Ajker Patrika

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

সংস্কার বাস্তবায়নে এল গতি

  • অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দুই দফায় মোট ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত।
  • বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবের তালিকা করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ।
  • মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি।
  • প্রথম দফার ১৬টি পুরোপুরি এবং ২১টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১২
সংস্কার বাস্তবায়নে এল গতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কোনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেই তালিকা জানাতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে অন্য ১০টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে প্রথম ধাপে আশু সংস্কারের জন্য ১২১টি সুপারিশ চিহ্নিত করে সরকার। দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে ২৪৬টি সংস্কার প্রস্তাব।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, সরকার-নির্ধারিত ওই ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো আইন, বিধি, নীতিমালা সংশোধন না করেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো শিগগির বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৩৬৭টি প্রস্তাবের মধ্যে দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে কোনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, তাদের সেই তালিকা জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শুদ্ধাচার শাখা থেকে ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন নেই, সরকার চিহ্নিত এমন সংস্কার প্রস্তাবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংস্কারের অগ্রগতি প্রতিবেদন নিয়মিত উপস্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রথম দফায় চিহ্নিত ১২১টি সুপারিশের মধ্যে ১৬টি পুরোপুরি এবং ২১টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় চিহ্নিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নাধীন আছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কার অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মোসা. সুরাইয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে বাস্তবায়ন করতে হবে, সেই তালিকা করে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কাজ শুরু করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাবগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ করেছে। এরপর সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। কিছু রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। এখন সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে ঐকমত্য কমিশন।

অতি গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় যেসব প্রস্তাব

দ্বিতীয় ধাপে চিহ্নিত ২৪৬টি সুপারিশের মধ্যে ৮২টি শ্রম সংস্কার বিষয়ে। এ ছাড়া নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ৭১টি, স্থানীয় সরকার বিষয়ে ৩৭টি, স্বাস্থ্য বিষয়ে ৩৩টি এবং তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ে ২৩টি সুপারিশ রয়েছে।

সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অর্থ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগসহ ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

ওই চিঠিতে দেখা যায়, কোনো কোনো সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের দায়িত্ব একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক প্রস্তাব একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। একাধিক দপ্তরের সিদ্ধান্তে যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে, সেগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত নির্দেশনার আলোকে সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত আইন সংশোধন, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্যসংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি পৃথক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, নারী ও পুরুষের জন্য নমনীয় কর্মঘণ্টা এবং পেশাগত কাজ ও পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে সমন্বয় করতে বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ চালু, সরকারি দপ্তর-সংস্থায় স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিংভিত্তিক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধের ব্যবস্থা করে আইন করা এবং যাঁরা ইতিমধ্যে স্থায়ী ধরনের কাজে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযুক্ত আছেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া, পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ছুটির পরিমাণ নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থানা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একত্র করে জনপ্রকৌশল সেবা নামে একটি অভিন্ন ক্যাডার সৃষ্টি, পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যাওয়ার পরে কারও ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হলে এবং বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড না হলে দুই বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দেওয়ার বিষয়গুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের তালিকায় রাখা হয়েছে।

একই কোম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের মালিক হতে না পারেন, সে জন্য ক্রস-ওনারশিপ নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ জারি; সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার লক্ষ্যে একই ব্যক্তি, কোম্পানি বা গোষ্ঠীর মালিকানায় থাকা একই ভাষায় দুটি দৈনিক পত্রিকা বা দুটি টেলিভিশন চ্যানেল থাকতে পারবে না–এমন অধ্যাদেশ বা নীতিমালা জারি; ইউনিয়ন ছাড়া অন্যান্য সংগঠনকে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার তালিকা থেকে এসব সংঘকে বাতিল করা; টেলিভিশনের গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক টিআরপি নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা, সরকারি কোনো ঘোষণা বা বিজ্ঞাপন টেলিভিশন ও এফএম রেডিওতে প্রচারের ক্ষেত্রে ফি দেওয়া, এফএম রেডিওতে বার্ষিক নবায়ন পদ্ধতি তুলে দেওয়া; বিটিভি, বেতার ও বাসসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সম্প্রচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা; সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, পত্রিকার বিজ্ঞাপন দর সামঞ্জস্যপূর্ণকরণ এবং সরকারি ও বেসরকারি দরের মধ্যে ব্যবধান কমানো, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটকে একক পরিচালনা পর্ষদের অধীন পরিচালনা করার বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সব আদালত ও থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালু এবং ইশারা ভাষা জানা ব্যক্তির ব্যবস্থা করা; সাক্ষী সুরক্ষা ও অপরাধের শিকার ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো চালু; পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবাদানকারীর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন; যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের ২০০৯ সালের নির্দেশনার আলোকে সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী অধ্যাদেশ প্রণয়ন; উপজেলা পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজের পদায়ন; নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশি নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে ওই বিদেশি নাগরিকের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থার বিষয় ছাড়াও বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।

সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।

কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিয়া পরিবারের আর কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবে না: রিজওয়ানা হাসান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫২
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।

বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট গণনায় সংশোধনী ও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত