Ajker Patrika

১৭ বছরে ভোটার চান ড. ইউনূস, এনসিপির প্রস্তাব ১৬ বছর: যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স ১৬ বছর করার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। গতকাল রোববার সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশমালা কমিশনে জমা দিয়েছে দলটি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে।

গত অগাস্টে শেখ হাসিনার সরকারকে পতনের অভ্যুত্থানে জেন-জি প্রজন্ম তথা কিশোর-তরুণ প্রজন্মের ভূমিকাকে ভোটার হওয়ার বয়স ১৬ বছর করার পক্ষে যুক্তি হিসেবে খাঁড়া করেছে এনসিপি। দলটির মত, অভ্যুত্থানে জেন-জির ভূমিকা বিবেচনায় নিলে ভোটারের বয়স ১৮ বছরে সীমিত রাখা গ্রহণযোগ্য নয়।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, ‘আমরা মনে করছি, ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছর হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, এবারের অভ্যুত্থানকে সারা বিশ্বের জেন-জির অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানে তাদের এত বড় একটা স্টেক তৈরি হলো, এরপর পরিবর্তিত যে বাংলাদেশ এবং আসন্ন যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে তারা মতামত দিতে পারবে না শুধু বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ার কারণে, এটা আমরা যৌক্তিক মনে করছি না।’

এনসিপির বহু আগেই অভ্যুত্থানের নেতাদের আহ্বানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটার করার প্রস্তাব দিয়েছেন। গত বছর ২৭ ডিসেম্বর এক আলোচনায় সভায় তিনি ভোটারের বয়স ১৭ বছর করার পক্ষে মত দেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি মনে করি, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ হওয়া উচিত। নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত্যে পৌঁছার জন‍্য আমি তা মেনে নেব।’

তবে ড. ইউনূস বা এনসিপির এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভোটার ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনি বাধা এবং শিশু অধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরেছেন আইনজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে তিনজন বিশেষজ্ঞ আজকের পত্রিকাকে তাঁদের অভিমত জানিয়েছেন।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম। ছবি: সংগৃহীত

এটা করতে হলে সাংবিধানিক পরিবর্তন ও ঐকমত্য লাগবে: ড. আব্দুল আলীম

১৬ বছর বয়সীদের ভোটার করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এটি করতে হলে সংসদ লাগবে। তার আগে ১৬ বছর বয়সীদের ভোটার করা হবে কি না সে বিষয়ে ঐকমত্য লাগবে বলে মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম।

এ বিষয়ে ড. মো. আব্দুল আলীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্লোভেনিয়ায় ১৬ বছর বয়সী যদি কেউ চাকরিজীবী হয়, তখন তাকে ভোট দিতে দেওয়া হয়। আর এস্তোনিয়ায় ১৬ বছর বয়সীদের শুধু স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভোট দিতে দেওয়া হয়। আমি দু-একটি দেশের উদাহরণ জানি, যেখানে ভোটারের বয়স ১৭ আছে। এ রকম একটি দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। সেখানে বিয়ের বয়সও ১৭। এ ছাড়া বেশির ভাগ দেশে ভোটার হওয়ার বয়স ১৮। তারপরও যেহেতু ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন, তাই তাঁরা মনে করছেন ১৬-তেই ম্যাচিউরড হয়ে যাচ্ছেন।

সংবিধান নতুন করে লেখা বা সংশোধন সংসদ ছাড়া হবে না উল্লেখ করে আব্দুল আলীম বলেন, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অথবা সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন অধ্যাদেশ দিয়েই করা যায়। কিন্তু সংবিধানে তো ভোটার (১৮ বছর) ও প্রার্থী (২৫ বছর) হওয়ার বয়স বলা আছে। কাজেই সংবিধানের কোনো জিনিস পরিবর্তন হলে সংসদ দরকার হয়।

ভোটারের বয়স ১৬ বছর করার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমি সরাসরি এ বিষয়ে কিছু বললাম না। তবে এটি অসম্ভব বলে কিছু না। কিন্তু এটি করতে হলে ঐকমত্য লাগবে। প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩-এর বিষয়ে এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞের মত, ২৩, ২৪, ২৫ কাছাকাছি। আমার মনে হয়, যেটি আছে, ঠিক আছে।’

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত

অযৌক্তিক প্রস্তাব, শিশুরা অধিকার লঙ্ঘন হবে: ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

১৬ বছর বয়সীদের ভোটার করা হলে প্রটেকশনের ক্ষেত্রে শিশুরা বড় আকারে অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

এই আইনজীবী আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেখুন এগুলো শিশুতোষ আলাপ। শিশুরা সম্পত্তির মালিক হতে পারে, কিন্তু আইন অনুযায়ী সরাসরি বিক্রি বা অন্য কিছু করতে পারে না। অভিভাবকের মাধ্যমে করতে হয়। অভিভাবকেরাও নিজে থেকে কিছু করতে পারেন না, আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে সেটি যদি শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ বা বড় করার জন্য ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজন হয় তবে করতে পারেন।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সম্পত্তির অধিকার থেকে শুরু করে কোনো কিছুতেই শিশুর নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আইনগত স্বীকৃতি কোথাও নেই। সেখানে ভোট দেওয়ার মতো বিষয়ে শিশু কীভাবে দেবে? ২০১৩ সালের শিশু আইনে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু। ১৮ বছর হওয়ার পর তার ভোট দেওয়ার অধিকারসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তৈরি হচ্ছে। ১৬ বছর করার যে দাবি, এটি আসলে অর্বাচিন দাবি। এগুলো বিবেচনায় নেওয়ার মতো কোনো সুযোগ নেই।

ভোটারের বয়স কমাতে থাকলে শিশুর প্রটেকশনের জায়গাটা কমে আসবে উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, তারা বুঝছে না আইনের দিকে যে ঝুঁকিটা তৈরি হবে, সেটি সামাল দিতে পারবে না। শিশু আইনে তাদের যাতে জেলের মধ্যে না রাখে, তার জন্য শাস্তি না দিয়ে সংশোধন করার জন্য সংশোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। শিশুর প্রটেকশনের জন্য জাতিসংঘের শিশুসনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। সেটিতে স্বাক্ষর করায় ১৯৭৯ সালের আইন পরিবর্তন করে ২০১৩ সালে নতুন আইন করা হয়েছে। সেখানে শিশুদের প্রটেকশনের ব্যাপার আছে। সেই প্রটেকশন সব উঠে যাবে যখন ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে ১৬-তে নিয়ে আসা হবে।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মতে, ‘১৬ বছর বয়সে সবার মানসিক পরিপক্বতা এতটা কোনোভাবেই হয় না। আমাদের দেশের যে পরিবেশ-পরিস্থিতি তাতে সব ভালো কাজ নয়, সব খারাপ কাজের দায়ভার তার ঘাড়ে পড়বে। এখন আমরা বিতর্ক করতে চাই বা পারি যে এটি তো শিশু আদালতে যাবে, ওতো শিশু, সবকিছু বিবেচনায় ভোটারের বয়স ১৬ বছর করার দাবি আমি অযৌক্তিক বলে মনে করি।’

২৩ বছর বয়সে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘একটি ছেলে আসলে ২৩ বছর বয়সে পড়াশোনা করে মাত্র বের হয়। সে আসলে তখন রাজনীতির কী বোঝে? পরিপক্ব সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তো একটি বয়সের প্রয়োজন হয়। অন্যরা যে পরামর্শই দিক, আমি মনে করি প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২৫ বছর এবং ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর—এটিই ঠিক আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রস্তাব: ড. সাব্বির আহমেদ

ভোটের মতো বিষয়ে ১৬ বছরের একটি ছেলে বা মেয়ে সঠিকভাবে মতামত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। তাঁর মতে, ১৬ বছরে ভোটার করার উদ্যোগটি সঠিক নয়। বরং ১৮ বছর বয়স যেটি আছে, সেটি ঠিকই আছে।

অধ্যাপক সাব্বির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আরেকটি হচ্ছে, ১৬ বছর আপনি কেমনে করেন? আন্তর্জাতিকভাবে শিশুদের সংজ্ঞা আমি যতটুকু জানি, সেটি ১৬ বছর কোনোভাবেই আসে না। সুতরাং এটি করলে দেশীয় আইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনকে সাংঘর্ষিক জায়গায় নিয়ে যাবেন। আমার কাছে যেটি বড় জিনিস মনে হয়, আমি মনে করি ভোটের মতো বিষয়ে একটি ১৬ বছরের ছেলে বা মেয়ে সঠিক মতামত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। এটি আমি মনে করি। এই ধরনের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়।’

প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩ বছর করার বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার বয়স বর্তমানে ২৫ আছে। ২৩ বছর বয়সে একজনের পড়াশোনাই তো সঠিকভাবে শেষ হয় না অনার্স, মাস্টার্স। তো এটি করার মাধ্যমে তরুণদের পড়াশোনার জায়গা থেকে নিরুৎসাহিত করা হবে। ২৩ বছর বয়সের একজন যুবকের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিচক্ষণতা থাকে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ এবং প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৫ যেটি আছে, সেটিই সঠিক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুতে যেতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় একজন সাবেক সাংবাদিক হিসেবে তিনি ‘লজ্জিত’ বলে জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি এই কথা বলেন।

শফিকুল আলমের ইংরেজিতে শেয়ার করা পোস্টের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘গত রাতে, ডেইলি স্টার আর প্রথম আলোর সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে যখন সাহায্যের আকুল আবেদন জানানো ফোন পাচ্ছিলাম, তখন তাঁদের গলা কান্নায় বুজে আসছিল। বন্ধুরা আমার, আপনাদের কাছে আমি বড় অপরাধী; আমি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারলাম না।’

তিনি বলেন, ‘যাঁদের জানানো প্রয়োজন, তাঁদের সবাইকে বারবার ফোন করেছি যাতে দ্রুত সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায়, কিন্তু কোনো সাহায্যই শেষ পর্যন্ত সময়মতো এসে পৌঁছাল না। ভোর পাঁচটায় যখন ঘুমাতে গেলাম, তখন শুধু এটুকুই জেনেছি যে—ডেইলি স্টারের (ভবনের) ভেতরে আটকে পড়া সব সাংবাদিক উদ্ধার পেয়েছেন, তাঁরা নিরাপদ। তবে ততক্ষণে এই দুই পত্রিকা অফিস দেশের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে অন্যতম এক বর্বরোচিত হামলা আর অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’

প্রেস সচিব লিখেন, ‘কী বলে যে আপনাদের সান্ত্বনা দেব, আমার জানা নেই। একজন সাবেক সাংবাদিক হিসেবে শুধু এটুকুই বলতে পারি—আমি লজ্জিত। আমার কেবলই মনে হচ্ছে, যদি বড় একটা কবর খুঁড়ে নিজেকে লজ্জায় সেখানে পুতে যেতে পারতাম!’

এর আগে, গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। সরেজমিন দেখা গেছে, আগুনে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর ভবন দুটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতার ধারাবাহিকতায় নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সহিংসতার ধারাবাহিকতায় নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই অবস্থায় দেশের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি আজ সর্বমহলের। নির্মম হামলায় তরুণ রাজনীতিবিদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত থেকে দেশে যে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাসমূহের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর মব তৈরি করে হেনস্তা করার ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়ংকর বার্তা বহন করে। একই সঙ্গে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে হামলা, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ির ধ্বংসাবশেষে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, রাজশাহী ও খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের নামে জমায়েত এবং চট্টগ্রামে ভারতীয় উপহাইকমিশনের সামনে রাতের বেলা অবস্থান—সব মিলিয়ে একটি সুপরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই ধারাবাহিকতায় একজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে।

আসক মনে করে, সংবাদমাধ্যম, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর এ ধরনের সমন্বিত হামলা দেশে উগ্র ও সহিংস চিন্তার বিপজ্জনক বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়। ছায়ানট দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার কেন্দ্র হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত; সেই প্রতিষ্ঠানে হামলা প্রমাণ করে যে, অসহিষ্ণুতা ও উগ্রতার একটি অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্র ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী কেন সময়মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

আসক আরও মনে করে, সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার বিশেষত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যে সীমাবদ্ধতাগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, তা দুঃখজনক।

আসক অবিলম্বে হাদির মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠ‍ু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তসহ মব সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ নিরাপত্তা এবং জুলাই আন্দোলনের তরুণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায় এই ধারাবাহিক সহিংসতা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিসর এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী সংকট হিসেবে থেকে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির জানাজা আগামীকাল জোহর নামাজের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৯
শরিফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল জোহর নামাজের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল জোহর নামাজের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। ফ্লাইটটির আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। আর তাঁর জানাজা হবে আগামীকাল শনিবার জোহরের নামাজের পর সংসদ ভবন এলাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজা হবে। এর আগে ওসমান হাদির গড়া প্রতিষ্ঠান ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, আগামীকাল জোহর নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ওসমান হাদির জানাজা হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে (ঢাকার সময় বেলা ২টা ৩ মিনিটে) ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ উড্ডয়ন করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বিমানটি সন্ধ্যা আনুমানিক ৫টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।

বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন, মরদেহটি মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে গভীর শোকের আবহ তৈরি হয়েছে।

আজ দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে গ্রহণ করতে আমরা সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান গ্রহণ করব। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে শোকাহত ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩২
হাদির মৃত্যুতে শোকাহত ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস। আজ শুক্রবার দূতাবাস তাদের নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা এক পোস্টে এই শোক প্রকাশ করে।

পোস্টে বলা হয়, ‘শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং শোকসন্তপ্ত সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক সমবেদনা।’

এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। ফ্লাইটটি আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে (ঢাকার সময় বেলা ২টা ৩ মিনিটে) ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ উড্ডয়ন করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বিমানটি সন্ধ্যা আনুমানিক ৫টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।

বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন, মরদেহটি মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে গভীর শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। আজ দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে গ্রহণ করতে আমরা সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান গ্রহণ করব। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।’

ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, আগামীকাল শনিবার জোহর নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ওসমান হাদির জানাজা হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত