Ajker Patrika

যুগে যুগে হাজিদের সেবা ও আতিথেয়তা

ইজাজুল হক
যুগে যুগে হাজিদের সেবা ও আতিথেয়তা

আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময় থেকে হজের প্রচলন শুরু হয়। এর পর থেকে মহানবী (সা.)-এর নবী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের চল ছিল। গত দেড় হাজার বছরেও বিশেষ কারণ ছাড়া হজ বন্ধ হয়নি। হজকে ঘিরে যে বিষয়টি আরবদের সবচেয়ে বেশি মহান করে তুলেছে, তা হলো হাজিদের প্রতি তাদের আতিথেয়তা। যুগে যুগে শাসকদের বিভিন্ন সেবার কথাও ইতিহাসে লেখা রয়েছে। একালেও হাজিদের যথেষ্ট সমাদর করা হয়, তবে তা বেশ চড়া মূল্যে। লিখেছেন ইজাজুল হক।

ইসলামের আগে-পরে
পবিত্র কাবাঘরকে কেন্দ্র করেই মক্কায় মানব বসতি গড়ে উঠেছিল। হজের প্রচলন শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এখানে যাঁরাই বাস করেছেন, সবাই হাজিদের আদর-আপ্যায়ন ও মেহমানদারিকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রথম দিকে তো মক্কার ঘরগুলোতে কোনো দরজাই ছিল না। হাজিদের ‘আহলান সাহলান’ অভিবাদনে স্বাগত জানাতে সব সময় প্রস্তুত থাকতেন তাঁরা।

হজযাত্রীদের সেবায় মক্কায় বসবাসরত গোত্রগুলো নিজেদের দায়িত্ব ভাগ করে নিত। হাজিদের নিরাপত্তা, খাদ্য পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সব ব্যবস্থাই করতেন তাঁরা। বনি শায়বা কাবাঘরের চাবি সংরক্ষণ করত। বনি হাশিম পানি সরবরাহের দায়িত্ব পালন করত। কোরাইশ নেতা কুসাই ইবনে কিলাবই প্রথম হাজিদের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন।

মহানবী (সা.)-এর জন্মের আগে কোনো এক বছর তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব হাজিদের খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন। সেবার মক্কায় কঠিন খরা ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তিনি স্বপ্নে দেখলেন, ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত হারিয়ে যাওয়া জমজম কূপটি তিনি খুঁজে পেয়েছেন। সত্যিই তিনি কূপটি খুঁজে পেলেন এবং মক্কায় পানির সরবরাহ স্বাভাবিক হলো এবং হাজিরা খরার বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন। এখনো পবিত্র কাবাঘরের আশপাশে জমজমই পানির প্রধান উৎস। 

আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ার পর হজযাত্রীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ মক্কায় এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে। সময়ের সঙ্গে তা বেড়েই চলেছে। মক্কার ঘরগুলোতে শুরুর দিকে বিনা মূল্যে হাজিদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। পরে ভাড়া দিয়ে থাকার ব্যবস্থাও চালু ছিল কিছুদিন।

হাজিদের সেবায় মুসলিম শাসকেরা
হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে বন্যার আঘাতে কাবাঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি সব স্থাপনা মেরামত করে দেন। হাজিদের থাকার ঘরগুলোতে দরজা ও বাতি লাগিয়ে দেন। হজরত ওসমান (রা.) হাজিদের সুবিধা বিবেচনায় মসজিদুল হারামের আঙিনা প্রশস্ত করেছিলেন। হাজ্জাজের আক্রমণে কাবাঘর ভেঙে গেলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) পুনরায় তা নির্মাণ করেছিলেন। উমাইয়া আমলে হাজিদের সেবায় সরকারিভাবে সেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আব্বাসি ও উসমানি আমলেও পবিত্র মসজিদুল হারামের ব্যাপক সম্প্রসারণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়।

আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী জোবাইদা ৭৮০ সালে হাজিদের জন্য ইরাকের কুফা থেকে মক্কা পর্যন্ত ৯০০ মাইলের একটি দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। পথে পথে ৫৪টি সরাইখানা এবং অসংখ্য ব্রিজ ও মসজিদ নির্মাণ করেন। এই সড়কের পাশেই আইনে জুবাইদা নামের কিছু কূপ খনন করেছিলেন তিনি, যা হজযাত্রীদের প্রশান্তির কারণ ছিল। কূপগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়।

সেকালে মুসলিম বিশ্বের হজযাত্রীরা দামেস্ক, কায়রো ও বাগদাদে জড়ো হতেন। সেখান থেকে খলিফার একজন প্রতিনিধি আমিরুল হজের নেতৃত্বে মক্কার উদ্দেশে রওনা করতেন। কাফেলার সুরক্ষা ও হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মক্কায় সুলতানের প্রতিনিধিত্ব করাই ছিল আমিরুল হজের প্রধান কাজ। উসমানি আমলের শেষ সময় পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। এখনো প্রতিটি মুসলিম দেশ হজযাত্রা নিরাপদ করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

মালির ধনী শাসক মানসা মুসা ১৩২৪ সালে ৬০ হাজার লোক নিয়ে হজ করেছিলেন। বিপুল পরিমাণে স্বর্ণ নিয়ে তিনি আফ্রিকা পাড়ি দিয়ে মিসর হয়ে মক্কায় এসেছিলেন। তিনি মক্কা ও কায়রোয় এত পরিমাণ স্বর্ণ বিলিয়েছিলেন যে সেখানে স্বর্ণের দাম একেবারেই কমে গিয়েছিল।

ভারতের ভূপাল রাজ্যের রানি সিকান্দর বেগম ১৮৬৪ সালে হজ করেছিলেন। তিনিও পথে পথে অনেক দান-সদকা করেছিলেন। মক্কা-মদিনায় তিনি বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন এবং সেখানে তাঁর দেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের বিনা মূল্যে তা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। ভারতের তৎকালীন অন্যান্য রাজ্যের শাসকেরাও তাঁর এই নীতি অনুসরণ করেছিলেন। 

একালের সেবা ও আতিথেয়তা 
বর্তমানেও হাজিদের সেবা ও আতিথেয়তায় কোনো ধরনের কমতি রাখা হয় না। ৩০-৪০ লাখ হাজির জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। উন্নতমানের খাবার-দাবার, সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা, শপিং মল, হোটেল ও প্রযুক্তিগত সব সুবিধা হাজিদের সরবরাহ করা হয়।

তবে একালে হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে মক্কা-মদিনায় হাজিদের অবস্থানের জন্য অনেক বেশি ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হজ করতে ইচ্ছুক অনেকের অভিযোগ, হাজিদের নিয়ে বাণিজ্যিক চিন্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের আকাঙ্ক্ষার কারণেই হজের খরচ বেড়েছে। এভাবে বাণিজ্যিকীকরণের কারণে হজের ধর্মীয় মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং আরবদের হাজার বছরের আতিথেয়তা ও সেবার ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

হজকে ঘিরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের আকাঙ্ক্ষা কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কাজের সওয়াব নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। মানুষ নিয়ত অনুযায়ীই ফল পাবে। যার হিজরত পার্থিব লাভ বা কোনো নারীকে বিয়ের জন্য হবে, সে যে উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে, তা-ই সে পাবে।’ (বুখারি: ০১)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালে কখন তায়াম্মুম করা যাবে, কখন যাবে না

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামি শরিয়তে পানি না থাকলে অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে অজু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ শৌচালয় থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে; অর্থাৎ তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না; তিনি শুধু তোমাদের পবিত্র করতে এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সুরা মায়িদা: ৬)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলোর আলোকে ফকিহরা শীতকালে তায়াম্মুমের বিধান সম্পর্কে যে সমাধান দিয়েছেন, তার সারমর্ম নিচে তুলে ধরা হলো:

তায়াম্মুম কখন বৈধ?

যদি প্রচণ্ড ঠান্ডায় পানি ব্যবহার করলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে অথবা শরীরের কোনো অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে তায়াম্মুম করা যাবে। অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগার অকাট্য প্রমাণ বা প্রবল ধারণা থাকলে তায়াম্মুম বৈধ।

তায়াম্মুম কখন বৈধ নয়?

ক্ষতি হওয়ার নিশ্চিত বা প্রবল আশঙ্কা না থেকে কেবল সাধারণ ঠান্ডার ভয় বা অলসতাবশত তায়াম্মুম করা জায়েজ নয়। (আল বাহরুর রায়েক: ১/১৪৮, ফাতাওয়া কাজিখান: ১/৫৮)

প্রতিকূলতায় অজুর সওয়াব

আমাদের দেশে সাধারণত যে মাত্রার শীত পড়ে, তাতে পানি ব্যবহার করলে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি খুব একটা থাকে না। সামান্য কষ্ট হলেও তা সহ্য করে অজু করা ইমানি দৃঢ়তার পরিচয়। এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা দ্বিগুণ সওয়াব দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রচণ্ড ঠান্ডার মৌসুমে যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অজু করবে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ)

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিকূল পরিবেশে পূর্ণরূপে অজু করাকে পাপ মোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (জামে তিরমিজি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত