Ajker Patrika

কোটা সংস্কার নিয়ে বিক্ষোভে সহিংসতা: ৫ দিনে যা যা ঘটল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৯: ২৮
কোটা সংস্কার নিয়ে বিক্ষোভে সহিংসতা: ৫ দিনে যা যা ঘটল

কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে সেই সংঘর্ষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা লিপ্ত হলেও পরে আর তা ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। স্থানীয়রাসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বেড়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে কারফিউর মধ্যেই শনি ও রোববার সংঘর্ষ চলে। 

এর মধ্যে বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানায়। পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে যায় গত পাঁচ দিনে। নজিরবিহীন এই সহিংসতার মধ্যে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বিটিভিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কোটার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত নাশকতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল। এ অবস্থায় ১৭ জুলাই থেকে সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বন্ধ থাকে। সহিংসতার এই পাঁচ দিনে যা যা ঘটেছে, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

বৃহস্পতিবার যা ঘটেছিল
‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার ২৫ স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়, ৪৮ স্থানে সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন অন্তত ২৮ জন। এ চিত্র দেশের বড় বড় নগরসহ অনেক জেলা শহরেও। সংঘর্ষ-গুলিতে দিন শেষে শিক্ষার্থী-সাংবাদিক-পথচারীসহ নিহত অন্তত ২৮। আহত দেড় হাজারের বেশি। এর আগে বুধবার মধ্যরাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম শাটডাউনে দেশের সব অফিস-আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানায়। ঠিক তখন থেকেই যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজাসহ শনির আখড়ার অন্তত ২০টি জায়গায় আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেন। সেখান থেকে রাতেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিহত অজ্ঞাত একজনকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঘণ্টাখানেক বিরতির পর সকাল থেকে একই স্থানে আবার পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, উত্তরা, সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি ও মিরপুর এলাকা। সড়কে থাকা পুলিশের অধিকাংশ ট্রাফিক বক্স, পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল, সরকারি নানা স্থাপনা, সরকারি গাড়ি, ফুটওভার ব্রিজ, গণপরিবহন, এমনকি বিটিভি কার্যালয়ে আগুন দেওয়াসহ ভাঙচুর করা হয়। 

সকাল সাড়ে ১০টায় মেরুল বাড্ডা এলাকায় রাজধানীর প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা পাশের রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এদিন সকাল ১০টায় অবরোধ শুরু হয় রামপুরা-কুড়িল সড়কে। রাস্তায় নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টার পর রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও র‍্যাবের সংঘর্ষ হয়। সেখানে ঘটনাস্থলে দুজনসহ ছয়জন নিহত হন। বেলা ১১টায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এরপর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তা পুরোপুরি অবরোধ করেন। এই সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় হাতিরঝিল পুলিশ বক্স। বেলা ২টায় র‍্যাবের হেলিকপ্টার কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া পুলিশের সদস্যদের উদ্ধার করে।

বিটিভি ভবনে হামলা: বৃহস্পতিবার ঢাকার রামপুরায় বিটিভি ভবনে দিনভর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি এর নিয়ন্ত্রণকক্ষেরও দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছিল হামলাকারীরা। বিটিভি কার্যালয়ের মুজিব কর্নার এবং ঢাকা কেন্দ্রের নিরাপত্তা গেট, অভ্যর্থনা কক্ষসহ অন্তত আটটি স্থানে আগুন দেওয়া হয়। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন দফায় হামলার পর ৭টা ৪ মিনিটে বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ করে স্টেশন ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চতুর্থ দফা হামলা হয়; ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাটও চালানো হয়। এতে ২২ ঘণ্টা সম্প্রচার বন্ধ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই টিভি স্টেশনটির। 

উত্তরা রণক্ষেত্র: বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। সেখানে সাতজন নিহত হয়। র‍্যাবের এক সদস্যকে গণপিটুনি দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন স্থানে থাকে পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। 

যাত্রাবাড়ী-মিরপুর-মহাখালী রণক্ষেত্র: বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দখল নেয় বিক্ষোভকারীরা। এরপর রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় তাদের সঙ্গে পুলিশ-র‍্যাবের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তারা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ফুটওভার ব্রিজে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিকেলে মহাখালী এলাকার সেতু ভবন ও দুর্যোগ ভবনে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে থাকা গাড়িগুলোও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

রাতে ইন্টারনেট বন্ধ: রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত বুধবার রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ব্রডব্যান্ড চালু থাকে। মোবাইল ইন্টারনেটের টু-জি সেবাও চালু ছিল। ফোর-জি সেবা বন্ধ থাকায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবহারকারীরা। প্রবেশ করা যাচ্ছিল না ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছিলেন, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। 

শুক্রবার কী হয়েছিল
শুক্রবার দিনের প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় বিটিভির সামনে রামপুরা ব্রিজ এলাকায়। আগের দিনও এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দিনভর সংঘর্ষ হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরে তা পুরো বনশ্রী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে বনশ্রী পুলিশ ফাঁড়ি আর সন্ধ্যায় রামপুরা থানায় হামলা করে আন্দোলনকারীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মেরাদিয়া পুলিশের পিবিআই পূর্ব কার্যালয়ও। এই ঘটনাস্থল থেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যায় ২৫টি শিশু, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। 

এদিনও রণক্ষেত্রে পরিণত উত্তরা এলাকা। আগের দিন আটক হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের গতকাল বেলা ১১টার দিকে আদালতে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজধানীতে প্রবেশ করতে চাইলে বিকেলে উত্তরার বিজিবি মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত হন সাবেক এই মেয়র। মারা যান তাঁর দেহরক্ষী হামিদুর রহমান জুয়েল (৩৫)। আর সন্ধ্যার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা হামলা চালান উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে পুলিশ কোয়ার্টারে। 

ভয়ানক অবস্থা তৈরি হয় মিরপুর এলাকাতেও। জুমার নামাজের পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর ওপর সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। তাঁদের পেছনে থাকেন পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। সেখানে চারজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। পরে বিকেলে তাঁরা মিরপুর ১০-এ কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিকেলের দিকে বনানীতে সেতু ভবন, এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোল প্লাজা, মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আজিমপুর, বাড্ডা, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার (সায়েন্স ল্যাব), দুর্যোগ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন দেয় আন্দোলনকারী। রাত পর্যন্ত ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকা আটকে রেখে সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসব জায়গাতেও পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সেখানেও রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, ছররা গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হতাহত হয় শতাধিক আন্দোলনকারী।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী আটকের পর গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করেন। এর পরপরই সেখানে থাকা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনার রেশ চলে যায় নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয়ের সামনে। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি চালায়। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শতাধিক নেতা-কর্মী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও পরিবেশ ছিল থমথমে। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি। তবে এত কিছুর পরেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, পুলিশ এখনো ধৈর্য ধারণ করে আছে। 

সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার মিলে সারা দেশে নিহত হন ১০৩ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার নিহত হন ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন এবং শুক্রবার নিহত হন ৫৬ জন। শুক্রবার রাতে সরকারে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে কারফিউ জারি করা হয়। 

মধ্য রাতে কারফিউ জারি করা হলেও বিক্ষুব্ধরা তখনো সড়কে ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা। গত শনিবার সারা দিন সেই ধারাবাহিকতা ছিল। 

শনিবার যা ঘটেছিল
প্রথম দিকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়, পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ। ভাঙচুর-সংঘর্ষে টালমাটাল পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের সঙ্গে মাঠে নামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তাতেও পরিস্থিতি দিন দিন বেসামাল হয়ে পড়ছিল। সেই অবস্থায় জারি করা হয় কারফিউ। রাতারাতি মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তারপরও বিক্ষোভ দমানো যায়নি। পথে পথে সেনাসদস্যদের টহলের পরও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকার বাইরে কয়েক জায়গায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে ৪৫ জনের মতো। 

রামপুরা-বাড্ডা এদিনও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। তবে এবার পুলিশের সঙ্গে মাঠে ছিল সেনাবাহিনীও। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে স্লোগান দেয়। তাদের লক্ষ্য করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান। দিনভর দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলতে থাকে। রামপুরার মতো যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ও কদমতলীর অবস্থাও ছিল একই রকম। 

ঢাকার বাইরের পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম ছিল। টঙ্গীতে শিল্প পুলিশের কার্যালয়, পুলিশ বক্স এবং বিআরটিএ প্রকল্পের চলন্ত সিঁড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া টঙ্গী থানা এবং সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। সিটি করপোরেশনের ১১টি গাড়িসহ প্রায় ৪০টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া চেরাগ আলী এলাকায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কারখানায় হামলা চালিয়ে তিনটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। 

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভরত তিন শিক্ষার্থী নিহত হন। দুপুর ১২টার দিকে কলতাপাড়া এলাকার ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। গাজীপুর-ময়মনসিংহ ছাড়া আরও কয়েক জেলায় ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানেও তাদের সংঘর্ষ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে। 

রোববার যা হয়েছিল 
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে।

আদালত বলেছেন, নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। তবে সরকার প্রয়োজনে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল বা সংশোধন করতে পারবে।

হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রোববার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করেন।

এদিকে পাঁচ দিনে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ১৭৪। আহত কয়েকজনের মৃত্যু হওয়ায় এবং আগের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার কারণে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। 

সোমবার কী হয়েছিল 
টানা হামলা-সংঘর্ষ-ভাঙচুর, এর মধ্যে কারফিউ। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় জিম্মি হয়ে পড়েছিল রাজধানীবাসী। কারফিউ না উঠলেও গতকাল ঢাকায় নতুন করে সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন নগর ও জেলার পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নগরজীবনে। হাঁপ ছেড়েছে দেশের মানুষ।

আবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এতেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। রাস্তা ছেড়ে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার কথা বলছেন তাঁরা। 

সব মিলিয়ে সংঘর্ষ-ভাঙচুর-গুলি আর লাশের পর এবার আতঙ্ক কাটছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে ইন্টারনেট সেবা না থাকায় এবং টাকা উত্তোলন করতে না পারায় নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে মানুষের হাতে। 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রাজধানী ও ঢাকার বাইরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের সংঘর্ষে যখন কমবেশি ৮০ জনের মৃত্যু হয়, তখন কারফিউ জারি করে সরকার। শনিবার থেকে সেনাসদস্যরা নামলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। অবশ্য তার আগেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সরকারি অনেক স্থাপনা, যানবাহন, এমনকি পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়। 

রাজধানীতে গত কয়েক দিনের সহিংসতার দৃশ্য পরিদর্শনে নেমে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, সেনা মোতায়েনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। 

গত সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, আগের দিনও আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে যেসব সড়ক অচল ছিল, গতকাল তা সচল হয়েছে। রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের রাখা বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ। তবে রাস্তায় কোনো যাত্রীবাহী বাস কিংবা মালবাহী ট্রাক দেখা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তসাগর পাড়ি দিয়ে পুব আকাশে স্বাধীনতার সূর্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বেলা পৌনে ১১টায় উপকণ্ঠ থেকে মূল ঢাকা শহরে প্রবেশ করেন বিজয়ী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সেনারা। অন্যদিকে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ে চলতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি।

১৫ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সদর্প বিচরণের শেষ দিন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কার্যত ঢাকায় পাকিস্তানি দুর্গের পতনের ক্ষণগণনা চলছিল। উপায় না দেখে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আবদুল্লাহ খান নিয়াজি শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ১৫ তারিখ আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকব ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা এসে পৌঁছান। বিকেল ৪টার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ন সেনা ঢাকায় প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার এত দিনের জনবিরল সড়কগুলো ক্রমেই জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে। সবার মুখে একাত্তরের পরিচিতি রণধ্বনি’ জয় বাংলা’।

কারফিউ জারি থাকলেও মানুষ তার পরোয়া না করে রাস্তায় বেরিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। পাকিস্তানি বাহিনীর নয় মাসের গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের পর মুক্তির আনন্দে তাঁরা তখন আত্মহারা। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে তাঁরা পেয়েছেন নতুন দেশ—বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দ, স্বজন হারানোর শোক আর অজানা আগামীর প্রত্যাশায় সবার মনে এক বিচিত্র অনুভূতি। এর মধ্যেও ঘটে কিছু দুঃখজনক ঘটনা। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পলায়নপর কিছু পাকিস্তানি সেনা ও বিহারি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে অনেক বাঙালিকে হতাহত করে।

বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার, ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও অন্য সামরিক কর্মকর্তারা বিমানে ঢাকা অবতরণ করেন। এর কিছু সময় পরই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল উৎফুল্ল জনতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি সমরাধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি। পাকিস্তানি বাহিনীর দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হলো বাংলাদেশ। সগর্বে জায়গা করে নিল বিশ্বের মানচিত্রে।

ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বরই ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারেন আগের কয়েক দিনে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, লেখকসহ বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর। নিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় সহযোগীরা তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল; কিন্তু কেউই আর ফিরে আসেননি। দেশের এই মেধাবী, কৃতী সন্তানদের পরিণতির কথা ভেবে জনমনে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। পরদিনই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমির বীভৎস দৃশ্যের খবর। রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বিভিন্ন জায়গার অনেক বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় নির্যাতিত মানুষের ক্ষতবিক্ষত দেহ। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের অনেকের হাত বা চোখ বাঁধা, বেয়নেট বা গুলিতে বিদ্ধ লাশের খোঁজ মেলে রায়েরবাজারে। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে এই শোকের খবর, বধ্যভূমির ভয়াবহ দৃশ্য স্তম্ভিত করে মানুষকে।

এদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কাজে লেগে যায় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। ১৬ ডিসেম্বরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত প্রবাসী সরকার সদর দপ্তর থেকে গোটা দেশে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি পাঠানো শুরু হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ায় শুরু হয় পুরো সরকারের দেশে ফেরার প্রক্রিয়াও। ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই উনিশটি জেলার জন্য জেলা প্রশাসকদের মনোনয়ন ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছিল। শুরু হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের নতুন কঠিন যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ত্যাগ, বীরত্ব আর গৌরবের জ্বলন্ত সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় নতুন একটি দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সে সংগ্রাম, আত্মত্যাগের চিত্র জীবন্ত হয়ে রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় নতুন একটি দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সে সংগ্রাম, আত্মত্যাগের চিত্র জীবন্ত হয়ে রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কালো ফ্রেমে বাঁধাই করা একটি জামা। হলুদ জমিনের মাঝে লাল রং। জামাটি রেহানা নামের এক দুধের শিশুর। একাত্তরের যুদ্ধদিনে তার বয়স ছিল মাত্র দুই মাস। রেহানার বাবা আবদুস সালাম খান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এই অপরাধে পাক সেনারা বাড়িতে হানা দিয়ে শিশু রেহানাকে নির্মমভাবে আছাড় মেরে এবং বুটের তলায় পিষে হত্যা করে। একটি ছবিও না থাকায় মেয়ের চিহ্ন বলতে বাবার কাছে রয়ে যায় এ জামা।

বিজয়ের ভোর আনতে রেহানার মতো ঝরেছে কত প্রাণ। একাত্তরকে ঘিরে আছে কত সাহস, বীরত্ব আর আত্মত্যাগের কাহিনি। তারই বেশ কিছু নমুনা রয়েছে আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্যালারিগুলোতে। একে একে চারটি গ্যালারি পেরিয়ে এলে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো যেন চোখের সামনে তাজা হয়ে ফিরে আসে।

খুলনার সেনহাটিতে বাসা ছিল মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম খানের। যুদ্ধের শুরুর দিকে, ৩০ এপ্রিল পাক সেনারা স্থানীয় দালালদের সহায়তায় তাঁর বাসা ঘেরাও করে। সালামকে না পেয়ে তারা শিশু রেহানাকে হত্যা করে। রাতের আঁধারে বাবা গোপনে বাড়িতে এসে লাশটি ধুয়েমুছে রূপসা নদীতে ভাসিয়ে দেন। স্বাধীনতার পরে মেয়ের জামাটিই হয়ে ওঠে তাঁর বুকের ধন। জামাটি তিনি ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখেন দীর্ঘ ২৫ বছর। একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কার্যত এক মহাকাব্যিক ঘটনা। এ রকম কত ঘটনাই না তখন ঘটেছে। দেশের প্রায় সব মানুষ যার যার সাধ্যমতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির লড়াইয়ে। কেউ রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে লড়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে, খাবার খাইয়ে, শত্রুর গতিবিধি জানিয়ে কিংবা উদ্দীপনামূলক গান শুনিয়ে যে যেভাবে পেরেছেন সহায়তা করেছেন।

গ্যালারি-২-এ ঢুকতেই চোখে পড়বে একটা লুবিটেল-২ ক্যামেরা। আলোকচিত্রী শুকুর মিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবি তুলেছিলেন এই ক্যামেরা দিয়ে। একটু এগোলেই ভয় ধরানো এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মৃদু আলো জ্বলছে। ওপরে লেখা, ‘অপারেশন সার্চলাইট: গণহত্যার নীল নকশা ও পঁচিশ মার্চের কালরাত্রি’।

পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরুর সেই ভয়ানক রাতের কথা ডায়েরিতে লিখেছিলেন কবি, নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী সুফিয়া কামাল। আরও অনেকের মতো নাখালপাড়ার বাড়িতে বসে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছিল তখনকার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী স্বাতী চোধুরী। সুফিয়া কামালের ডায়েরি আর স্বাতীর স্কুলের সেই খাতা আছে এখানে।

সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত আর তার ভেতরে বাংলাদেশের হলুদ মানচিত্র। প্রথম নকশার বাংলাদেশের এই জাতীয় পতাকা ৭ মার্চ উড়েছিল লে. সিকান্দার আলীর বাড়িতে। পতাকাটি আছে জাদুঘরের এই গ্যালারিতে। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান অসামান্য। ঢাকার রাজপথে ডামি রাইফেল হাতে নারীদের মিছিলের আলোকচিত্রও আছে।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। ২৫ মার্চ রাতের প্রথম শহীদদের অন্যতম তিনি। তাঁর ব্যবহৃত বাইনোকুলার আর পোশাক রাখা হয়েছে জাদুঘরে। দেখা যাবে শহীদ অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, আব্দুল মুকতাদির, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, কবি মেহেরুন্নেসাসহ অনেকের স্মৃতিবিজড়িত ব্যবহৃত জিনিস। রয়েছে জাতীয় চার নেতার ব্যবহৃত কোট, লাইটার, চশমা ইত্যাদি। গ্যালারি-২-এ আরও দেখা মিলবে একটি টাইপরাইটারের। জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর চালানো গণহত্যা বন্ধের আবেদন করা হয়েছিল এই টাইপরাইটারে লিখে।

গ্যালারি-৩-এ বিশাল আলোকচিত্রে একাত্তরের শরণার্থী শিবিরের কষ্টকর জীবনের দৃশ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল ১ কোটি মানুষ। এখানে আছে শরণার্থীদের নিয়ে করা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিকস, টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস, ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনের আলোকচিত্র। আছে সে সময়ের সাংস্কৃতিক দলের কার্যক্রমের বিভিন্ন ছবি।

এই গ্যালারিতে দেখা মিলবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের বিভিন্ন চিত্র, একুশের গানের স্রষ্টা শহীদ আলতাফ মাহমুদের ইলেকট্রিক শেভিং রেজার। একটি জায়গায় দেখা যায়, একটি বাড়ির জানালা। জানালার অন্যপাশে একটি ছবিতে অন্ধকারে অস্ত্র হাতে মুক্তিসেনা। ছবিটি এমনভাবে রাখা হয়েছে, দেখে মনে হবে, সত্যিই যেন জানালার ওপারে অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধা। গ্যালারি-৩-এর শেষ দিকে চোখ আটকে যাবে একটি কালো রঙের গাড়িতে। শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির এই গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে ব্যবহৃত হতো। ১৫ ডিসেম্বর আল-বদরের সদস্যরা তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।

জাদুঘরের নারী নির্যাতন অংশে চোখ বুলালে শিউরে উঠতে হয়। সিলেটের পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পের দেয়ালে আঁকা ছবি রাখা হয়েছে এখানে। বাঙালি মেয়েদের নির্যাতন শিবিরের দেয়াল বুঝিয়ে দেয় কী ভয়াবহ নির্যাতন ঘটেছিল সেখানে।

একটি ছবিতে দেখা মেলে দুই কিশোরীর। তারা ঝুড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে কচুরিপানা। সেই কচুরিপানার আড়ালে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড।

গ্যালারি-৪-এ দেখা মেলে বাঙালির বিজয়ের স্মৃতির নমুনা। দেখা মেলে মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের আলোকচিত্র ও স্মৃতিবিজড়িত বস্তু। এর মধ্যে রয়েছে বিলোনিয়া, পরশুরাম, চিথলিয়া, ফুলগাজী, ফেনী, মন্দভাগ, কসবা-সালদা নদী, নারায়ণগঞ্জ-কামরাঙ্গীরচর, শেরপুর, কামালপুর যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। ঢাকা শহরে ট্রাকে চড়ে মানুষের বিজয় উল্লাস।

গ্যালারি-১-এ আছে একাত্তর পর্যন্ত এ ভূখণ্ডের বিভিন্ন শাসনামলের ইতিহাস। বাকি তিনটি গ্যালারিজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। বিজয় দিবসের ঠিক আগের দিনে জাদুঘরে দেখা গেল সপরিবারে আসা মোহা. আসলাম উদ্দিনকে। তিনি বললেন, ‘বিজয়ের মাসে হঠাৎ করেই জাদুঘরে ঘুরতে আসা। এসে ঘুরতে ঘুরতে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনার যেন সাক্ষী হয়ে গেলাম।’

দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে যায়। পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের ম্লান আলো পড়ছে জাদুঘরের সামনে টাঙানো লাল-সবুজ পতাকায়। রাত পেরোলেই দেখা দেবে নতুন সূর্য। সে সূর্য মুক্তির, বিজয়ের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন প্রত্যাশা জাতির মনে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের ৫৪ বছর পূর্তি এবার। এই ভূখণ্ডের মানুষের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন ১৬ ডিসেম্বর। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় নতুন এক দেশ—বাংলাদেশ। দিনটি একই সঙ্গে বিজয়ের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও শহীদের স্মরণে ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করবে দেশবাসী।

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসনের পতনে বাংলাদেশে এখন এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা। স্বৈরশাসককে বিদায় জানানোর পাশাপাশি ঘুণে ধরা রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার করে নতুন সম্ভাবনাকে স্বাগত জানাতে চায় জনগণ। এমন ভিন্ন ধরনের এক প্রেক্ষাপটে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিতর্কহীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনে দেশবাসী তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার অপেক্ষায়। এবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অতীতের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা ও সংকীর্ণতাকে কাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাধ্যমতো সচেষ্ট হবেন– এটিই এবারের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা।

এই আনন্দের দিনে জাতি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এ উপলক্ষে লাল-সবুজে সেজেছে দেশ। সর্বত্র উড়ছে জাতীয় পতাকা। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রথামতো বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। বিজয়ের এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদ, যুদ্ধাহতসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা মা-বোন, শহীদ পরিবারের সদস্য ও আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রাখা সকল সংগ্রামী যোদ্ধাকে, যাঁদের ত্যাগ ও আত্মদানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ ছিল না, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বিগত পাঁচ দশকের পথচলায় জনগণের পূর্ণ রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে নতুন আশা জাগিয়েছে।

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তাঁদের এই আত্মদান আমাদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা ও সাহস জোগায়, সকল সংকটে-সংগ্রামে দেখায় মুক্তির পথ।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল, বিগত বছরগুলোতে তা বারবার স্বৈরাচার আর অপশাসনে ম্লান হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা আবারও একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত ও সুশাসিত বাংলাদেশের শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলতে যে বিস্তৃত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, দেশের আপামর জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা সে কর্মযজ্ঞের সফল পরিসমাপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনাকেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। রাজধানী ঢাকা থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পোশাকধারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

আজ ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবেন।

বিজয় দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।

আজ বিকেলে বঙ্গভবনে মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। সিনেমা হলে বিনা মূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখানো হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ হবে অর্থহীন ও আত্মঘাতী: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ হবে অর্থহীন ও আত্মঘাতী: টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পুলিশব্যবস্থা গঠনের দীর্ঘদিনের জনদাবিকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার প্রণীত পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ কার্যত লোকদেখানো ও অর্থহীন উদ্যোগ। সংস্থাটির মতে, প্রস্তাবিত এই কমিশন স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা—কোনোটিই নিশ্চিত করতে পারবে না; বরং এটি হবে আত্মঘাতী ও জনগণের অর্থ অপচয়ের আরেকটি আমলাতান্ত্রিক কাঠামো।

আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগের কথা জানায় টিআইবি। এতে বলা হয়, রক্তক্ষয়ী জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র সংস্কারের ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী কমিশন গঠিত হলে তা স্বাধীন হওয়ার বদলে সরকারের আজ্ঞাবহ অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রেষণে নিয়োজিত আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব চর্চার নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।

অধ্যাদেশটি ধারণাগত, কৌশলগত ও কাঠামোগতভাবে গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই অধ্যাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব ও জবাবদিহি নিশ্চিত না করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনিক ও পুলিশি আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ আরও গভীর করবে। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির যে সংকট থেকে পুলিশের জনআস্থার অবনতি হয়েছে, তার উত্তরণ তো হবেই না; বরং তা বৈধতা পাবে।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘যে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের জন্য জনগণ ও নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে, তার অপরিহার্য শর্ত হলো, সরকারের প্রভাবমুক্ত স্বাধীনতা। অথচ অধ্যাদেশে “স্বাধীনতা” শব্দটি পর্যন্ত অনুপস্থিত।’

কমিশনের গঠনপ্রক্রিয়াকে স্বার্থসংঘাতপূর্ণ উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করার বিধান কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে। তাঁর মতে, বিশ্বের কোথাও এভাবে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির কর্মকর্তার জন্য কমিশনকে বাধ্যতামূলকভাবে উন্মুক্ত রাখার নজির নেই।

অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। বিশেষ করে ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘জননিরাপত্তা ও মানবাধিকার ভারসাম্য’-এর অস্পষ্ট ব্যাখ্যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বৈধতার ঝুঁকি হিসেবে দেখছে সংস্থাটি। পাশাপাশি নাগরিক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং পুলিশ অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটিতে একই কমিশনের সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিধান অভিযোগ নিষ্পত্তিকে প্রভাবিত করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

টিআইবির মতে, অধ্যাদেশের ২৩, ২৪ ও ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতার অভাব প্রস্তাবিত কমিশনকে কার্যত সরকারের একটি অধীনস্থ দপ্তরে পরিণত করবে। বর্তমান কাঠামো বহাল থাকলে বাংলাদেশে প্রকৃত পুলিশ সংস্কারের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের ভেতরে সক্রিয় সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে নতজানু অবস্থান পরিহার করে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫ সংশোধনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। সংস্থাটির দাবি, শুধু সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং সরকারি ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশনই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত