Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য দরকার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি: দ্য হিন্দুকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট সরকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এপ্রিল মাসে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩২

ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, শেখ হাসিনার ভারত থেকে দেওয়া বক্তব্য, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, জেলেদের প্রতি অবমাননামূলক আচরণ এবং আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্পসংক্রান্ত সমস্যা আছে।

দ্য হিন্দু: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার বৈঠকের বিষয়ে বলুন, বিশেষ করে যখন দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা চলছে...?

তৌহিদ হোসেন: সত্যি বলতে, (বাংলাদেশের) অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। শুরুটা বেশ কঠিন ছিল। কারণ আমি মনে করি, ভারত গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি নির্দিষ্ট ধাঁচের সম্পর্কে অভ্যস্ত ছিল, তবে হঠাৎ করেই সেই সম্পর্কের ধরনে দ্রুত পরিবর্তন আসে। সম্ভবত নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভারতের কিছুটা সময় লেগেছে, তাই শুরুতে সম্পর্ক নিয়ে অনেক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল এবং একধরনের অস্বস্তি ছিল।

তবে আমি মনে করি, ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই অবস্থা কেটে যাওয়া উচিত। এখন আমাদের এমন একটি পরিবেশ দরকার, যেখানে আমরা স্বাভাবিকভাবে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারব। ছয় মাস আগের তুলনায় এখন দুই দেশ অনেক ভালোভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে।

দ্য হিন্দু: সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আপনি কি এ বিষয়ে এস জয়শঙ্করের কাছে কিছু জানতে চেয়েছেন?

তৌহিদ হোসেন: আসলে আমি এটা জানতে চাইনি। কারণ, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে কী আলোচনা করে, সেটি তাদের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, এ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে হবে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটি ইতিমধ্যেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি। কিছু সময়ের জন্য বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটেছিল, তবে সেটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, দুই দেশের জনগণ ও বেসরকারি খাত পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে চায় এবং এটি আমাদের স্বার্থের বিষয়। দুই দেশের স্বার্থরক্ষা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

দ্য হিন্দু: ভারতে একাধিকবার প্রকাশ্যে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন, আপনার সরকার এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে? ভারত কি এ বিষয়ে সন্তুষ্ট? কারণ, এটি এখন দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

তৌহিদ: আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে হিন্দু বা অন্য যে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান বা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতোই সমান নাগরিক। তাদের সমান অধিকার রয়েছে এবং সুরক্ষা পাওয়াও তাদের অধিকার। বাংলাদেশ সরকার তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। যেভাবে অন্য যে কোনো নাগরিকের জন্য করে থাকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ভারতীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে এক ধরনের অযৌক্তিক প্রচারণা শুরু হয়, যা বেশির ভাগই মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ছিল।

আমি আপনাদের অনুরোধ করব, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের দিকে নজর দিতে, যা দুই দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না। জাতিসংঘ আমাদের অনুরোধে এটি পর্যবেক্ষণ করেছে। কারণ আমরা চেয়েছিলাম, পরিস্থিতির একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হোক।

দ্য হিন্দু: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে আপনারা ভারতের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি, তাঁকে ফেরত পাঠাতে। যাতে তাঁকে বাংলাদেশের আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে। যদি ভারত সরকার তা না-ও করে, তবে অন্তত আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যে, তিনি যেন ভারতের মাটি থেকে উসকানিমূলক ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন, যা বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, গত ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। জনগণ চায় না, তিনি পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করুন।

দ্য হিন্দু: কিন্তু শেখ হাসিনার এক বক্তব্যের পর শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালানোর বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

তৌহিদ: কিছু লোক হয়তো কোনো কিছু করতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেটি সরকারের সমর্থনপুষ্ট।

দ্য হিন্দু: আপনাদের সরকার এখন পর্যন্ত শুধু ভারতকে ‘নোট ভারবাল’ পাঠিয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর জন্য। আনুষ্ঠানিকভাবে কি প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে?

তৌহিদ হোসেন: আমাদের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, এবং আমরা ভারতের কাছে বহু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ফেরত দিয়েছি যাতে তারা সেখানে বিচারের মুখোমুখি হতে পারে। আমি মনে করি, ভারতও তাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে পারে যাতে তিনি এখানে বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন।

দ্য হিন্দু: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আপনাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমএলএটি (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স) নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পরোয়ানাও থাকতে হবে। বাংলাদেশ কবে এই প্রক্রিয়া শুরু করার আশা করছে?

তৌহিদ হোসেন: দেখুন, প্রক্রিয়াটি এরই মধ্যেই চলমান, কারণ মামলাগুলো এখন আদালতে আছে। আমরা তাদের তাড়াহুড়ো করতে বাধ্য করতে পারি না। আর আমরা এটাও জানি যে, তিনি ভারতীয় বিচারিক ব্যবস্থারও আশ্রয় নিতে পারেন। এতে সময় লাগতে পারে, তবে আমাদের মূল চাওয়া হলো—তিনি ভারতে থাকাকালীন উসকানিমূলক বক্তব্য না দেন।

দ্য হিন্দু: সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের আটক প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি কিছু মুক্তিপ্রাপ্ত মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যাদের বাংলাদেশের কারাগার থেকে ছাড়া হয়েছে। তাদের মারাত্মকভাবে মারধর করা হয়েছে, তাদের অনেকে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন, অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। আপনি কি মনে করেন, এটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির ফল?

তৌহিদ হোসেন: আমি তা মনে করি না। প্রথমত, সীমান্তের বিষয়টি দেখুন। ২০২৪ সালের অর্ধেক সময় আগের সরকার ক্ষমতায় ছিল। সে সময়েই সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটি বিশ্বের কোথাও হয় না। আপনি এই বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত হবেন। কারণ, ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয় যে, যেহেতু সীমান্তে অপরাধ হচ্ছে, তাই এটি ঘটছে। কিন্তু বিশ্বের প্রতিটি সীমান্তেই অপরাধ সংঘটিত হয়।

কিন্তু কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় না। যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করুন, আদালতে উপস্থাপন করুন, কারাগারে পাঠান বা আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই করুন। কিন্তু এভাবে সরাসরি হত্যা করা যায় না। অথচ বছরের পর বছর ধরে, বিভিন্ন সরকার থাকার পরও, সীমান্তে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মনে করি, ভারত যদি চায়, তবে এটি বন্ধ করতে পারে এবং অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।

দ্য হিন্দু: দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল সামুদ্রিক অঞ্চল সংক্রান্ত। বাংলাদেশ ও ভারত বহু বছর আগে একটি সামুদ্রিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তবুও এখনো দুই দেশের মধ্যে মৎস্যজীবীদের আটকের ঘটনা ঘটছে...?

তৌহিদ হোসেন: আমি সরাসরি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, তবে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছি, তা হলো—মৎস্যজীবীরা মাছ অনুসরণ করে চলে। স্থলে স্পষ্ট সীমান্তরেখা থাকে, আপনি জানেন যে এখানেই সীমা। কিন্তু সমুদ্রে বিষয়টি এতটা সহজ নয়। প্রায়ই দুই পক্ষের মৎস্যজীবীরাই একে অপরের সামুদ্রিক সীমানা অতিক্রম করে ফেলে। আপনারা কিছু মৎস্যজীবী আটক করেছেন, আমরাও কিছু করেছি, এবং আমরা উভয়েই সময়ে সময়ে তাদের মুক্তি দেই।

যেখানে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে...আমরা এরই মধ্যে একটি তদন্তের জন্য অনুরোধ করেছি এবং যদি দেখা যায় যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ সত্যিই জড়িত ছিল বা আইন লঙ্ঘন করেছে, তাহলে অবশ্যই আমরা তা বিবেচনায় নেব। তবে এটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। আমি কলকাতায় চার বছরেরও বেশি সময় কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং এই বন্দী বিনিময়ের প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছি। সাধারণত তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় না। যদি কোনো ব্যতিক্রম ঘটে থাকে, আমরা অবশ্যই তা খতিয়ে দেখব।

দ্য হিন্দু: আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালুর জন্য আদানি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ সরকার আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি চালিয়ে যেতে চায়, এটি কি নিশ্চিত করে বলা যায়?

তৌহিদ হোসেন: আমি মনে করি, আমরা সাধারণত দুই ধাপে আলোচনা করি—একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এবং অন্যটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরে। যখন কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন আমাদের সেই চুক্তির শর্ত মেনে চলতে হয়। তবে যদি দেখি যে, এটি যথাযথভাবে সম্পাদিত হয়নি বা এতে কোনো অসংগতি রয়েছে, তাহলে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তা পুনরায় পর্যালোচনা করা যেতে পারে।

আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করব এবং এটিকে আরও যৌক্তিক করার চেষ্টা করব। আমি প্রযুক্তিবিদ নই, তাই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কারিগরি বিষয়ের বিস্তারিত আমি বলতে পারছি না। তবে অন্যান্য বিদ্যুৎ চুক্তির সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, এই চুক্তির আওতায় নির্ধারিত বিদ্যুৎ ট্যারিফ তুলনামূলকভাবে বেশি। আমাদের বিশ্বাস, এটি পুনরায় আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে কয়লা ক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে।

যেকোনো যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা গেলে, এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ববাজারে সর্বোত্তম মূল্যে কয়লা কেনা উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি। এই বিষয়গুলোতে আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করতে পারি এবং পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চাই।

তবে বর্তমান সময় বিবেচনায়, আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালুর অনুরোধ করেছি। কারণ, আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং আমাদের পরিকল্পনাও এই সরবরাহের ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। আমরা চাই, আদানি গ্রুপ আমাদের এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক এবং আমরা এর জন্য অর্থ পরিশোধ করব।

দ্য হিন্দু: আপনি এরই মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দুইবার সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে কোনো বৈঠক হয়নি। আপনি কি মনে করেন, আগামী এপ্রিলে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিমসটেক সম্মেলনে তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই নেতা একই দিনে একই স্থানে ছিলেন না। তাই তাদের মধ্যে সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই মুক্ত ও আন্তরিকভাবে আলোচনা করতে আগ্রহী।

আমাদের অঞ্চলের সংস্কৃতিতে, যখন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা একসঙ্গে বসেন, তখন একটি শব্দেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। যেখানে আমাদের মতো কর্মকর্তাদের জন্য এটি বছরের পর বছর আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেদিক থেকে, তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়া ইতিবাচক হবে।

যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন তাঁরা একবার ফোনে কথা বলেছেন। তাঁরা বিমসটেক সম্মেলনে একই ভেন্যুতে থাকবেন, কারণ সেখানে সব রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। স্বাভাবিকভাবেই, এটি ছোট পরিসরের একটি সম্মেলন হওয়ায় তাদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের সম্মেলনগুলোতে প্রতিটি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অন্য সাতজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করতেন। তাই আমি মনে করি, বিমসটেকেও তেমন কিছু হতে পারে।

দ্য হিন্দু: আপনি কি এই বিষয়টি জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আমি শুধু বিষয়টি উল্লেখ করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি এখনো আগাম বলা যাবে না। সাধারণত এসব বিষয় সম্মেলনের কয়েক দিন আগে চূড়ান্ত করা হয়, যখন পুরো কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। দেখা যাক কী হয়।

দ্য হিন্দু: আপনি পররাষ্ট্রনীতিতে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস সম্পর্কে জানেন। ২০০৯ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা কি আবার আগের অবস্থায় ফিরতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: কেন শুধু গত ১৫ বছরকে বিবেচনা করবেন? এমনকি বিএনপির শাসনামলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমি মনে করি না যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট সরকারের ওপর নির্ভরশীল।

১৯৯৬-১৯৯৭ সালে আমরা গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি করেছিলাম, যা দুই দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ থেকে বোঝা যায়, যে-ই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে উঠতে হবে।

আমার বিশ্বাস, উভয় পক্ষই জানে তাদের স্বার্থ কোথায় এবং কীভাবে পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করা যায়। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শত্রুমুক্ত তিনটি জেলা

নতুন দেশের জন্য এল প্রথম স্বীকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, যশোর, কুড়িগ্রাম ও ফেনী প্রতিনিধি
নতুন দেশের জন্য এল প্রথম স্বীকৃতি

স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বাংলাদেশকে একই দিন স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান ও ভারত। দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। যুদ্ধের শেষ দিকে বাংলাদেশের বিজয় ক্রমেই নিশ্চিত হয়ে আসায় এই স্বীকৃতি এসেছিল। আবার একই দিন শত্রুসেনামুক্ত হয়েছিল দেশের সীমান্তবর্তী দুই জেলা যশোর ও ফেনী।

বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে ভুটানের তৎকালীন রাজা স্বীকৃতি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক বার্তা।

ভুটান ও ভারতের মধ্যে কোন দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, এ নিয়ে কখনো কখনো মিডিয়ার খবরের সূত্রে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ভারত ও ভুটান যথাক্রমে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দিয়েছে—মিডিয়ার একাংশের এমন খবরের পর একবার বিতর্ক ছড়ায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক সত্য নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই...। ১৯৭১ সালে ভুটান প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ৬ ডিসেম্বর একটি ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।...আমাদের ইতিহাসে রয়েছে যে এমনকি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগেই ভুটান প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারত ও ভুটান উভয়ই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু প্রথমে দিয়েছে ভুটান।’

অর্থাৎ দুই প্রতিবেশীর স্বীকৃতি এসেছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে।

সচিব জানিয়েছিলেন, স্বীকৃতির বার্তায় ভুটানের তখনকার রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক বাংলাদেশের জনগণের সাফল্য কামনা করেন এবং স্বাধীনতা-যুদ্ধের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করেন।’

ভুটান সরকার ২০১৪ সালে বাংলাদেশের কাছে সেই ওয়্যারলেস বার্তার একটি টেক্সট হস্তান্তর করেছিল।

এই দিনেই শত্রুমুক্ত যশোর ও ফেনী

একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনী ও যশোরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান।

৬ তারিখ দুপুরের পরপরই যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। শহরে ওড়ে বিজয়ী বাংলাদেশের পতাকাখচিত প্রথম পতাকা।

যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম জানান, ১৯৭১ সালের ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় সহায়তাকারী ভারতের মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাকিস্তানি সেনা স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পর্যুদস্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালানো শুরু করে। যশোর সেনানিবাস ছেড়ে তারা খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলির রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা জেলার মানুষ।

ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসন আজ শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মো. আশেক হাসান।

৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামও হানাদার মুক্ত হয়। এই দিনে বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকারের নেতৃত্বে ৩৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বিকেল ৪টায় কুড়িগ্রাম শহরে প্রথম প্রবেশ করে। এরপর তারা নতুন শহরের পানির ট্যাংকের ওপরে (বর্তমান সদর থানার উত্তরে অবস্থিত) স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় বিজয়বার্তা। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানাতে হাজারো মুক্তিকামী মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

মুক্তিযুদ্ধে অর্ধশতাধিক অভিযানে অংশ নেওয়া আব্দুল হাই সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। আমরা যুদ্ধ করেছি জাতির মুক্তির আশায়; প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদের জন্য।...মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নেই। সবাই শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে।’

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কুড়িগ্রাম জেলা ও সদর উপজেলা ইউনিট কমান্ড, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, প্রীতিলতা ব্রিগেডসহ কয়েকটি সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে বিজয় র‌্যালি করে শহরের কলেজ মোড়ের বিজয়স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল আরেক জেলা ফেনী। পাকিস্তানি সেনারা প্রথম আত্মসমর্পণ করেছিল সীমান্তের বিলোনিয়ায়।

৬ ডিসেম্বর ভোর থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ফেনী শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। পরে শহরের রাজাঝির দীঘিরপাড়ে ডাকবাংলোর সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কেঁপে ওঠে শহর। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস সদস্যরা ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যান।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, এখনো তরুণ প্রজন্ম চাইলে এ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এজন্য সবার আগে দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।’

ফেনীমুক্ত দিবস সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ভিপি বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরু থেকে গেরিলা যুদ্ধ করতে করতে আমরা পাঁচগাছিয়া এলাকার কাছাকাছি চলে আসি। ৫ ডিসেম্বর আমরা ঠিক ফেনীর কাছাকাছি যখন আসি, তখন পাকিস্তানি সেনারা রণেভঙ্গ দিয়ে শেষ রাতের দিকে শুভপুর ও বারইয়ারহাট হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।

ঐতিহাসিক এদিনটি উপলক্ষে আজ ফেনীতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ এতে অংশ নিয়ে স্মরণ করবেন বিজয়ের সেই স্মরণীয় মুহূর্তকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অন্তঃসত্ত্বা সোনালীকে অবশেষে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করল বিজিবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১১
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সোনালীকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ছবি: বিজিবি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সোনালীকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ছবি: বিজিবি

ভারতীয় হাইকমিশনের অনুরোধ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর কূটনৈতিক যোগাযোগের ভিত্তিতে অমানবিক পুশইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুনকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মানবিক ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আইসিপিতে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সোনালী খাতুন এবং তার আট বছরের সন্তান মো. সাব্বির শেখকে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন।

বিজিবি সদরদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হস্তান্তর শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশইন কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দীর্ঘদিন ধরে এসব কর্মকাণ্ড সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকট তৈরি করছে এবং দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও শুভ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুর নিরাপত্তা এবং চিকিৎসাগত ঝুঁকি বিবেচনায় বিজিবির এই উদ্যোগ দায়িত্বশীলতার এক উদাহরণ।

বিজিবি আশা প্রকাশ করেছে, পুশইনসহ এ ধরনের আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী ও অমানবিক কর্মকাণ্ড বিএসএফ ভবিষ্যতে বন্ধ করবে এবং সীমান্তে মানবিক, আইনসঙ্গত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রক্রিয়া বজায় রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রায় জটিলতা

  • জার্মানির এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার
  • আজ বিকেলে আসার কথা, বিলম্ব হতে পারে
  • নতুন অ্যাম্বুলেন্সে যেতে পারবেন মাত্র চারজন
  • লন্ডন যাত্রা নির্ভর করবে শারীরিক অবস্থার ওপর
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৮
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

শারীরিক জটিলতা এবং নির্ধারিত সময়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া নিয়ে সমস্যা হওয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল শুক্রবারের মধ্যেই লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা ছিল তাঁর। এর মধ্যে ৮০ বছর বয়সী বিএনপি নেত্রীর শারীরিক অবস্থা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়। এসবের জেরে যাত্রার দিনক্ষণ পিছিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি উড়োজাহাজেও এসেছে বদল। তারপরও সার্বিকভাবে লন্ডনযাত্রা নিয়ে জটিলতা এখনো রয়েই গেছে বলে জানা গেছে।

কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে কারিগরি ত্রুটির কারণে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ঢাকায় আসতে দেরি হবে বলে জানানো হয়। খালেদার শারীরিক অবস্থাও ভ্রমণের উপযুক্ত ছিল না। দুই কারণে যাত্রার তারিখ বদলের ঘোষণার পর জানা গেছে, কাতারের রাজপরিবারের ওই বাহনে লন্ডন যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। বরং অঙ্গীকার রক্ষা করতে এ জন্য জার্মানির একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছে কাতার সরকার। পশ্চিম এশিয়ার দেশ জর্জিয়া থেকে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবে বলে জানা গেছে।

ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ জানান, কাতার সরকার এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিচ্ছে। আজ শনিবার বিকেলে সেটি ঢাকায় পৌঁছাতে পারে বলে দূতাবাস থেকে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি আরও বিলম্ব হতে পারে বলে জানা গেছে।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া। লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের গুরুতর জটিলতায় ভুগছেন তিনি। গত ২৭ নভেম্বর থেকে রয়েছেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাঁর চিকিৎসা চলছে। যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও যুক্ত হয়েছে চিকিৎসা তৎপরতায়।

দেশনেত্রীর লন্ডনযাত্রার দিনক্ষণ বাতিলের কারণ জানাতে গিয়ে এয়ারক্রাফটের ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’র কথা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথাও বলেছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এয়ারক্র্যাফটের সমস্যা আছে, একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থাও ভালো না। এই অবস্থায় যাত্রার তারিখ বদল করা হয়েছে। এখন মেডিকেল বোর্ড বললে, ফ্লাই করার মতো থাকলে রোববার তাঁকে (খালেদা জিয়া) লন্ডনে নেওয়া হবে।’

এদিকে সব জটিলতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া লন্ডন যেতে পারবেন কি না বা কবে যেতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র বলছে, লন্ডন যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত গুরুত্ব পাচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের বিষয়টি। উড্ডয়ন করার মতো সক্ষম থাকতে হবে তাঁকে। কম-বেশি দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা ভ্রমণের মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ অবস্থায় লন্ডনে নেওয়া সম্ভব হবে কি না–বিষয়টি মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই শুধু মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। অন্যদিকে জার্মানির যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া করা হয়েছে, সেটির ধারণক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। চ্যালেঞ্জার-৬০ নামের ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর সঙ্গে মাত্র চারজন ভ্রমণ করতে পারবেন। আগের পরিকল্পনায় চিকিৎসক ও ব্যক্তিগত সেবাদাতাসহ প্রায় ১৫ জনের যাওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। এটি একটি বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে দেশে ফিরেছেন তাঁর ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। গতকাল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শাশুড়িকে দেখতে যান তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে দেশে ফিরেছেন তাঁর ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। গতকাল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শাশুড়িকে দেখতে যান তিনি। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির মহাসচিব বলেন, চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই চেয়ারপারসনকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকেরা ‘প্রাণপণ চেষ্টা করছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা আশা করছেন রোববার তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিকিৎসকেরাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারপরও এই চিকিৎসা আরও উন্নত হাসপাতালে করা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করছেন।

এদিকে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য চীনে নেওয়ার একটি প্রস্তাব সে দেশ থেকে এসেছিল। তাঁকে বিদেশে নেওয়ার জন্য চীন এয়ার অ্যাম্বুলেস পাঠাতেও আগ্রহী ছিল। কিন্তু খালেদার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের পক্ষেই মত দেন। তাঁর যুক্তি ছিল ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স জ্বালানি নিতে থামা ছাড়াই ঢাকা থেকে সরাসরি লন্ডনে পৌঁছাতে পারে।

ঢাকায় এলেন জুবাইদা রহমান

খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় সঙ্গী হতে যুক্তরাজ্য থেকে গতকাল ঢাকায় এসেছেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। সকালে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছেই শাশুড়িকে দেখতে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তিনি। খালেদা জিয়াকে দেখার পর জুবাইদা ধানমন্ডিতে মায়ের বাসায় যান বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন। তিনি বলেন, ‘ভাবি (জুবাইদা) লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই সরাসরি এভারকেয়ারে আসেন। ম্যাডাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শয্যার পাশে ছিলেন, ডাক্তারদের সঙ্গে সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে মিটিংও করেছেন।’

হাসিনার দুঃশাসনের নিন্দা তারেকের

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃশাসনের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর নানা নিপীড়ন করা হয় বলে অভিযোগ এনেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এই অভিযোগ আনেন। স্বৈরাচার পতন দিবসকে সামনে রেখে এই পোস্ট করেন তারেক রহমান।

ফেসবুক পোস্টে তারেক লেখেন, ‘শেখ হাসিনার দুঃশাসনে “গণতন্ত্রের মা” দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুমসহ নানামাত্রিক নিপীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছিল। অবিরাম নির্যাতনের কশাঘাতে অসুস্থ দেশনেত্রীর জীবন এখন চরম সংকটে।’

স্বৈরাচার পতন দিবসে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি আরও বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছিল গণতন্ত্রের ভয়ংকর শত্রু। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসানের পর গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পুনরুজ্জীবন এবং রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।’

স্বৈরাচার পতন দিবসকে ‘অবিস্মরণীয় একটি দিন’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৯০ সালের এ দিনে রক্তাক্ত পিচ্ছিল পথে অবসান হয়েছিল স্বৈরশাসনের। এরশাদ ১৯৮২-এর ২৪ মার্চ পেশাগত বিশ্বস্ততা ও শপথ ভেঙে অস্ত্রের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র হত্যা করে জারি করেছিল অসাংবিধানিক শাসন। যে সাংবিধানিক রাজনীতি ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা, যার সূচনা করেছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।’

পোস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ ৯ বছর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে আপসহীন নেত্রী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।...এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০-এর ৬ ডিসেম্বর এই দিনে ছাত্র-জনতা মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে পরাজিত করায় মুক্ত হয়েছিল গণতন্ত্র। সেই অর্জিত গণতন্ত্রের চেতনায় আবারও ছাত্র-জনতা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক হিংস্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লুট হওয়া ভারী অস্ত্র বাইরে নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৩
নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে শুক্রবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে শুক্রবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারে ‘সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই’ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি দাবি করেছেন, থানার বাইরে কোনো ভারী অস্ত্র নেই।

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সে সময় লুট করা হয় ৫ হাজার ৭৫৩টি আগ্নেয়াস্ত্র।

এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজিসহ (লাইট মেশিনগান) থানা থেকে লুট হওয়া অন্য ভারী অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের কোনো ব্যর্থতা আছে কি না, এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখানে সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই।

তবে কতসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।

নতুন অধ্যাদেশ পাস হওয়ার পর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে পুলিশ পুনর্গঠনের উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশ্ন তোলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইন করা হয় জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য। সমস্যা থাকলে তারা সুপারিশ করতে পারবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা দেখবে।

এদিন সকালে নিবন্ধনের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু হয় ফায়ার সার্ভিসের। পরে স্বেচ্ছাসেবক ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা হয়।

সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক গঠনের লক্ষ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের প্রশিক্ষণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবক অপরিহার্য উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধি ও বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সরকার ভাবছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত