Ajker Patrika

এয়ার টিকিট কিংবা হোটেল: শীর্ষ ওটিএ হয়ে উঠছে ‘ফার্স্টট্রিপ’

নিজস্ব প্রতিবেদক
এয়ার টিকিট কিংবা হোটেল: শীর্ষ ওটিএ হয়ে উঠছে ‘ফার্স্টট্রিপ’

বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পে ডিজিটাল যুগের প্রভাব দ্রুত দৃশ্যমান হচ্ছে। আগে যেখানে বিমান টিকিট বা হোটেল বুকিং মানেই ছিল ঝামেলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া, এখন তা সম্ভব হচ্ছে কয়েকটি ক্লিকেই। এই নতুন ভ্রমণ সংস্কৃতিতে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) হয়ে উঠছে ভ্রমণকারীদের প্রথম পছন্দ। ঠিক এই জায়গাতেই দেশীয় ব্র্যান্ড ‘ফার্স্টট্রিপ’ তৈরি করেছে বিশেষ জায়গা।

স্বচ্ছ ভাড়া, নির্ভরযোগ্য সেবা ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত তরুণ প্রজন্মের আস্থা অর্জন করেছে। ফ্লাইট থেকে হোটেল—ভ্রমণ পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপে সহজতা এনে ফার্স্টট্রিপ আজ হয়ে উঠছে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে নতুন আস্থার নাম।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ফার্স্টট্রিপ গুরুত্ব দিয়েছে তিনটি বিষয়ে—স্বচ্ছতা, সুবিধা ও নির্ভরযোগ্যতা। ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল প্রজন্মের ভ্রমণপ্রবণতার সঙ্গে এই দৃষ্টিভঙ্গি মিলেছে সবচেয়ে বেশি। ফলে অল্প সময়েই সারা দেশ থেকে হাজারো গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন তাদের সঙ্গে। বর্তমানে প্রতি মাসে প্ল্যাটফর্মটি ভিজিট করছেন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ইউনিক ভিজিটর। কোম্পানির দাবি, স্থানীয় ভ্রমণকারীদের চাহিদা বোঝার ক্ষমতা ও প্রতিশ্রুত সেবা দেওয়ার দায়বদ্ধতাই এ সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

ফার্স্টট্রিপের সেবার তালিকাও বেশ বৈচিত্র্যময়। স্বচ্ছ ভাড়াসহ লুকানো চার্জবিহীন বুকিংয়ের পাশাপাশি রয়েছে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ফ্লাইটে সেরা রেট, হোটেল বুকিংয়ে বিশেষ ছাড়, সহজ ভিসা সহায়তা, স্টুডেন্ট ফেয়ার, কাস্টমাইজড হলিডে প্যাকেজ, সহজ রিফান্ড ও রিইস্যুর সুবিধা। নিরাপদ লেনদেনের জন্য রয়েছে পিসিআই-ডিএসএস সার্টিফায়েড গেটওয়ে এবং ১৭টিরও বেশি ব্যাংকের ইএমআই সুবিধা। পাশাপাশি ব্যাগেজ সুরক্ষা, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য ই-সিম সেবাও চালু রয়েছে।

ফার্স্টট্রিপের মার্কেটিং হেড মীর তাজমুল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা আস্থা, স্বচ্ছতা ও সুবিধা চান। আমরা বিশ্বমানের সেবার মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করতে চাই। আমরা কেবল একটি ট্রাভেল কোম্পানি গড়ে তুলছি না, বরং এমন এক পরিবার তৈরি করছি, যেখানে গ্রাহকেরা নিশ্চিত থাকবেন—জীবনের যেকোনো যাত্রায় তাদের পাশে থাকবে ফার্স্টট্রিপ।’

শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনলাইন ট্রাভেল ব্র্যান্ড হওয়া এবং শীর্ষস্থানীয় ট্রাভেল-টেক কোম্পানিতে পরিণত হওয়া। ইতিমধ্যে ব্যাংক, টেলিকম অপারেটর ও হোটেলের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়েছে ফার্স্টট্রিপ। গ্রাহকদের জন্য চালু করেছে লয়্যালটি প্রোগ্রাম ‘এফটি ক্লাব’, যা দিচ্ছে অতিরিক্ত সুবিধা।

গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাও বলছে আস্থার গল্প। ঢাকার তরুণ ভ্রমণকারী শিরিন নাহার জানান, থাইল্যান্ড ট্যুরের জন্য ফার্স্টট্রিপ বেছে নিয়েছিলেন। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি ইএমআই সুবিধার পাশাপাশি সবচেয়ে কম খরচে টিকিট দিয়েছিল।

আরেক গ্রাহক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আগে টিকিট কিনতে এজেন্টদের কাছে যেতে হতো, কিন্তু এখন ফার্স্টট্রিপে কয়েক মিনিটেই বুকিং হয়ে যায়।’ আইটি পেশাজীবী ফারহান আহমেদ জানান, সিঙ্গাপুর সফরে ফ্লাইট টিকিটের পাশাপাশি হোটেল ও ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স একসঙ্গে করার সুযোগ পেয়ে তিনি বেশ সুবিধা পেয়েছেন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বাজারে ফার্স্টট্রিপের উত্থান একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। বিদেশি ও দেশীয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামলেও ফার্স্টট্রিপ প্রযুক্তি, নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রাহকসেবার জন্য আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে। তরুণ প্রজন্মের ভ্রমণপ্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত বাজার দখল করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইউএস-বাংলা গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন হিসেবে গ্রাহকের আস্থা নিয়ে তারা দিচ্ছে ভ্রমণে পূর্ণ নিশ্চয়তার অভিজ্ঞতা।

তাদের মতে, বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্প এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজারে পরিণত হয়েছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে মানুষ আবার ভ্রমণে ঝুঁকছেন এবং সেখানেই অনলাইন বুকিং সেবার চাহিদা প্রতিনিয়ত আকাশছোঁয়া হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের হাতে স্মার্টফোন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট এই বাজারকে আরও প্রসারিত করছে।

সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ড ফার্স্টট্রিপের দ্রুত উত্থান ভ্রমণশিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। প্রযুক্তি, স্বচ্ছতা ও গ্রাহক আস্থার সমন্বয়ে ফার্স্টট্রিপ এখন বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পে পরবর্তী বড় নাম হয়ে ওঠার পথে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রান্নায় অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ব্যবহার কতটা নিরাপদ বা কতটা ঝুঁকি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১২
তিদিনের সাধারণ রান্না ও বেকিংয়ের কাজে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার সাধারণত নিরাপদ। ছবি: ফ্রিপিক
তিদিনের সাধারণ রান্না ও বেকিংয়ের কাজে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার সাধারণত নিরাপদ। ছবি: ফ্রিপিক

রান্নাঘরে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল এখন পরিচিত উপকরণ। মাংস বা সবজি বেক করা, খাবার ঢেকে রাখা কিংবা ওভেনে ব্যবহার—সব ক্ষেত্রেই ফয়েলের ব্যবহার ব্যাপক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব ছড়িয়েছে, রান্নার সময় অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করলে শরীরে অ্যালুমিনিয়াম জমে গিয়ে গুরুতর অসুখের কারণ হতে পারে। ফলে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন, আসলে বিষয়টি কতটা সত্য?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি পুরোপুরি ভয় পাওয়ার মতো নয়। আবার একেবারে ঝুঁকিমুক্তও বলা যায় না। সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল সাধারণ রান্নার জন্য নিরাপদ।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক ডা. ড্যারিন ডেটওয়াইলার বলেন, ‘প্রতিদিনের সাধারণ রান্না ও বেকিংয়ের কাজে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার সাধারণত নিরাপদ। এতে হঠাৎ করে অ্যালুমিনিয়াম বিষক্রিয়ার আশঙ্কা নেই।’

তবে তিনি সতর্ক করে জানান, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ফয়েল থেকে অল্প পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম খাবারের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। বিশেষ করে খুব বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলে বা টক ও অ্যাসিডিক খাবারের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি বাড়ে।

খুব বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলে বা টক ও অ্যাসিডিক খাবারের ক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ঝুঁকি বাড়ায়। ছবি: ফ্রিপিক
খুব বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলে বা টক ও অ্যাসিডিক খাবারের ক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ঝুঁকি বাড়ায়। ছবি: ফ্রিপিক

টক খাবারে কেন ঝুঁকি বেশি

টমেটো, লেবু, কমলা, ভিনেগার বা টক-মিষ্টি সসজাতীয় খাবারে প্রাকৃতিকভাবে অ্যাসিড থাকে। এই অ্যাসিড অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। ফলে ফয়েলের গঠন ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং সেখান থেকে অল্প পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম খাবারের মধ্যে চলে আসতে পারে।

ড. ডেটওয়াইলারের ভাষায়, ‘এর পরিমাণ সাধারণত খুবই সামান্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে বেশি পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম শরীরে প্রবেশ করলে তা স্নায়বিক রোগসহ কিছু দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।’

সর্বোচ্চ কত তাপমাত্রা পর্যন্ত নিরাপদ

ইন্টারন্যাশনাল ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিলের যোগাযোগ পরিচালক তামিকা সিমস জানান, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ২০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায়। এই সীমার মধ্যে ওভেন বা সাধারণ রান্নার বেশির ভাগ কাজই পড়ে। রান্নাবিষয়ক মার্কিন বিশেষজ্ঞ জেসিকা গেভিন বলেন, ‘দৈনন্দিন রান্নায় অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল সাধারণত নিরাপদ। তবে টক বা অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় ফয়েলের সংস্পর্শে রাখা উচিত নয়। এতে খাবারে ধাতব স্বাদ আসতে পারে এবং ফয়েলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

শরীরে অ্যালুমিনিয়াম কতটা প্রবেশ করে

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানায়, একজন গড় আমেরিকান প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে প্রায় ৭ থেকে ৯ মিলিগ্রাম অ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ করেন। এর বেশির ভাগ অংশ শরীর স্বাভাবিকভাবেই প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। জেসিকা গ্যাভিনের মতে, শরীরে প্রবেশ করা মোট অ্যালুমিনিয়ামের মাত্র ৪ শতাংশের মতো আসে রান্নার সরঞ্জাম, কাটলারি, বেকিং ট্রে বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল থেকে। বাকি অংশ আসে খাবার, প্রসাধনী, ওষুধ, পানি এবং বাতাসে থাকা কণিকার মাধ্যমে।

কারা বেশি সতর্ক থাকবেন

ডা. ডেটওয়াইলার জানান, মাঝেমধ্যে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করলে ঝুঁকি খুবই সামান্য। তবে যাঁরা নিয়মিত ও দীর্ঘদিন ধরে বেশি পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

বিশেষ করে—

  • কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
  • যাঁদের শরীর থেকে অতিরিক্ত অ্যালুমিনিয়াম বের হওয়ার ক্ষমতা কম।

নিরাপদ ব্যবহারের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহারের কয়েকটি সহজ পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো:

  • খুব টক বা লেবু-ভিনেগারযুক্ত খাবার ফয়েলে রান্না করবেন না।
  • অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় ফয়েলে রাখবেন না।
  • অত্যধিক উচ্চ তাপে ফয়েল ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • রান্না শেষে খাবার ফয়েলে রেখে সংরক্ষণ করা যাবে না।

বিকল্প কী

যাঁরা একেবারে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চান, তাঁদের জন্য ভালো বিকল্প হলো কাচের বেকিং ট্রে বা পাত্র। এগুলো রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়, খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না এবং কোনো ক্ষতিকর উপাদান খাবারে মেশার আশঙ্কা নেই।

সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল রান্নার ক্ষেত্রে সাধারণত নিরাপদ। তবে টক খাবার, অতিরিক্ত তাপ ও দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। সচেতন ব্যবহারই পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে।

সূত্র: হাফপোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানিরা কেন কাঁচা ডিম খায়!

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
জাপানে কাঁচা ডিম খাওয়া দৈনন্দিন খাদ্যসংস্কৃতির অংশ। ছবি: ফ্রিপিক
জাপানে কাঁচা ডিম খাওয়া দৈনন্দিন খাদ্যসংস্কৃতির অংশ। ছবি: ফ্রিপিক

বিশ্বের অনেক দেশেই খাবারের বিষয়ে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। সেটা হলো, খাবার ভালোভাবে রান্না করতে হবে, পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। কিন্তু জাপানে এই ধারণার ব্যতিক্রম দেখা যায়, বিশেষ করে ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে। সেখানে কাঁচা ডিম খাওয়া শুধু সাধারণ নয়, দৈনন্দিন খাদ্যসংস্কৃতির অংশ।

জাপানে ভ্রমণে গেলে বিদেশিরা প্রায়ই কাঁচা ডিমসহ পরিবেশিত বিভিন্ন খাবারের মুখোমুখি হন। দেশটির সকালের জনপ্রিয় খাবার তামাগো কাকে গোহান (গরম ভাতে কাঁচা ডিম), উডন সুকিমি নুডলস কিংবা গ্রিল করা গরুর মাংসের সঙ্গে ঘন ডিপিং সস—সবখানেই কাঁচা ডিম ব্যবহার করা হয়। অথচ বিশ্বের অন্য অনেক দেশে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ভয়ের কারণে কাঁচা ডিম এড়িয়ে চলা হয়।

এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে রয়েছে জাপানের সুসংগঠিত খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানে খামার থেকে শুরু করে সুপার মার্কেট পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ডিমের গুণমান নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

জাপানে খামার থেকে শুরু করে সুপার মার্কেট পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ডিমের গুণমান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ছবি: জাপান নিউজ
জাপানে খামার থেকে শুরু করে সুপার মার্কেট পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ডিমের গুণমান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ছবি: জাপান নিউজ

খামার থেকে নিরাপত্তা শুরু

জাপান পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (জেপিএ) তথ্য অনুযায়ী, ডিমের নিরাপত্তা শুরু হয় মুরগি পালনের পরিবেশ থেকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিম পাড়া মুরগি খোলা পরিবেশে নয়, নিয়ন্ত্রিত ও আবদ্ধ ব্যবস্থায় পালন করা হয়। ফলে বন্য পাখি, পোকামাকড় বা ইঁদুরের মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি কমে যায়। বড় খামারগুলোতে মুরগিকে ছোট বয়সেই সালমোনেলা প্রতিরোধের টিকা দেওয়া হয়। এতে করে মুরগির শরীর থেকে ডিমে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর আশঙ্কা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। পাশাপাশি খাদ্য স্বাস্থ্য আইনের আওতায় খাদ্য ও পানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।

জিপি সেন্টারে আধুনিক প্রযুক্তি

খামার থেকে সংগ্রহের পর ডিম সরাসরি বাজারে যায় না। প্রথমে সেগুলো পাঠানো হয় বিশেষায়িত গ্রেডিং অ্যান্ড প্যাকিং সেন্টার তথা জিপি সেন্টারে। এখানেই ডিমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো ধোয়ার প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ডিম সাধারণত না ধুয়ে বাজারে আনা হয়, যাতে ডিমের প্রাকৃতিক সুরক্ষাকবচ অক্ষুণ্ন থাকে। কিন্তু জাপানে উষ্ণ পানি ও জীবাণুনাশক দিয়ে ডিম ধোয়া বাধ্যতামূলক। এতে ডিমের খোলস থেকে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণভাবে দূর হয়, যদিও প্রাকৃতিক আবরণ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে ডিম পরীক্ষা করা হয়। স্পেকট্রাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে রক্তের দাগ বা অন্যান্য বস্তুযুক্ত ডিম বাদ দেওয়া হয়। এমনকি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দিয়ে ডিমে হালকা টোকা দিয়ে শব্দ বিশ্লেষণের মাধ্যমে খোলসের সূক্ষ্ম ফাটলও শনাক্ত করা হয়। যেগুলো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ব্যাকটেরিয়া ঢোকার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

কাঁচা খাওয়ার জন্য আলাদা মেয়াদ

জাপানি ডিমের প্যাকেটে থাকা ‘বেস্ট বিফোর’ তারিখটি আসলে সাধারণ মেয়াদ নয়। এটি হলো কাঁচা খাওয়ার জন্য নিরাপদ সময়সীমা। সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি হার বিবেচনা করে এই সময় নির্ধারণ করা হয়। সে সময়কাল গ্রীষ্মকালে সাধারণত ১৪ দিন এবং শীতকালে ২১ দিন। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ডিম নষ্ট হয় না, তবে তখন তা অবশ্যই ভালোভাবে রান্না করে খেতে হয়।

সংরক্ষণ ব্যবস্থা

ধোয়ার ফলে ডিমের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর নষ্ট হওয়ায় জাপানে ডিম সব সময় ঠান্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়। পরিবহন থেকে শুরু করে দোকানের শেলফ সব জায়গায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হয়, যাতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ থাকে। এ কারণেই জাপানে সুপার মার্কেট বা কনভিনিয়েন্স স্টোরে ডিম কখনোই ঘরের তাপমাত্রায় রাখা হয় না। এই মডেল এখন হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও অনুসরণ করা হচ্ছে। এর ফলে সেখানেও কাঁচা ডিম খাওয়ার চাহিদা বাড়ছে।

জাপানে কাঁচা ডিম খাওয়া কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নয়। এটি সুপরিকল্পিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানে কাঁচা ডিম খাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের গবেষণা, কঠোর নীতিমালা এবং প্রযুক্তিনির্ভর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে। খামারে মুরগি পালনের পরিবেশ থেকে শুরু করে ডিম সংগ্রহ, পরিষ্কার করা, পরীক্ষা, সংরক্ষণ এবং ভোক্তার হাতে পৌঁছানো—প্রতিটি ধাপেই রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম ও নজরদারি। কোনো একটি ধাপেও অবহেলা বা শিথিলতার সুযোগ নেই।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোন খাবারে কীভাবে রসুন ব্যবহার করবেন, জেনে নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
রসুন ব্যবহারের সাধারণ কিছু ভুলের কারণে খাবারের স্বাদ তিতকুটে হয়ে যায়, নষ্ট হয় এর পুষ্টিগুণও। ছবি: ফ্রিপিক
রসুন ব্যবহারের সাধারণ কিছু ভুলের কারণে খাবারের স্বাদ তিতকুটে হয়ে যায়, নষ্ট হয় এর পুষ্টিগুণও। ছবি: ফ্রিপিক

রান্নাঘরের অতি পরিচিত একটি মসলা হলো রসুন। আমিষ হোক কিংবা নিরামিষ, খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে এর জুড়ি নেই। রসুনের আছে কড়া ঘ্রাণ, যা রান্নায় যোগ করে নতুন মাত্রা। শুধু তা-ই নয়, কাঁচা রসুনও পেটের অসুখ ভালো করে দেওয়া পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমরা কি রসুনের সঠিক ব্যবহার জানি? অনেক সময় রসুন ব্যবহারের সাধারণ কিছু ভুলেই খাবারের স্বাদ তিতকুটে হয়ে যায়, নষ্ট হয় এর পুষ্টিগুণও।

ফ্রিজে রসুন রাখার ভুল

অনেকেই রসুন ভালো রাখতে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন। এটি রসুনের জন্য সব থেকে ক্ষতিকর। ফ্রিজের ঠান্ডা ও আর্দ্র পরিবেশে রসুন দ্রুত অঙ্কুরিত হয়। আবার ফ্রিজের শুকনা বাতাস রসুনের কোয়া থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়। ফলে রসুন স্পঞ্জের মতো নরম হয়ে যায় এবং এর আসল স্বাদ হারিয়ে ফেলে। এর পরিবর্তে রসুন ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। ঝুড়ি বা জালের ব্যাগে এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে বাতাস চলাচল করতে পারে। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখা ভালো।

রসুন নিয়ে আতঙ্ক

সবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিকসবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিক
সবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিকসবুজ রঙের অঙ্কুর রসুনের বাকি অংশের তুলনায় বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের। ছবি: ফ্রিপিক

ভিনেগারে রসুনের আচার করলে অথবা সসে মেশালে অনেক সময় তা নীলচে বা সবুজ রং ধারণ করে। অনেকে মনে করেন, এটি বিষাক্ত এবং তা ফেলে দেন। আসলে এটি একটি স্বাভাবিক রাসায়নিক বিক্রিয়া। রসুনের সালফার যৌগ যখন অ্যাসিড বা খনিজ পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তখন এমন রং হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং স্বাদেও কোনো পরিবর্তন আনে না। উত্তর চীনে ‘লাবা রসুন’ নামক একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারে রসুনের এই চমৎকার সবুজ রংই বিশেষত্ব হিসেবে ধরা হয়। পুরোনো রসুনের কোয়ার ভেতরে সবুজ রঙের একটি অঙ্কুর দেখা যায়। এটি বিষাক্ত নয়, তবে রসুনের বাকি অংশের তুলনায় এটি বেশ তিতকুটে ও কড়া স্বাদের হয়। রসুনের অঙ্কুরটি ফেলে দিন। সূক্ষ্ম স্বাদের কোনো খাবার বা কাঁচা সস তৈরির সময় এই অঙ্কুরটি ফেলে দেওয়া ভালো। না হলে খাবারের স্বাদ নষ্ট হতে পারে।

কোন রান্নায় কেমন রসুন

বিভিন্ন খাবারে রসুন বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে হবে। তাতে স্বাদ ঠিক থাকবে। ছবি: ফ্রিপিক
বিভিন্ন খাবারে রসুন বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে হবে। তাতে স্বাদ ঠিক থাকবে। ছবি: ফ্রিপিক

রসুনের স্বাদ কতটা কড়া হবে, তা নির্ভর করে আপনি এটি কীভাবে কাটছেন তার ওপর। রসুন যত বেশি মিহি করে কুচি করবেন বা থেঁতো করবেন, তত বেশি সালফার যৌগ নির্গত হবে। এতে স্বাদ তত বেশি উগ্র ও কড়া হবে। সব রান্নায় রসুনকুচি না দিয়ে প্রয়োজন বুঝে কাটুন। ঘন সসের জন্য থেঁতো করা রসুন, স্যুপ বা স্ট্যুর সুগন্ধের জন্য কুচানো রসুন এবং হালকা সবজি রান্নার জন্য পাতলা স্লাইস করা রসুন ব্যবহার করুন। গ্রিল করা খাবারে মিহি কুচি রসুন এড়িয়ে চলুন। মাংস বা সবজি গ্রিল করার আগে ম্যারিনেশনে মিহি কুচি করা রসুন ব্যবহার করবেন না। আগুনের সরাসরি তাপে ক্ষুদ্র রসুনের টুকরাগুলো মাংস সেদ্ধ হওয়ার আগেই পুড়ে কালো হয়ে যায় এবং খাবার তিতকুটে করে ফেলে। রসুনের কুচির বদলে থেঁতো করা রসুনের রস ব্যবহার করুন অথবা ম্যারিনেশনের জন্য গার্লিক পাউডার বেছে নিন।

কড়াইয়ে শুরুতেই রসুন নয়

তেল গরম হতেই পেঁয়াজ বা সবজির আগে রসুন দিয়ে দেওয়া আমাদের অনেকেরই অভ্যাস। রসুনে চিনির পরিমাণ বেশি এবং আর্দ্রতা কম থাকায় এটি খুব দ্রুত পুড়ে যায়। পেঁয়াজ বা মাংস সেদ্ধ হওয়ার আগেই রসুন পুড়ে কালো হয়ে যেতে পারে। আগে সবজি বা পেঁয়াজ ভাজুন। রান্না প্রায় শেষের দিকে এলে রসুনকুচি যোগ করুন। রসুনের সুগন্ধ বের হতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট সময় লাগে। এ ছাড়া চড়া আঁচে কখনই রসুন ভাজবেন না। অনেকেই সময় বাঁচাতে উচ্চ তাপে রসুন ভাজেন। এতে তা বাইরে থেকে পুড়ে লাল হয়ে যায়, কিন্তু ভেতর থেকে এর সুগন্ধ বের হতে পারে না। এটি খাবারের স্বাদ তিতকুটে করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানও তৈরি করতে পারে। সব সময় মাঝারি বা কম আঁচে রসুন ভাজুন। এতে রসুনের প্রাকৃতিক চিনি ধীরে ধীরে ক্যারামেলাইজড হয়ে চমৎকার সোনালি রং ধারণ করবে এবং একটি মিষ্টি সুগন্ধ তৈরি করবে।

সূত্র: টেস্টিং টেবিল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক কি আসলেই আলাদা? গবেষকেরা কী বলছেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের লিঙ্গ ভিত্তিক পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বিভিন্ন রোগের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের লিঙ্গ ভিত্তিক পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বিভিন্ন রোগের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

একুশ শতকে এসেও লৈঙ্গিক সমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা ও বিতর্ক সচল রয়েছে। কার মাথায় বুদ্ধি বেশি, কার উপস্থিত বুদ্ধি বেশি ভালো—এসব আলোচনা থেকে এখনো থামানো যায় না কাউকেই। একজন নারী বেশি বুদ্ধিমান নাকি একজন পুরুষের মাথায় বুদ্ধির ভারটা বেশি, তুমুল সেই বিতর্কের ফাঁক গলে নারীরা বাড়ির আঙিনা থেকে পাড়ি জমাচ্ছে মহাকাশে। এমনকি একজন পুরুষ জটিলতম মেশিনের ডিজাইন করতে করতে রান্নাঘরে তৈরি করছে নতুন নতুন খাবারের রেসিপি। তা-ও থামছে না বুদ্ধির ঘটে কার পাল্লা ভারী, তা নিয়ে ঝগড়া। এদিকে বিজ্ঞানীদের মাইক্রোস্কোপের নিচে উঠে এসেছে সেই চিরন্তন প্রশ্ন—নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক কি আসলেই আলাদা? এই প্রশ্ন যেমন কৌতূহলোদ্দীপক, তেমনি বিতর্কিত। সাম্প্রতিক গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে এই বিতর্ক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

‘পাঁচ আউন্স’-এর সেই পুরোনো তত্ত্ব

মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে বিতর্কের শুরুটা বেশ পুরোনো। শুরুর দিকের গবেষণায় মানুষের মাথার খুলির আয়তন মেপে দেখা গিয়েছিল, পুরুষের মস্তিষ্ক ওজনের দিক থেকে নারীদের তুলনায় কিছুটা ভারী। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তখন কিছু সমালোচক ‘মিসিং ফাইভ আউন্স’ বা হারানো পাঁচ আউন্স তত্ত্বটি সামনে আনেন। তাঁদের ধারণা ছিল, পুরুষের কথিত শ্রেষ্ঠত্বের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এই বাড়তি ওজনে। তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই ধারণাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। নিউ সায়েন্টিস্টদের মতে, এর একটি অত্যন্ত সহজ ব্যাখ্যা রয়েছে। সাধারণত বড় শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখতে বেশি পরিমাণ মস্তিষ্কের কোষ বা টিস্যুর প্রয়োজন হয়। প্রাণিজগতেও এই একই নিয়ম দেখা যায়। অর্থাৎ, বড় শরীর মানেই বড় মস্তিষ্ক। এর সঙ্গে মেধার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।

স্ট্যানফোর্ড গবেষণার মূল লক্ষ্য

বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তবে তাঁদের এই কাজের উদ্দেশ্য কেবল পার্থক্য খোঁজা নয়। স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের মনোরোগ ও আচরণগত বিজ্ঞানের অধ্যাপক বিনোদ মেনন বলেন, ‘এই গবেষণার মূল অনুপ্রেরণা হলো মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ, বার্ধক্য এবং স্নায়বিক রোগ বা মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে লিঙ্গভেদে যে ভিন্নতা দেখা যায়, তা বোঝা।’

গবেষকদের মতে, স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের লৈঙ্গিক ভিত্তিক পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করতে পারলে বিভিন্ন রোগের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া সম্ভব। যেমন অটিজম ও পারকিনসনের মতো রোগগুলো পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এদিকে মাল্টিপল স্কলেরোসিস ও বিষণ্নতা জাতীয় রোগে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়। বিনোদ মেনন সতর্ক করে বলেন, মস্তিষ্কের গঠনের এই লৈঙ্গিক ভিত্তিক পার্থক্যগুলো যদি আমরা এড়িয়ে যাই, তবে স্নায়বিক রোগের পেছনের মূল কারণগুলো হয়তো আমাদের অজানাই থেকে যাবে।

‘সেক্স ডিফারেন্স’ অ্যাজেন্ডা

তবে এই ধরনের গবেষণাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেক বিজ্ঞানী। ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্টিস্ট জিনা রিপন ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ লিখেছেন, বর্তমানে সমাজে জৈবিকভাবে নির্ধারিত লৈঙ্গিক ভিত্তিক পার্থক্য খোঁজার একধরনের প্রবল আগ্রহ বা ‘অ্যাজেন্ডা’ তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, মানুষ চায় নারী-পুরুষের আচরণ, মেজাজ বা অর্জনের পার্থক্যগুলো সরাসরি মস্তিষ্কের ওপর চাপিয়ে দিতে। এস্টন ইউনিভার্সিটি ব্রেন সেন্টারের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক মনে করেন, ‘আমরা যদি এই যুক্তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করি, নারী-পুরুষের পার্থক্যগুলো জন্মগত বা অপরিবর্তনীয়, তবে সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার সব প্রচেষ্টা সহজে বাধাগ্রস্ত হবে।’ তাঁর মতে, সমান হওয়ার অর্থ এই নয় যে সবকিছুতে অভিন্ন হতে হবে। কিন্তু পার্থক্যগুলোকে স্থায়ী তকমা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

আধুনিক প্রযুক্তি ও আগামীর পথ

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত গবেষণাগুলো পুরোনো আমলের লৈঙ্গিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক বিতর্ক কাটিয়ে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছে। বিষয়টি এখনো অত্যন্ত বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর। বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশের অভিমত হলো, গবেষণার ফলাফল যা-ই আসুক, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। চিকিৎসার প্রয়োজনে কোনো পার্থক্যকে যেমন এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়, তেমনি সেই পার্থক্য পুঁজি করে সামাজিক বৈষম্যকে বৈধতা দেওয়াও উচিত হবে না।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ন্যাচার, নিউ সায়েন্টিস্ট, স্ট্যানফোর্ড মেডিকেল ম্যাগাজিন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত