Ajker Patrika

গুম থেকে সুরক্ষার জাতিসংঘ সনদে অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১৩: ৫৭
গুম থেকে সুরক্ষার জাতিসংঘ সনদে অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ

গুম থেকে সব নাগরিকের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে অন্তর্ভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে গুম প্রতিরোধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের ওপর আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো। 

আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ শীর্ষক সনদটিতে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের এক দিন আগে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক প্রতিটি গুমের ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

বিশ্বজুড়ে গুম প্রতিরোধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ পাস করে। পরের বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সনদটি

স্বাক্ষরের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে সনদটি কার্যকর হয়েছে। এ সনদে ৯৮টি রাষ্ট্র স্বাক্ষর করেছে। অনুসমর্থন জানিয়েছে ৭৫টি রাষ্ট্র। জাতিসংঘের তরফ থেকে বাংলাদেশকে এই সনদে স্বাক্ষরের অনুরোধ জানানো হলেও এত দিন তা করেনি সরকার। সে হিসেবে এই সনদে স্বাক্ষরকারী এখন পর্যন্ত সর্বশেষ রাষ্ট্র হলো বাংলাদেশ।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। আর যেন কেউ কখনো নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনো বাহিনীকে দিয়ে, কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে, সরকার বিরোধিতা করা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কাজ করা হচ্ছে, এসব বলে গুম করতে না পারে। তার জন্য এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছি। সরকার এ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করবে।’ তিনি জানান, এ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরের কাগজ জমা পড়ার পর থেকে এটি কার্যকর হবে।

মানবাধিকার নিয়ে শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, গুম বাংলাদেশে অহরহ ঘটেছে। যেটা এযাবৎকাল অস্বীকার করা হচ্ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাঁরা গুমের শিকার হয়েছেন তাঁরা একটা সুরক্ষা পাবেন। সরকারি পর্যায় থেকে ফ্যাসিবাদ কায়েম রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বিরুদ্ধমত দমন করার জন্য গুম করে ফেলা হতো। সেটাতেও একটা শক্ত বার্তা গেল যে এসব আর হবে না। গুম তো করার কথা না। সরকারি বাহিনীর গুম করার লাইসেন্স নেই। তার আইনগত এখতিয়ার নেই। এটা বন্ধ থাকা উচিত ছিল।

যেসব বাহিনীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে কি না–এমন প্রশ্নে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগের গুমের ঘটনা নিয়ে একটা কমিশন হয়েছে। সেখানে কার্যপরিধি বলে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কোথাও বাদ দেওয়া হয়নি। কত মানুষ গুম হয়েছে সে তালিকা সরকার প্রকাশ করবে কি না–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কমিশনের কার্যপরিধি অনুযায়ী একটা তালিকা চূড়ান্তভাবে করতে হবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর লাশ উদ্ধার বা গুমের ঘটনা আলোচনায় ছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পরই গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের কথা বলে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসংঘের গুমবিষয়ক কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানানো হয়।

গত সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ সরকারি বাহিনীর যে সদস্যরা ‘গুম, খুন, নির্যাতনের’ মতো অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে।’ এর পরদিনই শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সব রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির নির্দেশনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ বৃহস্পতিবার ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন নির্দেশনাটি স্বরাষ্ট্র সচিবকে পাঠিয়েছেন।

এতে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালপত্র ও যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে বিধায় এসব কার্যালয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালপত্রের সুরক্ষাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

এই অবস্থায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের সদয় নির্দেশনা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিশন।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৭
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।

ওবায়দুল কাদের ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শেখ ফজলে শামস পরশ ও মাইনুল হোসেন নিখিল, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

এখন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিলে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের পর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিচারকাজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান

‘জুলাই যোদ্ধা’ শনাক্তে এবার গোয়েন্দা তদন্ত

  • জুলাই যোদ্ধা হতে আরও ২০৬৯ আবেদন।
  • আবেদনকারীদের ১৯৩৮ জন তদন্তের মুখে।
  • বেশি আবেদন ঢাকায়, কম ময়মনসিংহে।
রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি

‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সারা দেশে নতুন করে দুই হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। বিতর্ক এড়াতে এসব আবেদনের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বিশেষায়িত এই দুই ইউনিটের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শাখার উপসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এর আগে তালিকা প্রকাশের পর কিছু বিতর্কিত নাম ছিল। পরে তাদের বাদ দেওয়া হয়। তাই নতুন আবেদনকারীদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে তালিকা করা হচ্ছে, যাতে জুলাই যোদ্ধারাই বেশি সুরক্ষা পায়। তাদের যাচাই-বাছাইটা সঠিক হয়, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর যেন কোনো বিতর্ক না ওঠে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও তদন্তসংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন করে ২ হাজার ৬৯ জন নিজেকে আহত জুলাই যোদ্ধা দাবি করে আবেদন করেছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৯৩৮ জনের তথ্য মাঠপর্যায়ে যাচাই করছে পুলিশের এসবি ও পিবিআই। গত ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে সংস্থা দুটিকে নির্দেশ দেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের বেশি সময় পরও বিভিন্ন জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরে আবেদন জমা পড়ছে। দেশের ৪১ জেলার মোট ১ হাজার ৯৩৮ আবেদনকারীর তথ্য এখন যাচাই করা হচ্ছে। প্রত্যেকে সত্যিই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হামলায় নিহতদের শহীদ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর জালিয়াতি করে কাউকে শহীদ বা আহত জুলাই যোদ্ধা দেখালে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দুই ধাপে ৮৩৬ জন শহীদ এবং অতি গুরুতর আহত (ক শ্রেণি) ৬০২ জন জুলাই যোদ্ধা, গুরুতর আহত (খ শ্রেণি) ১ হাজার ১১৮ জন জুলাই যোদ্ধা ও আহত (গ শ্রেণি) ১২ হাজার ৮০ জন জুলাই যোদ্ধাসহ সর্বমোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।

তবে তালিকা প্রকাশের পর গত দেড় বছরে বিভিন্ন বিতর্কও উঠেছে। কেউ ৫ আগস্টের আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে, কেউ ৫ আগস্টের পর মারা গেছে, এমন ব্যক্তির নামও তালিকায় এসেছে বলে অভিযোগ ওঠে। নতুন আবেদনকারীরা জেলা প্রশাসকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন বলে জানা যায়। এ পরিস্থিতিতে সব আবেদন সরাসরি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

আবেদনকারীদের বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন করে যারা আবেদন করেছে, তাদের আবেদনগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন আবেদনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগের, ৫৮২টি, যার মধ্যে ঢাকা জেলার ৩৩৯টি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩৩টি, রাজশাহীতে ২৯৪টি, সিলেটে ৩১১টি, রংপুরে ১২২টি, খুলনা বিভাগে ৮৩টি, বরিশালে ৫০টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫টি আবেদন জমা হয়। এসব আবেদন যাচাই করতে গিয়ে রাজনৈতিক তদবির, সামাজিক চাপসহ নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ফলে এসবি ও পিবিআই দিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা সুবিধা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় অনেকেই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দুর্ঘটনায় আহত হয়েও জুলাই আহত তালিকায় নাম তোলার চেষ্টা করছে, যেখানে রাজনৈতিক চাপও আছে। তবে এখনো অনেক প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা তালিকার বাইরে। দুই সংস্থার তদন্তে ভুয়া আবেদনকারীর পাশাপাশি আসল জুলাই যোদ্ধাদের শনাক্ত করা সহজ হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আবেদন যাচাইয়ে আবেদনকারীর পরিচয়, ঠিকানা, পেশা, এনআইডি/জন্মনিবন্ধন, আগে গেজেটভুক্ত হওয়ার তথ্য, আহত বা শহীদ দাবির ক্ষেত্রে মামলা ও তার অবস্থা, সাক্ষী, সংবাদ ও অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসার সময়কাল, চিকিৎসাপত্র, চিকিৎসকের বক্তব্য এবং ঘটনার ভিডিও, অডিও, ছবি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার তথ্য যাচাই করছেন।

জানতে চাইলে পিবিআইয়ের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোস্তফা কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পাওয়া গেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। দেশব্যাপী কাজ চলছে বলে কিছুটা সময় লাগবে। যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে এককালীন ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে; এর মধ্যে ১০ লাখ দেওয়া হয়েছে, বাকি ২০ লাখ ধাপে ধাপে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতাও পাচ্ছে পরিবারগুলো। ঢাকায় তাদের জন্য ফ্ল্যাট দেওয়ার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আহতদের ক্ষেত্রে ক শ্রেণিভুক্তদের এককালীন পাঁচ লাখ টাকা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা, খ শ্রেণিভুক্তদের এককালীন পাঁচ লাখ ও মাসিক ১৫ হাজার এবং গ শ্রেণিভুক্তদের এক লাখ টাকা এককালীন সহায়তা ও মাসিক ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ সুবিধাও রয়েছে।

গ্রাফিকস:

আট বিভাগে নতুনদের আবেদনের চিত্র

ঢাকা বিভাগে ৫৮২ জন

চট্টগ্রামে ৪৩৩ জন

রাজশাহীতে ২৯৪ জন

সিলেটে ৩১১ জন

রংপুরে ১২২ জন

বরিশালে ৫০ জন

খুলনায় ৮৩ জন

ময়মনসিংহে ৫ জন

গত ৪ মার্চ পর্যন্ত সরকারের স্বীকৃত আহত জুলাই যোদ্ধা

ঢাকা বিভাগে ৩০৯৮ জন

চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯২৭ জন

রংপুর বিভাগে ১৩১৫ জন

খুলনা বিভাগে ১১৯৫ জন

রাজশাহী বিভাগে ১০৯৩ জন

বরিশাল বিভাগে ৭৭২ জন

সিলেট বিভাগে ৭০৮ জন

ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৩৪ জন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সচিবালয়ের ১৪ কর্মচারী বরখাস্ত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে আন্দোলনে অর্থ উপদেষ্টাকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৪ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করায় তাঁদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এই ১৪ জন সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা হলেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি বাদিউল কবির, সহসভাপতি শাহীন গোলাম রাব্বানী ও নজরুল ইসলাম; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মো. তায়েফুল ইসলাম, বিকাশ চন্দ্র রায়, ইসলামুল হক, মো. মহসিন আলী, রোমান গাজী, আবু বেলাল; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মিজানুর রহমান সুমন; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কামাল হোসেন ও মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান; অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিপুল রানা বিপ্লব এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নাসিরুল হক।

সচিবালয় ভাতার দাবিতে ১০ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদকে তাঁর দপ্তরে ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বাদিউল কবিরের নেতৃত্বে আন্দোলনরত কর্মচারীরা। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন কর্মচারীকে ১১ ডিসেম্বর আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাঁদের ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ ডিসেম্বর আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হলে আদালত তা গ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত