সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমারও হচ্ছিল। ভুবনেরও কি একই অনুভূতি হচ্ছিল? ওর উত্তেজনা যে আমার চেয়ে কম ছিল না, বরং বেশি, সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছিলাম।
মোটামুটি মাস তিনেক লাগিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেভাবে যেখান দিয়ে পারি আমাদের স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। এই কদিনে যে সিকিম সম্পর্কে অন্তর্জালে কত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সেটার ইয়ত্তা নেই। কথা ছিল সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বাকি রইলাম শুধু আমরা দুজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, যাবই।
ভারতের ভিসাটা খুব সহজে পেয়ে গেলাম আমরা। এর আগেই ভুবন দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিল। ভিসা পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার বাসের টিকিট কাটা হলো। যেহেতু তুষারপাত হয় এমন জায়গায় যাচ্ছি, তাই প্রস্তুতিটা তো ভিন্ন হবেই। যাওয়ার আগে একদিন বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে। ঘুরে ঘুরে শেষে বঙ্গবাজার থেকে দুটি জ্যাকেট কিনলাম, হুডিওয়ালা। হুডির কিনার ঘেঁষে পশমের সারি, আমার খুব পছন্দ। কিনলাম দুই সেট থার্মাল পোশাক। মাইনাসের তাপমাত্রা ঠেকাতে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নিজের জন্য এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। ভুবনের আগে থেকে ছিল বলে আর কেনা হয়নি। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ করার জন্য চলে গেলাম বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশে। সেখান থেকে দুই জোড়া বুট কিনলাম। মোটামুটি সব মিলিয়ে হাজার সাতেক টাকা খরচা হয়ে গিয়েছিল সেদিন। তবু আমরা খুশি ছিলাম। খুঁজে খুঁজে কম দামে ভালো জিনিস বের করতে পেরেছিলাম বলে!
দুটি স্যুটকেসে নতুন জিনিসগুলো ছাড়াও বাড়তি শীতের পোশাক নিয়ে নিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক ভ্রমণে থাকব বলে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তিন জোড়া মোজা। শীতের কাপড়ে মুড়ে থাকব বলে গয়নাগাটি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। সালোয়ার-কামিজও নিলাম শুধু এক সেট। বাকি সব প্যান্ট আর ফতুয়া বা টিউনিক টাইপ পোশাক, যেন ছোটাছুটির কাজটা সহজ হয়। ভুবনও জিনস নিল, চিনোস নিল আর ওর যা লাগে। শুকনো খাবার বলতে শুধু চিপস নিয়েছিলাম। যেগুলো না নিলেই নয়, সেই সব প্রসাধনী পুরে ফেললাম সঙ্গে। আর যদি কোথাও খামাখা অপেক্ষা করতে হয়, তাই ব্যাকপ্যাকটায় ভরে নিলাম প্রিয় কমিকস ‘বেসিক আলী’র দশম খণ্ড। সদ্যই বইমেলা থেকে কিনে এক বন্ধু উপহার দিয়েছিল। ভালো কথা, পাসপোর্ট আর যাবতীয় জরুরি কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে আলাদা করে নিয়ে নিয়েছিলাম। যেখানে-সেখানে এগুলো বের করে দেখাতে হয়। হাতের কাছে রাখাই শ্রেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সিকিম ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই কমপক্ষে দশ কপি ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হয়। এগুলো ছাড়াও আমরা নিরাপত্তার জন্য বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি নিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, সিকিমে জায়গায় জায়গায় অনুমতি লাগে ভ্রমণ করার জন্য। সে কারণেই এতগুলো কাগজপত্র আর ছবি সঙ্গে নিতে হয়।
শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে ৬টায়, আরামবাগ থেকে। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যায় কল্যাণপুরের স্টপেজে। পরে আমরা উঠি মূল বাসে, যেটা আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে। মূল বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় পৌনে ৮টা বেজে গেল। জ্যাম একদম পাইনি। বিশ মিনিটে সাভারের গেন্ডা অতিক্রম করে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে একটা জায়গায় এসে জ্যামে আটকে গেলাম। কোথায় তা রাতের অন্ধকারে আন্দাজ করতে পারিনি। বাসের জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম বিশাল মাঠ। মোটামুটি দূরে দেখা গেল মঞ্চ বানিয়ে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শব্দটাই একমাত্র দেখতে পেলাম দূর থেকে। কিন্তু কীসের, সেটা আর দেখতে পারলাম না। ভাবলাম, হয়তো ভাষা দিবসের। কিন্তু অবাক হলাম মঞ্চের নৃত্যশিল্পীর নৃত্য দেখে। অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢালিউড বা বলিউড স্টাইলে দাপাদাপি করছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এমন ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আমার বোধগম্য হলো না। ভুবন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল। ওকে ডেকে দেখাতেই কী একটা আনন্দ পেয়ে ফিক করে হেসে দিল। সঙ্গে আমিও। এমনিতেও আমার এ ধরনের নৃত্য ভালো লাগে না। দেশীয় ধাঁচের মুদ্রায়, মণিপুরি, ক্ল্যাসিক্যাল—এসব বান্ধবীকে নাচতে দেখে বড় হয়েছি। এগুলোই ভালোবেসেছি। যাই হোক, বাস আবার চলতে শুরু করে।
আসনটা এত পিচ্ছিল ছিল, একটু পর পর পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। বাস ছাড়ার আগে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তাকারী আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনালাপ সেরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যেই না আমার একটু ঘুম ঘুম পেয়ে চোখ লাগছিল, ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠছিল। না ধরা পর্যন্ত ফোন বাজতেই থাকছিল। এই করে সারা রাত পার হয়ে গেল। ভোর সাড়ে ৬টায় আমরা পৌঁছলাম রংপুরের পাটগ্রামে। সীমান্ত এলাকা। বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে শ্যামলীর সেখানকার বাস কাউন্টারে। সকাল ৯টার আগে সীমান্ত খুলবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে। তাই এই ফাঁকে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম আমরা। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারের কাজ সেরে ভারতে ঢুকতে ঢুকতে সকাল ১০টার মতো বেজে গেল। এরপর আবার ঘণ্টাখানেক সময় লাগল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। এর মধ্যে ভুবন তক্কে তক্কে ছিল সিকিমে যাওয়ার আরও মানুষ জোগাড় করতে। এমনিতে ফেসবুকে ভ্রমণ গ্রুপ থেকে দুজন জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পরদিন আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসে থেকে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, যাঁরা সিকিমে যাবেন। এর মধ্যে প্রহর সাহা নামের পাকা পিচ্চিটার বাবা-মা আমাদের তাঁদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা একদম আলাদা ঘুরবেন। কোনো দলের সঙ্গে না। শুধু পরিবার। তাঁরা রিসোর্টে থাকবেন। তাঁদের খরচাটা মনে হচ্ছিল একটু বেশি। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে খরচ নিতেও আপত্তি করছিলেন। কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছিল না তাঁদের সঙ্গে যেতে। তবে প্রহর সাহাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। ছয়-সাত বছরের মিষ্টি, গুলুগুলু একটা বাচ্চা।
মাঝরাতে বাস যখন বিরতিতে থেমেছিল, তখন সে হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠে বলেছিল, ‘আমরা কি গ্যাংটক চলে আসছি?’ ওর কথা শুনে বাসের সবাই খুব মজা পেয়েছিল। আরেকটা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে দল বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের ঠেলা সামলাতে সামলাতে তাঁদের হারিয়ে ফেললাম। বাংলাদেশের সীমানা পার হওয়ার সময় এক আংকেলকে দেখলাম তাঁর নাম আগে না ডাকায় একটা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গীরাও। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আকাশ ভাইদের সঙ্গে দেখা হলো। তখনো জানতাম না এরাই আমাদের বাকিটা ভ্রমণ বিনোদন দেবেন। একপর্যায়ে ভুবনকে ডেকে নিয়ে গেল ভারতের ইমিগ্রেশন সেন্টারে। আমি দেশের মাটিতে একা দাঁড়িয়ে কেমন জানি একটা অনুভূতি পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ল। সব ঝামেলা শেষ করে যখন ঠিক ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে আমার দেশটাকে দেখছিলাম, কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছিল। বোঝাতে পারব না। খুব সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি জেনেও চোখটা ছলছল করে উঠেছিল। দেশকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রতিমুহূর্তে টের পেয়েছিলাম এই ভ্রমণের সময়। হোক আমার দেশ নোংরা, যানজটে ভরা, দুর্নীতিতে সেরা; কিন্তু আমার দেশ আমি ভালোবাসি। এসব আবেগ ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি যেতে হবে। বাসের সহকারীকে দেখলাম সিকিমে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতে। তাঁরা যাচ্ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের প্যাকেজে। আমরা প্যাকেজ নিইনি খরচ কমাব বলে। কিন্তু দল তো খুঁজতেই হবে। দল ছাড়া সিকিমে যাওয়াটা ঝক্কি। ভুবনকে বললাম সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে। ভুবন তাঁকে জিজ্ঞেস করায় আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিলন ভাই।বাংলাদেশি। রংপুরের মানুষ। শ্যামলীর পক্ষ থেকে উনি সিকিম প্যাকেজের ভ্রমণকারীদের শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। যদিও আনন্দের ফাঁদে পড়ে পুরো ভ্রমণটাই আমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরে। মিলন ভাই আশা দিলেন, শিলিগুড়ি পৌঁছে অমর দার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলে উনি একটা ব্যবস্থা করবেন। অমর দা হচ্ছেন শ্যামলী প্যাকেজের গাইড। ওনার বাড়ি আসলে বাংলাদেশে। কিন্তু অভিমান করে শিলিগুড়িতে চলে গেছেন। দুই দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। আচ্ছা, তাঁর গল্প পরে কোথাও করব।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ছাড়তে ছাড়তে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পথে একটু পর পর দেখলাম কালীমন্দির আর মদের দোকান! সিকিমে তো ফুটপাতে নিয়ে বিক্রি করে। হঠাৎ মনে হলো, নাটক-সিনেমায় দেখি ভারতীয় বাঙালিরা দুর্গাপূজা বেশি করে। অথচ এদিকে কালীমন্দির বেশি। সর্বসাকল্যে একটা মাত্র দুর্গা প্রতিমা দেখতে পেয়েছিলাম। শিলিগুড়ির পথে আবার হনুমানের মূর্তি আর মন্দির বেশি দেখলাম। বুঝলাম, একেক জায়গায় একেক ভগবানের প্রভাব বেশি। আরেকটা জিনিস নজর এড়াল না আমার। জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সহজে মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন কিছু। পার্থক্য এটুকু বের করতে পারলাম—তাদের ঘরবাড়িগুলো আমাদের চেয়ে খানিকটা খাটো মনে হলো; ওদের ট্রাকের নাক বোঁচা, আমাদেরগুলো চোখা; ট্রাকের গায়ে হিন্দিতে লেখা ‘জয় মাতা দি’ কিংবা বাংলায় লেখা ‘জয় মা দুর্গা বা কালী’, আমাদের যেমন লেখা থাকে ‘আল্লাহর দান’ টাইপ কথাবার্তা। এগুলো ভাবছিলাম আর সেই সঙ্গে তিস্তার মায়াভরা মুখ দেখছিলাম। যদিও আসল রূপ সিকিমের পথেই দেখা গেছে। কী যে মায়াময় এই নদী! ওহ্, ভারতের সীমানায় ঢুকেও কিন্তু বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম। ওই চেংড়াবান্ধা পর্যন্তই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার খুব মজা লেগেছিল। বাবা অবশ্য আগে বলে দিয়েছিল, ‘নেটওয়ার্ক পাবি, পার হয়ে ফোন দিস।’ দিয়েছিলাম।
ঘণ্টা তিনেক সময় লাগল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে। এই শহরটাকে বলা হয় জলপাইগুড়ি শহরের যমজ! তবে এর ৬২ ভাগ দার্জিলিংয়ে আর ৩৮ ভাগ অংশ পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কলকাতার পরেই যে বড় শহরের নাম উঠে আসে, সেটা শিলিগুড়ি। বলা চলে, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ির অবস্থান। আর ওপরে সিকিম রাজ্য। শিলিগুড়ির মানুষ এভাবে স্থান নির্ধারণ করে—পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ের নিচে। সিকিমের মানুষদের ওরা বলে ‘ওপরের লোক’!
(চলবে)

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৮ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৮ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ আপনার শরীরে এত বেশি এনার্জি থাকবে যে ভুলবশত বাড়ির সব ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র চার্জ করার চেষ্টা করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত উৎসাহে আজ এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না, যাতে প্রতিবেশী আপনাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ অন্তত একটা পুরোনো বাক্স গুছিয়ে ফেলুন। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে!
বৃষ
আপনার জীবনের ‘স্বযত্নলালিত স্বপ্ন’ আজ সত্যি হতে পারে! আর সেই স্বপ্নটি হলো, সারা দিন সোফায় শুয়ে থাকা এবং প্রিয় খাবার ডেলিভারি নেওয়া। আজ এমন এক গভীর আলস্যের জালে জড়িয়ে পড়বেন যে, রিমোট কন্ট্রোলটা হাত থেকে পড়ে গেলে সেটা তোলার জন্য কাউকে ফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হবে কচ্ছপের থেকেও ধীর। সহকর্মীরা ভাববে, আপনি হয়তো ধ্যানের নতুন কোনো উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছেন। অর্থের দিক থেকে আজ এমন কিছু ডিসকাউন্ট খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, যা আসলে অস্তিত্বহীন। আজ যদি কেউ আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে বলে, মনে মনে বলুন: ‘আমি বৃষ, তাড়াহুড়ো আমার ডিকশনারিতে নেই। ওটা অন্য কোনো রাশির জন্য।’
মিথুন
আপনার ভেতরের দুটি মানুষ আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত থাকবে। একজন বলবে, ‘আজ আমি পৃথিবীকে জয় করব!’ অন্যজন বলবে, ‘আরে বাবা, আগে ঠিক করো কোন রঙের মোজাটা পরবে!’ আপনি কোনো একটি বিষয়ে স্থির হতে পারবেন না। কফি না চা? লাল শার্ট না নীল? এই দ্বিধায় পুরো দিন কেটে যাবে। এমন কারও অভাব অনুভব করবেন, যে আপনার সব দ্বিমুখী সিদ্ধান্তকে একমুখী করে দিতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ চূড়ান্ত জনপ্রিয়। এত বেশি মেসেজ আসবে যে ফোন চার্জে দিয়েই আপনি হয়তো চার্জার খুঁজে পাবেন না। আজ একটি মাত্র কাজ করুন: স্থির থাকুন। যদি না পারেন, তাহলে একটি কয়েন টস করুন এবং টস হওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিন।
কর্কট
আজ আপনার মন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাতেই চোখে পানি চলে আসতে পারে। হয়তো দেখবেন, ফ্রিজে শেষ রুটিটা দেখে অতীতের সব দুঃখ মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক স্থান হলো ঘর। তাই আজ ঘর থেকে বের হতে চাইবেন না। যদি বের হতে হয়, তাহলে একটা বালিশ আর কম্বল সঙ্গে নিয়ে নিন—কে জানে কখন কোথায় একটু আবেগ নিয়ে বসা দরকার হয়! পরিবারকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন। বিশেষত, বাড়ির পোষা প্রাণীটি ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে আজ গবেষণা করতে পারেন। আজ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তবে পুরোনো বিল বা ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখলে চোখ মুছতে টিস্যু পেপার হাতের কাছে রাখুন।
সিংহ
আজ যা কিছু করবেন, তাতেই আপনার লাইমলাইট চাই। ধরুন, অফিসে এক গ্লাস পানি খেলেন, আপনার মনে হবে সেটা একটা প্রেস কনফারেন্সের যোগ্য ইভেন্ট। যদি কেউ আপনার দিকে না তাকায়, তাহলে নিজেই জোরে জোরে নিজের প্রশংসা শুরু করে দেবেন। আপনার মনে হবে, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই বুঝি ইতিহাস তৈরি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনার আপনার প্রশংসা না করলে আপনি হয়তো সাময়িক ধর্মঘট শুরু করে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে বিল দেওয়ার সময় এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে মানিব্যাগ বের করবেন, যাতে মনে হয় আপনি পুরো গ্যালাক্সির দেনা মেটাচ্ছেন। সবার মনোযোগ পেতে আজ আপনি যা-ই করুন না কেন, শেষমেশ দেখবেন বাড়ির কুকুরটাই সবচেয়ে বেশি করতালি পাচ্ছে। সেটা মেনে নিন।
কন্যা
আজ আপনার মস্তিষ্ক একটি হাইপার-অ্যাকটিভ স্প্রেডশিটের মতো চলবে। আপনার প্রধান চিন্তা হবে, বালিশের কভারটি আর টেবিলের কোণটা একই সমান্তরালে আছে কি না। কাজের জায়গায় সহকর্মীর কফির মগে কতটুকু চিনি বেশি আছে, সেটা বের করে ফেলবেন। আর সেই খুঁত নিয়েই আপনি আজ একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলবেন। যদি দেখেন কোনো কিছু নিখুঁত নয়, তাহলে মেজাজ সপ্তমে উঠবে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আজকের দিনের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়তো আপনিই করবেন, সঠিকটা করতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলবেন! আজ দয়া করে নিজের চুল গুনতে শুরু করবেন না। আজ অন্তত একবার একটা ভুল করুন। স্বাধীনতা উপভোগ করুন!
তুলা
ন্যায়, ভারসাম্য এবং সৌন্দর্যের পূজারি আপনি আজ একটি কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন। আপনাকে হয়তো ঠিক করতে হবে, দুপুরে ভাত খাবেন নাকি রুটি! এই নিয়েই অন্তত এক ঘণ্টা ভাববেন এবং শেষমেশ দুটোই খেয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মতের সঙ্গে সহমত হবেন, আর এতে সহকর্মীরা আপনাকে ‘ডাবল এজেন্ট’ ভাবতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে পার্টনারের সামান্যতম অভিযোগ শুনেই এত বেশি ভারসাম্য আনতে চাইবেন যে সম্পর্কটা দড়ির ওপর হাঁটা সার্কাসের মতো মনে হবে। কোনো জটিল সিদ্ধান্ত এলে আজ শুধু একটা জিনিস ভাবুন: যেটাতে আপনার সবচেয়ে কম কষ্ট হবে। ব্যস! ব্যালেন্স নিজের থেকেই চলে আসবে।
বৃশ্চিক
আজ মন গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকবে। হয়তো ভাববেন, পাশের ডেস্কের সহকর্মী কেন আজ আপনার দিকে একটু বেশি হেসেছেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গভীর রহস্য আছে! সারা দিন ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবেন, যা আসলে সামান্য দাঁত ব্রাশ করার পরের হাসি। তীব্র মনোযোগ আজ আপনাকে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেবে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা আজ একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। লোকে ভাববে আপনি ধ্যান করছেন, কিন্তু আসলে ভাবছেন, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চায়ে লবণ মিশিয়ে দেবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। নীরবতা আজ স্বর্ণময়। সেটা জমিয়ে রাখুন।
ধনু
আজ মন চঞ্চল, আজ বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। হয়তো অফিস থেকে সোজা হিমালয় বা চাঁদে চলে যাওয়ার টিকিট খুঁজতে থাকবেন। আপনার ফিলোসফিক্যাল রগ আজ এত বেশি চড়ে থাকবে যে, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে মহাজাগতিক সত্য আবিষ্কার করতে পারেন। আপনার অতি-সৎ কথাগুলো আজ কারও না কারও মন খারাপ করবে। হয়তো বলবেন, ‘তোমাকে এই শাড়িতে এত মোটা লাগছে না, যতটা গত সপ্তাহে লাগছিল।’ এই রাশিফল পড়ার সময়ও আপনি ভাবছেন, এটার কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কি না। আজ মুখটা সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষত যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকে, তাহলে কথা বলার আগে তিনবার কফি খান।
মকর
আজ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল এবং গম্ভীর মানুষ। মনে করবেন, পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার কাঁধেই। আপনার প্রধান শখ হবে অন্যদের হাসতে দেখে বিরক্ত হওয়া। ভাববেন, ‘এরা এত হাসছে কেন? কাজের ডেডলাইন তো এখনো বাকি!’ আপনার মনে হবে, আপনি যদি এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনারকে ইমপ্রেস করতে কোনো রোমান্টিক ডিনার বা উপহার না দিয়ে, বরং একটি সুন্দর এক্সেল শিট তৈরি করে দেবেন, যেখানে আপনাদের সম্পর্কের আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য লেখা থাকবে। আজকের দিনটি একটু আরাম করুন। না করলে মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনার দাঁত ব্রাশ করা বাকি এবং এই ভুলটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কুম্ভ
আজ এমন একটি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যা পৃথিবীর বাকি ১১টা রাশি কখনোই বুঝবে না। হয়তো ঠিক করবেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কীভাবে বিশ্বশান্তি আনা যায়, অথবা কেন সব শার্টে তিনটি করে কলার থাকা উচিত। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলো আজ খুবই বৈপ্লবিক হবে, কিন্তু বন্ধুরা হয়তো ভাববে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ আপনার কথা বুঝতে না পারলে আরও খুশি হবেন—কারণ জানেন আপনি কতটা এগিয়ে! প্রেম নিয়ে ভাবনা হবে, কেন এই ‘সামাজিক বন্ধন’-এর প্রয়োজন, যেখানে দুজন মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে একটি ইমোজি বিনিময় করেও দিব্যি থাকতে পারে। পরামর্শ: আপনার আইডিয়াগুলো খুব ভালো। কিন্তু আজ দয়া করে আপনার আইডিয়াগুলো দিয়ে পোষা প্রাণীটির ওপর কোনো পরীক্ষা করবেন না।
মীন
আজ বাস্তবের ধারেকাছেও থাকবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় এমন এক কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াবেন, যেখানে আপনার সব বিল পরিশোধ হয়ে গেছে এবং পোষা মাছটা কথা বলতে পারে। কাজের জায়গায় ভুলবশত সহকর্মীকে ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার/রাজকুমারী’ বলে ডাকতে পারেন। মনে হবে, জীবন একটি হিন্দি সিনেমা, আর আপনি তার হিরো/হিরোইন। যদি কিছু ভুলে যান, যেমন চাবি বা মানিব্যাগ, তার জন্য গ্রহদের দোষ দেবেন। সন্ধ্যায়, হয়তো এত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবেন যে টিভির সিরিয়ালের ভিলেনের দুঃখেও চোখে পানি চলে আসবে। আজ চোখ খুলে হাঁটুন। আর যদি চারপাশের মানুষ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে শুধু ‘হুম’ বলে দিন। নিরাপদ থাকবেন।

মেষ
আজ আপনার শরীরে এত বেশি এনার্জি থাকবে যে ভুলবশত বাড়ির সব ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র চার্জ করার চেষ্টা করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত উৎসাহে আজ এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না, যাতে প্রতিবেশী আপনাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ অন্তত একটা পুরোনো বাক্স গুছিয়ে ফেলুন। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে!
বৃষ
আপনার জীবনের ‘স্বযত্নলালিত স্বপ্ন’ আজ সত্যি হতে পারে! আর সেই স্বপ্নটি হলো, সারা দিন সোফায় শুয়ে থাকা এবং প্রিয় খাবার ডেলিভারি নেওয়া। আজ এমন এক গভীর আলস্যের জালে জড়িয়ে পড়বেন যে, রিমোট কন্ট্রোলটা হাত থেকে পড়ে গেলে সেটা তোলার জন্য কাউকে ফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হবে কচ্ছপের থেকেও ধীর। সহকর্মীরা ভাববে, আপনি হয়তো ধ্যানের নতুন কোনো উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছেন। অর্থের দিক থেকে আজ এমন কিছু ডিসকাউন্ট খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, যা আসলে অস্তিত্বহীন। আজ যদি কেউ আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে বলে, মনে মনে বলুন: ‘আমি বৃষ, তাড়াহুড়ো আমার ডিকশনারিতে নেই। ওটা অন্য কোনো রাশির জন্য।’
মিথুন
আপনার ভেতরের দুটি মানুষ আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত থাকবে। একজন বলবে, ‘আজ আমি পৃথিবীকে জয় করব!’ অন্যজন বলবে, ‘আরে বাবা, আগে ঠিক করো কোন রঙের মোজাটা পরবে!’ আপনি কোনো একটি বিষয়ে স্থির হতে পারবেন না। কফি না চা? লাল শার্ট না নীল? এই দ্বিধায় পুরো দিন কেটে যাবে। এমন কারও অভাব অনুভব করবেন, যে আপনার সব দ্বিমুখী সিদ্ধান্তকে একমুখী করে দিতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ চূড়ান্ত জনপ্রিয়। এত বেশি মেসেজ আসবে যে ফোন চার্জে দিয়েই আপনি হয়তো চার্জার খুঁজে পাবেন না। আজ একটি মাত্র কাজ করুন: স্থির থাকুন। যদি না পারেন, তাহলে একটি কয়েন টস করুন এবং টস হওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিন।
কর্কট
আজ আপনার মন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাতেই চোখে পানি চলে আসতে পারে। হয়তো দেখবেন, ফ্রিজে শেষ রুটিটা দেখে অতীতের সব দুঃখ মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক স্থান হলো ঘর। তাই আজ ঘর থেকে বের হতে চাইবেন না। যদি বের হতে হয়, তাহলে একটা বালিশ আর কম্বল সঙ্গে নিয়ে নিন—কে জানে কখন কোথায় একটু আবেগ নিয়ে বসা দরকার হয়! পরিবারকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন। বিশেষত, বাড়ির পোষা প্রাণীটি ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে আজ গবেষণা করতে পারেন। আজ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তবে পুরোনো বিল বা ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখলে চোখ মুছতে টিস্যু পেপার হাতের কাছে রাখুন।
সিংহ
আজ যা কিছু করবেন, তাতেই আপনার লাইমলাইট চাই। ধরুন, অফিসে এক গ্লাস পানি খেলেন, আপনার মনে হবে সেটা একটা প্রেস কনফারেন্সের যোগ্য ইভেন্ট। যদি কেউ আপনার দিকে না তাকায়, তাহলে নিজেই জোরে জোরে নিজের প্রশংসা শুরু করে দেবেন। আপনার মনে হবে, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই বুঝি ইতিহাস তৈরি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনার আপনার প্রশংসা না করলে আপনি হয়তো সাময়িক ধর্মঘট শুরু করে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে বিল দেওয়ার সময় এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে মানিব্যাগ বের করবেন, যাতে মনে হয় আপনি পুরো গ্যালাক্সির দেনা মেটাচ্ছেন। সবার মনোযোগ পেতে আজ আপনি যা-ই করুন না কেন, শেষমেশ দেখবেন বাড়ির কুকুরটাই সবচেয়ে বেশি করতালি পাচ্ছে। সেটা মেনে নিন।
কন্যা
আজ আপনার মস্তিষ্ক একটি হাইপার-অ্যাকটিভ স্প্রেডশিটের মতো চলবে। আপনার প্রধান চিন্তা হবে, বালিশের কভারটি আর টেবিলের কোণটা একই সমান্তরালে আছে কি না। কাজের জায়গায় সহকর্মীর কফির মগে কতটুকু চিনি বেশি আছে, সেটা বের করে ফেলবেন। আর সেই খুঁত নিয়েই আপনি আজ একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলবেন। যদি দেখেন কোনো কিছু নিখুঁত নয়, তাহলে মেজাজ সপ্তমে উঠবে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আজকের দিনের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়তো আপনিই করবেন, সঠিকটা করতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলবেন! আজ দয়া করে নিজের চুল গুনতে শুরু করবেন না। আজ অন্তত একবার একটা ভুল করুন। স্বাধীনতা উপভোগ করুন!
তুলা
ন্যায়, ভারসাম্য এবং সৌন্দর্যের পূজারি আপনি আজ একটি কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন। আপনাকে হয়তো ঠিক করতে হবে, দুপুরে ভাত খাবেন নাকি রুটি! এই নিয়েই অন্তত এক ঘণ্টা ভাববেন এবং শেষমেশ দুটোই খেয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মতের সঙ্গে সহমত হবেন, আর এতে সহকর্মীরা আপনাকে ‘ডাবল এজেন্ট’ ভাবতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে পার্টনারের সামান্যতম অভিযোগ শুনেই এত বেশি ভারসাম্য আনতে চাইবেন যে সম্পর্কটা দড়ির ওপর হাঁটা সার্কাসের মতো মনে হবে। কোনো জটিল সিদ্ধান্ত এলে আজ শুধু একটা জিনিস ভাবুন: যেটাতে আপনার সবচেয়ে কম কষ্ট হবে। ব্যস! ব্যালেন্স নিজের থেকেই চলে আসবে।
বৃশ্চিক
আজ মন গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকবে। হয়তো ভাববেন, পাশের ডেস্কের সহকর্মী কেন আজ আপনার দিকে একটু বেশি হেসেছেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গভীর রহস্য আছে! সারা দিন ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবেন, যা আসলে সামান্য দাঁত ব্রাশ করার পরের হাসি। তীব্র মনোযোগ আজ আপনাকে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেবে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা আজ একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। লোকে ভাববে আপনি ধ্যান করছেন, কিন্তু আসলে ভাবছেন, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চায়ে লবণ মিশিয়ে দেবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। নীরবতা আজ স্বর্ণময়। সেটা জমিয়ে রাখুন।
ধনু
আজ মন চঞ্চল, আজ বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। হয়তো অফিস থেকে সোজা হিমালয় বা চাঁদে চলে যাওয়ার টিকিট খুঁজতে থাকবেন। আপনার ফিলোসফিক্যাল রগ আজ এত বেশি চড়ে থাকবে যে, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে মহাজাগতিক সত্য আবিষ্কার করতে পারেন। আপনার অতি-সৎ কথাগুলো আজ কারও না কারও মন খারাপ করবে। হয়তো বলবেন, ‘তোমাকে এই শাড়িতে এত মোটা লাগছে না, যতটা গত সপ্তাহে লাগছিল।’ এই রাশিফল পড়ার সময়ও আপনি ভাবছেন, এটার কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কি না। আজ মুখটা সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষত যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকে, তাহলে কথা বলার আগে তিনবার কফি খান।
মকর
আজ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল এবং গম্ভীর মানুষ। মনে করবেন, পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার কাঁধেই। আপনার প্রধান শখ হবে অন্যদের হাসতে দেখে বিরক্ত হওয়া। ভাববেন, ‘এরা এত হাসছে কেন? কাজের ডেডলাইন তো এখনো বাকি!’ আপনার মনে হবে, আপনি যদি এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনারকে ইমপ্রেস করতে কোনো রোমান্টিক ডিনার বা উপহার না দিয়ে, বরং একটি সুন্দর এক্সেল শিট তৈরি করে দেবেন, যেখানে আপনাদের সম্পর্কের আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য লেখা থাকবে। আজকের দিনটি একটু আরাম করুন। না করলে মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনার দাঁত ব্রাশ করা বাকি এবং এই ভুলটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কুম্ভ
আজ এমন একটি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যা পৃথিবীর বাকি ১১টা রাশি কখনোই বুঝবে না। হয়তো ঠিক করবেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কীভাবে বিশ্বশান্তি আনা যায়, অথবা কেন সব শার্টে তিনটি করে কলার থাকা উচিত। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলো আজ খুবই বৈপ্লবিক হবে, কিন্তু বন্ধুরা হয়তো ভাববে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ আপনার কথা বুঝতে না পারলে আরও খুশি হবেন—কারণ জানেন আপনি কতটা এগিয়ে! প্রেম নিয়ে ভাবনা হবে, কেন এই ‘সামাজিক বন্ধন’-এর প্রয়োজন, যেখানে দুজন মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে একটি ইমোজি বিনিময় করেও দিব্যি থাকতে পারে। পরামর্শ: আপনার আইডিয়াগুলো খুব ভালো। কিন্তু আজ দয়া করে আপনার আইডিয়াগুলো দিয়ে পোষা প্রাণীটির ওপর কোনো পরীক্ষা করবেন না।
মীন
আজ বাস্তবের ধারেকাছেও থাকবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় এমন এক কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াবেন, যেখানে আপনার সব বিল পরিশোধ হয়ে গেছে এবং পোষা মাছটা কথা বলতে পারে। কাজের জায়গায় ভুলবশত সহকর্মীকে ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার/রাজকুমারী’ বলে ডাকতে পারেন। মনে হবে, জীবন একটি হিন্দি সিনেমা, আর আপনি তার হিরো/হিরোইন। যদি কিছু ভুলে যান, যেমন চাবি বা মানিব্যাগ, তার জন্য গ্রহদের দোষ দেবেন। সন্ধ্যায়, হয়তো এত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবেন যে টিভির সিরিয়ালের ভিলেনের দুঃখেও চোখে পানি চলে আসবে। আজ চোখ খুলে হাঁটুন। আর যদি চারপাশের মানুষ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে শুধু ‘হুম’ বলে দিন। নিরাপদ থাকবেন।

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে
শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

ডিসেম্বরের ছুটির দিন খানিকটা আলাদা তো বটেই। এমন শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, আদা ও রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২ পিস, কাজুবাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ফালি ৮ থেকে ১০টি, বেরেস্তা আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল আধা কাপ।
প্রণালি
গরুর মাংস টক দই এবং সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে মাখিয়ে ঢেকে রাখুন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে তাতে মাখানো মাংস দিয়ে দিন। তারপর ভালোভাবে নেড়ে অল্প আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রান্না করে ঢাকনা দিয়ে দিন। এবার ঢাকনা খুলে মাংস ভালোভাবে কষান। যদি মাংস সেদ্ধ না হয়, তবে সামান্য পানি দিন। মাংসের ওপর তেল ভেসে উঠলে কাঁচা মরিচ ফালি ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে দমে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ব্যস, রান্না হয়ে গেল কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা।

ডিসেম্বরের ছুটির দিন খানিকটা আলাদা তো বটেই। এমন শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, আদা ও রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২ পিস, কাজুবাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ফালি ৮ থেকে ১০টি, বেরেস্তা আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল আধা কাপ।
প্রণালি
গরুর মাংস টক দই এবং সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে মাখিয়ে ঢেকে রাখুন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে তাতে মাখানো মাংস দিয়ে দিন। তারপর ভালোভাবে নেড়ে অল্প আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রান্না করে ঢাকনা দিয়ে দিন। এবার ঢাকনা খুলে মাংস ভালোভাবে কষান। যদি মাংস সেদ্ধ না হয়, তবে সামান্য পানি দিন। মাংসের ওপর তেল ভেসে উঠলে কাঁচা মরিচ ফালি ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে দমে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ব্যস, রান্না হয়ে গেল কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা।

দুজনেরই প্রথম বিদেশভ্রমণ; যার ফলে আমাদের মধ্যে কাজ করছিল একটা আনন্দবোধ ও উত্তেজনা, তা কি অল্প কথায় বোঝানো যাবে? আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল ভ্রমণপিয়াসীদের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায়। এটাকে অনেকে বলে ‘ড্রিম প্লেস টু ভিজিট’। পেটের ভেতর থেকে প্রজাপতি সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অনেকের হয়? সত্যি কথা, তা আমার
১১ অক্টোবর ২০২২
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
১ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৬ ঘণ্টা আগে