Ajker Patrika

বিচারকেরা রাজনৈতিক আনুগত্য দেখালে শাস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিচারকদের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে অসদাচরণ বিবেচনা করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে শাস্তির সুপারিশ করছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনের সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এটি জমা দেওয়ার কথা।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাবের প্রয়োগ বাংলাদেশে একটি কার্যকর ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা স্থাপন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা অপরিহার্য।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কমিশন মনে করে, বিচারাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার এবং আইনজীবীদের সংগঠনকে রাজনৈতিক দলের শাখা হিসেবে না রাখার অঙ্গীকার করতে হবে। বিচারক নিয়োগে রাজনৈতিক চাপ, রায় প্রদানে রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং আদালতের অভ্যন্তরে বা চত্বরে রাজনৈতিক কার্যক্রমের উপস্থিতি বন্ধ করতে হবে।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনজীবী সমিতিগুলো প্রায়ই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের মঞ্চে পরিণত হয়। এটি পেশাগত নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে। কিছু ক্ষেত্রে বিচারকেরা সরাসরি রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে বক্তব্য দেন। এমনকি আদালতের রায় বা মন্তব্যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা বিশেষ দলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশিত হয়।

আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার-বিষয়ক রায় প্রসঙ্গে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। সরকারপক্ষ এই রায়কে তাদের অনুকূলে ব্যবহার করলেও বিরোধী পক্ষ এর ব্যাপক সমালোচনা করে এবং আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের ফলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসনের অভাবে স্পষ্টভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিচারাঙ্গনে রাজনৈতিক প্রভাব আমরাও চাই না। আদালত অঙ্গনে রাজনীতি আমরাও চাই না। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্যানেল না করার বিষয়টি নির্বাচনী আচরণবিধিতেও আছে। আইনজীবীরা আদালতে আসেন মানুষকে সাহায্য করতে। তাই এখানে অতি রাজনীতি করা উচিত না বলেই আমিও মনে করি।’

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে। আগেও এ ধরনের নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তাই যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করাটাই মুখ্য বিষয়। বিচারাঙ্গন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত হলে ন্যায়বিচারের পথ সুগম হবে।’

কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১. বিচার বিভাগের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকে এটা নিশ্চিত করা। ২. হাইকোর্ট বিভাগের ২০০৫ সালের রায় অনুযায়ী আদালতের প্রবেশদ্বার বা চত্বরের মধ্যে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক জমায়েত, মিছিল বা ঘেরাও কার্যক্রম বন্ধ করা। ৩.আইনজীবী সমিতিগুলোর পেশাজীবী কল্যাণের উদ্দেশ্যে অরাজনৈতিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং সমিতিগুলোর নির্বাচনে দলীয় প্যানেলের প্রথা বন্ধ করা। ৪. বিচারকদের পেশাগত ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শনকে অসদাচরণ ধরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৫. আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে পেশাগত অসদাচরণ বিবেচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওয়াশিংটনে মোদির সঙ্গে বৈঠক, বাংলাদেশ প্রশ্নে যা বললেন ট্রাম্প

হাদিসের আলোকে শবে বরাতের ফজিলত ও বরকত

পাকিস্তান ম্যাচের আগমুহূর্তে বড় ধাক্কা খেল নিউজিল্যান্ড

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার লড়াই

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ইউএনও, অফিস করছেন বাসা থেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত