Ajker Patrika

এসপিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ চান ডিসিরা

শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ০৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রমে হাত দিয়েছে। এই সুযোগে জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে চাইছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ৪৮ বছর আগে স্থগিত হওয়া একটি বিধান কার্যকর করে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) এসিআর লেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের হাতে এবং থানার ওসির এসিআর লেখার কাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বে প্রশাসনের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসিরা এসব প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদের সচিব প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেওয়ার পর ডিসি সম্মেলনে আলোচনার জন্য কার্যপত্র তৈরি করা হবে। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন আয়োজনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিসিদের কাছ থেকে এখনো প্রস্তাব আসছে। নিজেদের নিয়মিত কাজের আলোকে প্রস্তাব করেছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতির আলোকেও বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) এবং ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (ইপিসিএস) কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং পুলিশের আপত্তির মুখে ১৯৭৭ সালে এসপিদের এসিআর (বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন) লেখার এখতিয়ার ডিসিদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই এখতিয়ার ফিরে পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

পদাধিকারবলে জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির প্রধান ডিসি। এসপি ওই কমিটির সদস্য। উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভাপতি ইউএনও। ওসি ওই কমিটির সদস্য। ডিসি-ইউএনওদের অভিযোগ, এসপি-ওসিরা নিজেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিতে না এসে বেশির ভাগ সময় প্রতিনিধি পাঠান। জরুরি প্রয়োজনে অনেক সময় পুলিশের তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যায় না।

এসপিদের এসিআর ডিসিদের ওপর এবং ওসিদের এসিআর ইউএনওদের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন সাতক্ষীরার ডিসি। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কোনো দাপ্তরিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসিআর ডিসি ও ইউএনওদের নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। এসপির এসিআরের অনুমোদনকারী কর্মকর্তা হিসেবে ডিসি এবং ওসির ক্ষেত্রে ইউএনওকে মনোনয়ন করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন তিনি।

গাইবান্ধার ডিসি তাঁর প্রস্তাবে বলেছেন, অনেক আগে থেকে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রধান দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে মূলত পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের সার্বিক আচার-আচরণ ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিফলিত হয় এমন বার্ষিক প্রতিবেদন দেওয়া বিধানসংবলিত পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল, ১৯৪৩-এর ৭৫ (এ) অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ার কারণে (আসলে স্থগিত হয়েছে) প্রায়ই সরকার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

এ বিষয়ে একজন ডিসি বলেন, ‘এসপি-ওসিদের ওপর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা কোন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, গণ-অভ্যুত্থানের পর পুরো জাতি তা দেখেছে। পেশাদার একটি বাহিনী যাতে তাদের পেশাদারি বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে জন্য চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের প্রয়োজন আছে। আমাদের প্রস্তাবকে অন্যভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’

ডিসিদের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না হওয়ায় এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান। এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধান মো. মতিউর রহমান শেখের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

তবে অ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিসিরা এর আগেও এই দাবি তুলেছিলেন, সরকার আমলে নেয়নি। এখন তাঁরা দাবি করতেই পারেন। সরকার কী পদক্ষেপ নিল, সেটাই দেখার বিষয়।

কীভাবে বাতিল হয়েছিল ওই বিধান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। একজন কর্মকর্তা বলেন, সিএসপি এবং ইপিসিএস কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কারণ, স্বাধীন হওয়ার আগে বাংলাদেশ ছিল একটি প্রদেশ। ১৯৭৩ সালের বিসিএসে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সব ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়। কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক অনাস্থা তৈরি হয়। তখন পুলিশ জোরেশোরে দাবি তোলে, তাদের এসিআর ডিসিরা লিখতে পারবেন না। অন্যদিকে সিএসপি কর্মকর্তাদের সংখ্যাও কমতে শুরু করে। ডিসি পদে পদায়ন করা হয় ইপিসিএস কর্মকর্তাদের। তখনকার ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরোধের জেরে ওই সময়কার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ডিসিদের হাত থেকে এসপিদের এসিআর লেখার নিয়ম মৌখিকভাবে স্থগিত করে দেন।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
সাবেক একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখনকার ডিসিদের মান আগের মতো নেই। বিতর্কে জড়ানোয় অনেক ডিসিকে প্রত্যাহার করার নজির রয়েছে। ফলে এসপিদের এসিআর তাঁদের অধীনে নেওয়া খুব একটা সহজ হবে না।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল বলেন, এসপিদের এসিআর লেখার এখতিয়ার ডিসিদের হাতে থাকলেও ওসিদের এসিআর কখনোই ইউএনওদের হাতে ছিল না। এখন এসব করা হলে পুলিশ মানবে না।

আবদুল আউয়াল বলেন, ‘এসিআর লিখলে সম্পর্ক ভালো থাকবে আর এসিআর না লিখলে সম্পর্ক ভালো থাকবে না, বিষয়টি এমন নয়। এসব বাদ দিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গায় আসতে হবে। ৫ আগস্টের আগে পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নাসিক হয়ে গিয়েছিল। তারা মনে করত, তাদের ছাড়া রাষ্ট্র ছাড়া চলবে না, তারাই সব থেকে ক্ষমতাধর, এটাও ঠিক ছিল না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশেরও বাড়াবাড়ি নেই, তা নয়। প্রশাসন কেন মাতবরি করবে, সেই সাইকো হয়তো অনেকের মধ্যে আছে। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো নেতৃত্বের আসনে থাকতে হবে। সব ডিপার্টমেন্টে সম্প্রীতি বাড়ানো দরকার।’

ডিসিদের আরও যত প্রস্তাব
সিলেটের ডিসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারণাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাবের পক্ষে তিনি বলেছেন, জনবিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারণাস্ত্র ও ছররা গুলি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ছররা গুলি মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যরত অবস্থায় বাধ্যতামূলক শরীরে ক্যামেরা ব্যবহার নিশ্চিত করারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

জেলা প্রশাসকের ডিসির অধীনে ১০ থেকে ১৫ সদস্যের স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেছেন মাগুরার ডিসি। তিনি বলেছেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজে কিংবা তাঁর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট, উচ্ছেদ অভিযানসহ ত্রাণ বিতরণ, দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার মতো বিভিন্ন জরুরি কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এর বেশ কিছু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নিজস্ব সুরক্ষা নিয়ে এ ধরনের জরুরি সেবা কার্যক্রম বেগবান করতে ডিসিদের অধীনে বিভিন্ন বাহিনী নিয়ে একটি রেসপন্স ফোর্স স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা প্রয়োজন। এ ধরনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে বিদ্যমান বিভিন্ন বাহিনীর সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে দূরত্ব বা প্রস্তুতিমূলক কারণে সময়ক্ষেপণ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি স্বার্থ বিঘ্নিত হয়।

জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের বাসভবনকে কেপিআই নিরাপত্তায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন ঝিনাইদহের ডিসি। সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করতে গিয়ে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন বরগুনার ডিসি।

টেঁটা যুদ্ধ দমন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নরসিংদীর ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে আলাদা থানা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন সেখানকার ডিসি। মুজিবনগরে স্থলবন্দর করার প্রস্তাব দিয়েছেন এই জেলার ডিসি। রাঙামাটির ডিসি জেলখানার বন্দীদের ঘুমানোর জন্য দ্বিতল শয্যাবিশিষ্ট স্টিলের খাটের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেছেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিরা জীবিত বা মৃত ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় ভাতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি উত্তরাধিকার সম্পত্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জটিলতার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বরগুনার ডিসি।

২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের বিধিমালা তৈরি, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬ ও ১৬ ধারা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নদী-নালা ও পরিবেশ দূষণরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রেলের দখল করা জমি উদ্ধার, দখল হওয়া খাসজমি উদ্ধারে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, সংসদ না থাকায় এবার স্পিকারের সঙ্গে ডিসিদের কোনো কার্য-অধিবেশন হবে না। তবে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একটি কার্য-অধিবেশন রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে কি না, এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ডিসি সম্মেলনে ২১২টি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ১৩০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বা নিষ্পত্তি হয়েছে, ৮২টি বাস্তবায়নাধীন। গত বছরের ডিসি সম্মেলনের ৬২ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসি সম্মেলনের ৮৪ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠেয় জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকেরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিদেশি অতিথিরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে পা রেখেছেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তান সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পা রাখেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর ফাসিহ উল্লাহ খান জানান, বিমানবন্দরে স্পিকারকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, স্পিকারকে বহনকারী ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়েই অবতরণ করে।

এর কিছুক্ষণ আগে, বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের পক্ষ থেকে এই উচ্চপর্যায়ের জানাজায় অংশগ্রহণকে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভুটান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম সামাদ জানান, বিমানবন্দরে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।

আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সমাগম শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রাষ্ট্রীয় জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন তিনবার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। তাঁর শেষ বিদায়ে আজ দেশ শোকাহত। আর শোক ধারণ করে হাজারো মানুষের ভিড় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যেখানে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা।

সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদেরও। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না, কেউ নীরবে বসে আছেন মন ভার করে। পুরো এলাকা জুড়ে শোক আর নীরবতার আবহ।

লালবাগ থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আজ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি, তারেক রহমান যেন দেশের হাল ধরতে পারেন।’

সংসদ-এলাকা

সাভার থেকে আসা দুই বন্ধু স্বপন শেখ ও মো. রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে এভাবে বিদায় দিতে হবে, ভাবিনি। তিনি জীবনে এত ত্যাগ করেছেন, অথচ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর একমাত্র প্রাপ্তি—বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’

বগুড়া থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা মনোয়ার হোসেন মামুন বলেন, ‘এ দেশ যাঁরা শাসন করেছেন, তাঁদের সবার গায়েই কোনো না কোনো কলঙ্ক আছে। কেবল বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কলঙ্ক নেই। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশেই ছিলেন। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিলে তিলে এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর বিচার জনসম্মুখে হতে হবে—যে সরকারই আসুক।’

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপি মনোনীত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

দাফনকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জুড়েই জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় দপ্তর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের সড়কগুলোতেও অবস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তিনি কী কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার শোক বইয়ে স্বাক্ষর করতে মানুষের ঢল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৭
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের আবহ বিরাজ করছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক ও সর্বস্তরের জনগণ।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে খোলা হয় শোক বই। এর পর থেকে আসতে থাকেন দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আজ রাতে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তাঁরা রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শোক প্রকাশ করেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।

শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শোক বইয়ে স্বাক্ষর করে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন।

শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: সংগৃহীত
শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে। দলটির নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আজ সন্ধ্যায় শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

খালেদা জিয়ার প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানাতে শোক বইটি উন্মুক্ত রয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্ব ও সর্বস্তরের মানুষ স্বাক্ষর অব্যাহত রেখেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত