Ajker Patrika

দলীয় পদই পুঁজি, সম্পদ গড়েছেন কমিশন বাণিজ্যে

  • উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত হয়েছেন।
  • শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে দলের পদ ও কমিশন-বাণিজ্য করে গেছেন অবাধে।
  • নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তাঁর ঘোষিত সম্পদই ২৪ কোটি টাকার বেশি।
দেবাশীষ দত্ত,কুষ্টিয়া
মাহবুব উল আলম হানিফ। ফাইল ছবি
মাহবুব উল আলম হানিফ। ফাইল ছবি

উপজেলা নেতা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত হয়েছেন মাহবুব উল আলম হানিফ। আর আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে দলের এই পদই ছিল তাঁর পুঁজি। নিজ জেলা কুষ্টিয়া ছাড়াও ঢাকা, গাজীপুরসহ একাধিক জেলায় তাঁর সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি কানাডায়ও হানিফের সম্পদ ও ব্যবসা আছে বলেও জানিয়েছে একাধিক সূত্র। কেননা, তাঁর স্ত্রী-সন্তান সেখানেই থাকেন। এই সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে কমিশন-বাণিজ্যই বড় নিয়ামক ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার, ভুক্তভোগী ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা।

আর কুষ্টিয়ার রাজনীতিতে হানিফই ছিল শেষ কথা। দলের প্রতিপক্ষ এবং বিরোধীদের দমনে তিনি সব অস্ত্রই প্রয়োগ করতেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নেতারা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে হানিফ আত্মগোপনে।

হানিফের উত্থান যেভাবে
দলীয় সূত্রে জানা যায়, মাহবুব উল আলম হানিফ শেখ পরিবারের আত্মীয়। মূলত তাঁর বড় ভাই সাবেক সচিব রাশিদুল আলম আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর বোনজামাই। সেই সূত্র ধরে হানিফ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন থেকে মনোনয়ন পান হানিফ। তবে পরাজিত হন। ২০০১ সালেও মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হতে পারেননি। এরপর ২০০৮ সালে মহাজোট গঠনের পর হানিফ মনোনয়নবঞ্চিত হন। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী করা হয়। পরে ২০১৪ সাল থেকে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে তিনবার এমপি নির্বাচিত হন হানিফ। আর দলের কাউন্সিলে পেয়ে যান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর বাড়তে থাকে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি। একাধিকবার একই পদ পেয়ে তা আরও পাকাপোক্ত হয়।

ঘোষিত সম্পদই ২৪ কোটি 
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, তখন হানিফের সম্পদ ছিল ৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৪ টাকা। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, বর্তমানে তাঁর সম্পদ ২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৭ হাজার ১১ টাকা। 

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে একটি সাধারণ মানের গাড়ি থাকলেও বর্তমানে একাধিক দামি গাড়ির মালিক হানিফ। প্রতিটির দাম কোটি টাকার ওপরে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। 

নামে-বেনামে সম্পদ
হানিফের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অফিস। নির্বাচনী হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসার কথা উল্লেখ করেন তিনি। স্ত্রীর নামে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্স নেন। লালন কলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন জেলা পরিষদের নতুন ভবনে।

জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সপ্তম ও অষ্টমতলা মাসে ৩ লাখ টাকায় ভাড়া নেন হানিফ। আর এককালীন দিয়েছিলেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠান সাজাতে বিনিয়োগ করেছিলেন কয়েক কোটি টাকা। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলেও পটপরিবর্তনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে।

দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গত ১৫ বছরে কয়েক শ কোটি টাকা বানিয়েছেন হানিফ। দেশে কয়েকটি বড় কোম্পানির সঙ্গে বেনামে হানিফের ব্যবসা আছে। এ ছাড়া গাজীপুরে পার্টনারে রিসোর্ট, কক্সবাজারে জমিসহ সম্পদ রয়েছে।

কুষ্টিয়ায় হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতার যে মার্কেট, দোকান ও শপিং মল আছে, সেগুলো দুজন মিলেই কিনেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে জেলা পরিষদ অফিস সূত্র জানিয়েছে, তাঁদের নতুন দুটি দোকান নেওয়া আছে কোটি টাকায়।

এ ছাড়া তমিজ উদ্দিন মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে জানান, খেলার মাঠের পাশে দোতলা নতুন যে মার্কেট হয়েছে, সেখানে ৮টি দোকান আছে হানিফ-আতার নামে। দোকানের ভাড়াটেরা জানান, প্রতি মাসে হানিফের ভাই আতা টাকা তুলতেন।

জেলা পরিষদের বটতৈল এলাকায় হানিফ পরিবারের ১২টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, মার্কেট নির্মাণ করার পর এখানে হানিফ তাঁর ভাইয়ের নামে ১২টি দোকান নেন। এসব দোকান থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে। 

শহরের বহুতল বিপণিবিতান পরিমল টাওয়ারেও একাধিক দোকান আছে হানিফ ও আতার নামে। মার্কেট কমিটি জানায়, দুটি দোকানের দাম কোটি টাকার ওপরে। ভাড়া দেওয়া আছে দোকান দুটি। ভাড়া ওঠে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া সমবায় মার্কেটের নিচ ও দোতলায় একাধিক দোকান আছে। সেখানে ব্যবসা আছে হানিফ-আতার।

এদিকে শহরের হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লটের ওপর ১০ তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। প্রতি তলায় ৪টি করে ফ্ল্যাট আছে। হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, হাউজিংয়ের জমির সঙ্গে স্থানীয় একজনের জমি দখল করে এ বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

আতার নামে হলেও পেছনে ছিলেন হানিফ। আর পিটিআই রোডে ৪ কাঠা জমির ওপর তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেন হানিফ। তবে কাগজ-কলমে তা ভাই আতা ও তাঁর স্ত্রীর নামে। প্রথম দিকে লালন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড এ বাড়িতে লাগানো হয়। আতার সম্পদ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করার পর সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

দল ও অন্য কয়েকটি সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়ী অজয় সুরেকারের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় কয়েক কোটি টাকা লগ্নি আছে হানিফের। এসব কারণে অজয় সুরেকাকে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অজয় সুরেকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জোর করে দলীয় পদ দেওয়া ছাড়া হানিফের সাথে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই।’ 

কমিশন-বাণিজ্য
ঠিকাদার ও ব্যবসায়িক অংশীদার সূত্রে জানা গেছে, দলের প্রভাব কাজে লাগিয়ে নদী খননের বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন হানিফ। তাঁর নিজের একাধিক ড্রেজার আছে। সর্বশেষ গড়াই খননের একটি কাজ বাগিয়ে নেন তিনি। সরকারি খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি খরচে তিনি কাজ করেন। এতে তাঁর নিজের ৩টি ড্রেজার কাজে লাগান। প্রতিটি ড্রেজারের দাম ৩০ কোটি টাকার বেশি বলে সূত্র জানিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিতর্কিত একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে বেনামে যৌথ ব্যবসা আছে হানিফের। নদী খনন ও শাসনের কাজ করতেন তাঁরা দুজন। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজের নামে কয়েক কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, সর্বশেষ কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় পদ্মা নদী শাসনের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়। কাজ ভাগাভাগি হয় হানিফের ঢাকা অফিসে বসে। সেখানে হানিফ একাই ৫০০ কোটি টাকার কাজ নিজের কবজায় নিয়ে নেন। এসব কাজ পরে কমিশনে বিক্রি করে দেন।

হানিফের সময়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প, কুষ্টিয়া শহর ফোর লেন সড়ক প্রশস্তকরণ, কুষ্টিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ, শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্প, মুজিবনগর সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বড় বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প থেকে তিনি কমিশন নিয়েছেন বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া নিয়োগ-বাণিজ্য, বালুঘাটের কমিশনসহ অন্যান্য কাজ থেকে যে টাকা আদায় হতো, তা আতার মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন তিনি। সেই টাকা আতা নিজে হানিফের কাছে পৌঁছে দিতেন বলে জানান দলের নেতারা। সর্বশেষ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে হানিফের পছন্দের প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। 

কুষ্টিয়া শহরের ফোর লেন সড়ক নির্মাণকাজের একটি প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হানিফের পার্টনারশিপ থাকা স্প্রেকটা লিমিটেড। এ লাইসেন্সে হানিফ নিজেই কাজ করেন। 

এ ছাড়া মুজিবনগর সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পে গত ৪ বছরে কয়েক শ কোটি টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী ও ঠিকাদারেরা। সব কাজ ভাভাভাগি করেছেন হানিফ ও তাঁর ভাই আতাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা। মুজিবনগর সমন্বিত প্রকল্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকৌশলী জানান, টেন্ডারে বেশির ভাগ কাজ নিতেন আতা। হানিফের নির্দেশে তাঁকে বড় বড় কাজ দিতে হয়েছে। 

প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন
হানিফের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বাদ যাননি দলের নেতা-কর্মীরাও। জেলা যুবদল নেতা আল আমিন কানাই বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে একজন কাউন্সিলর আমার বাসায় গিয়ে জানান, হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতা সাহেব চা খাবেন। আমি বলি, এত বড় নেতার সাথে চা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর থেকে তারা আমার বাড়িতে মাস্তান পাঠিয়ে হেনস্তা করে, আমার নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।’ স্ট্রোকে এখন অসুস্থ আমিন কানাই বলেন, ‘তারা আমাকেসহ দলের বহু নেতাকে গত ১৬ বছরে শেষ করে দিয়েছে।’ 

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. আমিনুল হক রতন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হানিফ-আতা এই দুই ভাইয়ের কারণে কুষ্টিয়ার রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। একক আধিপত্য বিস্তার করে আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে তাঁরা বিচ্যুতি হয়েছিলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, সংসদ ভবনে জানাজার প্রস্তুতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

আজ সকালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে হাদির মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স যোগে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পুনরায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মরদেহের গোসল সম্পন্ন করার পর তাঁকে জানাজার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হবে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

জানাজা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জানাজা উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ এ বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে জানাজায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করবেন। পুরো এলাকা সিসিটিভি ও গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

আগতদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদ ভবন ও এর আশপাশ এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

ওসমান হাদির শেষ বিদায়ে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির জানাজায় অংশ নিতে সংসদ এলাকায় জনস্রোত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
হাদির জানাজায় অংশ নিতে সংসদ এলাকায় ভিড় বাড়ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।
হাদির জানাজায় অংশ নিতে সংসদ এলাকায় ভিড় বাড়ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা আজ শনিবার বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় অংশ নিতে এরই মধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় সংসদ এলাকা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হয়েছে। এ সময় অনেককে স্লোগান দিতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সেখানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সকাল সাড়ে ১০টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এ সময় সংসদ ভবন চত্বরের দুই গেট দিয়ে সাধারণ মানুষ সারবদ্ধভাবে দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করে।

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করে।

জানাজা উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি। নিরাপত্তার স্বার্থে জানাজায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া পুরো এলাকা সিসিটিভি ও গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

ওসমান হাদির জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হতে পারে বিবেচনা করে ট্রাফিক বিভাগ থেকেও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আবার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ওসমান হাদির জানাজা বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শনিবার বেলা আড়াইটার পরিবর্তে বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংসদ ভবন এলাকায় কড়া সতর্কতায় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওসমান হাদির জানাজায় যাঁরা অংশ নিতে আসবেন, তাঁরা কোনো প্রকার ব‍্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন‍্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে সংসদ ভবন ও এর আশপাশ এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে ওসমান হাদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হবে। দাফনের জন্য স্থানটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানেও সকাল থেকে লোকজন জড়ো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোশ্যাল মিডিয়ায় সহিংসতার উসকানিমূলক পোস্টে রিপোর্ট করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৮
সোশ্যাল মিডিয়ায় সহিংসতার উসকানিমূলক পোস্টে রিপোর্ট করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাস-সহিংসতার উসকানিমূলক আহ্বান-সংবলিত পোস্টের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি। এ জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইল আইডি চালু করা হয়েছে।

আজ শনিবার থেকে সেখানে রিপোর্ট (অভিযোগ ও তথ্য) করা যাবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপে এবং ই-মেইলে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করবে।

যে নম্বর এবং ই-মেইলে রিপোর্ট করা যাবে—

হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর: 01308332592,

ই-মেইল: [email protected]

উল্লেখ্য, সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো পোস্ট ‘ডাউন’ করতে অর্থাৎ সরিয়ে দিতে পারে না। সরকার শুধু যৌক্তিক কারণ তুলে ধরে সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত পোস্টগুলো সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের কাছে রিপোর্ট করতে পারে।

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, যা সরাসরি সহিংসতা ঘটায় কিংবা সহিংসতার ডাক দেয়, সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা জাতীয় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সহিংসতা কিংবা অস্থিতিশীলতা তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি দেশ এবং নাগরিকের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হতে জনসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকে একাধিক সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে এসব সহিংসতার উসকানি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সহিংসতায় উসকানিমূলক পোস্টের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যা ও পরবর্তী সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান অ্যামনেস্টির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৯
হাদিকে হত্যা ও পরবর্তী সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান  অ্যামনেস্টির

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এসব ঘটনায় দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা ২৬ মিনিটে এক্স হ্যান্ডলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া রিজিওনাল অফিসের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।

পোস্টটিতে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, হাদি হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময়টিতে সহিংসতায় প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট-এর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির হয়রানির শিকার হয়েছেন।

এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ডে মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে এমন সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ন্যায্য বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের আশ্রয় না নিয়ে আইনসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত