Ajker Patrika

কেউ খুশি, কেউ বিব্রত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ১০
কেউ খুশি, কেউ বিব্রত

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে সার্চ কমিটির কাছে যে নামগুলো এসেছে, সেখানে সাবেক আমলাদেরই প্রাধান্য। আমলাদের পরেই যথাক্রমে শিক্ষাবিদ, বিচারক, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং আইনজীবীদের নাম সিইসি ও ইসি হিসেবে প্রস্তাবের জন্য পেয়েছে সার্চ কমিটি।

সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার রাতে সার্চ কমিটিতে জমা পড়া ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করেছে। তবে কে বা কারা কোন নাম প্রস্তাব করেছেন, তা প্রকাশ করা হয়নি। তালিকায় নাম থাকা অনেকেই জানিয়েছেন, কে বা কারা তাঁদের নাম প্রস্তাব করেছেন, তা তাঁরা জানেন না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এসব নাম প্রস্তাব করেছেন, তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার থাকতে পারে। তালিকায় ছয়জনের নাম দুবার করে পাওয়া গেছে।

এসব নামের মধ্য থেকে সার্চ কমিটি সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগের জন্য একেকটি পদের বিপরীতে দুজন করে ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। সেখান থেকে একজনকে সিইসি ও চারজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।

আজকের পত্রিকার হিসাবে ৩২২ জনের তালিকায় ১০০ জন সাবেক আমলা, ৬১ জন শিক্ষাবিদ, ৩৮ জন বিচারপতি, ২৮ জন সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, ২৬ জন আইনজীবী, ১১ জন মানবাধিকারকর্মী, ৯ জন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা, ৭ জন পেশাজীবী, ৩ জন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, ৪ জন সাংবাদিক, ২ জন নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা, ৪ জন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, ২ জন সুশীল সমাজের, ২ জন প্রবাসী এবং অন্যান্য শ্রেণি-পেশার ১৯ জন রয়েছেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি জে আর মোদাচ্ছির হোসেন (প্রকৃত নাম জে আর মোদাচ্ছির আলী) ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং মোহাম্মদ শফিউল আলমের নাম তালিকায় রয়েছে। আছেন সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ ও জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক ও ছহুল হোসাইনের সঙ্গে সাবেক দুজন পুলিশপ্রধানের নামও তালিকায় রয়েছে।

শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হারুন অর রশিদ; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ছাড়াও সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত ও ইকবাল সোবহান চৌধুরীর নাম তালিকায় রয়েছে।

পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ ও মোহাম্মদ সাদিক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল করিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল ও মুহিবুল হক, এফবিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলির নামও তালিকায় রয়েছে। 

নাম দেখে প্রতিক্রিয়া
সার্চ কমিটির তালিকায় নিজের নাম দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সেখানে কীভাবে নিজের নাম গেল, সে বিষয়েও কোনো ধারণা দিতে পারেননি অনেকে। তবে নিজের অজান্তে তালিকায় নাম ওঠায় অনেকেই খুশি হয়েছেন।

পুলিশ সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, কে তাঁর নাম দিয়েছে, তা তিনি জানেন না। এরপরেও ইসিতে দায়িত্ব দেওয়া হলে যাবেন কি না, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। পুলিশ সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকও জানান, দায়িত্ব পেলে তা গ্রহণ করবেন তিনি। সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমানের নাম কে দিয়েছেন, তা জানেন না তিনি। মোখলেছুর রহমান বলেন, ইসিতে রাখা হলে যাবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত তিনি পরে নেবেন।

তালিকায় নাম আছে শুনেই বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এসবের মধ্যে যেতে চাই না।’ সাবেক অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার সারা জীবনে যা অর্জন, তা আমি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে খোয়াতে চাই না। অনুমতি ছাড়া এভাবে নাম দেওয়া বিব্রতকর।’ সার্চ কমিটির তালিকায় নাম ওঠার বিষয়ে অবগত আছেন সাবেক সচিব সিরাজুল হক খান। তালিকায় নাম থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার চাইতে আরও অনেক বেশি যোগ্য লোক প্রস্তাবিত তালিকায় রয়েছেন। আমি মনে করি, তাঁরা দায়িত্বে এলে ভালো হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘মাত্র তো নামের প্রস্তাব এসেছে, দেখা যাক কী হয়।’ অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘এখানে অনেক মানুষের নাম দিয়েছে। যে বা যারা আমার নাম দিয়েছে, তারা আস্থার জায়গা থেকে শিক্ষক হিসেবে হয়তো আমার নাম দিয়েছে।’

তালিকায় নাম থাকা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, ‘যদি আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে আমি নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মানুষের যে বিরূপ ধারণা, তা নিরসনে যথাযথভাবে কাজ করব।’ আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী জানান, তালিকায় নাম থাকলেও তিনি নির্বাচন কমিশনে যোগ দিতে আগ্রহী নন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, তিনিও জানেন না, তাঁর নাম কে দিয়েছে। তালিকায় নাম থাকা সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি আগেই জানিয়েছি, নির্বাচন কমিশনে থাকব না।’

election_search-commisionনিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কে তাঁর নাম প্রস্তাব করেছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণাও নেই। তাই আপাতত নির্বাচন কমিশনে থাকা না থাকা নিয়ে তিনি ভাবছেন না। তালিকায় নাম থাকা মডেল ও নকশাকার বিবি রাসেল বলেন, দায়িত্ব পেলে তা নিতে তিনি রাজি আছেন।

তালিকায় নাম থাকলেও নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের অবস্থানকে বিতর্কিত করতে চান না বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ দিতে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গত ৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে প্রথম বৈঠকের পর সিইসি ও ইসি পদে নাম প্রস্তাব করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। সার্চ কমিটির দ্বিতীয় সভার পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে নাম আহ্বান করা হয়। গত শনি ও রোববার আইনজীবী, শিক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও অধিকারকর্মীদের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করে সার্চ কমিটি। আজ মঙ্গলবার আরও আটজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি।

এদিকে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। কবে নতুন কমিশন গঠন করা হতে পারে, সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আগেই জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকের পর এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। কমিশন ফাঁকা থাকলেও আইনি কোনো জটিলতা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান আর নেই

বাসস, ঢাকা  
মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ফাইল ছবি
মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ফাইল ছবি

টাঙ্গাইল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

আজ বুধবার বেলা ৩টায় রাজধানীর নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, রাজধানীতে নিজ বাসায় বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুতে টাঙ্গাইলে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু ও প্রচার সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

শোকবার্তায় তাঁরা বলেন, মাহমুদুল হাসান আজীবন আদর্শ টাঙ্গাইল গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল মানুষ। শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তাঁর মৃত্যুতে টাঙ্গাইল সদর একজন অভিভাবক হারাল।

সেই সঙ্গে তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মাহমুদুল হাসান ১৯৩৬ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাকোরকোল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনামলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালের উপনির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

সদ্য সমাপ্ত ২০২৫ সালে সারা দেশে অন্তত ৪২৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। ২০২৪ সালে গণপিটুনির ১৬৯টি ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১৪৬ জন এবং আহত ছিল ১২৬ জন। আর ২০২৫ সালে গণপিটুনিতে ১৬৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৪৬০ জন। ২২০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনির ঘটনায় আহত ৪৬০ জনের মধ্যে ৫৫ জন কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ সদস্য।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালে গণপিটুনি বা মব সন্ত্রাস আশঙ্কাজনক বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে এগিয়ে রয়েছে। প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনির ঘটনাগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হয়। নাগরিকের ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার মূল উৎস এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মব সহিংসতা। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের পাওয়ামাত্র গণপিটুনি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার লক্ষণীয় প্রভাব থাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৯৯টি ঘটনায় শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৬০৪ জন। তাদের মধ্যে ৮৬ জন নিহত ও ৫ হাজার ৫১৮ জন আহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ জন বিএনপি, আটজন আওয়ামী লীগ, তিনজন জামায়াতে ইসলামী এবং ১০ জন বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের সাধারণ নাগরিক, যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। ২০২৫ সালে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ১৬৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৭ জন নিহত ও ১৮৭ জন আহত হয়েছেন।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সরকার পতন ও গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ৬৭টি মামলা হয়েছে। মামলায় ৭ হাজার ৭৮০ জনকে সুনির্দিষ্টভাবে আসামি করা হয়েছে এবং ১১ হাজার ১৭৯ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ২৯টি মামলা হয়েছে। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতন-সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩ হাজার ৬৯৫ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’—এর আওতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২২ হাজার ২৮৪ জন। গ্রেপ্তার ১১ হাজার ৩১৩ জন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের কমপক্ষে ১৯টি ঘটনা ঘটেছে। সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কারা হেফাজতে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে পালাতে গিয়ে আট যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৬৪১ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হত্যা, হামলা, হুমকি, আইনি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০২৫ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলাসহ মোট ২৫টি মামলায় ৫৫ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় উপস্থিত হয়ে তাঁর শোকাহত জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানাজা শেষে প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই কঠিন সময়ে তাঁর ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মহল এবং সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট দিতে ১১ লাখ নিবন্ধন, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়াল ইসি

বাসস, ঢাকা  
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে এখন পর্যন্ত ১১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৩ জন ভোটার নিবন্ধন করেছেন। ভোটারদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৮০ হাজার ৪২৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৭ জন।

ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, পূর্বঘোষিত সময়সীমা আজ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রবাস ও দেশের অভ্যন্তরের ভোটারদের বিশেষ অনুরোধে নিবন্ধনের সময় আরও পাঁচ দিন বাড়ানো হয়েছে। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা এই নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া আইনি হেফাজতে (কারাগারে) থাকা ভোটাররাও পোস্টাল ভোটের এই সুবিধা নিতে পারবেন।

প্রবাসী ভোটারদের পরিসংখ্যান

প্রবাসী ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছেন সৌদি আরব থেকে, যার সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ১২ জন। এরপর কাতারে ৬৮ হাজার ৬৬৮, মালয়েশিয়ায় ৬৩ হাজার ৮৩, ওমানে ৫০ হাজার ৩৯ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩১ হাজার ৫৫৫ জন ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। গত ১৮ নভেম্বর থেকে চালু হওয়া এই অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের ১৪৮টি দেশের প্রবাসীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন।

দেশের অভ্যন্তরে নিবন্ধন

দেশের ভেতরে ‘ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোট’ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করেছেন ৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৪ জন। জেলাভিত্তিক তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা, যার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৬৮২ জন। এরপর ঢাকায় ৮২ হাজার ১৮৫ ও চট্টগ্রামে ৭৫ হাজার ৫৮৯ জন। আসনভিত্তিক হিসেবে ফেনী-৩ আসনে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ১৩৯ জন নিবন্ধন করেছেন। এরপর চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ১১ হাজার ৫৮৯ জন ও নোয়াখালী-১ আসনে ১১ হাজার ৪৭৬ জন নিবন্ধন করেছেন।

ব্যালট প্রেরণ কার্যক্রম

প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন বিষয়ক ‘ওসিভি-এসডিআই’ প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান বাসসকে নিশ্চিত করেছেন, গত ১২ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৫ জন প্রবাসী ভোটারের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই পাঠানো হয়েছে ২৭ হাজার ৪৪২টি ব্যালট।

নির্বাচন কমিশন জানায়, নিবন্ধনের জন্য প্রবাসী ভোটারদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত