Ajker Patrika

‘অকেজো’ ইভিএমের পেছনে মাসে খরচ ৩৩ লাখ টাকা

  • দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয় ৩,৮২৫ কোটি টাকায়
  • গুদামভাড়ায় গত বছরের পর্যন্ত ব্যয় ৩ কোটি ৯২ লাখ
  • গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী ছিল ৫০ হাজার ইভিএম
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৩০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকেও ইভিএম-সংক্রান্ত অংশ বাদ দিয়েছে বর্তমান ইসি। ভবিষ্যতে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ ‘প্রায় অকেজো’ ইভিএমগুলো রাখতে প্রতি মাসে মাঠপর্যায়ে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা গুদামভাড়া দিতে হচ্ছে কমিশনকে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ওয়্যারহাউসে ইভিএম রাখার ভাড়া হিসাবে বকেয়া রয়েছে ৬২ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের বিষয়টি না থাকায় জটিলতার কারণে এই বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না ইসি। সশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালে দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করা হয়েছিল। ১০ বছরের আয়ুষ্কালের এসব যন্ত্রের বেশির ভাগই ৫ বছরের মাথায় বিকল ও অকেজো হয়ে গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আরপিওর সংশোধনীতে ইভিএম-সংক্রান্ত অংশ বাদ দেওয়ায় যন্ত্রগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি জানি না। বিষয়টি সরকারের নজরেও দেওয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে ইভিএমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নয়টি অঞ্চলের ৪১ জেলায় ইভিএম রাখার গুদাম ছিল। এগুলোর মধ্যে ২০২২ সালের ১ জুলাই ৩০টি, ২২ জুলাই একটি, ২০২৩ সালের ১ মে একটি, ১ জুন একটি, ১ জুলাই তিনটি, ১ আগস্ট একটি, ১ সেপ্টেম্বর দুটি, ১ অক্টোবর তিনটি গুদাম ভাড়া নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ভ্যাটসহ এসব গুদামভাড়া বাবদ দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ভ্যাটসহ ভাড়া দিতে হয়েছে ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো গুদামের ভাড়া প্রতি বর্গফুটে সর্বোচ্চ ১৫ এবং সর্বনিম্ন ৬ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমানে গুদামের সংখ্যা কিছু কমানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, নিজস্ব গুদাম না থাকায় ইভিএম সংরক্ষণে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ইসি সূত্র জানায়, বিএমটিএফ ওয়্যারহাউসে ইভিএম রাখার বকেয়া ভাড়া বাবদ ৬২ কোটি টাকার বেশি দাবি করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের বিষয়টি না থাকায় বকেয়া টাকার বিষয়ে জটিলতা থাকায় পরিশোধ করতে পারছে না ইসি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

ইভিএমের বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করা সমীচীন নয়। ইভিএমসহ ব্যর্থ প্রকল্পের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত ঠেকাতে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি।

সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নেওয়া ইভিএম প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল। ইসির চাহিদার ভিত্তিতে পরে ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করে তৎকালীন সরকার। এরপর আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে দেড় লাখের মধ্যে ৮৬ হাজারের মতো ইভিএম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রায় ৬২ হাজার যন্ত্র রয়েছে মাঠপর্যায়ে। নির্বাচন ভবনে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইভিএম।

সূত্র আরও জানায়, ইভিএমের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরা হলেও ৫ বছরের মাথায় অধিকাংশ অকেজো হয়ে যায়। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৫০ হাজার ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী ছিল। ৬০ থেকে ৭০ হাজার ইভিএম বিকল, তবে মেরামতযোগ্য। বাকিগুলো মেরামতযোগ্য ছিল না। বিগত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসি বলেছিল, ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল বিএমটিএফ। তবে তৎকালীন সরকার সে টাকা দেয়নি। ফলে ইভিএমগুলো সেভাবেই পড়ে রয়েছে।

২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি ইভিএম প্রথম ব্যবহার করা হয়। পরে ছোট ছোট আকারে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়। ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ইভিএমের সমস্যার কারণে পরে আর ইভিএম ব্যবহার করা হয়নি। এরপর কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন সাবেক কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। বিএমটিএফ কমিশনের জন্য ইভিএম তৈরি করে। সেই ইভিএম ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডের ছয়টি কক্ষে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। এরপর দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। তবে ইভিএম কোথায় রাখা হবে, তা প্রকল্পে উল্লেখ না করেই একসঙ্গে এতগুলো কেনা হয়।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৬ জুন একটি পৌরসভার সাধারণ ও চারটি পৌরসভার উপনির্বাচনে সর্বশেষ ইভিএম ব্যবহার করা হয়। ২০২৩ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইভিএমে ১ হাজার ১৪৩টি নির্বাচন করা হয়েছে। সেগুলো হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে, ১৩টি শূন্য আসনে উপনির্বাচন, সাতটি সিটি করপোরেশন, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৭টিতে উপনির্বাচন, ৬১টি জেলা পরিষদে সাধারণ নির্বাচন, ১৮১টি পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন, পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ১৩টিতে উপনির্বাচন, ২২টি উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন, ৬টিতে উপনির্বাচন, ৬৩১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৩টি ইউপির বিভিন্ন ওয়ার্ডে উপনির্বাচন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার-হাতিয়ায় সমুদ্রে মিসাইল ফায়ারিং পরিচালনা, নৌযান চলাচলে সতর্কতা আইএসপিআরের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৭
কক্সবাজার-হাতিয়ায় সমুদ্রে মিসাইল ফায়ারিং পরিচালনা, নৌযান চলাচলে সতর্কতা আইএসপিআরের

২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর কক্সবাজার ও হাতিয়ার মধ্যবর্তী সমুদ্র এলাকায় মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযানকে অবস্থান ও চলাচল এড়িয়ে যেতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে আইএসপিআর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক কক্সবাজার ও হাতিয়ার মধ্যবর্তী সমুদ্র এলাকায় মিসাইল ফায়ারিং পরিচালিত হবে। এ সময় জানমালের নিরাপত্তায় সকল নৌযান, মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উক্ত এলাকায় অবস্থান ও চলাচল পরিহার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তফসিলের পর চার আসনের সীমানা পরিবর্তন করে ইসির গেজেট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পাবনা ও ফরিদপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই চার সংসদীয় আসন হলো পাবনা-১, পাবনা-২, ফরিদপুর-২ ও ফরিদপুর-৪। হাইকোর্ট কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সীমানায় এই পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিলো ইসি।

আজ শুক্রবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

তফসিল ঘোষণার আগে ইসি গাজীপুরের একটি আসন কমিয়ে এবং বাগেরহাটের একটি আসন ফেরত দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছিল কমিশন। এবার তফসিল ঘোষণার পর আরও চারটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনল। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে এমন নজির দেখা যায়নি।

সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার প্রকাশিত গেজেটের তথ্যানুযায়ী, পাবনা-১ আসনের সীমানায় সাঁথিয়া উপজেলা এবং বেড়া উপজেলার বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন, চাকলা ইউনিয়ন ও কৈটোলা ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

পাবনা-২ আসনের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সুজানগর উপজেলা এবং উল্লিখিত একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়ন (বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন, চাকলা ইউনিয়ন ও কৈটোলা ইউনিয়ন) ব্যতীত বেড়া উপজেলা।

আর ফরিদপুর-২ আসনের সীমানায় নগরকান্দা উপজেলা ও সালথা উপজেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে-ভাঙ্গা উপজেলা, চরভদ্রাসন উপজেলা এবং সদরপুর উপজেলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত