Ajker Patrika

পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তা, তবু দায়িত্বের বোঝা

  • কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নপ্রক্রিয়ায় জটিলতা এখনো কাটেনি।
  • মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সর্বোচ্চ চার উইংয়ের দায়িত্ব এক কর্মকর্তার।
  • সহকারী সচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যন্ত অনুমোদিত পদ ৩৬৯৬টি।
  • সহকারী সচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পদে আছেন ৬৪৯০ কর্মকর্তা।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ১৬
পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তা, তবু দায়িত্বের বোঝা

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমের মূল দায়িত্ব জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগে। এর অতিরিক্ত হিসেবে তাঁকে প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ, কমিটি ও অর্থনৈতিক অনুবিভাগ এবং অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরও সামলাতে হচ্ছে। এই বিভাগের নিচের স্তরের অনেক কর্মকর্তাকেও একাধিক দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

শুধু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক উইংয়ের দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে একজন কর্মকর্তাকে। অথচ জনপ্রশাসনে পদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ কর্মকর্তা রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আট মাসের বেশি সময় পরও জনপ্রশাসনে এমন অবস্থা। কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নপ্রক্রিয়ায় জটিলতা এখনো কাটেনি। ফলে প্রশাসনে কাজেও গতিসঞ্চার হয়নি।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, অনুমোদিত পদের থেকে বেশি কর্মকর্তা থাকার পরও একজনকে একাধিক উইংয়ের দায়িত্বে রাখা শীর্ষ আমলাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এতে জনসেবা বিঘ্নিত হবে, প্রশাসনের কাজও ব্যাহত হবে। কারণ, একজন কর্মকর্তার পক্ষে একাধিক উইং সামলানো সম্ভব নয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যেসব উইংয়ের শীর্ষ পদে যুগ্ম সচিবদের পদায়নের কথা ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগ পদে এখন অতিরিক্ত সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া আছে। গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে উইং প্রধান হিসেবে পদায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একজন কর্মকর্তার একাধিক দায়িত্ব থাকলে প্রশাসনে কাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জনসেবা বিঘ্নিত হবে বলে মত সাবেক আমলাদের। তাঁরা বলছেন, কাউকে দীর্ঘদিন একাধিক দায়িত্বে রাখা ঠিক নয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন জ্যেষ্ঠ সচিবের ১০টি, সচিবের ৭৯টি, অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি, যুগ্ম সচিবের ৫০২টি, উপসচিবের ১ হাজার ৭৫০টি এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সহকারী সচিবের ১ হাজার ১৪৩টি পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ জন জ্যেষ্ঠ সচিব, ৬৯ সচিব, ৩৭৮ অতিরিক্ত সচিব, ১ হাজার ৩৬ যুগ্ম সচিব, ১ হাজার ৪০৩ উপসচিব এবং ৩ হাজার ৫৯০ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব কাজ করছেন।

সহকারী সচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যন্ত অনুমোদিত পদ ৩ হাজার ৬৯৬টি। এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৬ হাজার ৪৯০ জন। অর্থাৎ পদের থেকে ২ হাজার ৭৯৪ জন বেশি কর্মকর্তা থাকলেও একজন কর্মকর্তাকে একাধিক উইংয়ের দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

এ এন এম মঈনুল ইসলাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব। এই দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তাঁকে বিধি অনুবিভাগের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোজাফফর আহমেদকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের মূল দায়িত্ব সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে হলেও অতিরিক্ত হিসেবে শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শামীম খান একই সঙ্গে নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ এবং প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। এই বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবু নঈম আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগ এবং অগ্নি অনুবিভাগের দায়িত্বের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আবদুল কাদের শেখকে প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ এবং আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খান একই সঙ্গে প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ, মেডিকেল অনুবিভাগ এবং উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্বে আছেন। অতিরিক্ত সচিব ড. নাসিম আহমেদকে আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগ এবং আনসার ও সীমান্ত অনুবিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুবিভাগ এবং জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্বে আছেন শাহ্ আসিফ রহমান। মো. আবুল হাসান মৃধাকে একই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপ ও সিআইএস অনুবিভাগ এবং পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ অনুবিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের মো. মাহমুদ হাসান অধিগ্রহণ ও খাসজমি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব। অতিরিক্ত হিসেবে প্রশাসন অনুবিভাগের দায়িত্বও তাঁর। এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরীকে উন্নয়ন অনুবিভাগ এবং ডিজিটাইজেশন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরম্যান্স অনুবিভাগের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুল ইসলামকে প্রশাসন অনুবিভাগ এবং সমন্বয় অনুবিভাগের দায়িত্ব দেওয়া আছে। এ ছাড়া এখন তিনি এই মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এসে প্রশাসনে বদলি ও পদায়ন করে। জটিলতা দেখা দিলে পরে বেশ কিছু বদলির আদেশ বাতিল করা হয়। সরকারের চারজন উপদেষ্টা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তাঁদের মতামত না নিয়ে তাঁদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন না করার নির্দেশনা দেন। এতে জটিলতায় পড়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কয়েক শ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় এবং বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।

এদিকে জনপ্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি, শৃঙ্খলা ও নিয়োগের ক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে সরকার। এসব কমিটির অনুমোদন ছাড়া বদলি-পদায়নের পথ বন্ধ হওয়ায় ওই সব দপ্তরে অনেক পদ ফাঁকা রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, উপদেষ্টাদের পছন্দ না হলে অনেক দপ্তরে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা যায় না। ফলে অনেকের ঘাড়ে একাধিক উইংয়ের দায়িত্ব পড়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই মন্ত্রণালয়ে আসার জন্য অনেক কর্মকর্তা নানাভাবে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু যাঁরা নিজে থেকে আসতে চান তাঁদের কাউকেই নেওয়া হবে না। তাঁরা যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজছেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ১ হাজার ১০০ প্রকল্প চলছিল। এসব প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রকল্প বিবেচনায় রেখে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, যুগ্ম সচিবের পদে থাকা অতিরিক্ত সচিবেরা অবসরে গেলে সেখানে যুগ্ম সচিবদের পদায়ন করা হবে। এ ছাড়া যাঁদের নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে অন্য উইংয়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, সেখানেও নতুন কর্মকর্তাদের শিগগির পদায়ন করা হবে।

যুগ্ম সচিব, উপসচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবদের অনেককেও একাধিক উইংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে একাধিক দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, মন্ত্রণালয় দায়িত্ব দিলে কর্মকর্তাদের তা ম্যানেজ করে নিতে হয়। একাধিক দায়িত্বে থাকলে কাজে একটু সমস্যা হবে, এটিই স্বাভাবিক।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং উপসচিব পুলে যুক্ত হওয়া কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে গভর্নমেন্ট ইমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পোর্টালের মাধ্যমে কোন দপ্তরে কোন যোগ্যতার কর্মকর্তা প্রয়োজন, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানা যায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থার সহায়তা না নিয়ে উপদেষ্টাদের পছন্দের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে।

উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত পছন্দে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন করা হলে প্রশাসনে সুশাসনের জন্য বড় অন্তরায় হবে বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া।

অবশ্য উপদেষ্টা কমিটির কারণে জনপ্রশাসনে বদলি ও পদায়নপ্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে না বলে দাবি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হকের। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় তাঁরা আমাদের কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেন। সেটি অনুসরণ করে আমরা কাজ করি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ে অতিরিক্ত সচিব নাকি যুগ্ম সচিব দেওয়া হবে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা করছিলাম। আমরা বিভিন্ন উইংয়ে এখন যুগ্ম সচিবদের পদায়ন করব।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান আজকের পত্রিকা'কে বলেন, অল্প দিনের জন্য কাউকে অতিরিক্ত হিসেবে অন্য দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, তবে এটা রেগুলার প্র্যাকটিস হতে পারে না। কাউকে তিন-চারটি দায়িত্ব দিয়ে রাখলে তিনি ঠিকমতো কাজ করতে পারবেন না, এটা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দলীয় ট্যাগিং দেওয়া এখনো বন্ধ হয়নি। সরকারি কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিতে হবে। একই সঙ্গে তাঁকে সুরক্ষাও দিতে হবে।

আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, উপদেষ্টাদের একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এরপর তাঁদের বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হচ্ছে। নিয়মিত কাজ তো কমিটি দিয়ে হয় না।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৪
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের মান ও সংখ্যা বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়াররা নিজেদের নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্প, বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্যোগে ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভলান্টিয়াররাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভলান্টিয়ারদের আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কোনো রকম সুবিধা না নিয়ে নিজের ইচ্ছায় নিঃস্বার্থভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আপনারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আপনারা এ কাজের প্রতিদান শুধু ইহকালে নয়, পরকালেও পাবেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সারা দেশে ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৫৫ হাজারেরও অধিক ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকেরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে একদিকে যেমন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জনবল সংকট দূর হচ্ছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারি বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে এককভাবে ভূমিকম্প, বড় অগ্নিদুর্ঘটনা বা বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করা দুরূহ। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকেরা পেশাদার বাহিনীর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে দুর্যোগ প্রশমনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল স্তরে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ রাজনীতিমুক্ত হবে কিনা—এ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আইন প্রণয়ন করা হয় জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য। এই আইনটিও করা হয়েছে জনগণ যেন প্রকৃত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে।’ তিনি আশ্বস্ত করেন, পুলিশ কমিশন জনগণ ও পুলিশের প্রকৃত কল্যাণে কিছু সুপারিশ করবে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।

এর আগে উপদেষ্টা পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর ট্রেনিং গ্রাউন্ডে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রদর্শিত মহড়া দেখেন এবং তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত