Ajker Patrika

শেখ হাসিনার লকারে শুধু পাটের ব্যাগ, যৌথ লকারে সোনার নৌকা ও গয়না

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ৪১
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যৌথ দুই লকারে রয়েছে সোনার তৈরি নৌকা, হরিণ ও অলংকার। ছবি: দুদক
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যৌথ দুই লকারে রয়েছে সোনার তৈরি নৌকা, হরিণ ও অলংকার। ছবি: দুদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক ব্যাংক লকারে মিলেছে একটি খালি পাটের ব্যাগ। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যৌথ দুই লকারে রয়েছে সোনার তৈরি নৌকা, হরিণ ও অলংকার মিলিয়ে ৮৩২ ভরি সোনা। তিনটি লকার পরীক্ষা করে আজ বুধবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সোনা পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, কমিশনের অনুমোদনক্রমে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা তিনটি লকার পুনঃযাচাই করতে আদালতের কাছে লকারগুলো খোলার আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লকার খোলার অনুমতি দেন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যৌথ দুই লকারে রয়েছে সোনার তৈরি নৌকা, হরিণ ও অলংকার। ছবি: দুদক
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যৌথ দুই লকারে রয়েছে সোনার তৈরি নৌকা, হরিণ ও অলংকার। ছবি: দুদক

পরে গতকাল মঙ্গলবার দুদক নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের একটি টিম লকার পরীক্ষা করতে যায়। এ দলে ছিলেন একজন বিজ্ঞ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, দুদকের অনুসন্ধান তদারক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখা কর্তৃক মনোনীত একজন সোনা বিশেষজ্ঞ, এনবিআরের কর গোয়েন্দা ও সিআইসি কর্তৃক মনোনীত দুজন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যাংক কর্মকর্তারা। তাঁদের উপস্থিতিতে তিনটি লকার খোলা হয়।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যৌথ দুই লকারে রয়েছে সোনার তৈরি নৌকা, হরিণ ও অলংকার। ছবি: দুদক
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যৌথ দুই লকারে রয়েছে সোনার তৈরি নৌকা, হরিণ ও অলংকার। ছবি: দুদক

দুদক জানায়, শেখ হাসিনার নামে পূবালী ব্যাংক পিএলসির মতিঝিল করপোরেট শাখায় একটি (লকার নম্বর–১২৮), শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের যৌথ নামে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির প্রিন্সিপাল শাখায় একটি (লকার নম্বর ৭৫১) এবং ব্যাংকটির একই শাখায় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার যৌথ নামে অপর একটি লকার (লকার নম্বর ৭৫৩) খোলা হয়। লকারগুলোতে পাওয়া মালামালের ইনভেন্টরি প্রস্তুতপূর্বক সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপকের জিম্মায় দেওয়া হয়।

দুদক জানায়, লকারের প্রতিটি গয়নার সঙ্গে আলাদা চিরকুটে কার গয়না সেটি উল্লেখ করা রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।
দুদক জানায়, লকারের প্রতিটি গয়নার সঙ্গে আলাদা চিরকুটে কার গয়না সেটি উল্লেখ করা রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।

দুদক জানায়, শেখ হাসিনার নিজ নামে থাকা পূবালী ব্যাংক পিএলসির মতিঝিল করপোরেট শাখার লকারটিতে একটি খালি পাটের ব্যাগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখায় শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের যৌথ নামে থাকা লকারটিতে আনুমানিক ৪ হাজার ৯২৩ দশমিক ৬০ গ্রাম বা ৪২২ দশমিক ২৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং একই শাখায় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার নামে থাকা যৌথ লকারে আনুমানিক ৪ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৫৬ গ্রাম বা ৪১০ দশমিক ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়; যা সব মিলিয়ে ৮৩২ ভরি সোনা।

শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানদের নামে এই লকারগুলোতে গয়না রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।
শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানদের নামে এই লকারগুলোতে গয়না রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।

দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দুটি লকারে রক্ষিত স্বর্ণালংকারের সঙ্গে বিভিন্ন চিরকুট ও বর্ণনা অনুযায়ী স্বর্ণালংকারসমূহ অভিযোগসংশ্লিষ্ট শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে রয়েছে। প্রতিটি গয়নায় আলাদা আলাদা চিরকুট ব্যবহার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানদের নামে এই লকারগুলোতে গয়না রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।
শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানদের নামে এই লকারগুলোতে গয়না রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা।

যৌথ লকারে থাকা স্বর্ণালংকারের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সোনা কতটুকু—জানতে চাইলে দুদক মহাপরিচালক বলেন, দুদক যেসব স্বর্ণালংকার পেয়েছে, তার প্রতিটিতে আলাদা নামে চিরকুট রয়েছে। এটা জানা সময়সাপেক্ষ। কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে দেখবেন, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিজ নামে, তাঁর ছেলেমেয়ে এবং বোন ও বোনের ছেলের নামে কতটুকু সোনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এসব লকারের কথা উল্লেখ করেন। দুদক সম্প্রতি তাঁর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে কমিশনের অনুমোদনক্রমে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা লকার খোলার আবেদন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ