Ajker Patrika

১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে সমস্যাটা সিস্টেমে: রেহমান সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে সমস্যাটা সিস্টেমে: রেহমান সোবহান

পনেরো বছর ধরে যদি একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। তবে এসব বিষয়ে মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান। 

আজ শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জন শুনানি: জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। 

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘দেশে যে গত কয়েক বছরে উন্নতি হয়েছে সেটি অস্বীকার করা যাবে না। তবে যেসব বিষয় বা বক্তব্য মাঠ থেকে উঠে আসছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। আদিবাসীদের স্বীকৃতি ও তাঁদের ভূমির সমস্যা, গার্মেন্টস কর্মীদের সমস্যা, প্রান্তিক মানুষদের সমস্যা—এগুলো প্রায় গত ১৫ বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায় থেকে মন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত যোগাযোগ, সমস্যা নির্ধারণ ও তা সমাধান করার ঘাটতি রয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

প্রখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘এই যে আজকে আদিবাসীরা ও সংখ্যালঘু তাঁদের সমস্যার কথা বললেন, তা সমাধানে কেন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না এই উত্তর কিন্তু আজকে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি। যদি ১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তনের উদ্যোগ মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাঁদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।’ 

এই বক্তব্যের জবাবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেখুন, এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে পুরোনো অনেক আইনের পরিবর্তন হচ্ছে। আমরাও প্রয়োজনে পুরোনো আইনের পরিবর্তন করব।’ 

প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি আমাদেরও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, আবার সফলতাও আছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের পর পরবর্তী ২১ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৫২ ডলার। গত ১৪ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ১০০ ডলারের বেশি। এতেই বোঝা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটা হয়েছে। তবে এটা ঠিক উন্নয়নের ধারায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। নইলে শিল্পায়ন হবে না।' 

মন্ত্রী আরও বলেন, `আজকে যেভাবে সবাই খোলামেলাভাবে মতামত দিলেন আগে কেউ এভাবে মতামত দিতে পারত না। তবে এখনো সমস্যা রয়েছে এটা ঠিকই। দেশ পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হয়ে গেছে সেটাও বলব না। তবে দেশকে দুষ্টুমুক্ত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশপ্রেমের জন্য কোনো ট্যাবলেট নেই। যে দুর্নীতি করে তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই। আমরা এসব সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং যাব।’ 

জন মতামত পর্বে কথা বলেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যাংকার সঞ্জীবনী বলেন, ‘আজকে আমি বাংলাদেশের প্রথম হিজড়া ব্যাংকার। এই পর্যায়ে আসতে যে আমাকে কতটা কষ্ট, কতটা লড়াই করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমার মতো অন্য হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডারের মানুষ সমাজে যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে জন্য আরও সহজ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’ 

ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল বলেন, ‘এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ১০০–এর মতো সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু ৩০০–এর বেশি সেনাক্যাম্প এখনো রয়ে গেছে। এগুলো প্রত্যাহার করা দরকার। আমাদের জুম্ম জনগণদের ভূমি এখনো দখল করা হচ্ছে, নানা রকম নিপীড়ন করা হচ্ছে। এগুলো কবে বন্ধ হবে?’ 

চা শ্রমিক রাহেলা আক্তার বলেন, ‘এখন ১৭০ টাকা মজুরিতে আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা কি ভিনগ্রহ থেকে আসছি? কেন আমাদের প্রতি এ বৈষম্য করা হচ্ছে?’ 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর থেকে আশা গার্মেন্টসকর্মী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘করোনার সময় আমরাই দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছি। তাহলে কেন আমাদের মজুরি বাড়ানোর জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে?’ 

বান্দরবান থেকে আসা হেডম্যান জয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা যখন নারী নির্যাতনের কোনো বিষয় নিয়ে বসি, তখন প্রশাসনের চাপে নারী নির্যাতন ইস্যুগুলোর সমাধান করতে পারি না। প্রশাসনই তো নারী নির্যাতনের পক্ষে কাজ করছে।’ 

দিনাজপুরের সাদা মারান্ডি বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন করার কথা থাকলেও সেটা এখনো করা হয়নি।’ 

রোজমেরি করবী বলেন, ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার কথা ছিল। কিন্তু এগুলো করা হলে আমাদের সংখ্যালঘুদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেতো।’ 

এ ছাড়া মাদকের বিস্তার ও মাদক ব্যবসায় রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা, ঘুষ ছাড়া সরকারি দপ্তরে কোনো কাজ করতে না পারা এবং পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করার কথাও বলেন অনেকে। 

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আজ আমরা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছি। আমাদের এখনো আদিবাসী বলা হবে নাকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি নাকি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বলা হবে তা নিয়ে বিতর্ক করা হয়। এটা বড়ই কষ্টের, বড়ই দুঃখের।’ 

বিশেষজ্ঞ বক্তাদের মধ্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দরকার। এ স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে, ফেসবুকে কিছু লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর সরকারের অস্বীকার করার প্রবণতা আছে। ঋণ খেলাপিদের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।’ 

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা আইন করে কেন গাইড বই বন্ধ করা হচ্ছে না? হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও কোচিং সেন্টার ও কোচিং বাণিজ্য কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? এ জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের জনগণের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। দেশের সব গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ 

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘রাজনীতি সুস্থ থাকলে মানুষ সুস্থ থাকে, দেশ সুস্থ থাকে। দেখি আজ মাদক কারবারি, নদী খেকো, বন খেকো এরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতিকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি জোর দেয় কারণ বড় বড় প্রজেক্ট থেকে বিশাল টাকা লুটপাট করা যায়। এই লুটপাটের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়, কারণ সেখান থেকে তো বেশি লুটপাট করা যায় না।’ 

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বলেন, ‘রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করতে হবে। এটা ছাড়া দেশের স্থিতিশীলতা আসবে না।’ 

অর্থনীতিবিদ ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব পরিবর্তনের কথা বলছি সে জন্য সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। রাজনৈতিক প্রান্তিকতা জরুরি। নীতি ও সেবার জায়গায় জনগণের অন্তর্ভুক্তির জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। এই আজকের যেসব কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে এসব কণ্ঠস্বরকে কীভাবে শক্তিশালী করব সেটি খুঁজে বের করতে হবে।’ 

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের এসডিজি স্থানীয়করণ করতে হবে। তৃণমূলের মানুষগুলো যাতে ক্ষমতায়িত সেই চেষ্টা করতে হবে।’ 
 
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘কিছু সমস্যা স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে। সবকিছু সরকার হাত ধরে এগিয়ে দেবে না। আমাদের নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। ছবি: আজকের পত্রিকানাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আজকে কি আমাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে? দেশ, ক্ষমতা এগুলো তো চলে গেছে কালো টাকার মালিকদের কাছে। একটা ছোট কাজের জন্য স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম, বলল দুই হাজার টাকা না দিলে আপনার কাজ হবে না। জেলা প্রশাসকের হাতে এত ক্ষমতা কেন, এই ক্ষমতা কমিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে।’ 

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন—অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সাবেক বিচারপতি নিজামুল, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। 

এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিপিডির সহযোগী গবেষক ফাবিয়া বুশরা খান। এই জন শুনানিতে সহযোগিতা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, হিকস বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এআইডি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বাংলাদেশ। 

সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল—অ্যাকশন এইড, আর্টিকেল নাইনটিন, বন্ধু, ব্লাস্ট, কারিতাস বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট, ক্রিশ্চিয়ান এইড, ডাক দিয়ে যাই, নাগরিক উদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন, সলিডারিটি, দ্য হাঙ্গার প্রোজেক্ট, ওয়ার্ল্ড ভিশন, এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম পভার্টি-এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন, বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও ঘাসফুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেজগাঁও বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে জনস্রোত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
পুরাতন বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। ছবি: ফেসবুক
পুরাতন বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। ছবি: ফেসবুক

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে জমকালো ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল নেমেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিমানবন্দরমুখী মানুষের স্রোত দেখা যায়। তবে নির্ধারিত সময়ের পরও এয়ার শো শুরু না হওয়ায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন হাজারো দর্শক।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল পৌনে ১০টার দিকে আগারগাঁও-সংলগ্ন পুরোনো বিমানবন্দরের ফটকে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে সবাইকে একে একে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ততক্ষণে শত শত পরিবার, শিশু ও উৎসুক জনতা বিমানবন্দরে প্রবেশ করে ভিড় জমিয়েছে।

আগত দর্শনার্থীদের হাতে শোভা পাচ্ছে জাতীয় পতাকা। অনেকের কপালে বাঁধা জাতীয় পতাকার আদলের ফিতা কিংবা ‘বিজয় দিবস’ লেখা কাপড়। অনেকেই পরিবারের সঙ্গে লাল-সবুজের পোশাক পরে এসেছে বিজয় উৎসবের এই বিশেষ প্রদর্শনী উপভোগ করতে।

গতকাল সোমবার এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছিল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে এই জমকালো এয়ার শো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এয়ার শো শুরু হয়নি। জনসমাগম হলেও অনুষ্ঠান শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তথ্যবিবরণীতে সরকার জানিয়েছে, এই এয়ার শো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর ও এর আশপাশ এলাকায় আজ কোনো প্রকার ড্রোন না ওড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিজয়ের ৫৪তম বছর উপলক্ষে এয়ার শোতে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্যারাট্রুপিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের শেষ ৬ জন পোশাকে নিজেদের নেমপ্লেটের পরিবর্তে সুদানের ইউএন ঘাঁটিতে নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের নেমপ্লেট পরে প্যারাট্র‍্যুপিং করবেন।

এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যান। আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মহান বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি।

এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদর্শন করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। এরপর রাষ্ট্রপতি সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি বের হয়ে যাওয়ার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ৬টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা।

বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধান স্মৃতিসৌধে উপস্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরই জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। ৫৫তম মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুদকের তদন্ত: ৭ দেশে জাবেদের আরও ৬১৫ সম্পদের সন্ধান

  • কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ সাতটি দেশে বিপুল সম্পদ।
  • নতুন ৩৮১টিসহ যুক্তরাজ্যে মোট সম্পদ ৭২৪টি।
  • নতুনগুলোসহ মোট ১ হাজার ১০০টি সম্পদের নথি দুদকের হাতে।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩২
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত

পাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদ গড়ে আলোচনায় থাকা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়ার গেছে। কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ সাতটি দেশে বিপুল এই সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের নথিসহ মোট ১ হাজার ১০০টির মতো সম্পদের নথি রয়েছে তাদের কাছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি এবং তাঁর নামে থাকা কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। আর এসব সম্পদ রয়েছে প্রায় ১০টি দেশে। সম্পদগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা।

বিএফআইইউ ও দুদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে যে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, তার বেশির ভাগই যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে ৩৮১টি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর আগে একই দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে ৩৪৩টি সম্পদের তথ্য পায় দুদক। সব মিলিয়ে শুধু যুক্তরাজ্যেই তাঁর ৭২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেল।

এ ছাড়া, কম্বোডিয়ায় ১১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪৮ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ায় ৪৭টি সম্পদ পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ২৪২ ডলার। ফিলিপাইনে ২টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯০ পেসো, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকা। ভারতের হরিয়ানা, উত্তর চব্বিশপরগনাসহ দেশটিতে মোট ১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৪ ডলার।

সাইফুজ্জামান জাবেদের নামে থাইল্যান্ডে ২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯ থাই বাত। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪টি সম্পদ ও ২টি কোম্পানির লাইসেন্স রয়েছে। ভিয়েতনামে ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরে সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। সুইজারল্যান্ডেও তাঁর সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নেতৃত্বে থাকা দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা তাঁর যে অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করছি, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে এক হাজারের বেশি সম্পদ থাকার নথি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি নথিতেই ভিয়েতনামে তাঁর ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, সাইফুজ্জামান জাবেদ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচারের মাধ্যমে সম্পদ তৈরি করেন। অবৈধ অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের টাকা তিনি তাঁর সেসব দেশের এজেন্ট দিয়ে সংগ্রহ করেছেন, পরে দেশে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি জানান, জাবেদ তাঁর পাচারের অর্থ দিয়ে ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও ব্যবসা গড়ে তোলেন। পরে সেগুলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন।

পাচারের অর্থ দেশে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনার জন্য যথাযথ আইনিপ্রক্রিয়া শেষ করে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স পাঠাতে হবে। যদিও যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়, তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলে এটি সহজ হয়। আমাদের এমন চুক্তি নেই বললেই চলে। এ কারণে পাচারের অর্থ ফেরত আনা বেশ কঠিন।’

মঈদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি বলব, প্রক্রিয়া যত কঠিনই হোক, দুদককে সঠিক প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের অর্থগুলো পাচার হয়ে যেসব দেশে যায়, সেসব দেশ দুর্নীতির সূচকে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে। কিন্তু পাচারের অর্থ যখন তাদের দেশে যায়, তখন তারা তা ফেরতে সহযোগিতা না করে উল্টো সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে। এটা তাদের দ্বৈত নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।’

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাজ্যে জাবেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে দুদক। এ লক্ষ্যে সে দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে দুদক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তসাগর পাড়ি দিয়ে পুব আকাশে স্বাধীনতার সূর্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বেলা পৌনে ১১টায় উপকণ্ঠ থেকে মূল ঢাকা শহরে প্রবেশ করেন বিজয়ী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সেনারা। অন্যদিকে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ে চলতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি।

১৫ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সদর্প বিচরণের শেষ দিন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কার্যত ঢাকায় পাকিস্তানি দুর্গের পতনের ক্ষণগণনা চলছিল। উপায় না দেখে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আবদুল্লাহ খান নিয়াজি শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ১৫ তারিখ আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকব ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা এসে পৌঁছান। বিকেল ৪টার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ন সেনা ঢাকায় প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার এত দিনের জনবিরল সড়কগুলো ক্রমেই জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে। সবার মুখে একাত্তরের পরিচিতি রণধ্বনি’ জয় বাংলা’।

কারফিউ জারি থাকলেও মানুষ তার পরোয়া না করে রাস্তায় বেরিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। পাকিস্তানি বাহিনীর নয় মাসের গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের পর মুক্তির আনন্দে তাঁরা তখন আত্মহারা। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে তাঁরা পেয়েছেন নতুন দেশ—বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দ, স্বজন হারানোর শোক আর অজানা আগামীর প্রত্যাশায় সবার মনে এক বিচিত্র অনুভূতি। এর মধ্যেও ঘটে কিছু দুঃখজনক ঘটনা। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পলায়নপর কিছু পাকিস্তানি সেনা ও বিহারি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে অনেক বাঙালিকে হতাহত করে।

বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার, ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও অন্য সামরিক কর্মকর্তারা বিমানে ঢাকা অবতরণ করেন। এর কিছু সময় পরই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল উৎফুল্ল জনতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি সমরাধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি। পাকিস্তানি বাহিনীর দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হলো বাংলাদেশ। সগর্বে জায়গা করে নিল বিশ্বের মানচিত্রে।

ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বরই ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারেন আগের কয়েক দিনে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, লেখকসহ বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর। নিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় সহযোগীরা তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল; কিন্তু কেউই আর ফিরে আসেননি। দেশের এই মেধাবী, কৃতী সন্তানদের পরিণতির কথা ভেবে জনমনে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। পরদিনই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমির বীভৎস দৃশ্যের খবর। রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বিভিন্ন জায়গার অনেক বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় নির্যাতিত মানুষের ক্ষতবিক্ষত দেহ। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের অনেকের হাত বা চোখ বাঁধা, বেয়নেট বা গুলিতে বিদ্ধ লাশের খোঁজ মেলে রায়েরবাজারে। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে এই শোকের খবর, বধ্যভূমির ভয়াবহ দৃশ্য স্তম্ভিত করে মানুষকে।

এদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কাজে লেগে যায় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। ১৬ ডিসেম্বরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত প্রবাসী সরকার সদর দপ্তর থেকে গোটা দেশে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি পাঠানো শুরু হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ায় শুরু হয় পুরো সরকারের দেশে ফেরার প্রক্রিয়াও। ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই উনিশটি জেলার জন্য জেলা প্রশাসকদের মনোনয়ন ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছিল। শুরু হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের নতুন কঠিন যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত