Ajker Patrika

জোনস বিচের ডাক

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ১৪: ১০
জোনস বিচের ডাক

পরিকল্পনা করেছিল সনকা আর শৌনক। দিনের পর দিন অবরুদ্ধ জীবনের পর একটু বুক ভরে নিশ্বাস নিতে চেয়েছিল ওরা। ভেবেছিল, সুযোগ পেলে ঘুরে আসবে সমুদ্র থেকে।

আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে নিউইয়র্ক। তাই সমুদ্রের স্বাদ পাওয়া কঠিন কিছু নয়। চাইলেই চলে যাওয়া যায় সমুদ্রতটে। কিন্তু সবকিছুর ওপরে করোনা। করোনা জানিয়ে দিয়েছিল, ‘রোসো বৎস’। এত চঞ্চল হয়ো না। তোমাদের ঘরে বসিয়ে রাখার আরও অনেক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে আমার।

কিন্তু দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সাহস বেড়েছে মানুষের। ভীত, সন্ত্রস্ত মানুষের জায়গায় এখন দেখা যাচ্ছে সাহসী মানুষ। মুখে মাস্ক না দিয়েই কেউ কেউ হাঁটছে। তবে বলে রাখা ভালো, নিউইয়র্কের পথেঘাটে হাঁটতে গেলে কদাচিৎই পদযাত্রীর দেখা মেলে। তাই রাস্তায় বেরিয়ে সংক্রমণের ভয় নেই বললেই চলে।

আমরা দূরের কোনো সৈকতের কথা ভাবিনি। এফ ট্রেনে উঠে শেষ স্টপেজটাই হলো কোনি আইল্যান্ড। সবাই মিলে সেটায় চড়ে বসলেই সোজা সৈকতে চলে যাওয়া যায়। এখানে রয়েছে একটি নয়নাভিরাম অ্যাকোরিয়াম। বছর দু-এক আগে সেটা দেখেছি। সমুদ্রতটটাও ভালো। বহু দূর পর্যন্ত বালি। তারপর লোনা জল।

শুরুতে ভেবেছিলাম, আমরা পরিবারের চারজন কোনো একদিন বেরিয়ে পড়ব পথে। কিন্তু বৃহত্তর পরিবারের কাছে কথাচ্ছলে তা জানালে পরিবর্তিত হয়ে গেল পরিকল্পনা। বদ্ধ সময়কে জয় করার জন্য ভাবা হলো একটু দূরের কোনো সৈকতে গেলে কেমন হয়। এর আগে মোজেস সৈকতে গিয়েছিলাম আমরা। এবার মনে হলো জোনস পার্কের সৈকতে যাওয়া যেতে পারে। নিউইয়র্কের পাঁচটি বোরোর মধ্যে কুইন্স–লাগোয়া যে লং আইল্যান্ড, তারই মধ্যে জোনস বিচ।

একটা গাড়ি আর একটা স্মার্টফোন থাকলে এখন যেকোনো গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া ডাল–ভাত হয়ে গেছে। গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে জিপিএস খুলে দিলেই এক যান্ত্রিক নারী–কণ্ঠ সময়মতো জানিয়ে দেবে—কোন পথ ধরে পৌঁছাতে হবে গন্তব্যে। কোনো রাস্তায় যানজট থাকলে সে আপনাআপনি অন্য সহজ পথে নিয়ে যাবে।

আমরা রওনা হয়েছিলাম দুই গাড়িতে দশজন। একটি গাড়িতে জিপিএস ছিল, অন্যটা চলছিল সামনের গাড়ির পেছন পেছন। কিন্তু কুইন্সের লোকাল পথ দিয়ে চলতে চলতেই একসময় সামনের গাড়িটি দৃষ্টিপথ থেকে হারিয়ে গেল। অর্থাৎ, দুচোখে অন্ধকার নিয়ে দ্বিতীয় গাড়িটি পড়ল অকুল পাথারে। তখনই চালু করা হলো জিপিএস এবং এক যন্ত্রমানবী জানিয়ে দিলেন—সামনেই ডানদিকে মোড় নিতে হবে। তারপর ছুটতে হবে ঘোড়ার মতো। সময়মতো তিনি জানিয়ে দেবেন ডান–বাম করতে হবে কিনা।

আমরা জানতাম, নিউইয়র্কের কুইন্স ভিলেজ থেকে ২৬ মাইল গেলে পাওয়া যাবে সমুদ্রের জল।

বাইরে এসে মাস্ক ছাড়া প্রায় দুই ঘণ্টা থাকা হয়নি অনেক দিন; এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।নিউইয়র্কের মধ্যেই পথচলার জন্য রয়েছে লোকাল ও হাইওয়ে বলে দুধরনের রাস্তা। লোকাল রাস্তায় ঘন ঘন লালবাতি। হাইওয়েতে কোনো লালবাতি নেই। ভোঁ করে চালিয়ে নির্দিষ্ট এক্সিট দিয়ে বেরিয়ে নিজের বাড়ি বা অফিস খুঁজে নেওয়া যায়। একবার পথ হারিয়ে ফেললে সে পথে ফিরে আসতে বেশ হ্যাপা পোহাতে হয়। ঘুরতে ঘুরতে যখন পথ খুঁজে পাওয়া যায়, ততক্ষণে সময় নষ্ট হয় অনেক।

নিউইয়র্ক শহরে এখন ঘণ্টায় ২৫ মাইল বেগে চলতে হয়। হাইওয়েতে তা ৫৫ মাইল। কিছুদিন আগেও রাস্তায় গাড়িঘোড়ার সংখ্যা ছিল কম, এখন প্রতিদিনই বাড়ছে। খুব শিগগিরই আগের জনকোলাহলপূর্ণ শহরটি পুনরুজ্জীবিত হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

সোজা রাস্তাটা দিয়ে ১৩ মাইল যাওয়ার আগে আমরা যেখানে এক্সিট নিয়েছিলাম, সেখান থেকেই টের পাচ্ছিলাম বাতাসটা ভেজা ভেজা। গাড়ির জানালা খুলে দিতেই এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া এসে বুঝিয়ে দিল সমুদ্র অদূরেই।

ভেজা বাতাস আমাদের স্নান করিয়ে দিচ্ছিল। সৈকতের কাছাকাছি এসে যন্ত্রমানবীর নির্দেশনায় গোলমাল দেখা দিল। আসলে দোষটা তার নয়। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে সৈকতের পার্কিং লটে আমাদের জায়গা করে দেওয়ার জন্য, অথচ তা বন্ধ। অগত্যা একটু পরেই সে সন্ধান দিচ্ছে সামনের আরও কোনো ঢোকার রাস্তার। এভাবে কিছু দূর অতিক্রম করার পরই কেবল আমরা ঢুকতে পারলাম পার্কে। তখনো আমাদের সবার মুখে মাস্ক। বিশাল পার্কিং প্লেসে গাড়ি রেখে প্রথমেই আমরা স্যান্ডেল খুলে হাতে নিয়ে নিল কেউ, কেউ ভরে ফেলি ব্যাগে। এই বিশাল বালুকাবেলায় স্যান্ডেল পায়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

প্রচণ্ড বাতাস। সেই যে বহু দূর থেকে ভেজা বাতাস আমাদের শরীর করে তুলছিল শীতার্ত, সেই বাতাস এখন আসছে সমুদ্রের ভিতর থেকে। একটু আগেই সমুদ্রস্নানের স্বপ্ন দেখছিলাম যারা, তারা সে স্বপ্নকে পাঠিয়ে দিল কবরের নির্জনতায়।

এ কথা বোঝানো শক্ত, মাস্কে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষের কাছে হঠাৎ মাস্ক থেকে মুক্তি কতটা আনন্দ দিতে পারে। সমুদ্রের ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বালুকাবেলা, আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সঙ্গে জলের গভীর থেকে কখনো তীরে আসছে ঝিনুক।

জোনস বিচ বালুর সৈকত। অনেকটা কক্সবাজারের মতো। এর আগে মোজেস বিচে গিয়েছিলাম। সেখানে পাথরের সংখ্যা ছিল বেশি। হঠাৎ করে অলক্ষ্যে পাথরে আঘাত লেগে কেটে যেতে পারে পা। কিন্তু এখানে সেই হাঙ্গামা নেই।

শহুরে মানুষ নিজেকে প্রায়ই একটা প্রশ্ন করে—কোথায় ভালো লাগে বেশি? সমুদ্রে নাকি পাহাড়ে? এর উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। কিন্তু পছন্দের এই ছোট তালিকায় টিকচিহ্ন দিতে বেশির ভাগ মানুষই ইতস্তত করে। আসলে দুটোতেই মানুষ স্বচ্ছন্দ। দুটোর সৌন্দর্য দুরকম। এক জায়গায় তাদের মিল—বড়ত্বের জায়গায়। এরা মানুষের তুলনায় এত বেশি বড় যে, শুরুতেই পরাজয় মেনে নিয়ে ওদের সঙ্গে বাতচিৎ করতে হয়। ওদের বিশালত্বই মানুষকে বুঝিয়ে দেয়, মানুষ কত ক্ষুদ্র।

জোনস বিচে স্নান করা আর হলো না। কেউই সাহস করে সমুদ্রস্নানে নামেনি। অনেকেই এসেছেন স্বল্প পোশাকে। কিন্তু পা ভেজানোর বেশি শৌর্য দেখানোর চেষ্টা করছে না কেউ। সমুদ্রপাড়ে বসে কেউ কেউ রৌদ্রস্নান করছেন। তবে তাদের সংখ্যা বেশি নয়।

বহু দূরের দুটো দৃশ্য দেখে ভালো লাগল। রোদ গায়ে মেখে বই পড়ছেন একজন। অন্য একজন আঁকছেন ছবি। এ মুহূর্তে জগতের আর সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা নিমগ্ন রয়েছেন নিজ নিজ কাজে। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে বত্রিশ বছর আগের কথা। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রাসনাদার শহরে ছিল আমার আবাস। একদিন বিকেলে বিষণ্ন মনে কুবান নদীর ধারে বসে ছিলাম। একা। ওপরে নীল আকাশ, নিচে নদী। আশপাশে কেউ নেই। সন্ধ্যা হয় হয়। এ সময় হঠাৎ একজন মানুষকে দেখতে পেলাম; হাতে বই। তিনি নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে বইটা পড়ছিলেন, আর মাঝে মাঝে অপস্রিয়মাণ সূর্যের দিকে তাকাচ্ছিলেন। সূর্য যখন অস্ত গেল, তখন তিনি বন্ধ করলেন তাঁর বই। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনি সূর্যাস্তের সময় বই পড়ছিলেন কেন?’

ভদ্রলোক হেসে বলেছিলেন, ‘বইয়ের বর্ণনার সঙ্গে প্রকৃতিকে মিলিয়ে দেখছিলাম।’

‘মানে?’

‘মানে হলো, লেখক যেভাবে সূর্যাস্তর বর্ণনা দিয়েছেন, আদতেই সেভাবে সূর্যাস্ত হয় কিনা, দেখলাম! অদ্ভুত মিল!’

আমার মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। এ রকম একটা বিষয় কোনো মানুষের মনে দোলা দিতে পারে, সেটাই আনন্দের উৎস। এবারও জোনস বিচে পড়ুয়া মানুষটিকে দেখে সে রকমই ভালো লাগল।

আমরা অনেক দিন পর প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারছিলাম। বাইরে এসে মাস্ক ছাড়া প্রায় দুই ঘণ্টা থাকিনি অনেক দিন। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। দেশে ভারত থেকে আসা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত, আর নিউইয়র্কের মানুষ করোনাকে বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এ জন্য বিশেষ কিছু করতে হয়নি, মাস্ক পরাকে করা হয়েছে বাধ্যতামূলক, হাত ধোয়া বা হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহারকে করা হয়েছে বাধ্যতামূলক, আর একে অন্যের কাছ থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব মানার অঙ্গীকার করতে হয়েছে। এর পর ফল মিলেছে। গত বছর ঠিক এ রকম সময় নিউইয়র্ক ছিল মৃত্যুপুরী। শুনেছি, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ ছিল শ্বাস–প্রশ্বাসের মতো। এক মিনিট সাইরেনের আওয়াজ না থাকলেই মনে হতো, কানে শুনতে পাচ্ছি তো, নাকি কান নষ্ট হয়ে গেছে? সেই নিউইয়র্ক এখন করোনাকে ভয় দেখাতে প্রস্তুত।

সমুদ্রের বাতাস পেটে খিদের জন্ম দেয়। সমুদ্র থেকে উঠে আসা একেকটি মানুষ পরিণত হয় খুদে রাক্ষসে। তিন বাড়ি থেকেই হালকা খাবার নিয়ে আসা হয়েছিল। সে খাওয়া উড়ে গেল এক ফুৎকারে। মাংসের চপ, চিপস, কেক, চা। চেরি খাওয়া হলো গপগপ করে। তারপর এল আলস্য।

এর আগে যা হয়েছিল, সে কথাও বলে রাখা দরকার। সমুদ্র থেকে তটে ফেরা হলে সেখানে দেখা যাবে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা রেস্টরুম। সবখানেই পর্যাপ্ত পরিমাণ টিস্যু পেপার আছে। পানি রয়েছে। আর রয়েছে তরল সাবান। এখানে এসে ফ্রেশ হয়ে তারপর তো খাওয়া–দাওয়া!

যদি ভেবে থাকেন, এর পর বাড়ি ফেরার পথে একমাত্র চালক ছাড়া সবাই ঘুমাতে শুরু করল, তাহলে ভুল করবেন। নিউইয়র্ক এমন এক জায়গা, যেখানে গোটা শহরটাই দিন–রাত ২৪ ঘণ্টা জেগে থাকে। সে কথা মেনে নিয়েই আমরা পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করতে থাকি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেন-জি প্রজন্ম কি আসলে ভীত?

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
গ্যাব্রিয়েল রুবিনের দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে জেনারেশন জেড প্রজন্মের গভীর উদ্বেগ, নিরাশা এবং পৃথিবীকে দেখার এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
গ্যাব্রিয়েল রুবিনের দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে জেনারেশন জেড প্রজন্মের গভীর উদ্বেগ, নিরাশা এবং পৃথিবীকে দেখার এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

এখন যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের ভাগে তারাই আসলে জেনারেশন জি প্রজন্মের মানুষ। এই প্রজন্ম নিয়ে পৃথিবীতে সম্ভবত বেশি গবেষণা হয়েছে। এর কারণও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পুরো দুনিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এই প্রজন্মের মানুষের একটা যোগাযোগ আছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের পতন নিশ্চিত করার ঘটনায় বেশ আলোচনায় আছে জেন-জি প্রজন্ম। এ জন্য এ প্রজন্মের মানুষের সাহসের প্রশংসা করেন অনেকেই। কিন্তু সে প্রশংসার আগুনে বরফ ঢেলে দিয়েছেন এক গবেষক! তাঁর নাম গ্যাব্রিয়েল রুবিন।

এখন ‘স্নোফ্লেক’ জেনারেশন শব্দটি প্রায়ই শোনা যায়। শব্দটি ‘কলিন্স ইংলিশ ডিকশনারি’তে সংযুক্ত হওয়া ২০১৬ সালের শব্দগুলোর মধ্যে একটি। একটি প্রজন্মকে তার আগের প্রজন্মের তুলনায় কম সহিষ্ণু এবং অপরাধপ্রবণ হিসেবে দেখা হয়, কলিন্স ডিকশনারিতে শব্দটিকে মূলত এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। নিউ জার্সির মন্টক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল রুবিন। তিনি ২০২৫ সালের ‘সোসাইটি ফর রিস্ক অ্যানালাইসিস’ কনফারেন্সে জেন-জি বা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া তরুণদের বিষয়ে এক চাঞ্চল্যকর গবেষণাপত্র পেশ করেছেন। তাঁর দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে এই প্রজন্মের গভীর উদ্বেগ, নিরাশা এবং পৃথিবীকে দেখার এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।

গবেষণার তিনটি মূল দিক

অধ্যাপক রুবিন ১০৭ জন তরুণের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিনটি বড় বিষয় চিহ্নিত করেছেন।

ভয়ংকর পৃথিবী: কোভিড-১৯ লকডাউন এবং বন্দুক হামলার মতো অভিজ্ঞতার কারণে এই প্রজন্ম পৃথিবীকে একটি অত্যন্ত অনিরাপদ স্থান মনে করে।

পরিবর্তনের ক্ষমতাহীনতা: তারা বিশ্বাস করে যে রাজনীতি বা আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথিবী পরিবর্তনের ক্ষমতা তাদের নেই। যখন কোনো মানুষ পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন চারপাশের জগৎকে তার কাছে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়।

নেতিবাচক ভবিষ্যৎ: জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বা অর্থনৈতিক সংকটের কোনো সহজ সমাধান না থাকায় তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশ ও বিষণ্ন।

ঝুঁকি দেখার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

গবেষণায় দেখা গেছে, জেন-জি প্রজন্ম যেকোনো ঝুঁকিকে দুটি বিষয়ের ওপর বিচার করে। বিষয়টিকে একেবারে সাদাকালো অর্থাৎ নিরাপদ অথবা বিপজ্জনক এই দুই মেরুতে তারা বিচার করে। তারা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে যে ঝুঁকি একটি ধারাবাহিক বিষয়, যা সামলানো বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর ফলে তারা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ঝুঁকি অনুভব করে।

নারী ও বর্তমান সমাজ

এই গবেষণায় তরুণীদের ওপর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। প্রায় সব নারী মনে করে, বিশেষ করে প্রজননস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা তাদের অধিকার। এটি হুমকির মুখে। এই ভীতি অনেক ক্ষেত্রে তাদের আত্মহত্যা বা চরম বিষণ্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

কেন হচ্ছে এমন

অধ্যাপক রুবিন এর কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং তথ্যের প্রবল প্রবাহকে দায়ী করেছেন। মোবাইল ফোনের পুশ নোটিফিকেশন আর অবিরাম সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট তাদের সারাক্ষণ ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জেন-জি সেন্সরি প্রসেসিং সেনসিটিভিটিতে ভুগছে। যার অর্থ তারা যেকোনো তথ্য বা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি গভীর ও তীব্রভাবে অনুভব করে।

পরস্পরবিরোধী বাস্তবতা

মজার বিষয় হলো, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন বছর মানব ইতিহাসের অন্যতম নিরাপদ সময়। কিন্তু জেন-জি প্রজন্মের কাছে তাদের অভ্যন্তরীণ ভয়গুলো বাস্তব হুমকির চেয়েও বড়। তারা নিজেদের স্নোফ্লেক বা অধিকারপ্রত্যাশী ট্যাগ দেওয়াটা পছন্দ করে না। বরং এটি তাদের আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।

অধ্যাপক রুবিন মনে করেন, পুলিশ বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা। পৃথিবী হয়তো বাইরে থেকে নিরাপদ। কিন্তু জেন-জি প্রজন্মের ভেতরে যে ভয়ের জগৎ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে তাদের আরও শক্তিশালী এবং আশাবাদী করে তোলা জরুরি।

সূত্র: ডেইলি মেইল, ইউরেক অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: প্রেমের সম্ভাবনা নষ্ট করবে অহংকার, সময় নিয়ে দাঁত মাজুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১০
আজকের রাশিফল: প্রেমের সম্ভাবনা নষ্ট করবে অহংকার, সময় নিয়ে দাঁত মাজুন

মেষ

অফিসে আজ কোনো এক সহকর্মী আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে। তারা এমন একটা আলতু-ফালতু মন্তব্য করবে, যা শুনে আপনার মনে হবে আপনি সাক্ষাৎ গজব! কিন্তু সাবধান, বসের দিকে তেড়ে যাওয়ার আগে ক্যালেন্ডারটা একবার দেখে নিন—মাস শেষ হতে মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এখন মেজাজ গরম করা মানেই মাসের শেষের পকেট মানি আর ইনক্রিমেন্ট দুটোই হারানো। নিজেকে বোঝান যে আপনি একজন সাধু ব্যক্তি, আর রাগটা ফ্রিজের একদম নিচের বরফ বাক্সে ঢুকিয়ে রাখুন। আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচ মিনিট নিজের প্রশংসা করুন। অন্য কেউ তো করবেই না, উল্টো বদনাম করতে পারে!

বৃষ

প্রেমের নীল সমুদ্রে আজ টাইটানিকের মতো হাবুডুবু খেতে পারেন। তবে রোমান্টিক হওয়ার আগে মনে রাখবেন, গ্রহরা বলছে আজ আপনার ইগো বা অহংকার একটু বেশিই চড়া থাকবে। প্রিয়জনের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে দিনটা মাটি করবেন না, না হলে কপালে ডিনারের বদলে শুধু বাসি শিঙাড়া জুটবে। যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁরা অংশীদারদের অন্ধ বিশ্বাস করবেন না; সই করার আগে সব কাগজ অন্তত দুবার পড়ুন এবং তাঁদের টিফিন বক্সটাও চেক করে নিন—কী জানি কী লুকিয়ে রেখেছে! আজ যদি খুব লটারির টিকিট কাটার নেশা চাপে, তবে ওই টাকায় এক কাপ ভালো চা আর বিস্কুট খেয়ে সোজা বাড়ি চলে যান। লাভ বেশি হবে।

মিথুন

আজ আপনার জন্য যোগাযোগের দরজা খোলা। ইনবক্সে একগাদা ই-মেইল বা পুরোনো বন্ধুর মেসেজ আসার সম্ভাবনা প্রবল। তবে সব উত্তর দিতে গিয়ে ফোনের চার্জ আর রিচার্জ দুটোই শেষ করবেন না। শরীরের ওপর আজ একটু চাপ বাড়তে পারে, পিঠ বা ঘাড়ের ব্যথা জানান দেবে যে আপনি আর কুড়ি বছরের তরুণ নন। কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে লম্বা একটা হাই তুলুন আর হাত-পা ছড়িয়ে একটু আড়মোড়া ভেঙে নিন। নতুন কোনো সম্পর্কে পা দেওয়ার আগে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন—সেই মানুষটি কি আপনার সব আজব আবদার আর মাঝরাতের খিদে সহ্য করতে পারবে?

কর্কট

বাড়ির লোকের আবেগঘন কথা আজ আপনাকে কাবু করতে পারে। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের কথায় একটু বেশি কান দিন, নতুবা রাতে পছন্দের তরকারিটা প্লেটে না-ও জুটতে পারে। হঠাৎ করে দূরে কোথাও পাহাড় বা সমুদ্রে ঘুরতে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগবে, কিন্তু ব্যাংকের ব্যালেন্স দেখা মাত্রই সেই ইচ্ছা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। অগত্যা ইউটিউবে অন্যের ট্রাভেল ভ্লগ দেখেই সাধ মেটাতে হবে। যাঁরা ছাত্রছাত্রী, তাঁদের জন্য পড়াশোনার চেয়ে আজ পড়ার টেবিল গোছানোটা বেশি জরুরি হতে পারে। টেবিল পরিষ্কার থাকলে অন্তত মনে হবে যে আপনি পড়ছেন!

সিংহ

আপনার রাজকীয় চালচলন আজ বজায় থাকবে। অনেক দিন ধরে ঝুলে থাকা কোনো একটা কাজ বিকেলের দিকে মিটে যেতে পারে। তবে সতর্ক থাকুন, আজ কাছের মানুষ বা স্ত্রী এমন কোনো সত্য কথা তিরের মতো ছুড়ে দেবে, যা সরাসরি ইগোতে গিয়ে লাগবে। পাত্তা দেবেন না! নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, যদিও আপনার আত্মবিশ্বাস মাঝেমধ্যে হিমালয়ের চূড়া ছাড়িয়ে যায়। অফিসের বসকে আজ মহাজ্ঞানী মনে করুন। তিনি যা-ই বলুন না কেন, তর্কে না গিয়ে শুধু মুখটা ৩২ পাটি বের করে হাসুন আর বলুন, ‘হ্যাঁ স্যার, একদম ঠিক বলেছেন।’

কন্যা

আপনার খুঁতখুঁতে স্বভাব আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে। চায়ে চিনির দানা কয়টা আছে তা-ও হয়তো আপনি গুনে দেখতে চাইবেন। জীবনের বড় কোনো সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে বিয়ের কথা বা চাকরি বদলের চিন্তা আজ স্থগিত রাখাই ভালো। কারণ, আপনার বিচারবুদ্ধি আজ একটু বেশিই জটিল পথে হাঁটছে। হঠাৎ কোনো পুরোনো বন্ধু বা পাওনাদার সামনে উদয় হতে পারে—পকেট সামলান! আজ আপনার হাসিতে একটা অন্যরকম জাদু থাকবে। তাই দাঁত মাজার সময় একটু বেশি সময় দিন, যাতে সেই জাদুর আলোয় সবাই ভিরমি খায়!

তুলা

সারা দিন মনে হবে পৃথিবীটা যেন উল্টে যাচ্ছে। একটা অজানা হাহাকার বা অস্থিরতা তাড়া করবে। তবে ঘাবড়াবেন না, এটা কি সত্যিই কোনো গভীর আধ্যাত্মিক বিষয় নাকি দুপুরের তেল-চর্বিযুক্ত বিরিয়ানির ফলাফল, সেটা আগে এন্টাসিড খেয়ে নিশ্চিত করুন। পারিবারিক অশান্তিতে ঘি না ঢেলে যুক্তিবাদী হওয়ার চেষ্টা করুন। রাত জেগে অন্যের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল চেক করা বন্ধ করুন। নিজের চোখের নিচের কালি দূর করতে একটু শান্তিতে ঘুমানো জরুরি।

বৃশ্চিক

অর্থিক যোগ মন্দ নয়, পকেটে দু-চার টাকা আসার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সমস্যা হলো শত্রু বা যারা আপনাকে হিংসা করে, তারা ওত পেতে বসে আছে। ব্যাংক ব্যালেন্সের গল্প বা কেনাকাটার ফিরিস্তি আজ কাউকে শোনাবেন না। কোনো গোপন কথা আজ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় আছে, তাই মুখে কুলুপ আঁটুন। সন্ধ্যার পর মনের আকাশ থেকে পুরোনো মেঘ কেটে গিয়ে হালকা রোমান্টিক ঝিলিক দেখা দিতে পারে। উপভোগ করুন!

ধনু

আজ নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করবেন এবং পুরোনো কিছু সাফল্যের স্মৃতিচারণা করে খুশিতে ডগমগ করবেন। তবে গ্রহের ফেরে আজ বাড়ির কোনো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অশান্তি হতে পারে। আপনার যুক্তি খুব প্রখর থাকবে, কিন্তু ঝগড়ার সময় সেই যুক্তি যেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে না বদলে যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। মিষ্টি কথায় কাজ হাসিল করার চেষ্টা করুন। রাস্তাঘাটে চলবার সময় বড়দের সম্মান দিন। কে জানে, কোনো বয়স্ক আত্মীয়র মন জয় করতে পারলে পকেট থেকে দু-পাঁচ শ টাকার নোট আশীর্বাদ হিসেবে বেরিয়েও আসতে পারে!

মকর

কাউকে আজ উদার হয়ে টাকা ধার দিতে যাবেন না। নক্ষত্ররা বলছে, ওই টাকা ফেরত পাওয়া আর অমাবস্যার চাঁদ দেখা একই কথা। পার্টনার আজ খুব স্পর্শকাতর মুডে থাকবে, তাই ভুল করেও কোনো সেনসিটিভ কথা তুলবেন না। শান্তি বজায় রাখতে আজ নিজেকে ‘বোবা’ বানিয়ে রাখতে পারেন। দুনিয়াটা যদি আজ একঘেয়ে বা সাদাকালো মনে হয়, তবে একটা সস্তা রঙিন চশমা পরে নিন—সবকিছুই রঙিন আর রঙিন মনে হবে!

কুম্ভ

কথার জাদুতে আজ অসম্ভব কাজও সম্ভব হয়ে যাবে। অফিসে যে জট পাকিয়ে বসে ছিল, তা আপনার দুই মিনিটের লেকচারে খুলে যাবে। তবে সন্তানদের পড়াশোনা বা তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছুটা মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে। খরচ কমানোর পরিকল্পনা করবেন ঠিকই, কিন্তু অনলাইন শপিং অ্যাপের নোটিফিকেশন সেই পরিকল্পনার বারোটা বাজাতে পারে। আজ লড়াই বা তর্কে জেতার চেয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই হবে আপনার সবচেয়ে বড় জয়।

মীন

আপনার কল্পনাশক্তি আজ আকাশছোঁয়া হবে। নতুন কিছু আঁকা, লেখা বা গান গাওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার কাণ্ডকারখানা দেখে চারপাশের মানুষ রীতিমতো চমকে উঠবে। তবে আপনার ঘরদোর আজ যা অগোছালো হয়ে আছে, তাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাটা প্রধান চ্যালেঞ্জ। সব কিছুর মধ্যে একটা অদ্ভুত ছন্দ খুঁজে পাবেন। আজ ভুলেও কাউকে অনুকরণ বা নকল করতে যাবেন না। আপনি যেমন অদ্ভুত, তেমনই থাকুন—তাতেই আপনার বিশেষত্ব!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চ্যাপা শুঁটকির পিঠা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
চ্যাপা শুঁটকির পিঠা
চ্যাপা শুঁটকির পিঠা

শীতে বাড়িতে প্রায়ই কোনো না কোনো পিঠা তৈরি হয়। এবার একটু ভিন্ন ঘরানার পিঠা তৈরি করুন। খুব সহজে সন্ধ্যার নাশতা হিসেবে তৈরি করতে পারেন চ্যাপা শুঁটকির পিঠা। এ পিঠার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

চ্যাপা বা সিদল ১০ থেকে ১২টি, রসুন আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ২০টি, লবণ স্বাদমতো, চালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি

কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন হালকা সেদ্ধ বা ভেজে পরে শুঁটকি ও লবণ দিয়ে আরও কিছু সময় ভেজে নিন। ভাজা উপকরণ পাটায় মিহি করে বাটুন। চালের গুঁড়া ও লবণ একসঙ্গে মেখে ধীরে ধীরে পানি দিয়ে রুটি মতো ডো তৈরি করুন। পরে সমান করে পুরির মতো গোল করে গর্ত বানিয়ে তার ভেতর ভর্তা ভরে হাতের তালুতে রেখে চেপে চেপে গোল পিঠা তৈরি করুন। পরে তাওয়া মিডিয়াম আঁচে গরম করে পিঠাগুলো এপিঠ-ওপিঠ করে ভাজুন তেল ছাড়া। খেয়াল রাখতে হবে, যেন ভেতরে কাঁচা না থাকে। ঠিকমতো ভেজে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে চ্যাপা শুঁটকির পিঠা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৬-এর ডায়েট রেজল্যুশন: নতুন বছর শুরু হোক টেকসই অভ্যাস নিয়ে

ফিচার ডেস্ক
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

নতুন বছর মানেই ডায়েট নিয়ে একগাদা জাঁকজমকপূর্ণ প্রতিজ্ঞা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ফেব্রুয়ারি আসার আগেই বেশির ভাগ মানুষের সেই উৎসাহের বেলুন ফুস করে ফেটে যায়। এর মূল কারণ হলো ‘ক্রাশ ডায়েট’ বা অবাস্তব লক্ষ্য। আপনার কাছে সুষম খাদ্য মানে কী। এটি কি কেবল কম খাওয়া বা ক্যালরি গণনা করা? না, এটি আপনার শরীরকে সঠিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার একটি মাধ্যম। টেকসই স্বাস্থ্য শুরু হয় আপনার শরীরের আসলে কী প্রয়োজন, তা বোঝার মধ্য দিয়ে। এই উপলব্ধি আপনাকে খাবারের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন আনতে এবং দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে একটি দীর্ঘস্থায়ী ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস কীভাবে তৈরি করতে হয়, তা হয়তো অনেকে বুঝতে পারেন না। তাই ২০২৬ সালে পা দিয়ে আপনার স্বাস্থ্যযাত্রাকে স্থায়ী করতে ডায়েট প্ল্যানে কোন ভুলগুলো করা যাবে না, তা জেনে রাখা জরুরি। এতে আপনার ডায়েট যাত্রার শুরুটা ভালো হবে।

জেন-জি ট্রেন্ড আর অন্ধ অনুকরণের ফাঁদ

বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে বড় ভুল হলো তারা অন্যের দেখাদেখি হুজুগে ডায়েট শুরু করে। কোনো একটি পদ্ধতি একজনের জন্য কাজ করছে মানেই যে আপনার শরীরের জন্য তা কার্যকর হবে, এমনটা নয়। ধৈর্যহীন আর অহেতুক কৌতূহলে ঘন ঘন ডায়েট প্ল্যান বদলানো ওজন কমানোর বদলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আর মানসিক অবসাদ তৈরি করে।

ওজনের কাঁটা নয়, নজর দিন পুষ্টিতে

ওজন কমানো মানেই খাবার খাওয়া কমিয়ে দেওয়া বা ক্যালরি গণনা করা নয়। পুষ্টি বিসর্জন দিয়ে ওজন কমাতে গিয়ে অনেক সময় আমরা গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা ডেকে আনি। ফলের রস বা ফ্যাড ডায়েটের বদলে আপনার পাতে যেন থাকে পর্যাপ্ত ফলমূল, শাকসবজি, লিন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি। খেয়াল রাখতে হবে প্রতিদিন যেন প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান খাবারে উপস্থিত থাকে। শরীরে কোনো পুষ্টির ঘাটতি (যেমন: ভিটামিন ডি, আয়রন) আছে কি না, তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। খাদ্যতালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেশি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। লক্ষ্য হওয়া উচিত শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়া, কেবল ক্যালরি কমানো নয়।

বার্ষিক নয়, মাসিক লক্ষ্য স্থির করুন

পুরো বছরের জন্য বিশাল লক্ষ্য নির্ধারণ না করে মাসিক লক্ষ্য সেট করুন। যেমন মাসে দুই কেজি কমানোর লক্ষ্য ধরুন। এটি শুনতে ছোট মনে হলেও বছরে তা ২৪ কেজি দাঁড়ায়। যা একটি চমৎকার এবং স্বাস্থ্যকর অর্জন। ছুটির দিনসহ প্রতিদিন ঘুমানোর এবং ঘুম থেকে ওঠার একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। বেলা তিনটার পর ক্যাফেইন বা কফিজাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলার অভ্যাস করে তুলুন। ঘুমানোর আগে ২০ মিনিটের একটি রিল্যাক্সেশন বা শরীর শিথিল করার নিয়ম তৈরি করুন। অবাস্তব টার্গেট আপনাকে ব্যর্থতার অনুভূতি দেয়, যা আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। এর চেয়ে দৈনন্দিন করা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে আগে ঝেড়ে ফেলুন নিজের জীবন থেকে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

’স্মার্ট’ (SMART) ফর্মুলায় হোক লক্ষ্য নির্ধারণ

আপনার স্বাস্থ্য লক্ষ্যগুলো হতে হবে নির্দিষ্ট (Specific), পরিমাপযোগ্য (Measurable), অর্জনযোগ্য (Achievable), প্রাসঙ্গিক (Relevant) এবং সময়োপযোগী (Time-bound)। যেমন ‘আমি মেদ কমাব’ না বলে বলুন, ‘আমি প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে হাঁটব।’ এতে আপনার মস্তিষ্কের জন্য কাজটি সহজ মনে হয়। সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করুন। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে চিনিযুক্ত পানীয়র পরিবর্তে পানি পান করুন। শরীরের গঠন উন্নত করতে প্রতি সপ্তাহে ওয়েট ট্রেনিং করতে পারেন।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

সুস্থতার চার স্তম্ভের সমন্বয়

ডায়েট মানেই শুধু খাবার আর ব্যায়াম নয়, এটি চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে:

শারীরিক স্বাস্থ্য: সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যায়াম ও বিশ্রাম।

মানসিক সুস্থতা: স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও ডিজিটাল ডিটক্স।

পুষ্টিকর অভ্যাস: ৮০/২০ নিয়ম অনুসরণ (৮০% স্বাস্থ্যকর খাবার, ২০% প্রিয় খাবার)।

প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য: নিয়মিত চেকআপ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

ধৈর্যের পরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

মনে রাখবেন, জীবনযাত্রার পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। অন্যের এক মাসের অর্জনের সঙ্গে নিজের তুলনা না করে নিজের শরীরের চাহিদা বুঝুন। বিশেষ করে মেনোপজ বা মাঝবয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডায়েট চার্টটি বিশেষায়িত হতে হবে। আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে নিজে থেকে ইন্টারনেটের ডায়েট ফলো না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে পার্সোনালাইজড ডায়েট চার্ট তৈরি করুন। সুস্থতা কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি পথচলা; যা শুরু হয় আপনার প্লেটের সচেতন সিদ্ধান্ত দিয়ে। ২০২৬ সালের ডায়েট হোক প্রতিশ্রুতিমুক্ত এবং পরিকল্পনাময়। নিজেকে বঞ্চিত না করে ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি স্থায়ী অভ্যাস গড়ে তুলুন।

সূত্র: হেলথ শর্টস, মিয়ামি লেক মেডিকেল সেন্টার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত