Ajker Patrika

বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে না: ব্রিটিশ এমপি রূপা হক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রূপা হক। ফাইল ছবি
রূপা হক। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে—এটা হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য রূপা হক। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ডাক্তার, হসপিটাল থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরেই আওয়ামী লীগের মানুষ বসে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করতে হবে, তাঁদের সরাতে হবে। তারপর নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। যদি আমরা এক পার্টিকে আরেক পার্টি দিয়ে সিস্টেম রিপ্লেস করি, তবে এটা ভালো না।’

একজন নেতার কন্যা, আরেকজন নেতার বেগম এবং তাঁদের ছেলেরা সবকিছুতে আধিপত্য দেখাবে—এ প্রবণতার পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রায় ৫৪ বছরের এ বাস্তবতা থেকে বের হয়ে আসতে একটা পরিচ্ছন্নতা অভিযান দরকার। লেজিসলেশন করে (আইন প্রণয়ন) নতুন কিছু করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা সফররত ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউকেবিসিসিআই) প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন রূপা হক।

বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ রাজধানীর হোটেল সেরিনায় এই আয়োজন করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিকাঠামোর আওতায় এফটিএ হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। মার্ক অ্যান্ড স্পেনসারের মতো ব্রিটিশ ব্র্যান্ড এ দেশের তৈরি পোশাকের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। শুধু পোশাক খাতের ওপর রপ্তানি নির্ভর করলে চলবে না, নানা প্রযুক্তি, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। মেইড ইন বাংলাদেশকে আরও সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, মুনাফাই ব্যবসার শেষ কথা নয়। শ্রম অধিকারেও গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রমিক অধিকার নিয়ে বিগত সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর অনেক টানাপোড়েন ছিল। তবে ড. ইউনূস এ বাস্তবতা বদলাতে চান।’

রূপা হক আরও বলেন, শুধু পোশাক খাতের ওপর রপ্তানি নির্ভর করলে চলবে না, নানা প্রযুক্তি, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে আমাদের। শ্রমিক অধিকার নিয়ে বিগত সরকারের সঙ্গে আইএলওর অনেক টানাপোড়েন হয়েছে। তবে ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি এখনকার বাস্তবতা বদলাতে চান। এই তাগিদটা ধরে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে যুক্তরাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে; বিশেষ করে তেল, গ্যাস ও গমের মতো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে চরম চাপ ফেলছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে বাণিজ্যের নতুন পথ খুঁজতে হবে।

ইউকেবিসিসিআই চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ভালো পরিবেশ রয়েছে। তবে এটি আরও ভালো করতে হবে। এখন পর্যন্ত নতুন বিনিয়োগকারীকে কোনো উদ্যোগ শুরু করতে ১২টি অফিসের লাইসেন্স নিতে হয়। সুতরাং এখানকার ডুয়িং বিজনেস কোস্ট কমাতে হবে।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে সেবা খাতে নম্বর ওয়ান এখন ভারত। আমরা পারছি না; কারণ, একটি হলো, আমি যে অনুষ্ঠান বা ফোরামেই যাই, তারা শুধু আমাকে প্রশ্ন করে, বাংলাদেশে এত সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে কেন।’

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। সাধারণের মানসিক পরিবর্তন আনতে হবে। আমি বারবার বলছি, সিস্টেমকে স্বচ্ছ করতে হবে। পলিটিশিয়ান বেটার ওয়েক আপ অ্যান্ড স্মেল দ্য কফি। যদি সিস্টেম স্বচ্ছ, নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক থাকে। তবে কার বউ নির্বাচনে এল, কার ছেলে আসল, এটা তো ব্যাপার না। তারা নির্বাচিত হয়েই আসবে।’

রুপা হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এ নেতা বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে অপপ্রচার চলছে; যা একেবারেই সত্য নয়। বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রতিবেশী কিংবা অন্য অঞ্চলে যা-ই হোক, বাংলাদেশে হয়রানির কোনো ঘটনা ঘটছে না। এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যাতে ভূমিকা রাখেন, এ ব্যাপারে রুপা হকের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

আমীর খসরু বলেন, বিগত সরকার গত ১৫ বছরে অর্থনীতিকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধ্বংস করা হয়েছে। ব্যাংক, বিমা থেকে টেলিকম—সবকিছুই তারা নিয়ন্ত্রণ করত। সাধারণ ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সুযোগ রাখা হয়নি। অলিগার্কির (কিছু লোকের হাতে সব ক্ষমতা, কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত করে রাখা) অর্থনীতি কায়েম ছিল। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পর বাঁচার জন্য একে একে সব স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়।

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘সেই অধ্যায় শেষ হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ নিয়ে দেশে-বিদেশে আশার দুয়ার খুলেছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং (সুযোগের সমতা) সৃষ্টি করা হবে। এ বিষয়ে তাঁরা হোমওয়ার্ক অর্থাৎ, নিজেদের মধ্যে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা—সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা জানার চেষ্টা করছেন। আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমরা অর্থনীতিকে উদার, গণতান্ত্রিক করব। সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’

অর্থনীতির গণতন্ত্রায়ণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের আরও উদার হতে হবে। সমস্ত বড় সুযোগ-সুবিধা কেন শুধু পোশাক খাত পেল, আর অন্য ২০টি সম্ভাবনাময় খাত তা পেল না, সেটি গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে। সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসার খরচও স্বাভাবিক নিয়মেই কমে আসবে।

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু এত বড় তরুণ কর্মী বাহিনী যদি দক্ষ না হয়, তাহলে এই জনসংখ্যার সুবিধা কোনো কাজে আসবে না। সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে কস্ট অব ডুইং বিজনেস নিজস্ব গতিতে কমে যাবে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘যখন আমরা ক্ষমতায় আসব, আমাদের কূটনীতি হবে বাণিজ্যকেন্দ্রিক। প্রতিটি মিশনকে বাণিজ্য প্রসার এবং প্রবাসীদের সঙ্গে সঠিক সম্পৃক্ততা নিয়ে তাদের অগ্রগতির প্রতিবেদন দিতে হবে।’

বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বাংলাদেশ এখনো বছরে ১১ বিলিয়ন ডলারের টেক্সটাইল পণ্য আমদানি করে, যা কমিয়ে আনার জন্য এই খাতে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভিয়েতনামের আদলে বর্তমান সরকার যদি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে রপ্তানি অনেক বাড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতেও একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ আছে।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদেশি ক্রেতারা অন্যায্যভাবে কম দামে পোশাক কিনছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আরও তিন বছর পিছিয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে পারেন।

ইউকেবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবেন তাঁরা। এত দিন কেন এ বিনিয়োগ করা হয়নি, সে ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, গত ১৫ বছর বাংলাদেশে তাঁরা আসতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে রাজনৈতিক নয়, বরং ব্যবসায়িক উন্নয়ন হাউস হিসেবে কাজ করতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপপ্রচার বন্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশ্বনেতাদের শোক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০০
খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে এক শোকবার্তায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুটি ছবি যুক্ত করেছেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। সর্বশক্তিমান যেন তাঁর পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দান করেন।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির উন্নয়ন এবং ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

মোদি বলেন, ‘২০১৫ সালে ঢাকায় তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। আমরা আশা করি, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও উত্তরাধিকার আমাদের অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতেও পথ দেখাবে। তাঁর আত্মা শান্তিতে বিশ্রাম নিক।’

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা অন্যতম জননেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আমি শোকাহত। আমি তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের আমার সমবেদনা জানাচ্ছি।’

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বার্তায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়ার পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তিনি বার্তায় লেখেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব এবং ত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গভীর শোক প্রকাশ করে খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানের একজন ‘নিবেদিত বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সেবা এবং দেশটির অগ্রগতি ও উন্নয়নে তাঁর অবদান একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে গেছে। এই কঠিন সময়ে আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনা খালেদা জিয়ার পরিবার, বন্ধুস্বজন এবং বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে রয়েছে।’

খালেদা জিয়াকে একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক এবং চীনা জনগণের পুরোনো বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় লি কিয়াং বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণের সংবাদে আমি গভীরভাবে শোকাহত। চীনা সরকারের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশ এবং বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহমর্মিতা জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার শাসনামলে চীন ও বাংলাদেশ ‘দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব, সমতা ও পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে’ একটি সমন্বিত সহযোগিতা অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করে, যার ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি এক বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়ার প্রয়াণ বাংলাদেশ ও গোটা অঞ্চলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। নেপাল সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আমি তাঁর পরিবার, স্বজন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

খালেদা জিয়াকে আজীবন জনসেবায় নিয়োজিত একজন নেতা হিসেবে অভিহিত করেন সুশীলা কারকি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। খালেদা জিয়া ছিলেন নেপালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যিনি নেপাল–বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাঁর আত্মা চিরশান্তিতে বিশ্রাম নিক।’

ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে দূতাবাস জানায়, ‘বেগম জিয়া তাঁর দেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে তাঁর নেতৃত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এছাড়াও জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, ইরানসহ অনেক দেশ খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। বাংলাদেশ ও খালেদা জিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে তারা। এক শোকবার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘ কার্যালয় জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মহামান্য বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে জাতিসংঘ গভীর শোক প্রকাশ করছে।’

বার্তায় আরও বলা হয়, ‘এই শোকের মুহূর্তে জাতিসংঘ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সঙ্গে নিজেদের সংহতি পুনর্ব্যক্ত করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়, বেলা ২টায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন অনুষ্ঠানে সাধারণ জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে জানাজা ও দাফনস্থলে কোনো ব্যাগ বা ভারী সামগ্রী বহন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪২
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।

এসব গণমাধ্যমে খালেদা জিয়াকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের শক্তি, শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইত্যাদি অভিধায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির শিরোনাম করা হয়েছে—‘বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেলেন’।

কাতারি সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে শিরোনাম করা হয়েছে—‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন, বয়স হয়েছিল ৮০ বছর’।

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের শিরোনামে বলা হয়েছে, দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা গেলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে শিরোনাম করা হয়েছে—‘খালেদা জিয়া, সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ও হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেছেন’।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপির শিরোনাম—‘খালেদা জিয়া, সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ও হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেছেন’।

আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের শিরোনাম—‘খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেলেন’।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের শিরোনাম করা হয়েছে—‘খালেদা জিয়া, সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ও হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ৮০ বছরের বয়সে মারা গেছেন’।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে একই শিরোনাম করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনাম—‘খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, ৮০ বয়সে প্রয়াণ’।

এ ছাড়া ভারতীয় ও পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৮
খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি নির্ধারণে আয়োজিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল।

ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ও কাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

সভায় শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।

সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও আগামীকাল এক দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকবই খোলা হবে।

সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাসহ সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।

মির্জা ফখরুল জানান, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও এর সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে শহীদ রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে।

সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’

স্মৃতিচারণা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সর্বশেষ উনার সাথে দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে, এ সময় তাঁর উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তার চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত