Ajker Patrika

রোমাঞ্চপ্রেমীদের ডাকছে ধুপপানি ঝরনা

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি 
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ১৮
ছবি: লেখক
ছবি: লেখক

মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একের পর এক বিমান। স্বচ্ছ আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেদ করে সেগুলো যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। এটি আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের রুট।

আকাশের নিচে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশি ভেদ করে চলছে নৌযান। তাতে যাত্রী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ। চলার পথে ছোট-বড় পাহাড়। যত দূর চোখ যায় সবুজের সমারোহ।

সবুজের মধ্যেই এই মানুষদের বাড়িঘর। এগুলোর কোনোটি মাচাং ঘর, আবার কোনোটি আধা পাকা। ঘরের চারদিকে হরেক রকম ফলদ গাছের বাগান। চারণভূমিতে চড়ছে গরু-ছাগল। রাইংখ্যং নদীর তীরে কিষান-কিষানিরা ব্যস্ত শস্যবীজ বুনতে।

এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাওয়া যায় রাঙামাটির বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনায়। এটি রাঙামাটির অন্যতম বড় ঝরনা। প্রায় ১০০ মিটার ওপর থেকে আছড়ে পড়ে ঝরনার স্বচ্ছ নীল জলরাশি। এর ওপর সূর্যের কিরণ পড়ায় দেখা মেলে রংধনুর। পাহাড়ের নিচে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক সুইমিংপুল। কোমরপানিতে একসঙ্গে গোসল করা যায় ১৫ থেকে ২৫ জন। বিলাইছড়ির বিখ্যাত ধুপপানি ঝরনা এবং এর প্রকৃতি দেখার উপযুক্ত সময় এখনই।

এখানে আসা পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগোষ্ঠী মিলে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা। তেমনি একটি সেবা পর্যটক গাইড সমিতি। এ সমিতিতে আছেন ৪৫ জন।

সমিতির গাইড ছাড়া কোনো পর্যটক ধুপপানি ঝরনায় যান না। প্রত্যেক গাইডের সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ টাকা।

ধুপপানি ঝরনা দেখার পর আরও ঝরনা দেখতে চাইলে যেতে হবে নকাটা ঝরনায়। বিলাইছড়ি উপজেলা শহরের পূর্ব দিকে ঝরনাটি দেখতে নিতে হবে পর্যটক গাইডের সহায়তা।

ছবি: লেখক
ছবি: লেখক

ধুপপানি ঝরনায় যাওয়ার রুট

কাপ্তাই ও রাঙামাটি শহর থেকে বোটে যেতে হবে বিলাইছড়ি। সেখান থেকে বোটে রাইংখ্যং নদী হয়ে উলুছড়া। সেখানে নেমে খেয়া পার হয়ে হাঁটতে হবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।

বিলাইছড়ি থেকে ধুপপানি যাওয়ার পথে সেনাবাহিনীর একাধিক চেকপোস্টে নিজের পরিচয় দিতে হবে। সেই চেকপোস্টগুলোতে পরিচয় দেওয়া বাধ্যতামূলক। এনআইডিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করে ছবি তুলে রাখবে সেনাবাহিনী। এসব যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগে যাবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।

থাকা-খাওয়া

পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য বিলাইছড়ি শহরে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রিসোর্ট। এসব রিসোর্টে প্রতি রাত থাকতে সর্বনিম্ন ব্যয় হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন নির্মাণ করেছে নীলাদ্রি রিসোর্ট। এ রিসোর্টে রাত্রিকালীন প্রোগ্রাম ক্যাম্প ফায়ার ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে।

এ ছাড়া নিরিবিলি বোর্ডিং এবং জেলা পরিষদ রেস্টহাউস আছে পর্যটকদের থাকার জন্য।

যোগাযোগ: জেলা পরিষদ রেস্টহাউস: ০১৫৫২৮৬০৭৬২

নিরিবিলি বোর্ডিং: ০১৫৫৩১২৮৬৭৩

কীভাবে যাবেন

রাঙামাটির বাইরের পর্যটকদের ধুপপানি ঝরনা দেখতে যেতে হলে অবশ্যই দুই দিন সময় হাতে রাখতে হবে। এক রাত থাকতে হবে বিলাইছড়িতে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে যেতে হবে রাঙামাটি শহর অথবা কাপ্তাই উপজেলায়। রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা ও বেলা ২টায় বোট ছাড়ে বিলাইছড়ির উদ্দেশে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে ছাড়ে সকাল ৮টা, ১০টা, দুপুর ১২টা, বেলা ২টা ও বিকেল সাড়ে ৪টায়। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। বিলাইছড়ি পৌঁছাতে রাঙামাটি থেকে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। আর কাপ্তাই থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।

বোট রিজার্ভ করে গেলে সময় কিছুটা কম লাগবে। স্পিডবোটে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। এ ছাড়া পর্যটকবাহী বিশেষ বোটে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। স্পিডবোট রিজার্ভ সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা এবং বিশেষ পর্যটকের বোটে ৩ হাজার টাকা।

বিলাইছড়ি সদর থেকে দেড় ঘণ্টার নৌপথ পাড়ি দিয়ে দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর দেখা মিলবে ধুপপানি ঝরনার। পথ যত দীর্ঘ হোক, এখানে প্রকৃতি উপভোগ্য।

বিলাইছড়ি থেকে সকাল সকাল ঝরনার উদ্দেশে রওনা হওয়া ভালো। ঝরনা দেখা শেষে ফেরার পথে পাহাড়িদের রান্না করা খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে অর্ডারের আগে অবশ্যই দাম জেনে নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোন দেশ ব্যয়বহুল, সাশ্রয়ীর তালিকায় রয়েছে কারা

ফিচার ডেস্ক
ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোন দেশ ব্যয়বহুল, সাশ্রয়ীর তালিকায় রয়েছে কারা

বিলাসবহুল জীবনযাপন, আকাশচুম্বী দালান আর পরিচ্ছন্ন নগরী। এই জৌলুশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে খরচের এক বিশাল পাহাড়। সাধারণত ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বড় শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হয়; বিশেষ করে বাড়ি ভাড়া এবং আবাসন ব্যয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু কিছু শহরে পা রাখলেই মনে হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুরো ফাঁকা হয়ে যাবে!

এক কাপ কফি থেকে শুরু করে ঘুরে বেড়ানোর ব্যয় শহর ভেদে ভিন্ন। তবে এই ব্যয় বিশ্লেষণ করলে জানা যায় শহরটি থাকার জন্য ব্যয়বহুল নাকি সাশ্রয়ী। ট্রাভেল ম্যাগাজিন ‘টাইম আউট’ ১০০টির বেশি শহরের ১৮ হাজারের বেশি স্থানীয় অধিবাসীর কাছে জানতে চেয়েছিল তাঁদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের ব্যয়ের মাত্রা। সেসবের মধ্যে ছিল রেস্তোরাঁয় খাওয়া, সিনেমা দেখা, কফি পান, শিল্প প্রদর্শনী বা গ্যালারি দর্শন, থিয়েটার বা কমেডি শো, লাইভ মিউজিক, বারে গিয়ে পান করা এবং রাতে বাইরে সময় কাটানোর তথ্য। কত শতাংশ মানুষ এসব কাজকে সস্তা বা সাশ্রয়ী বলেছেন তার ওপর ভিত্তি করে ম্যাগাজিনটি তালিকা তৈরি করেছে।

সে তালিকা অনুসারে ব্যয়বহুল শহরের শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল। শহরটির মাত্র ৩০ শতাংশ বাসিন্দা মনে করেন সেখানে রেস্তোরাঁয় খাওয়া সাশ্রয়ী। মাত্র ২১ শতাংশ মনে করেন বাইরে রাত কাটানো সাশ্রয়ী এবং ২৭ শতাংশ মনে করেন পানীয়র দাম কম। তালিকায় থাকা প্রথম ১৫টি দেশের মধ্যে এশিয়ার অন্য দেশগুলো হলো জাপানের কিয়োটো ও সিঙ্গাপুর। তালিকায় থাকা সিঙ্গাপুর কেবল পর্যটক নয়, প্রবাসীদের জন্যও এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর বলে বিবেচিত হয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করেছে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসি। বিশ্বের ৪৫টি শহরের আবাসন, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে গবেষণাটির ফলাফল। দেখা গেছে, প্রবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় সিঙ্গাপুরের অবস্থান চতুর্থ।

যাঁরা খরচ কমাতে চান তাঁদের জন্য অবশ্য ভয়ের কিছু নেই। তাঁদের জন্যও ‘টাইম আউট’ প্রকাশ করেছে সাশ্রয়ী দেশের তালিকা। ব্যয়বহুল শহরের তালিকা শুরু হয়েছে এশিয়ার দেশ দিয়ে। চীনের দুটি বড় শহর বেইজিং ও সাংহাই বিস্ময়করভাবে সাশ্রয়ী শহরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা থিয়েটারে যাওয়াকে বেশ সাশ্রয়ী মনে করেন। এশিয়ার দিকে সাশ্রয়ী শহরের তালিকায় আরও আছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি।

তাই ব্যয়ের কথা ভেবে ভ্রমণতালিকা থেকে সিঙ্গাপুর, সিউল বাদ পড়লে সেখানে যোগ করুন তালিকায় থাকা ভিয়েতনাম, চীন কিংবা ইন্দোনেশিয়ার শহরগুলোর নাম।

সূত্র: টাইম আউট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পোল্যান্ডে বড়দিনে কেন ১২টি খাবার খাওয়া হয়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
পোল্যান্ডে উইগিলিয়া নামের ক্রিসমাস ইভের ভোজ ১২টি খাবার পরিবেশন করা হয় ঐতিহ্য মেনে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
পোল্যান্ডে উইগিলিয়া নামের ক্রিসমাস ইভের ভোজ ১২টি খাবার পরিবেশন করা হয় ঐতিহ্য মেনে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

আমাদের দেশে একটি ধারণা আছে, বড়দিনে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা কেক খেয়ে থাকে এবং সেদিন সেটাই তাদের প্রধান খাবার। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। বিভিন্ন উপকরণে তৈরি কেক খাওয়া হয় অবশ্যই। তবে তা প্রধান বা একমাত্র নয়।

খাবারের সঙ্গে ধর্ম ও সংস্কৃতির যোগ অত্যন্ত নিবিড়। প্রতিটি সংস্কৃতিতে আলাদা খাবারের ধরন ও উপলক্ষ রয়েছে। রয়েছে ধর্মবিশেষে বিভিন্ন সংস্কার ও প্রথা। বিভিন্ন দেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বড়দিনের নিয়মনীতি ও সংস্কার মেনে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। পোল্যান্ডে উইগিলিয়া নামের ক্রিসমাস ইভের ভোজ তেমনই একটি প্রথা। ২৪ ডিসেম্বর এই ভোজ হয়। সেই ভোজে ১২টি খাবার পরিবেশন করা হয়। এই ১২টি খাবারের রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় প্রতীক।

১২টি খাবারের তালিকা

লাল বিটের স্যুপ বার্শট। ছবি: ewagotuje.pl
লাল বিটের স্যুপ বার্শট। ছবি: ewagotuje.pl

১. বার্শট: এটি লাল বিটের স্যুপ। এতে প্রায়ই উশকা নামের ছোট মাশরুমের স্টাফ ডাম্পলিংসহ পরিবেশন করা হয়।

২. কার্প মাছ: ভাজা, জেলি আচ্ছাদিত বা অ্যাগার জেলাটিনে রাখা কার্প মাছ। ক্রিসমাসের সবচেয়ে প্রতীকী মাছ এটি।

৩. হারিং মাছ: স্থানীয়ভাবে একে স্লাজিয়া বলা হয়। তেলে, ক্রিম বা মাশরুম সসে নানাভাবে রান্না করা হারিং মাছ।

৪. পিয়েরোগি: কাপুস্তা (বাঁধাকপি ও মাশরুম) বা সির (পনির) ভর্তি ডাম্পলিং।

৫. কুতিয়া: গম, পপি বীজ, মধু, বাদাম ও শুকনো ফল দিয়ে তৈরি মিষ্টি পুডিং। এটি প্রাচীন স্লাভিক খাবার।

প্রাচীন স্লাভিক খাবার কুতিয়া। ছবি: polonist.com
প্রাচীন স্লাভিক খাবার কুতিয়া। ছবি: polonist.com

৬. মাশরুম স্যুপ: স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় জুপাকজি বভা। শুকনো বন-মাশরুমের স্যুপ। এটি প্রায়ই নুডলসসহ খাওয়া হয়।

৭. নুডলসসহ পপি বীজ: স্থানীয়ভাবে একে মাকোভিয়েৎস বলা হয়। পপি বীজ দিয়ে তৈরি রোল বা নুডলস। এটি সমৃদ্ধির প্রতীক।

৮. বাঁধাকপি রোল: স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় গোলমবকি। টমেটো সসে সেদ্ধ করা মাংস ও ভাত ভর্তি বাঁধাকপির রোল।

৯. শাকসবজি সালাদ: স্থানীয় নাম সালাটকা ইয়াজিনোভা। আলু, গাজর, মটরশুঁটি, আপেল ও মেয়োনিজ দিয়ে তৈরি সালাদ।

১০. শুকনো ফলে তৈরি পানীয় কম্পোট: স্থানীয় নাম কমপোতস সুসু। শুকনো আপেল, নাশপাতি, প্লাম ও চেরির তৈরি ঠান্ডা পানীয়।

১১. প্লাম সসে নুডলস: স্থানীয় নাম ক্লুসটিস জামাকিয়াম। পপি সিড, প্লাম সসসহ নুডলস।

১২. পপি সিড রোল কেক: স্থানীয় নাম স্ত্রোসলাস জামাকিয়াম। এটি মাকোভিয়েক নামেও পরিচিত। পপি বীজ ভর্তি মিষ্টি রোল কেক।

এই ১২টি খাবারের আছে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণ

১২ জন প্রেরিত পুরুষের প্রতীক: এই ১২টি খাবার যিশুখ্রিষ্টের ১২ জন প্রেরিত শিষ্যর প্রতীক। যিশুর এই ১২ জন শিষ্য হলেন শিমোন পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব, যোহন, ফিলিপ, বর্থলময়, মথি, থোমা, যাকোব, থদ্দেয়, শিমোন এবং যিহূদা ইস্করিয়োত। বড়দিনে এই ১২ জন প্রধানতম শিষ্যকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। কারণ, এই ১২ শিষ্যই যিশুর শেষ নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন।

শুকনো ফলে তৈরি পানীয় কম্পোট। এর স্থানীয় নাম কমপোতস সুসু। ছবি: উইকিপিডিয়া
শুকনো ফলে তৈরি পানীয় কম্পোট। এর স্থানীয় নাম কমপোতস সুসু। ছবি: উইকিপিডিয়া

নিরামিষ ভোজের ঐতিহ্য: ঐতিহ্যগতভাবে, ক্রিসমাস ইভে কোনো লাল মাংস অর্থাৎ গরু বা শূকরের মাংস খাওয়া হতো না। কারণ, এটি উপবাসের দিন হিসেবে গণ্য হতো। যদিও এখন অনেকে এই নিয়মকে শিথিলভাবে গ্রহণ করেছেন। সেই প্রথা মেনে মাছ, বিশেষত কার্প ও হেরিং মাছ খাওয়া হয়।

প্রাচীন স্লাভিক ও কৃষি প্রতীক

পপি বীজ: এটি প্রাচীন স্লাভিক সংস্কৃতিতে ঘুম, মৃত্যু ও পুনরুজ্জীবন, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক।

মধু: মিষ্টি জীবন ও প্রাচুর্যের প্রতীক।

গম বা শস্য: অমরত্ব ও প্রফুল্লতার প্রতীক।

মাশরুম: বন থেকে পাওয়া উপহার এবং পুরোনো বিশ্বাস অনুসারে জাদুকরি শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।

ভাগ্য ও সুস্বাস্থ্যের রীতিনীতি

  • বাড়িতে (বর্তমানে মানিব্যাগে) কার্প মাছের আঁশ রাখা সারা বছর অর্থনৈতিক সৌভাগ্যের প্রতীক।
  • কুতিয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঐক্য ও প্রেমের প্রতীক।

ঐতিহ্য ও পূর্বপুরুষের সঙ্গে সংযোগ

খাবারের একটি অংশ বা প্লেট বা কিছু খড় টেবিলের নিচে রাখা হয় মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণ এবং তাঁদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

প্রথম তারার উদয় পর্যন্ত উপবাস রাখা হয় যিশুর জন্মের প্রতীকী প্রতীক্ষা বোঝাতে।

আধুনিক প্রেক্ষাপট

পোল্যান্ডে বড়দিনে ১২টি খাবারই খাওয়া হয় এখনো। তবে অনেক পরিবার ১২টি খাবারের ঐতিহ্য বজায় রেখে স্থান ও পারিবারিক রীতিভেদে মেনু ভিন্ন করে নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে কিছু অঞ্চলে খাবারে শনি বা পাইক মাছ অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানা যায়। তবে বার্শট, কার্প, পিয়েরোগি, কুতিয়া ও মাকোভিয়েৎস প্রায় সর্বজনীন খাবার।

পোল্যান্ডে বড়দিনের এই ভোজ শুধু উদ্‌যাপনের জন্য খাওয়া হয় না; বরং এই খাবারগুলো পরিবার, বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং নতুন বছরের জন্য আশার একটি গভীর সম্মিলন।

সূত্র: ‘দ্য পোলিশ ক্রিসমাস ইভ ফেস্ট’, কালচার ডট পিএল এবং ‘ক্রিসমাস ইন পোল্যান্ড’, পোলিশ টুরিজম অরগানাইজেশন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেরা দশের শীর্ষে ব্যাংকক, তলানিতে কে?

ফিচার ডেস্ক
সেরা দশের শীর্ষে ব্যাংকক, তলানিতে কে?

এ বছর বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পর্যটন শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে ইউরো মনিটর ইন্টারন্যাশনাল। তালিকায় শীর্ষ স্থানে আছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। সাম্প্রতিক টপ ১০০ সিটি ডেস্টিনেশন ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ব্যাংকক বিশ্বের বেশি ভ্রমণ করা শহরের শিরোপা জিতেছে। এ বছর রেকর্ড ৩ কোটি ৩ লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটক কেবল ব্যাংককেই পা রেখেছিলেন। কিন্তু ব্যাংককের এই একক সাফল্য সত্ত্বেও পুরো থাইল্যান্ডের পর্যটন খাতের সামগ্রিক গতি কিছুটা ধীর।

২৩ দশমিক ২ মিলিয়ন পর্যটক নিয়ে তালিকায় হংকংয়ের অবস্থান দ্বিতীয়। এর পরেই আছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, চীনের ম্যাকাও, তুরস্কের ইস্তাম্বুল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, সৌদি আরবের মক্কা, তুরস্কের আনাতোলিয়া, ফ্রান্সের প্যারিস ও মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। একদিকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক বিশ্বজয়ের মুকুট পরেছে, অন্যদিকে সামগ্রিক পর্যটন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে কিছুটা ভাটার টান। ব্যাংক অব থাইল্যান্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর মোট বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে। উল্লেখ্য, গত বছর থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছিলেন ৩ কোটি ৫০ লাখের বেশি পর্যটক।

পর্যটন শক্তি হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডকে এ বছর একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। চীনা অভিনেতা জিং জিং-এর আলোচিত অপহরণের ঘটনা, প্রাণঘাতী ভূমিকম্প, কম্বোডিয়া সঙ্গে দফায় দফায় সীমান্ত সংঘর্ষ তাদের পর্যটনের গতি কিছুটা ধীর করেছিল। ব্যাংকক পোস্টের তথ্যমতে, পর্যটন খাতকে চাঙা করতে থাইল্যান্ড সরকার এখন বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে।

সূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নোচে বুয়েনা: মেক্সিকোর এই বিশেষ বিয়ার শুধু বড়দিনেই মেলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাইনেকেন মেক্সিকো
হাইনেকেন মেক্সিকো

মেক্সিকো বিশ্বের বৃহত্তম বিয়ার রপ্তানিকারক দেশ হলেও, তাদের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পানীয় দেশের বাইরে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ‘নোচে বুয়েনা’ (Noche Buena) নামের এই বিশেষ বিয়ারটি কেবল মেক্সিকোর ভেতরেই পাওয়া যায় এবং তাও বছরে মাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্য। বড়দিনের আমেজ নিয়ে আসা এই পানীয়টি মেক্সিকানদের কাছে উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

স্প্যানিশ ভাষায় ‘নোচে বুয়েনা’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র রাত’ বা ‘বড়দিনের আগের রাত’। মেক্সিকোতে যখনই সুপারমার্কেটের তাকে গাঢ় লাল রঙের নোচে বুয়েনার বাক্সগুলো দেখা যায়, তখনই সাধারণ মানুষ বুঝে নেয় যে ছুটির মৌসুম বা বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।

মেক্সিকোর সাধারণ হালকা বিয়ারগুলোর তুলনায় নোচে বুয়েনা বেশ আলাদা। এটি মূলত জার্মান ‘বক-স্টাইল’ (Bock-style) বিয়ার। এতে রয়েছে পোড়া কফি, ক্যারামেল এবং চকোলেটের স্বাদ। ৫ দশমিক ৯ শতাংশ অ্যালকোহল সমৃদ্ধ এই বিয়ারটির অম্ল-মিষ্টি স্বাদ মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী ক্রিসমাস ডিশ যেমন—টার্কি, রোমেরিতোস (মোল সসে ভেজানো ভেষজ) বা নোনতা কড মাছের (Bacalao) সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়।

১৯২৪ সালে জার্মান মাস্টার ব্রুয়ার অটো নিউমায়ার প্রথম ভেরাক্রুজে নিজের বন্ধুদের জন্য বড়দিনের উপহার হিসেবে এটি তৈরি করেন। ১৯৩৮ সালে এটি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনা হয় এবং তখন থেকেই এটি মৌসুমি পানীয় হিসেবে জনপ্রিয়।

মেক্সিকোর বিয়ার শিল্পের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ২০শ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত বিয়ার নির্মাতারা মেক্সিকোতে এসে ছোট ছোট ব্রুয়ারি গড়ে তোলেন। ১৮৭৫ সালে সুইজারল্যান্ডের সান্তিয়াগো গ্রাফ প্রথম মেক্সিকোতে ‘ল্যাগার’ বিয়ারের প্রচলন করেন। পরবর্তীতে ‘সারভেসেরিয়া মোক্তেজুমা’ (Cervecería Moctezuma) নামক কারখানায় নোচে বুয়েনার যাত্রা শুরু হয়।

কেন এটি মেক্সিকোর বাইরে পাওয়া যায় না

মেক্সিকো বছরে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের বিয়ার রপ্তানি করে, যা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি রপ্তানিকারক দেশের সম্মিলিত আয়ের চেয়েও বেশি। তাসত্ত্বেও নোচে বুয়েনা কেন বিদেশে পাওয়া যায় না, তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই।

২০১১ সালে হাইনেকেন (Heineken) এই বিয়ারটি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি শুরু করলেও চাহিদার অভাবে ২০১৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়। মেক্সিকান প্রবাসীরা বড়দিনের সময় এই বিয়ারটির অভাব তীব্রভাবে অনুভব করেন। অনেক সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রে এর বিকল্প হিসেবে ‘নোচে এস্পেশাল’ খুঁজে নেন, কিন্তু আসল নোচে বুয়েনার স্বাদ মেক্সিকোর বাইরে মেলা ভার।

বর্তমানে অক্টোবর মাসের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত এই বিয়ারটি মেক্সিকোর বিভিন্ন বার, ক্যান্টিনা এবং সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়। মেক্সিকানদের কাছে এটি কেবল একটি পানীয় নয়, বরং বড়দিনের আনন্দ আর বন্ধুত্বের এক বিশেষ প্রতীক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত