Ajker Patrika

শবে বরাত সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি কথা

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক
শবে বরাত সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি কথা

পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও মর্যাদা ইসলামে স্বীকৃত। তবে শবে বরাতের আমল নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি আছে। এ মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ এখানে তুলে ধরা হলো।

এক. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে শবে বরাত বোঝাতে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ‘শাবানের মধ্য রজনী’ শব্দগুলো এসেছে। এ শব্দ দিয়ে রাতটির নামকরণ করলে হাদিসের সবচেয়ে সুন্দর অনুসরণ হয়। তাই এই রাতের নাম ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বললে সুন্নত পালন হবে। তবে শাবানের মধ্যরজনী, শবে বরাত ও লাইলাতুল বারাআতও বলতে পারেন। বলাটা জায়েজ, তবে সুন্নত হবে না। 

দুই. আরবি বারাআত শব্দের অর্থ মুক্তি, ছিন্ন করা, দায়মুক্তি ইত্যাদি। বারাআত শব্দটি ফারসি ভাষার ভেতর দিয়ে যাত্রা করে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করায় চ্যুতি-বিচ্যুতির মাধ্যমে ‘বরাত’-এ পরিণত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে অর্থগত পরিবর্তনও ঘটেছে। বাংলা ভাষায় বরাত শব্দটি এখন অনেকটাই সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা বা আপনজাত; যার অর্থ ভাগ্য। শবে বরাত মানে ভাগ্যরজনী। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে এখানে একটা ব্যাপক বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। রাতটা মূলত ক্ষমার। এখানে রিজিক বা আগামী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ সম্পর্কিত কোনো কথা কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসে নেই। 

তিন. এ রাত সম্পর্কে সুনানে ইবনে মাজাহর একটি পরিচ্ছেদে কয়েকটি হাদিস রয়েছে। হাদিসবিদগণ সেগুলোর পর্যালোচনা করে একটি হাদিস সহিহ্ বলে সাব্যস্ত করেছেন। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত কয়েকটি হাদিসকে তাঁরা দুর্বল বলেছেন। এ রাতের আমল সম্পর্কিত হাদিসগুলোকে বানোয়াট বলেছেন। 

তবে যে সহিহ্ হাদিসটি পাওয়া যায়, তা থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা এ রাতে সব মানুষের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেন। তবে ব্যক্তিকে অবশ্যই শিরক ও হিংসামুক্ত হতে হবে। হাদিসের উদ্ধৃতি অনুযায়ী কোনো কোনো আলেম এ রাতকে উপরিপাওয়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ ব্যক্তি সারা বছর ইবাদত করলে এবং শিরক-হিংসা মুক্ত হলে এ রাতে ঘুমিয়ে থাকলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। 

চার. এ রাতের আমল সম্পর্কে বর্ণিত অধিকাংশ হাদিসই বানোয়াট। ফিকহের কিতাবে এ রাতের বিশেষ সালাত সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম নববি (রহ.)–সহ অনেকেই এ রাতে বিশেষ নামাজ আদায় এবং এ উদ্দেশ্যে মসজিদে মুসলমানদের একত্রিত হওয়াকে বেদাত আখ্যা দিয়েছেন। তবে এ রাতে কবর জিয়ারত ও দোয়া পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত আমল। ফলে অন্যান্য রাতের মতো এ রাতে তাহাজ্জুদ ও কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। 

পাঁচ. এ রাতে মসজিদে কোরআন-হাদিসের আলোচনা করা নিষিদ্ধ নয়। তবে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাতের বিশেষ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়াকে বেদাত বলেছেন আলেমগণ। এ মত দেওয়ার সময় নিশ্চয়ই তাঁরা নিজেদের সময়, সমাজ ও পরিস্থিতি বিচারে এনেছিলেন। বর্তমানে মসজিদবিমুখ মুসলিম উম্মাহকে কোরআন ও হাদিসের আলোচনায় আরও বেশি করে যুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে এ রাতে মসজিদগুলোতে কোরআন-হাদিসের আলোচনার অনুষ্ঠান করা বেদাত হবে না; বরং এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুপস্থিতিই এ রাতে আতশবাজি ইত্যাদির মাধ্যমে যুবসমাজের বেসামাল শবে বরাত উদ্‌যাপনকে আরও বেশি উসকে দেবে। 

ছয়. এ রাত উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় আলিমগণ ইসলামের বিভিন্ন বিষয় মানুষকে বোঝাবেন। এ রাত সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা উপস্থাপন করবেন। অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এড়িয়ে চলবেন। এরই মধ্যে যেসব বাড়াবাড়ি সমাজে প্রতিষ্ঠিত, সে সম্পর্কে মানুষের ভুল দূর করবেন।

এ রাতকে পবিত্র কোরআন নাজিলের রাত তথা ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ’ বলে উপস্থাপন করা প্রতারণা ও আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করার শামিল। মানুষ বিভিন্নভাবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। ফলে অসত্য তথ্য হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আর এটা সীমালঙ্ঘনও। 

সাত. এ রাত উপলক্ষে পরিবারের জন্য বিশেষ খাবার পরিবেশনের সঙ্গে ভাগ্য পরিবর্তনগত কোনো বিশ্বাস জড়িত থাকলে তা জায়েজ হবে না। তবে সাধারণভাবে ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দেওয়া এবং দান-সদকা ইত্যাদি ভালো কাজ করা জায়েজ। 

আট. এ রাতে ফটকা, আতশবাজি ইত্যাদি নিয়ে মেতে থাকার কোনো যুক্তি নেই। এসব সীমালঙ্ঘন। ফলে তা কোনোভাবে জায়েজ নেই। 

নয়. এ রাতের আগে পরের দিনগুলো আইয়ামে বিজ তথা মাসের মধ্যভাগের দিন। এই দিনগুলোতে রোজা রাখা সুন্নত। এ আমল বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত। 

আল্লাহ তাআলা সব ধরনের সীমালঙ্ঘন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত