Ajker Patrika

খাবার নিয়ে ৭টি ভুল ধারণা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
খাবার নিয়ে ৭টি ভুল ধারণা

এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো বৈজ্ঞানিক ভাবে ভুল। কিন্তু যুগের পর যুগ মানুষ বিশ্বাস ও চর্চা করে চলেছে বলে সেগুলোই সত্য বলে মনে হয়। খাবার ও রান্নাতেও এমন অনেক পদ্ধতি আছে যেগুলো যুগের পর যুগ ধরে আমরা ভুল জানি। অবাক করা বিষয় হলেও সেগুলোকে কখনোই ভুল বলে মনে হয় না। রান্না ও খাবারের ক্ষেত্রে এমন ৭টি ভুল বিষয় রইল আপনাদের জন্য। 

গাজর খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়
এটি আসলে একটি আর্মি প্রোপাগান্ডা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই মিথ ছড়িয়েছিল ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স। তারা প্রচার করেছিল, নিয়মিত গাজর খাওয়া তাদের পাইলটদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করেছে। তখন থেকেই বিশ্ব এটি বিশ্বাস করতে শুরু করে। তবে এটা সত্য যে গাজর বিটা ক্যারোটিন নামে এক ধরনের ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এটি সামগ্রিক ভাবে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তবে এটি কারও রাতকানা রোগ ভালো করে না বা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে না। 

222স্টেকের চেয়ে ব্রকলিতে প্রোটিন বেশি থাকে 
অনেকেই মনে করেন স্টেক কেন খাব? এর চেয়ে ব্রকলি খেয়েই স্টেকের সমান প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। তবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ব্রকলি স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে আসলেই প্রোটিন থাকে। তবে তা স্টেকের চেয়ে বেশি নয়। একটি স্টেকের সমান প্রোটিন পেতে অনেকগুলো ব্রকলি খেতে হবে। কেউ যদি উদ্ভিদ ভিত্তিক ডায়েট অনুসরণ করলে প্রোটিনের অভাব দূর করতে প্রচুর পরিমাণে মসুর ডাল ও পালংশাক খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। 

333অনেকক্ষণ মেরিনেট করে রাখলে মাংসের স্বাদ বাড়ে
এটিও একটি মিথ। যত বেশি সময় মাংস মেরিনেট করে রাখা হবে, ততই এটি সুস্বাদু হবে। মেরিনেট পদ্ধতি অবশ্যই মাংসের বাহ্যিক অংশে ভেষজ বা ফলের স্বাদ বাড়াতে পারে। তবে যতক্ষণই মেরিনেট করে রাখা হোক না কেন মসলা মাংসের গভীরে প্রবেশ করে না। আর তাই লম্বা সময় ধরে মেরিনেট করে রাখার প্রয়োজনীয়তা কিছুটা কম বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ যতক্ষণই মেরিনেট করে রাখা হোক না কেন মাংসের নির্দিষ্ট স্তরের পর মসলা প্রবেশ করবে না। শুধু তাই নয়, মাংসকে অম্লীয় মেরিনেটে খুব বেশিক্ষণ রেখে দেওয়া হলে তা মাংসের পৃষ্ঠের কাছের প্রোটিন বন্ধনগুলোকে দুর্বল করে দেয়। 

WhatsApp-Image-2024-10-18-at-1.04sfaঢালাই-লোহার প্যানে দীর্ঘ সময় টমেটো রান্না নয়
টমেটোর মতো অ্যাসিডিক খাদ্য উপাদানগুলোকে কাস্ট-আয়রন প্যানে দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা হলে ধাতব অণু নির্গত হয়। যা গন্ধ তৈরি করে এবং প্যানের মসলাকে ক্ষতিকর করে তোলে। আমেরিকার টেস্ট কিচেন পরিচালিত একটি পরীক্ষায় জানা গেছে, যতক্ষণ অ্যাসিডিক খাবার কাস্ট-আয়রন প্যানে ৩০ মিনিটের কম সময় ধরে রান্না করা হলে এর কোনো খারাপ প্রভাব থাকে না। 

WhatsApp-Image-2024-10-18-at-1.042sadদুধ পান হাড় ভাঙা রোধ করে 
এটি আসলে মিথ। দুধ ক্যালসিয়ামের দারুণ উৎস, যা হাড়ের জন্য ভালো। তাই এই খাবারটির বিষয়ে বহু মিথ প্রচলিত আছে। তবে স্ট্যানফোর্ড পুষ্টিবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার গার্ডনার জানিয়েছেন, দুধ পান হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটি হাড় ভেঙে যাওয়া রোধ করে না। এর বদলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে হাড় শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তিনি।  

WhatsApp-Image-2024-10-18-at-1.04sadরান্না করা সবজির চেয়ে কাঁচা সবজি স্বাস্থ্যকর
এটি আংশিক সত্য। অনেকেই মনে করে, শাকসবজি রান্না করা হলে এর মধ্যে থাকা পুষ্টি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এই ধারণা সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কিছু শাকসবজি রান্না করলে তার পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ভালোভাবে শোষিত হতে পারে। তবে বেশ কিছু সবজি, যেমন ব্রকলি কাঁচা অবস্থায় স্বাস্থ্যকর। মূল লক্ষ্য হলো সবজি খাওয়া। দুই উপায়য়েই সবজি স্বাস্থ্যকর। 

WhatsApp-Image-2024-10-18-at-1.04fsfawaপাস্তা পানিতে তেল যোগ 
অনেকেরই ধারণা পাস্তার পানিতে তেল মেশালে সেগুলো দলা বাঁধে না। এই ধারণাটি আসলে ভুল। পাস্তার পানিতে তেল যোগ করা হলে তা আসলে শুধু পানিতে ভাসে। এর কোনো প্রভাব পাস্তার ওপরে পরে না। একমাত্র সস পাস্তার সঙ্গে লেগে থাকে। পাস্তা আটকে না যাওয়ার একটি ভালো উপায় হলো, এটি রান্না করার সময় মাঝে মাঝে নাড়তে থাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে উলের পোশাকের যত্ন নেবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
উলের তৈরি যেকোনো শীতের পোশাকই ধোয়া, শুকানো ও আলমারিতে রাখার ভুলে উজ্জ্বলতা হারাতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক
উলের তৈরি যেকোনো শীতের পোশাকই ধোয়া, শুকানো ও আলমারিতে রাখার ভুলে উজ্জ্বলতা হারাতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক

অগ্রহায়ণ মাস শেষের দিকে। আর কয়েক দিন পরই ক্যালেন্ডারের পাতায় ঘোষণা দিয়ে জাঁকে বসবে শীত। এখনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাপমাত্রা নেমে গেছে বেশ খানিকটা। ভোরে বা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হলে গায়ে গরম কাপড় চাপাতেই হয়। উলের সোয়েটার থেকে শুরু করে উলের নানা ধরনের শীতের পোশাক তাই এখনই আলমারি বা স্টোর থেকে বের করার উপযুক্ত সময়। শীতের পোশাক আমরা বছরের পর বছর পরি। তাই মৌসুম এলে এগুলো শুধু বের করে পরলেই চলে না, যত্নও নিতে হয়। উলের যেকোনো শীতের পোশাকই ধোয়া, শুকানো ও আলমারিতে রাখার ভুলে উজ্জ্বলতা হারাতে পারে। জেনে নিন, উলের কাপড় দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায়।

উলের পোশাক ধোয়ার কারণেই বেশির ভাগ সময় নষ্ট হয়। অনেকেই ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে উলের কাপড় ভিজিয়ে রেখে তারপর কেচে ধুয়ে নেন। কিন্তু উলের পোশাক গরম পানিতে ধোয়া উচিত নয়। ডিটারজেন্ট উলের চরম শত্রু। তাই এগুলো পরিষ্কারের জন্য কম ক্ষারের তরল সাবান ব্যবহার করুন। গরম পানির পরিবর্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে উলের কাপড় ভিজিয়ে রাখুন। তবে ১৫ মিনিটের বেশি নয়। তার পর সাবধানে অল্প ঘষে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। উলের পোশাক ধোয়ার জন্য সাবানের পরিবর্তে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে আরও ভালো হয়। এখন বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিষ্কারক পাওয়া যায়। তাই উলের পোশাকের জন্য বিশেষ ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।

উলের পোশাক দ্রুত শুকানোর জন্য অনেকেই ধোয়ার পর খুব ভালোভাবে নিংড়ে নেন; কিন্তু এটা অনুচিত। উলের পোশাক ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে অতিরিক্ত পানি অপসারণ করতে হবে। এরপর দরকার হলে ঝাঁঝরিতে রেখে অতিরিক্ত আরও পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।

উলের পোশাকের আকৃতি নষ্ট হয় মূলত শুকাতে দেওয়ার ভুলে। উলের কোনো পোশাকই দড়িতে বা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে শুকাতে দেবেন না। ছাদে কিংবা বারান্দায়, ভালো রোদ আসে এমন জায়গায় মাটিতে পরিষ্কার পাটি, বেডশিট বা তোয়ালে পেতে শুকাতে দিন।

গরম পানির পরিবর্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে উলের কাপড় ধুয়ে ফেলুন। ছবি: পেক্সেলস
গরম পানির পরিবর্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে উলের কাপড় ধুয়ে ফেলুন। ছবি: পেক্সেলস

উলের পোশাক ঘন ঘন ধোবেন না। বারবার ধোয়ার ফলে এগুলো কোমলতা আর ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে। এ ধরনের পোশাকের কোনো অংশে দাগ লাগলে সেই অংশটুকু ধুয়ে নিন। পুরো পোশাকটি ধোয়ার দরকার নেই। একই পোশাকের ওপর চাপ কমাতে বেশ কয়েকটি উলের পোশাক ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করুন। এতে পোশাকগুলোর উজ্জ্বলতা থাকবে অনেক দিন।

উলের পোশাকে ঘাম লাগলে তা কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর গায়ে মাখা সাবান টিস্য়ু পেপারে মুড়ে ওই পোশাকের ভেতর রেখে পোশাকটি ভাঁজ করে তবে আলমারিতে রাখুন। এতে পোশাকে তরতাজা ভাব বজায় থাকবে। পোকামাকড়ও ওই পোশাকের ধারেকাছে ঘেঁষবে না।

এ ধরনের পোশাক ইস্ত্রি করার প্রয়োজন পড়ে না। তবু যদি করতে হয় তাহলে ইস্ত্রি করার আগে উলের জামাকাপড় উল্টো করে নিয়ে তারপর ইস্ত্রি করুন। ইস্ত্রি করার সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজ করে রাখবেন না। তাতে কাপড়টি ঘেমে গন্ধ হতে পারে।

আলমারি কাঠের হলে উলের কাপড়ে পোকামাকড়ের আক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সে ক্ষেত্রে একটা কাগজে কয়েকটি কর্পূরের দানা আর কয়েকটি আস্ত গোলমরিচ রেখে মুড়ে দিন। সেগুলো আলমারির ফাঁকে ফাঁকে রেখে দিন। এই উপায়ে পোকামাকড়ের হাত থেকে রেহাই পাবে উলের পোশাক।

শীতের এই দুই মাস উলের কাপড়গুলো কয়েক দিন পর পর আলমারি থেকে বের করে ছাদে বা বারান্দায় রোদে উল্টো করে শুকিয়ে নিন। এতে কাপড়ের তরতাজা ভাব বজায় থাকবে, ধুলো ধুলো গন্ধও নাকে আসবে না। বাইরে থেকে ফিরে গা থেকে উলের পোশাক নামিয়ে সম্ভব হলে নরম ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে নিন। এতে কয়েক দিন পরপর ধোয়ার ঝামেলা থাকবে না। পোশাকটিতে ধুলাবালুও কম জমবে।

সূত্র: উলমার্ক ও টেইলর স্টিচ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরেই বানান চকলেট ফেস মাস্ক

ফারিয়া রহমান খান
উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরেই বানানো যায় চকলেট ফেস মাস্ক। ছবি: ফ্রিপিক
উজ্জ্বল ত্বক পেতে ঘরেই বানানো যায় চকলেট ফেস মাস্ক। ছবি: ফ্রিপিক

অবাক লাগলেও সত্য, চকলেট কেবল মনই ভালো করে না, এটি ত্বকের জন্যও সমান উপকারী। ডার্ক চকলেটে আছে ক্যাটেকিনস, পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনলস। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বড় উৎস। চকলেট সূর্যের ক্ষতিকর আলো থেকে ত্বক রক্ষা করে, ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ কমায়। চকলেট ফেস মাস্ক আপনার ত্বকে এনে দিতে পারে উজ্জ্বলতা। তবে এটা করতে সব সময় স্যালনে যেতে হবে, তেমনটা নয়। এটি ঘরেও করা যাবে। ঘরে তৈরি কিছু চকলেট ফেস মাস্ক সম্পর্কে জেনে নিন এখানে।

অ্যান্টি-অ্যাকনে চকলেট মাস্ক

তৈলাক্ত ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য এই মাস্ক কার্যকর। এটি তৈরি করতে ১ টেবিল চামচ চিনি, ডার্ক কোকো পাউডার, এক চিমটি দারুচিনি পাউডার এবং ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। মধু ও কোকোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক শুষ্ক না করেই ব্রণ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করে।

কোকো-দই ব্রাইটেনিং মাস্ক

উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য এক কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ কোকো পাউডার, ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, ২ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ও টক দই ত্বকের দাগ দূর করে এবং কোকো ও নারকেল তেল ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

হাইড্রেটিং কোকো-ক্রিম মাস্ক

১ টেবিল চামচ কোকো পাউডারের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দুধের সর মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এই মাস্ক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ৩০ মিনিট। পরে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বকে নরম, মসৃণ ও স্নিগ্ধ একটা ভাব এসেছে।

চকলেট সূর্যের ক্ষতিকর আলো থেকে ত্বক রক্ষা করে, ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ কমায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস
চকলেট সূর্যের ক্ষতিকর আলো থেকে ত্বক রক্ষা করে, ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ কমায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

চকলেট-কলা গ্লো প্যাক

উজ্জ্বল ও নরম ত্বক পেতে প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি তৈরি করতে ১ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, ১ টেবিল চামচ মধু, আধা কাপ পেস্ট করা পাকা কলা এবং ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট মতো রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কোকো ও কলা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং টক দই মসৃণতা বাড়ায়।

ওটমিল-কোকো প্যাক

এটি তৈরি করতে আধা কাপ কোকো পাউডার, ৩ টেবিল চামচ ওটমিল, ১ টেবিল চামচ দুধের সর এবং ১ টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানান। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ওটমিল ত্বক মৃদু এক্সফোলিয়েট করে পরিষ্কার করে সতেজ করে তোলে।

ডিমের কুসুম-কোকো হাইড্রেশন মাস্ক

আধা কাপ কোকো পাউডারের সঙ্গে ১টি ডিমের কুসুম এবং ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করে আর্দ্রতা বজায় রাখে।

অ্যাভোকাডো-কোকো ফেস মাস্ক

চেহারায় বলিরেখা ও বার্ধক্যের ছাপ কমাতে মাস্কটি বেশ কার্যকরী। এর জন্য ১ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ পেস্ট করা অ্যাভোকাডো, ২ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ এবং ২ টেবিল চামচ জলপাই বা তিসির তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

বেসন-লেবু চকলেট মাস্ক

১ টেবিল চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ টক দই, আধা কাপ কোকো পাউডার এবং অর্ধেক লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। বেসন ও লেবু ত্বকের দাগ দূর করে এবং টক দই ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে।

সূত্র: স্টাইলক্রেজ ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুরু হয়েছে জেন জেড প্রজন্মের স্ক্রিন আসক্তি থেকে মুক্তির লড়াই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৭
জেনারেশন জেডের দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ স্ক্রিনের সঙ্গে জড়িত। আবার এই প্রজন্মের তরুণেরাই এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পথ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
জেনারেশন জেডের দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ স্ক্রিনের সঙ্গে জড়িত। আবার এই প্রজন্মের তরুণেরাই এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পথ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন জেন জেড প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরা শৈশব থেকে স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং দ্রুতগতির কনটেন্টের মধ্যে বড় হয়েছে। ফলে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ স্ক্রিনের সঙ্গে জড়িত। একে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল ব্রেন রট’। এটি তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ডিজিটাল ব্রেন রট: সমস্যা কোথায়

ডিজিটাল ব্রেন রট বা অতিরিক্ত স্ক্রিন আসক্তির ফলে মস্তিষ্কের মনোযোগ কমে যায়, দ্রুত ক্লান্তিবোধ হয়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এবং গভীর চিন্তার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে ছোট ভিডিওর হঠাৎ উত্তেজনা, উজ্জ্বল ভিজ্যুয়াল এবং দ্রুত তথ্যের স্রোত মস্তিষ্কে ধারাবাহিকভাবে ডোপামিন তৈরি করে। এতে মস্তিষ্ক স্বল্প সময়ে দ্রুত আনন্দের প্রতি আরও নির্ভর হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অভ্যাসের ফলে—

  • মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়
  • দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা বা কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে
  • স্মৃতিশক্তি স্বল্প মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
  • উদ্বেগ ও ঘুমের ব্যাঘাত বাড়ে
  • ধৈর্য কমে যায়

ডিজিটাল ফিডের নিয়মিত উত্তেজনার কারণে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। যাকে ‘ব্রেন রট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা।

গবেষণা ও মেডিকেল দৃষ্টিভঙ্গি

স্ক্রিন টাইম কমানোর জন্য জেনারেশন জেড নতুন সংস্কৃতি তৈরি করছে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
স্ক্রিন টাইম কমানোর জন্য জেনারেশন জেড নতুন সংস্কৃতি তৈরি করছে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্র এই বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালিয়েছে।

মনোযোগ কমে যাওয়ার প্রমাণ: স্ট্যানফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারকারীদের মনোযোগ ২০০০ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। দ্রুত কনটেন্ট দেখার অভ্যাসের ফলে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্মৃতিশক্তির ক্ষতি: এমআইটির গবেষকেরা দেখিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের টানা উত্তেজনায় মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশ কম সক্রিয় হয়ে পড়ে। এই অংশ স্মৃতিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মস্তিষ্ক বার্ধক্য: মস্তিষ্কে নিয়মিত ডোপামিন ওঠা নামার কারণে নিউরাল কানেকশন দুর্বল হতে থাকে। কিছু নিউরোসায়েন্টিস্ট এটিকে ‘অ্যাক্সেলারেটেড ব্রেন এজিং’ অর্থাৎ স্বাভাবিক বয়সের তুলনায় দ্রুত স্নায়বিক ক্ষয় হিসেবে উল্লেখ করছেন।

মানসিক চাপ বৃদ্ধি: ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমস্ক্রলিং উদ্বেগ, হতাশা এবং ঘুমের ব্যাঘাত তৈরি করে, যা পরে চিন্তার স্থিতিশীলতা কমিয়ে দেয়।

জেন জেডই আবার রুখে দাঁড়াচ্ছে

অদ্ভুত বিষয় হলো, যে প্রজন্মের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে, তাঁরাই আবার এ বিষয়ে বেশি সচেতন। তাঁরা সাংস্কৃতিকভাবে একধরনের নতুন ডিজিটাল সচেতনতার পথ তৈরি করছেন।

বিপরীত আন্দোলন

অনেক জনপ্রিয় টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম নির্মাতা নিয়মিত ‘অ্যান্টি-ব্রেন রট’ সিরিজ করছেন। তাঁদের ভিডিওতে থাকে—

  • সকালবেলা স্ক্রিন ছাড়াই দিন শুরু করার পরামর্শ
  • নোটিফিকেশন বন্ধ রাখার টেকনিক
  • দৈনিক ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পড়াশোনার লক্ষ্য ঠিক করা
  • ফোন ছাড়া হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম
  • ঘুমের আগে অন্তত এক ঘণ্টা ফোন বন্ধ রাখা

তরুণেরা এসব ভিডিও শেয়ার করছেন, একে অপরকে উৎসাহ দিচ্ছেন। মোবাইল ফোননির্ভর জীবনের বিরুদ্ধে একধরনের যৌথ চর্চা গড়ে উঠেছে তাঁদের মধ্যে।

মাসিক ব্যক্তিগত কারিকুলাম

জেন জেডের মধ্যে জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড হলো নিজস্ব ‘মাসিক কারিকুলাম’ তৈরি করা। তাঁরা মাসজুড়ে কোন বই পড়বেন, কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করবেন, কোন রুটিন মেনে চলবেন— এসব তালিকা তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।

একটি মাসিক কারিকুলামে থাকে সাধারণত—

  • অন্তত দুটি বই পড়ার টার্গেট
  • সপ্তাহে ৩ দিন ব্যায়াম
  • স্ক্রিন টাইমের সীমা নির্ধারণ
  • নতুন কোনো শখ পূরণ
  • একদিন সম্পূর্ণ অফলাইন থাকা

এই ট্রেন্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে; কারণ, এটি বাস্তবসম্মত এবং তরুণেরা নিজেরাই একে অনুসরণযোগ্য মনে করছেন।

টেক ফ্রি সামাজিক পরিবেশ

যেকোনো আড্ডায় মোবাইল ফোন দূরে রাখা এখন তরুণদের মধ্যে একটি নতুন নিয়ম হয়ে উঠছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল ফোন ফ্রি রেস্টুরেন্ট দিন দিন বাড়ছে। বন্ধুরা একসঙ্গে বসে গল্প করছে, বোর্ড গেম খেলছে বা কফি পানের সময় মোবাইল ফোন জমা রাখছে।

অ্যাপ দিয়ে অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ

জেন জেড এমনকি প্রযুক্তিকেও ব্যবহার করছে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে। তাঁরা স্ক্রিন টাইম সীমা সেট করা, নোটিফিকেশন বন্ধ করা বা ফোকাস মোড চালানোর জন্য বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ফরেস্ট, ওপাল, ওয়ান সেক, ফ্রিডম—এসব অ্যাপ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় কমাতে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

ডিজিটাল যুগে যেকোনো ধরনের স্ক্রিন এড়ানো কঠিন। কিন্তু জেন জেড এসবের মধ্য থেকেই নিজেদের সমাধানের পথ খুঁজে নিচ্ছেন। এই সংস্কৃতি বদল পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে থাকবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রহস্যময় আগুন পাহাড়

সুমন্ত গুপ্ত
রহস্যময় আগুন পাহাড়

বন-পাহাড়ে ঘেরা জলের মঞ্চে আগুনের উৎসব! পোড়া পাহাড়ের বুকে অসংখ্য আগুনের চুল্লি থেকে সাপের মতো জিহ্বা নাড়ছে লেলিহান আগুন। সিলেটের পথে পথে সৌন্দর্যের ভিড়ে নিজেকে আলাদা করে যেন রহস্যপুরী হয়ে উঠেছে উৎলার পাড়। তাই তো রহস্যপিয়াসি পর্যটকদের পদধ্বনিতে মুখর উৎলার পাড়ের পোড়ামাটির পথ।

গ্রামের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে পোড়ামাটির একটি টিলা। স্থানীয়দের কাছে সেটি আগুন পাহাড় নামে পরিচিত। টিলার গায়ে অনেক ছোট-বড় গর্ত। এসব গর্ত দিয়ে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালালেই দপ করে আগুন জ্বলে। শোনা গেল, ৭০ বছর ধরে গ্যাস এভাবেই নির্গমন হচ্ছে এই টিলা দিয়ে।

টিলা থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই দেখা মিলবে আরও একটি তাক লাগানো পুকুরের। ৭০ বছর ধরে এই পুকুরের পানি দিয়ে বুদ্‌বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে। বুদ্‌বুদ থেকে সৃষ্ট ফেনা জমিয়ে আগুন দিলে পুকুরের পানিতেও আগুন জ্বলে ওঠে! সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার উৎলার পাড় গ্রামে গেলে দেখা মিলবে এই টিলার।

২. ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা। ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর মাঝে মোবাইল ফোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম, আমাদের ভ্রমণের জন্য তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নক দিচ্ছেন একজন। ক্রমে অন্য ভ্রমণসঙ্গীরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় হয়ে উঠলেন। সবাই আশপাশে হলেও ঘুরতে যেতে চান। এরপর মাথায় এল সিলেটের হরিপুরের আগুন পাহাড়ের কথা। ছোটবেলায় অনেক শুনেছি তার গল্প। আমার প্রস্তাবে সবাই একবাক্যে রাজি। ঠিক হলো, দুপুরের পর রওনা দেওয়া হবে।

পরদিন যথাসময়ে ভ্রমণ গ্রুপের সবাই এসে উপস্থিত। নাগরিক পরিবেশ ছেড়ে চার চাকার বাহন এগিয়ে চলল আগুন পাহাড় পানে। সময় যেন ফুরাচ্ছিল না। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমরা উপস্থিত হলাম কাছাকাছি। সামনে গেলেই আগুন পাহাড়। তার প্রায় আধা কিলোমিটার এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে সেই বিস্ময়কর পুকুরের দেখা, যেখানে পানিতে আগুন জ্বলে।

আগুন-পাহাড়-(4)

আমরা গাড়ির থেকে নেমে পদব্রজে এগিয়ে যেতে লাগলাম। বাঁ পাশে সবুজ ধানখেত, তার পাশে আগুন পাহাড়। সূর্যে প্রভায় আগুনের রূপ দেখা যাচ্ছিল না ঠিকমতো। তবে আগুনের উষ্ণতা ঠাহর করা যাচ্ছে। ভ্রমণসঙ্গীরা যে যার মতো ছবি তোলায় মগ্ন হয়ে পড়লেন। আমি আর বাকি থাকি কেন! দিন ছোট, তাই এখনই পুকুরপানে না গেলে রাত হয়ে যাবে। তাই আমরা দৌড় লাগালাম সেদিকে।

১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পায় তৎকালীন পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (পিপিএল)। গ্যাস তোলার জন্য সে বছরেই কূপ খননের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। সে জন্য অনুসন্ধানে ব্যবহৃত সব যন্ত্রপাতি এবং নির্মিত ভবন ভূগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভূমিধসে ওই জায়গায় পুকুরের মতো গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে গর্তের পানিতে সব সময় বুদ্‌বুদ দেখা যায়। সেখানে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালালেই পানিতে আগুন ধরে যায়।

অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এখানে শাহ আহমদ আলী নামের একজন কামেল পীরের মাজার রয়েছে। গ্যাস কূপ খননের সময় তিনি নিষেধ করে অন্য জায়গা থেকে গ্যাস তোলার কথা বলেন। না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও তিনি সাবধান করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই পীরের কথা না শুনে কূপ খনন করায় সময় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে মাটি উড়ে গিয়ে এবং মাটি ধসে পুকুর আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। এই পুকুরের গভীরতা আজও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বিস্ফোরণের পর বেশ কিছুদিন পুরো এলাকায় আগুন জ্বলতে থাকে। কোনোভাবে সেই আগুন নেভাতে না পেরে সেই পীরের দ্বারস্থ হয় গ্যাস কর্তৃপক্ষ। কামেল পীরের ‘ফুঁ’ দেওয়া বালু ছিটানো হলে জ্বলন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে!

আগুন-পাহাড়-(1)

গল্প যা-ই হোক। বিস্ফোরণের পর থেকে গর্তে বুদ্‌বুদ দেখা দেওয়ায় ওই গ্রামের নামকরণ হয় উৎলার পাড়। পানি থেকে গ্যাস উথলে ওঠার কারণে এই নামকরণ। আমরা এগিয়ে চলেছি পুকুরপানে। পথিমধ্যে দোকান থেকে দেশলাই বক্স কিনে নেওয়া হলো পুকুরের পানিতে আগুন জ্বালানোর জন্য। আমি মনে মনে ভাবলাম, পানিতে আবার কীভাবে আগুন জ্বলবে!

পুকুরের কাছে পৌঁছতেই শোঁ শোঁ শব্দ কানে এল। পানিতে দেখা গেল বুদ্‌বুদ। আমাদের মতো অনেকে এসেছেন এখানে। কেউ কেউ আবার ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে পানিতে ফেলে দেখার চেষ্টা করছেন, আগুন কি ঠিকই জ্বলে পানিতে! সবার মতো আমরাও বেশ চেষ্টা করলাম। কিন্তু অন্য সবার মতো বিফল হলাম।

আগুন-পাহাড়-(10)

এর মাঝে দেখা হলো কিশোর মহসিনের সঙ্গে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ঠিকই কি পানিতে আগুন জ্বলে? আমরা তো জ্বালাতে পারলাম না। পানিতে ম্যাচের কাঠি পড়ার আগেই নিভে যায়। এবার মহসিন পানিতে নেমে আমাদের দেখাল কীভাবে পানিতে আগুন জ্বলে। এদিকে সূর্য পাটে যাচ্ছে। মহসিনের ম্যাজিক দেখে আমরা আগুন পাহাড়ের দিকে ফিরে চললাম। সেখানে ধানখেতের পাশে মানুষের জটলা দেখা গেল। আমরা এগিয়ে গেলাম সেদিকে। দেখা গেল, সেখানে মাটিতে আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে! আঁধার ঘনিয়ে আসায় আগুনের আলোর ছটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। আগুন পাহাড়ের গর্তগুলোর ভেতরে আগুন জ্বলছে। আমি চেষ্টা করলাম মোবাইল ফোনে ছবি তোলার। এ এক অন্য রকমের অভিজ্ঞতা।

কীভাবে যাবেন

সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট কিংবা ধোপাদীঘির পাড় থেকে জাফলং অভিমুখী বাস, অটোরিকশা ও লেগুনায় উঠে নামতে হবে হরিপুর বাজারে। সময় লাগবে ৫০-৫৫ মিনিট। এরপর হরিপুর বাজারে থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যেতে হবে উৎলার পাড়ে। জাফলং বা লালাখাল ঘুরতে গেলে হরিপুর হয়েই যেতে হয়। চাইলে খুব অল্প সময়ে জাফলং ভ্রমণের সঙ্গে আগুন পাহাড় ঘুরে দেখতে পারবেন সহজে।

সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট কিংবা ধোপাদীঘির পাড় থেকে জাফলং অভিমুখী বাস, অটোরিকশা ও লেগুনায় উঠে নামতে হবে হরিপুর বাজারে। সময় লাগবে ৫০-৫৫ মিনিট। এরপর হরিপুর বাজারে থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যেতে হবে উৎলার পাড়ে। জাফলং বা লালাখাল ঘুরতে গেলে হরিপুর হয়েই যেতে হয়। চাইলে খুব অল্প সময়ে জাফলং ভ্রমণের সঙ্গে আগুন পাহাড় ঘুরে দেখতে পারবেন সহজে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত