Ajker Patrika

ফৌজদারি মামলায় অব্যাহতি পেলেই কি আসামি বিপদমুক্ত?

সুলতান মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ০৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

২০০১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ডাকা হরতালের বিপক্ষে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবালের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। হরতালের পক্ষে বিএনপির মিছিল এবং বিপক্ষে ইকবালের নেতৃত্বে মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে মুখোমুখি হয়।

তখন আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে গুলি করা হলে বিএনপির চার কর্মী নিহত হন। নিহতরা হলেন জসিম উদ্দিন, খোকন, আব্দুর রশিদ মোল্লা ও নাজমা আক্তার।

পরে এ ঘটনায় তৎকালীন খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ইউনুস মৃধা বাদীয় হয়ে একটি মামলা করেন। ২০০২ সালের ২৯ ডিসেম্বর এইচ বি এম ইকবাল, শাওনসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে বিচারিক আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলা থেকে ইকবাল, শাওনসহ ১৫ জনের নাম প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর আদালত ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট ও ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫ জন আসামিকে অব্যাহতি দেন।

গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ওই মামলার বাদী তৎকালীন খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ইউনুস মৃধা ২০১০ সালের দুটি আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

গত ৬ নভেম্বর বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ ১৫ জনের অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে অবিলম্বে তাঁদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্য আসামিরা হলেন শওকত হোসেন, কবির উদ্দিন আহমেদ, আব্দুস সালাম, মুন্সি কামরুজ্জামান কাজল, মনিরুজ্জামান ওরফে লিটন, ইমদাদুল হক ওরফে বাচ্চু, আব্দুল হালিম, আবুল বাশার, জসিম উদ্দিন, দুলাল ওরফে লন্ড্রি দুলাল, তারেক সামছুল খান, কামরুল মোর্শেদ ও এস এম আরমান।

আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। আদেশের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির মিছিলে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশ ও ভিকটিম ইউনুস মৃধা পৃথক মামলা করেছিলেন। দুই মামলায় চার্জশিট দেওয়ার পর মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকাবস্থায় ১৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে।’

আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টে পটপরিবর্তনের পর মামলার বাদী ইউনুস মৃধা হাইকোর্টে ২০১০ সালের দুটি আদেশ (১৫ জনকে অব্যাহতি) চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। হাইকোর্ট দুটি আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে রুল জারি করেছেন। আর ১৫ আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন মামলাটিতে ১৫ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলবে।’

এই মামলায় দেখা যায়, ফৌজদারি মামলায় কোনো আসামি আদালত থেকে অব্যাহতি পেলেও তিনি পুরোপুরি বিপদমুক্ত হন না। তার বিপদ কিছুটা থেকেই যায়। তবে ফৌজদারি মামলায় চার্জ গঠনের পর খালাস পেলে আসামি বিপদমুক্ত হন।

একটি ফৌজদারি মামলা-সংক্রান্ত সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও দায়রা আদালত। ফৌজদারি মামলা সাধারণত তিনভাবে দায়ের হয়। যথা—

এক. পুলিশি মামলা (জিআর কেস)

দুই. নালিশি মামলা (সিআর কেস)

তিন. নন-জিআর মামলা

এর মধ্যে পুলিশি মামলা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে আমলযোগ্য অপরাধ। আর নন-জিআর মামলা হলো আমল অযোগ্য অপরাধ। নালিশি মামলা আমলযোগ্য ও আমল অযোগ্য উভয়ই হতে পারে। আমল অযোগ্য হলে পুলিশ মামলা নিতে চায় না। এমতাবস্থায় ফরিয়াদি সরাসরি আদালতে বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি যে ধরনেরই হোক না কেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক বিচার্য হবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২ ধারা মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেটের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা সাপেক্ষে। দায়রা আদালত আমলযোগ্য অপরাধের বিচার করে ফৌজদারি ১৯৩ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট যখন আসামিকে দায়রা আদালতে প্রেরণ করে।

অব্যাহতি: কোনো ফৌজদারি মামলায় চার্জ গঠনের আগে চার্জ শুনানির সময় আদালত যদি দেখেন যে আসামি সম্পর্কে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন বা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণাদি পাওয়া না গেলে, তাকে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়াকে অব্যাহতি বলা হয়।

আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলাফল: ফৌজদারি মামলায় কোনো আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হলে পরবর্তীকালে একই মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা যাবে, যদি পরবর্তী সময় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। তারপর অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী নির্ধারিত শাস্তি দেওয়া যাবে। তবে চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য নেওয়ার পরে যদি অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমাণিত না হয়, তাহলে আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় বলা আছে, ‘পাবলিক প্রসিকিউটর রায় ঘোষণার পূর্বে আদালতের অনুমতি নিয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত মোকদ্দমা সাধারণভাবে বা যে সমস্ত অপরাধে তার বিচার করা হইতেছে, তার যেকোনো এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে প্রত্যাহার করতে পারবেন এবং এই প্রত্যাহারের ফলে—

(ক) অভিযোগ প্রণয়নের পূর্বে এটা করা হলে উক্ত এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামিকে অব্যাহতি দান করতে হবে এবং

(খ) অভিযোগ প্রণয়নের পর এটা করা হলে অথবা এই বিধির আওতায় কোনো অভিযোগ প্রণয়ন আবশ্যক না হলে উক্ত এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামিকে খালাস দিতে হবে।

খালাসের ফলাফল: আইনের সাধারণ নীতি হলো, একজন ব্যক্তিকে খালাস দেওয়া হলে তাকে পুনরায় একই মামলায় অভিযুক্ত করা যাবে না এবং দণ্ডিত কার যাবে না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এক অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাইবে না।’

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে তার বিচার হলে এবং তাকে সাজা বা খালাস দেওয়া হলে ওই একই অপরাধে পুনরায় বিচার তার করা যাইবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন, অংশ নিল লাখো জনতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শনিবার বেলা আড়াইটায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত
শনিবার বেলা আড়াইটায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার অংশগ্রহণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।

ওসমান হাদির জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ এই জানাজায় শরিক হন। জানাজাকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী জানাজা দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা আড়াইটায় শুরু হয়। জানাজা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ১০০০টি বডি ওর্ন ক্যামেরা ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে পুরো এলাকা সুরক্ষিত রাখা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু ছাড়াই অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।

ওসমান হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই দাফন করা হবে। এরই মধ্যে কবর প্রস্তুত করা হয়েছে।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধির পাশে হাদির কবর খননের কাজ শুরু হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে তাঁকে কবির সমাধির পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার পর ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় কবি কাজী নজরুলের সমাধির পাশে হাদির দাফনের প্রস্তুতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরশায়িত হবেন ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরশায়িত হবেন ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই সমাহিত হবেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই বিপ্লবী শহীদ শরিফ ওসমান হাদি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার সাড়ে ১১টার দিকে হাদির কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয় এবং ইতিমধ্যে তা সম্পন্ন হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি অনলাইন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমদ।

প্রক্টর জানান, ওসমান হাদির পরিবারের অনুরোধ এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাহিত আছেন। ওই চত্বরে আরও কয়েকজন শিক্ষক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীর কবর রয়েছে। সেই স্থানেই শহিদ ওসমান হাদিকে দাফন করা হবে।’

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিএসসি থেকে শাহবাগগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কবর খোঁড়ার কাজ শেষ হয়েছে এবং দাফনের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। পুরো এলাকায় শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক দাবি ও আন্দোলনের মিছিলে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল শরিফ ওসমান হাদিকে। যে রাজপথে, যে ক্যাম্পাসে তিনি বারবার কণ্ঠ তুলেছিলেন আজ সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে তিনি ফিরছেন নিঃশব্দে। এবার আর স্লোগান দেবেন না তিনি; বরং নিজেই হয়ে উঠবেন স্লোগানের উৎস।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়।

আজ সকালে জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে হাদির মরদেহ কঠোর নিরাপত্তায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পুনরায় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গোসল সম্পন্ন করা হয়। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ) তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা উপলক্ষে সেখানে ইতিমধ্যেই মানুষের ঢল নেমেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরশায়িত হবেন ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরশায়িত হবেন ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন পুরানা পল্টনে দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, যেখানে গত বৃহস্পতিবার তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে আজ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জানাজার স্থানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠনের পতাকা থাকবে না। শোকাতুর পরিবার জানাজার সার্বিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

জানাজা ও দাফন ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। নিরাপত্তার খাতিরে ১০০০টি বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে মুসল্লিদের ব্যাগ বহন না করতে এবং সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন না ওড়াতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানাজা শেষে মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকার মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৭
এ কে খন্দকার। ফাইল ছবি
এ কে খন্দকার। ফাইল ছবি

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীর উত্তম মারা গেছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছে।

এ কে খন্দকার আজ শনিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে বার্তায় বলা হয়।

আইএসপিআর আরও জানায়, বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির জানাজায় জাতীয় পতাকা ছাড়া কোনো পতাকা না আনার অনুরোধ পরিবারের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৯
ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ছাড়া অন্য কোনো পতাকা না আনার অনুরোধ জানিয়েছে তাঁর পরিবার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ছাড়া অন্য কোনো পতাকা না আনার অনুরোধ জানিয়েছে তাঁর পরিবার। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়। এখন জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর নামাজে জানাজার প্রস্তুতি চলছে। সকাল থেকেই সেখানে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে।

হাদির পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জানাজার ময়দানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠনের পতাকা রাখা যাবে না। এ ছাড়া হাদির শোকাতুর পরিবার জানাজার সার্বিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘জানাজার নামাজের স্থানে বাংলাদেশের পতাকা ব্যতীত অন্য কোন পতাকা থাকবে না। আপনাদেরকে সার্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার।’

এদিকে আজ সকালে জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে হাদির মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স যোগে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পুনরায় জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

পারিবারিক ও ইনকিলাব মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে মরদেহের গোসল সম্পন্ন করার পর নামাজে জানাজার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হবে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

জানাজা উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নিরাপত্তার খাতিরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ১০০০টি বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করবেন। আগতদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদ ভবন ও এর আশপাশ এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

শহীদ ওসমান হাদির শেষ বিদায়ে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত