জাপানের কিউবিটেক ইনকরপোরেশনে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত জিমি মজুমদার। দেশটিতে জন্মহার কম হওয়ায় প্রতিবছর দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। জাপানে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা, প্রস্তুতির প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ।
নাদিম মজিদ
প্রশ্ন: আপনি কীভাবে রোবোটিকস সেক্টরে এসেছেন?
উত্তর: আমার রোবোটিকস সেক্টরে আসার যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। আমি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে, সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, বুড়বুড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের গ্রামে তখন বিদ্যুৎ বা ভালো যোগাযোগব্যবস্থা কিছুই ছিল না। বাবা ছিলেন শিক্ষক, আর তাঁর মুখে শোনা সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলোই আমার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলে। আমি হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শেষ করে খুলনা পাবলিক কলেজে পড়াশোনা করি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর প্রকৌশলী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পেলেও ২০১৪ সালে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হই। তখন বাংলাদেশে শুধু এ বিশ্ববিদ্যালয়েই মেকাট্রনিকস তথা রোবোটিকস বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং চালু ছিল। এটি ছিল নতুন। দেশের চাকরির বাজারেও তখন রোবোটিকস নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না। তবে আমি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের সম্ভাবনা বুঝে রোবোটিকসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে রোবোটিকস নিয়ে গভীরভাবে কাজ শুরু করি। ছোট ছোট প্রকল্প তৈরি করা, বড়দের থিসিস প্রকল্পে সাহায্য করা এবং গবেষণা ও প্রকাশনার মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তুলি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কিং ও গবেষণা সহযোগিতার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাজীবনেই NASA-র একটি জয়েন্ট প্রজেক্টে গবেষণা করার সুযোগ পাই।
পরে বাংলাদেশে প্রথম রোবোটিকস গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ অ্যাডভান্সড রোবোটিকস রিসার্চ সেন্টার (BARRC) প্রতিষ্ঠা করি, যা বর্তমানে জাপান থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং একটি আন্তর্জাতিক স্টার্টআপ হিসেবে কাজ করছে। তবে বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারি, অ্যাডভান্সড রোবোটিকস নিয়ে আমার দক্ষতা ও জ্ঞানের পরিধি আরও বিস্তৃত করার প্রয়োজন রয়েছে।
এরপর ২০২০ সালে আমি জাপান সরকারের মনবুশো স্কলারশিপ পাই এবং হিউম্যান ইনটেলিজেন্স সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং বা রোবোটিকস মেজরে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। ২০২২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর থেকে এখনো জাপানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবোটিকস সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: কিউবিটেক ইনকরপোরেশন কী নিয়ে কাজ করে? একজন রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনার দায়িত্ব কী?
উত্তর: কিউবিটেক ইনকরপোরেশন মূলত টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত JSK LAB থেকে প্রতিষ্ঠিত একটি গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান। এটি জাপানের শীর্ষ ১০টি স্টার্টআপের মধ্যে একটি, যা রোবোটিকস, অটোনোমাস সিস্টেম, লজিস্টিকস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে। আমাদের প্রতিষ্ঠান জাপান সরকার এবং বিশ্বের খ্যাতনামা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে Kawasaki, Sony, Toyota, Honda-সহ বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত আমরা ১০০টিরও বেশি সফল প্রজেক্ট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্যুশন বাস্তবায়ন করেছি, যা শিল্প, চিকিৎসা ও লজিস্টিক সেক্টরে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি মিড-সিনিয়র রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি, যেখানে আমার প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাডভান্সড রোবোটিকস সিস্টেম ডিজাইন, স্বয়ংক্রিয় রোবট নেভিগেশন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং রোবোটিকস আর্ম ম্যানিপুলেশন।
এ ছাড়া, আমি কম্পিউটার ভিশন ও এআই ইন্টিগ্রেশন নিয়ে কাজ করছি, যা রোবটগুলোর স্মার্ট পারসেপশন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্ভুল অপারেশন নিশ্চিত করে। বর্তমানে আমি একটি রোবোটিকস প্রজেক্টের টিম লিড হিসেবে প্রোটোটাইপিং থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন লেভেলের রোবট ডেভেলপমেন্টে কাজ করছি। পাশাপাশি, বোর্ড অব ডাইরেক্টরসদের সঙ্গে উন্নয়ন নীতিমালা, প্রজেক্ট পরিকল্পনা, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: রোবোটিকসে জাপানের তুলনায় বাংলাদেশ কোথায় পিছিয়ে রয়েছে?
উত্তর: রোবোটিকসে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপান অন্যতম। আন্তর্জাতিক রোবোটিকস ফেডারেশনের (IFR) তথ্য অনুযায়ী, জাপানে প্রতি ১০ হাজার কর্মীর জন্য প্রায় ৩০০টি রোবট ব্যবহৃত হয়, যা রোবোটিকস প্রযুক্তিতে তাঁদের অগ্রগতির প্রতিফলন।
এর বিপরীতে, বাংলাদেশ এখনো রোবোটিকস খাতে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। যদিও কিছু শিল্প খাতে স্বয়ংক্রিয় অটোমেশন ও লজিস্টিক ব্যবস্থার প্রয়োগ দেখা যায়, তবুও উন্নত রোবোটিকস প্রযুক্তির ব্যবহার এখনো সীমিত। তরুণ প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতে ভালো করছে; কিন্তু রোবোটিকসের ক্ষেত্রে তাঁরা এখনো পিছিয়ে।
এর অন্যতম কারণ হলো, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রোবোটিকস গবেষণা ও প্রয়োজনীয় রিসোর্সের ঘাটতি। পাশাপাশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতা পর্যাপ্ত নয়। যদিও কিছু উদ্যোক্তা রোবোটিকস খাতে কাজ করছেন, তবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।
প্রশ্ন: একজন বাংলাদেশি যদি বিশ্বমানের রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে তার কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
উত্তর: বিশ্বমানের রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, গবেষণামূলক চিন্তাভাবনা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রথমত, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। একজন রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারকে মেকানিক্যাল ডিজাইন, ইলেকট্রনিকস, এম্বেডেড সিস্টেম, সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং এবং সিমুলেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে রোবট তৈরি ও পরিচালনার দক্ষতা বাড়াতে হবে।
দ্বিতীয়ত, গবেষণা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কোডিং বা ডিজাইন জানলেই হবে না; বরং রোবট কীভাবে বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে পারে, সে বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া থাকা দরকার। সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল ও নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করাই একজন প্রকৃত রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারের বৈশিষ্ট্য।
তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও গবেষণায় অংশগ্রহণ করা দরকার। বাংলাদেশে রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকলেও, RoboCup, DARPA Challenge এবং IEEE Conferences-এর মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। পাশাপাশি গবেষণাপত্র পড়া, ওপেন-সোর্স প্রজেক্টে কাজ করা এবং শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ তৈরি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: জাপানে জনশক্তির সংকট রয়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় তারা বিদেশি কর্মীদের আকৃষ্ট করতে কী কী সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে?
উত্তর: ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাপানের জন্মহার নতুন এক রেকর্ড স্পর্শ করেছে, যা ১.২ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে দেশটি তীব্র জনশক্তির সংকটে ভুগছে। এ সংকট মোকাবিলায় জাপান বিদেশি কর্মীদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে:
Highly Skilled Professional Visa: উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য বিশেষ ভিসা, যা দ্রুত স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ দেয়।
Start-up Visa: উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ভিসা, যা জাপানে ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করে।
ট্যাক্স সুবিধা: বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শকদের জন্য কর রেয়াত সুবিধা।
ভাষা ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ: বিভিন্ন কোম্পানি বিদেশি কর্মীদের জন্য জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার সুযোগ প্রদান করে।
পারিবারিক সুবিধা: পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা।
ক্যারিয়ার উন্নয়ন: বিদেশি কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন কর্মসূচি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়: বড় শহরগুলোতে বিদেশিদের জন্য সহায়ক সামাজিক নেটওয়ার্ক বিদ্যমান।
এসব সুযোগ-সুবিধার ফলে জাপান এখন বিদেশি কর্মীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন: জাপানে বাংলাদেশিরা কাজ করতে চাইলে কোন কোন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে? এবং এর জন্য তাঁদের কী কী করতে হবে?
উত্তর: জাপানে বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি কীভাবে রোবোটিকস সেক্টরে এসেছেন?
উত্তর: আমার রোবোটিকস সেক্টরে আসার যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। আমি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে, সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, বুড়বুড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের গ্রামে তখন বিদ্যুৎ বা ভালো যোগাযোগব্যবস্থা কিছুই ছিল না। বাবা ছিলেন শিক্ষক, আর তাঁর মুখে শোনা সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলোই আমার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলে। আমি হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শেষ করে খুলনা পাবলিক কলেজে পড়াশোনা করি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর প্রকৌশলী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পেলেও ২০১৪ সালে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হই। তখন বাংলাদেশে শুধু এ বিশ্ববিদ্যালয়েই মেকাট্রনিকস তথা রোবোটিকস বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং চালু ছিল। এটি ছিল নতুন। দেশের চাকরির বাজারেও তখন রোবোটিকস নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না। তবে আমি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের সম্ভাবনা বুঝে রোবোটিকসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে রোবোটিকস নিয়ে গভীরভাবে কাজ শুরু করি। ছোট ছোট প্রকল্প তৈরি করা, বড়দের থিসিস প্রকল্পে সাহায্য করা এবং গবেষণা ও প্রকাশনার মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তুলি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কিং ও গবেষণা সহযোগিতার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাজীবনেই NASA-র একটি জয়েন্ট প্রজেক্টে গবেষণা করার সুযোগ পাই।
পরে বাংলাদেশে প্রথম রোবোটিকস গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ অ্যাডভান্সড রোবোটিকস রিসার্চ সেন্টার (BARRC) প্রতিষ্ঠা করি, যা বর্তমানে জাপান থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং একটি আন্তর্জাতিক স্টার্টআপ হিসেবে কাজ করছে। তবে বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারি, অ্যাডভান্সড রোবোটিকস নিয়ে আমার দক্ষতা ও জ্ঞানের পরিধি আরও বিস্তৃত করার প্রয়োজন রয়েছে।
এরপর ২০২০ সালে আমি জাপান সরকারের মনবুশো স্কলারশিপ পাই এবং হিউম্যান ইনটেলিজেন্স সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং বা রোবোটিকস মেজরে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। ২০২২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর থেকে এখনো জাপানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবোটিকস সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: কিউবিটেক ইনকরপোরেশন কী নিয়ে কাজ করে? একজন রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনার দায়িত্ব কী?
উত্তর: কিউবিটেক ইনকরপোরেশন মূলত টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত JSK LAB থেকে প্রতিষ্ঠিত একটি গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান। এটি জাপানের শীর্ষ ১০টি স্টার্টআপের মধ্যে একটি, যা রোবোটিকস, অটোনোমাস সিস্টেম, লজিস্টিকস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে। আমাদের প্রতিষ্ঠান জাপান সরকার এবং বিশ্বের খ্যাতনামা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে Kawasaki, Sony, Toyota, Honda-সহ বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত আমরা ১০০টিরও বেশি সফল প্রজেক্ট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্যুশন বাস্তবায়ন করেছি, যা শিল্প, চিকিৎসা ও লজিস্টিক সেক্টরে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি মিড-সিনিয়র রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি, যেখানে আমার প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাডভান্সড রোবোটিকস সিস্টেম ডিজাইন, স্বয়ংক্রিয় রোবট নেভিগেশন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং রোবোটিকস আর্ম ম্যানিপুলেশন।
এ ছাড়া, আমি কম্পিউটার ভিশন ও এআই ইন্টিগ্রেশন নিয়ে কাজ করছি, যা রোবটগুলোর স্মার্ট পারসেপশন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্ভুল অপারেশন নিশ্চিত করে। বর্তমানে আমি একটি রোবোটিকস প্রজেক্টের টিম লিড হিসেবে প্রোটোটাইপিং থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন লেভেলের রোবট ডেভেলপমেন্টে কাজ করছি। পাশাপাশি, বোর্ড অব ডাইরেক্টরসদের সঙ্গে উন্নয়ন নীতিমালা, প্রজেক্ট পরিকল্পনা, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: রোবোটিকসে জাপানের তুলনায় বাংলাদেশ কোথায় পিছিয়ে রয়েছে?
উত্তর: রোবোটিকসে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপান অন্যতম। আন্তর্জাতিক রোবোটিকস ফেডারেশনের (IFR) তথ্য অনুযায়ী, জাপানে প্রতি ১০ হাজার কর্মীর জন্য প্রায় ৩০০টি রোবট ব্যবহৃত হয়, যা রোবোটিকস প্রযুক্তিতে তাঁদের অগ্রগতির প্রতিফলন।
এর বিপরীতে, বাংলাদেশ এখনো রোবোটিকস খাতে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। যদিও কিছু শিল্প খাতে স্বয়ংক্রিয় অটোমেশন ও লজিস্টিক ব্যবস্থার প্রয়োগ দেখা যায়, তবুও উন্নত রোবোটিকস প্রযুক্তির ব্যবহার এখনো সীমিত। তরুণ প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতে ভালো করছে; কিন্তু রোবোটিকসের ক্ষেত্রে তাঁরা এখনো পিছিয়ে।
এর অন্যতম কারণ হলো, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রোবোটিকস গবেষণা ও প্রয়োজনীয় রিসোর্সের ঘাটতি। পাশাপাশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতা পর্যাপ্ত নয়। যদিও কিছু উদ্যোক্তা রোবোটিকস খাতে কাজ করছেন, তবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।
প্রশ্ন: একজন বাংলাদেশি যদি বিশ্বমানের রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হতে চান, তাহলে তার কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
উত্তর: বিশ্বমানের রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, গবেষণামূলক চিন্তাভাবনা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রথমত, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। একজন রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারকে মেকানিক্যাল ডিজাইন, ইলেকট্রনিকস, এম্বেডেড সিস্টেম, সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং এবং সিমুলেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে রোবট তৈরি ও পরিচালনার দক্ষতা বাড়াতে হবে।
দ্বিতীয়ত, গবেষণা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কোডিং বা ডিজাইন জানলেই হবে না; বরং রোবট কীভাবে বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে পারে, সে বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া থাকা দরকার। সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল ও নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করাই একজন প্রকৃত রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারের বৈশিষ্ট্য।
তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও গবেষণায় অংশগ্রহণ করা দরকার। বাংলাদেশে রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকলেও, RoboCup, DARPA Challenge এবং IEEE Conferences-এর মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। পাশাপাশি গবেষণাপত্র পড়া, ওপেন-সোর্স প্রজেক্টে কাজ করা এবং শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ তৈরি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: জাপানে জনশক্তির সংকট রয়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় তারা বিদেশি কর্মীদের আকৃষ্ট করতে কী কী সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে?
উত্তর: ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাপানের জন্মহার নতুন এক রেকর্ড স্পর্শ করেছে, যা ১.২ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে দেশটি তীব্র জনশক্তির সংকটে ভুগছে। এ সংকট মোকাবিলায় জাপান বিদেশি কর্মীদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে:
Highly Skilled Professional Visa: উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য বিশেষ ভিসা, যা দ্রুত স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ দেয়।
Start-up Visa: উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ভিসা, যা জাপানে ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করে।
ট্যাক্স সুবিধা: বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শকদের জন্য কর রেয়াত সুবিধা।
ভাষা ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ: বিভিন্ন কোম্পানি বিদেশি কর্মীদের জন্য জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার সুযোগ প্রদান করে।
পারিবারিক সুবিধা: পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা।
ক্যারিয়ার উন্নয়ন: বিদেশি কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন কর্মসূচি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়: বড় শহরগুলোতে বিদেশিদের জন্য সহায়ক সামাজিক নেটওয়ার্ক বিদ্যমান।
এসব সুযোগ-সুবিধার ফলে জাপান এখন বিদেশি কর্মীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন: জাপানে বাংলাদেশিরা কাজ করতে চাইলে কোন কোন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে? এবং এর জন্য তাঁদের কী কী করতে হবে?
উত্তর: জাপানে বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এর জন্য আবেদন শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। এসএসসিতে জিপিএ ২.৫ হলেই এ পদে আবেদন করা যাবে। এই পদে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও পদ্ধতি দেখে নিন:
২ ঘণ্টা আগেআমরা সবাই জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে চাই। কিন্তু অনেক সময় ধরেই এ বিশাল পরিবর্তনের চিন্তা আমাদের হতাশ করে ফেলে। বি জে ফগ তাঁর ‘Tiny Habits’ বইতে দেখিয়েছেন, ছোট ছোট অভ্যাসই আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং ভবিষ্যৎকে বদলে দিতে পারে।
৩ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকা। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে জনবল নিয়োগ দেবে। যোগ্য ও আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
১৮ ঘণ্টা আগেজাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ২ ধরনের শূন্য পদে মোট ৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
১ দিন আগে