Ajker Patrika

১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে সমস্যাটা সিস্টেমে: রেহমান সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে সমস্যাটা সিস্টেমে: রেহমান সোবহান

পনেরো বছর ধরে যদি একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। তবে এসব বিষয়ে মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান। 

আজ শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জন শুনানি: জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। 

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘দেশে যে গত কয়েক বছরে উন্নতি হয়েছে সেটি অস্বীকার করা যাবে না। তবে যেসব বিষয় বা বক্তব্য মাঠ থেকে উঠে আসছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। আদিবাসীদের স্বীকৃতি ও তাঁদের ভূমির সমস্যা, গার্মেন্টস কর্মীদের সমস্যা, প্রান্তিক মানুষদের সমস্যা—এগুলো প্রায় গত ১৫ বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায় থেকে মন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত যোগাযোগ, সমস্যা নির্ধারণ ও তা সমাধান করার ঘাটতি রয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

প্রখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘এই যে আজকে আদিবাসীরা ও সংখ্যালঘু তাঁদের সমস্যার কথা বললেন, তা সমাধানে কেন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না এই উত্তর কিন্তু আজকে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি। যদি ১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তনের উদ্যোগ মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাঁদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।’ 

এই বক্তব্যের জবাবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেখুন, এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে পুরোনো অনেক আইনের পরিবর্তন হচ্ছে। আমরাও প্রয়োজনে পুরোনো আইনের পরিবর্তন করব।’ 

প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি আমাদেরও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, আবার সফলতাও আছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের পর পরবর্তী ২১ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৫২ ডলার। গত ১৪ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ১০০ ডলারের বেশি। এতেই বোঝা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটা হয়েছে। তবে এটা ঠিক উন্নয়নের ধারায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। নইলে শিল্পায়ন হবে না।' 

মন্ত্রী আরও বলেন, `আজকে যেভাবে সবাই খোলামেলাভাবে মতামত দিলেন আগে কেউ এভাবে মতামত দিতে পারত না। তবে এখনো সমস্যা রয়েছে এটা ঠিকই। দেশ পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হয়ে গেছে সেটাও বলব না। তবে দেশকে দুষ্টুমুক্ত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশপ্রেমের জন্য কোনো ট্যাবলেট নেই। যে দুর্নীতি করে তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই। আমরা এসব সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং যাব।’ 

জন মতামত পর্বে কথা বলেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যাংকার সঞ্জীবনী বলেন, ‘আজকে আমি বাংলাদেশের প্রথম হিজড়া ব্যাংকার। এই পর্যায়ে আসতে যে আমাকে কতটা কষ্ট, কতটা লড়াই করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমার মতো অন্য হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডারের মানুষ সমাজে যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে জন্য আরও সহজ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’ 

ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল বলেন, ‘এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ১০০–এর মতো সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু ৩০০–এর বেশি সেনাক্যাম্প এখনো রয়ে গেছে। এগুলো প্রত্যাহার করা দরকার। আমাদের জুম্ম জনগণদের ভূমি এখনো দখল করা হচ্ছে, নানা রকম নিপীড়ন করা হচ্ছে। এগুলো কবে বন্ধ হবে?’ 

চা শ্রমিক রাহেলা আক্তার বলেন, ‘এখন ১৭০ টাকা মজুরিতে আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা কি ভিনগ্রহ থেকে আসছি? কেন আমাদের প্রতি এ বৈষম্য করা হচ্ছে?’ 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর থেকে আশা গার্মেন্টসকর্মী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘করোনার সময় আমরাই দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছি। তাহলে কেন আমাদের মজুরি বাড়ানোর জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে?’ 

বান্দরবান থেকে আসা হেডম্যান জয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা যখন নারী নির্যাতনের কোনো বিষয় নিয়ে বসি, তখন প্রশাসনের চাপে নারী নির্যাতন ইস্যুগুলোর সমাধান করতে পারি না। প্রশাসনই তো নারী নির্যাতনের পক্ষে কাজ করছে।’ 

দিনাজপুরের সাদা মারান্ডি বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন করার কথা থাকলেও সেটা এখনো করা হয়নি।’ 

রোজমেরি করবী বলেন, ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার কথা ছিল। কিন্তু এগুলো করা হলে আমাদের সংখ্যালঘুদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেতো।’ 

এ ছাড়া মাদকের বিস্তার ও মাদক ব্যবসায় রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা, ঘুষ ছাড়া সরকারি দপ্তরে কোনো কাজ করতে না পারা এবং পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করার কথাও বলেন অনেকে। 

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আজ আমরা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছি। আমাদের এখনো আদিবাসী বলা হবে নাকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি নাকি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বলা হবে তা নিয়ে বিতর্ক করা হয়। এটা বড়ই কষ্টের, বড়ই দুঃখের।’ 

বিশেষজ্ঞ বক্তাদের মধ্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দরকার। এ স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে, ফেসবুকে কিছু লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর সরকারের অস্বীকার করার প্রবণতা আছে। ঋণ খেলাপিদের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।’ 

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা আইন করে কেন গাইড বই বন্ধ করা হচ্ছে না? হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও কোচিং সেন্টার ও কোচিং বাণিজ্য কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? এ জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের জনগণের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। দেশের সব গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ 

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘রাজনীতি সুস্থ থাকলে মানুষ সুস্থ থাকে, দেশ সুস্থ থাকে। দেখি আজ মাদক কারবারি, নদী খেকো, বন খেকো এরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতিকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি জোর দেয় কারণ বড় বড় প্রজেক্ট থেকে বিশাল টাকা লুটপাট করা যায়। এই লুটপাটের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়, কারণ সেখান থেকে তো বেশি লুটপাট করা যায় না।’ 

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বলেন, ‘রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করতে হবে। এটা ছাড়া দেশের স্থিতিশীলতা আসবে না।’ 

অর্থনীতিবিদ ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব পরিবর্তনের কথা বলছি সে জন্য সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। রাজনৈতিক প্রান্তিকতা জরুরি। নীতি ও সেবার জায়গায় জনগণের অন্তর্ভুক্তির জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। এই আজকের যেসব কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে এসব কণ্ঠস্বরকে কীভাবে শক্তিশালী করব সেটি খুঁজে বের করতে হবে।’ 

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের এসডিজি স্থানীয়করণ করতে হবে। তৃণমূলের মানুষগুলো যাতে ক্ষমতায়িত সেই চেষ্টা করতে হবে।’ 
 
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘কিছু সমস্যা স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে। সবকিছু সরকার হাত ধরে এগিয়ে দেবে না। আমাদের নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। ছবি: আজকের পত্রিকানাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আজকে কি আমাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে? দেশ, ক্ষমতা এগুলো তো চলে গেছে কালো টাকার মালিকদের কাছে। একটা ছোট কাজের জন্য স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম, বলল দুই হাজার টাকা না দিলে আপনার কাজ হবে না। জেলা প্রশাসকের হাতে এত ক্ষমতা কেন, এই ক্ষমতা কমিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে।’ 

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন—অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সাবেক বিচারপতি নিজামুল, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। 

এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিপিডির সহযোগী গবেষক ফাবিয়া বুশরা খান। এই জন শুনানিতে সহযোগিতা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, হিকস বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এআইডি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বাংলাদেশ। 

সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল—অ্যাকশন এইড, আর্টিকেল নাইনটিন, বন্ধু, ব্লাস্ট, কারিতাস বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট, ক্রিশ্চিয়ান এইড, ডাক দিয়ে যাই, নাগরিক উদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন, সলিডারিটি, দ্য হাঙ্গার প্রোজেক্ট, ওয়ার্ল্ড ভিশন, এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম পভার্টি-এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন, বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও ঘাসফুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিজিবিও সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রায় ৩৫ হাজার সদস্য নির্বাচনের সময় নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যেও দুই-চারটা অস্ত্র যে দেশে ঢুকছে না তা না। তবে এগুলো ধরাও হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। কোনো রকমের কোথাও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। এবারই নির্বাচনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কেরানীগঞ্জ মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কেরানীগঞ্জে যেই ব্যক্তি অপকর্মটা ঘটিয়েছে সে পলাতক রয়েছে। কিন্তু তার সহযোগীকে ধরা হয়েছে। পলাতক ওই ব্যক্তিকেও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‎

এসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা —এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট যারা আছে তারা সব সময়ই এটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সবার সহযোগিতা যদি থাকে তবে নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এ রকম একটা নির্বাচনই এই সরকারের দেওয়ার ইচ্ছা এবং এটা বাস্তবায়ন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় গাড়ি চালানো নিরাপদ করতে বিআরটিএর নির্দেশনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে চালকের দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপদে গাড়ি চালাতে মোটরযান চালক ও মালিকদের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিআরটিএ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এসব নির্দেশনা প্রকাশ করে।

বিআরটিএ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—

১. কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার মধ্যে থামানো যায় এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীর গতিতে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হবে।

২. সর্বদা ‘লো-বিম বা ডিপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। ‘হাই-বিম বা আপার’ কুয়াশাকে আরও বেশি ঘন করে বিধায় ‘হাই-বিম বা আপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।

৩. লেন পরিবর্তন/ওভারটেকিং করা যাবে না। যেসব স্থানে দৃষ্টি যায় না বা বাঁক নেওয়ার আগে দেখা যায় না, সেসব স্থানে দরকার হলে বিপদ এড়ানোর জন্য হর্ন বাজাতে হবে।

৪. ঘন কুয়াশার কারণে একেবারেই দেখা না গেলে বা দৃষ্টিসীমা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেলে নিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামিয়ে হেডলাইট বন্ধ করে হ্যাজার্ড লাইট জ্বালাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন পালাতে না পারে, সতর্ক থাকার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

‎সীমান্ত দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ‎

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবিকে আরও পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ‎

বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির সাহস ও আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ওই আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজিবি একটি গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বর্তমানে বিজিবি একটি “ত্রিমাত্রিক বাহিনী” হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা এবং জনকল্যাণমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’

বিজিবির সার্বিক উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কোনো ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা জোরদার করতে হবে।’

একই সঙ্গে অবৈধ পথে দেশীয় পণ্য বিদেশে পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

‎‎চোরাকারবারি ও মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পাশাপাশি অধীনস্ত সদস্যদের কল্যাণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা অত্যন্ত কৌশল ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশের স্বার্থ শতভাগ সুরক্ষিত থাকে। সীমান্ত ব্যবহারকারী চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় বজায় রাখার নির্দেশ দেন তিনি। ‎

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি সদস্যদের ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে তার গৌরবময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এমন প্রত্যাশা তাঁর।

‎‎অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবির মহাপরিচালকসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

  • অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব
  • কোম্পানির শেয়ার বিআইডব্লিউটিসি রাখতে পারবে, প্রয়োজনে অন্যকেও দেবে
  • বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদে সদস্যসংখ্যা দুজন বাড়িয়ে ৭ করার প্রস্তাব
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এক বা একাধিক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায়। এসব কোম্পানির শেয়ার করপোরেশন নিজে ধারণ করতে পারবে এবং প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও ধারণের অনুমতি দিতে পারবে।

বিআইডব্লিউটিসি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এসব কোম্পানি করবে সরকারের পূর্বানুমোদন নিয়ে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ায় এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে মতামতের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

খসড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে বিআইডব্লিউটিসির কার্যক্রমে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্ব ও কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি আন্তদেশীয় প্রটোকলের আওতায় নৌযান পরিচালনা করতে পারবে। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় ও আন্তদেশীয় প্রটোকল রুটে দুর্ঘটনাকবলিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বা যেকোনো বিপর্যস্ত নৌযান উদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসি পরিচালিত যেকোনো যাত্রী ও ফেরি নৌপথে নৌ যোগাযোগ ও পরিবহন সেবা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু থাকে, সে জন্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট নৌপথে পলি অপসারণের কাজ করতে পারবে।

অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. সলিমউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্যাবিনেটের নির্দেশনায় আগের অধ্যাদেশ পুনর্লিখন করা হচ্ছে। এর আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আইনটিকে যুগোপযোগী করতে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যাতে করপোরেশন আরও কার্যকর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বিআইডব্লিউটিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ১৯৭৬ এবং ১৯৭৯ সালে এই অধ্যাদেশে সংশোধন আনা হয়। পরবর্তী সময়ে এই অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধনের বিষয়ে পরিবর্তন এনে অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার এই অর্থ দেবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই মূলধন আরও বাড়াতে পারবে। আগে করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ছিল মাত্র ৪০ লাখ টাকা।

খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে পরিচালনা পর্ষদে মোট পাঁচজন সদস্য ছিলেন। খসড়ায় আরও দুই সদস্য যুক্ত করে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসংখ্যা সাত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন যুক্ত দুই সদস্যের একজন হবেন নৌ মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, অন্যজন হবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে মনোনীত একই পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ও চারজন পরিচালক পদাধিকার বলে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকবেন।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের সবার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের মতো আইন প্রযোজ্য হবে।

বিআইডব্লিউটিসি অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান উদ্দিন বলেন, অধ্যাদেশের খসড়ার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে তা দেশের নৌপরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে শুধু কাগজ-কলমে আইন ও নীতি প্রণয়নেই সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক সাংগঠনিক কাঠামোর সব কর্মপরিধি যাতে সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় এবং দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো যেন যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়, সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত