Ajker Patrika

এএফপির প্রতিবেদন /রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি, ফেরাতে মস্কো দূতাবাসে অন্তত ১২ পরিবারের আবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ১৭
রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ডজনখানেক পরিবার তাদের সন্তানকে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দেশে ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করেছে। ছবি: এএফপি
রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ডজনখানেক পরিবার তাদের সন্তানকে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দেশে ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করেছে। ছবি: এএফপি

বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজনকে চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়ায়। পরে তাদের পাঠানো হয় ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে। এরই মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় ডজন খানেক বাংলাদেশি পরিবার মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, প্রায় এক ডজন পরিবার তাদের ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ করেছে। পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাদের ছেলেদের ভুল বুঝিয়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়েছে।

মোহাম্মদ আকরাম হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ও তাঁর শ্যালক একটি নিয়োগকারী সংস্থায় নাম লিখিয়েছিলেন। তাদের প্রথমে সাইপ্রাসে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, পরে রাশিয়ায় কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁরা রাজি হলে রাশিয়ায় নিয়ে তাদের যোগ দেওয়ানো হয় রুশ সেনাবাহিনীতে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে পৌঁছাব।’

সম্প্রতি দেশে ফেরা ২৬ বছর বয়সী আকরাম এএফপিকে বলেন, ‘নিয়োগকারী সংস্থা বলেছিল যে, কেবল রাশিয়ার ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া যাচ্ছে এবং আমরা তাতেই রাজি হয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমরা কখনোই ভাবিনি যে, আমাদের এভাবে এমন অবস্থায় ফেলা হবে।’

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। তবে বিগত সরকারের ব্যাপক লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতির অবস্থা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই খারাপ ছিল। সর্বশেষ গত বছর, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসানের পর দেশের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভুক্তভোগী একটি পরিবারের সদস্য মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ (২২)। তিনি গত ২৭ মার্চ রুশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় নিহত হন বলে খবর আসে। এর পর থেকে ইয়াসিনের উদ্বিগ্ন স্বজনেরা মস্কোয় বাংলাদেশি কূটনীতিকদের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছেন। ইয়াসিনের চাচা আবুল হাশেম জানান, ঈদের সময় ইয়াসিনের এক বন্ধু তাদের ফোন করে এই খবর জানান।

আবুল হাশেম এএফপিকে বলেন, ‘ইয়াসিনের বন্ধু নিজেও রুশ পক্ষে যুদ্ধ করছে। সেও বাংলাদেশি। ঈদের দিন সে আমাদের ফোন করে জানায় যে, ইয়াসিন মারা গেছে। পরে, আমরা এক রুশ কমান্ডারের কাছ থেকে ফোন পাই একই বিষয়ে।’

ইয়াসিন শেখের পরিবারের ভাষ্য, তারা তাদের ছেলেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ছাড়ার সময় টাকা দিয়েছিলেন। এক দালাল তাঁকে রাশিয়ায় একটি চীনা কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ তাঁকে দেওয়া হয়নি। পরে সে বছরের ডিসেম্বরে ইয়াসিনকে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়।

আবুল হাশেম বলেন, ‘তাঁকে (বিদেশে) পাঠানোর জন্য আমরা অনেক টাকা খরচ করেছি এবং এখন আমরা তাঁর মৃতদেহের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছি, যাতে তাঁর মা শেষবারের মতো তাঁকে বিদায় জানাতে পারেন—সেই ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করে।’

এএফপি এই পরিবারের দাবি যাচাই করতে পারেনি। তবে মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফারহাদ হোসেন জানান, দূতাবাস এই মৃত্যুর খবর সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক দিন আগে ইয়াসিন শেখের বিষয়ে জানতে পেরেছি এবং বিষয়টি নিয়ে রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, দূতাবাস ইয়াসিনের মৃত্যু বা অন্য কোনো বাংলাদেশি হতাহতের খবর নিশ্চিত করতে পারেনি এবং মস্কোর কাছ থেকে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে, অন্য বাংলাদেশিরা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের কাছ থেকে তাদের ছেলেদের সম্পর্কে জানতে চেয়ে অনুরোধ পাচ্ছি এবং এ পর্যন্ত আমরা প্রায় এক ডজন অনুরোধের জবাব দিয়েছি।’

ইউক্রেন যুদ্ধ রুশ সেনাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে এবং মস্কো যুদ্ধের জন্য আরও সেনা সংগ্রহের জন্য বিশ্বব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই জানায়নি যে, তাদের সেনাবাহিনীতে কতজন বিদেশি নাগরিক কর্মরত আছেন বা তারা কতজনকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরে রেখেছে।

ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো কয়েকটি দক্ষিণ এশীয় দেশ থেকে আসা সৈন্যদের রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার খবর ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। তাদেরও কাজের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। এই বিষয়ে ফরহাদ হোসেন এএফপিকে বলেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, মস্কোর পক্ষে যারা যুদ্ধ করছেন তারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, বেতন পাচ্ছেন এবং যুদ্ধের নিয়মকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছেন।’

কতজন বাংলাদেশি রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে, তা ফরহাদ হোসেন নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও একটি বাংলাদেশি সংবাদপত্র নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, এই সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মানবপাচারের অভিযোগে এক বাংলাদেশি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

রুশ সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসার দাবি করা আকরাম মোহাম্মদ আকরাম হোসেনই প্রথম ব্যক্তি যিনি তাঁকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া পাচারকারী চক্র সম্পর্কে বাংলাদেশি পুলিশকে সতর্ক করেন। তিনি জানান, তিনি ১০ জন বাংলাদেশির একটি দলের সঙ্গে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব যান।

আকরাম হোসেন বলেন, ‘সেখানে কয়েক সপ্তাহ থাকার পর আমরা রাশিয়ায় যাই।’ তিনি জানান, এরপর তাঁকে রাশিয়ায় একটি চুক্তিপত্র দেওয়া হয়। তবে তিনি বুঝতে না পারলেও, অর্থের সংকট থাকায় তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে আমাদের বাসে করে একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই আমরা রাত কাটাই। পর দিন, তারা আমাদের কয়েকজনকে সামরিক পোশাক দেয় এবং প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যায়।’

আকরাম হোসেন আরও জানান, লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার আগেই তিনি সেনেগালের একদল লোকের সঙ্গে পালিয়ে যান এবং দেশে ফিরতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘কয়েক হাজার ডলার হারানোর পর আমি ফিরে এসেছি।’ তিনি আরও জানান, তাঁর শ্যালক এখনো রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সে নিয়মিত বাড়িতে ফোন করে, তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের কাছে আকুতি জানাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠেয় জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকেরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিদেশি অতিথিরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে পা রেখেছেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তান সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পা রাখেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর ফাসিহ উল্লাহ খান জানান, বিমানবন্দরে স্পিকারকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, স্পিকারকে বহনকারী ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়েই অবতরণ করে।

এর কিছুক্ষণ আগে, বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের পক্ষ থেকে এই উচ্চপর্যায়ের জানাজায় অংশগ্রহণকে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভুটান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম সামাদ জানান, বিমানবন্দরে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।

আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সমাগম শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রাষ্ট্রীয় জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন তিনবার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। তাঁর শেষ বিদায়ে আজ দেশ শোকাহত। আর শোক ধারণ করে হাজারো মানুষের ভিড় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যেখানে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা।

সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদেরও। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না, কেউ নীরবে বসে আছেন মন ভার করে। পুরো এলাকা জুড়ে শোক আর নীরবতার আবহ।

লালবাগ থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আজ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি, তারেক রহমান যেন দেশের হাল ধরতে পারেন।’

সংসদ-এলাকা

সাভার থেকে আসা দুই বন্ধু স্বপন শেখ ও মো. রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে এভাবে বিদায় দিতে হবে, ভাবিনি। তিনি জীবনে এত ত্যাগ করেছেন, অথচ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর একমাত্র প্রাপ্তি—বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’

বগুড়া থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা মনোয়ার হোসেন মামুন বলেন, ‘এ দেশ যাঁরা শাসন করেছেন, তাঁদের সবার গায়েই কোনো না কোনো কলঙ্ক আছে। কেবল বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কলঙ্ক নেই। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশেই ছিলেন। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিলে তিলে এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর বিচার জনসম্মুখে হতে হবে—যে সরকারই আসুক।’

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপি মনোনীত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

দাফনকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জুড়েই জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় দপ্তর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের সড়কগুলোতেও অবস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তিনি কী কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা চলছে, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৪
খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা চলছে, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত