Ajker Patrika

যোগাযোগ খাতে লুটপাট: পাঁচ প্রকল্পেই ব্যয় বাড়ানো হয় ৫৬ হাজার কোটি

  • পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ও মেট্রোরেল প্রকল্প।
  • প্রাথমিক ব্যয় মোট ৭৭ হাজার কোটি টাকা। ধাপে ধাপে বাড়িয়ে চূড়ান্ত ব্যয় ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি।
  • বিলম্ব, অদূরদর্শী নীতি এবং সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে ব্যয় বৃদ্ধি: শ্বেতপত্র কমিটি
সৌগত বসু, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ০৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ খাতের পাঁচটি মেগা প্রকল্পে সব মিলে ব্যয় বেড়েছে ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এসব প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রাথমিক খরচের চেয়ে অনেক বেশি।

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরা শ্বেতপত্রে মেগা প্রকল্পের খরচের এমন চিত্র উঠে এসেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, কয়েকটি প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি। ফলে খরচ আরও বাড়তে পারে। এই পাঁচ প্রকল্পের অপর তিনটি হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ।

অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পনায় অদক্ষতা, কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা ও অতিরিক্ত খরচের কারণে প্রকল্পগুলোর খরচ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় প্রকল্পে বড় অঙ্কের খরচ বাড়া দুর্নীতির আশঙ্কার আভাস দেয়।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর গত অক্টোবরের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা।

শ্বেতপত্রের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ও সময় বৃদ্ধি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। খুব প্রয়োজন না হলে ব্যয় বাড়ানো হবে না। আবার বাড়ানো হলে সেটা যেন যুক্তিসংগত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু ডলারের বিনিময় হারের কারণে যে ব্যয় বৃদ্ধি, সেটিই করা হচ্ছে। এর বাইরে ভূমি অধিগ্রহণে যে ব্যয় বৃদ্ধি, এটাও বিবেচনা করা হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার আগস্টের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি করে। এই কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে ও অংশী-জনদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র জমা দিয়েছে।

ওই শ্বেতপত্রে সড়ক, সেতু ও রেল যোগাযোগ খাত নিয়ে উল্লেখ করা হয়, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া, অদূরদর্শী নীতি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে প্রকল্পগুলোর ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। পদ্মা সেতুসহ ওই পাঁচ বড় প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে মোট ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। পরে এসব প্রকল্পে ধাপে ধাপে ব্যয় আরও ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধি, পরিকল্পনায় পরিবর্তন এবং সঠিক পূর্বাভাসের অভাবে এই ব্যয় বেড়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সময় ও ব্যয়ের পরিবর্তনগুলো উল্লেখ থাকলেও, প্রকৃত পরিসংখ্যান ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কেনাকাটায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) মানা হয়নি। প্রকল্পের কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা ও অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগও উঠেছে। অনেক ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান না করে সরাসরি বরাদ্দ দেওয়ার নজির রয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির আশঙ্কা বাড়িয়েছে। সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপির ভিত্তিতে হিসাব করা হয়েছে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ এবং মেট্রোরেলে প্রাথমিক ডিপিপি এবং সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপির মধ্যে ব্যয়ের ব্যবধান ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কিছু প্রকল্প অসম্পূর্ণ থাকায় চূড়ান্ত ব্যয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কিছু ক্ষেত্রে বৈধ কারণ থাকতে পারে। তবে প্রকল্প শুরুর পরপরই যদি ডিজাইনের বড় পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আগেই অনুমান করা উচিত ছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরে রেল সংযোগ এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথ যুক্ত করা হয়। কক্সবাজার-দোহাজারী রেল প্রকল্পে প্রাথমিক নকশার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৮৪৭ শতাংশ।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজার জন্য বরাদ্দ ছিল ১২৭ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালে পুনঃসংযোজনের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এই প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়ে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করায় খরচ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

২০০৭ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প নেওয়ার সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে ২০০৯ সালে প্রথম সংশোধনীতেই তা বাড়িয়ে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়। পরে ব্যয় আরও বাড়ানো হয়।

২০১৬ সালে একনেক সভায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ২০১৮ সালে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা করে প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়।

শুরুতে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার মূল দৈর্ঘ্যের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।

মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে ব্যয় সংশোধন করে হয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ চলছে।

শ্বেতপত্র কমিটি বলছে, দেশে চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় ভারতের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ গুণ এবং পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি। রংপুর-হাটিকুমরুল চার লেন মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানাবিধ অনিয়মের পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণে। ভূমির দাম প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাস্তবের তুলনায় অনেক বেশি ধরা হয়েছে। এতে প্রকল্প খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প বারবার সংশোধনের ফলে খরচ প্রাক্কলনের তুলনায় ১২ গুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবহন খাতের ৩২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশে সময় ও ব্যয় উভয় বেড়েছে। ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রকল্পে সময় বা ব্যয়ের যেকোনো একটি বেড়েছে। গড়ে প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সময় ৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্বেতপত্রে উল্লেখিত অভিযোগগুলো প্রায় প্রমাণিত হয়েছে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেশি বলে বেরিয়ে এসেছে। প্রকল্পের অপচয়ের কিছু অর্থ পুনরুদ্ধারের সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে আছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যাতে এসব মেগা প্রকল্প থেকে জনগণ উপকার পায় এবং এগুলো আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠেয় জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকেরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিদেশি অতিথিরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে পা রেখেছেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তান সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পা রাখেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর ফাসিহ উল্লাহ খান জানান, বিমানবন্দরে স্পিকারকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, স্পিকারকে বহনকারী ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়েই অবতরণ করে।

এর কিছুক্ষণ আগে, বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের পক্ষ থেকে এই উচ্চপর্যায়ের জানাজায় অংশগ্রহণকে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভুটান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম সামাদ জানান, বিমানবন্দরে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।

আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সমাগম শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রাষ্ট্রীয় জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন তিনবার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। তাঁর শেষ বিদায়ে আজ দেশ শোকাহত। আর শোক ধারণ করে হাজারো মানুষের ভিড় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যেখানে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা।

সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদেরও। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না, কেউ নীরবে বসে আছেন মন ভার করে। পুরো এলাকা জুড়ে শোক আর নীরবতার আবহ।

লালবাগ থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আজ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি, তারেক রহমান যেন দেশের হাল ধরতে পারেন।’

সংসদ-এলাকা

সাভার থেকে আসা দুই বন্ধু স্বপন শেখ ও মো. রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে এভাবে বিদায় দিতে হবে, ভাবিনি। তিনি জীবনে এত ত্যাগ করেছেন, অথচ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর একমাত্র প্রাপ্তি—বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’

বগুড়া থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা মনোয়ার হোসেন মামুন বলেন, ‘এ দেশ যাঁরা শাসন করেছেন, তাঁদের সবার গায়েই কোনো না কোনো কলঙ্ক আছে। কেবল বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কলঙ্ক নেই। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশেই ছিলেন। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিলে তিলে এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর বিচার জনসম্মুখে হতে হবে—যে সরকারই আসুক।’

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপি মনোনীত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

দাফনকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জুড়েই জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় দপ্তর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের সড়কগুলোতেও অবস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তিনি কী কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা চলছে, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৪
খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা চলছে, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত