Ajker Patrika

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন

শেখ হাসিনার নির্দেশে নৃশংসতা

  • ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সুপরিকল্পিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন।
  • সরকার চাইলে এসব অভিযোগ নিয়ে আইসিসিতে যেতে পারে।
  • রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করা, র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ।
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১: ৪৩
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের হত্যা, নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে। তাঁর ও অন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ও তদারকিতে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা, নির্যাতন ও গ্রেপ্তার করে। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সুপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

এসব তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার চাইলে এসব অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যেতে পারে। প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করা, র‍্যাব বিলুপ্ত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) গতকাল বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থার সদর দপ্তর ও অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে ১১৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। আহত হয় হাজার হাজার মানুষ। হতাহতদের অধিকাংশ নির্বিচার গুলির শিকার হয়। নিহতদের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ (অন্তত ১৮০ জন) ছিল শিশু। গ্রেপ্তার করা হয় ১১ হাজার ৭০২ জনকে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতায় টিকে থাকতে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার ও আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটায়। পুলিশ, র‍্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এতে জড়িয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আসাদুজ্জামান খান) ও অন্য কর্মকর্তারা একাধিক বড় ধরনের অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারক করেন। এসব অভিযানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করে। নির্বিচার গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনকি একেবারে সামনে থেকেও গুলি করা হয়।

জাতিসংঘের এই সংস্থার হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত কৌশল, যার মাধ্যমে জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, বিক্ষোভ দমনের কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানার মধ্যে, তাঁদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক ও ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে এ বিষয়গুলোর আরও ফৌজদারি তদন্ত প্রয়োজন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এক মাসের তদন্তে ১৪ ধরনের অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আন্দোলন দমনে বিচারবহির্ভূত হত্যা, প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে নির্বিচার গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, ভীতি প্রদর্শন, চিকিৎসায় বাধা ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে টার্গেট কিলিং হয়েছে।

ফলকার তুর্ক বলেন, যেসব সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে, তাতে ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে ওঠে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর। এসব কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগও গঠন করা যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকার চাইলে এসব অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) যেতে পারে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ড. ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনাবলির বিষয়ে একটি তথ্য অনুসন্ধান দল পাঠায়। প্রতিবেদন তৈরিতে সংস্থাটি ১৫৩টি হতাহতের ঘটনার ফরেনসিক বিশ্লেষণ, ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ২৩০টি সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার ৯৫৯টি বক্তব্য ও হাজারো ছবি, ভিডিও, ভয়েস রেকর্ড ও দলিল ব্যবহার করেছে। চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুরেও অনুসন্ধান হয়।

প্রতিবেদনে এসব ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, এসবি, সিটিটিসি, গোয়েন্দা সংস্থা, এনটিএমসি ও বিজিবিকে দায়ী করা হয়।

প্রতিবেদনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। পুলিশকে উদ্দেশ করে দুই হাত ছড়িয়ে ‘আমাকে গুলি করুন’ বলে তাঁর চিৎকারসহ পুরো ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র ও ভূ-অবস্থান প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তকারীরা ওই হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটেছে, তা সাক্ষ্যপ্রমাণের জন্য পুনর্নির্মাণ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু সাঈদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভের সামনের সারিতে থাকায় নারীসহ নেতৃত্ব দানকারীদের অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের আক্রমণের শিকার হন। প্রতিবেদনে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে শারীরিক আক্রমণ ও ধর্ষণের হুমকি রয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করেন, এর লক্ষ্য ছিল নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ দমনের সময় শিশুদেরও হত্যা ও পঙ্গু করেছে। তাদের নির্বিচার গ্রেপ্তার, অমানবিক অবস্থায় আটক ও অত্যাচার করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৮৪১টি হত্যা ও ১৩ হাজার ৫২৯ ব্যক্তির আহত হওয়ার ঘটনা তালিকাভুক্ত করলেও এটি ছিল অসম্পূর্ণ। পুলিশ ও র‍্যাব ১১ হাজার ৭০২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

জাতিসংঘ বলছে, নিহত ব্যক্তিদের ৬৬ শতাংশ রাইফেল, ১২ শতাংশ শটগান, ২ শতাংশ পিস্তল ও ২০ শতাংশ অনান্য অস্ত্রের গুলির শিকার হন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধানমন্ডিতে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী প্রায় ২০০টি ধাতব গুলির কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যায়। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে মা-বাবা বিক্ষোভে নিয়ে যাওয়া ছোট্ট শিশু, পথচারী ও দর্শকও ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে ছয় বছরের একটি মেয়েকে বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ দেখার সময় মাথায় গুলি করা হয়।

প্রতিবেদনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নেওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর অস্বীকৃতির ঘটনাও তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, হাসপাতালগুলো থেকে তাঁদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয় এবং চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের ভয় দেখানো হয়। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজও জব্দ করা হয়। এতে স্পষ্ট, আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়া রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহিংসতার মাত্রা কোন পর্যায়ে ছিল যে তা গোপন করার চেষ্টা করা হচ্ছিল।

প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের কর্মী ও পুলিশের প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপর সহিংসতার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত সরকার ৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। এমন ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের অনেকে এখনো দায়মুক্তি ভোগ করছে।

জাতিসংঘ বলছে, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের জেরে ওই বিক্ষোভের সূত্রপাত হলেও এর পেছনে ছিল ধ্বংসাত্মক ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি এবং প্রশাসন থেকে সৃষ্ট বিস্তৃত ক্ষোভ, যা অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করেছিল।

ফলকার তুর্ক বলেন, এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি পেছনে ফেলে বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো, একটি বিশদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গত জুলাই-আগস্টের ভয়াবহ অন্যায়গুলোর সত্য উন্মোচন, নিরাময় ও জবাবদিহির মুখোমুখি করা। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার প্রতিকার করা। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। তিনি সত্য উন্মোচনে একটি জাতীয় কমিশন (ট্রুথ কমিশন) গঠনের তাগিদ দিয়ে বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত না দিলে কীভাবে আইনের মুখোমুখি করা যাবে, এ প্রশ্নে ফলকার তুর্ক বলেন, এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের সুযোগ রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ও অন্যান্য আদালতে ঘটনাগুলোর বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রতিবেদনে নিরাপত্তা ও বিচার খাতের সংস্কার, নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার জন্য প্রণীত দমনমূলক আইন ও প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থায় বৃহত্তর পরিবর্তন আনাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘ সংস্থাটি বেশ কিছু সুপারিশও করেছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে: রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করা; র‍্যাব বিলুপ্ত করা; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে বাহিনীটির ব্যাপক সংস্কার; পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের আইন লঙ্ঘনের ঘটনার জবাবদিহির জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন; বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ করা; পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের সামরিকীকরণ বন্ধ করা; বিজিবি ও ডিজিএফআইকে তাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্বে সীমিত রাখা; গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করে এমন আইনি বিধান বাতিল করা; এনটিএমসির বেআইনি নজরদারি বন্ধ করা।

এর বাইরে অবৈধ সম্পদ ও অর্থ আটক এবং দেশে ফিরিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ রাতে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এমভি কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চ। ছবি: সংগৃহীত
এমভি কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চ। ছবি: সংগৃহীত

ঘন কুয়াশার কারণে আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সব ধরনের নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

আজ বিআইডব্লিউটিএর জারি করা এক বিশেষ নৌ চলাচল বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে যেসব লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রাপথে রয়েছে, সেসবসহ অন্য সব নৌযানকে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বিধিমালা, ১৯৭৬ অনুসরণ করে চলাচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি জাকির সম্রাট-৩ ও বরিশালগামী অ্যাডভেঞ্চার-৯ নামে দুই লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চার যাত্রী নিহত হন এবং আহত হন বেশ কয়েকজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬ শিক্ষানবিশ এএসপিকে চাকরি থেকে অপসারণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
৬ শিক্ষানবিশ এএসপিকে চাকরি থেকে অপসারণ

৪১তম বিসিএস ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া ছয় শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারকে (এএসপি) চাকরি থেকে অপসারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অপসারণ করা এএসপিরা হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন, মাহমুদুল হক, মো. ইসহাক হোসেন, মো. মশিউর রহমান, মুহাম্মদ রাকিব আনোয়ার ও সাঈদ করিম মুগ্ধ।

আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালার ৬এর ২(এ) বিধি অনুযায়ী ওই ছয় শিক্ষানবিশ এএসপিকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

বিধিতে বলা আছে, শিক্ষানবিশ মেয়াদ চলাকালে কেউ সংশ্লিষ্ট চাকরিতে বহাল থাকার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে সরকারি কর্ম কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ না করেই সরাসরি নিয়োগ অবসান করতে পারবে সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের ‘অতিরঞ্জিত’ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৬
সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের ‘অতিরঞ্জিত’ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে অতিরঞ্জিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বর্ণনা করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন মহলকে সংখ্যালঘু বিষয়ে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।

আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তিনি বিকেলে সাংবাদিকদের এই বিবৃতির কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাঁর মন্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন নয়। বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এমন কোনো বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণনা বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে।’

বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধমূলক ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে সেটার অপব্যবহার করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু মহলে বাছাই করা ও পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সাধারণ ভারতীয় জনগণকে বাংলাদেশ, ভারতের বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যে ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছেন, তিনি ছিলেন তালিকাভুক্ত অপরাধী। চাঁদাবাজির সময় তাঁর মুসলিম সহযোগীর সঙ্গে থাকা অবস্থায় তাঁর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘটে, যাঁকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অপরাধমূলক ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা বাস্তবসম্মত নয়, বরং বিভ্রান্তিকর।

বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন মহলকে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে, যা সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থার চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনকে সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব ধরনের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সব ধরনের সাইবার অপরাধকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

ড. ইউনূস বলেন, সরকার সব ধরনের নাগরিক সেবাকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে অনেক সেবা দেশে ও বিদেশে অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। এসব সেবাকে সুরক্ষিত ও নির্বিঘ্ন রাখতে হলে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। নাগরিক সেবার খাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস আরও বলেন, সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিসহ যেসব প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে, তাদের নিয়মিত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি এসব ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত জনবলকে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট জনবলকে একটি রেটিং পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাইবার সুরক্ষাসহ প্রকৃত মূল্যায়ন সহজ হয়। ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে কোনো অপরাধ করে যেন কেউ পার পেয়ে না যায়—সে বিষয়েও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে বিচার বিভাগের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইতিমধ্যে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজব, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশনসহ অন্যান্য সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এবং বিটিআরসির মধ্যকার সমন্বয়সাধনের বিষয়ে জোর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের সাইবার নিরাপত্তা আরও দৃঢ় করতে ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আরও কিছু কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া তিনি সেক্টরাল সার্ট (সিইআরটি) গঠনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্যসচিব ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক ড. মো. তৈয়বুর রহমান পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এজেন্সির কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাসহ সাইবার পরিমণ্ডলে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রণীত ‘সাইবার ইনসিডেন্ট রিপোর্টিং অ্যান্ড রেস্পনস সিস্টেম’-এর বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

২১ মে সাইবার সুরক্ষা অধ‍্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়নের পর এই সংশোধিত অধ‍্যাদেশের অধীনে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২৬ আগস্ট জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল গঠিত হয়। ২৫ সদস্যের এই কাউন্সিলের নেতৃত্বে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত