নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল।
গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু হয়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিনের আলোচনা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৯টি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যার মধ্যে আটটি বিষয়ে সবগুলো দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়।
সংলাপে ঐকমত্য হওয়া আটটি বিষয় হলো—সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; জরুরি অবস্থা ঘোষণা; সংবিধান সংশোধন; প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; পুলিশ কমিশন গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বাকি চারটির বিষয়ে ভিন্নমত আছে।
বাকি ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে দলগুলোর, যার মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনারা আটটিতে, সিপিবি-বাসদের একাধিকে, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন একটি করে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট আছে বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ-মার্কসবাদী দলেরও।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২১টি দল একমত হওয়ায় কমিশন সিদ্ধান্ত জানায়, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে ব্যর্থ হলে র্যাংকড চয়েসে ভোট হবে। ভোটে কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন দুই বিচারপতি। এ সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপিসহ পাঁচটি দল। তারা বলেছে, কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে না পারলে কী হবে–এ সিদ্ধান্ত হবে আগামী সংসদে।
সংসদের উচ্চকক্ষ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের সংলাপে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন থাকবে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ পাঁচটি দল আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, বেশির ভাগ দলের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সিপিবি, বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আমজনতার দল উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিত করেছে।
সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের ভূমিকা
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে। তবে এই সিদ্ধান্তকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। উচ্চকক্ষের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দিতে চায় না দলটি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল জনগণের সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতেই থাকা উচিত। পরোক্ষভাবে নির্বাচিত উচ্চকক্ষকে এই ক্ষমতা দেওয়া গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
এর জবাবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার সভাপতি নুরুল হক নুর এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসিবাদ রুখতে সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের সমর্থন অপরিহার্য। তাঁদের মতে, উচ্চকক্ষের সদস্যরা দলের মনোনয়নে এলেও তাঁরা সমভাবে নির্বাচিত।
উচ্চকক্ষের ক্ষমতা নিয়ে সংলাপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। বিএনপির সমমনা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের মধ্যে এই বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮, ৯, ১১ ও ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ এবং উপজেলা পর্যায়ে অধ্বস্তন আদালত স্থাপনের কথা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করতে চায়। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নির্বাচনে বিজয়ী দলের ইশতেহার অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি হতে পরবর্তী প্রধান বিচারপতির করার সুযোগ থাকবে। বিষয়টিতে একমত বিএনপি ও তার সমমনারা।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি
সংলাপে এমপিদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া বাকি সব দল একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতেও সব দল একমত, তবে কতটুকু ক্ষমতা বাড়বে, তা নিয়ে বিভিন্ন দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পরামর্শ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি রাজি হয়েছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল রাজি হয়নি। জামায়াতও এই বিষয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছে।
জুলাই সনদ ও আইনি ভিত্তি
সংলাপে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ২১টি দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ’-এর আইনি ভিত্তি থাকার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করবে না এবং আইনি ভিত্তি না দিলে সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছে, সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর এবং দুই বছরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকায় এই সনদের মর্যাদা আইনের ঊর্ধ্বে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের দলিল।
নারী সংসদ সদস্য
সরাসরি নারী আসন ১০০ পরিবর্তে বিদ্যমান জাতীয় সংসদের ৫০ সংরক্ষিত নারী বহাল রেখে আগামী নির্বাচনে দলগুলোকে ৫ শতাংশ আসনে নারীদের প্রার্থী করার অনুরোধ করে কমিশন। এ বিষয়ে বিএনপি একমত। বিষয়টি নোট অব ডিসেন্ট দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি সরাসরি নির্বাচনের ১৫ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়নে দলগুলোকে বাধ্য করতে। নারী আসন নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের নোট অব ডিসেন্ট আছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
পিএসসি ও দুদক: ২২টি দলের ঐকমত্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিএনপি এতে আপত্তি জানিয়েছে।
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮,৯, ১১ এবং ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটো বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
সংবিধানের মূলনীতি: সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার’ যুক্ত করতে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল একমত হয়েছে। তবে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
সংলাপ বর্জন: বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ এবং বাসদ (মার্কসবাদী) সংলাপ বর্জন করে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল।
গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু হয়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিনের আলোচনা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৯টি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যার মধ্যে আটটি বিষয়ে সবগুলো দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়।
সংলাপে ঐকমত্য হওয়া আটটি বিষয় হলো—সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; জরুরি অবস্থা ঘোষণা; সংবিধান সংশোধন; প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; পুলিশ কমিশন গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বাকি চারটির বিষয়ে ভিন্নমত আছে।
বাকি ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে দলগুলোর, যার মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনারা আটটিতে, সিপিবি-বাসদের একাধিকে, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন একটি করে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট আছে বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ-মার্কসবাদী দলেরও।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২১টি দল একমত হওয়ায় কমিশন সিদ্ধান্ত জানায়, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে ব্যর্থ হলে র্যাংকড চয়েসে ভোট হবে। ভোটে কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন দুই বিচারপতি। এ সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপিসহ পাঁচটি দল। তারা বলেছে, কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে না পারলে কী হবে–এ সিদ্ধান্ত হবে আগামী সংসদে।
সংসদের উচ্চকক্ষ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের সংলাপে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন থাকবে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ পাঁচটি দল আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, বেশির ভাগ দলের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সিপিবি, বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আমজনতার দল উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিত করেছে।
সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের ভূমিকা
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে। তবে এই সিদ্ধান্তকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। উচ্চকক্ষের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দিতে চায় না দলটি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল জনগণের সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতেই থাকা উচিত। পরোক্ষভাবে নির্বাচিত উচ্চকক্ষকে এই ক্ষমতা দেওয়া গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
এর জবাবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার সভাপতি নুরুল হক নুর এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসিবাদ রুখতে সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের সমর্থন অপরিহার্য। তাঁদের মতে, উচ্চকক্ষের সদস্যরা দলের মনোনয়নে এলেও তাঁরা সমভাবে নির্বাচিত।
উচ্চকক্ষের ক্ষমতা নিয়ে সংলাপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। বিএনপির সমমনা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের মধ্যে এই বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮, ৯, ১১ ও ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ এবং উপজেলা পর্যায়ে অধ্বস্তন আদালত স্থাপনের কথা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করতে চায়। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নির্বাচনে বিজয়ী দলের ইশতেহার অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি হতে পরবর্তী প্রধান বিচারপতির করার সুযোগ থাকবে। বিষয়টিতে একমত বিএনপি ও তার সমমনারা।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি
সংলাপে এমপিদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া বাকি সব দল একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতেও সব দল একমত, তবে কতটুকু ক্ষমতা বাড়বে, তা নিয়ে বিভিন্ন দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পরামর্শ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি রাজি হয়েছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল রাজি হয়নি। জামায়াতও এই বিষয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছে।
জুলাই সনদ ও আইনি ভিত্তি
সংলাপে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ২১টি দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ’-এর আইনি ভিত্তি থাকার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করবে না এবং আইনি ভিত্তি না দিলে সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছে, সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর এবং দুই বছরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকায় এই সনদের মর্যাদা আইনের ঊর্ধ্বে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের দলিল।
নারী সংসদ সদস্য
সরাসরি নারী আসন ১০০ পরিবর্তে বিদ্যমান জাতীয় সংসদের ৫০ সংরক্ষিত নারী বহাল রেখে আগামী নির্বাচনে দলগুলোকে ৫ শতাংশ আসনে নারীদের প্রার্থী করার অনুরোধ করে কমিশন। এ বিষয়ে বিএনপি একমত। বিষয়টি নোট অব ডিসেন্ট দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি সরাসরি নির্বাচনের ১৫ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়নে দলগুলোকে বাধ্য করতে। নারী আসন নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের নোট অব ডিসেন্ট আছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
পিএসসি ও দুদক: ২২টি দলের ঐকমত্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিএনপি এতে আপত্তি জানিয়েছে।
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮,৯, ১১ এবং ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটো বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
সংবিধানের মূলনীতি: সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার’ যুক্ত করতে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল একমত হয়েছে। তবে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
সংলাপ বর্জন: বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ এবং বাসদ (মার্কসবাদী) সংলাপ বর্জন করে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল।
গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু হয়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিনের আলোচনা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৯টি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যার মধ্যে আটটি বিষয়ে সবগুলো দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়।
সংলাপে ঐকমত্য হওয়া আটটি বিষয় হলো—সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; জরুরি অবস্থা ঘোষণা; সংবিধান সংশোধন; প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; পুলিশ কমিশন গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বাকি চারটির বিষয়ে ভিন্নমত আছে।
বাকি ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে দলগুলোর, যার মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনারা আটটিতে, সিপিবি-বাসদের একাধিকে, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন একটি করে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট আছে বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ-মার্কসবাদী দলেরও।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২১টি দল একমত হওয়ায় কমিশন সিদ্ধান্ত জানায়, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে ব্যর্থ হলে র্যাংকড চয়েসে ভোট হবে। ভোটে কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন দুই বিচারপতি। এ সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপিসহ পাঁচটি দল। তারা বলেছে, কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে না পারলে কী হবে–এ সিদ্ধান্ত হবে আগামী সংসদে।
সংসদের উচ্চকক্ষ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের সংলাপে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন থাকবে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ পাঁচটি দল আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, বেশির ভাগ দলের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সিপিবি, বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আমজনতার দল উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিত করেছে।
সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের ভূমিকা
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে। তবে এই সিদ্ধান্তকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। উচ্চকক্ষের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দিতে চায় না দলটি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল জনগণের সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতেই থাকা উচিত। পরোক্ষভাবে নির্বাচিত উচ্চকক্ষকে এই ক্ষমতা দেওয়া গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
এর জবাবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার সভাপতি নুরুল হক নুর এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসিবাদ রুখতে সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের সমর্থন অপরিহার্য। তাঁদের মতে, উচ্চকক্ষের সদস্যরা দলের মনোনয়নে এলেও তাঁরা সমভাবে নির্বাচিত।
উচ্চকক্ষের ক্ষমতা নিয়ে সংলাপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। বিএনপির সমমনা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের মধ্যে এই বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮, ৯, ১১ ও ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ এবং উপজেলা পর্যায়ে অধ্বস্তন আদালত স্থাপনের কথা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করতে চায়। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নির্বাচনে বিজয়ী দলের ইশতেহার অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি হতে পরবর্তী প্রধান বিচারপতির করার সুযোগ থাকবে। বিষয়টিতে একমত বিএনপি ও তার সমমনারা।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি
সংলাপে এমপিদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া বাকি সব দল একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতেও সব দল একমত, তবে কতটুকু ক্ষমতা বাড়বে, তা নিয়ে বিভিন্ন দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পরামর্শ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি রাজি হয়েছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল রাজি হয়নি। জামায়াতও এই বিষয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছে।
জুলাই সনদ ও আইনি ভিত্তি
সংলাপে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ২১টি দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ’-এর আইনি ভিত্তি থাকার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করবে না এবং আইনি ভিত্তি না দিলে সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছে, সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর এবং দুই বছরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকায় এই সনদের মর্যাদা আইনের ঊর্ধ্বে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের দলিল।
নারী সংসদ সদস্য
সরাসরি নারী আসন ১০০ পরিবর্তে বিদ্যমান জাতীয় সংসদের ৫০ সংরক্ষিত নারী বহাল রেখে আগামী নির্বাচনে দলগুলোকে ৫ শতাংশ আসনে নারীদের প্রার্থী করার অনুরোধ করে কমিশন। এ বিষয়ে বিএনপি একমত। বিষয়টি নোট অব ডিসেন্ট দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি সরাসরি নির্বাচনের ১৫ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়নে দলগুলোকে বাধ্য করতে। নারী আসন নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের নোট অব ডিসেন্ট আছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
পিএসসি ও দুদক: ২২টি দলের ঐকমত্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিএনপি এতে আপত্তি জানিয়েছে।
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮,৯, ১১ এবং ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটো বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
সংবিধানের মূলনীতি: সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার’ যুক্ত করতে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল একমত হয়েছে। তবে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
সংলাপ বর্জন: বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ এবং বাসদ (মার্কসবাদী) সংলাপ বর্জন করে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল।
গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু হয়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিনের আলোচনা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৯টি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যার মধ্যে আটটি বিষয়ে সবগুলো দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়।
সংলাপে ঐকমত্য হওয়া আটটি বিষয় হলো—সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; জরুরি অবস্থা ঘোষণা; সংবিধান সংশোধন; প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; পুলিশ কমিশন গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বাকি চারটির বিষয়ে ভিন্নমত আছে।
বাকি ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে দলগুলোর, যার মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনারা আটটিতে, সিপিবি-বাসদের একাধিকে, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন একটি করে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট আছে বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ-মার্কসবাদী দলেরও।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২১টি দল একমত হওয়ায় কমিশন সিদ্ধান্ত জানায়, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে ব্যর্থ হলে র্যাংকড চয়েসে ভোট হবে। ভোটে কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন দুই বিচারপতি। এ সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপিসহ পাঁচটি দল। তারা বলেছে, কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে না পারলে কী হবে–এ সিদ্ধান্ত হবে আগামী সংসদে।
সংসদের উচ্চকক্ষ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের সংলাপে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন থাকবে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ পাঁচটি দল আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, বেশির ভাগ দলের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সিপিবি, বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও আমজনতার দল উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিত করেছে।
সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের ভূমিকা
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে। তবে এই সিদ্ধান্তকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। উচ্চকক্ষের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দিতে চায় না দলটি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল জনগণের সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতেই থাকা উচিত। পরোক্ষভাবে নির্বাচিত উচ্চকক্ষকে এই ক্ষমতা দেওয়া গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
এর জবাবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার সভাপতি নুরুল হক নুর এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসিবাদ রুখতে সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের সমর্থন অপরিহার্য। তাঁদের মতে, উচ্চকক্ষের সদস্যরা দলের মনোনয়নে এলেও তাঁরা সমভাবে নির্বাচিত।
উচ্চকক্ষের ক্ষমতা নিয়ে সংলাপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। বিএনপির সমমনা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের মধ্যে এই বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮, ৯, ১১ ও ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ এবং উপজেলা পর্যায়ে অধ্বস্তন আদালত স্থাপনের কথা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করতে চায়। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নির্বাচনে বিজয়ী দলের ইশতেহার অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি হতে পরবর্তী প্রধান বিচারপতির করার সুযোগ থাকবে। বিষয়টিতে একমত বিএনপি ও তার সমমনারা।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি
সংলাপে এমপিদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া বাকি সব দল একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতেও সব দল একমত, তবে কতটুকু ক্ষমতা বাড়বে, তা নিয়ে বিভিন্ন দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পরামর্শ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি রাজি হয়েছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল রাজি হয়নি। জামায়াতও এই বিষয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছে।
জুলাই সনদ ও আইনি ভিত্তি
সংলাপে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ২১টি দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ’-এর আইনি ভিত্তি থাকার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করবে না এবং আইনি ভিত্তি না দিলে সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছে, সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর এবং দুই বছরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকায় এই সনদের মর্যাদা আইনের ঊর্ধ্বে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের দলিল।
নারী সংসদ সদস্য
সরাসরি নারী আসন ১০০ পরিবর্তে বিদ্যমান জাতীয় সংসদের ৫০ সংরক্ষিত নারী বহাল রেখে আগামী নির্বাচনে দলগুলোকে ৫ শতাংশ আসনে নারীদের প্রার্থী করার অনুরোধ করে কমিশন। এ বিষয়ে বিএনপি একমত। বিষয়টি নোট অব ডিসেন্ট দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি সরাসরি নির্বাচনের ১৫ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়নে দলগুলোকে বাধ্য করতে। নারী আসন নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের নোট অব ডিসেন্ট আছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
পিএসসি ও দুদক: ২২টি দলের ঐকমত্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিএনপি এতে আপত্তি জানিয়েছে।
বিএনপি ও তার সমমনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে উত্থাপিত সমন্বিত প্রস্তাবের ৮,৯, ১১ এবং ১২ ধারার এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর দুটো বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেবে।
সংবিধানের মূলনীতি: সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার’ যুক্ত করতে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল একমত হয়েছে। তবে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
সংলাপ বর্জন: বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ এবং বাসদ (মার্কসবাদী) সংলাপ বর্জন করে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সম্মুখ সারির জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় জুলাই যোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
৩ মিনিট আগে
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
৩ ঘণ্টা আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
৪ ঘণ্টা আগেঅর্চি হক, ঢাকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সম্মুখ সারির জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় জুলাই যোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। জুলাই যোদ্ধারা সরকারের কাছে দ্রুত তাঁদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের নিরাপত্তা দিতে কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা করবে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার পর এনসিপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এনসিপির বাইরে থাকা জুলাই যোদ্ধারাও সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি পাচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা যাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম, আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের জুলাই যোদ্ধা, আহত, শহীদ পরিবার—সবাই হুমকির মুখে আছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে।’
এনসিপির নেতারা জানান, তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং কর্মী-সমর্থকেরাও নানাভাবে হুমকি পাচ্ছেন। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ, তবে ভীত নই। আমি যে আসন থেকে নির্বাচন করব, সেখানে নিয়মিত আমাকে ও আমার নেতা-কর্মীদের, এমনকি সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমার নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি। তবে এখনো থানায় অভিযোগ করিনি।’ এনসিপি তাঁকে নরসিংদী-২ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের অনেকে বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পলাতক নেতারা বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, বর্তমান সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। হাদির ওপর হামলার ঘটনা এটা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিচ্ছে।
রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ইতিমধ্যে কয়েকবার ককটেল হামলা হয়েছে। দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর কয়েকবার হামলা করা হয়েছে। এনসিপির নেতারা বলছেন, তাঁরা মনে করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দোসরদের বিভিন্ন স্থানে জায়গা দেওয়ার কারণেই জুলাই যোদ্ধারা হুমকির মুখে পড়েছেন। বারবার হুমকি দেওয়ার পর ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো হয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এবং মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘আমরা শুধু নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং পুরো বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি বিদেশি শক্তির মদদে পুরো দেশবাসীর নিরাপত্তার জন্যই হুমকি।’
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, দেশের প্রশাসনে, মিডিয়ায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের দোসর এবং সহযোগীরা রয়েছে। তারা এদের (হাদির মতো নেতাদের) হত্যার মতো উৎপাদন সৃষ্টি করছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন প্রকাশ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় নির্বাচনী প্রচারে নামা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি আসনের সম্ভাব্য এক প্রার্থী বলেন, তাঁদের সঙ্গেও যে একই ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তাঁদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জীবনের নিশ্চয়তা কে দেবে? বাধ্য হয়েই প্রচারে কিছু বদল আনতে হচ্ছে। দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে।
সারোয়ার তুষার বলেন, তাঁরা দমে যাবেন না। তবে নির্বাচনী প্রচারের পরিবেশ নেই। সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দলীয় আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে নির্বাচনে সহিংসতা হতে পারে, ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। জনগণের রায় কতটা প্রতিফলিত হবে, সে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
জুলাই যোদ্ধা এবং ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরই যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাঁকে যদি দিবালোকে গুলি করা যায়, তাহলে এর মাধ্যমে আসলে সবাইকে এটাই বোঝানো হচ্ছে, কেউ নিরাপদ নন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছর ধরেই তাঁর পদত্যাগ চাইছি। এ জন্য আমাদের মামলাও খেতে হয়েছে।’
পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশের পরিস্থিতি অস্থির করার অপচেষ্টা করছে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে গত শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসর যারা জামিনে আছে, যাদের হাতে অস্ত্র ও অর্থ আছে, তাদের জেলখানার বাইরে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার সদিচ্ছা থাকলে এই সন্ত্রাসীদের ‘চৌদ্দ শিকের মধ্যে’ ঢোকাতে হবে।
এনসিপির যুব শাখা জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চান।
এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম সারির যোদ্ধাদের সরকারিভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি। ওই কমিটি মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এত দিন শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের হাতিয়ার (ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র) দেওয়া হতো। এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁরাও যদি অস্ত্র চান তাহলে আমরা লাইসেন্স দেব। নির্বাচনে যাঁরা অংশ নেবেন তাঁদের ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র যদি সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো তাঁদের ফেরত দেওয়া হবে। এর বাইরেও প্রার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে যত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার আমরা নেব এবং তাঁর নিরাপত্তা দেব।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় আসবেন।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সম্মুখ সারির জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় জুলাই যোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। জুলাই যোদ্ধারা সরকারের কাছে দ্রুত তাঁদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের নিরাপত্তা দিতে কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা করবে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার পর এনসিপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এনসিপির বাইরে থাকা জুলাই যোদ্ধারাও সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি পাচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা যাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম, আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের জুলাই যোদ্ধা, আহত, শহীদ পরিবার—সবাই হুমকির মুখে আছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে।’
এনসিপির নেতারা জানান, তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং কর্মী-সমর্থকেরাও নানাভাবে হুমকি পাচ্ছেন। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ, তবে ভীত নই। আমি যে আসন থেকে নির্বাচন করব, সেখানে নিয়মিত আমাকে ও আমার নেতা-কর্মীদের, এমনকি সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমার নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি। তবে এখনো থানায় অভিযোগ করিনি।’ এনসিপি তাঁকে নরসিংদী-২ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের অনেকে বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পলাতক নেতারা বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, বর্তমান সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। হাদির ওপর হামলার ঘটনা এটা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিচ্ছে।
রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ইতিমধ্যে কয়েকবার ককটেল হামলা হয়েছে। দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর কয়েকবার হামলা করা হয়েছে। এনসিপির নেতারা বলছেন, তাঁরা মনে করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দোসরদের বিভিন্ন স্থানে জায়গা দেওয়ার কারণেই জুলাই যোদ্ধারা হুমকির মুখে পড়েছেন। বারবার হুমকি দেওয়ার পর ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো হয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এবং মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘আমরা শুধু নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং পুরো বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি বিদেশি শক্তির মদদে পুরো দেশবাসীর নিরাপত্তার জন্যই হুমকি।’
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, দেশের প্রশাসনে, মিডিয়ায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের দোসর এবং সহযোগীরা রয়েছে। তারা এদের (হাদির মতো নেতাদের) হত্যার মতো উৎপাদন সৃষ্টি করছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন প্রকাশ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় নির্বাচনী প্রচারে নামা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি আসনের সম্ভাব্য এক প্রার্থী বলেন, তাঁদের সঙ্গেও যে একই ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তাঁদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জীবনের নিশ্চয়তা কে দেবে? বাধ্য হয়েই প্রচারে কিছু বদল আনতে হচ্ছে। দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে।
সারোয়ার তুষার বলেন, তাঁরা দমে যাবেন না। তবে নির্বাচনী প্রচারের পরিবেশ নেই। সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দলীয় আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে নির্বাচনে সহিংসতা হতে পারে, ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। জনগণের রায় কতটা প্রতিফলিত হবে, সে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
জুলাই যোদ্ধা এবং ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরই যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাঁকে যদি দিবালোকে গুলি করা যায়, তাহলে এর মাধ্যমে আসলে সবাইকে এটাই বোঝানো হচ্ছে, কেউ নিরাপদ নন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছর ধরেই তাঁর পদত্যাগ চাইছি। এ জন্য আমাদের মামলাও খেতে হয়েছে।’
পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশের পরিস্থিতি অস্থির করার অপচেষ্টা করছে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে গত শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসর যারা জামিনে আছে, যাদের হাতে অস্ত্র ও অর্থ আছে, তাদের জেলখানার বাইরে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার সদিচ্ছা থাকলে এই সন্ত্রাসীদের ‘চৌদ্দ শিকের মধ্যে’ ঢোকাতে হবে।
এনসিপির যুব শাখা জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চান।
এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম সারির যোদ্ধাদের সরকারিভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি। ওই কমিটি মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এত দিন শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের হাতিয়ার (ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র) দেওয়া হতো। এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁরাও যদি অস্ত্র চান তাহলে আমরা লাইসেন্স দেব। নির্বাচনে যাঁরা অংশ নেবেন তাঁদের ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র যদি সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো তাঁদের ফেরত দেওয়া হবে। এর বাইরেও প্রার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে যত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার আমরা নেব এবং তাঁর নিরাপত্তা দেব।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় আসবেন।

রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল। গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন
০১ আগস্ট ২০২৫
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
৩ ঘণ্টা আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সতর্কবার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর আক্রমণটি ‘খুবই সিম্বলিক’ আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়।
রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন দলের বৈঠকের পর তাঁর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিবাদ সভা হবে, সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পরদিন শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করা হয় জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ওসমান হাদিকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
জুলাই আন্দোলনের সময় এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে দূরত্ব দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। এই অবস্থার মধ্যে হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাদির ওপর হামলাকে ‘ষড়যন্ত্রের’অংশ হিসেবে তুলে ধরেন তিন দলের নেতারা। সেখানে হারিয়ে যাওয়া ঐক্য পুনরুদ্ধারের তাগিদও দেন তাঁরা।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে, এমন কথা আমরা কেন বলব?’
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টক শোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।
অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’
বৈঠকে উপস্থিত থাকা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দলগুলোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান নেবে তারা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে জন্য পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা।
যমুনায় ওসমান হাদির পরিবার
ওসমান হাদির পরিবার গতকাল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আবদুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁদের।
ওসমান হাদির বোন বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার একটি ১০ মাসের সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার। যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’
অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লবের জন্য দিনরাত কাজ করছে। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে সেটা তদন্ত করতে হবে।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সতর্কবার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর আক্রমণটি ‘খুবই সিম্বলিক’ আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়।
রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন দলের বৈঠকের পর তাঁর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিবাদ সভা হবে, সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পরদিন শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করা হয় জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ওসমান হাদিকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
জুলাই আন্দোলনের সময় এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে দূরত্ব দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। এই অবস্থার মধ্যে হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাদির ওপর হামলাকে ‘ষড়যন্ত্রের’অংশ হিসেবে তুলে ধরেন তিন দলের নেতারা। সেখানে হারিয়ে যাওয়া ঐক্য পুনরুদ্ধারের তাগিদও দেন তাঁরা।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে, এমন কথা আমরা কেন বলব?’
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টক শোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।
অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’
বৈঠকে উপস্থিত থাকা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দলগুলোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান নেবে তারা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে জন্য পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা।
যমুনায় ওসমান হাদির পরিবার
ওসমান হাদির পরিবার গতকাল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আবদুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁদের।
ওসমান হাদির বোন বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার একটি ১০ মাসের সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার। যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’
অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লবের জন্য দিনরাত কাজ করছে। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে সেটা তদন্ত করতে হবে।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল। গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন
০১ আগস্ট ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সম্মুখ সারির জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় জুলাই যোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
৩ ঘণ্টা আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
৪ ঘণ্টা আগেশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাসই বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছিল, তবে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে একযোগে ধরে নেওয়া হয় বহু বুদ্ধিজীবীকে। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে। এদিনটিকে তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে জাতি।
পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরিকল্পনা করেছিল, বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দিলে বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হলেও আত্মনির্ভর হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ ছিলেন শিক্ষক। ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সামরিক শাসকদের ক্ষোভ ছিল। একাত্তরে সে ক্ষোভ ঘৃণায় পরিণত হয়।
গবেষকদের ধারণা, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গভর্নর হাউস থেকে তাঁর একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা ছিল। তাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে আটক হয়ে প্রাণ হারান। পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে গবেষকেরা মনে করেন।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা—তখনই খবর পাওয়া যায়, রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমির। সেখানে ইটের গাদার মধ্যে পড়ে ছিল বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর বিকৃত মরদেহ। কারও হাত-চোখ বাঁধা। বুক, মাথা ও পিঠে ছিল গুলির আঘাত এবং সারা দেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। ভয়ঙ্কর নির্মমভাবে নির্যাতনের পর তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। ক্রমেই বের হতে থাকে আরও বধ্যভূমি। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে শোকাতুর হয় জাতি। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে চিরজাগরূক রাখতে রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমির স্থানে পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ।
রায়েরবাজার ছাড়া ঢাকা শহরের প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাঙলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এবং মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত। ডিসেম্বরের বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে হত্যা করা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, নিজামুদ্দীন আহমদ, সেলিনা পারভীন, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, চিকিৎসাসেবাসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল বলে নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সমকালীন সংবাদপত্রের খবর ও গবেষণা সূত্রে জানা যায়। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে এ কাজ করেছিল বাঙালি রাজাকার ও মুসলিম লীগাররা। তারা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে এসে লোকজনকে চিনিয়ে দিয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দিয়েছে। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাপিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। শহীদদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন। রাও ফরমান আলী হত্যার জন্য মোট ১৫০০ বাঙালির তালিকা করেছিলেন বলে জানা যায়।
যুদ্ধের শেষ কয়েক দিন
এদিকে নিশ্চিত পরাজয়ের প্রাক্কালে এসে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানিদের শীর্ষপর্যায়ে মতভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে রাও ফরমান আলীর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুদ্ধবিরতির আবেদন পাঠানোকে তারই প্রমাণ মনে করা হয়। ঢাকার শহরতলিতে অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীর গোলা এসে পড়ছিল। শহরের কয়েকটি স্থানে তো মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশন আগে থেকেই চলছিল। জেনারেল নিয়াজী তখনো দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। মনস্থির করতে পারেননি প্রাদেশিক গভর্নর মালেকও। তবে ১৪ ডিসেম্বরই গভর্নর হাউসে (বর্তমান বঙ্গভবন) মালেক মন্ত্রিসভার বৈঠক চলার সময় ভারতীয় বিমানের বোমা হামলার পর তিনি ভড়কে গিয়ে সপারিষদ পদত্যাগ করে বসেন। ছটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের হামলায় গভর্নর হাউসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এদিকে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য মিত্রবাহিনীর জেনারেল মানেকশর আহ্বান রেডিওতে বারবার প্রচারিত হতে থাকে। ১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল নিয়াজী ও গভর্নর মালেককে ‘যুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণের অনুমোদন দেন। উপায় না দেখে নিয়াজী শেষ চেষ্টা হিসেবে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর অবশিষ্ট সেনারা এক জায়গায় সমবেত হবে। সেখান থেকে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে দিতে হবে। ১৫ তারিখ প্রস্তাবটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়।
এদিকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে ঘেঁষার চেষ্টা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশি বাহিনীর সেনারা বন্দর অচল করতে উদ্যোগ নেন। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এতে সহায়তা করে। বন্দরে প্রচুর বোমা ফেলে তা অচল করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের অদূরে কুমিরার কাছে ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় ২৩ ডিভিশনের ৮৩ ব্রিগেডের যোদ্ধারা। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম দখলে নেওয়া। সব মিলিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং ঢাকার পতন তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাসই বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছিল, তবে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে একযোগে ধরে নেওয়া হয় বহু বুদ্ধিজীবীকে। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে। এদিনটিকে তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে জাতি।
পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরিকল্পনা করেছিল, বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দিলে বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হলেও আত্মনির্ভর হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ ছিলেন শিক্ষক। ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সামরিক শাসকদের ক্ষোভ ছিল। একাত্তরে সে ক্ষোভ ঘৃণায় পরিণত হয়।
গবেষকদের ধারণা, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গভর্নর হাউস থেকে তাঁর একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা ছিল। তাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে আটক হয়ে প্রাণ হারান। পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে গবেষকেরা মনে করেন।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা—তখনই খবর পাওয়া যায়, রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমির। সেখানে ইটের গাদার মধ্যে পড়ে ছিল বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর বিকৃত মরদেহ। কারও হাত-চোখ বাঁধা। বুক, মাথা ও পিঠে ছিল গুলির আঘাত এবং সারা দেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। ভয়ঙ্কর নির্মমভাবে নির্যাতনের পর তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। ক্রমেই বের হতে থাকে আরও বধ্যভূমি। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে শোকাতুর হয় জাতি। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে চিরজাগরূক রাখতে রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমির স্থানে পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ।
রায়েরবাজার ছাড়া ঢাকা শহরের প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাঙলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এবং মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত। ডিসেম্বরের বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে হত্যা করা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, নিজামুদ্দীন আহমদ, সেলিনা পারভীন, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, চিকিৎসাসেবাসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল বলে নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সমকালীন সংবাদপত্রের খবর ও গবেষণা সূত্রে জানা যায়। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে এ কাজ করেছিল বাঙালি রাজাকার ও মুসলিম লীগাররা। তারা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে এসে লোকজনকে চিনিয়ে দিয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দিয়েছে। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাপিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। শহীদদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন। রাও ফরমান আলী হত্যার জন্য মোট ১৫০০ বাঙালির তালিকা করেছিলেন বলে জানা যায়।
যুদ্ধের শেষ কয়েক দিন
এদিকে নিশ্চিত পরাজয়ের প্রাক্কালে এসে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানিদের শীর্ষপর্যায়ে মতভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে রাও ফরমান আলীর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুদ্ধবিরতির আবেদন পাঠানোকে তারই প্রমাণ মনে করা হয়। ঢাকার শহরতলিতে অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীর গোলা এসে পড়ছিল। শহরের কয়েকটি স্থানে তো মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশন আগে থেকেই চলছিল। জেনারেল নিয়াজী তখনো দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। মনস্থির করতে পারেননি প্রাদেশিক গভর্নর মালেকও। তবে ১৪ ডিসেম্বরই গভর্নর হাউসে (বর্তমান বঙ্গভবন) মালেক মন্ত্রিসভার বৈঠক চলার সময় ভারতীয় বিমানের বোমা হামলার পর তিনি ভড়কে গিয়ে সপারিষদ পদত্যাগ করে বসেন। ছটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের হামলায় গভর্নর হাউসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এদিকে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য মিত্রবাহিনীর জেনারেল মানেকশর আহ্বান রেডিওতে বারবার প্রচারিত হতে থাকে। ১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল নিয়াজী ও গভর্নর মালেককে ‘যুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণের অনুমোদন দেন। উপায় না দেখে নিয়াজী শেষ চেষ্টা হিসেবে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর অবশিষ্ট সেনারা এক জায়গায় সমবেত হবে। সেখান থেকে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে দিতে হবে। ১৫ তারিখ প্রস্তাবটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়।
এদিকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে ঘেঁষার চেষ্টা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশি বাহিনীর সেনারা বন্দর অচল করতে উদ্যোগ নেন। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এতে সহায়তা করে। বন্দরে প্রচুর বোমা ফেলে তা অচল করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের অদূরে কুমিরার কাছে ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় ২৩ ডিভিশনের ৮৩ ব্রিগেডের যোদ্ধারা। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম দখলে নেওয়া। সব মিলিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং ঢাকার পতন তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল। গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন
০১ আগস্ট ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সম্মুখ সারির জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় জুলাই যোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
৩ মিনিট আগে
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ ঘণ্টা আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরও ৮ জনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরও ৮ জনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল। গত ২ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করেন
০১ আগস্ট ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সম্মুখ সারির জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় জুলাই যোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
৩ মিনিট আগে
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
৩ ঘণ্টা আগে