Ajker Patrika

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ৪১
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বড় পরিবর্তন এসেছে। শেখ হাসিনাকে ভারতের নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু হাসিনার বিরুদ্ধে তীব্র জন-অসন্তোষ এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে হাসিনার ঘনিষ্ঠতা—দুটোই এখন সম্ভবত ভারতবিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে। হাসিনা এখন ভারতে আশ্রিত। বাংলাদেশে রেখে গেছেন ভারত–বাংলাদেশ তিক্ত সম্পর্ক, যা এখন গত তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এই ঘটনাপ্রবাহের সর্বশেষ সংযোজন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বেইজিং সফর। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও অন্য চীনা নেতাদের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। দুই পক্ষ বেশ কয়েকটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে।

এই সফরের প্রভাব, ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশের রাজনীতির সর্বশেষ ঘটনাবলি নিয়ে দ্য হিন্দুর ফ্রন্টলাইন ম্যাগাজিন কথা বলেছে বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশেষজ্ঞ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি ঢাকাভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিরূপণে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। এটি গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে। শ্বেতপত্রের প্রধান পর্যবেক্ষণ ছিল—দুর্নীতি মারাত্মকভাবে দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। গত ১৫ বছরে শুধু অর্থ পাচারের কারণে বাংলাদেশ বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।

ফ্রন্টলাইনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকের জন্য বাংলায় অনুবাদ করা হলো:

ফ্রন্টলাইন: অধ্যাপক ইউনূসের চীন সফর নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। তিনি বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং তিস্তা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প ও সমুদ্র সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলেও বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে তখন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি বাধা সৃষ্টি করেছে বলে মনে হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি কি মনে করেন যে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বর্ধমান সহযোগিতা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারে?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: চীন সব সময়ই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অংশীদার ছিল, যেমনটা আপনি উল্লেখ করেছেন। এমনকি আগের সরকারের আমলেও। বস্তুত, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এই সম্পর্ক কেবল বেড়েছে।

ভারতীয়দের জন্য এই সফরকে একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যাক—বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য অনুরোধ করেছিল। আমি যদি প্রধান উপদেষ্টার চিন্তাভাবনা সঠিকভাবে বুঝে থাকি, তবে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করা। দুর্ভাগ্যবশত, সেটি হয়নি।

ভারত সরকারের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনা যখন ক্ষীণ হয়ে আসে, তখনই বাংলাদেশ সরকার চীন সফরের তারিখ চূড়ান্ত করে। এটি অন্যভাবেও ঘটতে পারত—প্রথমে ভারত, তারপর চীন। যদি আপনি সাম্প্রতিক ইতিহাস দেখেন—যখন অধ্যাপক ইউনূস ক্ষমতায় এলেন, তখন দিল্লি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছিল এবং তিনি সাউদার্ন কনফারেন্সে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সাড়া দিয়েছিলেন। এটি পারস্পরিক সৌজন্য ছিল।

পরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছিল, যেখানে আমিও প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। এরপর আপনাদের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা সফর করেন।

এসব অগ্রগতি বিবেচনা করে আমরা অনেকেই যৌক্তিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা জানি যে, ভারত আমাদের অনুরোধের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। তাই, যখন এটি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর ভারতের সঙ্গে হবে না, তখন সরকার চীনের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যায়।

চীনে অভ্যর্থনা ছিল অভূতপূর্ব। প্রধান উপদেষ্টা বোয়াও ফোরামে অংশ নিয়েছেন, শীর্ষ সরকারি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য মুক্তবাজার সুবিধাসহ একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আলোচনায় তিস্তা নদী এবং বৃহত্তর বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি রোগীদের ভিসা প্রদান কঠিন করায়, বাংলাদেশ এখন কুনমিং ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালুর কথা বিবেচনা করছে, যাতে চীনে চিকিৎসা পর্যটন সহজ হয়।

ফ্রন্টলাইন: আপনি যেমনটা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, সম্পর্ক উন্নয়নের দায়িত্ব এখন ভারতের। ভারতের কী করা উচিত?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: উত্তরটি সহজ—ভারতকে আত্মসমালোচনা করতে হবে। কী ভুল হয়েছে, এটি তাদের বুঝতে হবে। ভারতীয় সরকার ক্ষমতাচ্যুত (হাসিনা) সরকারকে অস্বাভাবিক নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে এবং অনেক বাংলাদেশি ভারতকেই স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য দায়ী করে। ভারত যদি সম্পর্ক পুনঃস্থাপন বা ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়, তবে প্রথমে তার অতীত দৃষ্টিভঙ্গির পর্যালোচনা করতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে, ভুল হয়েছিল কিনা।

দ্বিতীয় বিষয়টি আরও সম্মুখে। যতক্ষণ পর্যন্ত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সমীকরণে একটি ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে থাকবেন, ততক্ষণ সম্পর্ক উন্নয়ন সহজ হবে না। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দেওয়া এক বিষয়, আর সেই ব্যক্তিকে নির্বাসনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অনুমতি দেওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এটিকে বৈরী কাজ হিসেবেই দেখা হবে।

সুতরাং, এই দুটি প্রধান বিষয়—প্রথমত, আত্মসমালোচনা এবং দ্বিতীয়ত, পলাতক প্রধানমন্ত্রীকে সমীকরণ থেকে বাদ দেওয়া।

ফ্রন্টলাইন: ভারতের আত্মসমালোচনা প্রয়োজন—আমি আপনার এই বক্তব্যটি আরও বিশদভাবে জানতে চাই। আপনার মতে, বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারত কী বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: যারা বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের নীতিনির্ধারণ করতেন, তাঁরা মূলত এটিকে নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। এমনকি যখন তাঁরা উন্নয়ন প্রকল্প ও যোগাযোগের বিষয় বিবেচনা করেছেন, তখনো সেগুলোকে নিরাপত্তার নিরিখে সাজিয়েছেন।

কোনো দেশের ভূখণ্ডই যেন আরেক দেশে বিদ্রোহ বা হামলার জন্য ব্যবহৃত না হয়—এমন একটি ‘রেড লাইন’ বা বিপদ রেখা টানার বিষয়টি বোধগম্য। কিন্তু এই নিরাপত্তা কেন্দ্রিক নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে ভারত এমন একটি সরকারকে বৈধতা দিয়েছে, যে সরকার পরপর তিনটি প্রতারণামূলক নির্বাচন করেছে।

যখন অনেক আন্তর্জাতিক অংশীদার এ ধরনের সরকারের সঙ্গে যুক্ত হতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, তখন ভারত নিঃশর্ত সমর্থন জুগিয়েছে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশিরা ভারতকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ‘বাড়াবাড়ির’ সহযোগী হিসেবে দেখে। ভারতের ভুল ছিল কেবল আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতৃত্বের ওপর বিনিয়োগ করা এবং অন্যান্য অংশীজন—নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত ও বিরোধী দলকে উপেক্ষা করা। এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ নেই, ভারত বাংলাদেশে তার প্রধান মধ্যস্থতাকারীকে হারিয়েছে।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, গত বছরের ৫ আগস্টের বিপর্যয়। যখন আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দিল্লি—বা ভারতের কোথাও—পালিয়ে যান। কিন্তু, তারপরও ভারতের বয়ান বদলায়নি। সাউথ ব্লক বা অন্য কোথাও ক্ষমতার কেন্দ্রে যারা আছেন, তাঁরা সম্পর্কের প্রতিফলন, পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠনের পরিবর্তে এখনো সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রেখেছেন।

আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, কীভাবে ভারতীয় মিডিয়া ভুল খবর ও আধা–সত্য প্রচার করছে। হ্যাঁ, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে এবং অন্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে যুক্ত ছিলেন। তবে, এই ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত করে বলা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি করেনি।

এমনকি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যখন প্রধান উপদেষ্টা উপ–আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সেভেন সিস্টার্সকে (উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য) সংযুক্ত করার কথা বলেছিলেন, তখন ভারতের পক্ষ থেকে সামান্যতম সাড়াও পাওয়া যায়নি। এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, ভারতীয় পক্ষ বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আর আগ্রহী নয়, যেখানে এটি একটি বৈধ প্রশাসন এবং তারা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ফ্রন্টলাইন: আপনি যেমনটা বলছিলেন—ভারত সরকার হাসিনাকে কঠিন সময়ে সমর্থন জুগিয়েছে এবং এখনো করছে। কিন্তু এর তো একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে, তাই না? বিএনপির শাসনামলে ভারত বাংলাদেশকে নিয়ে বেশ কিছু নিরাপত্তা উদ্বেগে ভুগেছে। আপনারা যে ‘রেড লাইন’—এর কথা বলছিলেন—একে অপরের ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা না করা—তা কিন্তু কঠোরভাবে মানা হয়নি। সুতরাং, ভারত একেবারে হঠাৎ করেই শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়নি। বাংলাদেশে কি এর কোনো স্বীকৃতি আছে?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার এসেছে—এরশাদের, খালেদা জিয়ার এবং শেখ হাসিনার সরকার। ভারতেও এসেছে। কিন্তু অন্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যেমন ভারত সরকারের ধরন কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে কোনো প্রভাব খাটাতে বা নির্দেশ দিতে যাই না। তেমনই, ভারতেরও শেখা উচিত বাংলাদেশের জনগণ যে সরকারকেই বেছে নিক না কেন, তাদের মেনে নেওয়া এবং তাদের সঙ্গেই কাজ করা। কোনো জনসমর্থনহীন সরকারকে কৃত্রিমভাবে সমর্থন দেওয়া বা স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়।

এই ধরনের পন্থা হিতে বিপরীত হতে পারে। আমাদের ইতিহাসে আগে কখনো ভারতবিরোধী মনোভাব এত তীব্র ছিল না। কেন? কারণ, মানুষ বিশ্বাস করে যে, হাসিনার শাসন টিকিয়ে রাখার পেছনে দিল্লির একটা বড় রকমের দায় আছে। এখন, সেই ধারণা হয়তো পুরোপুরি সঠিক নয়, কিন্তু রাজনীতিতে ধারণাই বাস্তবতা। এমনকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সম্প্রতি পার্লামেন্টে এক আলোচনায় স্বীকার করেছেন, তাঁরা হাসিনাবিরোধী মনোভাবের ব্যাপারে অবগত ছিলেন, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। যেটা চোখে পড়ার মতো, সেটা হলো, সেই উপলব্ধি থেকে কোনো যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারা।

ফ্রন্টলাইন: আপনি বারবার ‘চাপানো’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। এর অর্থ কী? শেখ হাসিনাকে তো ভারত নির্বাচিত করেনি...

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ঠিক এখানেই সমস্যা—১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনাকে কেউ–ই নির্বাচিত করেনি। অথচ, আমাদের বড় প্রতিবেশী এখন এমন আচরণ করছে যেন তিনি (হাসিনা) বিশ্বসেরা। ভারত তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে, উদ্‌যাপন করেছে এবং বৈধতা দিয়েছে, এমনকি যখন অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তি—ওইসিডি জোটভুক্ত দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যরা—অনেক বেশি সতর্ক ছিল।

ফ্রন্টলাইন: ভারতের দুই প্রধান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী—চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ এবং তাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে এবং অধ্যাপক ইউনূস এইমাত্র বেইজিং সফর করে এসেছেন। এই বিষয়গুলো কি ইঙ্গিত দেয় না যে উভয় পক্ষেরই কিছু দায়িত্ব রয়েছে? এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী করতে পারে?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। যখন বাংলাদেশ চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছিল, তখনো একই ধরনের নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল—এটি শেখ হাসিনার আমলেই ঘটেছিল। সবগুলো দেশের নিজস্ব নিরাপত্তা উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু তার জন্য প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার গতিশীলতাকে বিপন্ন করা উচিত নয়।

এখানে আসল বিষয় হলো, দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বা আঞ্চলিক—যেকোনো সমস্যার সমাধানে আমাদের আলোচনার একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার। এমন একটি জায়গার প্রয়োজন যেখানে উদ্বেগগুলো তুলে ধরা যায়, মতামত শোনা যায় এবং পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করতে অস্বীকার করে ভারত ঠিক সেই সুযোগটিই হারিয়েছে।

ভারত এর আগেও একই ধরনের ভুল করেছে। নেপালের দিকে তাকান। ভারত যখন অবরোধ আরোপ করেছিল, তখন নেপালে পুরো একটি প্রজন্মের সদিচ্ছা তারা পায়ে ঠেলেছে। একই চিত্র শ্রীলঙ্কায়ও দেখা গেছে। সুতরাং, আসুন আমরা স্বীকার করি যে—ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়শই বিপরীত ফল দিয়েছে।

এখন, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, ভারত বিশাল, অভিজ্ঞ এবং সক্ষম দেশ। দেশটিকে পরামর্শ দেওয়ার অবস্থানে আমি নেই। তবে আমি মনে করি, শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, সামগ্রিকভাবে আমরা কীভাবে উন্নতি করতে পারি, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমরা ট্রাম্প (ডোনাল্ড ট্রাম্প) যুগে রয়েছি, যেখানে গাজা থেকে গ্রিনল্যান্ড হয়ে গ্রিস পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সম্পর্কগুলো পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া কোথায় দাঁড়িয়ে?

ফ্রন্টলাইন: কিন্তু ২৬ মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় দিবসে মোদি ইউনূসকে লিখেছিলেন যে, ভারত পারস্পরিক সংবেদনশীলতা ও একে অপরের স্বার্থ ও উদ্বেগের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এই অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ঢাকা এটাকে কীভাবে দেখছে?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এটি সুলিখিত বিবৃতি ছিল এবং যথেষ্ট প্রশংসাও ছিল। এটি ছিল জাতীয় দিবসের বিবৃতি—এটি একটি কূটনৈতিক প্রথা। কিন্তু দিনের শেষে, আসল পরীক্ষা কর্মে, কথায় নয়। প্রথমত, অর্থনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে। বাণিজ্য চলছে। ভারতীয় ঠিকাদাররা বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে কাজ করে যাচ্ছেন। ঋণ ছাড়ের বিষয়টি ধীর গতিতে চলছে, তবে এখনো বহাল আছে। অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা অব্যাহত। এরপর রয়েছে দ্বিতীয় বাস্তবতা—একটি পরাবাস্তবতা। যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি অংশের মধ্যে তীব্র ভারতবিরোধী মনোভাব।

সুতরাং, বাংলাদেশে আজ বাস্তবতা ও পরাবাস্তবতা সহাবস্থান করছে। দেশ এক ধরনের ‘ক্যাটালাইটিক’ বা বিভিন্ন অনুঘটক প্রভাবিত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫–১৭ বছরে জমে থাকা সমস্ত নেতিবাচক আবেগ এবং তার আগের ঐতিহাসিক মনোভাবের ‘সাবলিমেশন’ (আগের অবস্থা থেকে মধ্যবর্তী কোনো অবস্থায় না গিয়েই সরাসরি নতুন কোনো অবস্থায় উপনীত হচ্ছে) ঘটছে।

ফ্রন্টলাইন: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজার ৪০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং ২০২৫ সালে (এখন পর্যন্ত) ৭২টি ঘটনা ঘটেছে। আপনি কি বলবেন এই পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এ ধরনের ঘটনা গণনার একাধিক উপায় আছে। কেউ অস্বীকার করে না যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। পুলিশবাহিনী বিপর্যস্ত ছিল। কিছু সময়ের জন্য নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর হাতে চলে গিয়েছিল, তবে পরিস্থিতি অস্থির ছিল।

উপরন্তু, বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ঐতিহাসিকভাবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। সুতরাং, কিছু ক্ষেত্রে, কোনো হিন্দু ব্যক্তির ওপর হামলা তাঁর ধর্মের কারণে ছিল নাকি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমর্থক হওয়ার কারণে ছিল, তা আলাদা করা কঠিন।

তবে, আরেকটি দিক বিবেচনা করার আছে। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন হিন্দু ও বৌদ্ধরা—ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। একইভাবে, ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন মুসলমানরা—বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং, ভারত যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে হওয়া আচরণ নিয়ে মন্তব্য করে, তখন দেশটিকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তার নিজের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী আচরণ হচ্ছে সেটাও অন্যরা খতিয়ে দেখছে।

ফ্রন্টলাইন: বাংলাদেশের একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে আপনি কতটা নিরাপদ বোধ করেন?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: হয়তো আমি এর জন্য সেরা উদাহরণ নই। আমি দুবার ভারতে শরণার্থী হয়েছিলাম। প্রথমবার, ১৯৬০–এর দশকের দাঙ্গার পর—১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। কিন্তু আমার বাবা–মা কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। আমি ফিরে এসেছি, আমার মাতৃভূমিতে বিনিয়োগ করেছি এবং এখানেই আমার জীবন গড়েছি। আমি আমার দেশের জন্য অবদান রাখতে গিয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদ ছেড়ে দিয়েছি।

আমার পরিবারের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার মা শেখ হাসিনার দলের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন এবং আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো আমার পেশাদারি এবং তথ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে না।

ব্যক্তিগতভাবে, আমি বাংলাদেশে থাকার ঝুঁকিগুলো মেনে নিয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি যে, পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি যেখানে একটি ভূমিকা রাখে, এমন যেকোনো দেশের যেকোনো নাগরিকের জন্যই এ ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান। আমি আরও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের—হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর—সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তির প্রতি এই অঙ্গীকারই জাতি গঠনের মূল ভিত্তি।

ফ্রন্টলাইন: জাতি গঠন এবং বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল শক্তির উপস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় আপনি দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? বিশেষ করে, প্রস্তাবিত সাংবিধানিক পরিবর্তনগুলো যেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুত্ববাদ’–এর কথা বলা হয়েছে? এ ছাড়া, কিছু লোক ইতিহাসের বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: প্রথমত, সংবিধানের বিষয়ে বলি। এটি একটি কমিশন রিপোর্ট—এটি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। এটি চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে একটি। এই পর্যায়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো অপরিণত কাজ হবে, কারণ এটি এখনো পর্যালোচনাধীন।

দ্বিতীয়ত, যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজে মানুষের ভিন্ন মত থাকে। কেউ অজ্ঞতা, আদর্শ বা রাজনৈতিক লাভের জন্য চরমপন্থী মত প্রকাশ করতে পারে। যদি আমি শুধু কিছু লোকের বাংলাদেশিদের ‘উইপোকা’ সম্বোধনের ভিত্তিতে ভারতকে বিচার করি, তবে তা ভারত সরকার এবং সমাজের প্রতি অবিচার করা হবে। একইভাবে, বাংলাদেশে কিছু লোক ইতিহাস পুনর্লিখন চায়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের মতামত জাতীয় নীতি নির্ধারণ করবে।

ফ্রন্টলাইন: আপনি শুরুতে যে মূল বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গে এবার আসা যাক—শেখ হাসিনার দিল্লিতে অবস্থান নিয়ে। ভারত তাঁকে ফেরত পাঠাবে—বাংলাদেশ কি আদৌ এই দাবি থেকে সরে আসতে পারবে? এই দাবি কতটা জোরালো?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি মনে করি, এই দাবি যথেষ্ট জোরালো। কারণ, বিচার প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। মামলার নথি তৈরি হচ্ছে এবং অ্যাটর্নি জেনারেল ও সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয় এ নিয়ে কাজ করছে। এমনকি, বাংলাদেশ বিষয়টি হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে নিয়ে যাওয়ার কথাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। বিভিন্ন আইনি উপায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তাঁর উপস্থিতি ছাড়াই আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

তবে শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে অন্য একটি প্রশ্নও রয়েছে। কাউকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া এক কথা, আর আশ্রয়দানকারী দেশের আতিথেয়তা গ্রহণ করে সেই ব্যক্তিকে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। ধরুন, দালাইলামা যদি প্রতিদিন চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বক্তৃতা দেন, তাহলে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?

ঠিক এটাই ঘটছে। আমরা বহুবার, এমনকি সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমেও স্পষ্ট জানিয়েছি, তাঁকে আশ্রয় দেওয়া ভারতের সিদ্ধান্ত, তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এমন কোনো প্রকার ‘মেগাফোন কূটনীতি’ অর্থাৎ জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা—তাঁর উচিত নয়। যখন এমনটা ঘটে, তখন এর পরিণতির জন্য আশ্রয়দানকারী দেশও কিছু অংশে দায়ী থাকে।

ফ্রন্টলাইন: আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক—তাদের কি নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি যেমনটা বলেছি, সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে—দলটিকে নিষিদ্ধ করা হবে না। তবে দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জোরালো দাবি রয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টা তা স্বীকারও করেছেন। সরকারের অবস্থান হলো—যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু দল হিসেবে কাউকে নিষিদ্ধ করা হবে না।

এই মুহূর্তে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বা অনুপস্থিতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নয়। বরং, তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে বেশি আলোচনা করাটা অপ্রয়োজনীয় হতে পারে। কারণ, তারা নিজেরাই এর জন্য প্রস্তুত নয় এবং তাদের নেতৃত্ব সম্ভবত তাদের এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেও দেবে না।

নির্বাচন হবে—প্রধান উপদেষ্টা তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এই বছরের শেষ নাগাদ বা বড়জোর আগামী বছরের জুনের মধ্যে তা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে, এবং এর পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়াও চলবে।

আসল প্রশ্ন হলো, ভারত কি সমাধানের অংশ হবে নাকি সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলবে? যদি ভারতের নীতি তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে সত্যি বলতে, সেটি একটি বিপজ্জনক পথ।

ফ্রন্টলাইন: এটা তো বেশ হতাশাজনক চিত্র...

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একেবারেই না! আমরা এই মুহূর্তটিকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছি। জনজাগরণের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি বড় অর্জন।

ফ্রন্টলাইন: কিন্তু যখন আপনি বলেন যে, দেশ বড় ধরনের পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং তারপর আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পোড়ানোর মতো ঘটনা দেখি—এটি উদ্বেগজনক বার্তা দেয়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: হ্যাঁ, ওই বাড়ি পোড়ানো একেবারেই ভুল ছিল—এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের এটাও জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, কোন বিষয়গুলো মানুষকে এমন চরম পদক্ষেপ নিতে চালিত করে? এ ধরনের চরম প্রতিক্রিয়া কোনো শূন্যতা থেকে জন্ম নেয় না, এর মূলে রয়েছে গভীর ক্ষোভ। এই কাজগুলো সমর্থনযোগ্য নয়, তবে এগুলোকে বুঝতে হবে।

ফ্রন্টলাইন: এটা তো বিপজ্জনক যুক্তি—ভারতে দাঙ্গা লাগলে আমরা এমন কথা শুনি। মানুষ বলে, ‘এটা তো শুধু আবেগ।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: প্রতিটি দেশেই এমন মুহূর্ত আসে—এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আলাদা কিছু নয়। আমি কারও দিকে আঙুল তুলতে চাই না, তবে ভারতও একই ধরনের পরিস্থিতি দেখেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শুধু পরিণতির দিকে না তাকিয়ে কারণগুলো উপলব্ধি করে সহানুভূতি ও সতর্কতার সঙ্গে এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করা।

আপনার মাধ্যমে পাঠকদের কাছে এই আবেদন—রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের সৃষ্ট এই অস্থিরতার সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের সাধারণ ও শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের একটি অভিন্ন ইতিহাস, ভূগোল এবং এমনকি মনস্তত্ত্বও রয়েছে। প্রশ্ন হলো—আমরা কি সেই অভিন্ন ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ হারাচ্ছি?

ফ্রন্টলাইন: এই সংকটের সবচেয়ে বড় শিকার হলো দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া। আগে যেখানে শিক্ষা ও সাহিত্য বিষয়ক নানা আদান-প্রদান, চিকিৎসা পর্যটন সবই চালু ছিল, এখন তা বন্ধ।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: হ্যাঁ, এগুলো দুর্ভাগ্যজনক অপ্রত্যাশিত ক্ষতি। এগুলো সংশোধন করা দরকার। ভারত তার ইতিহাস, শিক্ষা এবং কূটনৈতিক পরিশীলতা নিয়ে অতীতের বেড়াজালে আটকে থাকতে পারে না। গত ছয়–সাত মাস ধরে বাংলাদেশের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হাসিনার সঙ্গে তাদের অতীত সম্পর্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

যারা শেখ হাসিনার দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন, তাঁরাই আজও নীতি নির্ধারণ করছেন এবং তাঁরা তাদের সেই পুরোনো ধারণা হালনাগাদ করেননি। এটা দুর্ভাগ্যজনক!

ফ্রন্টলাইন: কিন্তু বাণিজ্য তো এখনো চলছে, তাই না?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: হ্যাঁ, আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় বাণিজ্যই অব্যাহত। চীন আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, শিল্প উপকরণ এবং আমাদের পোশাক খাতের জন্য ভারতীয় আমদানির ওপর নির্ভরশীল। একই সময়ে, ভারতের উদার শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজার সুবিধার জন্য ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে।

সুতরাং, অর্থনৈতিক দিকটি এখনো প্রাণবন্ত। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে, ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসার অভাবে চলাফেরায় বিধিনিষেধ তৈরি হওয়ায় কিছু বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এখানেই রাজনীতি অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ব্যাহত করছে। এখন এই বিষয়গুলো সমাধানের এবং পারস্পরিক সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সময়।

২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সম্ভবত আরও দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। আসল উদ্বেগ হলো—এই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে কী আমরা এগিয়ে যাব? আমরা কী আরও গভীর অবিশ্বাস নিয়ে বেরিয়ে আসব, নাকি এই মুহূর্তটিকে পুনর্গঠনের জন্য ব্যবহার করব?

দ্য হিন্দুর ফ্রন্টলাইন ম্যাগাজিন থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা'র সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর এখন দেশের মাটিতে। আজ বৃহস্পতিবার ১১টায় ৫৪ মিনিটে তিনি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রথমেই তিনি বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে ধরেন। পরে স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এরপর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কুশল-বিনিয়ম করেন। নিরাপত্তা ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তার জন্য এ সময় তিনি সরকারপ্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কথোপকথনে তারেককে বলতে শোনা যায়, ‘জি জি...আমার জন্য আমার...জি জি...আপনার শরীর কেমন আছে?’

...

‘হ্যাঁ, দোয়া করবেন, দোয়া করবেন।’ ...

‘আমি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনি আপনার পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম আয়োজন করেছেন, বিশেষ করে আমার নিরাপত্তার জন্য। অ্যান্ড উই আর থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ...থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। সব রকম আয়োজনের জন্য।’

...

‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। জি নিশ্চয়ই...ইনশাল্লাহ...ইনশাল্লাহ।’

ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

এরপরই তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ফুলের মালা পরিয়ে জামাতাকে বরণ করেন নেন। নাতনি জাইমাকেও আদর করতে দেখা যায়। তারেক রহমান এ সময় তাঁর পাশে কিছু সময় বসে থাকেন। এরপর বেলা ১২টা ২০ মিনিটে তারেক রহমানে স্ত্রী ও তাঁর মেয়ে সাদা রঙের একটি জিপ গাড়িতে উঠে বসেন।

দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান বেলা ১২টা মিনিটে ৩২ মিনিটে লাল সবুজ রঙে একটি বুলেটপ্রুফ বাসে উঠেন। ২ মিনিট পরে বাসটি বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিটের সংবর্ধনা মঞ্চের দিকে যেতে শুরু করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তাঁর বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আদালত।

অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তুর ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনজন। একইদিনে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে জব্দ করা কার্তুজ ও বুলেট পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত।

ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনজনের জবানবন্দি

গতকাল বুধবার সামিয়া, মারিয়া ও সিপুকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। মামলার তদন্তকর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তিনজনের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে আসামি মারিয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দিনের আদালতে এবং সামিয়া ও সিপু ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনাঈদের আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দিতে তিনজন কী বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগে ও পরে ফয়সাল কি করেছে এবং কি বলেছে সে সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন তিনজন।

এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর এই তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর তিনজনকে আবার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর সামিয়া ও সিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, এ মামলায় গ্রেফতার ফয়সালের মা ও বাবাও স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কার্তুজ-বুলেট ব্যালিস্টিক পরীক্ষা

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ ঘটনাস্থলে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও বুলেট সদৃশ বস্তু পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি ওরফে ওসমান গণি (৩৩) গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোড সংলগ্ন ডিআর টাওয়ারের সামনে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে গত ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নিয়ে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃতদেহ বাংলাদেশ বিমান যোগে দেশে এনে ২০ ডিসেম্বর সকালে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

মামলায় ঘটনাস্থল হতে ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তু আলামত জব্দ করা হয়। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আলামতসমূহ ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদান করার জন্য সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত