Ajker Patrika

সুন্দর সম্পর্কের সাত-সতেরো

রিক্তা রিচি, ঢাকা
আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ১৯: ০৭
সুন্দর সম্পর্কের সাত-সতেরো

‘কাছাকাছি থাকলে শুনি মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন/সম্পর্ক রাখাই দায়।’ ‘আমাদের সম্পর্ক’ কবিতায় শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্পর্ক নিয়ে এমন কথাই বলেছেন। কিংবা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ যেমন বলেছেন, ‘দূরত্ব জানে শুধু একদিন খুব বেশি নিকটে ছিলাম’। শক্তি বা রুদ্র দুজনের কবিতায়ই নৈকট্য থেকেই সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হওয়ার বিষয়টিই মুখ্য। প্রশ্ন হলো, কখন এমনটি হয়? এক কথায় এর উত্তর নেই। তবে মোটাদাগে বলা যায়, ভালোবাসা নামের অনুভবটি ফিকে হতে শুরু করলেই এই দূরত্বের প্রবেশ ঘটে যেকোনো সম্পর্কে। 

ভালোবাসা বস্তুটি কী? এ এক ভীষণ তালগোলে ব্যাপার। এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যেমন বলেছেন, ‘ভালোবাসার সম্পর্ক হলো একই আত্মায় বসবাস করা দুটো ভিন্ন দেহের গল্প।’ আর প্লেটো বলে গেছেন, ‘এক ফোঁটা ভালোবাসার হাতছানি যে কাউকেই কবি বানিয়ে দিতে পারে।’ এ দুই সংজ্ঞা থেকে ভালোবাসা কি বোঝা গেল? 

বোঝা যাক বা না যাক, বলা হয়—ভালোবাসাই হলো পৃথিবীর শুদ্ধতম আবেগ। যেখানে প্রচণ্ড পাগলামি থাকে, থাকে পরস্পরের প্রতি এক অমোঘ টান, পরস্পরকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এ নিয়ে কবি-শিল্পীদের আবেগ ও তার প্রকাশ আবার সব সময়ই বেশি। এই যেমন কেবল ভালোবেসেই কবি কাজী নজরুল তাঁর প্রিয়ার খোঁপায় তারার ফুল, কানে চৈতি চাঁদের দুল পরিয়ে দিতে চেয়েছেন। ভালোবাসার মানুষের প্রতি তীব্র আকর্ষণ থেকেই জেমস গেয়েছেন ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব তুমি আমার’। এই লিরিক আবার এসেছে কবি শামসুর রাহমানের ‘উত্তর’ কবিতা থেকে। হুবহু নয়, সুরের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে একটু অদলবদল হয়েছে। 

ভালোবাসা কি মানুষকে কিছুটা যুক্তি বোধরহিতও করে দেয়? হয়তো। কুমার বিশ্বজিৎ গাইছেন শুনুন, ‘তুমি যদি বলো পদ্মা মেঘনা এক দিনে দেব পাড়ি/তুমি যদি বলো চাঁদের বুকে/বানাব আমার বাড়ি।’ নাহ, বেশ গোলমেলে ব্যাপার বলতে হবে। 

সম্পর্ক সুন্দর রাখতে কিছু বিষয়ের দিকে নজর রাখাটা জরুরি। মডেল: মার্শিয়া ও সানিয়াৎ, ছবি: রনি বাউলতবে এসব থেকে একটা সিদ্ধান্তে কিন্তু আসতেই হচ্ছে—প্রেমে পড়লে কিংবা ভালোবাসলে মানুষ কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে। আর তাই প্রিয় মানুষের পায়ের কাছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে দিতে চায় সে। সমস্ত দহন, যন্ত্রণা, চাপ ও তাপ সহ্য করতেও রাজি থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সবকিছুই ফিকে হতে থাকে। সম্পর্কের বয়স বাড়তে থাকে। তখন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝামেলা লাগতে শুরু হয়। দিনের পর দিন ঝামেলা বাড়তে থাকে। বাড়ে মানসিক অশান্তি। কিন্তু কেন এই অশান্তি? অতি নৈকট্যই কি কারণ, রুদ্র বা শক্তি যেমনটা বলেছেন। 

শান্তির সম্পর্কেও অশান্তির বীজ দানা বাঁধতে শুরু করে নিজেদের আচরণ ও ব্যবহারের কারণে। দুজন দুজনকে শ্রদ্ধা ও সম্মান না করলে, দুজন দুজনের অমিলগুলো মেনে নিতে না পারলে, একে অন্যের প্রতি প্রয়োজনের অধিক প্রত্যাশা রাখলে এবং সে প্রত্যাশা পূরণ না হলে সম্পর্ক নষ্ট হতে শুরু করে। ছোট ছোট রাগ অভিমান জমে জমে বিশাল হয়ে উঠতে পারে। সম্পর্কের টানাপোড়েন দুজনকেই ভোগাতে থাকে। তবে মনোবিদেরা বলছেন, হাল ছাড়ার কিছু নেই। খুঁজলে উপায় ঠিকই মিলবে। সে ক্ষেত্রে সম্পর্ক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখতে হলে কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন। 

সম্পর্ক সুন্দর রাখার ব্যাপারে সাইকোলজিস্ট ও ট্রেইনার নাঈমা ইসলাম অন্তরা জানান, ‘যেকোনো সম্পর্ক সুন্দর করার মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। একে অন্যকে শ্রদ্ধা করা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সঙ্গীর কথাকে গুরুত্ব দেওয়া, সঙ্গীকে স্বাধীনতা দেওয়া, অতিমাত্রায় পজিসিভ না হওয়া, ধৈর্য ধারণ ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা ইত্যাদি থাকলে সম্পর্ক সুন্দর থাকে।’ 

সম্পর্ক সুন্দর রাখতে পরস্পরকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়াটা ভীষণ জরুরি। মডেল: নাসিফ ও অর্পিতা, ছবি: মঞ্জু আলমভাবার কোনো কারণ নেই যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুধু এই বঙ্গেরই বাস্তবতা। গোটা বিশ্বেই এর হালহকিকত এমনই। সম্পর্ক থাকলে তাতে কিছু না কিছু দ্বন্দ্ব থাকবেই। এ নিয়ে দুর্ভাবনায় না থেকে বরং কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। 

বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা করুন
অধিক প্রত্যাশা ভেতর থেকে ভোগায়। প্রত্যাশা অনুযায়ী কোনো কিছু না পেলে দগ্ধ হতে হয়। অপূর্ণ হতে হতে ভেতর থেকে নিঃশেষ হয়ে যেতে হয়। বেশির ভাগ সম্পর্ক নষ্ট হয় অধিক প্রত্যাশার কারণে। সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে প্রত্যাশার লাগাম টেনে ধরুন। অল্পতে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। সঙ্গীকে নিজের মনের মতো পরিবর্তন করতে না চেয়ে তাঁকে তাঁর মতো করে মেনে নিন। 

পর্যাপ্ত সময় দিন
সম্পর্ক সুন্দর রাখতে পরস্পরকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়াটা ভীষণ জরুরি। দুজন দুজনের প্রতি জমে থাকা অভিযোগ, অনুযোগ ঝেড়ে ফেলুন। সব ধরনের কথা শেয়ার করুন। সারা দিন যা যা করেছেন, সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বলার কথা বলছি না। বলছি, সেই মানুষটাকে গুরুত্ব দিয়ে তার কথাগুলো শোনা এবং নিজের জমানো কথাগুলো বলার কথা। কাজের ফাঁকে সময় করে কিংবা ছুটির দিন তাঁকে নিয়ে বেড়াতে যান। 

অমিলগুলোকে শ্রদ্ধা করুন
আমাদের সব সময় মাথায় রাখা উচিত যে সম্পর্কেই যুক্ত হোক না কেন, যুক্ত ব্যক্তিরা আদতে ভিন্ন দুজন মানুষ। অ্যারিস্টটল কথিত ‘এক আত্মা’ দুটি দেহ এখানে শুধু খাতা-কলমের ব্যাপার। তাই দুজনের সবকিছুতেই মিল হবে, তা নয়। কিছু কিছু বিষয়ে অমিল থাকবেই। সেই অমিলগুলো মেনে নিয়েই সামনে এগোতে হবে। সেই অমিলগুলোকে শ্রদ্ধা করেই তাঁকে গ্রহণ করতে হবে। নয়তো পারস্পরিক দ্বন্দ্বের অবসান হবে না। 

সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে প্রত্যাশার লাগাম টেনে ধরুন। মডেল: নাসিফ ও অর্পিতা, ছবি: মঞ্জু আলমভাষা ব্যবহারে সচেতন হোন
যাঁকে ভালোবাসেন, তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় আঘাত করা থেকে বিরত থাকুন। কথার দূষণে তাঁকে পোড়াবেন না। ঝগড়া হলে, ভুল বোঝাবুঝি হলেও রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। নিজের অপারগতা, ভুল স্বীকার করুন। ভুল কাজের জন্য অনুতপ্ত হওয়াটা মানসিক শক্তিরই পরিচায়ক। সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা করুন। ব্যক্তিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না। 

নিজেকে সম্মান করুন
অন্যকে ভালোবাসার আগে নিজেকে ভালোবাসুন। ভালোবাসতে গিয়ে নিজেকে অন্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল করে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। নিজেকে নিজের মতো করে ভালোবাসুন। নিজেকে নিজে সময় দিন। নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করুন। একটি কথা মাথায় রাখা উচিত—চায়ে ভেজানো বিস্কুটও বলে দেয় কারও প্রতি এতটা দুর্বল হতে নেই, যা আপনার সত্তাকে বিকিয়ে দেয়। 

সূত্র: আমহার্সট ডটএডু, সাইকোসেন্ট্রাল ডটকম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে চাদর স্টাইলিং করবেন যেভাবে

বিভাবরী রায়
ক্রেতাদের চাহিদার কথা ভেবে ফ্যাশন ডিজাইনাররা চাদর নকশাদার করে তুলছেন। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন
ক্রেতাদের চাহিদার কথা ভেবে ফ্যাশন ডিজাইনাররা চাদর নকশাদার করে তুলছেন। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন

শীত জেঁকে বসেছে। ভারী গরম কাপড় গায়ে না চড়িয়ে বাইরে বের হওয়া কঠিন। তবে চুপি চুপি বলে রাখি, অনলাইন শপিংয়ে যাঁরা পটু, তাঁরা কিন্তু প্রতিবছর নিত্য়নতুন গায়ে চড়ানোর চাদর কিনে ফেলেন। হ্যাঁ, মায়ের বকুনি খাওয়ার ভয়ে হয়তো আলমারিতে বন্দী করে রাখেন। কিন্তু প্রতিবছর এত সুন্দর সুন্দর থিমে চাদর বাজারে আসে, না কিনলেই বরং অপরাধবোধ হয়!

শীতের চাদরের আবেদন সব সময় ছিল। আগে সেগুলো শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে পরতেন মেয়েরা। আর এখন পরছেন জিনস টপসের সঙ্গে। তবে কখন কালার ম্যাচিং এবং কখন কালার কনট্রাস্ট করে পরতে হবে, তা মনে রাখতে হবে। কীভাবে পরবেন, তা নির্ভর করে কোথায় যাচ্ছেন এবং নিজে কতটা ক্যারি করতে পারছেন, তার ওপর। সৌমিক দাস, প্রধান নির্বাহী, রঙ বাংলাদেশ

শীতে স্টাইলিংয়ের জন্য চাদরের তুলনা হয় না। একসময় চাদরের জমিনে ফুটিয়ে তোলা হতো বিভিন্ন নকশা। এখন ক্রেতাদের চাহিদার কথা ভেবে ফ্যাশন ডিজাইনাররাই সেগুলো নকশাদার করে তুলছেন। তৈরি করছেন বিভিন্ন থিমেটিক নকশার চাদরও। নকশাদার ও থিমেটিক এসব চাদর শাড়ি, কুর্তি, টপস, সিঙ্গেল কামিজ, সালোয়ার-কামিজ—সবকিছুর সঙ্গে পরা যায়। কিন্তু কোন পোশাকের সঙ্গে কোন চাদর কীভাবে পরবেন, সেটাও তো জেনে রাখা প্রয়োজন।

শীতে ভ্রমণ, বনভোজন, সকালে রোদ পোহাতে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারগুলো চলতেই থাকে। একেক জায়গায় একেকভাবে চাদর পরা জরুরি। অর্থাৎ সব জায়গায় একইভাবে চাদর পরা যাবে না।

শাড়ির সঙ্গে

শাড়ির সঙ্গে চাদর স্টাইলিং করার খুব বেশি উপায় নেই। হয় গায়ে জড়িয়ে পরা, নয়তো এক কাঁধের ওপর ফেলে রাখা। সেই ফেলে রাখা গুছিয়েও হতে পারে আবার ছেড়ে দিয়েও হতে পারে। যে ক্যারিশমা করতে পারেন, তা হলো একরঙা শাড়ির সঙ্গে ছাপা ও জ্যামিতিক প্যাটার্নের উজ্জ্বল রঙের মিলমিশ রয়েছে এমন চাদর পরুন।

শাড়ির সঙ্গে চাদর বাঙালি জীবনের ধ্রুপদি যুগলবন্দী। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন
শাড়ির সঙ্গে চাদর বাঙালি জীবনের ধ্রুপদি যুগলবন্দী। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন

লুজ ডেনিম প্যান্টের সঙ্গে

লুজ ডেনিম প্যান্ট এখন বেশ জনপ্রিয়। ডেনিম প্যান্টের ওপর ক্রপ টি-শার্ট পরলেও কিন্তু গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন চাদর। ডেনিমের ওপর জড়িয়ে নিতে পারেন উলের সুতায় বোনা, তসরের কিংবা সিনথেটিক সুতায় বোনা চাদর, সিল্কের চাদর, অ্যান্ডি চাদর অথবা ডুপিয়ান কাপড়ের চাদর। গলায় স্কার্ফের মতো জড়িয়ে হোক বা পুরো গা ঢেকে, দিব্যি বেরিয়ে পরতে পারেন ডেনিমের সঙ্গে চাদর পরে।

কামিজের সঙ্গে

একটু স্টাইলিশভাবে পরতে প্রথমে চাদর গলায় ঝোলান। চাদরের শেষ দুই মাথা একসঙ্গে গিঁট দিয়ে নিন। বড়সড় যে লুপটি তৈরি হলো, তা গলায় পরুন। গিঁটের অংশটি কাঁধের পেছনে থাকবে। এবার টুইস্ট করে দুই বা তিন স্তরে গলায় পরুন এবং প্রয়োজনমতো ছড়িয়ে নিন। যাতে এলোমেলো না হয়ে যায়। সেটা ঠেকাতে গিঁটের সঙ্গে ব্রোচ পিনআপ করে নিতে পারেন।

আরও যেভাবে পরতে পারেন

ডেনিম প্যান্টের ওপর ক্রপ টি-শার্ট পরলেও কিন্তু গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন চাদর। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন
ডেনিম প্যান্টের ওপর ক্রপ টি-শার্ট পরলেও কিন্তু গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন চাদর। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন

এলিগ্যান্ট স্টাইলের জন্য

অভিজাত লুক পেতে বেছে নিতে পারেন ইউনিক বো স্টাইল। এ স্টাইলের জন্য পাতলা চাদর বেছে নিতে পারেন। কাঁধের দুই পাশে ঝোলানো চাদরের এক প্রান্ত বড় ও অন্য প্রান্তটি ছোট রাখুন। এবার বড় প্রান্তটির শেষ মাথা থেকে ওপরের দিকে লুপ তৈরি করুন। এরপর লুপের মাঝ বরাবর ধরে অন্য প্রান্ত দিয়ে পেঁচিয়ে টাইট করে নিন।

আউটিংয়ে ঝলমলে দেখাতে

একটু ঝলমলে আউটলুক পেতে উজ্জ্বল রঙের শাল বেছে নিতে পারেন। ওজনে হালকা ও উজ্জ্বল প্রিন্টের চাদর আর কুল টোনের কামিজ বা একরঙা টি-শার্ট চটজলদি অভিজাত লুক দেবে। উজ্জ্বল রঙের প্রিন্টের চাদর সাদামাটা শার্ট বা টপসকেও অভিজাত লুকে বদলে দেয়।

বোহিমিয়ান স্টাইল

বোহিমিয়ান স্টাইলে শাল বা চাদর পরতে গলায় দুই প্যাঁচে জড়িয়ে বাঁ পাশের প্রান্তের এক কোনা ডান দিকে চাদরের গলার অংশের সঙ্গে পিনআপ করে নিন। অন্য প্রান্তটি থাকবে ছড়ানো প্রান্তের নিচে।

সালোয়ার ও কামিজের সঙ্গে চোদর। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন
সালোয়ার ও কামিজের সঙ্গে চোদর। ছবি সৌজন্য: সাতকাহন

কোথায় পাবেন এসব চাদর

প্রায় সব ফ্যাশন হাউস বিভিন্ন ধরনের চাদর বিক্রি করে। অনেক অনলাইন পেজও এগুলো বিক্রি করে। কোনো কোনো পেজ পছন্দমতো চাদর তৈরিও করে দেয়। প্রতিটি জেলা শহরের সুপারমার্কেটে বা যেকোনো শপিং মলে খুঁজলে পাওয়া যাবে পছন্দের চাদর।

ছবি সৌজন্য: সাতকাহন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সবুজ পৃথিবীর জন্য ২০২৬: নতুন বছরে কিছু পরিবেশবান্ধব সংকল্প নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
২০২৬ সালে সবুজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে জীবনে যোগ করুন কিছু অভ্যাস। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
২০২৬ সালে সবুজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে জীবনে যোগ করুন কিছু অভ্যাস। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

২০২৬ সাল আমাদের দোরগোড়ায়। নতুন বছর মানেই নিজের উন্নতির জন্য নতুন সব পরিকল্পনা। কিন্তু এই বছর ব্যক্তিগত লক্ষ্যের পাশাপাশি আমাদের এই সুন্দর গ্রহটিকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্বও কি আমাদের নয়? জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশদূষণের এই সময়ে আমাদের ছোট ছোট কিছু অভ্যাসই পারে বড় পরিবর্তন আনতে। ২০২৬ সালে একটি সবুজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে আপনি কিছু অভ্যাস নিজের জীবনে যোগ করতে পারেন।

বর্জ্য নিয়ে নতুন করে ভাবুন

আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট সমন্বয় বর্জ্য কমাতে বিশাল ভূমিকা রাখে।

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ছেড়ে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বোতল বা পাত্র ব্যবহার শুরু করুন। ছবি: পেক্সেলস
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ছেড়ে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বোতল বা পাত্র ব্যবহার শুরু করুন। ছবি: পেক্সেলস
  • একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ছেড়ে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বোতল বা পাত্র ব্যবহার শুরু করুন।
  • খাবার সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের বদলে কাচ বা ধাতব পাত্র বেছে নিন, যা রাসায়নিকমুক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী।
  • প্লাস্টিক ব্যাগের চাহিদা কমাতে সব সময় সঙ্গে একটি কাপড়ের ব্যাগ রাখুন।
  • বাড়িতে পেপার ন্যাপকিনের বদলে কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। এগুলো বর্জ্য কমানোর পাশাপাশি আপনার ডাইনিংয়ে আভিজাত্য যোগ করবে।
  • মেকআপ তোলা বা ঘর মোছার জন্য ওয়ান-টাইম ওয়াইপস ব্যবহার বন্ধ করুন। এগুলো পচতে ১০০ বছরের বেশি সময় লাগে। এর বদলে সুতি কাপড় বা রিইউজেবল প্যাড ব্যবহার করুন।
  • প্লাস্টিকে মোড়ানো ফল বা সবজি না কিনে আলগা বা কাগজে মোড়ানো পণ্য কিনুন।

যাতায়াতে আনুন পরিবর্তন

স্বল্প দূরত্বের যাত্রায় গাড়ির বদলে বিকল্প পথ বেছে নিলে বায়ুদূষণ কমে, যানজট হ্রাস পায়। ছবি: ফ্রিপিক
স্বল্প দূরত্বের যাত্রায় গাড়ির বদলে বিকল্প পথ বেছে নিলে বায়ুদূষণ কমে, যানজট হ্রাস পায়। ছবি: ফ্রিপিক

যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া কার্বন নিঃসরণের অন্যতম প্রধান কারণ। আপনি গাড়ি যত কম চালাবেন, পৃথিবী তত বেশি শ্বাস নিতে পারবে। বাস, ট্রেন বা সাবওয়ে ব্যবহার আপনার কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেক কমিয়ে দেয়। ছোট যাত্রায় গাড়ির বদলে বিকল্প পথ বেছে নিলে বায়ুদূষণ কমে, যানজট হ্রাস পায় এবং আপনার ব্যক্তিগত কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেক নিচে নেমে আসে। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। দূরে কোথাও যাওয়ার বদলে নিজের এলাকার আশপাশে ঘুরুন বা বন্ধুর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে কিংবা আপনার বাড়িতেই ছুটি কাটান। এই সময়ে দৈনন্দিন বিরক্তিকর কাজগুলো থেকে ছুটি নিয়ে নিজের এলাকার অচেনা জায়গাগুলো ঘুরে দেখুন, স্থানীয় খাবার চেখে দেখুন। এতে একটি দীর্ঘ বিমানযাত্রা বা ক্লান্তিকর সফর থেকে পরিবেশ বেঁচে যাবে। এতে বিমান বা দীর্ঘ সফরের দূষণ কমবে।

খাদ্যাভ্যাসে আনুন টেকসই ধারা

আপনার খাবার প্লেটের সিদ্ধান্তই ঠিক করে দেয় পরিবেশের ভবিষ্যৎ। প্লেটে নিরামিষ বা প্ল্যান্টবেজড রেসিপি, যেমন মসুর ডাল বা কাজু-পান্তা মাংসের তুলনায় অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করে। সপ্তাহে অন্তত এক দিন বা দুই দিন মাংস ছাড়া খাওয়ার চেষ্টা করুন। সব সময় স্থানীয় খামারে উৎপাদিত এবং মৌসুমি ফল ও সবজি কেনার চেষ্টা করুন। প্লাস্টিকে মোড়ানো সবজি এড়িয়ে খোলা সবজি কিনুন। খাবারের অপচয় রোধে আগে থেকেই মিল প্ল্যানিং করুন। এটি আপনাকে বাইরের প্লাস্টিক মোড়ানো খাবারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে।

বাড়িতে কম্পোস্টিং শুরু করলে তা আপনার গাছের পুষ্টি জোগাবে এবং বর্জ্য কমাবে। ছবি: পেক্সেলস
বাড়িতে কম্পোস্টিং শুরু করলে তা আপনার গাছের পুষ্টি জোগাবে এবং বর্জ্য কমাবে। ছবি: পেক্সেলস

ঘরে শক্তি সাশ্রয় করুন

বিদ্যুৎ সাশ্রয় আপনার পকেটের পাশাপাশি পৃথিবীরও উপকার করে। অনেক সময় যন্ত্র বন্ধ থাকলেও প্লাগ লাগানো থাকলে বিদ্যুৎ খরচ হয়। কাজ শেষে প্লাগ খুলে রাখুন। হ্যালোজেন বাল্বের বদলে এলইডি ব্যবহার করুন। নতুন কোনো যন্ত্র কেনার আগে সেটির এনার্জি রেটিং দেখে নিন। পুরোনো যন্ত্র বদলে এনার্জি-এফিসিয়েন্ট ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন কিনুন। স্মার্ট মিটার ব্যবহার করুন, যা আপনার বিদ্যুৎ খরচের ধরন বুঝতে এবং সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে। বাড়িতে সোলার প্যানেল বা এয়ার সোর্স হিট পাম্প লাগানোর কথা ভাবতে পারেন।

পানি সংরক্ষণ ও বনায়ন

পানি জীবন হলেও আমাদের অপচয়ের কারণে এটি ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। লো-ফ্লো ফাউসেট বা শাওয়ার ফিক্সচার ব্যবহার করুন। এ ছাড়া ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার সময় লোড পূর্ণ হলে তবেই মেশিন চালান। নিজের জানালার পাশে বা বারান্দায় টমেটো বা হার্বস চাষ শুরু করুন। ঘরোয়া উদ্ভিদের কাটিং থেকে নতুন চারা তৈরি করে বন্ধুদের উপহার দিন। বাড়িতে কম্পোস্টিং শুরু করলে তা আপনার গাছের পুষ্টি জোগাবে এবং বর্জ্য কমাবে।

একা লড়াই করার চেয়ে দলগত কাজ বেশি কার্যকর। আপনি চাইলে স্থানীয় কোনো ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপে যোগ দিতে পারেন। তাদের সঙ্গে এলাকা পরিষ্কার করা বা পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রচারণায় অংশ নিন। ২০২৬ সাল হোক আমাদের সচেতনতার বছর। আপনার ছোট একটি পদক্ষেপই পারে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। শুরুটা হোক আজ থেকেই!

সূত্র: ইকোমিনা, গুড এনার্জি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি খেতে হবে এই কয়েকটি খাবার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
শীতে ত্বকের যত্নে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
শীতে ত্বকের যত্নে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

শীতে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্ক ভাব দূর করতে কত কীই-না করি আমরা। যতবার হাত ধোয়া হচ্ছে, ততবারই ময়শ্চারাইজার না মাখলে হাত খসখসে হয়ে উঠছে। ময়শ্চারাইজার মাখার পরও কিছুক্ষণ বাদে বাদে রিঅ্যাপ্লাই করতে হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, ঠান্ডা নাকি আরও বাড়বে। ফলে শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের চিন্তায় এখনই কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে। রূপবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্বকের শুষ্ক ও নির্জীব ভাব দূর করতে বাইরে থেকে যেমন মশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন, তেমনি নিয়মিত কয়েকটি খাবার খাওয়া উচিত। এতে করে শীতে ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, নরম ও মসৃণ। পাশাপাশি ত্বকে বয়সের ছাপও পড়বে দেরিতে।

শীতে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। বয়স যত বেশি, ত্বকের আর্দ্রতা তত কম থাকে এই ঋতুতে। এ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে কিছু খাবার। ঘি, আমলকী, বাদাম, টমেটো, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাবার খেলে ত্বকের স্বাভাবিক তেল উৎপাদন অব্যাহত থাকে। কোলাজেন উৎপাদনও বাড়ে। ফলে ত্বক পরিপুষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জেল্লা ছড়ায়। শারমিন কচি, রূপবিশেষজ্ঞ এবং স্বত্বাধিকারী, বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ার

ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি যেসব খাবার খাবেন

খাঁটি ঘি

প্রতিদিন অন্তত এক চা-চামচ ঘি খান। এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি ও চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। এগুলো খেলে শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি ত্বকও পরিপুষ্ট হবে। ত্বকের প্রাকৃতিক তৈলাক্ত ভাব বজায় রাখতেও সাহায্য করে ঘি। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ওঠে না।

সালাদে টমেটো রাখুন

শীতে বাজারে যে টমেটো পাওয়া যায়, তাতে প্রচুর লাইকোপিন থাকে, যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের কোলাজেন ভেঙে দেয়। ফলে বলিরেখা পড়ে। এ ছাড়া এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও সহায়তা করে।

শীতে সালাদে রাখুন টমেটো। এ ছাড়াও যেভাবে সম্ভব টমেটো খেতে হবে প্রতিদিন। ছবি: পেক্সেলস
শীতে সালাদে রাখুন টমেটো। এ ছাড়াও যেভাবে সম্ভব টমেটো খেতে হবে প্রতিদিন। ছবি: পেক্সেলস

আমলকী

ত্বক তারুণ্যদীপ্ত রাখে ভিটামিন সি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি একাই পূরণ করতে পারে আমলকী। এই ছোট্ট ফল নিয়মিত খেলে তা কোলাজেন বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্র ভাব এবং টান টান ভাব বজায় রাখার জন্য এই কোলাজেন বেশি জরুরি।

তিল

এই শীতে তিলের নাড়ু, হালুয়া, ভর্তা তৈরি করে খেতে পারেন। এটি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে সহায়তা করে। এতে ত্বক থাকে কোমল ও উজ্জ্বল। তিলে থাকা জিংক ও স্বাস্থ্যকর চর্বি ত্বক প্রাকৃতিকভাবে ময়শ্চারাইজড রাখে।

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ডি ত্বক কোমল ও হাড় মজবুত রাখে। সপ্তাহে অন্তত দুদিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার। তবে এই মাছ রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার না করাই ভালো।

কাঠবাদাম ও আখরোট

ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ৬টি ভেজানো কাঠবাদাম খান। এতে ত্বক সুন্দর থাকবে। কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি, যা ত্বকের কোষ ভালো রাখে। কাঠবাদাম ছাড়াও খেতে পারেন আখরোট। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড; যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে, টক্সিনকে ত্বকের ক্ষতি করতে দেয় না।

বিটরুট

বিটরুটের ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও সুপার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখে, ত্বকের পোর বা ছিদ্রগুলো মেরামত করে। প্রতিদিন ৫০০ মিলি লিটার বিটরুটের জুস পান করলে বা সালাদ হিসেবে বিটরুট খেলে ত্বক ভালো থাকে।

টক দই

ত্বকের জন্য যত ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার রয়েছে, সেগুলোর মধ্য়ে প্রোবায়োটিকস খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রোবায়োটিকস হিসেবে টক দই খুব ভালো ও সহজলভ্য একটি খাবার। এতে রয়েছে পেটের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা অন্ত্রে পৌঁছে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পেটের স্বাস্থ্যের প্রভাব পড়ে ত্বকে। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় টক দই রাখলে ত্বকের স্বাভাবিক তৈলাক্ত ভাব বজায় থাকে। ফলে শীতকালে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা নিয়ে বাড়তি ভাবনা থাকে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেন-জি প্রজন্ম কি আসলে ভীত?

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৩
গ্যাব্রিয়েল রুবিনের দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে জেনারেশন জেড প্রজন্মের গভীর উদ্বেগ, নিরাশা এবং পৃথিবীকে দেখার এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
গ্যাব্রিয়েল রুবিনের দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে জেনারেশন জেড প্রজন্মের গভীর উদ্বেগ, নিরাশা এবং পৃথিবীকে দেখার এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

এখন যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের ভাগে তারাই আসলে জেনারেশন জি প্রজন্মের মানুষ। এই প্রজন্ম নিয়ে পৃথিবীতে সম্ভবত বেশি গবেষণা হয়েছে। এর কারণও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পুরো দুনিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এই প্রজন্মের মানুষের একটা যোগাযোগ আছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের পতন নিশ্চিত করার ঘটনায় বেশ আলোচনায় আছে জেন-জি প্রজন্ম। এ জন্য এ প্রজন্মের মানুষের সাহসের প্রশংসা করেন অনেকেই। কিন্তু সে প্রশংসার আগুনে বরফ ঢেলে দিয়েছেন এক গবেষক! তাঁর নাম গ্যাব্রিয়েল রুবিন।

এখন ‘স্নোফ্লেক’ জেনারেশন শব্দটি প্রায়ই শোনা যায়। শব্দটি ‘কলিন্স ইংলিশ ডিকশনারি’তে সংযুক্ত হওয়া ২০১৬ সালের শব্দগুলোর মধ্যে একটি। একটি প্রজন্মকে তার আগের প্রজন্মের তুলনায় কম সহিষ্ণু এবং অপরাধপ্রবণ হিসেবে দেখা হয়, কলিন্স ডিকশনারিতে শব্দটিকে মূলত এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। নিউ জার্সির মন্টক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল রুবিন। তিনি ২০২৫ সালের ‘সোসাইটি ফর রিস্ক অ্যানালাইসিস’ কনফারেন্সে জেন-জি বা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া তরুণদের বিষয়ে এক চাঞ্চল্যকর গবেষণাপত্র পেশ করেছেন। তাঁর দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে এই প্রজন্মের গভীর উদ্বেগ, নিরাশা এবং পৃথিবীকে দেখার এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।

গবেষণার তিনটি মূল দিক

অধ্যাপক রুবিন ১০৭ জন তরুণের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিনটি বড় বিষয় চিহ্নিত করেছেন।

ভয়ংকর পৃথিবী: কোভিড-১৯ লকডাউন এবং বন্দুক হামলার মতো অভিজ্ঞতার কারণে এই প্রজন্ম পৃথিবীকে একটি অত্যন্ত অনিরাপদ স্থান মনে করে।

পরিবর্তনের ক্ষমতাহীনতা: তারা বিশ্বাস করে যে রাজনীতি বা আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথিবী পরিবর্তনের ক্ষমতা তাদের নেই। যখন কোনো মানুষ পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন চারপাশের জগৎকে তার কাছে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়।

নেতিবাচক ভবিষ্যৎ: জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বা অর্থনৈতিক সংকটের কোনো সহজ সমাধান না থাকায় তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশ ও বিষণ্ন।

ঝুঁকি দেখার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

গবেষণায় দেখা গেছে, জেন-জি প্রজন্ম যেকোনো ঝুঁকিকে দুটি বিষয়ের ওপর বিচার করে। বিষয়টিকে একেবারে সাদাকালো অর্থাৎ নিরাপদ অথবা বিপজ্জনক এই দুই মেরুতে তারা বিচার করে। তারা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে যে ঝুঁকি একটি ধারাবাহিক বিষয়, যা সামলানো বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর ফলে তারা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ঝুঁকি অনুভব করে।

নারী ও বর্তমান সমাজ

এই গবেষণায় তরুণীদের ওপর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। প্রায় সব নারী মনে করে, বিশেষ করে প্রজননস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা তাদের অধিকার। এটি হুমকির মুখে। এই ভীতি অনেক ক্ষেত্রে তাদের আত্মহত্যা বা চরম বিষণ্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

কেন হচ্ছে এমন

অধ্যাপক রুবিন এর কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং তথ্যের প্রবল প্রবাহকে দায়ী করেছেন। মোবাইল ফোনের পুশ নোটিফিকেশন আর অবিরাম সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট তাদের সারাক্ষণ ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জেন-জি সেন্সরি প্রসেসিং সেনসিটিভিটিতে ভুগছে। যার অর্থ তারা যেকোনো তথ্য বা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি গভীর ও তীব্রভাবে অনুভব করে।

পরস্পরবিরোধী বাস্তবতা

মজার বিষয় হলো, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন বছর মানব ইতিহাসের অন্যতম নিরাপদ সময়। কিন্তু জেন-জি প্রজন্মের কাছে তাদের অভ্যন্তরীণ ভয়গুলো বাস্তব হুমকির চেয়েও বড়। তারা নিজেদের স্নোফ্লেক বা অধিকারপ্রত্যাশী ট্যাগ দেওয়াটা পছন্দ করে না। বরং এটি তাদের আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।

অধ্যাপক রুবিন মনে করেন, পুলিশ বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা। পৃথিবী হয়তো বাইরে থেকে নিরাপদ। কিন্তু জেন-জি প্রজন্মের ভেতরে যে ভয়ের জগৎ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে তাদের আরও শক্তিশালী এবং আশাবাদী করে তোলা জরুরি।

সূত্র: ডেইলি মেইল, ইউরেক অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত