Ajker Patrika

তিস্তা প্রকল্পে চীনের চেয়ে ভারতকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা

আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ১৪: ২০
তিস্তা প্রকল্পে চীনের চেয়ে ভারতকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তিনি ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়নে ভারতকে প্রাধান্য দেবেন। গত রোববার সন্ধ্যায় চীন সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা প্রকল্পসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি এমন এক সময়ে এ কথা বললেন, যখন চীন আন্তসীমান্ত নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছে। তবে শেখ হাসিনার এই বক্তব্য নিশ্চিত নয়াদিল্লিকে খুশি করবে। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিস্তা প্রকল্প একটি দীর্ঘস্থায়ী ইস্যু। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। চীন একটি প্রস্তাব দিয়েছে এবং একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে। ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতও একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাবে এবং তারপর আমরা আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত কোনো একটি পক্ষকে মেনে নেব।’ 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘তবে আমি এই প্রকল্পের জন্য ভারতকে অগ্রাধিকার দেব...ভারত তিস্তার পানি আটকে রেখেছে। আমরা যদি (তিস্তার পানির একটি অংশ) পেতে চাই, তাহলে ভারতের উচিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা...এটিই কূটনীতি। এ বিষয়ে কোনো লুকোচুরি নেই—এটি খুবই সহজ ও পরিষ্কার।’ 

শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বেইজিংয়ের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহল গভীর দৃষ্টি রেখেছিল। ভারতের সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এই নদী নিয়ে আলোচনার এজেন্ডা শেখ হাসিনার সফরসূচিতে ছিল না, তার পরও কূটনৈতিক সংলাপে এই ইস্যু ছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা ক্রমবর্ধমানভাবে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের তিস্তা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং এটি উভয় দেশের জন্যই একটি উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি করবে।’ 

শেখ হাসিনার চীন সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের একাধিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশকে বেইজিংয়ের তরফ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে দেশের অবকাঠামো তৈরিতে চীনা সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। তবে এর আগে গত জুন মাসে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তার জন্য একটি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে নয়াদিল্লির আগ্রহের কথা জানান। তারপর থেকেই চার বছর আগে প্রথমবারের মতো চীন প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি-কূটনীতির অন্যতম মূল দরকষাকষির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। 

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি চীনের প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো নির্দেশ দেওয়ার কয়েক দিন পরেই মোদির প্রস্তাব আসে। তাঁর এই মন্তব্য এটি অনুমান করা যায় যে, তিনি হয়তো এই প্রকল্প চীনকে দেওয়ার কথা ভাবছেন। তবে শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে তিনটি কারণে কূটনৈতিক মহল এই সম্ভাবনাকে বাদ দিয়েছিল। 

প্রথমত, এটি ভারতের পানি-কূটনীতির ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেবে। দ্বিতীয়ত, এটি (শিলিগুড়ি) চিকেনস নেকের (পশ্চিমবঙ্গের সরু এই ভূখণ্ডটি উত্তর-পূর্বকে ভারতের দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে) ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে চীনা উপস্থিতি সৃষ্টি করবে। তৃতীয়ত, চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে এই অঞ্চলের পানিপ্রবাহের সংবেদনশীল তথ্যের সুবিধা থাকবে। 

তবে শেখ হাসিনার সর্বশেষ মন্তব্য তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিকল্প খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকা নয়াদিল্লির টান টান স্নায়ুচাপকে প্রশমিত করবে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাধার কারণে ২০১১ সাল থেকে এই চুক্তি আটকে আছে। তবে শেখ হাসিনার মন্তব্য তাঁর ভারত সফরের সময় তিনি এবং মোদি যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন, সেটির বিষয়বস্তুর ওপরই জোর আরোপ করবে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘... আমরা একটি পারস্পরিক সম্মত সময়সীমার মধ্যে ভারতীয় সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করব।’ 

নয়াদিল্লির একটি সূত্র বলছে, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে’ শব্দবন্ধ দুটিই এই বিবৃতির মূলভাব ধারণ করে। সূত্রটি বলছে, ‘পানি বণ্টনের বিপরীতে—যার জন্য কেন্দ্র সরকারের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মতি প্রয়োজন—ভারত সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবাধে প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারবে।’ 

সূত্র জানিয়েছে, ভারত এরই মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এই প্রকল্পে তিস্তা থেকে ধরলা (ভারতের দিকে যা জলঢাকা নামে পরিচিত) এবং ব্রহ্মপুত্র থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেছে, ‘ভারত রংপুরে একটি সহকারী হাইকমিশন খুলছে। এই বিভাগ হয়েই তিস্তা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মনে হচ্ছে, এই হাইকমিশন প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকি করতে ব্যবহার করা হবে। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা স্থল পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে এরই মধ্যে একাধিকবার রংপুর সফর করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৪০
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন।

খোদা বখশ চৌধুরীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে শেষ দিকে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ওই পদে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ছিল।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ছিল খোদা বখশ চৌধুরীর। কিন্তু এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটি সূত্র বলছে, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে গত ১০ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলামও এভাবে পদত্যাগ করেছিলেন।

অধ্যাপক আমিনুলকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পাঁচদিন পর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক আমিনুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের রায় ২০ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী ২০ জানুয়ারি রায় দেবেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার থাকা শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আর পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

যাত্রাবাড়ীতে তাইম হত্যায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে ইমাম হাসান তাইম হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। যাতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারদের হাজিরের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পলাতকদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসান ও তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জাকির হোসাইন। আর পলাতক রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ওয়ারী জোনের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন ও এডিসি এস এম শামীম, ডেমরা জোনের তৎকালীন এডিসি মো. মাসুদুর রহমান মনির, তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার নাহিদ ফেরদৌস, যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ওহিদুল হক মামুন, এসআই (নিরস্ত্র) সাজ্জাদ উজ জামান ও মো. শাহদৎ আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫১
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলিপ পি অধিকারী, খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ড. বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও, জাতীয় চার্চ পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি খ্রিস্টোফার অধিকারীসহ দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় খ্রিষ্টধর্মের নেতারা তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুনাম এবং দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজিত হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে যিশুখ্রিষ্টকে সর্বজনীন উল্লেখ করে বলেন, যিশুখ্রিষ্টের ক্ষমা ও মানবসেবার মহান আদর্শ সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষও এ বছর উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে বড়দিন উদ্‌যাপন করছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে জনগণ আপনার ওপর আস্থা রেখেছিল। আপনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমরা প্রার্থনা করি, একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনার প্রচেষ্টা সফল হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে বড়দিন ও আসন্ন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনারাই সমাজের প্রতিবিম্ব। আপনাদের দেখলে বুঝতে পারি, সবকিছু ঠিক আছে কি না।’

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। সে জন্যই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে জুলাই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই সনদের ওপর গণভোটের মাধ্যমে দেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে জনগণ যে রায় দেবে, পরবর্তী সময়ে সংসদ সেভাবেই সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

প্রধান উপদেষ্টা এ সময় আসন্ন নির্বাচন ও গণভোটের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ। দেশব্যাপী ৮০০টি চার্চের মধ্যে তিন ধাপে এই অনুদান বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।

পরে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে সরকার: প্রেস সচিব

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০২
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বুধবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বুধবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁর বাংলাদেশে ফেরাকে স্বাগত জানাই। তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।’

প্রেস সচিব আরও জানান, সরকার তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি বিএনপির সঙ্গে পরামর্শ করছে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের বিচারের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাচ্ছি এবং ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার হত্যাকাণ্ডকে নিন্দা জানিয়েছে। ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আজ উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছেন, দীপু হত্যার বিচার দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।’

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। সব দোষীকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত