কামরুল হাসান

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’ বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘ভাই, রাজপ্রাসাদের বাইরে গরিবের বাইকটা অল্প সময়ের জন্য রাখা যাবে না?’ দারোয়ান মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা রাহেন।’
বাইক রেখে ভেতরে ঢুকতেই একটি লম্বা পথ, তারপর মূল ভবনে ঢোকার দরজা। আমার আসার কথা আগে থেকে জানানো ছিল। একজন এসে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। এ রকম বিশাল আকারের ঝাঁ-চকচকে ড্রয়িংরুম আমি আগে কখনো দেখিনি। ভেতর থেকে একটি সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরের দিকে। চারদিকের দেয়ালে অনেক ধরনের ছবি ঝোলানো, সব কটি সোনালি ফ্রেমে বাঁধা। দেয়ালের সব কারুকাজও সোনালি। দেখলে মনে হয় সোনা দিয়ে মোড়ানো। মাথার ওপর ঝুলছে ইয়া বড় বড় ঝাড়বাতি। স্যুট পরা একজন এসে বাতি জ্বালাতেই আলোর বন্যা বয়ে গেল ভেতরে। যা দেখি তাতেই বিস্ময় লাগে।
সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো তিনি যখন এলেন। তিনি মানে মুসা বিন শমসের। ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামলেন, সঙ্গে কয়েকজন স্যুট পরা সঙ্গী। বললেন, বলো বেটা, প্রিন্স মুসার কাছে কেন এসেছ? বললাম, একটা নিউজের জন্য আপনার বক্তব্য নিতে এসেছি। তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানিয়ে বললেন, তোমার অনেক কিছু শেখার আছে, দেখার আছে। বলো, আমার সম্পর্কে কী জানো? আমি বললাম, ‘না, তেমন কিছু জানি না।’
আমার ঘোর আর কাটে না। নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে। প্রিন্স মুসা বলেই যাচ্ছেন। তিনি আমাকে দেয়ালে লাগানো একটি কেবিনেটের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে সারি সারি স্যুট। বললেন, এগুলো সব বিদেশি ব্র্যান্ডের, হাজার হাজার ডলার দাম। নিজের জুতা দেখিয়ে বললেন, ডায়মন্ড লাগানো জুতাও তাঁর আছে। জুতায় ডায়মন্ড থাকতে পারে, সেটা ছিল আমার কল্পনারও বাইরে। বলতে বলতে একজন কয়েকটি বাক্স টেনে আমার সামনে রাখলেন, তাতে সারি সারি জুতা রাখা। এরপর দেখালেন ঘড়ির সংগ্রহ। দুনিয়ার প্রায় সব নামী ব্র্যান্ডের ঘড়ি আছে তাঁর সংগ্রহে। বললেন, সৌদি বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী আদনান খাসোগি তাঁর বন্ধু। ৪০টি দেশে সমরাস্ত্রের ব্যবসা আছে। সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার আছে। এসব দেখে আর শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমি। যত দেখি ততই বিস্ময় লাগে, ঘোর না কেটে উল্টো ধাঁধা লাগে। তবে যে কাজে গেলাম, তা আর হলো না। আর একটা জিনিস লক্ষ করলাম, প্রিন্স মুসার শরীরের একটি অংশ অবশ। তিনি বাম হাত নাড়াতে পারেন না। বসার ঘরে অনেক পত্রিকা সাজানো, যার কাভার স্টোরি তাঁকে নিয়ে করা। কিন্তু এসব পত্রিকার বেশির ভাগেরই নাম কখনো শুনিনি।
জনকণ্ঠে সে সময় ‘সেই রাজাকার’ নামে একটি সিরিজ ছাপা হচ্ছিল। তাতে ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর সিকদার মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে মুসার বক্তব্য ছিল না। জনকণ্ঠ থেকে বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম আমাকে বললেন, মুসার একটা বক্তব্য নিতে হবে। প্রবীর সিকদারের রিপোর্ট পড়ে দেখি তিনি লিখেছেন, মুসা ছিলেন একাত্তরে পাকিদের সহযোগী। তাঁর পুরো নাম এ ডি এম মুসা। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার শমসের মোল্লার তৃতীয় পুত্র তিনি। আদি নিবাস ফরিদপুরের নগরকান্দার হিয়াবলদী গ্রামে। তাঁর পুরো জীবন রহস্যঘেরা। ইংরেজি ও উর্দুতে বাকপটু। শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল নামে বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
পরে খোলেন ডেটকো নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এরশাদের আমলে তৎকালীন ফার্স্ট লেডিকে ‘ডক্টরেট’ খেতাব এনে দিয়ে আলোচনায় আসেন মুসা বিন শমসের। ১৯৮৭ সালের দিকে তিনি একটি কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে লিবিয়ায় লোক পাঠাতে শুরু করেন। এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন। সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁর। সেই সময়ের এক মন্ত্রীপুত্রের সঙ্গে নিজের কন্যার বিয়ে দেন। ব্রিটেনের লেবার পার্টিকে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হন মুসা। দেশি-বিদেশি অনেক জাঁদরেল সাংবাদিককেও তিনি ভুয়া তথ্য দিয়ে বোকা বানিয়েছেন।
আমিও সে রকম বোকা বনে গেলাম। বক্তব্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে এসে টানা তিন দিন অফিসের সবাইকে মুসার শানশওকতের গল্প শুনিয়ে গেলাম। তবে জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ সিরিজে প্রবীর সিকদারের রিপোর্টটি ছাপা হলো মুসার বক্তব্য ছাড়াই, ২০০১ সালের ২৪ মার্চ।
সিটি রাউন্ডআপ করতে গিয়ে একদিন কানে এল বনানীর ডেটকো অফিসে শত শত তরুণের ভিড়। সেখানে হইচই হচ্ছে। গিয়ে দেখি সংবাদের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ আগেই সেখানে হাজির। এটা সম্ভবত ২০০২ সালের দিকে। ডেটকোর ফটকের সামনে নোটিশ। তাতে লেখা: অস্ট্রেলিয়া ও লিবিয়ায় গরুর খামারের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হবে। সেই নোটিশ দেখে যুবকেরা এভাবে ভিড় করেছেন। নোটিশ পড়ে আমাদের সন্দেহ হলো। অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন হিফজুর রহমান। তাঁর কাছ থেকে জানলাম, অস্ট্রেলিয়া থেকে এমন কোনো চাহিদা আসেনি। বুঝলাম, শত শত যুবকও বোকা বনে গেছেন।
২০১৪ সালের নভেম্বরে মুসা বিন শমসেরের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি দেশে-বিদেশে মিলে সম্পদের এক বিশাল ফিরিস্তি দিলেন। দুদকের কর্মকর্তারা সময় ব্যয় করে সেই তথ্য খুঁজতে গিয়ে হয়রান, কিন্তু সম্পদের আর হদিস পান না। দুদকের একজন সদস্য আমাকে বলেছিলেন, সম্পদের এসব তথ্য ভোগাস। তাঁর কিছুই নেই। মনে মনে ভাবলাম, আমার মতো দুদকও বোকা বনে গেল!
কয়েক দিন আগে শুনলাম ই-কমার্স নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় ডিবি পুলিশ মুসার পরিবারকে ডেকেছে। আমার মনে হলো, মুসা এবারও সবাইকে বোকা বানাবেন। করলেনও সেটা। তিনি ডিবির কর্মকর্তাদের বললেন, সুইস ব্যাংকে তাঁর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আছে। সেই অর্থ উদ্ধার করতে পারলে পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন। দুদককে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে ভবন করে দেবেন আর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেবেন। বলেছেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা; এর একক কৃতিত্ব তাঁর। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন প্রথমে দেখান তিনি। প্রিন্স উপাধি তাঁকে সৌদি বাদশা দিয়েছেন। বিশ্বের এক নম্বর অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। আরও বলেন, প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। মুসার এই গল্প শুনে পাশে থাকা স্ত্রী পুলিশের সামনেই মুসাকে বললেন, নিজের বানানো এসব রূপকথার গল্প নাতি-নাতনিদের শোনাবে। এবার এসব বাদ দাও। এবার পুলিশও বোকা বনে গেল।
বোকা বানানোর আরেকটি গল্প বলে শেষ করি। নৌবাহিনীর কমান্ডার মাসুদ হাসান আহমেদ একদিন আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন মুসার কাছে। আবার সেই শানশওকতের গল্প। সব শেষে তিনি আমাকে নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দিতে চাইলেন। বললেন, যেটা পছন্দ হয় নিতে পারি। আমি শেষমেশ একটি মগ চাইলাম। খুব সুন্দর র্যাপিং করা একটি মগ তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন, `…বেটা, এটা অনেক দামি মগ। ফ্রান্স থেকে তৈরি করিয়ে আনা।'
বাসার ড্রয়িংরুমে দুই দিন মগটা পড়ে ছিল। একদিন স্ত্রীকে বললাম, এটা ফ্রান্সের মগ, মুসা বিন শমসের দিয়েছেন। ফ্রান্সের কথা শুনে স্ত্রী খুব যত্নসহকারে প্যাকেটটা খুলে উল্টেপাল্টে দেখে বললেন, …ওমা, এটা তো বেঙ্গল সিরামিকের মগ!

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’ বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘ভাই, রাজপ্রাসাদের বাইরে গরিবের বাইকটা অল্প সময়ের জন্য রাখা যাবে না?’ দারোয়ান মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা রাহেন।’
বাইক রেখে ভেতরে ঢুকতেই একটি লম্বা পথ, তারপর মূল ভবনে ঢোকার দরজা। আমার আসার কথা আগে থেকে জানানো ছিল। একজন এসে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। এ রকম বিশাল আকারের ঝাঁ-চকচকে ড্রয়িংরুম আমি আগে কখনো দেখিনি। ভেতর থেকে একটি সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরের দিকে। চারদিকের দেয়ালে অনেক ধরনের ছবি ঝোলানো, সব কটি সোনালি ফ্রেমে বাঁধা। দেয়ালের সব কারুকাজও সোনালি। দেখলে মনে হয় সোনা দিয়ে মোড়ানো। মাথার ওপর ঝুলছে ইয়া বড় বড় ঝাড়বাতি। স্যুট পরা একজন এসে বাতি জ্বালাতেই আলোর বন্যা বয়ে গেল ভেতরে। যা দেখি তাতেই বিস্ময় লাগে।
সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো তিনি যখন এলেন। তিনি মানে মুসা বিন শমসের। ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামলেন, সঙ্গে কয়েকজন স্যুট পরা সঙ্গী। বললেন, বলো বেটা, প্রিন্স মুসার কাছে কেন এসেছ? বললাম, একটা নিউজের জন্য আপনার বক্তব্য নিতে এসেছি। তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানিয়ে বললেন, তোমার অনেক কিছু শেখার আছে, দেখার আছে। বলো, আমার সম্পর্কে কী জানো? আমি বললাম, ‘না, তেমন কিছু জানি না।’
আমার ঘোর আর কাটে না। নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে। প্রিন্স মুসা বলেই যাচ্ছেন। তিনি আমাকে দেয়ালে লাগানো একটি কেবিনেটের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে সারি সারি স্যুট। বললেন, এগুলো সব বিদেশি ব্র্যান্ডের, হাজার হাজার ডলার দাম। নিজের জুতা দেখিয়ে বললেন, ডায়মন্ড লাগানো জুতাও তাঁর আছে। জুতায় ডায়মন্ড থাকতে পারে, সেটা ছিল আমার কল্পনারও বাইরে। বলতে বলতে একজন কয়েকটি বাক্স টেনে আমার সামনে রাখলেন, তাতে সারি সারি জুতা রাখা। এরপর দেখালেন ঘড়ির সংগ্রহ। দুনিয়ার প্রায় সব নামী ব্র্যান্ডের ঘড়ি আছে তাঁর সংগ্রহে। বললেন, সৌদি বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী আদনান খাসোগি তাঁর বন্ধু। ৪০টি দেশে সমরাস্ত্রের ব্যবসা আছে। সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার আছে। এসব দেখে আর শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমি। যত দেখি ততই বিস্ময় লাগে, ঘোর না কেটে উল্টো ধাঁধা লাগে। তবে যে কাজে গেলাম, তা আর হলো না। আর একটা জিনিস লক্ষ করলাম, প্রিন্স মুসার শরীরের একটি অংশ অবশ। তিনি বাম হাত নাড়াতে পারেন না। বসার ঘরে অনেক পত্রিকা সাজানো, যার কাভার স্টোরি তাঁকে নিয়ে করা। কিন্তু এসব পত্রিকার বেশির ভাগেরই নাম কখনো শুনিনি।
জনকণ্ঠে সে সময় ‘সেই রাজাকার’ নামে একটি সিরিজ ছাপা হচ্ছিল। তাতে ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর সিকদার মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে মুসার বক্তব্য ছিল না। জনকণ্ঠ থেকে বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম আমাকে বললেন, মুসার একটা বক্তব্য নিতে হবে। প্রবীর সিকদারের রিপোর্ট পড়ে দেখি তিনি লিখেছেন, মুসা ছিলেন একাত্তরে পাকিদের সহযোগী। তাঁর পুরো নাম এ ডি এম মুসা। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার শমসের মোল্লার তৃতীয় পুত্র তিনি। আদি নিবাস ফরিদপুরের নগরকান্দার হিয়াবলদী গ্রামে। তাঁর পুরো জীবন রহস্যঘেরা। ইংরেজি ও উর্দুতে বাকপটু। শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল নামে বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
পরে খোলেন ডেটকো নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এরশাদের আমলে তৎকালীন ফার্স্ট লেডিকে ‘ডক্টরেট’ খেতাব এনে দিয়ে আলোচনায় আসেন মুসা বিন শমসের। ১৯৮৭ সালের দিকে তিনি একটি কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে লিবিয়ায় লোক পাঠাতে শুরু করেন। এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন। সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁর। সেই সময়ের এক মন্ত্রীপুত্রের সঙ্গে নিজের কন্যার বিয়ে দেন। ব্রিটেনের লেবার পার্টিকে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হন মুসা। দেশি-বিদেশি অনেক জাঁদরেল সাংবাদিককেও তিনি ভুয়া তথ্য দিয়ে বোকা বানিয়েছেন।
আমিও সে রকম বোকা বনে গেলাম। বক্তব্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে এসে টানা তিন দিন অফিসের সবাইকে মুসার শানশওকতের গল্প শুনিয়ে গেলাম। তবে জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ সিরিজে প্রবীর সিকদারের রিপোর্টটি ছাপা হলো মুসার বক্তব্য ছাড়াই, ২০০১ সালের ২৪ মার্চ।
সিটি রাউন্ডআপ করতে গিয়ে একদিন কানে এল বনানীর ডেটকো অফিসে শত শত তরুণের ভিড়। সেখানে হইচই হচ্ছে। গিয়ে দেখি সংবাদের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ আগেই সেখানে হাজির। এটা সম্ভবত ২০০২ সালের দিকে। ডেটকোর ফটকের সামনে নোটিশ। তাতে লেখা: অস্ট্রেলিয়া ও লিবিয়ায় গরুর খামারের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হবে। সেই নোটিশ দেখে যুবকেরা এভাবে ভিড় করেছেন। নোটিশ পড়ে আমাদের সন্দেহ হলো। অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন হিফজুর রহমান। তাঁর কাছ থেকে জানলাম, অস্ট্রেলিয়া থেকে এমন কোনো চাহিদা আসেনি। বুঝলাম, শত শত যুবকও বোকা বনে গেছেন।
২০১৪ সালের নভেম্বরে মুসা বিন শমসেরের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি দেশে-বিদেশে মিলে সম্পদের এক বিশাল ফিরিস্তি দিলেন। দুদকের কর্মকর্তারা সময় ব্যয় করে সেই তথ্য খুঁজতে গিয়ে হয়রান, কিন্তু সম্পদের আর হদিস পান না। দুদকের একজন সদস্য আমাকে বলেছিলেন, সম্পদের এসব তথ্য ভোগাস। তাঁর কিছুই নেই। মনে মনে ভাবলাম, আমার মতো দুদকও বোকা বনে গেল!
কয়েক দিন আগে শুনলাম ই-কমার্স নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় ডিবি পুলিশ মুসার পরিবারকে ডেকেছে। আমার মনে হলো, মুসা এবারও সবাইকে বোকা বানাবেন। করলেনও সেটা। তিনি ডিবির কর্মকর্তাদের বললেন, সুইস ব্যাংকে তাঁর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আছে। সেই অর্থ উদ্ধার করতে পারলে পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন। দুদককে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে ভবন করে দেবেন আর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেবেন। বলেছেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা; এর একক কৃতিত্ব তাঁর। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন প্রথমে দেখান তিনি। প্রিন্স উপাধি তাঁকে সৌদি বাদশা দিয়েছেন। বিশ্বের এক নম্বর অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। আরও বলেন, প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। মুসার এই গল্প শুনে পাশে থাকা স্ত্রী পুলিশের সামনেই মুসাকে বললেন, নিজের বানানো এসব রূপকথার গল্প নাতি-নাতনিদের শোনাবে। এবার এসব বাদ দাও। এবার পুলিশও বোকা বনে গেল।
বোকা বানানোর আরেকটি গল্প বলে শেষ করি। নৌবাহিনীর কমান্ডার মাসুদ হাসান আহমেদ একদিন আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন মুসার কাছে। আবার সেই শানশওকতের গল্প। সব শেষে তিনি আমাকে নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দিতে চাইলেন। বললেন, যেটা পছন্দ হয় নিতে পারি। আমি শেষমেশ একটি মগ চাইলাম। খুব সুন্দর র্যাপিং করা একটি মগ তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন, `…বেটা, এটা অনেক দামি মগ। ফ্রান্স থেকে তৈরি করিয়ে আনা।'
বাসার ড্রয়িংরুমে দুই দিন মগটা পড়ে ছিল। একদিন স্ত্রীকে বললাম, এটা ফ্রান্সের মগ, মুসা বিন শমসের দিয়েছেন। ফ্রান্সের কথা শুনে স্ত্রী খুব যত্নসহকারে প্যাকেটটা খুলে উল্টেপাল্টে দেখে বললেন, …ওমা, এটা তো বেঙ্গল সিরামিকের মগ!
কামরুল হাসান

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’ বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘ভাই, রাজপ্রাসাদের বাইরে গরিবের বাইকটা অল্প সময়ের জন্য রাখা যাবে না?’ দারোয়ান মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা রাহেন।’
বাইক রেখে ভেতরে ঢুকতেই একটি লম্বা পথ, তারপর মূল ভবনে ঢোকার দরজা। আমার আসার কথা আগে থেকে জানানো ছিল। একজন এসে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। এ রকম বিশাল আকারের ঝাঁ-চকচকে ড্রয়িংরুম আমি আগে কখনো দেখিনি। ভেতর থেকে একটি সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরের দিকে। চারদিকের দেয়ালে অনেক ধরনের ছবি ঝোলানো, সব কটি সোনালি ফ্রেমে বাঁধা। দেয়ালের সব কারুকাজও সোনালি। দেখলে মনে হয় সোনা দিয়ে মোড়ানো। মাথার ওপর ঝুলছে ইয়া বড় বড় ঝাড়বাতি। স্যুট পরা একজন এসে বাতি জ্বালাতেই আলোর বন্যা বয়ে গেল ভেতরে। যা দেখি তাতেই বিস্ময় লাগে।
সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো তিনি যখন এলেন। তিনি মানে মুসা বিন শমসের। ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামলেন, সঙ্গে কয়েকজন স্যুট পরা সঙ্গী। বললেন, বলো বেটা, প্রিন্স মুসার কাছে কেন এসেছ? বললাম, একটা নিউজের জন্য আপনার বক্তব্য নিতে এসেছি। তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানিয়ে বললেন, তোমার অনেক কিছু শেখার আছে, দেখার আছে। বলো, আমার সম্পর্কে কী জানো? আমি বললাম, ‘না, তেমন কিছু জানি না।’
আমার ঘোর আর কাটে না। নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে। প্রিন্স মুসা বলেই যাচ্ছেন। তিনি আমাকে দেয়ালে লাগানো একটি কেবিনেটের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে সারি সারি স্যুট। বললেন, এগুলো সব বিদেশি ব্র্যান্ডের, হাজার হাজার ডলার দাম। নিজের জুতা দেখিয়ে বললেন, ডায়মন্ড লাগানো জুতাও তাঁর আছে। জুতায় ডায়মন্ড থাকতে পারে, সেটা ছিল আমার কল্পনারও বাইরে। বলতে বলতে একজন কয়েকটি বাক্স টেনে আমার সামনে রাখলেন, তাতে সারি সারি জুতা রাখা। এরপর দেখালেন ঘড়ির সংগ্রহ। দুনিয়ার প্রায় সব নামী ব্র্যান্ডের ঘড়ি আছে তাঁর সংগ্রহে। বললেন, সৌদি বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী আদনান খাসোগি তাঁর বন্ধু। ৪০টি দেশে সমরাস্ত্রের ব্যবসা আছে। সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার আছে। এসব দেখে আর শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমি। যত দেখি ততই বিস্ময় লাগে, ঘোর না কেটে উল্টো ধাঁধা লাগে। তবে যে কাজে গেলাম, তা আর হলো না। আর একটা জিনিস লক্ষ করলাম, প্রিন্স মুসার শরীরের একটি অংশ অবশ। তিনি বাম হাত নাড়াতে পারেন না। বসার ঘরে অনেক পত্রিকা সাজানো, যার কাভার স্টোরি তাঁকে নিয়ে করা। কিন্তু এসব পত্রিকার বেশির ভাগেরই নাম কখনো শুনিনি।
জনকণ্ঠে সে সময় ‘সেই রাজাকার’ নামে একটি সিরিজ ছাপা হচ্ছিল। তাতে ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর সিকদার মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে মুসার বক্তব্য ছিল না। জনকণ্ঠ থেকে বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম আমাকে বললেন, মুসার একটা বক্তব্য নিতে হবে। প্রবীর সিকদারের রিপোর্ট পড়ে দেখি তিনি লিখেছেন, মুসা ছিলেন একাত্তরে পাকিদের সহযোগী। তাঁর পুরো নাম এ ডি এম মুসা। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার শমসের মোল্লার তৃতীয় পুত্র তিনি। আদি নিবাস ফরিদপুরের নগরকান্দার হিয়াবলদী গ্রামে। তাঁর পুরো জীবন রহস্যঘেরা। ইংরেজি ও উর্দুতে বাকপটু। শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল নামে বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
পরে খোলেন ডেটকো নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এরশাদের আমলে তৎকালীন ফার্স্ট লেডিকে ‘ডক্টরেট’ খেতাব এনে দিয়ে আলোচনায় আসেন মুসা বিন শমসের। ১৯৮৭ সালের দিকে তিনি একটি কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে লিবিয়ায় লোক পাঠাতে শুরু করেন। এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন। সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁর। সেই সময়ের এক মন্ত্রীপুত্রের সঙ্গে নিজের কন্যার বিয়ে দেন। ব্রিটেনের লেবার পার্টিকে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হন মুসা। দেশি-বিদেশি অনেক জাঁদরেল সাংবাদিককেও তিনি ভুয়া তথ্য দিয়ে বোকা বানিয়েছেন।
আমিও সে রকম বোকা বনে গেলাম। বক্তব্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে এসে টানা তিন দিন অফিসের সবাইকে মুসার শানশওকতের গল্প শুনিয়ে গেলাম। তবে জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ সিরিজে প্রবীর সিকদারের রিপোর্টটি ছাপা হলো মুসার বক্তব্য ছাড়াই, ২০০১ সালের ২৪ মার্চ।
সিটি রাউন্ডআপ করতে গিয়ে একদিন কানে এল বনানীর ডেটকো অফিসে শত শত তরুণের ভিড়। সেখানে হইচই হচ্ছে। গিয়ে দেখি সংবাদের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ আগেই সেখানে হাজির। এটা সম্ভবত ২০০২ সালের দিকে। ডেটকোর ফটকের সামনে নোটিশ। তাতে লেখা: অস্ট্রেলিয়া ও লিবিয়ায় গরুর খামারের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হবে। সেই নোটিশ দেখে যুবকেরা এভাবে ভিড় করেছেন। নোটিশ পড়ে আমাদের সন্দেহ হলো। অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন হিফজুর রহমান। তাঁর কাছ থেকে জানলাম, অস্ট্রেলিয়া থেকে এমন কোনো চাহিদা আসেনি। বুঝলাম, শত শত যুবকও বোকা বনে গেছেন।
২০১৪ সালের নভেম্বরে মুসা বিন শমসেরের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি দেশে-বিদেশে মিলে সম্পদের এক বিশাল ফিরিস্তি দিলেন। দুদকের কর্মকর্তারা সময় ব্যয় করে সেই তথ্য খুঁজতে গিয়ে হয়রান, কিন্তু সম্পদের আর হদিস পান না। দুদকের একজন সদস্য আমাকে বলেছিলেন, সম্পদের এসব তথ্য ভোগাস। তাঁর কিছুই নেই। মনে মনে ভাবলাম, আমার মতো দুদকও বোকা বনে গেল!
কয়েক দিন আগে শুনলাম ই-কমার্স নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় ডিবি পুলিশ মুসার পরিবারকে ডেকেছে। আমার মনে হলো, মুসা এবারও সবাইকে বোকা বানাবেন। করলেনও সেটা। তিনি ডিবির কর্মকর্তাদের বললেন, সুইস ব্যাংকে তাঁর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আছে। সেই অর্থ উদ্ধার করতে পারলে পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন। দুদককে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে ভবন করে দেবেন আর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেবেন। বলেছেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা; এর একক কৃতিত্ব তাঁর। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন প্রথমে দেখান তিনি। প্রিন্স উপাধি তাঁকে সৌদি বাদশা দিয়েছেন। বিশ্বের এক নম্বর অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। আরও বলেন, প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। মুসার এই গল্প শুনে পাশে থাকা স্ত্রী পুলিশের সামনেই মুসাকে বললেন, নিজের বানানো এসব রূপকথার গল্প নাতি-নাতনিদের শোনাবে। এবার এসব বাদ দাও। এবার পুলিশও বোকা বনে গেল।
বোকা বানানোর আরেকটি গল্প বলে শেষ করি। নৌবাহিনীর কমান্ডার মাসুদ হাসান আহমেদ একদিন আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন মুসার কাছে। আবার সেই শানশওকতের গল্প। সব শেষে তিনি আমাকে নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দিতে চাইলেন। বললেন, যেটা পছন্দ হয় নিতে পারি। আমি শেষমেশ একটি মগ চাইলাম। খুব সুন্দর র্যাপিং করা একটি মগ তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন, `…বেটা, এটা অনেক দামি মগ। ফ্রান্স থেকে তৈরি করিয়ে আনা।'
বাসার ড্রয়িংরুমে দুই দিন মগটা পড়ে ছিল। একদিন স্ত্রীকে বললাম, এটা ফ্রান্সের মগ, মুসা বিন শমসের দিয়েছেন। ফ্রান্সের কথা শুনে স্ত্রী খুব যত্নসহকারে প্যাকেটটা খুলে উল্টেপাল্টে দেখে বললেন, …ওমা, এটা তো বেঙ্গল সিরামিকের মগ!

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’ বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘ভাই, রাজপ্রাসাদের বাইরে গরিবের বাইকটা অল্প সময়ের জন্য রাখা যাবে না?’ দারোয়ান মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা রাহেন।’
বাইক রেখে ভেতরে ঢুকতেই একটি লম্বা পথ, তারপর মূল ভবনে ঢোকার দরজা। আমার আসার কথা আগে থেকে জানানো ছিল। একজন এসে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। এ রকম বিশাল আকারের ঝাঁ-চকচকে ড্রয়িংরুম আমি আগে কখনো দেখিনি। ভেতর থেকে একটি সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরের দিকে। চারদিকের দেয়ালে অনেক ধরনের ছবি ঝোলানো, সব কটি সোনালি ফ্রেমে বাঁধা। দেয়ালের সব কারুকাজও সোনালি। দেখলে মনে হয় সোনা দিয়ে মোড়ানো। মাথার ওপর ঝুলছে ইয়া বড় বড় ঝাড়বাতি। স্যুট পরা একজন এসে বাতি জ্বালাতেই আলোর বন্যা বয়ে গেল ভেতরে। যা দেখি তাতেই বিস্ময় লাগে।
সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো তিনি যখন এলেন। তিনি মানে মুসা বিন শমসের। ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামলেন, সঙ্গে কয়েকজন স্যুট পরা সঙ্গী। বললেন, বলো বেটা, প্রিন্স মুসার কাছে কেন এসেছ? বললাম, একটা নিউজের জন্য আপনার বক্তব্য নিতে এসেছি। তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানিয়ে বললেন, তোমার অনেক কিছু শেখার আছে, দেখার আছে। বলো, আমার সম্পর্কে কী জানো? আমি বললাম, ‘না, তেমন কিছু জানি না।’
আমার ঘোর আর কাটে না। নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে। প্রিন্স মুসা বলেই যাচ্ছেন। তিনি আমাকে দেয়ালে লাগানো একটি কেবিনেটের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে সারি সারি স্যুট। বললেন, এগুলো সব বিদেশি ব্র্যান্ডের, হাজার হাজার ডলার দাম। নিজের জুতা দেখিয়ে বললেন, ডায়মন্ড লাগানো জুতাও তাঁর আছে। জুতায় ডায়মন্ড থাকতে পারে, সেটা ছিল আমার কল্পনারও বাইরে। বলতে বলতে একজন কয়েকটি বাক্স টেনে আমার সামনে রাখলেন, তাতে সারি সারি জুতা রাখা। এরপর দেখালেন ঘড়ির সংগ্রহ। দুনিয়ার প্রায় সব নামী ব্র্যান্ডের ঘড়ি আছে তাঁর সংগ্রহে। বললেন, সৌদি বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী আদনান খাসোগি তাঁর বন্ধু। ৪০টি দেশে সমরাস্ত্রের ব্যবসা আছে। সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার আছে। এসব দেখে আর শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমি। যত দেখি ততই বিস্ময় লাগে, ঘোর না কেটে উল্টো ধাঁধা লাগে। তবে যে কাজে গেলাম, তা আর হলো না। আর একটা জিনিস লক্ষ করলাম, প্রিন্স মুসার শরীরের একটি অংশ অবশ। তিনি বাম হাত নাড়াতে পারেন না। বসার ঘরে অনেক পত্রিকা সাজানো, যার কাভার স্টোরি তাঁকে নিয়ে করা। কিন্তু এসব পত্রিকার বেশির ভাগেরই নাম কখনো শুনিনি।
জনকণ্ঠে সে সময় ‘সেই রাজাকার’ নামে একটি সিরিজ ছাপা হচ্ছিল। তাতে ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর সিকদার মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে মুসার বক্তব্য ছিল না। জনকণ্ঠ থেকে বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম আমাকে বললেন, মুসার একটা বক্তব্য নিতে হবে। প্রবীর সিকদারের রিপোর্ট পড়ে দেখি তিনি লিখেছেন, মুসা ছিলেন একাত্তরে পাকিদের সহযোগী। তাঁর পুরো নাম এ ডি এম মুসা। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার শমসের মোল্লার তৃতীয় পুত্র তিনি। আদি নিবাস ফরিদপুরের নগরকান্দার হিয়াবলদী গ্রামে। তাঁর পুরো জীবন রহস্যঘেরা। ইংরেজি ও উর্দুতে বাকপটু। শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল নামে বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
পরে খোলেন ডেটকো নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এরশাদের আমলে তৎকালীন ফার্স্ট লেডিকে ‘ডক্টরেট’ খেতাব এনে দিয়ে আলোচনায় আসেন মুসা বিন শমসের। ১৯৮৭ সালের দিকে তিনি একটি কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে লিবিয়ায় লোক পাঠাতে শুরু করেন। এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন। সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁর। সেই সময়ের এক মন্ত্রীপুত্রের সঙ্গে নিজের কন্যার বিয়ে দেন। ব্রিটেনের লেবার পার্টিকে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হন মুসা। দেশি-বিদেশি অনেক জাঁদরেল সাংবাদিককেও তিনি ভুয়া তথ্য দিয়ে বোকা বানিয়েছেন।
আমিও সে রকম বোকা বনে গেলাম। বক্তব্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে এসে টানা তিন দিন অফিসের সবাইকে মুসার শানশওকতের গল্প শুনিয়ে গেলাম। তবে জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ সিরিজে প্রবীর সিকদারের রিপোর্টটি ছাপা হলো মুসার বক্তব্য ছাড়াই, ২০০১ সালের ২৪ মার্চ।
সিটি রাউন্ডআপ করতে গিয়ে একদিন কানে এল বনানীর ডেটকো অফিসে শত শত তরুণের ভিড়। সেখানে হইচই হচ্ছে। গিয়ে দেখি সংবাদের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ আগেই সেখানে হাজির। এটা সম্ভবত ২০০২ সালের দিকে। ডেটকোর ফটকের সামনে নোটিশ। তাতে লেখা: অস্ট্রেলিয়া ও লিবিয়ায় গরুর খামারের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হবে। সেই নোটিশ দেখে যুবকেরা এভাবে ভিড় করেছেন। নোটিশ পড়ে আমাদের সন্দেহ হলো। অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন হিফজুর রহমান। তাঁর কাছ থেকে জানলাম, অস্ট্রেলিয়া থেকে এমন কোনো চাহিদা আসেনি। বুঝলাম, শত শত যুবকও বোকা বনে গেছেন।
২০১৪ সালের নভেম্বরে মুসা বিন শমসেরের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি দেশে-বিদেশে মিলে সম্পদের এক বিশাল ফিরিস্তি দিলেন। দুদকের কর্মকর্তারা সময় ব্যয় করে সেই তথ্য খুঁজতে গিয়ে হয়রান, কিন্তু সম্পদের আর হদিস পান না। দুদকের একজন সদস্য আমাকে বলেছিলেন, সম্পদের এসব তথ্য ভোগাস। তাঁর কিছুই নেই। মনে মনে ভাবলাম, আমার মতো দুদকও বোকা বনে গেল!
কয়েক দিন আগে শুনলাম ই-কমার্স নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় ডিবি পুলিশ মুসার পরিবারকে ডেকেছে। আমার মনে হলো, মুসা এবারও সবাইকে বোকা বানাবেন। করলেনও সেটা। তিনি ডিবির কর্মকর্তাদের বললেন, সুইস ব্যাংকে তাঁর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আছে। সেই অর্থ উদ্ধার করতে পারলে পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন। দুদককে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে ভবন করে দেবেন আর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেবেন। বলেছেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা; এর একক কৃতিত্ব তাঁর। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন প্রথমে দেখান তিনি। প্রিন্স উপাধি তাঁকে সৌদি বাদশা দিয়েছেন। বিশ্বের এক নম্বর অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। আরও বলেন, প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। মুসার এই গল্প শুনে পাশে থাকা স্ত্রী পুলিশের সামনেই মুসাকে বললেন, নিজের বানানো এসব রূপকথার গল্প নাতি-নাতনিদের শোনাবে। এবার এসব বাদ দাও। এবার পুলিশও বোকা বনে গেল।
বোকা বানানোর আরেকটি গল্প বলে শেষ করি। নৌবাহিনীর কমান্ডার মাসুদ হাসান আহমেদ একদিন আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন মুসার কাছে। আবার সেই শানশওকতের গল্প। সব শেষে তিনি আমাকে নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দিতে চাইলেন। বললেন, যেটা পছন্দ হয় নিতে পারি। আমি শেষমেশ একটি মগ চাইলাম। খুব সুন্দর র্যাপিং করা একটি মগ তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন, `…বেটা, এটা অনেক দামি মগ। ফ্রান্স থেকে তৈরি করিয়ে আনা।'
বাসার ড্রয়িংরুমে দুই দিন মগটা পড়ে ছিল। একদিন স্ত্রীকে বললাম, এটা ফ্রান্সের মগ, মুসা বিন শমসের দিয়েছেন। ফ্রান্সের কথা শুনে স্ত্রী খুব যত্নসহকারে প্যাকেটটা খুলে উল্টেপাল্টে দেখে বললেন, …ওমা, এটা তো বেঙ্গল সিরামিকের মগ!

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
৪ দিন আগে
পুলিশ বলছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়। তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
৫ দিন আগে
রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।
১৩ দিন আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।
ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।
ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।
পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঁচজন রিমান্ডে
মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।
ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।
ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।
পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঁচজন রিমান্ডে
মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’
১৬ অক্টোবর ২০২১
পুলিশ বলছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়। তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
৫ দিন আগে
রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।
১৩ দিন আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাইফ মামুনকে হত্যার ঘটনায় দুই পেশাদার শুটারসহ চারজনকে শনাক্ত করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুটার দুজনের মধ্যে একজন ধানমন্ডি, আরেকজন তেজগাঁও এলাকার একাধিক মামলার আসামি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, যেকোনো সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।
গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে মামুনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়, তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে তারা দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে এবং তাদের ধরার জন্য পুলিশ একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সীমান্তে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. মোস্তাক সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দুজনকে শনাক্ত করেছি। তারা দেশেই আছে। তাদের গ্রেপ্তারের খুব কাছাকাছি রয়েছি।’
ডিএমপির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, শুটাররা মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি পরিধান করলেও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মামুন হত্যার আগে অন্তত একজন তাঁকে অনুসরণ করছিল। হামলার আগে তাদের পরিকল্পনা সূক্ষ্মভাবে ছিল এবং তারা পেশাদারত্বের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম রুবেল, অপরজন ইব্রাহীম। এ ছাড়া আরও দুটি দল আলাদাভাবে হত্যাকাণ্ডে ব্যাকআপ টিম হিসেবে কাজ করেছে। এতে সোহেল ও কামাল নামে দুই সন্ত্রাসীর নাম এসেছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একাধিক পুলিশের টিম কাজ করছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামুনের একসময় ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু ইমনের সঙ্গে পারিবারিক ও চাঁদাবাজি-সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব তীব্র ছিল। এ কারণে ইমনের অনুসারীরা একাধিকবার হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৭ সালে তেজগাঁওয়ে মামুনের ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল, তখনো তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল নিহত হন।
মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং শুটারদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মল্লিক এহসান আহসান সামী জানান, গুলিতে নিহত ব্যক্তিটি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন।

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাইফ মামুনকে হত্যার ঘটনায় দুই পেশাদার শুটারসহ চারজনকে শনাক্ত করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুটার দুজনের মধ্যে একজন ধানমন্ডি, আরেকজন তেজগাঁও এলাকার একাধিক মামলার আসামি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, যেকোনো সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।
গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে মামুনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়, তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে তারা দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে এবং তাদের ধরার জন্য পুলিশ একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সীমান্তে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. মোস্তাক সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দুজনকে শনাক্ত করেছি। তারা দেশেই আছে। তাদের গ্রেপ্তারের খুব কাছাকাছি রয়েছি।’
ডিএমপির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, শুটাররা মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি পরিধান করলেও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মামুন হত্যার আগে অন্তত একজন তাঁকে অনুসরণ করছিল। হামলার আগে তাদের পরিকল্পনা সূক্ষ্মভাবে ছিল এবং তারা পেশাদারত্বের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম রুবেল, অপরজন ইব্রাহীম। এ ছাড়া আরও দুটি দল আলাদাভাবে হত্যাকাণ্ডে ব্যাকআপ টিম হিসেবে কাজ করেছে। এতে সোহেল ও কামাল নামে দুই সন্ত্রাসীর নাম এসেছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একাধিক পুলিশের টিম কাজ করছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামুনের একসময় ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু ইমনের সঙ্গে পারিবারিক ও চাঁদাবাজি-সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব তীব্র ছিল। এ কারণে ইমনের অনুসারীরা একাধিকবার হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৭ সালে তেজগাঁওয়ে মামুনের ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল, তখনো তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল নিহত হন।
মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং শুটারদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মল্লিক এহসান আহসান সামী জানান, গুলিতে নিহত ব্যক্তিটি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন।

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’
১৬ অক্টোবর ২০২১
রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
৪ দিন আগে
রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।
১৩ দিন আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’
১৬ অক্টোবর ২০২১
রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
৪ দিন আগে
পুলিশ বলছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়। তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
৫ দিন আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

বাড়ির নাম দ্য প্যালেস, ঢাকা। গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি খুঁজতে খুব বেশি সময় লাগল না। নীল রঙের জিংফু মোটরবাইকটি গেটের এক পাশে রেখে সামনের চাকায় তালা লাগাতেই দারোয়ান বললেন, ‘এখানে বাইক রাখা নিষেধ। এটা প্রিন্সের বাড়ি।’
১৬ অক্টোবর ২০২১
রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
৪ দিন আগে
পুলিশ বলছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়। তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
৫ দিন আগে
রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।
১৩ দিন আগে