগণের বিরুদ্ধেই মামলা হতে পারে। কারণ, ১৫ বছর ধরে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহ করেছে। কমবেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কেন তা করল, প্রশ্ন ওঠানো যায়। সুতরাং সবাই অপরাধী। তাদেরও তো গ্রেপ্তার করা লাগে! আবার নুসরাত ফারিয়া ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য অপরাধী হয়েছেন। আর যারা এই চলচ্চিত্রটি দেখেছে, উপভোগ করেছে তারাও তো অপরাধী। সেই সময়ে যে টিকিট বিক্রি হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্ট করে তো অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব, তাই না?
আসলে হচ্ছেটা কী? এককথায় জবাব হতে পারে, আইনের শাসনের বারোটা বেজে যাচ্ছে। আইনের অপব্যবহার হচ্ছে যত্রতত্র এবং সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। নুসরাত ফারিয়ার ঘটনাটি তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে বয়স কত, আর কত অল্প বয়স থেকে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন অভিনয়ের মাধ্যমে? সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলার কথা বলা হয়েছে। এইসব অভিযোগেই নাকি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় যখন হত্যাচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তখন নুসরাত ফারিয়া দেশেই ছিলেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া নন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এমন সব যুক্তিহীন তথ্য ও অভিযোগ শুনে গোটা দেশের মানুষ তাজ্জব বনে গেছে, বিস্ময় প্রকাশ করেছে, এ-ও সম্ভব!
ইতিহাসধর্মী কোনো একটি চলচ্চিত্রে কোনো এক চরিত্রে অভিনয় করাটা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে? রীতিমতো আকাশ থেকে পড়া যাকে বলে! লোকটা আসলেই আইনজীবী তো, নাকি কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধি? কারও কারও মনে সংশয় দেখা দিল—এমন যুক্তিতে কখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় কি না, গ্রেপ্তার হয় বা হয়েছে কি না এর আগে? এমন বিস্ময়কর প্রশ্নের জবাব কিন্তু খুঁজতে কমবেশি সবাই নড়েচড়ে বসেছে। সম্ভবত বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই যে, কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্রের কোনো একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কোনো অভিনয়শিল্পীকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে।
বলা বাহুল্য, এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামীবিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছে। তারা মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণ বলে তো সর্ববৃহৎ একটা অস্তিত্ব আছে, যে কিনা সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে। ন্যায় ও অন্যায় যারা বেশ ভালো বোঝে। নিরীহ হয়ে জীবনযাপন করলেও সময়মতো তারা প্রচণ্ড আওয়াজ তোলে, সরব হয়। সঠিক জবাব দিতে ভুল করে না।
এই ঘটনায় অনেকের মনে এই প্রশ্নও জেগেছে যে, মুজিব চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের অভিযোগে যদি নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাহলে হাসিনার মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বর্তমান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার স্ত্রী তিশাকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? যাঁকে ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে তো এই দুজন স্বামী ও স্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবিও রয়েছে, কেউ কেউ সেই কথা বলতে শুরু করেছেন। এমনও লোকে বলে, সখ্যও ছিল। কয়েকটা ছবি ভাইরালও হয়েছে। এসব কিন্তু মোটেও দোষের নয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই দেশের জনপ্রিয় ও গুণী ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে তো তাঁদের ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে, থাকতে পারে দু-একটা ছবিও। সেটা হোক অতীত বা বর্তমান। তাহলে? তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, উপদেষ্টার স্ত্রী হওয়াতে কি তিশা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন? কঠিন বৈষম্য তো তবে এখানেই থাকছে—ইত্যাদি ইত্যাদিতে মুখরিত উৎসুক জনগণের মন। এমন প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক।
যাহোক, অভিনয়ের জন্য গ্রেপ্তার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অফিস-আদালত, চায়ের টেবিলে ঘুরেফিরে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বেশি রকম আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকে। তীব্র প্রতিবাদ, সমালোচনা ও তাঁর মুক্তির পক্ষে দাবি ওঠে। সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা বলেই ফেলেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিব্রতকর। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বাইরেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। অনেকে মনে করেন যে এসব কারণে জামিনের জন্য শুনানির নির্ধারিত দিনের আগেই নুসরাত জামিন পেয়ে যান। কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই নুসরাতকে তড়িঘড়ি করে জামিনে কারামুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে নানান সংস্কারের কথা বলছিল, তাতে জনসাধারণের মনে একধরনের কৌতূহল ও অধীর অপেক্ষা তৈরি হয়েছিল। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তারা উদগ্রীব ছিল। না বললেই নয় যে আজ তাদের অনেকেই বিব্রত, আশাহত। যা হচ্ছে, ঘটছে তাতে সবার মাঝেই কমবেশি নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত থাকছে সাধারণ মানুষ। মব সংস্কৃতি, ভুয়া মামলা, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, প্রায় অচল শিক্ষাঙ্গন, তরুণদের মধ্যে অত্যধিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিপ্রীতি, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। আর এসব ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথিত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধাচরণ করার নামে, অজুহাতে।
প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা রাজনীতির এক ভয়ংকর অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ জনগণ এমন পরিস্থিতি থেকে সব সময়ই পরিত্রাণ চেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের চেতনার ধরন থেকে আশ্বস্ত ও স্বস্তি পাওয়ার যে আশা রচিত হয়েছিল কারও কারও হৃদয়ে, তা যেন অনেকটা দুরাশার রূপ নিয়ে থমকে গেছে। সবকিছুই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ যেন অসহায় হয়ে পড়ছে, যা অতীতের দুঃশাসনেরই পুনরাবৃত্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে লাগামহীন বলেই কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করছেন।
আবার কেউ কেউ এমন অভিমত প্রকাশ করছেন যে, বাংলা সংস্কৃতি ও শিল্পীসমাজ আজ হুমকির সম্মুখীন, ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত। নুসরাত ফারিয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, অভিনয়ে ও গানে অনেক শিল্পী ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন। যখন একটি রাষ্ট্রের সরকার কোনো শিল্পীকে কোনো কিছু করতে আহ্বান করে, তখন কার দুঃসাহস থাকে সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার? যেভাবে, যে মানদণ্ডে আজ শিল্পীসমাজকে মূল্যায়ন বা অপরাধী বানাবার পাঁয়তারা চলছে, তাতে ভবিষ্যতে কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্র বা গান এই দেশে হবে না এবং এইসব চলচ্চিত্রে বা গানে কোনো শিল্পী অভিনয় বা গান পরিবেশন করতে সাহস পাবেন না, আগ্রহ তো দূরের কথা। ফলে ইতিহাস নামক বিষয়েরও বিলুপ্তি ঘটবে কিংবা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তখন সেই সরকার তার মতো করে ইতিহাস রচনা করবে।
বর্তমান মামলাবাজি দেখে একজন প্রবীণ ভদ্রলোক বেশ রসিকতা করে বলছিলেন, যেভাবে মামলা হচ্ছে তাতে তো ১৮ কোটি জনগণের বিরুদ্ধেই মামলা হতে পারে। কারণ, ১৫ বছর ধরে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহ করেছে। কমবেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কেন তা করল, প্রশ্ন ওঠানো যায়। সুতরাং সবাই অপরাধী। তাদেরও তো গ্রেপ্তার করা লাগে! আবার নুসরাত ফারিয়া ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য অপরাধী হয়েছেন। আর যারা এই চলচ্চিত্রটি দেখেছে, উপভোগ করেছে তারাও তো অপরাধী। সেই সময়ে যে টিকিট বিক্রি হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্ট করে তো অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব, তাই না?
আসলে হচ্ছেটা কী? এককথায় জবাব হতে পারে, আইনের শাসনের বারোটা বেজে যাচ্ছে। আইনের অপব্যবহার হচ্ছে যত্রতত্র এবং সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। নুসরাত ফারিয়ার ঘটনাটি তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
স্বপ্না রেজা

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে বয়স কত, আর কত অল্প বয়স থেকে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন অভিনয়ের মাধ্যমে? সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলার কথা বলা হয়েছে। এইসব অভিযোগেই নাকি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় যখন হত্যাচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তখন নুসরাত ফারিয়া দেশেই ছিলেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া নন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এমন সব যুক্তিহীন তথ্য ও অভিযোগ শুনে গোটা দেশের মানুষ তাজ্জব বনে গেছে, বিস্ময় প্রকাশ করেছে, এ-ও সম্ভব!
ইতিহাসধর্মী কোনো একটি চলচ্চিত্রে কোনো এক চরিত্রে অভিনয় করাটা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে? রীতিমতো আকাশ থেকে পড়া যাকে বলে! লোকটা আসলেই আইনজীবী তো, নাকি কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধি? কারও কারও মনে সংশয় দেখা দিল—এমন যুক্তিতে কখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় কি না, গ্রেপ্তার হয় বা হয়েছে কি না এর আগে? এমন বিস্ময়কর প্রশ্নের জবাব কিন্তু খুঁজতে কমবেশি সবাই নড়েচড়ে বসেছে। সম্ভবত বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই যে, কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্রের কোনো একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কোনো অভিনয়শিল্পীকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে।
বলা বাহুল্য, এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামীবিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছে। তারা মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণ বলে তো সর্ববৃহৎ একটা অস্তিত্ব আছে, যে কিনা সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে। ন্যায় ও অন্যায় যারা বেশ ভালো বোঝে। নিরীহ হয়ে জীবনযাপন করলেও সময়মতো তারা প্রচণ্ড আওয়াজ তোলে, সরব হয়। সঠিক জবাব দিতে ভুল করে না।
এই ঘটনায় অনেকের মনে এই প্রশ্নও জেগেছে যে, মুজিব চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের অভিযোগে যদি নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাহলে হাসিনার মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বর্তমান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার স্ত্রী তিশাকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? যাঁকে ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে তো এই দুজন স্বামী ও স্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবিও রয়েছে, কেউ কেউ সেই কথা বলতে শুরু করেছেন। এমনও লোকে বলে, সখ্যও ছিল। কয়েকটা ছবি ভাইরালও হয়েছে। এসব কিন্তু মোটেও দোষের নয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই দেশের জনপ্রিয় ও গুণী ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে তো তাঁদের ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে, থাকতে পারে দু-একটা ছবিও। সেটা হোক অতীত বা বর্তমান। তাহলে? তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, উপদেষ্টার স্ত্রী হওয়াতে কি তিশা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন? কঠিন বৈষম্য তো তবে এখানেই থাকছে—ইত্যাদি ইত্যাদিতে মুখরিত উৎসুক জনগণের মন। এমন প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক।
যাহোক, অভিনয়ের জন্য গ্রেপ্তার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অফিস-আদালত, চায়ের টেবিলে ঘুরেফিরে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বেশি রকম আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকে। তীব্র প্রতিবাদ, সমালোচনা ও তাঁর মুক্তির পক্ষে দাবি ওঠে। সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা বলেই ফেলেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিব্রতকর। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বাইরেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। অনেকে মনে করেন যে এসব কারণে জামিনের জন্য শুনানির নির্ধারিত দিনের আগেই নুসরাত জামিন পেয়ে যান। কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই নুসরাতকে তড়িঘড়ি করে জামিনে কারামুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে নানান সংস্কারের কথা বলছিল, তাতে জনসাধারণের মনে একধরনের কৌতূহল ও অধীর অপেক্ষা তৈরি হয়েছিল। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তারা উদগ্রীব ছিল। না বললেই নয় যে আজ তাদের অনেকেই বিব্রত, আশাহত। যা হচ্ছে, ঘটছে তাতে সবার মাঝেই কমবেশি নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত থাকছে সাধারণ মানুষ। মব সংস্কৃতি, ভুয়া মামলা, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, প্রায় অচল শিক্ষাঙ্গন, তরুণদের মধ্যে অত্যধিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিপ্রীতি, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। আর এসব ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথিত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধাচরণ করার নামে, অজুহাতে।
প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা রাজনীতির এক ভয়ংকর অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ জনগণ এমন পরিস্থিতি থেকে সব সময়ই পরিত্রাণ চেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের চেতনার ধরন থেকে আশ্বস্ত ও স্বস্তি পাওয়ার যে আশা রচিত হয়েছিল কারও কারও হৃদয়ে, তা যেন অনেকটা দুরাশার রূপ নিয়ে থমকে গেছে। সবকিছুই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ যেন অসহায় হয়ে পড়ছে, যা অতীতের দুঃশাসনেরই পুনরাবৃত্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে লাগামহীন বলেই কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করছেন।
আবার কেউ কেউ এমন অভিমত প্রকাশ করছেন যে, বাংলা সংস্কৃতি ও শিল্পীসমাজ আজ হুমকির সম্মুখীন, ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত। নুসরাত ফারিয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, অভিনয়ে ও গানে অনেক শিল্পী ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন। যখন একটি রাষ্ট্রের সরকার কোনো শিল্পীকে কোনো কিছু করতে আহ্বান করে, তখন কার দুঃসাহস থাকে সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার? যেভাবে, যে মানদণ্ডে আজ শিল্পীসমাজকে মূল্যায়ন বা অপরাধী বানাবার পাঁয়তারা চলছে, তাতে ভবিষ্যতে কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্র বা গান এই দেশে হবে না এবং এইসব চলচ্চিত্রে বা গানে কোনো শিল্পী অভিনয় বা গান পরিবেশন করতে সাহস পাবেন না, আগ্রহ তো দূরের কথা। ফলে ইতিহাস নামক বিষয়েরও বিলুপ্তি ঘটবে কিংবা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তখন সেই সরকার তার মতো করে ইতিহাস রচনা করবে।
বর্তমান মামলাবাজি দেখে একজন প্রবীণ ভদ্রলোক বেশ রসিকতা করে বলছিলেন, যেভাবে মামলা হচ্ছে তাতে তো ১৮ কোটি জনগণের বিরুদ্ধেই মামলা হতে পারে। কারণ, ১৫ বছর ধরে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহ করেছে। কমবেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কেন তা করল, প্রশ্ন ওঠানো যায়। সুতরাং সবাই অপরাধী। তাদেরও তো গ্রেপ্তার করা লাগে! আবার নুসরাত ফারিয়া ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য অপরাধী হয়েছেন। আর যারা এই চলচ্চিত্রটি দেখেছে, উপভোগ করেছে তারাও তো অপরাধী। সেই সময়ে যে টিকিট বিক্রি হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্ট করে তো অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব, তাই না?
আসলে হচ্ছেটা কী? এককথায় জবাব হতে পারে, আইনের শাসনের বারোটা বেজে যাচ্ছে। আইনের অপব্যবহার হচ্ছে যত্রতত্র এবং সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। নুসরাত ফারিয়ার ঘটনাটি তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে বয়স কত, আর কত অল্প বয়স থেকে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন অভিনয়ের মাধ্যমে? সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলার কথা বলা হয়েছে। এইসব অভিযোগেই নাকি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় যখন হত্যাচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তখন নুসরাত ফারিয়া দেশেই ছিলেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া নন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এমন সব যুক্তিহীন তথ্য ও অভিযোগ শুনে গোটা দেশের মানুষ তাজ্জব বনে গেছে, বিস্ময় প্রকাশ করেছে, এ-ও সম্ভব!
ইতিহাসধর্মী কোনো একটি চলচ্চিত্রে কোনো এক চরিত্রে অভিনয় করাটা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে? রীতিমতো আকাশ থেকে পড়া যাকে বলে! লোকটা আসলেই আইনজীবী তো, নাকি কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধি? কারও কারও মনে সংশয় দেখা দিল—এমন যুক্তিতে কখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় কি না, গ্রেপ্তার হয় বা হয়েছে কি না এর আগে? এমন বিস্ময়কর প্রশ্নের জবাব কিন্তু খুঁজতে কমবেশি সবাই নড়েচড়ে বসেছে। সম্ভবত বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই যে, কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্রের কোনো একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কোনো অভিনয়শিল্পীকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে।
বলা বাহুল্য, এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামীবিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছে। তারা মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণ বলে তো সর্ববৃহৎ একটা অস্তিত্ব আছে, যে কিনা সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে। ন্যায় ও অন্যায় যারা বেশ ভালো বোঝে। নিরীহ হয়ে জীবনযাপন করলেও সময়মতো তারা প্রচণ্ড আওয়াজ তোলে, সরব হয়। সঠিক জবাব দিতে ভুল করে না।
এই ঘটনায় অনেকের মনে এই প্রশ্নও জেগেছে যে, মুজিব চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের অভিযোগে যদি নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাহলে হাসিনার মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বর্তমান সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার স্ত্রী তিশাকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? যাঁকে ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে তাঁর সঙ্গে তো এই দুজন স্বামী ও স্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবিও রয়েছে, কেউ কেউ সেই কথা বলতে শুরু করেছেন। এমনও লোকে বলে, সখ্যও ছিল। কয়েকটা ছবি ভাইরালও হয়েছে। এসব কিন্তু মোটেও দোষের নয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই দেশের জনপ্রিয় ও গুণী ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে তো তাঁদের ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে, থাকতে পারে দু-একটা ছবিও। সেটা হোক অতীত বা বর্তমান। তাহলে? তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, উপদেষ্টার স্ত্রী হওয়াতে কি তিশা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন? কঠিন বৈষম্য তো তবে এখানেই থাকছে—ইত্যাদি ইত্যাদিতে মুখরিত উৎসুক জনগণের মন। এমন প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক।
যাহোক, অভিনয়ের জন্য গ্রেপ্তার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অফিস-আদালত, চায়ের টেবিলে ঘুরেফিরে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বেশি রকম আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকে। তীব্র প্রতিবাদ, সমালোচনা ও তাঁর মুক্তির পক্ষে দাবি ওঠে। সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা বলেই ফেলেন, নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিব্রতকর। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বাইরেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। অনেকে মনে করেন যে এসব কারণে জামিনের জন্য শুনানির নির্ধারিত দিনের আগেই নুসরাত জামিন পেয়ে যান। কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই নুসরাতকে তড়িঘড়ি করে জামিনে কারামুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে নানান সংস্কারের কথা বলছিল, তাতে জনসাধারণের মনে একধরনের কৌতূহল ও অধীর অপেক্ষা তৈরি হয়েছিল। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তারা উদগ্রীব ছিল। না বললেই নয় যে আজ তাদের অনেকেই বিব্রত, আশাহত। যা হচ্ছে, ঘটছে তাতে সবার মাঝেই কমবেশি নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত থাকছে সাধারণ মানুষ। মব সংস্কৃতি, ভুয়া মামলা, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, প্রায় অচল শিক্ষাঙ্গন, তরুণদের মধ্যে অত্যধিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিপ্রীতি, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। আর এসব ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথিত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধাচরণ করার নামে, অজুহাতে।
প্রতিহিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা রাজনীতির এক ভয়ংকর অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ জনগণ এমন পরিস্থিতি থেকে সব সময়ই পরিত্রাণ চেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের চেতনার ধরন থেকে আশ্বস্ত ও স্বস্তি পাওয়ার যে আশা রচিত হয়েছিল কারও কারও হৃদয়ে, তা যেন অনেকটা দুরাশার রূপ নিয়ে থমকে গেছে। সবকিছুই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ যেন অসহায় হয়ে পড়ছে, যা অতীতের দুঃশাসনেরই পুনরাবৃত্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে লাগামহীন বলেই কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করছেন।
আবার কেউ কেউ এমন অভিমত প্রকাশ করছেন যে, বাংলা সংস্কৃতি ও শিল্পীসমাজ আজ হুমকির সম্মুখীন, ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত। নুসরাত ফারিয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, অভিনয়ে ও গানে অনেক শিল্পী ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করেছেন। যখন একটি রাষ্ট্রের সরকার কোনো শিল্পীকে কোনো কিছু করতে আহ্বান করে, তখন কার দুঃসাহস থাকে সেই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার? যেভাবে, যে মানদণ্ডে আজ শিল্পীসমাজকে মূল্যায়ন বা অপরাধী বানাবার পাঁয়তারা চলছে, তাতে ভবিষ্যতে কোনো ইতিহাসধর্মী চলচ্চিত্র বা গান এই দেশে হবে না এবং এইসব চলচ্চিত্রে বা গানে কোনো শিল্পী অভিনয় বা গান পরিবেশন করতে সাহস পাবেন না, আগ্রহ তো দূরের কথা। ফলে ইতিহাস নামক বিষয়েরও বিলুপ্তি ঘটবে কিংবা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তখন সেই সরকার তার মতো করে ইতিহাস রচনা করবে।
বর্তমান মামলাবাজি দেখে একজন প্রবীণ ভদ্রলোক বেশ রসিকতা করে বলছিলেন, যেভাবে মামলা হচ্ছে তাতে তো ১৮ কোটি জনগণের বিরুদ্ধেই মামলা হতে পারে। কারণ, ১৫ বছর ধরে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহ করেছে। কমবেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কেন তা করল, প্রশ্ন ওঠানো যায়। সুতরাং সবাই অপরাধী। তাদেরও তো গ্রেপ্তার করা লাগে! আবার নুসরাত ফারিয়া ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য অপরাধী হয়েছেন। আর যারা এই চলচ্চিত্রটি দেখেছে, উপভোগ করেছে তারাও তো অপরাধী। সেই সময়ে যে টিকিট বিক্রি হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্ট করে তো অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব, তাই না?
আসলে হচ্ছেটা কী? এককথায় জবাব হতে পারে, আইনের শাসনের বারোটা বেজে যাচ্ছে। আইনের অপব্যবহার হচ্ছে যত্রতত্র এবং সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। নুসরাত ফারিয়ার ঘটনাটি তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে
২৩ মে ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে
২৩ মে ২০২৫
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেএম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে
২৩ মে ২০২৫
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেড. মো. শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমনটাই বলছিলেন যে, ১৫ বছর ধরে অভিনয় ও গানে ফ্যাসিস্ট সরকারকে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া একজন। তিনি ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছেন। আবার ১৫ বছরের প্রসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়ার আসলে
২৩ মে ২০২৫
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে